সমাধি পর্ব-০৮

#সমাধি
#পর্ব ——–৮
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_______________________________
“-মুখটা মলিন করে রাসেদ, রাস্তার ধারে নিরিবিলি তে যে মানুষটার সাথে দাড়িয়ে -তার আসাটা মোটেই মানতে পারছেনা সে।
—-অনুর মা এসেছেন৷ আকলিমা বেগম…কি এমন দরকার যে আমার সাথে দেখা করতে নিজে চলে এলো। এসেই রাসেদের হাতটা ধরে এখানে নিয়ে এলো।
এখনও অবদি কিছু বললো না কি শুধু এদিক ওদিক চোখ ঘুরাচ্ছে।

এখানে দাড়িয়ে নিরবতা পালন করার কোন ইচ্ছা রাসেদের নেই।তাই নিজেই আকলিমা বেগমের সাথে কথা শুরু করল।
“- আন্টি আপনি এখানে কেন? আমায় ডাকলেই তো আপনাদের ওখানে আসতাম ।
( আর অনুকেও এক নজর দেকতে পেতাম-মনে মনে)

— রাসেদ আমার কথা মন দিয়ে শুনো।তোমায় যা বলতে এসেছি তা বাড়িতে বলা যেতো না তাই এখানে আসা।

” রাসেদ একটু ভাবুক হয়ে উঠলো। কি এমন কথা আমায় বলবে যার জন্যে এখানে অবদি চলে এলো।
—- ★ পরশু অনুর বিয়ে”

“- রাসেদ চোখ গুলোকে কেমন করে রেখেছে আকলিমা বেগমের দিকে তাক করে।
কানে ভুল শুনলো? অনুর বিয়ে কিছুটা এমনই কানে শুনতে পেলো। আকলিমা বেগম কি সত্যি এটা বললো নাকি মনের ধন্দা।
” আন্টি কি মানে কি বললেন বুঝলাম না।
—– দেখো রাসেদ অনু অনেক জেদি মেয়ে,মাথায় যা চাপে তাই সে করবে বলে স্থির করে।
এখন ওর মাথায় তোমার ভূত চেপেছে,।

ভেবো না তোমার শত্রু আমি, আজকে বলতে পারো মিত্র হয়েই এসেছি।

“হুমমম অনুর বিয়ে ঠিক করে আমায় জানাতে এসেছে আহা কি মিত্র আমার।
রাসেদের চোখে পানিটা ছল ছল তা আকলিমা বেগমের সামনে প্রকাশ করতে চায়না আর তাই পানিটা আড়াল করে নিয়েছে।

— ওর বিয়ে দিচ্ছেন তাহলে ওর লেখা পড়া! আর অনু কি রাজি আছে বিয়েতে?

” সেটাই তো বলতে এলাম রাসেদ, অনুর মত বাদ দাও।তোমার কথা বলো।তোমার মনে কি অনুকে নিয়ে তেমন কিছু আছে???
— রাসেদ কোন বিলম্ব না করেই নিজের মনের কথা আকলিমাকে বলতে চাইলো।তবে সে সোজগ টা দিলেন না আকলিমা বেগম।

” তোমার মনে যাই থাক, আর যদি তেমন কিছু থাকে তা কবর দাও।
আকলিমার সোজা কথা -দেখো রাসেদ অনুর বয়সের মেয়েরা একটু আবেগী হয় এটা স্বাভাবিক।
তবে তুমিতো ওর মত নও, আর তোমার সামনে তোমার পুরো ভবিষ্যত পরে আছে। তোমার বাবা মা বোন সবার দায়িত্বের বুঝা তোমারই কাঁধে। তাই মনে হয় না তুমি এমন কোন কদম বাড়িয়ে সব নষ্ট করবে।

অনুর ভলো লাগা জিনিস গুলোই কিছু দিন পর অপছন্দের হয়ে উঠে।
তুমিও ঠিক তেমন। অনুর শুধু জেদের বসে আর একটু মোহে পরে তোমায় চাইছে। এটা কোন ভালোবাসা নয়।ও ভালোবাসার মানেই বুঝেনা তো বাসবে কি করে?

