#’শ্রাবণ রাতের বর্ষণ❤’
#’লেখিকাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা
#’পর্বঃ ১৩
.
চন্দ্রা তৈরি হয়ে বসে আছে বহুক্ষণ। কিন্তু রুদ্রের আসার কোনো ঠিক-ঠিকানাই নেই। এদিকে অস্থিরতা বেড়ে চলেছে চন্দ্রার। মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কিছুতেই রুদ্রের সঙ্গে বাহিরে বেরোতে ইচ্ছে করছে না। কিন্তু সে বাধ্য! কিছুক্ষণের মধ্যেই কিরণ এসে মাথা নত করে অভিবাদন জানায় চন্দ্রাকে। সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্রার তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলে উঠেন,
—” নিজের দায়িত্ব এভাবে পালোন করেছ তুমি? ঠিকই তো সম্রাটকে বলেছো আমি রত্নমার কক্ষে গিয়েছিলাম। আমার দাসী হওয়ার এই নমুনা তোমায়? জানো কিরণ, তুমি কখনও আমার কিরণের মতো হতে পারবে না। কখনও না!”
কিরণ মাথা আরও নত করে ফেলল লজ্জায়। প্রবল অপরাধবোধ নিয়ে বলে উঠল,
—” ক্ষমা করুন আমায় রাজকুমারী। আমি নিরুপায় ছিল। পশ্চাতে এমন হবে না আর। ক্ষমা করুন আমায়।”
চন্দ্রা হেসে বললেন,
—” তোমার ওপর বিশ্বাস করার আর ইচ্ছে নেই কিরণ। পরেরবার ক্ষমা করার প্রশ্ন আসছে না।”
কিরণ কেঁদে দিলো এবার। চন্দ্রার কাছে হাত জোড় করে বলে উঠল,
—” ক্ষমা করুণ আমায় রাজকুমারী। আমি সত্যি বলছি এমন ভুল আর হবে না। কিন্তু সম্রাটকেও আমি মিথ্যা বলতে পারবো না। আপনি আমার পরিস্থিতি বুঝুন রাজকুমারী। ক্ষমা করুন আমায়।”
চন্দ্রার এবার বেশ বিরক্ত হলেন। সাথে একটু হলেও মায়া কাজ করল কিরণের জন্য। তাই মনটা খানিকটা নরম করে কিছু বলতে যাবেন তার আগেই একটা পুরুষালী কণ্ঠ ভেসে উঠল কানে। রুদ্র হাতে হাত গুঁজে তাদের অগ্রে দাঁড়িয়ে আছেন। ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন তিনি,
—” কি ব্যাপারে ক্ষমা চাইছো কিরণ। রাজকুমারী চন্দ্রা রত্নমার কক্ষে গিয়েছিল সেই ব্যাপারে?”
বাঁকা হাসলেন রুদ্র। চোখের ইশারায় কিরণকে কক্ষের বাহিরে যেতে বলতেই সে আদেশ অনুযায়ী বের হয়ে গেল কক্ষে থেকে। রুদ্র এগিয়ে আসেন চন্দ্রার দিকে। চন্দ্রার পদ থেকে মাথা অব্দি একবার গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন। ঠোঁটের ডান দিকের কোণায় হালকা হাসির রেখে ফুটিয়ে বলে উঠলেন,
—” এত সুন্দর করে সেজেছো যে? মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড় করাতে চাইছো আমাকে? উফফ! আর কত ঘায়েল করবে চন্দ্রপ্রভা? আমার যে তোমাকে…!”
চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছেন চন্দ্রা। রুদ্রের এরুপ কথার মাঝখানে বাঁধা দিয়ে বলে উঠলেন,
—” নোংরা কথা বন্ধ করুন। আপনি তৈরি হলে কোথায় নিতে চান নিয়ে চলুন।”
রুদ্র বুকের বা’পাশে হাত রেখে মৃদু স্বরে বলে উঠলেন,
—” উফফ! তোমার এ তেজ! এটাই তো চেয়েছিলাম আমি। তোমার এ তেজই তো আমাকে পাগল করার জন্যে যথেষ্ট!”
—” তাহলে পাগল হচ্ছেন না কেন? আপনাকে তো সুস্থই দেখতে লাগছে।”
রুদ্র হেসে উঠলেন। চন্দ্রার আরেকটু কাছে এসে বললেন,
—” তুমি দেখছি আমাকে খেয়ালও করো। তা বলো তো আমি দেখতে কিরুপ? সুদর্শন নিশ্চয়ই।”
—” অবশ্যই না সম্রাট। আপনি একজন নিষ্ঠুর, নির্লজ্জ, বেহায়া লোক। যাকে দু’চোখে দেখতে পারি না আমি।”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকালেন। সন্দিহান দৃষ্টিতে চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—” তাই নাকি? কিন্তু আমি তো একজনকে দেখছি সে আমার দিকে বড় বড় চক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আমার সৌম্য মুখশ্রী।”
সঙ্গে সঙ্গে রুদ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন চন্দ্রা। রুদ্র হাসলেন। তবে চন্দ্রা বেশ দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলেন,
—” নিজের সৌন্দর্যের বর্ণনা নিজে করছেন। বাহ্ঃ!”
—” তাহলে তুমি মানছো আমি সুন্দর?”
এ কথার পিঠে আর কিছু বললেন না চন্দ্রা। তার বিরক্তি লাগছে। প্রচুর লাগছে! কোথাও যাওয়ার ইচ্ছেও মরে গেছে তার। বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলেছে সে। রুদ্র থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন চন্দ্রা,
—” আমি আপনার সঙ্গে কোথাও যাবো না। আমার ইচ্ছে করছে না। নিদ্রা পাচ্ছে প্রচুর।”
হাসি উবে গেল রুদ্রের। ভ্রু কুঁচকে বললেন,
—” তুমি কাকে মানা করছো জ্ঞাত আছে নিশ্চয়ই?”
