সমাধি পর্ব-০৯

#সমাধি
#পর্ব -৯
#সেলিনা_আক্তার_শাহারা
_____________________________
“—–

সন্ধা হয়ে এলো অনু বাড়ি ফিরল না।এবার আকলিমা আর কামালের বেশ চিন্তা হচ্ছে।অনুকে যেতে দিয়ে ভুল করল না তো।
রাসেদ কি বেঈমানী করল!না৷ রাসেদ তেমন ছেলে নয়।বড় গাধা টাইপ।মাথায় এত বেঈমানী বা কাউকে কথা দিয়ে কথানা রাখা এসব আসেই না। সরল ছেলে।

—- তবে বাড়ি আসছে না কেন অনু?
কামাল দেরি না করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
রাসেদকে খুজে পেলে অনুকে পাওয়া কোনো ব্যাপারই না। অনু গাড়িটা নিয়ে বেরিয়েছে।না জানি কোন এক্সিডেন্টে না না এসব ভাবেতেই পারছেনা কামাল।

রাসেদের অফিস থেকে ঠিকানা নিয়ে রাসেদ কোথায় থাকে তা জানা যাবে। কারন এই মূহুর্তে অফিস খুলা পাবেনা জানে। তাই দারোয়ান বা কাউকে পেলেই হয়।

” তবে কামাল যা ভেবেছে তাই। অফিস বন্ধ নয় একেবারে।তবে বেশির ভাগ এমপ্লয়ি চলে গেছে, আছে দুএক জন।তারাও বেশ চাপে পরেই রয়েছে হয়তো।

” কাজ হল না অফিসে এসে।কারন রাসেদের অফিসে কামালের বাড়ির ঠিকানা দেয়া,তাহলে কামাল তার নিজের বাড়ির ঠিকানার কি করবে!! বাড়িতে ফোন দিয়ে জানালো। আকলিমাও চিন্তিত।আজ অনুকে না পেলে কামাল আমায় জীবিত রাখবে না।
কারন এই বুদ্ধিটা একান্তই আমার।

ভয়ে আকলিমার হাত পা কাপঁছে। কি করবে জানা নেই।তবে মনে মনে রাসেদকেই বকছে।আচ্ছা অনু রাসেদের দেখা পেয়েছে তো? অনুর কাছেতো রাসেদের অফিসের ঠিকানা রয়েছেই। দেখা তো হবার কথা।

— কামাল অফিসের বাহিরে প্রতিটি দোকানে রাসেদের কথা জিজ্ঞেস করল, না কেউ বলতে পারেনা। দুএক দোকানে চিনলেও ঠিকানা জানেনা। শুধু জানে ঐ অফিসে চাকরি করে বাস…….৷

“-কামাল এবার পুলিশে খবর দেবে কিনা সেই চিন্তার মধ্যে। কারন সে এখন নিরুপায়। আর কোথায় খুজবে! রাসেদের ছবি আছে এটা দেখালে পুলিশ এই বেজন্মাটাকে ধরতে পারবে।

“————— রাত ১১ টা।

” কলিং বেলটা কেউ বাজিয়েই চলছে। আকলিমা ভয়ে চুপসে রয়েছে কামাল এসেছে হয়তো আজ আকলিমার শেষ দিন।

★২ বছর পর——★

— খেতে ডাক দিয়েছি কখন।এত কি লেখো ডায়রিতে! যতক্ষণ বাড়িতে থাকো ততক্ষণ ডায়রিতে চোখ ডুবিয়ে রাখো।
কি আছে তোমার ঐ ডায়রিতে???

“প্লেটটা সামনে নিয়ে হালকা হাসি মুখে একে রাসেদ সেই মানুষটার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।তুমি বুঝবে না।

যা লিখছি তা আমার অতিত আমার বর্তমান – আর ভবিষ্যতের সাথি।

কি জানি বাপু।তোমার ঐসব কথা মাথায় ঢুকেনা।

“– কি? মানুষটি কে জানতে চান না??
মতি ভাইয়ের বোন শেফা।
হ্যা ঐ যে কানে কম শুনতো ঐ শেফা আজকে রাসেদের সাথে কেন??
রাসেদই বা কোন শহরে নিজেকে মিলিয়েছে।কোথায় আছে অনু!!

