সমাধি পর্ব-০৫

#সমাধি ♦️
#পর্ব –৫
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_____________________________
“- কামাল সাহেব মাএ অফিস থেকে ফিরল, হন হন করে নিজের রুমে এলো।মাথায় রাগে কিলবিল করছে। এই মূহুর্তে কাউকে খুন করতেও পিছপা হবে না।

-আকলিমা”
“এমন কর্কশ গলায় বহু বছর পর কামাল তার স্ত্রীকে ডাকছে।তবে এত জোরে চেচামেচির দরকার কি! আকলিমা তো ঘরেই।নাটকে মজেছে।এদিকে আরেক নাটক হচ্ছে তার খবরই নেই।

– কামালের এমন স্বরে আকলিমা অবাক,কি হল উনার?
উঠে দাড়াতে দেরি হলেও গালে কষে একটা থাপ্পর পরতে দেরি হয়নি।
” চোখে জল ছল ছল করছে,কাঁন্না করতে গেলে আরেকটা পরবে গালে।তাই চাপা কাঁন্না শুরু।
—- সারা দিন খাই আর শুই।অনুর খবর রাখিস?
মেয়ে কোথায় জানিস?

” অনু নাম শুনতেই আকলিমা নরে উঠলো। মানে? কি করেছে অনু!! ওতো ঘরে।
– তর মেয়ে ছাদে রাসেদের সাথে ছিলো এত ক্ষন। তাও রাসেদের কাধে মাথা রেখে বসে ছিলো।ছাদের কোনায়। গাড়ির ভিতরে থেকেও স্পষ্ট দেখতে পারছিলাম।
” আকলিমা থ মেরে গেলো,অনুতো ঘুমিয়ে রয়েছে দুইবার দেখে এসেছিতো।
—চুপ।
ঘুমিয়ে রয়েছে। তাহলে কি আমি ভুল দেখেছি বলছিস?
বাড়িতে আর কি কি হচ্ছে শুনি যা আমার জানা নয়।

____________★

” অনু তার রুমে এসে চাদরে নিজেকে জরিয়ে শুয়ে পরেছে।
আজকে মনটা বেশ ভালো লাগছে।অনেক দিন পর রাসেদের সাথে মন খুলে কথা হল।
আড্ডায় বসে এতটা ভাবুক হয়ে গিয়েছিলো কখন যে অনুর মাথাটা রাসেদের কাধে চলে গেছে টেরই পেলো না।
রাসেদ দেখেও না দেখার ভান ধরে রইলো কিছুক্ষন, ভালোইতো লাগছে থাকনা কাঁধে মাথাটা।
তুই আমার কাঁধটাকে তর বিছানা ভাবছিস নাকি?
অনু রাসেদের প্রশ্নের উওর দেয়াটা দরকার মনেই করল না।চুপ করে বসেই রইলো।

—রাসেদ তার অফিসের দিন কিভাবে যায়,তার নতুন বন্ধু কে কে হল। তার কাজ এসব নিয়ে অনুর সাথে আলাপ শুরু করেছিলো। তবে অনুর সেসবে মাথা না ঘাটালেও দুজন দুজনের পাশে থাকার মূহুর্ত উপভোগ করছে। দুচোখ বুজে রঙিন সপ্নগুলোকে ধাপে ধাপে গুছাচ্ছে।

“রাসেদ তো আগেই ছাদের এক সাইডে বসে ছিলো। তখন অনু এসে জোগ হল তার সাথে। অনু জানতো রাসেদ এত তারাতারি ঘুমিয়ে পরবে না।ছাদে বসে আকাশ দেখবে।
— আচ্ছা রাসেদ ভাই,তোমার অফিসে কোন মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব্য হয়নি?

কথাটা হঠাৎ করে আসেনি অনুর মাথায়।কয়দিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। রাসেদের অফিসে যদি কোন সুন্দরী রমনী রয় আর রাসেদকে নিজের বসে করে নেয়?? তখন অনুরে তর কি হবে?

