#সবিনয়ে নিবেদন
#পার্ট:০৪
#বিনতে মাহনূর
(নিচের অংশ পড়ার জন্য অনুরোধ করার হলো)
বেলকনিতে দাড়িয়ে বাহিরের নিরবতা অনুভব করছি।বাইরে থেকে শুনসান নিরবতা থাকলেও আমার মনের মধ্যে প্রবল বেগে ঝড় বইছে।কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।বিয়ে শেষে আহনাফ একটা কথাই বলে ছিল।
____এখান থেকে এক পা বাইরে বেরনোর সাহস করবে না।ফল ভাল হবে না।
তারপর কথায় যে চলে গেলো এখনো ফিরে আসেনি।আমার ফোনটাও উনি নিজের কাছে রেখে দিয়েছে।ওনাকে যতো দেখছি ততো অবাক হচ্ছি।এই আহনাফকে আমি চিনি না। এ যে আলাদা দুজন মানুষ।
কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পরতে চোখ থেকে জরঝর করে পানি পরতে লাগলো।কি করে পরলো ওরা এমনটা করতে?
তখন ফোনের ওপাশে রায়া যখন কথা বলে উঠল,কয়েক সেকন্ডের জন্য মাথা কাজ করেছিল না।রায়া বললো,
____নূর,আমি রায়া।শুনতে পারছো?দেখো যা হচ্ছে মেনে নাও।বিয়েটা করে নাও।
____বিয়ে করে নিবো মানে?তুমি কি বলছো এসব?দেখো রায়া তোমরা নিশ্চয়ই মজা করছো আমার সাথে তাই না?এমন মজা বন্ধ করো প্লীজ আমার ভালো লাগছে না।
পাশ থেকে শুধু দীর্ঘশ্বাসের শব্দ পেলাম আমি।
____আমি জানি তুমি এসব মেনে নিতে পারছো না কিন্তু মেনে নিতে হবে।বিয়েটা করে নাও প্লীজ।আর যদি আমরা আর আহনাফের বিয়ের কথা শুনে বিয়ে না করতে চাও তাহলে বলব,আমাদের বিয়ে ঠিক হয় নিই।সবটাই একটা সাজানো প্ল্যান ছিল। বাকিটা আহনাফই তোমায় বলবে ওকে একটু সময় দাও। সরি নূর,এবার বিয়েটা করে ফেলো প্লীজ।
আমি আর কিছু বলার জন্য পাইনি। বাকরূদ্ধ হয়ে গেছিলাম।তারপর কি হলো জানি না।অনেকটা ঘোরের মধ্যে থেকে বিয়ে করে নিলাম।
এখন অপেক্ষা তার ফেরার।অনেক অনেক প্রশ্ন ঘুরছে মনের মধ্যে।এতো কিছু কেনো করেছেন তিনি।উনি তো মিথ্যা পছন্দ করতেন না তাহলে কি এমন হলো যে মিথ্যার আশ্রয় নিলেন।আর ওনার এই রূপ!এতো ভয়ংকর কবে থেকে হয়েছেন তিনি?আগে থেকেই নাকি এখন? আহ্,মাথা ফেটে যাচ্ছে।এতো এতো প্রশ্নের ছড়াছড়ি কিন্তু উত্তরের খোঁজ নেই।কথায় তিনি?এখনো আসছে না কেনো?
আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে লাভ হলো না উনি আসছে না।এদিকে সারা দিনের ধকল তারপর কান্না,এখন আবার ক্ষুদা সব কিছু মিলে আমাকে কাবু করে নিয়েছে।চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো।বেলকনিতে রাখা চেয়ারে ঘুমিয়ে পরলাম।
ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে কেউ গাল ছুঁয়ে দিচ্ছে।অপরিচিত স্পর্শে ঘুম ভেঙে গেলো।চোখ খুলে দেখি আহনাফ একদম আমার মুখের সামনে।বুকটা ধক করে উঠল।অস্বস্তি হচ্ছে খুব। যতোই ওনাকে ভালোবাসি না কেন কখনো তার এতো কাছে যাওয়া হয়নি।তিনি এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এবার আমার মধ্যে অস্থিরতা আরো বাড়তে লাগল।
তিনি হয়তো আমার অস্থিরতা বুঝতে পেরেছেন তাই আমার থেকে দূরে সড়ে গেলো কিন্তু তার দৃষ্টি এখনো আমার ওপর নিবদ্ধ।তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকালাম।তিনি কিছুটা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
