ষোড়শীর প্রেমের মায়ায় পর্ব -১৩

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_তেরো
[#টর্চার]

দুজনের মধ‍্যে টান আসে, দুজন মানুষ যখন একসঙ্গে থাকে তখন একজন না একজনের মধ‍্যে টান আসবেই তাই তোমাদৈর দুজনে এক করেছি। আজ আমি চাইবো তুমি সেই পথ থেকে কিছুটা সংযত করো। কারন স্নিগ্ধার আবেগের বয়স মেয়েটার মধ‍্যে একটা স্বপ্ন আছে সেই স্বপ্নটাকে পূরণ করতে দাও। আমি কথা দিচ্ছি সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি কি বুঝাতে চেয়েছি বুঝেছো?স্নিগ্ধা বা তোমার ধারা কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু যেন না ঘটে তাই চাইছি!
সাজ্জাদ সাহেব বলতে চাইলে ও বললেন না কিছু।
শ্রাবণ মাথা নিচু করে বলল –

–” দাদু ভাই আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন, আমার বা স্নিগ্ধার দ্বরা এমন কিছুই হবে না।”

–” খুশি হলাম, তোমরা সুখে থাকো তাই আমি চাই, সব সময়। সব সময় চাই দুজনে যেন সুখে থাকো আর একসাথে থাকো। এর চেয়ে বেশি কিছু চাই না, এর বাহিরে কিছু চাই না। ”
শ্রাবণ দাদুর কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।

দাদুর সঙ্গে কিছুক্ষণ বসে কথা বলল শ্রাবণ। যার মধ‍্যে অর্ধেকই স্নিগ্ধা আর শ্রাবণকে নিয়ে তারা যেন কোন অন‍্যায় না করে, সব সময় সঠিক পথ অনুসরণ করে চলে তাই বেশি। স্নিগ্ধাকে যেন সব সময় আগলে রাখে শ্রাবণ তাই বারবার স্মরণ করিয়ে দিলেন। শ্রাবণ ও তার কথা মন দিয়ে শুনে তারপর সেখান থেক‍ে উঠে এলো।

পুষ্পিতা রান্নাঘরে রান্না করছে পাশে দাড়িয়ে তার বয়স্ক শাশুড়িমা বলে উঠলেন –

–” বউ, একটা কথা বলতাম। কিছু যদি না মনে কর ।”

—” বলেন আম্মা, কি বলবেন?”

—” শুনছি ডাক্তার দেখানোর পর বাচ্চা নাকি নেওয়া যায়? অনেকেই বলে, আমি নিজেই দেখছি কত মানুষের বিশ বছর পর একুশ বছর পর পনেরো বছর পর বাচ্চা হইছে।
একটু দেখো না কিছু হয় কিনা!”
পুষ্পিতার মুখ কেমন এইটুকুনি হয়েগেছে। ডাক্তার সেই কবে একবার দেখিয়েছে। সমস‍্যা তো কিছুই বলেনি আর সাজ্জাদ তাকে বলে দিয়েছে এসব টেস্ট না করাতে। এগুলো নাকি শুধুই সান্ত্বনা! আর ডাক্তাররা এসব টেস্টের নাম করে টাকা হাতিয়ে নেয়।
কথার মাঝেই শাশুড়ি মা আবার বলে উঠলেন –

–” বউ আমি কি কিছু ভুল বলছি? একটু ডাক্তার দেখাও কি সমস‍্যা একটু দেখো না। তোমার বয়স তো আহামরি না আর সাজ্জাদের তো বয়স বেশি ও না আবার একদম কম ও হইতাছে না। একটু চেষ্টা করো না! একটা ভবিষ্যৎ আছে তোমাদের একটু চেষ্টা কর আল্লাহ্ যদি চায় সন্তান আইতেও পারে।”
পুষ্পিতা বুঝতে পারল তার শাশুড়ির কথা। সবারই একটা আনন্দ থাকে, ইচ্ছা থাকে তার ঘর পূর্ণ হোক সুখ দিয়ে। ছেলে মেয়েদের জীবনে যদি সুখ না আসে মায়েদের কম চিন্তা থাকেনা। শাশুড়ি মা যতই যা বলুক তার মনে ও তো ছোট ছেলের নাতি নাতনি দেখার স্বাদ আছে,আছে শখ শেষ বয়সে সবাই চায় তার ঘর ভর্তি নাতি-নাতনিরা ভরে যাক। ছেলে-মেয়েরা সুখে থাকুক তারা সেটাই চায়।
পুষ্পিতা সেসব ভেবে বলল-

–” মা আপনি কখনো ভুল কিছু বলতে পারেন না, মায়েরা ভুল কিছু কখন‍োই করে না, আর ভুল কিছু বলেনা।
মায়েরা যা বলে সন্তানের মঙ্গলের জন‍্যই বলে।
আপনি বলেছেন আমি চেষ্টা করবো।”

—” ভালো ডাক্তার দেখাই ও, কার সমস‍্যা সেটা বড় কথা না। একটা বাচ্চা হইলেই চলবো, যদি আল্লাহ আমাগোর আশায় মিলায়। ” বৃদ্ধা হাতের মুঠোয় রাখা তজবি জপতে জপতে উঠে চলেগেলেন রুমে। বয়সের ভারে কুজো হয়েগেলো তিনি জীবনের যত কাজা নামাজ আছে সব পড়েন।
_____________________________

গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছে নানাভাই আর নানু মিলে এখন শ্রাবণ আর স্নিগ্ধা আলাদা হয়ে আবারও নিজেদের রুমে থাকতে শুরু করে দিয়েছে। এই কয়েকদিন একসঙ্গে থাকতে খুব কষ্ট হয়েছে স্নিগ্ধার। শ্রাবণ একটু পর পর এসে তাকে জালিয়ে মারতো। স্নিগ্ধা তার থেকে সব সময়ে দূরেই থাকার চেষ্টা করতো তাই।

