সমাধি পর্ব-০৬

#সমাধি 🌹
#পর্ব _৬
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_____________________________
“- রাসেদ তার ব্যাগটা কাধে নিয়ে সারাদিন এদিক সেদিক ঘুরে বেরিয়েছে। গত কালকের রাতটা একজনের বাড়িতে কাটিয়েছে তারই অফিসের সহকর্মীর ।তবে সেখানে বহু কষ্ট হয়েছে রাসেদের কারনে।

৩জন থাকার জায়গায় ৪ জন একটা রুমে বেশ গাদাগাদি।ওর সহ কর্মীরা না হয় একরাত দেখলো পরে বাকি দিন গুলো তো সম্ভব নয়।

একটা থাকার জায়গা না হলে হবেই না।যা পরিস্থিতি তাতে মনে হয় আজকে রাস্তায় ঘুমাতে হবে।
ফোনটার যে কি হল বন্ধ হয়ে রয়েছে।কয়েকবার চেষ্টা করেও খুলা গেলো না, ,রাসেদ তো জানেই না কেউ একজন ওর চিন্তায় অধির হয়ে বার বার ফোন দিচ্ছে।

অফিস থেকে আজকের ছুটিটা নিয়েছে।রাসেদ বেশ ভদ্র ও সত্যবাদী নিশ্চই কোন কারন আছে ছুটি নেয়ার। একমাস হয়নি জয়েনিং , এত কষ্ট করে চাকরি নিয়ে কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে ছুটি চাইবেনা।

আর ম্যানেজারের কাছে রাসেদের সহকর্মীরা রাসেদের জন্য বহু বলে কয়ে ওর ছুটি মন্জুর করিয়েছে।

—- সন্ধা হয়ে এলো।ওর কোন সহ কর্মীই কোন থাকার জায়গার খুজ দিতে পারল না।রাস্তায় হাটলেতো থাকার জায়গা পাওয়া যায়না।তার উপরে ব্যাচেলারদের ঘর ভাড়া দিতে চায়না।

কোন ব্যাচেলার পয়েন্টে একজনের জায়গা কি নেই।

“- হতাশায়ছেয়ে গেছে মুখ।রাসেদ জানে বাস্তব কঠিন জায়গা।তবে এতটা কঠিন হবে তা ভাবেনি।
—–বড় একটা গাছ তলে বসেছে রাসেদ.
গাছটার নিচে বেশ পরিস্কার জাগয়া। ইট দিয়ে চারিদিকটা সুন্দর করে গাথা, বসার জায়গা টা বেশ অবশ্য শুয়ে থাকলেই বা কি।

গাছের ছায়া তলে বসে আছে বহু মানুষ।কেউ চা বা কেউ আমড়া ছিলে বিক্রিতে ব্যাস্ত।

খেটে খাওয়া মানুষ ওরা, ঠিক রাসেদেরই মত।নিজের জীবন যোদ্ধে নেমেছে।
কি যে করব কিছুই বুঝতে পারছিনা।
এতক্ষনে হয়তো অনু জানতে পেরেছে আমি আর ফিরবনা। হয়তো কালকেই জেনেছে।জানিনা অনু কি করছে। বেশ অভিমান করেছে হয়তো ওর রাসেদ ভাইয়ের উপরে।

ক্লান্ত লাগছে তাই ব্যাগটাকে বালিশ বানিয়ে গাছের তলে একটু বিশ্রাম নেয়া যাক।

অন্ধকার হয়ে আসছে একটু পর তো আর কিছুই দেখা যাবেনা।
অনুটা বেশ মান করেছে হয়তো।একটা ফোনও দিলোনা। দিবেই বা কি করে? ফোনটাই তো নষ্ট হয়ে গেছে।
ধুর ভাললাগেনা।

চা ওয়ালারাও এবার তাদের জায়গা পরিবর্তন করেছে,শুধু রাসেদই হয়তো গাছ তলায় রবে।
— রাসেদের পাশ দিয়ে এক ভদ্রলোক দুইবার এলো আবার গেলো।কি জেনো দেখছে বার বার।রাসেদ ফলো না করলেও এবার কিছুটা আন্দাজ করলো।একটা লোকবার বার এপাশ ওপাশ করছে।বাপরে কোন ছিনতাইকারি না তো।ধুর হলেইকি।এই পুরাতন কাপর নিয়ে গেলে যাক।