____এখানে ঘুমাচ্ছিলে কেন?বেড কি চোখে পরেনি?
তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
____কেন করলেন এমন?এতো নাটক কেন করলেন?আমাকে বিয়ে করেছেন কেন?
তিনি ক্ষিপ্ত গলায় বলে উঠলেন,
____কেন বিয়েটা হয়ে বুঝি খুব ক্ষতি হয়ে গেল তোমার?ওহ আমি তো ভুলেই গেছিলাম এখন তো আর তুমি তোমার রাদের কাছে যেতে পারবে না,তাই না?
কথা গুলো বলতে বলতে প্রচন্ড রেগে উঠলেন তিনি।আমি অবাক হয়ে তার কথা শুনছি আর বোঝার চেষ্টা করছি কি বুঝাতে চাইছেন তিনি।
____এখানে রাদ ভাইয়া কোথা থেকে আসলো?আপনি এতো রেগে যাচ্ছেন কেন?আমাদের বিয়ের সাথে রাদ ভাইয়ার কি সম্পর্ক?
____এই খবরদার তুমি ঐ রাদের নাম মুখে নিবে না,তুমি শুধু আমার নাম নিবে।তোমার সব কিছুতে শুধু আমি থাকবো আর কেউ না ওই রাদ তো না ই।বুঝলে তুমি?ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও এই কথাটা।
____আপনি এমন ব্যবহার করেছেন কেন?আগে তো এমন ছিলেন না।
এবার তিনি রেগে আমার কাছে এসে আমার দু বাহু জোরে চেপে ধরে বলতে লাগলেন,
____বোঝো না তুমি?বোঝো না কেন আমি এমন করি?বুঝবে কি করে তোমার ধ্যান-জ্ঞান সব এখন অন্য কারো জন্য, right? আমি যে তোমার আসে পাশে আছি তোমাকে দেখলে তা মনেই হয় না।তুমি জানো আমি এমন কেন হয়েছি?
হাতে খুব ব্যাথা পাচ্ছি এতো জোরে ধরার কি আছে?আমি কি কোথাও পালাচ্ছি নাকি,অদ্ভুত লোক।ভয়ে ভয়ে মাথা ডানে বামে নাড়ালাম। যার মানে না আমি জানি না উনি এমন কেন হয়ে গেছে।কিন্তু জানতে চাই,কি এমন কারণ ওনার এমন হয়ে যাওয়ার পিছনে?আমার ভাবনার মাঝে উনি বলে উঠলেন,
____তুমি।
আমার মনে হলো কেউ আমার মাথার ওপর আকাশ ছেড়ে দিয়েছে।আর আকাশ ভাঙার শব্দে কানের মধ্যে ভো ভো আওয়াজ হচ্ছে।মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগচ্ছে।আমি!আমি কি করে ওনার এমন পরিবর্তনের কারণ হতে পারি?আমাদের দেখা হয়না প্রায় ২ বছর তাহলে আমি কি করে?কিছু বুঝতে পারছি না সব এলোমেলো লাগছে।
____আমি?আমি কি করেছি?
____হ্যা,তুমি।সব তুমি করেছো।তোমার জন্য আজ আমার এই অবস্থা।আর যার জন্য আমার এই অবস্থা তাকে কি করে ছেড়ে দিই বলো?
____তার মানে আপনি আমাকে শাস্তি দেয়ার জন্য বিয়ে করেছেন?কিন্তু কোন অপরাধের শাস্তি?আচ্ছা মানলাম আমি অপরাধী আর আপনি আমাকে শাস্তি দিতে চান।তাহলে এমনি দিতেন বিয়ে করলেন কেন?
