ষোড়শীর প্রেমের মায়ায় পর্ব -১২

#ষোড়শীর প্রেমের মায়ায়!
#লেখিকাঃতামান্না
#পর্ব_বারো
[#খুনশুটি]

শ্রাবণের পাশ থেকে কিছুটা দূরে। শ্রাবণ আরেকটু কাছে আসলে স্নিগ্ধা বলল-

–” কি শুরু করেছেন এগুলো?”

–” কি করছি?”

–” কাছাকাছি আসছেন কেন?”

–” তাহলে কি করবো?”

–” দূরে থাকুন,”

–” পারবো না,”

স্নিগ্ধা বিছানা থেকে উঠতে চাইলে শ্রাবণ হাত ধরে বলল -“শুয়ে পর আমি কিছু করবো না!”
স্নিগ্ধা যেন শ্রাবণের কথাটা তেমন মাথায় ডুকালো না সে ঐদিকেই ফিরে শুয়ে রয়েছে। শ্রাবণ তা দেখে রেগে গেল। স্নিগ্ধাকে আরও কাছে টেনে নিয়ে বলল –

–” বললাম না কিছু করবো না, কথা না শুনলে কিন্তু যা ভেবেছিস তা করবো! যদি ভালো চাস তাহলে চুপচাপ ঘুমিয়ে পর।”
স্নিগ্ধা অস্বস্তি লাগছে খুব শ্রাবণের সঙ্গে জড়িয়ে শুয়ে থাকতে। শ্রাবণ স্নিগ্ধাকে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় ঘুমিয়ে পরল। আর স্নিগ্ধা উসখুস করতে করতে সারারাত পার করে দিল।

_______________________

পর্দা ভেদ করে ঘরের ভিতর সূর্যের আলো প্রবেশ করেছে।
সোনালী রঙ্গের পর্দাগুলো পুরো রুমকে উজ্জ্বলতায় ভরিয়ে তুলেছে। স্নিগ্ধার কিছুক্ষণ আগেই ঘুম ভেঙ্গেছে।
ঘুম ভেঙ্গেই শ্রাবণকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ দেখেই মেজাজ গরম হয়েগেল। কিভাবে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে শ্রাবণ। একটু নড়েচড়ে উঠবে তার ও উপায় নেই। স্নিগ্ধা শ্রাবণকে আস্তে আস্তে ঠেলে দিয়ে উঠে পরল বিছানা থেকে। তারপর ফ্রেশ হয়ে কিচেনের দিকে চলেগেল আজ শুক্রবার, ছুটির দিন। স্নিগ্ধা কিচেনের সামনে গিয়ে দেখল পুষ্পিতা নাস্তা বানাচ্ছে।
স্নিগ্ধা হাতে হাতে কাজ লাগতে চলেগেল। পুষ্পিতার হাত থেকে রুটি টা কেড়ে নিয়ে তাওয়ায় বসিয়ে দিল।
পুষ্পিতার মুখে মিটিমিটি হাসি, স্নিগ্ধা সেই হাসি দেখে বলল –

–” হাসছো কেন?”

–” কিছু না, ”

–” কিছু না বলছো? তুমি হাসা মানেই কিছু একটা আছে!”

–” এত কথা বলিস না তো, রুটি গুলো ছেকে পড়তে বস সামনে কত চাপ তোর। মেডিক্যাল এ চান্স পেতে হলে ভালোভাবে পড়তে ও তো হবে।”

–” পড়ছি তো, কত কষ্ট করছি!”

–” হ‍্যা দেখছি কি কষ্ট করছিস, তুই যেমন শ্রাবণ ও ঠিক তেমন! শুধু পড়া পড়ছে দুজনে লাইফে অনেক কিছু করে ফেলবে দুজনে। ফাকা বুলিই দুজন ছাড়তে পারিস কাজের কাজ কিছুই না। তা ঐ বাদড় টা কোথায়?”

–” তোমার বাদড় আমার বিছানায় পরে পরে ঘুমোচ্ছে।”

–” ডেকে আনলি না?”

–” না,”

–” নাস্তা প্রায় সব রেডি হয়েগেছে। ওকে ডেকে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বল।”

–” আমি পারবো না, ওর যখন মর্জি তখন উঠুক!”