জানতে চান???
চলুন জেনে নিন।

— রাসেদের ঐ শহরে থাকা হল না।দম বন্ধ হয়ে আসতো।বাতাসে যেনো কেউ বিষ ঢেলে দিয়েছিলো। তাই শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।
মতি ভাই রাসেদের একটি ভুলের কারনে এ দুনিয়ার মাঝে নেই।
তাই মতি ভাইয়ের আমানত শেফা আর তার দোকান আর বাড়ি বিক্রির টাকা নিয়ে আরেক শহরে পা দিয়েছিলো। মতি ভাই যাবার বেলায় শেফাকে রাসেদের হাতে তুলে গিয়েছিলো।কতটাই না ভরসা করত মতি রাসেদকে।নয়তো কতইতো মানুষ ছিলো চারিপাশে,বহু বছরের চেনা জানা মানুষ গুলোকে ফেলে কেন রাসেদের মত কয়দিন আগে আসা একটা ছেলে কে বাছাই করল। সব তার হাতে তুলে শেষ নিশ্বাস নিয়েছিলো।

আর আজ এই শহরের বেষ্ট শাড়ি গুলোই তার দোকানে।মার্কেটে বেশ কয়েকটা শাড়ির শো-রুম রয়েছে।
মা বাবা বোন সবাই পাশে। আজ কাল পকেটে টাকাও বেশ বুঝা মনে হয়। সব পেয়েছে তবে টাকার জন্য হারিয়ে ফেলা অনুকে ছারা।

বোনকে বিয়ে দিলো তারই দোকানের এক কর্মচারীর সাথে।
শর্তই হল ঘর জামাই থাকা।

“- অনুকে আজও ভেবে প্রতিরাতে চোখের জল ফেলে।অনুর কোন খুজ খবর নেই।ওর মা বাবা ঐ আগের বাড়িতে নেই।কোথায় আছে জানা নেই।

হাসছে কথা বলছে খাচ্ছে ঘুমাচ্ছে, তবে কেউকি রাসেদের মনের খবর টা জানে???

★★ ২বছর আগে যখন অনু রাসেদের ঠিকায় এসে ছিলো তখন রাসেদ অনুকে তারিয়ে দিয়েছিলো।
যেমন কুকুরকে তারায় ঠিক তেমন।

“- রাসেদ ভাই!!
ডাক পরতেই রাসেদ অনুর পানে তাকিয়ে বেশ কিছুটা সময় পারি দিলো।কারণ বহু দিনের চোখের পিপাসা। তাই মন ভরে দেখেতো নিক তার অনুকে!!

—- অনুর হাতে ব্যাগ,তার মানে সব গুছগাছ করে বেশ ভরসা নিয়ে রাসেদের কাছে এসেছে। কি করে সেই ভরসা বিলিন দেবে।
অনু রাসেদের হাতটা টেনে ধরে বলে উঠলো চলো রাসেদ ভাই।

অবশ্য রাসেদ জেনেও না জানার ভান ধরে বললো তুই আমার ঠিকানা কোথায় পেলি?
আর কোথায় যেতেই বলছিস আমায়!!
ঠান্ডা গলার আওয়াজ রাসেদের।

” চোখটা ফুলিয়ে ফেলেছে অনু,কতদিনের অনাহারি না জানি। তা ভালো করে রাসেদ দেখছে।মুখটা এত শুকিয়েছে যে অনুকে চিন্তে পারছে না, কই অনুর চোখেতো তার রাসেদ ভাইয়ের জন্য কোন মোহ নয় বরং ভালোবাসাই ছল ছল করছে। পাগলের মত চুল গুলোকে করে রেখেছে।কেউ দেখলে বলবে পাগলি।

সব জেনেই না জানার অভিনয় করতেই হবে।সে তো কথা দিয়েছে। ওর কারনে কোন মেয়ে তার পরিবার থেকে আলাদা হক তা চায়না রাসেদ।
একটা সম্পর্ক গরতে গিয়ে শত সম্পর্কের ইতি দিতে পারে না।

–রাসেদ ভাই এখন মজা করার সময় নয়।জলদি চলো আমরা পালিয়ে যাই, নয়তো বাবা আমাদের ধরে ফেললে আর যাওয়া হবে না।