উনি কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে আমার কি তাকিয়ে রইলো।আমার হাত ছেড়ে সোজা হয়ে বসলেন।মুখে হাসি এনে বললেন,
____তোমাকে যতটা বোকা ভেবে ছিলাম তুমি তার থেকেও বোকা।আর কি যেন বললে?(মনে করার চেষ্টা করে বললো)বিয়ে করার কি দরকার ছিল তাই তো?আসলে আমি কি ভেবেছি যানো?তোমাকে দূর থেকে শাস্তি দেয়া সহজ হতো না তাই কাছে নিয়ে আসলাম।এখন যে শাস্তিই দি না কেন কেউ কিছু বলতে পারবে না।(আমার দিকে একটু ঝুঁকে মুখের ওপর ফুঁ দিলো।সাথে সাথে চোখ মুখ খুচকে নিলাম আমি। তা দেখে তিনি হেসে দিলেন।আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলতে লাগলেন)কারন তোমার ওপর সব থেকে বেশি অধিকার এখন আমার, এমনকি তোমার থেকেও তোমার ওপর আমার অধিকার বেশি।বুঝলে বউ।
শেষ,আমি শেষ।ওনার এতো কাছে আসার কারনে বুকের মধ্যে এক প্রকার তবলা বাজানো শুরু করে দিয়ে ছিল।এখন আবার তার বউ বলে ডাকা যেন দম বন্ধ করে দিচ্ছে।আল্লাহ এতো নির্লজ্জ কেনো উনি।লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললাম।আমাকে লজ্জা পেতে দেখে উনি হেসে দিলেন।এমন সময় ফোন বেজে উঠলো।এটা তো আমার ফোন।আমি চোখ তুলে ওনার দিকে তাকালাম তিনি আমার দিকে তখনো তাকিয়ে ছিল,চোখ সরিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করে দেখলেন।মুহূর্তের মধ্যে তার মুখের রং বদলে গেলো।কি হলো কে ফোন দিয়েছে?ওনার মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠেছে কেন?আহনাফ কিছু না বলে সজোড়ে ফোনটা আছাড় দেয়।আমার মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে এলো,
____আঃ,আমার ফোন।
তিনি রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকাল আমার দিকে।ভয়ে আমি শেষ।আল্লাহ আজ কি আমার শেষ দিন?তাকে যতো দেখছি ততো অবাক হয়ে যাচ্ছি।উনি আমার দিক থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে বড় বড় নিশ্বাস নিলেন।পরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
____আজকের পর থেকে তোমাকে যেন রাদ এর সাথে যোগাযোগ রাখতে না দেখি।বিয়ের আগে যা করার করেছো কিন্তু বিয়ের পর আমার কথা মতো চলবে।
____মানে?রাদ ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ রাখব না কেন?
আহনাফ চিৎকার করে বললো,
____কারন আমি বলেছি তাই।বলবে না কথা ওর সাথে।এই তুমি বোঝা না আমার ভালো লাগে না তোমাদের এক সাথে দেখলে।রাগ হয় খুব রাগ হয়।মন চায় রাদকে শেষ করে দি।
বলে সামনের চেয়ারটা তে সজোড়ে লাথি মারে।রাগে থরথর করে কাপছে।ভয়ে আমার মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না।আর এদিকে রাদ ভাইয়ার সাথে কথা না বলেও তো থাকতে পারবো না।আল্লাহ কি করবো এখন?