–” মা আর বাবা কিন্তু বাসায়, এখন যদি তুই তাদের সামনে কিছু বলিস তাহলে কিন্তু তারা রাগ করবে।”

—” উফফ, তুমি ও খোচাতে শুরু করেছো!”

–” কোথায় খোচা দিলাম? যা বলেছি ঠিক বলেছি।
ও কে গিয়ে ডেকে এনে দুজনে নাস্তা করে ফেল। লক্ষীটি আমার এখন আর ঝামেলা করিস না, প্লিজ!”
স্নিগ্ধা পুষ্পিতার দিকে অসহায় চোখে চেয়ে তার রুমে গিয়ে দেখল শ্রাবণ এখনো ঘুমাচ্ছে। সে শ্রাবণের সামনে গিয়ে ডাকল

—” শ্রাবণ ভাই, এই শ্রাবণ ভাই!”

—-

–” শ্রাবণ ভাই,”

–” উমম,”

–” শ্রাবইনন‍্যা,”

—-

স্নিগ্ধা আশেপাশে তাকিয়ে দেখল তারপর পাশে তাকিয়ে দেখল তারপর তার চোখে পরল ময়ূরের পেখম যেটা তার রিডিং টেবিলের উপরে কলমের ঝুড়িতে ছিল। স্নিগ্ধা ময়ূরের পেখমটাকে হাতে নিয়ে খুব সাবধানে শ্রাবণের পাশে বসে পরল। তারপর আস্তে করে শ্রাবণের কানের কাছে গিয়ে সুরসুরি দিতে লাগল। শ্রাবণ ঐ পাশে চুলকিয়ে, ঘুমের মধ‍্যেই ভ্রু কুচকে আবার আরাম করে অপরপাশে ফিরেগেল। স্নিগ্ধা আবার এপাশ করে শ্রাবণের গলার কাছে সুরসুরি দিতে লাগল। শ্রাবণ গলায় ঠাস করে বারি দিয়ে উঠল। কিছুক্ষণ এমন করতে করতে শ্রাবণের ঘুমটা হালকা হয়েগেল। সে স্নিগ্ধার হাতের পেখম সহকারে স্নিগ্ধাকে টেনে তার কাছে নিয়ে এলো। স্নিগ্ধা ঠাস করে শ্রাবণের গায়ে পরেগেল। শ্রাবণ পিটপিট করে চোখ খুলে স্নিগ্ধাকে দেখতে লাগল। স্নিগ্ধার চোখ তখনও ভয়ে বন্ধ হয়ে আছে। শ্রাবণ কিছুক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে স্নিগ্ধার মুখে নিজের হাতটা ধরল। স্নিগ্ধা কেপে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে উঠে পরল। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল –

–” তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে আসুন, নাস্তা করতে হবে আপনাকে সবার সঙ্গে।” বলেই সে চলেগেল।

______________________

সোফায় বসে আছেন সেকান্দার সাহেব, পাশে সাজ্জাদ সাহেব বসেছেন। ব‍্যাবসা নিয়ে আলোচনা করার পর স্নিগ্ধা আর শ্রাবণকে ডেকে আনালেন তিনি। স্নিগ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বললেন –

–” কলেজ কেমন চলছে তোমার? পড়াশুনা ঠিকমত করছো তো? বিয়ে দিয়েছি বলে একদম উছন্নে পরে সর্বনাশ করে বসো না, পড়া চালিয়ে যাও।”

স্নিগ্ধা মনে মনে বলে – বিয়ে দিয়েছেনই তো জীবন ধংস করতে আবার বলেন উছন্নে না পরতে? বয়স হয়ে একদম তার ছিড়েগেছে দাদা শশুর মশাইয়ের।
মুখে ভদ্রতার হাসি ফুটিয়ে বলল –

–” না, জীবনে সব বিসর্জন দিলে ও ক‍্যারিয়ার বিসর্জন দিতে পারবো না।”

–” ভেরি গুড, আমার কাজ টাকে পাগলামো ভাবলে ও আমি যা করেছি আমার দৃষ্টিতে বুঝে করেছি, তা তোমরা বুঝবে না। দৃষ্টি সংযত রেখে চলবে দুজনকে বলছি!
তোমাদের দৃষ্টি যেন সংযত থাকে, তোমরা যেন অন‍্যকিছু করে না বসো তাই আমি বিয়ে দিয়েছি!” একমাত্র তোমাদের দুজনকে একসঙ্গে রাখার জন‍্য হলেও এই ধরনের স্টেপ নিয়েছি। কোন ভাবে দুজনের একজন ও যেন নিজেদের দাম্পত্য, এবং নিজেদের সম্পর্ককে ভুলে না যাও। বিবাহ বন্দনে আবদ্ধ অবস্থায় কোন হারাম সম্পর্কে না জড়াও। কি বলেছি বুঝেছো?”