—” আছে, কিন্তু আমি যেতে না চাইলে আপনি কি আমাকে জোড় করবেন? মনে রাখবেন আমি আপনার দাসী নই।”
প্রবল ক্ষোপের সঙ্গে বলে উঠলেন চন্দ্রা। রুদ্র চন্দ্রার চোখে চোখ রেখে চোয়াল শক্ত করে বলে উঠলেন,
—” তুমি আমার সম্রাজ্ঞী। আমার কথা মানতে বাধ্য।”
বলেই চন্দ্রাকে কাঁধে তুলে নিলেন রুদ্র। অগ্রসর হলেন রাজপ্রাসাদের বাগানের দিকে। আর চন্দ্রা, রুদ্র থেকে নিজেকে ছাঁড়ানোর জন্য লাগাতার হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছে। কিন্তু এতে বিশেষ কোনো লাভ হচ্ছে না। রুদ্র আরও শক্ত করে নিজের বাঁধনে আবদ্ধ করে নিচ্ছেন চন্দ্রাকে।
_____________________
সাদা রঙের একটা ঘোড়ায় চন্দ্রাকে নিয়ে কর্পনরাজ্যের দিকে যাচ্ছেন রুদ্র। চন্দ্রা মুখ শক্ত করে বসে আছেন মাত্র। যা সহ্য হচ্ছে না রুদ্রের। রুদ্র ঘোড়ার শরীরে চাবুক মারতেই তার চলাচলের গতি আরও দ্রুত হয়। ফলে ভয় পেয়ে রুদ্রের হাত আকঁড়ে ধরেন চন্দ্রা। রুদ্র বাঁকা হেসে বলে উঠেন,
—” ভালো লাগছে চন্দ্রা। আরেকটু আকঁড়ে ধরো আমায়। চাইলে জড়িয়েও ধরতে পারো।”
চন্দ্রা বিরক্তি নিয়ে তাকান রুদ্রের দিকে। রুদ্র আবারও হাসেন। যা বিরক্তির শেষ প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে চন্দ্রাকে। তবে নিরুত্তর চন্দ্রা। রুদ্রের সঙ্গে কথা বলতে মোটেও ইচ্ছে করছে না তার। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রুদ্রই বলে উঠলেন এবার,
—” আগামীকাল আমাদের বিবাহ চন্দ্রা। তখন তোমাকে কে বাঁচাবে আমার হাত থেকে?”
চন্দ্রা কঠিন কণ্ঠে বলে উঠেন,
—” এ বিয়ে কখনোই হবে না। হতে দেবো না আমি।”
রুদ্র ভাবলেশহীন ভাবে বললেন,
—” সেটা তো সময়ই বলবে।”
—” কিভাবে বিবাহ করবেন আমায়? আমার তো কোনো দুর্বলতাও অবশিষ্ট নেই। যা দেখে ভয়ে আমি আপনাকে বিয়ে করব। এক আমার মাতা পিতা ছিলেন তাদেরও আপনি…”
চন্দ্রার কথা শেষ না হতেই রুদ্র বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন,
—” তোমাকে কতবার বলেছি আমি তোমার পিতা-মাতাকে হত্যা করি নি। উহু! এ কথাটা আর বলব না তোমায়। একদম প্রমাণ দেখিয়ে ছাঁড়বো। আর তা বিবাহের পরপরই। এবং হ্যাঁ, তোমার দুর্বলতা তো অবশ্যই আছে। একটু মনে করার চেষ্টা করো। অবশ্যই পেয়ে যাবে।”
রুদ্রের কথায় চন্দ্রা গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন। তার কি দুর্বলতা থাকতে পারে? পরক্ষণেই আবার চোয়াল শক্ত করে ফেললেন চন্দ্রা। যে করেই হোক এখান থেকে এখনই পালাতে হবে তার। যেহেতু রাজপ্রাসাদের বাহিরে সে, সেহেতু পালাতে অবশ্যই তত কষ্ট হবে না। এতে রুদ্রকেও বিবাহ করতে হবে না চন্দ্রার। কিন্তু বিপত্তি হচ্ছে সে পালাবে কিভাবে?
দেখতে দেখতে রুদ্রের ঘোড়া কর্পনরাজ্যের দুয়ারে এসে দাঁড় করানো হলো। রুদ্রের রাজপ্রাসাদের খানিকটা দূরেই ফুলে ঘেরা এই অপরুপ রাজ্যের অবস্থান। রাজ্যটির রুপে মুগ্ধ হয়ে চন্দ্রা এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন বারংবার। হঠাৎ রুদ্র চন্দ্রার অতি নিকটে এসে কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,
—” এ রাজ্য থেকেও তুমি অধিক সুন্দর রাজকুমারী চন্দ্রপ্রভা। আর তোমার চেয়ে আমি! আমার দিকেও তো একবার প্রাণখুলে তাকাতে পারো। আমি রাগ করব না!”
.
____________চলবে__________
ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। সময় কম থাকায় এর চেয়ে বেশি লিখতে পারি নি আজকে। আর হ্যাঁ, চন্দ্রার দুর্বলতা কি তা মনে আছে কি পাঠক/পাঠিকা?
Nahiyan Talukder, Jodha Akbar, Aysha Siddika, সহ আরও অনেকের মন্তব্য রুদ্রের সৌম্য রুপের মতো সৌম্য ছিল❤
Ishanur Tasmia