সমাধি পর্ব-০৩

#সমাধি♦️
#পর্ব–৩
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা।
_____________________________
“- ৩/৪ দিনের কথা বলে আজ ৬ দিন পার হল রাসেদের আসার খবর নেই।
ফোন আছে নাম্বারও আছে তবে ফোন দেয়ার সাহস নেই।

—— আকলিমা সকাল সকাল উঠেছে সকাল বলা চলবে না।
এখনও বাহিরে অন্ধকার।৪ টা বাজে একটু পরে আজান হবে।

এত সকালে আকলিমার জাগার কারন কামাল সাহেব ঢাকার বাহিরে রৌনা দিবে।সকাল সকাল বের হলে সময় মত পৌছাতে পারবে।আর তার জন্যে নাস্তা তৈরি করতেই উঠা হয়েছে।
তবে ভাবেনি সকাল বেলায় উঠে এমন কান্ড দেখবে।

— অনু রুমে নেই।
দরজা মিশিয়ে লাগানো,বুঝার উপায় নেই দরজাটা খুলাই, এই সময় মেয়েটা কোথায়? নাহ তপুর ঘরেও দেখা মিললো না।
ধুম করে কামালকে জানানো ঠিক হবে না,মনে একটু খটকা দিলো।ছাদে গিয়ে দেখবো!!

হলের সব কয়টা লাইট অন করে ছাদে উঠেছে আকলিমা।
– চোখ গুলো বেরিয়ে আসার ন্যায়। অনু রাসেদের ঘরে কেন??

ওর বিছানার এক পাশে হাটু দ এর মত করে মাথা গুজে বসে রয়েছে।

অনু!!
আকলিমা বেগমের সারা পেয়ে অনু ভয়ে তার বুক দরফর করছে।

“মা ঐ আসলে।
কি আসলে এত রাতে তুই এ ঘরে কেন?
— মা মানে ঐ নোট নিতে!!।

“ঘরে যা অনু।
অনুর ঘাবরানো স্বাভাবিক নয়।কোন কারন হলে সোজা বলে দিতো তবে বিনা কারনে এ ঘরে কেন? নোট নিতে তাও এই সময়! আর এসে বসে রইলো কেন?
আকলিমা বেগম তো জানেই না, তার মেয়ে রাসেদের ঘরটায় আজ কয়দিন ধরেই বাসা বেঁধেছে।বিছানায় রাসেদের শরিলের গন্ধ পায়। আর সেই গন্ধ রাসেদের উপস্থিতির উপভুগ করায়।

অনু ছুটে চলে গেলেও আকলিমা ঠায় দাঁড়িয়ে। ব্যাপারটা কিছু আন্দাজ করা যায়।অনুর যা বয়স তা আকলিমার কোন কালে ছিলো।

————

“- আজও রাসেদ এলোনা।কেন এলোনা, কবে আসবে? অনুর যে কিছুতেই মন টিকছেনা।
আকলিমা অনুকে এ ব্যাপারে আর কিছু জিজ্ঞেস করল না।
কেঁচো ঘুরতে গিয়ে সাপ না বেরিয়ে আসে।

