সমাধি পর্ব-০৭

#সমাধি🌹
#পর্ব -৭
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_______________________________”________°°_

– রাসেদ একটা বাড়িতে উঠেছে,বাড়ির উঠান বলতে গলি।
বেশ চাপা এরিয়াটা, সামনে আরেকটা বাড়ি, সেখানে মতি রাসেদকে নিয়ে গেলো।রাসেদের মত আরো ৩ জন অলরেডি সেখানে আছে।মানে মতি ভাই কি ব্যাচেলারদের ঘর ভাড়া দেয়? ইসস কত জানি ভাড়া চায় মাস শেষে।আলাপ করে নিলে ভালো হত।
তবে যাই হক ঘরটা পছন্দ হয়েছে।৪ জন কেন? ৬ জন ঘুমাতে পারবে। একটু হাটার জন্য জায়গা রেখে বাকি টুকুই বিছানা পাতা রয়েছে।
মাথা গুজার ঠাই হয়েছে বেশ ভালোই লাগছে।

— কি ঘর পছন্দ হয়?
” কি যে বলেন মতি ভাই,এটা তো আমার জন্যে রাজ প্রাসাদ।
– মতি পকেট থেকে একটা পান দানি বার করে সেটায় রাখা পান মুখে পুরে নিলো।
পান চিবুতে চিবুতে তাকে বলছে ঘরের অন্য সদস্যদের কথা।

ছোট ভাই ওরা দুইজন আমার দোকানে কাজ করে। আর ও তোমার মতই একজন।
ব্যাচেলার তো।তবে বেটার ঠাট আছে সরকারি অফিসের পিউন।
তুমি সারা মাসে যা পাও তার চাইতে বেশি তার ১৫/২০ দিনের ইনকাম।

আসলে ঐ ঘুস খুরটা ভাবছে তাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছে।তবে ঠান্ডা মস্তিষ্কে ওর অপমান হচ্ছে তা বুঝতে পারলে এমন কাজ করত!!!

“- রাসেদ নিজের ব্যাগটা কোথায় রাখবে একটু চোখ বুলাতেই তিন জনই ওর ব্যাগ নিতে হাত বারিয়ে দিলো। ভাই এখানে রাহো এখানে.
এই তো সত্যিকারের মানুষ। গরীবের ধন হয়তো নেই মন টা বিশাল।

ঐ বাড়িতে এত থাকায় যায়গা থাকলেও মনে যায়গা জুটেনি।
আর এখানে কত মিলিয়ে নিলো সবাই তাদের সাথে।রুমে যায়গা থাক বা না থাক মনে বেশ রয়েছে।

রাসেদ তাদের সাথে পরিচয় হয়ে নিলো এক সাথে থাকবে পরিচয় না হয়ে কি চলে?
মতি রাসেদের কাধে হাত দিয়ে বললো, কি ভাবো ছোট ভাই??
যদি ঘর ভাড়ার কথা ভাবো তাহলে মেলা টাকা দিতে হবে।আর যদি আমায় ভাই ভাবো তাহলে ফ্রি!!!

– রাসেদ মতির কথাটা বুঝলোনা তা ওর মুখ দেখেই বুঝা যায়।
মতি পানের পিকটা ফেলে রাসেদের উদ্দেশ্যে বললো। এরা কেউই ঘর ভাড়া দেয়না, মানে নিইনা বলতেও পারো।ঘর তো পরেই থাকতো। তাই তোমাদের মত দুই একজনের উপকারেই আসুক।তবে হ্যা খাওয়া দাওয়া আমার এখানেই করবে।আমার বোন কানে কম শুনলেও বেশ রান্না জানে।
মাঝে মধ্যে বাজার টা সেরো
আর বিদুৎ বিলটা ৪ জন মিলে দিয়ে দিও।

—–রাসেদের চোখে পানি চলে এসেছে।আজো দুনিয়ায় এমন মানুষ হয়? যাকে আপন ভেবে এ শহরে এসেছিলাম সে তাড়িয়ে দিলো, আর যাকে রাস্তায় পর মনে হচ্ছিলো সে তার ঘরে নয় তার মনেও ঠাই দিলো।

বেশ ভালো মনের মানুষ মতি ভাই, সত্যিকার অর্থে মানুষ এমন ব্যাক্তিকেই বুঝায়।। জীবনে যদি কোন উপকারে আসতে পারি উনার। নিজেকে সার্থক মনে করব।

– ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এলো রাসেদ-
সব বুঝলাম মতি ভাইয়ের ঘরে কি বৌ নেই? শুধু বোনের কথাই বলেছে, তাহলে কি বিয়েই করেনি?