স্নিগ্ধা পড়তে বসেছে সামনে তার কলেজে মান্থলি এক্সাম।
সব পড়া কমপ্লিট হলেও ফিজিক্স এখনো বাকি। স্নিগ্ধা বইয়ের দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। একটু ও খেয়াল নেই কোচিংয়ের ভাইয়ার কাছ থেকে পড়াটা বুঝে নিতে। পুষ্পিতা স্নিগ্ধার রুমে ঢুকে দেখলেন স্নিগ্ধা পড়ার টেবিলে বসে আছে। তিনি টেবিলির উপর
তুলসীপাতার জুস রাখলেন। স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বললেন –

—” কি পড়াশুনা ঠিকমত চলছে তো? মাথা গরম হলে এই জুসটা খা শরীর চাঙ্গা হয়ে যাবে!”

–” ইইই! এটা কি? আবার কেমন গন্ধ করে! নাকের সামনে ধরে বলল গন্ধটা চেনা চেনা! পুদিনা পাতা!”

–” হুম, আপনার জন‍্য আনলাম খেয়েনিন। আর শোন,
বিকালে আমার সঙ্গে তোকে একটা জায়গায় যেতে হবে।”
স্নিগ্ধা পুরোটা জুস খেয়ে বলল –

–” কোথায় যেতে হবে?”

–” আমি ডাক্তারের কাছে যাবো। যাবি আমার সঙ্গে?”

–” আমার পড়া? আমি পড়া বুঝতে পারছি না। এখন যদি বাকি চাপ্টার না পড়ি তাহলে পড়া হবেনা !”

–” বুঝিস না? আরে না বুঝলে শ্রাবণ আছে কিসের জন‍্য? ওর কাছে বুঝেনিস!”

–” আমি ওর কাছে পড়বো না,”

–” না পড়লে তোর সমস‍্যা হবে আমার কিছুই হবে না। এবার তুই বুঝ কি করবি!”
স্নিগ্ধা মামির কথাটা ফেলতে পারল না আসলেই এখন যদি সে শ্রাবণের কাছে না বুঝে নেয় তাহলে পরবর্তী সময় তারই সমস‍্যা।

_______________________________

হাতে একটা স্কেল নিয়ে বসেছে শ্রাবণ। স্নিগ্ধা ফিজিক্স বই নিয়ে বসেছে। শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে স্কেল দিয়ে বারি দিয়ে বলল –

–” পিটিয়ে পিঠের চামড়া তুলে ফেলতে মন চাইছে। কি পড়েছিস এগুলো? যা পড়েছিস সবই তো ভুল! পড়ার নামে কি করেছিস এতকাল?”

–” আমি কি করব ভাইয়া আমাকে এভাবে পড়িয়েছে।

–“তোর ভাইয়ার গোষ্টির ষষ্ঠী করব আজ, বলেই হাতের স্কেল দিয়ে বারি দিতে চাইলে স্নিগ্ধা পরেযেতে নিল। শ্রাবণ স্নিগ্ধার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিল আবার। স্নিগ্ধার ভয়ে একদম কাপাকাপি অবস্থা।

–” হু! এখন সব সাহস কোথায় গেল?”

—-

–” আজকে যদি এই চাপ্টার পড়তে না পারিস তাহলে তোর শাস্তি আছে।”

–” কি শাস্তি?”
শ্রাবণ স্নিগ্ধার কাছাকাছি চেয়ারটা টেনে এসে,কানে কানে বলল –

–” আজ পড়া না পারলে তোর টর্চার হবে!” ঠোটের দিকে ইঙ্গিত করেছে শ্রাবণ। স্নিগ্ধার মনে হচ্ছে শ্রাবণের চুল ছিড়তে!

শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে পুরো চাপ্টার আবার পড়াতে শুরু করে দিয়েছে। প্রায় ঘন্টা খানেক বুঝানোর পর বলল –

–” এবার এখান থেকে বল, কি বুঝলি?”
স্নিগ্ধা হাজার চেষ্টা করে ও বলতো পারলো না। তার চোখের সামনে সরষে ফুল গুলো ফুটতে লাগল।
পুরো সরিষা বাগান যেন বলছে তোর কপালে শনি গ্রহের নজর পরেছে রে স্নিগ্ধা! শিঘ্রই পালা এখান থেকে!”
স্নিগ্ধা টেবিল থেকে উঠে দৌড় দিতে গেলেই শ্রাবণ তার হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বলল –

–” কিরে পালাচ্ছিস কোথায়? এভাবে তো পালাতে দিব না! আমার পাওনা কোথায়?”
স্নিগ্ধার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়েগেছে পুরো! স্নিগ্ধার শ্বাস দ্রুত গতিতে উঠা নামা করছে। হায় কোন পাগলে পেয়েছে তাকে শ্রাবণের কাছে আসতে।শ্রাবণ স্নিগ্ধার গাল ধরে মুখটা কাছে এনে ঠোটে চুমু বসিয়ে দিয়েছে।

এরই মধ‍্যে স্নিগ্ধা ঠাস করে খাট থেকে পরে গিয়েছে। সঙ্গে বিকট চিৎকার করে উঠল সে নিজেই।

স্নিগ্ধার চিৎকার শুনে পুষ্পিতা দৌড়ে এলেন। তার পিছু পিছু শ্রাবণ ও ছুটে এসেছে । শ্রাবণকে দেখে স্নিগ্ধা অনেকটা হা হয়ে চেয়ে রইল! শ্রাবণ বাইরে কেন?

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here