———

“*খেয়ে নে বলছি অনু,তর বাবা কিন্তু এবার রেগে যাবে।
-কাল থেকে অনু না খেয়ে।আজ কলেজে গেলোনা।শুধু নিরবে চোখের পানি ঝরাচ্ছে।রাসেদ ভাইয়ের কাছে টাকা নেই।থাকার জায়গা নেই জানিনা উনি কোথায়, নাকি পথে পথে ঘুরছে।

‘খাবারের প্লেটটা অনুর সামনে রাখতেই শরিলের সমস্ত জোর দিয়ে অনু প্লেটটা ছুরে মারলো। বিকট শব্দে কামাল এবার অনুর ঘরে হাজির। আকলিমা আর শব্দ করল না। দেখা যাক কামাল কি করে।

—কি হচ্ছে অনু!
” অনু তার চেপে রাখা রাগটা আর চেপে রাখতে পারছেনা,ইচ্ছা করছে সব তছ নছ করে দিই।কি অপরাধে রাসেদ ভাইকে তারালে । কি হত যদি বাড়ির একটা কোনায় রাতে মাথা গুজতো।

অনু তার রাগ টা কন্ট্রোল করতে না পেরে ঘরের সমস্ত কিছু তছ নছ করে দিলো।
তোমরা বড্ড সার্থপর বড্ড সার্থপর।টাকা তোমাদের অমানুষ করে তুলেছে।

“- যা নয় তা বকছিস অনু, কি হয়েছে সোজা করে বল।আর ঘরের এসব চুরমার করছিস কেন?
একটু স্বাভাবিক স্বরই কামালের।

অনু চুপ…

অনু জবাব দিচ্ছিস না কেন? কাল থেকে কি নাটক শুরু করেছিস। কামাল এবার রাগেই কথা বলছে। কারন এত বলার পরেও মেয়ের মুখে কথা নেই কেন?
আর কি বাজে বকছে।

অনু তার বাবার সামনা সামনি দাড়িয়েছে,বেয়াদপ তো নয় তবে আজ বেয়াদবিও করবে, ।কাঁদতে কাঁদতে চোখের নিচে কালচে হয়ে আসছে।
বাবার মুখো মুখি হয়ে অনুর প্রথম প্রশ্ন।
______রাসেদ ভাইকে তারালে কেন?

” কামাল একটু নরম হয়েই জবাব দিলো,তারালাম কই? ওতো নিজেই চলে গেছে।
— মিথ্যা তুমি মিথ্যা বলছো।রাসেদ ভাই নিজ ইচ্ছায় এবাড়ি ছারতেই পারে না।তাও আমায় না বলে।তোমরা তাকে তারিয়ে দিয়েছো।
ছি ছি বাবা তুমি কত ছোট মনের মানুষ।একটা অসহায় ছেলেকে এভাবে বাড়ি থেকে তারালে?

অনু একটু বেশি বারাবারি হচ্ছে। ঐ ছেলেকি এখানে আজীবনের জন্য এসেছিলো? আর তুই এত বেয়াদপ হলি কবে থেকে।
বাবার মুখে মুখে তর্ক করছিস।

“– তাচ্ছিল্য হাসি হেসে অনু তার বাবার কথার জবাব দিতে প্রস্তুত।
বাবা তর্ক করছিনা সত্যি বলছি।

একটা রাস্তার ছেলের জন্যে তুই আজ এমন করছিস?
আর এই সব বেয়াদবি কি ঐ ছোটলোক রাসেদ শিখিয়েছে তোকে।

রাসেদ ভাই ছোট লোক নয় বাবা, ছোট লোক তুমি।

বিছানায় ছিটকে পরেছে অনু, সেন্সলেস হয়ে পরেছে।
মেয়ের শরিলের দিকে না তাকিয়ে মিথ্যা জেদ দেখাচ্ছো। আর আজ মেয়ের গালে হাত তুললে??