——-রাসেদ বেশ বুঝতে পারছে,অনুর পেঁচানো কথার মানে, অনু জানতে চায় অফিসে কারো সাথে রাসেদের ভাব সাব হওয়ার চান্স আছে কিনা।।
তাহলে একটু মজা তো এখন করাই যায়। রাসেদের মাথায় সয়তানি বুদ্ধি হাজির।

“- হ্যা হ্যা অবশ্যই আছে,জানিস ওরা কত ভালো,আমিতো সারাক্ষণ তাদের সাথেই আড্ডায় থাকি।ঐখানে তো এসবই করতে গেছি।চাকরিতো বাহানা। ইস শাড়ি পরে বৃষ্টি যখন আসেনা আহ কি বলবো।তুই এসব বুঝবিনা ছোট তো তুই।

প্রথম রাসেদের কথায় তো জ্বলছিলো।তবে শেষের কথাটায় বেশ রেগেই গেলো। কিহহহ আমি ছোট??আর বৃষ্টি কে রাসেদ ভাই?
অনু রাসেদের ঘার থেকে মাথা সরিয়ে ঠোট বাকিয়ে আরেক প্রশ্ন ছুরে দিলো।

বললেই চিনবি নাকি?আমাদের অফিসের না না শুধু অফিস না আমার দেখা সেরা সুন্দরী।

রাসেদের হাতে এক চিমটি কেটে দিয়েছে অনু, রাসেদ মজা করছে তা মুখ দেখে বুঝতে অনুর বাকি নেই।ওর চাপা হাসি সব বলছে।তোমার আবার মেয়ে বন্ধু হুম হয়েছে হয়েছে। এত ঢপ দিও না। পেটে হজম হয় না।

“*তারা বেশ কিছুক্ষনই বসে আড্ডা দিচ্ছিলো।অনু চুপ করে রাসেদের কথা শুনছিলো আর রাসেদ বলেই চলছিলো। বার বার অনুর খুলা চুল গুলো বাতাসে উরে এসে রাসেদের মুখে পরছিলো।তবে এটা বিরক্ত কর নয়।বেশ আনন্দের।চুল গুলো মুখে লাগলেও রাসেদ তার কথা বন্ধকরেনি।
অনুভূতিটা আরাল করে তার বক বক চালিয়েছে।

“- কামালের গাড়িটা দেখে দুজনই ভয় পেয়ে গেলো।গেইট থেকে বেশ লাইটের আলোয় তাদের আগেই দেখতে পেয়েছিলো। অনু আর রাসেদ ভাবলো হয়তো দেখেনি, অনু ভো ভো করে দৌড়ে নিজের রুমে এসে শুয়ে পরলো।

এখন লুকিয়ে লাভ নেই, কামাল যা দেখার দেখেছে।আর আকলিমা তো বিছানায় চাদর দিয়ে ঢাকা বালিশটাকে অনু ভেবে শান্ত হয়ে বসে ছিলো। তবে মেয়ে এতটা চতুর তা ভাবতে পারেনি। ওর জানা উচিত ছিলো মেয়ে কত সেয়ানা।

– রাসেদ কিছুটা ভয় পাচ্ছে আঙ্কেল কিছু দেখলো না তো?
না না মনে হয় না নিচ থেকে উপরে ফলো করেছে। এসেইতো ছাদের দিকে তাকিয়ে রবে না।
তার পরেও বলা যায় না।

“- আকলিমা আর লোকাতে পারল না সব কামালকে জানিয়ে দিলো।
কামাল সব শুনে ইচ্ছা করছিলো আকলিমার গলা টিপে মেরে দিই।এত কিছু চলছে আর আমায় বলার দরকার মনে হল না।

হুম কামালকেই এবার যা করার করতে হবে। বেশি দেরি না হয়ে যায়।

———-★.

পরদিন সকালঃ-

“- অনু কলেজ যাবার সাথে সাথে কামাল ও আকলিমা ছাদে পা বারিয়েছে।
– রাসেদ সব গুছিয়ে বের হবে বলে।তবে তাদের আসতে দেখে থমকে দাড়িয়েছে।বেশ গম্ভীর দেখাচ্ছে।হয়তো তেমন কোন কারন রয়েছে।

“- রাসেদ আজকেই তুমি তোমার সকল পুটলি পাটলা নিয়ে বিদায় হবে।
রাসেদ বেশ বুঝতে পারছে তারা এখানে থাকার যায়গা দিবে না।তবে এমন হুট হাট করে তারিয়ে দিবে ভাবেনি।

“-আঙ্কেল আমার তো এখনও কোথাও থাকার যায়গা জুটেনি।তবে ৩/৪ দিন সময় দিন আমি চলে যাবো।
—- কামাল কোন তামাশা করতে চায়না, শেষে দেখা যাবে রাসেদ চলে গেলেও কলঙ্কের কালি তার আর তার মেয়ের গালেই লাগবে।
দেখ রাসেদ আমার মুখ খুলাস না, তোকে দয়া করে থাকতে দিয়েছিলাম,আর তুই কিনা আমারই ইজ্জতে হাত দিতে দিদ্বা বোধ করিসনি।