তবে আমার মেয়ে আমি ওকে চিনি, তোমার সাথে সে এক মাসও কাটাতে পারবেনা। ওর নিত্যদিনে যা খরচ তা তোমার দ্বারা বহন সম্ভব নয়। আর অনু তখনই তোমায় অপছন্দ করা শুরু করবে। বাড়িতে একসাথে ছিলে একটু আকটু ভালোলাগা কাজ হয়তো করেছে।তবে সেই ভালো লাগাকে ভালোবাসা ভেবে সংসারের কথা ভাবা বোকামি।

অনুর কখন কি ভালো লাগবে বা লাগবে না সে নিজেই জানেনা।তাহলে আমরা কি করে জানবো!!

রাসেদ এক মনে শুধু কথা গুলো শুনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আকলিমার দিকে তাকালো।রাসেদের চোখ দেখেও কি আকলিমার মায়া হল না? ছেলেটা ওর মেয়েকে কতটা চায়!

“আমায় এসব বলছেন কেন?, আমার কাছে কি চান!
— বললাম না তুমি বেশ বুদ্ধিমান ছেলে, ঠিক ধরে নিলে কি চাই। দেরি না করে বলে দেয়াই তাহলে ভালো।

সোজা করে বলি,অনু হয়তো তোমার কাছে আসতে পারে। ওকে আটকিয়ে রাখলেই কি, আমি জানি কোন না কোন ভাবে সে তোমার সাথে দেখা করতে আসবেই,হয়তো ওকে নিয়ে পালাতেও বলতে পারে। তুমি তাকে ফিরিয়ে দিবে।কি বলবে সেটা তুমিই জানো।

তবে অনু বাড়িতে যাবার পর জেনো বিয়েতে অমত না করে।
—– অনু আমার কাছে এলেই আমি ওকে ফিরিয়ে দিবো ভাবলেন কি করে?
” চোখ টা এবার গরম করেই রাসেদ উওর টা দিলো।আর আকলিমা বুঝে গেলো, এখন কি করতে হবে।

চট করে রাস্তার মধ্যেই রাসেদের হাত দুটো ধরে বিনিত স্বরে আকুতি তার।
বাবা অনু আমাদের ইজ্জত।বিয়ের সমস্ত আয়োজন শেষ। পাকা কথা তো আরো আগেই দেয়া। এখন অনু এমন কিছু করলে সমাজে মুখ না দেখাতে পারলে গলায় দরি দিতে হবে আমাদের।

বাবা রাসেদ তুমি আমাদের ছেলের মতই।ঢাকায় আসবার পর থেকে যা উপকার আমাদের থেকে পেয়েছো মনে করো এটা তার প্রতিদান।
তুমি অনুকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘরের মেয়েকে ঘরে পাঠিয়ে দিও।

রাসেদ কি করবে এখন? আকলিমা বেগমের হাত জোর করা মিনতি ফিরিয়ে দেবে?

আর উনার কথা তো ঠিকই।সারা মাসে যা পাই তা অনুর সপ্তাহের হাত খরচই হবে।
আর সবার মনে কষ্ট দিয়ে অনুকে নিয়ে সুখে থাকা হবে না।সুখে থাকতে হলে টাকার প্রয়োজন।যা আমার নেই।

অনুর এই মোহটা দুদিনে কেটে যাবে তখন!! তখন কি হবে?
তবুও মনকে বুঝাতে পারছে না রাসেদ, কি করবে ভেবেই পায়না।

আকলিমা আর তার স্বামী তো নিজের সার্থের জন্য পায়েও পরতে পারে আবার সার্থ ফুরিয়ে গেলে গলায় চেপে ধরতে পারে।তা আগেই বলেছিলাম।

এবারও তাই মিথ্যা মানসম্মানের দোহাই দিয়ে এই রাসেদের থেকে মেয়েকে দূর করাই মূল কথা।
আচ্ছা সত্যিকি অনুর মনে রাসেদের জন্য গভীর ভাবে কিছু আছে?
নাকি আকলিমা বেগম যা বললো তাই সত্য! কি মনে হয়?

আকলিমা রাসেদের পায়ে ধরে বসে পরেছে।বাবা আমাদেরে মানসম্মান তোমার হাতে। বাবা তোমায় পায়ে পরেছি বলো আর কি করলে তোমার মন গলবে!!!!