“- এক মিনিট এক মিনিট!
কি বকছিস।পালাবো মানে? আর তুই আমি পালাবোই কেন।আর আঙ্কেল ধরতেই আসবে কেন।
— রাসেদ ভাই মজা করার ইচ্ছা নেই, চলো তোমার কাপড় গুছিয়ে নাও।

” অনু তর কি জ্বর টর এসেছে তর। এমন করছিস কেন??
—- রাসেদের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরতেই রাসেদ হাত ছারিয়ে নিলো।
অনু এত কিছুই মাথায় আনল না।
রাসেদ ভাই বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে,। প্লিজ জলদি করো না।
বার বার করুন চাহনি নিয়ে বাহিরে নজর রাখছে আর রাসেদের সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছে অনু।

– কি রে অনু, বিয়ে ঠিক হয়েছে এটা তো ভালো খবর।বিয়ে ঠিক হলে মানুষ দাওয়াত দিতে আসে।আর তুই বলছিস পালাতে???

“- অনু এবার ক্ষিপ্ত হয়ে গেলো, কখন থেকে বলছি রাসেদ ভাই, কি ফাজলামু শুরু করেছে।আমার বিয়ে আর উনি দাওয়াত নিয়ে ব্যাস্ত!!
চোখে কোন চিন্তার ছাপটাই নেই।

রাসেদের গেঞ্জি টা টান দিয়ে শক্ত করে ধরে অনুর ঝাঁঝালো কন্ঠস্বর।
—- তোমায় কখন থেকে বলছি বুঝতে পারছনা, বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে অন্য ছেলের সাথে।আমিতো ঐ ছেলেকে বিয়ে করতে চাই না।
তুমি কেন বুঝোনা…

” রাসেদ চোখটা গরম করে অনুর হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দিলো।কি পাগলামু করছিস।এখানে আরো মানুষ রয়েছে চারিপাশ দেখে কাজ কর।
তুই বিয়ে না করলে না করবি তা আমায় বলতে এলি কেন??
।—— বুকে হাজার কষ্ট চাপা দিয়ে রাসেদ অনু কে কষ্ট দিচ্ছে।অনু ওর কলিজা ছিরে নিলেও রাসেদ উহহ শব্দ করবে না।তবে আজ তো অনুকে কাঁদাতেই হবে তাই সামান্য গেঞ্জি টান দেয়া নিয়ে একটু রাগ দেখাতেই হবে।

অনু ভাবতেই পারেনি রাসেদ এমন ব্যাবহার করবে।
সে তো ভেবেছিলো অনু আসার পরেই ওকে জরিয়ে ধরবে।আর বিয়ের কথা শুনে ওর হাতটা ধরে দূরে কোথাও পথ পারি দেবে।

রাসেদ ভাই তুমি এমন করছ কেন? আমিতো তোমার কাছে চলে এসেছি সব পিছন ফেলে।
— কি সব ফাজলামু হচ্ছে অনু, সব ছেরে মানে?আমার কাছে কি তর।
” রাসেদ ভাই!!
প্লিজ অনেক যন্ত্রণা বুকে। আর বারিও না।প্লিজ চলো আমরা দূরে কোথাও গিয়ে বিয়ে করি/

—- এক টা থাপ্পর মারব।
“আচমকাই রাসেদের মুখে এমন কথা শুনে অনুর স্তব্ধ।
—-রাসেদ ভাই!!
অনুর প্রশ্ন সূচক মুখ আর রাসেদের ব্যাবহারে ক্ষত বিক্ষত করা বুক।

” কি রাসেদ ভাই হ্যা।তখন থেকে এসে চলো পালাই চলো পালাই,তোতা পাখির মত এক কথা বাজিয়েই চলছিস।
এই তকে বিয়ে করব আমিকি পাগল নাকি? নাকি আমার শরিলের কোথাও লিখা আমি পাগল!!!!

কি সব বকছো রাসেদ ভাই।আমিতো তোমার জন্যে সব ছেরে এসেছি আর তুমি!!
— তোকে আমি বলেছি ছেরে আসতে??

“- আমি তোমায় বড্ড ভালোবাসি রাসেদ ভাই।প্লিজ আর কাঁদিওনা আমাকে। আর চোখে পানি আসেনা সব শুকিয়ে গেছে। তোমাকে পেতেই তো সব ছেরে এলাম।

” বড় লোকের নাকি অনেক শখ, তাই শখ করে অনেক শো-পিস, আর বিভিন্ন ধরনেরই জিনিস পএ ঘরে সাজানোর জন্যে আনে।
তুই কি আমায় সেই শো- পিস ভাবছিস অনু!!!