————–★

“- অনু রাসেদকে কত ফোন দিচ্ছে তার হিসাব কষেনি।
তপুর ফোনটা দিয়ে বার বার ট্রাই করছে কিছুতেই কাজ হচ্ছেনা।
এদিকে বাবা নাকি বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে, বাবা কি পাগল হল। আমি রাসেদ ভাইকে ছারা কাউকেই বিয়ে করব না কিছুতেই না।
দরকার হলে পালিয়ে যাবো রাসেদ ভাইকে নিয়ে।

★আকলিমা অনুকে বুঝাতে এসেছে,হাতে খাবার। খেয়ে নে অনু,মিথ্যা জেদে কাজ হবে না।তর বাবা তর ভালোই চাইবে।ছেলে অস্ট্রোলিয়ায় থাকে। বেশ বড় ব্যাবসায়ি তর বাবার তো কোন চিন্তাই থাকবে না তোকে নিয়ে।
আর তুই চাইলে তর বিয়ের পরে পড়াশুনা করতে পারিস। ছেলেটা বড় লক্ষী মানা করবেনা।

” মা হয়ে মেয়ের মনের কথা যে না বুঝে সে কেমন মা? তাকে মা বলে ডাকা যায়!
— কি সব বলছিস অনু!
” অনু তার মায়ের দিকে করুন চাহনি দিয়ে প্রশ্নটা করেছে।টাকাই কি তোমাদের জন্য সব? এক মাএ মেয়ের খুশি কি তাতে নয়!!!

দেখ মা তর বয়সই বা কত।তুই তর ভালো মন্দের কি বুঝবি? আমরা তো তর খারাপ চাইবোনা।
অনুর চাহনি আকলিমা বুঝতে পারল না, নাকি না বুঝার ভান।
আকলিমা এখানে বসতে চায়না। কারন অনুর কথায় নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারবে না, আর না ওর আকুতি শুনতে পারবে। অনু এখনও মুখ ফুটে কিছু বলেনি।এবার হয়তো লজ্জা সরম বাদ দিয়ে মুখ খুলে দেয়।, না না থাক যে ভাবে আছে সেভাবেই।

মা..হ!
.আকলিমা চলে জেতে নিলে অনু ডাক দিয়ে তার মায়ের চলতি পা দুটো থামিয়ে দেয়।
— আকলিমা পিছন ফিরে তাকাতেই অনু তার সিদ্ধান্ত জানালো, যত কিছুই করো।তোমরা তোমাদের জেদ রাখো আর আমি আমার জেদ বজায় রাখবো।
ভুলে যাবেনা আমি তোমাদেরই মেয়ে।

“আকলিমা কিছু আন্দাজ করতে পারল।মেয়ের মতি গতি ঠিক নয়। দরজা টা বাহির থেকে
লাগিয়ে তালা বদ্ধ করে দিলো।মেয়েকে এভাবে খাঁচায় আটকানোর ইচ্ছাতো নেই তবে কোন রিক্স নিতে পারব না।

————-_____________′

“- জায়গাটা বেশ ভালো লেগেছে রাসেদের। মতি ভাই আর তার রুম পার্টনাররা বেশ বড় মনের মানুষ। ঠিক তার গ্রামের মানুষের মতই।
আর মতি ভাইয়ের বোন বেশ ভালো রান্না জানে।তবে একবারও ডাক দিয়ে সারা পায়নি।আসলে জুড়ে ডাকতে হবে।কানে কিছুটা কমই শুনেকিনা। চেহারাটাও দেখার ভাগ্য হয়নি মেয়েটার।

তবে সব মিলিয়ে বেশ আছে।, অফিসে যাচ্ছে আসছে শ্বাস নিচ্ছে। তবে মনের মধ্যে একটা হা হা কার তা অনুর জন্যেই।মেয়েটা যা ছেলে মানুষি করে না জানি কাঁন্নার ঢেউ তুলেছে।