– এসবের জন্য রাসেদ মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা।উনি এভাবে এই রাস্তায় আমার পা ধরে বসে পরবে।

“ছি আন্টি কি সব করছেন উঠুন প্লিজ।
— আকলিমার কুমিরের কাঁন্না চলছেই উঠে দাড়িয়েই আবার ন্যাকামু শুরু।
বাবা তোমার উওর কি বলোনা। বাঁচাবেনা আমাদের??
একটা ভিখিরি মনে করে আমাদের ইজ্জত আমাদের ঘরে পাঠিয়ে দাও বাবা।

“- রাসেদ শত দিক চিন্তা করে, আকলিমাকে জানালো তার সিদ্ধান্ত।
ঠিক আছে আন্টি,অনুকে আমি আটকাবোনা। আপনার মেয়েকে যেখানে ইচ্ছা বিয়ে দিতে পারেন।
যে সম্পর্কের না অতিত ছিলো না বর্তমান জানি,সেই সম্পর্কের কি ভবিষ্যৎ হবে?

—–আকলিমা বেগম চোখের পানি মুছে,হাসি টেনে এনেছে মুখে।আসলেই ওরা সরল মানুষ।
আর এই সরলতার কারনেই আজও জীবনে কিছু করে উঠতে পারেনি।
এত দয়াবান হওয়াও ঠিক না।মনে মনে কথাটা ভাবতে ভাবতে আকলিমা বেগম তার ব্যাগে হাত ঢুকালো।
রাসেদ তার চোখ গাছের পাতায় টিকিয়ে রেখেছে।কি করে পাতা নড়ছে, ডাল নড়ছে আবার থামছে।গাছের সব পর্যবেক্ষন করছে।আসলে নিজের মনকে কিসে ভুলাবে তা দেখছে।

আকলিমা ব্যাগ থেকে বেশ কিছু টাকা রাসেদের হাতে ধরিয়ে দিলো।লাখ খানেক তো হবেই।
বাবা এটা রাখো তোমার কাজে লাগবে।

“- টাকাটা হাতে ধরে রাসেদ হা হয়ে রয়েছে। এটা কেন?
— আহা তোমার কাজে লাগবে রেখে দাও।এত বড় উপকার করলে এর বিনিময় তো এটা কিছুই না।

টাকা গুলো বেশ গরম মেজাজের সাথেই রাসেদ আকলিমার হাতে রেখেছে।মন এখনও এতটা ছোটলোকের মত হয়নি যে হাত পেতে যার তার অনুদান নিয়ে নেবো।
কথাটা কি মিন করে বললো তা না ভেবে আকলিমা টাকা ফেরতে খুশি।
কেন নাও এটা তো তোমারই জন্য।

বাস আন্টি বহু করেছেন আমার জন্য।আপনার যা চাওয়া ছিলো চেয়েছেন যা পাবার আশায় এসেছেন তাও হল এবার আসতে পারেন।
আর নিশ্চিত থাকতে পারেন কারণ রাসেদ মুসলিমের সন্তান তার জবান একটা।

—— আকলিমা শান্ত মনে ঘরে ফিরেছে। এসেই জানলো অনু নেই।না কামাল এটা নিয়ে ভাবছে না আকলিমা।নিশ্চিত হয়ে রুমে বসে চায়ের স্বাদ উপভূগ করছে। দরজাটা আকলিমার ফোন পেয়ে কাজের লোক খুলে দিয়েছে।

!-চিন্তা কি,ঐ হাদারাম কে যা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেছি বেটা আর তাদের ইচ্ছাকে না করতে পারেনি।
অনু আর যাবে কোথায়।রাসেদের কাছে গেলে আবার ফিরে এসেই বিয়ের পিরিতে।
আহ কি আনন্দই না লাগছে…
আনন্দে নাচতে ইচ্ছা করছে।
বলদ ছেলে কোথাকার।অনু এবার বেশ বুঝবে রাসেদের মন। চায়ে চুমুক দেয়ার সাথে সাথে কামালকে জিজ্ঞাসা করল বসলো।টাকাটা রাসেদের হাতে দেয়ার সময়কার ছবিটা ঠিক ঠক তুলেছো তো???

“-
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here