সমাধি পর্ব-০৪

#সমাধি ♦️
#পর্ব -৪
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_____________________________
_”—- অনুর কথা মতই রাসেদ নাস্তাটা করে বেরিয়ে গেছে।অনুর মুখে হাসি ফুটেছে,রাসেদকে খাইয়ে অফিসে পাঠাতে পেরে। তবে এই ঘটনা তো শুধু তাদের দুইজনের মধ্যেই সিমাবদ্ধ রইলো না।
মেয়ের সকল কর্ম কান্ডে আকলিমা নজর রাখছে, কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। জিনিসটা ধামা পাচা দিতে চায়।অনু আর রাসেদের মধ্যে তেমন কিছু ঘটার আগেই সরিয়ে নিতে চায়।
যদি অনু টের পায় আমি সব জানি, তাহলে আরো সতর্ক হয়ে যাবে।
তাই না জানার ভান ধরে থাকতে হবে।

—– অনু ভাবছে তার কোন কিছুই কারো নজরে পরেনি।তাই বিন্দাস মন মতই চলছে।
মনে প্রথম প্রেমে পরার ছোয়ায় বার বার শীতল বাতাস তাহার পরানে বয়ে চলে।

রাসেদকে যাবার বেলায় মন থেকে শুভ কামনা জানিয়েছে।রাসেদ যতই মুখে হাসি এনে চলে যাক।তার ভিতরে চাপা একটা কষ্ট তো রয়েই গেলো।
ঘরটা ছারতে হবে।যদি বলতো ছাদে খুলা যায়গাই থাক তাতেও রাজি আছি।তবে একেবারে বিদায় হয়ে অনুর দেখা মিলতে কষ্ট হবে।

আর কি সব ভাবছি,অনুতো আমায় নিয়ে মনে হয় না তেমন কিছু ভাবে।কারন ওর মত মেয়ে সবাইকেই দয়া করে। আর সেই দয়ারই কোন পাত্র আমি।
এখানে আছি কষ্ট করি তাই দয়াটা জন্মেছে।

আচ্ছা আমার এই অনুর জন্যে মায়াটা কি করে কবে জন্মালো? আর এই মায়া কাটাবো কি করে?
করতে হবে রাসেদ করতে হবে জীবনে সব চাওয়া কখনো পাওয়া হয় না।আর যা কপালে নেই তার আশা রাখা অবান্তর।

নীল আকাশটার দিকে তাকিয়ে কথাটা ভাবতে ভাবতেই বাস চলে এলো।ভাবনা ছার রাসেদ এবার কাজে চল।নিজের মনকে নিজে শান্ত করে চললো তার অফিসে। এই আবেগি ভাবনায় নিজেকে ডুবালে তার সাথে যে পুরো পরিবারটা ঢুববে।

“- কলেজে অনু বার বার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে। কখন কলেজ ছুটি হবে সেই আশায়। অবশ্য রাসেদের ফিরতে দেরিতো হবে।তাতেকি আমি আগে গিয়ে না হয় ওর পথ চেয়ে রবো।
একটা আলাদা খুশি চোখে ঝল মল করছে।

—— আকলিমা বেগম সারাদিন ভাবনার মধ্যে।আমার মেয়ে হয়ে অনু পঁচা শামুকে পা কাটলো।
কামাল কে তো বলতে চায়, তবে মেয়েটার পড়াশুনাই না বন্ধ করে দেয়,সেই ভয়টাই আকলিমা পাচ্ছে। একটা রাস্তার ছেলের জন্যে মেয়ের ভবিসতৎ আঁধারে ফেলতে পারিনা।

“——

” রাসেদের অফিসে প্রথম দিন বেশ কষ্টকরই ছিলো।অচেনা মানুষ,কাজের তেমন কোন অভিজ্ঞতা নেই,তাই বহুবার হিম সিম খেয়েছে।

রাসেদ খুব মিশুক ছেলে তাই কিছুদিনের মধ্যেই নতুন বন্ধু ও কাজের ধরন সব নিজের আয়ত্তে করে নিয়েছে।
অফিস থেকে আসতে আসতে মাঝে মধ্যে সন্ধাও হয়ে যায়,
দুপুরে/ সকালে বাহিরে খাওয়া দাওয়া হয়। কে দেবে তার সময় মত খাবার! তবে অনুতো চায় রাসেদের সব কিছু দেখাশুনা করতে।চাইলে সব হয়না। নিত্যদিন তো ওর জন্য নাস্তা নিয়ে যেতেও পারবেনা। আর বাহিরে খাবার জন্য রোজ রোজ টাকা কোথায়?
১০ টাকার একটা রুটি তার পেট চলে।

— অনুর পড়াশুনা রাসেদের কাছে বন্ধ। নতুন টিচার রেখেছে।একজন মহিলা.. বিকেলে এসে তাদের দুইভাই বোনকে পড়িয়ে বিদায় নেয়।

নতুন মেডাম টা অনুর একটুও পছন্দ হয়। রাসেদ ভাইয়ের কাছে পড়তে চায় অনু। রাতে তো একটু সময় দিতেই পারত। এই মেডামের কাছে পড়বেনা বলে বহু জেদ ধরেছিলো অনু।কুলিয়ে উঠতে পারল না আকলিমার রাগের সাথে।আর কামালের লাল বর্ণ চোখ দেখেতো গলা দিয়ে শব্দ বেরই হলনা।