—- অনুর মাথায় কিছুই আসছে না।এ টা কে? রাসেদ ভাই তো নয়।ওর মতই দেখতে একটা পাষান।
নয়তো কি সব বলছে।আমি রাসেদ ভাইকে শো-পিস ভাববো কেন? আমি তো উনার বুকে ঠাই নিতে এসেছি।নাকি উনাকে শো-কেজে সাজাতে।


রাসেদ ভাই।তুমি ঠিক আছোতো, তুমি এমন বলছো কেন? আমি জানি তুমিও আমায় ভালোবাসো ভয় পাচ্ছো বাবার জন্যে??

“- নিজের মন মত সব কথা বানাস না অনু। এই তোকে আমি কবে বললাম তোকে আমি ভালোবাসি!!
রাসেদ পাগল নাকি তর মত বড় লোকের অহংকারী মেয়েকে ভালোবাসবো।

” তুমি আমায় অহংকারী বললে?
অনু নিজের পা দুটো পিছু টেনে এনেছে।এটা তার রাসেদ ভাই নয়। আমি কবে অহংকার করলাম তোমার সাথে?
আর এটা সত্যি যে তুমি আমায় মুখে বলোনি কোন দিন, যে আমায় ভালোবাসো। তবে তোমার চোখে আগে এবং এখনও আমার জন্য ভালোবাসাই দেখছি রাসেদ ভাই।তবে কেন মুখে তা স্বীকার করছোনা।

“- ইসসস। লেখা দেখে পড়তে পারেনা সে নাকি চোখ দেখে মন পড়েছে।
আর যা তা বকিস না অনু।এসব বাচ্চামু ছার বাড়ি যা।আমি মাএ অফিস থেকে এলাম বড্ড ক্লান্ত আমি।আমার আরামের প্রয়োজন।

— কথাটা শেষ হতে না হতেই অনু রাসেদের বুকে একেকর পর এক ঘুসি দেয়া শুরু করেছে।
কি বললে আমি অহংকারী। আমি বাচ্চামু করছি।
তোমার জন্য আমি সব ছেরে এলাম, কোথায় আমায় বুকে টেনে নেবে তা না বরং কষ্ট আরো বারাচ্ছো।
রাসেদ অনুকে বাধা দিতে যেয়েও দিলোনা।মারুক যত ইচ্ছা মারুক।মারতে মারতে শ্বাসরুদ্ধ করে দিক।তখন হয়তো এই মরন যন্ত্রণা কমবে। অনুকে কষ্ট দিয়ে যা কষ্ট রাসেদের হচ্ছে তা কি করে বুঝাবে অনুকে…

“- ইতি মধ্যে রুমের সবাই জরো হল। মতি ভাই চলে এলো।
শেফার কানে না এসব গেলো না সে এলো সে তার রুমে আরামে মুড়ি চিবুচ্ছে।

— রাসেদের চোখে পানি চলে এসেছে তা দেখে অনু ঘুসি দেয়া থামিয়ে রাসেদের পা চেপে ধরেছে।
প্লিজ রাসেদ ভাই আমায় ফিরিয়ে দিও না।তুমি ফিরিয়ে দিলে আমি বাচঁবোনা।

একটু হেসে কথা বলাকে কিসব ভেবে এমন পাগলামু করছিস।

পা থেকে অনুকে ছারিয়ে ঘরের বাহিরে ধাক্কা দিয়ে বার করে দিলো রাসেদ।
ঘরের মেয়ে ঘরে যা অনু।
আর নাটক করিস না। আমাদের মত গরীবের টাকা নেই ঠিক মানসম্মান আছে।সেটা এমন করে কেরে নিস না…৷৷ অনু রুমের বাহিরে রাসেদের জন্য হাহাকার করেই চলছে।রাসেদ ভাই আমায় ফিরিয়ে দিও না। প্লিজ রাসেদ ভাই, ঘরের কোনায় কোন আবর্জনা ভেবেই রেখে দাও।তোমায় ছারা বাঁচবা আমি রাসেদ ভাই….

(
“— চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here