“- রাসেদ ভাইয়ের চাকরিটা হল!নাকি না? উনার বাবার অনেক শরিল খারাপ? তেমন কিছু না হলে এত দেরি করছে কেন?

~~~~~~~~~~

“-কলেজে যাবার সময়ও অনুর মুখে হাসি নেই।না সারা দিনের কোন কাজ বা পড়ায় আর খাওয়ায়।মন কোথায়, হাটে সময়ও হুস নেই।পাগল পারা তার রাসেদ ভাইয়ের জন্যে।

তবে কলেজ থেকে ফিরে এসে খুশির অন্ত নেই।

” রাসেদ ভাই!!!
রাসেদকে মাএ রিক্সা থেকে নামতে দেখেছে অনু। গেটের কাছে দাড়িয়ে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে।
কত জনম পর দেখা মনে হচ্ছে।

রাসেদ বেশ করে অনুর দিকে তাকিয়ে।ব্যাপারটা আকলিমা ছাদ থেকে লক্ষ করেনিলো।তার সন্দেহ ঠিক।আর তা ঠিক হলে রাসেদ এই বাড়িতে থাকতে পারবেনা।

নিশব্দতা নিয়ে দুজনই বাড়িতে ঢুকেছে।মনে দুজনেরই আনন্দ।তবে রাসেদের ডবল আনন্দ।
অনুকে দেখতে পাওয়ার আনন্দ, আবার চাকরি টা পেয়ে গেছে সেই আনন্দ।

“হাতের মিষ্টির প্যাকেটটা আকলিমা বেগমের হাতে দেয়ার উদ্দেশ্যে এখনও দাড়িয়ে আছে রাসেদ।

আকলিমা একটু ভিন্ন রকম চাহনি নিয়ে রাসেদের দিকে এগুচ্ছে।সিরি দিয়ে নামছে আর তাদের দেখছে।
নেমেই শাষনি গলায় মেয়েকে ঘরে জেতে বলে দিলো।
অনু তার মায়ের কথা মত রুমে চলে গেলো।ধুর একটু পরে আসতো মা, তাহলে রাসেদ ভাইয়ের সাথে একটু কথা বলতে পারতাম। জিজ্ঞেস করতাম এতদিনে আসার সময় হল নাকি।

— আন্টি আমি চাকরি পেয়েছি।
” ওহহ!!
তাই নাকি।
– জ্বি।রাসেদের হাসি মুখ।
“- ভালোই হল, তা কে দিলো?
— আমি অনেক জায়গাই চাকরির জন্য এপ্লাই করেছিলাম।তার মধ্যে কিছু খানে ইন্টারভিউ দিয়েছি।আর সেখান থেকেই একটা জব পেয়েছি।

” ওহহ তাহলে তলে তলে এত দূর।তা নিজেই চাকরির জোগার করতে পারো, তাহলে এত দিন এখানে তোমার আঙ্কেলের ভরসায় ছিলে কেন??
ওহহ ঘাড়ে বসে বসে খেলে আর কি কয়দিন,আর এখন অন্য খানে চাকরি জোটালে।

— আকলিমা বেগম আর যাই হক এভাবে এই প্রথম ব্যাবহার করল রাসেদের সাথে।তবে চাকরি পেয়েছে এজন্য নয়, বিষয়টা অন্য রকম।
ভিতরে একটা জেদ ভরতি তাই।

রাসেদ মাথাটা নত করে দাড়িয়ে, এখানো উওর দেয়ার মত শব্দ সে পাচ্ছেনা।

একবার ইচ্ছা করছিলো বলি,
আন্টি আপনাদের চাকর যে বাসায় পরে কাজ করে তাকে মাসে ১৪ হাজার টাকা বেতন দেন। তার উপরে খাওয়া/ থাকা, জামা কাপর সব।দাড়োয়ানটাকে সেই রকমই।
আর আমি!!
দুজন কে পড়াচ্ছি যতটা সময় পারছি। একটা টিচার রাখলে কত টাকা বেতন দিতে হত!!
আপনাদের বাজার করছি।
ফুলবাগানে মালির কাজ করছি।এসব করে মাসে কত টাকা বেতন হয় আমার!একটি বার হিসাব কষে দেখুন না।আপনি আর আঙ্কেল তো হিসাবে বেশ পাক্কা।

মুখে এসেও কথা গুলো গিলে নিলো।যাই হক অচেনা শহরে আশ্রয় দাতা তারাই ছিলো।

আকলিমা বেগমের হাতে মিষ্টিটা দেয়ার সাহস হল না।হয়তো এত টাকা খরচ করে আনা মিষ্টিটা ফেলে দেবে।