এই মাএ কামাল অনুকে ঠাটিয়ে চর মেরেছে যা অনু সামালতে না পেরে বিছানায় ছিটকে পরেছে।

— আকলিমা কামালের সাথে পেরে উঠবেনা জেনেও তাকে একটু শুনিয়ে দিলো।

” মেয়ে হাত থেকে ফসকে গেছে, শুধু তর জন্যে। ওর লেখা পড়া সব বন্ধ। ওর মোবাইলটা নিয়ে নে।
যত তারাতারি সম্ভব ওকে বাড়ি থেকে বিদায় দিবো।
কামাল শা শা করে বেরিয়ে গেলো।রাসেদকে তো ছারবেনা, মেয়েটার মাথায় কিসব ঢুকিয়েছে কে জানে।আজ আমার সাথে কি ব্যাবহারটাই না করল।

– আকলিমা চুপ চাপ অনুর ফোনটা নিয়ে নিলো। কামাল চলে গেছে।আকলিমা মেয়েকে দুফুটা পানি ছিটকা দিয়ে জাগানোর দরকার মনে করল না।শুয়ে রয়েছে সেই ভালো। উঠে আবার হৈচৈ শুরু করলে ওর বাবা ওকে মেরেই ফেলবে।জালেমের ঘরে জন্ম হয়েছে শাস্তিতো পাবেই।
কোন অলুক্ষে দিনটা সেদিন ছিলো ঐ রাসেদকে থাকতে দিয়েছিলাম।

————

“- তুমি কি শহরে নতুন!!
ভদ্রলোকটি রাসেদের মাথার কাছে দাড়িয়ে প্রশ্নটা করল।
রাসেদ উঠে বসেছে কেউ তো ওর সাথে কথা বলতে এগিয়ে এলো।

কি!মিয়া নতুন নাকি? সারাদিন এদিক সেদিক ঘুরছো। যাবে কোথায়।

— না নতুন না তবে আবার নতুনের মতই বলতে গেলে।তবে আমি এদিক সেদিক ঘুরছি তা জানলেন কি করে?
” আরেহ আসলে অচেনা কাউকে দেখলে একটু নজরদারি করি, দিনকাল তো ভালোনা। এখানে দুবার এলে,তার পর ঐ গলিটায় ঢুকলে।সব দেখেছি।ঐ যে দেখছো শাড়ির দোকান আমার দোকান ওটা। একটা কর্মচারীকে তোমার পিছন লাগিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিলো তোমার ব্যাগে বোমা টোমা হয়তো।

“বোমা কথাটা শুনতেই রাসেদের হাসি কে দেখে। কি বললেন বোম? নিজের কাছে মোম কেনার পয়সা নেই আর বোম.

তা এখন কি মনে হচ্ছে আমায় দেখে?বোম ফাটানোর জায়গা পাইনি!
“- আরেহ না না তা নয়।দেখেতো মনো হচ্ছে বহু সংকটে রয়েছো, তা কি সমস্যা??

—- আসলে আমি একটা থাকার জায়গা খুজছিলাম। চাকরি পেয়েছি নতুন তাই হাত খালিই বলতে গেলে।
ব্যাচেলারদের ঘর ভারা দেয় না।ব্যাচেলার পয়েন্ট গুলোতে জায়গা নেই।যাই একটা পেয়েছি তাতে এডভান্স চায়।

ওহহ বুজছি গ্রামের মাল তুমি শহরে চাকরি করতে এসেছো!

— কি করে বুঝলেন গ্রামের মানুষ। তোমার শরিলে গ্রামের মাটির গন্ধ পেয়েছি।
ঠিক আমার মত।
” আপনিও গ্রাম থেকে? রাসেদ অনায়াসেই প্রশ্নটা করে উঠলো।
– ভদ্রলোকটা রাসেদের পাশে বসেছে।রাসেদের কাধে হাত দিয়ে বললো হ্যা , আমিও গ্রাম থেকেই।এখানে এসেছি সেই এককাল আগে।এখন এখানেই সব আমার।
শহরের মায়ায় পরেছিলাম আর কাটাতে পারিনি সেই মায়া।

—- ভদ্রলোকটার বয়স তেমন বেশিনা আঙ্কেল ডাকলে বেশ মন্দ দেখাবে কারন সেই বয়সটা নয়, বড় ভাই! হ্যা তা ডাকা যায়। এতটুক বড় ভাই হতেই পাড়ে।

“- তবে উনার আমার কাহিনিটা সেম,মায়ায় পরেছে।আমিও তো মায়ায় পরেছি আর আটকে গেছি।উনিও কি তেমন কারো মায়ায় আটকেছে?