–” জ্বী,”

–” শ্রাবণ!”

–” জ্বী দাদু,”

–” তুমি কোন ইয়ারে এখন?”

–” থার্ড ইয়ার, ”

–” ও, স্নিগ্ধা তুমি এখন যেতে পারো! এখন আমাদের কিছু পারসোনাল কথা আছে।” স্নিগ্ধা তাদের সামনে থেকে উঠে চলে এলো।

–” তো যেটা বলছিলাম, থার্ড ইয়ারে পড়ছো তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছো বুঝতে শিখেছো সব। স্নিগ্ধাকে আগলে রাখার বয়স তোমার হয়েছে। সামনে ফোর্থ ইয়ারে উঠবে তুমি তারপর তোমার অনার্স কমপ্লিট, মাস্টার্স কমপ্লিট হয়ে যাবে। বয়স তোমার খুব কম এই বয়সে আমার বিয়ে দেওয়াটা হাস‍্যকর তবে খুব যৌক্তিক ও বটে।
তুমি দেখেছো আমি খুব সামাজিক, অসামাজিক কাজ আমি অপছন্দ করি। বিশেষত পরকিয়া, বিয়ের আগে অন‍্য সম্পর্ক, এবং তালাক দেওয়া এগুলো আমি পছন্দ করি না। তাই হয়তো তোমাদের এই অল্প বয়সে কিছু যেন না ঘটে তাই বিয়ে দেওয়া। হয়তো তোমাদের কাছে আইনের বিরুদ্ধে, আসলেই আইনের বিরুদ্ধে কাজ অন‍্যায় ও বটে। এভাবে স্নিগ্ধার মত অল্প বয়সি মেয়েকে বিয়ে দেওয়া। আমি শুধু দুজনকে একটা সম্পর্কে জুড়ে দিতে চেয়েছিলাম। তবে দুজনের ঝগড়া দেখে আমার সেদিন মাথা ঠিক ছিল না। তাই দুজনকে এক করতে সাজ্জাদের কাছে পাঠিয়ে দিলাম। এর বিশেষ কারন তোমাদের মধ‍্যে যেন ঝগড়াটা কম হয় আর দুজনের মধ‍্যে একটা সম্পর্কের টান হয়। তুমি জানো বিয়ে দুজন বিপরীত মানুষকে এক বন্ধনে এক মুখী করে তুলে? জানো না? শুনো বিয়ে মানুষকে মানুষ হিসেবে কাছে টেনে নেওয়ার আহ্বান জানায় না। দুজন মানুষের মধ‍্যে মধ‍্যাকার দিক গুলো তুলে ধরে। একজন একজনকে সহজে চিন্তে এবং বুঝতে সাহায‍্য করে।

দুজনের মধ‍্যে টান আসে, দুজন মানুষ যখন একসঙ্গে থাকে তখন একজন না একজনের মধ‍্যে টান আসবেই তাই তোমাদের দুজনে এক করেছি। আজ আমি চাইবো তুমি সেই পথ থেকে কিছুটা সংযত করো। কারন স্নিগ্ধার আবেগের বয়স মেয়েটার মধ‍্যে একটা স্বপ্ন আছে সেই স্বপ্নটাকে পূরণ করতে দাও। আমি কথা দিচ্ছি সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি কি বুঝাতে চেয়েছি বুঝেছো?
স্নিগ্ধা বা তোমার দ্বারা কোন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু যেন না ঘটে তাই চাইছি!
সাজ্জাদ সাহেব বলতে চাইলে ও বললেন না কিছু।
শ্রাবণ মাথা নিচু করে বলল –

–” দাদু ভাই আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন, আমার বা স্নিগ্ধার দ্বারা এমন কিছুই হবে না।”

–” খুশি হলাম, ”

চলবে।
খুব কি বাজে লিখছি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here