— চুপ চাপ ছাদের দিকে পা বারাতেই আকলিমা বেগমের কড়া আদেশ।চাকরি হয়েছে তা এখানে আর কি!!
এবার অন্য কোথাও ব্যাবস্থ্যা করো।ঐ ঘরে অনু আর তপুর নতুন স্যার থাকবে।

,কয়দিনে এমন কি হল! রাসেদের চোখের পানি শার্টে ঝরেছে। কিছু করার নেই।এর মধ্যে স্যার ঠিক করে নিলো? নাকি করবে?
কেন চাকরি করলে এখানে থেকে অনু আর তপুকে পড়ানো যেতো না নাকি?

রাসেদের কোন শব্দ নেই চুপ চাপ বেহায়ার মত উপরে চলে গেলো।
ঐ দিকে অনুর খুশির অন্ত নেই। রাসেদ ভাই চলে এসেছে।তবে বাহিরে কি হল তার খবরই নেই।

“—–
পড়তে যাবে আহ কি আনন্দ।বেশ ভালো লাগছে। সুন্দর করে সেজে তৈরি অনু।পড়তে যাচ্ছে না পার্কে জানা নেই।
রাসেদও অনুর আসার পথ দেখছে।

তবে মাঝ পথে যে অনুর বাধা পরেছে।
কোথায় যাস অনু!!
— বিরক্তিকর প্রশ্ন মা।বই পএ নিয়ে ঘুরতে তো যাবোনা।
রাসেদ ভাইয়ের ঘরে যাচ্ছি পড়তে।
কথাটা শেষ করে সিরিতে পা দেবার আগেই আকলিমা বেগমের নিষেধ।

” না রাসেদের কাছে পড়তে হবেনা।
— পড়তে হবে না মানে? অনুর সমস্ত শরিল রাগে ছম ছম,
উক্তেজীত গলার আওয়াজে তার মায়ের উপর চেচিয়ে উঠলো।

— পড়ব না?কেন পড়ব না ??
“আকলিমা বেশ চতুর মহিলা,সে জানে মেয়ে জেদী।তাই রাগে নয় হিতে সব মানাতে হবে।

মুহুর্তেই আকলিমার কুচকানো কপাল টা মিলিয়ে গেলো।অগ্নি কর মুখটা হাসি মাখা হয়ে উঠলো।
আরেহ এত রাগ করছিস কেন?
দেখ অনু রাসেদ তো নতুন চাকরি পেয়েছে। ওর অনেক ঝামেলা হয়ে যাবে।তার উপরে তদের দুজনকে পড়ানো।
কয়েকটা দিন যাক চাকরিতে মানিয়ে গুছিয়ে নিলে তখন পড়িস।এখন ওর মাথাটা ওর কাজে লাগাতে দে।

” রাসেদ ভাই চাকরি পেয়েছে!কই বললোনা তো!মনে মনেই অভিমান অনুর। তবে মায়ের কথাটাও ঠিক।রাসেদ ভাইয়ের নতুন চাকরি মাথায় হয়তো অনেক টেনশন।থাক কয়েকটা দিনেরই তো ব্যাপার।

– অনুর সাথে তপুর পড়াটাও বন্ধ করে দিলো আকলিমা। অনুর সন্দেহ হতে পারে
অনেক ক্ষন অপেক্ষায় কাটিয়ে রাসেদ এবার নিচে এসেছে।
কামাল সাহেবকে কিছু বলার জন্যে।

“আঙ্কেল আসবো?
কামাল মাথার ইশারায় রাসেদকে ঘরে ডেকে নিলো।আয় আয় রাসেদ তর কথাই তর আন্টি বলছিলো।
— আকলিমার নরম চোখ রাসেদকে দেখে গরম,কামালকে এখনও অবদি কিছু জানায়নি,মেয়ের সব কথা বাবাকে বলা যায় না।

” আসলে আঙ্কেল…
আরেহ দাড়িয়ে কেন বস বস তার পর বল কি খবর।
— আকলিমা এখনও চোখ গরম করে রয়েছে। কিছু বলতে পারছেনা,কামাল জানলে আরো খারাপ হবে।নিজে নিজেই বিদায় হলে আর কিছুর দরকার নেই।

” সোফার কোনায় বসে তার চাকরির কথা জানায়।
— কামাল কিছু ভেবে হালকা হাসি দিয়ে বললো ভালোই হয়েছে।তা এখন তো তুই চলেই যাবি!! তা কবে যাচ্ছিস?

“- ভেবেছিলো কামাল অন্তত বলবে থাকতে।না তা বলেনি,আরো জানতে চাইলো যাচ্ছি কবে।

– মন খারাপ করেই বা আর কত,এত নির্লজ্জ হলে তো হবে না।চলে জেতে বলছে চলেই যাবো।অনুকে ওর কলেজে গিয়ে গিয়ে দেখে আসবো।