— বড় ভাই আমিও মায়ায় আটকেছি না পারছি ছারতে না শক্ত করে ধরতে।
তাচ্ছিল্য হাসি সহ লোকটা বললো ছোট ভাই মায়ায় পরা তেমন বড় ব্যাপার না।তবে মায়ায় পরে নিজেকে জ্বালানো আর সেই জ্বালা সজৎ করাটা কঠিন।

” রাসেদ লোকটার কথা না বুঝলেও একটুকু বুঝলো,উনিও কারো মায়ায় পরেছিলো তা ব্যার্থ হয়েছে।
নাকি সফল??

— তোমার নামটাকি ছোট ভাই?
” রাসেদ ভাবনা থেকে ফিরে উনার কথার উওর দিলো – রাসেদ, রাসেদ রহমান।

ওহহ আমার নাম মোতালেব সরকার সবাই মতি ভাই বলে, তুমিও তাই ডেকো।
এখন চলো দেখি..
” মতি রাসেদের ব্যাগটা টেনে নিজের কাধে নিলো। রাসেদ অবাক হয়ে রইলো, আমায় বোমা হামলাকারী ভাবলো এখন তো আমার মনে হচ্ছে উনিই ছিনতাই কারি।

—- আরে হা করে দেখো কি! আমায় বড় ভাই ডাকলে না?আর তোমার ব্যাগে কোন ইন্টারেস্ট নাই,তোমার থাকার জায়গার দরকার তাই বলছি চলো আমার সাথে। গাছ তলা থেকে তো ভালোই হবে।

সেই ভি আই পি বাড়ি না তো আমার।তবে মাথাটা শান্তি মত বালিশে রেখে চোখ বুজতে পারবে।
________♪

———-সকাল হতেই অনু চোখ মেললো। বেশ ক্লান্ত সে অনেক দূর্বলতায় ভুগছে।একটু এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো ফোনটা নেই।মেজাজটা আরেকটু খারাপ হল, ফোনটা তো এখানেই রাখা ছিলো,ঘরটা পরিষ্কার করা,হয়তো কাজের লোকদের দিয়ে ভাংঙা জিনিস পত্র সরিয়েছে।

বাহিরে বের হবার উদ্দেশ্য করে দরজায় টান দিতেই বুঝলো বাহির থেকে লক করেছে তাকে।
কিন্তু কেন? সে তো পুষা প্রাণী নয় তাহলে কেন খাঁচায় আটকাতে চায়???

জানালা মেলে কাউকেই দেখতে পেলো না। অনেক ক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর তপুর দেখা মিললো।

শরিলে তেমন জোর নেই যে জোরে তপুকে ডাকবে।তাই টেবিল থেকে ক্যালকুলার টা নিয়ে জানালা দিয়ে ছুরে দিলো। আর সেটা সরন করে অনুর দিকে নজর গেলো তপুর।

আপু! কি হয়েছে তর, তর চোখ মুখ এমন কেন রে?
— তপু ভাই আমার সব বলছি,আগে দরজাটা খুল।

দরজা খুলার কথা শুনতেই তপু পিছপা।

আপু আমায় মাফ কর,দরজা খুললে বাবা আমায় জানে মেরে দেবে। কিছু লাগলে বল এনে দিই।

—-কিন্তু কেন? আমায় আটকে রেখেছে কেন?
আর খুললে মারবেই বা কেন?

“আপু জানিস বাবা তর বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে আর বলেছে এই দরজা তখনই খুলবে যখন বর যাত্রী বাড়ি আসবে।

—— অনুর তর্ক বা কথা বলার কোন ইচ্ছাটা নেই।জোরই পাচ্ছেনা।তপুর কথা শুনে বেশ কাঁন্না পাচ্ছে এখন কি করবে?

রাসেদ ভাই তুমি কোথায়।তোমার সাথে যে আমার কথা বলার দরকার।কি করি কিছুই বুঝতে পারছিনা। কোন ভাবে ফোন টা হাতে পেলে……

যদি তোমায় না পাই তাহলে আমায় কেউ পাবেনা রাসেদ ভাই।তুমি তোমার অনুকে ভুললেও তোমার অনু তোমায় ভুলবে না।

একটিবার তোমার সাথে কথা বলার দরকার।

” চলবে”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here