ফোনটা তো শেষ এটা দিয়ে একটা চকলেটও পাওয়া যাবেনা।
কালকেই বেতন।আহ কি যে আনন্দ।
টাকাটা পেলেই বাড়িতে টাকা পাঠাবো। আর একটা ফোন না হলেই চলবে না।অনুটার সাথে কথা না বলে আর পারা যায়না।

ওর কলেজে তো যাওয়া যেতো তবে বেশ খানিকটা ঘুরা হবে।
অফিস সেরে তো আর ওর কলেজ খুলা পাবেনা।আর না যাওয়ার সময় তাকে পাবে।রিতিমত একদিন বন্ধ করতেই হবে।

— আর ওর নীল শাড়িটা!! হ্যা কালকেই অনুর জন্য নীল শাড়িটা কিনব। মতি ভাইয়ের দোকানে বেশ ভালো ভালো শাড়ি আছে।এই বাজারের সেরা দোকানটাই মতি ভাইয়ের।

শাড়িটা নিয়ে ওর কলেজেই চলে যাবো।বাড়িতে গেলে এবার হয়তো গলা ধাক্কাই না খেতে হয়।

হাজার সপ্ন নিয়ে রাসেদ চোখ বুজেছে।চোখ বুজেও অনুকে নীল রঙের শাড়িতে দেখতে পায়। আচ্ছা ওর শাড়ির সাথে মেচ করে একটা পান্জাবি নিলে কেমন হয়?
একদিন দুজনে একটু ঘুরে বেরাবো…
“- মুহুর্তেই হাসি মুখটা মলিন হয়ে উঠলো।জেগে থেকে সপ্ন দেখা বন্ধ কর রাসেদ। কি ভাবছিস তা কি এজীবনে হওয়া সম্ভব???

আর অনুটার মনেকি তাইতো আজ অবদি জানলাম না।অনুর জন্যে আমার যে টান অনূভব হয়। সেটাকি সেও করে? নাকি শুধু মোহ।

আর সেই মোহ কি কাটিয়ে উঠেছে? ভুলে গেছে ওর রাসেদ ভাইকে।নাকি মনে পরে।

এমনিতেই যা লেখাপড়া জানিনা সামনে পরিক্ষায় গনিতে কত বড় ডিম পায়।হায় আল্লাহ কোন মত পাস টা করিয়ে দিও। নয়তো ওর জল্লাদ বাবা ওর বিয়ে না দিয়ে দেয়।

— ঐ মিয়া মনে মনে কি ভাবো আর হাসো??
” সেলিম ভাই!!
আপনি ঘুমাননি??

– ঘুমাচ্ছিলাম তো, পানি খেতে উঠে দেখি তুমি মিয়া মিট মিট করে হাসছো,আবার মন খারাপ করছো।তা কি ভাবছো এ্যা???

——

“——–না না সেলিম ভাই তেমন কিছু না, চলুন শোয়া যাক।

“- সেলিমকে বলে তো দিলো তবে নিজের ঘুম কই!…

!— —-

বহু কষ্টে রাত পার করেছে রাসেদ।অফিসে পৌছই প্রথম বেতনটা হাতে পেয়ে আনন্দের সিমা ছারিয়ে গেলো। লান্চ টাইমটা হওয়ার আশায় রাসেদ মতি ভাইয়ের দোকানে ছুটে যাবো আর শাড়িটা কিনব।

অপেক্ষা শেষ এক বন্ধুর বাইকটা নিয়ে মতির দোকানে রাসেদ নীল রঙের যা শাড়ি ছিলো সব ঘেটে একটা শাড়ি সিলেক্ট করল।বেশ মানাবে অনুকে।চুল গুলো খুপা করে এই কালারের একটা ছোট্ট টিপ পরলে না “রমনী “গল্পের ঠিক রমনীর মতই লাগবে।

উল্লাসিত হয়ে রাসেদ অফিসের নিচে গাড়ি পার্ক করেছে।বেশ ভালো লাগছে।মনে হচ্ছে শাড়ি না সপ্ন কিনে এনেছে।আর বার বার অনুর কথা স্বরন করাচ্ছে হাতের এই শাড়ি।

মনের উল্লাস মুহুর্তেই মিলিন–

সামনে কেউ দাড়িয়ে আছে,তার জন্যেই অপেক্ষায় ছিলো। রাসেদ ধিরে পায় সেই মানুষটার সামনে দারিয়ে হা হয়ে রইলো…
এখানে কেন এলো???

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here