” আঙ্কেল আসলে পরশু জয়েন , গেলেই তো হাতে টাকা পাবোনা।আর থাকার একটা ব্যাবস্থা না হওয়া অবদি যদি থাকতে দিতেন!!!!

— ওহহ, তাই তো।আচ্ছা তর থাকার জায়গা না হওয়া অবদি থাক।তবে চেষ্টা কর ১০/১৫ দিনের মধ্যেই চলে জেতে।
যেহেতু তর চাকরি হয়েছে,আমার ছেলে মেয়ের পড়া শোনার জন্য নতুন মাস্টার চাই।আর তার জন্যে একটা ঘর চাই।বুঝতেই তো পারছিস।
ঢাকায় এত ব্যাচেলার রয়েছে যে এমন বাড়িতে থেকে খেয়ে পড়াতে হবে জানলে তো ধেই ধেই করে এখনই চলে আসবে।

রিতি মত এটা রাসেদকে একটা জানান দিলো।তাদের রাসেদের থাকা না থাকায় যায় আসেনা।

—————-★

“- চাকরির প্রথম দিন।মা থাকলে হয়তো ভালো করে খাইয়ে দাইয়ে বের করতো।তবে মা আর এখানে কি করে আসবে।
আর সবার খাওয়া তো হয়নি।তাহলে এখন তাদের আগে খেতে বসা মানে কুড়ালি নিজের পায়ে মারা। এমনিতেই সবাই অন্য রকম ব্যাবহার করছে।
থাক নাস্তার কি পরে না হয় করব, নিজের কাগজ পএ গুলো নিয়ে বের হতে গিয়েও আটকে গেলো।

দরজায় অনু দাড়িয়ে, হাতে কিছু খাবার, পাউরুটি আর জেলি। সাথে এক গ্লাস দুধ।
রাসেদ অবাক অনু তার জন্য এত ভাবে কেন??
চুপি সারে অনু ঘরে ঢুকে রাসেদের দিকে খাবারটা বাড়িয়েছে , খেয়ে তার পর যাও।
১০০% সিউর খাবার গুলো অনু সবার চোখের আরল করে চুরি করে এনেছে।

ওমা কি সেবা।কিরে তর মাথায় কখন কি আসে? এত জত্নের কারন??

“– ঐ দেখো এর মধ্যে ভুলে গেলে?
—– রাসেদ চোখ গুলো ভাবনা সূচক করে এদিক সেদিক ঘুরিয়ে অনুকে আবার জিজ্ঞেস করল।কি ভুলেছি অনু!!

” আহহ রাসেদ ভাই,কোন আহাম্মক তোমায় চাকরি দিলো?? কিছুই মাথায় থাকেনা চাকরি কি ঘোড়ার ডিম করবে…
— অনু লেট হচ্ছি জলদি বল নয়তো চললাম।
” আরে আরে!!
বলেই রাসেদের বাহুডুর টা ধরে টেনে আটকে দিলো অনু।
এটা জোর নয় জেনো হক মনে হচ্ছিলো।তবে জানা নেই রাসেদ ভাই কি ভাবে, নাকি ঐ চোখে দেখেইনা।

,”- জানোনা না খেয়ে বের হতে নেই, না খেলে জেতে পারবেনা।আর রইলো ভুলার কথা,তুমিই না বলেলে প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে একটা শাড়ি কিনে দিবে।
তা তুমি যদি অভুক্ত হয়ে অফিস করো, তখন কাজে মন দিতে পারবে? কাজ না করলে কিসের চাকরি? আর কিসের বেতন আর কোথা থেকে আসবে আমার নীল রঙের শাড়ি??

“—- রাসেদ মুচকি হাসি সহ অনুর কথা গুলো শুনলো।মেয়েটা কথা পেচিয়ে বলতে পারে বটে।হবারই কথা মেয়ে মানুষের বুদ্ধি নাকি বেশ হয়।

অনু আর রাসেদ একে অপরের দিকে তাকিয়ে
পলক পরছে না,নাকি ফেলতে চাইছে না।এক সেকেন্ট সময়ও অনুর মুখটা চোখের আরাল করতে চায়না বলেই কি পলকহীন হয়ে তাকিয়ে রাসেদ???
তাদের এই দূষ্টু মিষ্টি অবুঝ ভালোবাসার পরিনতিটা কি?? কেউকি তাদের এই গভীর প্রেম বুঝবে?
নাকি সমাধি হবে অনু আর তার রাসেদ ভাইয়ের কাহিনি।

(★চলবে★?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here