—- রাসেদের চোখ বেশ বিচলিত অবস্থায় দেখাচ্ছে।তাহলে কালকে আঙ্কেল আমাদের ছাদে দেখেছে।তবে আমরা তো কোন পাপ করিনি।বসে কথাইতো বলছিলাম।
রাতে কিছু বলেনি অনু যাবার পর সব ঘাটছে মানে অনু এসব জানেনা।

——-দেখ রাসেদ তুই তর সবকিছু নিয়ে বিদায় হো।চাইলে আমি কিছু টাকা দিই তবুও তুই বের হো।
” রাসেদ হালকা হাসি দিয়ে কামালের কথার উওর দিলো।থাক না আঙ্কেল এত উপকারের কি দরকার। বের করে যখন দিচ্ছেন তখন আর দয়া করতে যাবেন না। তবে আপনি আমার সম্পর্কে যা ভাবছেন তা ভুল।
যে কারনে আমায় তারাচ্ছেন,তা কিন্তু সত্য নয়।

– আকলিমা ও কামাল চুপ চাপ দাড়িয়ে।এখন কথা বারানো নয় বিদায় করে তখন দেখা যাবে।ওর ব্যাবস্থা তো করতেই হবে।বাড়িতে কাজের লোকেরা জানলে পাঁচকান হবে।
রাসেদের তেমন কিছুতো এখানে নেই কয়েকটা কাপর বাস।ব্যাগটায় সব কোন মত ঢুকিয়েছে।বেশ কাঁন্না পাচ্ছে তার।এতটা দিন ছিলোতো এখানে একটা মায়া পরে গেছে।

না অনুর সাথে আড্ডা হবে আর না দেখা।মনে হচ্ছে বাড়ি নয় পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছে।চোখে জল নিয়ে কামালের থেকে বিদায় নিয়েছে।

চলি আঙ্কেল দোয়া করবেন। কিছু না শুনেই বলে দিলেন আপনার ইজ্জতে হাত দিয়েছি। , জীবনে বহু কিছু শিখেছি, কিছু বই থেকে কিছু বাস্তবতা থেকে তবে রাসেদ যে থালায় খায় ঐ থালা ফুটো করতে শেখেনি।

———–***______

“- অনু বাড়ি ফিরেই রাসেদের খবর শুনলো তবে বিশ্বাস করেন, সিরিতে পা দেবার আগেই আকলিমার গলার আওয়াজ।উপরে কেউ নেই অনু।তাই পা ব্যাথা বানিয়ে ছাদে জেতে হবে না।

– কেউ নেই মানে? মা আমিতো ছাদে যাচ্ছি, একটু খুলা আকশের বাতাস খেতে। কারো সাথে দেখা করতে নয়।
” চুপ কর নিলজ্জ মেয়ে।কোথায় কার সাথে দেখা করার আশায় যাচ্ছিলি সব জানি।

অনু এবার ভয় পেয়ে গেলো মা এত কিছু জানে? ভয় পেয়ে মায়ের সাথে তর্কে জরালোনা।সোজা নিজের ঘরে চলে গেলো।

রাসেদ ভাই ফিরলে চুপি চুপি দেখা করব,দেখি আমায় কে আটকায়।

“- রাত ১০ ঘড়িতে মেন গেট বন্ধ করে দিয়েছে। বন্ধ করল কেন? রাসেদ ভাই আসবে কি করে?

তপুর থেকে জানতে পারল রাসেদ বাড়ি থেকে চলে গেছে।
তপুর কথা বিশ্বাস করেনি অনু।হয়তো মজা করছে।তপুর কাজই মজা করা। তবে কেমন সন্দেহ সন্দেহ লাগছে তখন মায়ের কথা।এখন তপুর।

কোন দিক না তাকিয়ে অনু ছাদের ঘরে ছুটে গেছে। সত্যি বলেছে তপু,এই ঘরে আর রাসেদ ভাই নেই আলনাটা ফাকা।
টেবিলে কোন উপন্যাসের বই নেই। তার মানে সত্যি রাসেদ ভাই চলে গেছে।
কিন্তু কেন? যাবার আগে একবার বললো না। কাল তো উনার সাথে কত কথাই হল তাহলে বললো না কেন?

★রাসেদ ভাই নিজের ইচ্ছায় গেছে, নাকি মা তারিয়ে দিয়েছে। যদি মা রাসেদ ভাইকে তারিয়ে দিয়ে থাকে তাহলে এই বাড়িতে অনুও রবে না।রবেনা তার রাসেদ ভাইহীনা।

★চলবে★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here