উনি আবার বলে উঠলেন,
____বুঝেছো কি বলেছি?
মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলাম হ্যা বুঝেছি।উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হাত ধরে রুমে নিয়ে গেলেন। বেডের ওপর বসিয়ে দিয়ে খাবার নিয়ে আমার পাশে বসলেন।
____নাও ভালো মেয়ের মতো এবার হা করো তো।
মানে?উনি আমাকে খাইয়ে দিবেন?এই লোক তো দেখছি গিরগিটির থেকেও দ্রুত রং পাল্টায়।কিছুক্ষণ আগে রাগে ফেটে পড়ছিল আর এখন একদম স্বাভাবিক।
____আচ্ছা আপনি না আমাকে শাস্তি দেয়ার জন্য বিয়ে করেছেন তাহলে এসব কি?
উনি একপলক আমার দিকে তাকিয়ে আবার খাবারে মনোযোগ দিলেন।
____আগে খাও তারপর শাস্তি দিবো।না খেয়ে অসুস্থ হলে আমাকেই তো দেখতে হবে।
ওহ তাই বলি এতো ভালোবাসা আসলো কথা থেকে।
খুব ক্ষুদা পেয়েছিল তাই আর কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলাম।আমার সাথে তিনিও খেয়ে নিল। ভালো লাগছে খুব। উনি আমাকে খাইয়ে দিল। না না তার ওপর দুর্বল হলে চলবে না।এক ভুল দ্বিতীয়বার করবো না আমি।কাছে টেনে নিয়ে আবার দূরে করে দিবে।
খাওয়া শেষে তেমন কথা হলো না দুজন শুয়ে পরলাম।প্রথমে আমি একটু দ্বিমত করে ছিলাম কিন্তু ওনার ধমকে সুড়সুড় করে শুয়ে পরলাম।কিছুক্ষণ পর তিনিও এসে আমার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলো।ভালোলাগা, অস্বস্তি, ভয় সব একবারে ঝেকে ধরলো। ছোটাছুটি করতে শুরু করলাম।
____উফ,কি সমস্যা।চুপচাপ শুয়ে থাকো, জ্বালাচ্ছো কেন?
____কি করেছেন।ছাড়ুন এভাবে ধরে আছেন কেন?
____আমার বউকে আমি ধরেছি তাতে তোমার কি?
হাহ্,আমার বউ!শুধু বউ বউ করে কেন? বিয়েতো করেছে শাস্তি দিতে।আচ্ছা সত্যিই কি শাস্তি দিতে বিয়ে করেছে নাকি অন্য কিছু আছে যা আমি জানি না।ওনাকে জিজ্ঞেস করলেই তো হয়।
____শুনছেন?
____হু
____একটা কথা জানার ছিল।
____বলো কি জানতে চাও।
____সত্যি করে বলুন তো কেন বিয়ে করেছেন আমাকে?
এতো ক্ষখন তিনি আমার পিঠে তার মুখ গুজে ছিল,আমার কথাটা শুনে তিনি মাথা উঠিয়ে আমার দিকে তাকালো।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
____এখন বলতে ইচ্ছা করছে না,যখন ইচ্ছা করবে তখন বলবো।এখন ঘুমাতে দাও।
আমিও আর কিছু বললাম না।বড্ডো ক্লান্ত লাগছে।কখন যে দুচোখে ঘুম নেমে এলো বুঝতে পারিনি।
ভোরে চোখ খুলে দেখি…..
চলবে……
[আসসালামু আলাইকুম।অনেকে বলেছেন পর্ব বড় দিতে।আমি ভেবে ছিলাম একবারে একবারে এতো বর পর্ব না দিয়ে ছোট পর্ব হলেও প্রতিদিন ২/৩ পর্ব দিবো।এতে আমারও সুবিধা হতো আর আপনারাও ২/৩ পর্ব করে রোজ পরতে পারতেন।লিখতে অনেক সময় লাগে একবারে অনেকক্ষণ ধরে লিখা সম্ভব হয়ে ওঠে না কারন পরতে হয়।আজকের পর্ব বড় দেয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তেমন বড় করতে পারিনি।এখন আসি main topic এ।আপনারা বলুন রোজ ছোট ছোট ২/৩ পর্ব করে পরতে চান নাকি ১ টা বড় পর্ব।কমেন্টে জানাবেন। ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন।ভালো থাকবেন সাবধানে থাকবেন]