“-
———
আরেহ বাহ ঈদের চাঁদ আমার ঘরে আজ??
– অনু চোখটা পাকিয়ে রাসেদের ঘরে ঢুকে গেছে।
সন্ধা হল,রাসেদ ফ্রেস হতেই যাচ্ছিল, মাএ এসেছে সে।তার অফিসটা এখান থেকে একটু দূরেই হয়ে যায়,তাই আসতে আরো লেট।

” বাহ নিজের দেখা জেনো রোজ পাই।
পকেট থেকে একটা আঁচারের প্যাকেটবার করে অনুর সামনে ধরেছে।
–নে খা।

আচাঁরের দাম টা পাঁচ টাকা, তাতেকি? একদিন সকালে চা না খেলে মরব না।সকালের নাস্তাটাই তো ফুটপাতের থেকে কেনা এক কাপ চা।

— খাবোনা আগে বলো আমায় পড়াও না কেন? ঐ মুটকি মেডামের কাছে আমার পড়তে ভালো লাগেনা রাসেদ ভাই।
“রাসেদের বলার কিছু নেই, অনুতো জানেই না ওর রাসেদ ভাইতো ওকে পড়াতে চায় ,ওর মা বাবা না চাইলেতো পড়াতে পারিনা।আর এটা অনুকে জানালে সে ওর মা কে কিছু উল্টা পাল্টা বলে না দেয়।তখন তো দিন শেষেও দেখা মিলবে না।
রাসেদ ব্যাপারটা চেপে গেলো।

কেন?
আমিতো তোকে শান্তি দিইনা তর শত্রু আমি,তাহলে এখন তর ঐ মিত্রের কাছে পড়তে সমস্যা কি?

অনুর মায়া করা চাহনি।রাসেদ ভাইকি এতটাই অবুঝ!নাকি নাটক করে?
সব কি আমায় বলতে হবে? জানেনা উনি আমার উনার কাছেই পড়তে ভালো লাগে।

— তোমার সাথে কথা বলা তো দূর দেখাই হয় না।না পড়াও, তোমার সাথে কথা বলার কি ইচ্ছা আমার হয়না?
” অনু কিছুটা লজ্জাহীন হয়েই রাসেদকে কথাটা বলেছে। কথাটা মনে ভালো লাগা কাজ করলেও রাসেদ তা প্রকাশ করতে পারছেনা।
সে তো আর অনুর মত ছোট নয়।যে হুট হাট কিছু বলে বসবে।
চোখ গুলো নিচে নামিয়ে তোয়ালেটা কাধে নিয়ে রাসেদ অনুকে বিদায় জানালো।

— অনু! তুই বস আমি আসছি।
“কত পালাবে রাসেদ ভাই,তুমিকি আমার মন বুঝোনা।এত পালিয়ে বেরাও কেন?
এই কথা টুক মুখে এসেও অনুর গলা দিয়ে বের হল না।

কি আজব না! দুজন দুজনকে কাছে চায়।আবার ভয়ও পায়।
রাসেদ শত দিক চিন্তা করেই অনুর থেকে দূরত্বটা বজায় রাখে।তবে অনুতো বাচ্চা মেয়ে বয়সই কত।তাই এমন কান্ড করে।ওর কথা মত সব হলে এ বাড়িতে কি এই শহরে থাকা মুসকিল হবে।

” অনু ঠায় দাড়িয়ে।মেয়ে হয়ে এতটুক বলে দিলাম, আর এই দামরা ছেলেটা জবাবই দিলোনা।ভুল হয়েছে রাসেদ ভাইয়ের মেয়ে হওয়া উচিত ছিলো,তাহলে উনার লজ্জা পাওয়া শোভা দিত,
এর নাম রাসেদ নয় লাজুক লতা হওয়া উচিত ছিলো।

——–

” রাসেদ ইচ্ছা কৃত ভাবেই অনুর থেকে দূরে থাকছে। কারন আকলিমা বেগমের সব কথা বার্তা আর ব্যাবহার কিছু একটা মিন করেই বলা।কিছু হয়তো আন্দাজ করতে পারছে।যার কারনে এই ব্যাবহার।

তাই অনুকে দূর থেকে দেখে চোখের জ্বালা মিটালেও কথা বলে মনের জ্বালা মিটাতে গেলো না।

— রাসেদ কম খরচের মধ্যে একটা ব্যাচেলার রুম খুজছে অন্য পার্টনারের সাথি হলে তো কথাই নেই।অফিসের অনেককেই বলেছে।দেখা যাক।

চলে যাবো তা অনুকে আগে থেকে জানিয়ে কষ্ট দিতে চাইনা, যখন যাবো তখন তো দেখবেই।

আর এক সপ্তাহ,বেতনটা হাতে পেলেই অনুর জন্যে নীল রঙের শাড়িটা কিনব।বলবো চুপি চুপি হলেও জেনো শাড়িটা পরে দেখায়।

– অনুর ঘুম আসছে না।রাসেদও ছাদে একলা বসে সময় পার করছে।এই সোজগ সবাই ঘুমিয়ে যাই রাসেদ ভাইয়ের সাথে একটু আড্ডা জমাই।

“চুপি চুপি চলে তো গেলো অনু ।তবে এর ফলাফল যে রাসেদের জন্য ভয়ানক হতে পারে তা তো অনু অন্দাজ করতেই পারল না।ওর একটু সময় কাটানোর জন্য হয়তো রাসেদের সারাজীবনের সময় নষ্ট হতে পারে……৷


(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here