সাবিহার বিয়ে পর্ব ১+২+৩

সাবিহার বিয়ে

পর্ব -১

আজ সাবিহার বাসর রাত। ছোট বেলা থেকেই এ রাতের ব্যাপারে শুনতে শুনতে আর নিজের বন্ধু বান্ধব এর মুখে শুনতে শুনতে নিজেরই আজ কেমন ঘোর লাগছে, কেমন যেন কি হয় কি হয় অবস্থা। তাছাড়া আজ বিয়ের পর মিঃ মেহবুব ই ওর লাইফে প্রথম পুরুষ। ও হ্যা, মেহবুব ওর হাজবেন্ড এর নাম। মেডিকেল এর পড়ার দরুন কোন দিন প্রেম ভালবাসা নিয়ে ভাবার সময় হয় নি সারাক্ষণ শুধু পড়া আর পড়া। কিন্তু অন্য সবার মত প্রকাশ না করলেও ও ঠিকই এই দিনটির জন্য অনেক অপেক্ষা করছে। . মেহবুব পেশায় একজন সেনাবাহিনী কর্মকর্তা। মা ববাবার ছোট ছেলে। সাবিহাও ছোট। উনি সাবিহার মেডিকেলের প্রফেসর এর ভাইয়ের ছেলে। সাবিহার বাবা স্যারের মুখে ছেলের বায়োডাটা শুনে আর তাদের পরিবার পরিজনের সাথে দেখা করে খুব পছন্দ করেছেন। স্যার সাবিহাকে ওর মেডিকেল লাইফ থেকেই খুবই স্নেহ করত তো সাবিহাও স্যারের কথার অন্যথা না করেই ও বিয়ের মত দে আর যেহেতু ওর নিজস্ব কোন পছন্দও ছিল না তাই অমতের কারনও ছিল না। আর যতটুকু মেহবুবকে দেখেছে ওর ভালই মনে হয়েছে।বাসায় যে দিন দেখতে গিয়েছিল শুধু ওর শাশুড়ি আর বড় ননদ ই কথা বলছে। ওর দুলাভাই ওদের কথা বলতে বলেছিল কিন্তু সে রাজি হয় নি তো সাবিহার মনে যে টুকু আশা ছিল তাও শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে ভাবল যাক বেটা বিয়ের পর তো কথা বলবিই আগেই না হয় একটু ভাব ধর। . বিছানায় বসে বসে আকাশ পাতাল ভাবছিল ও এরই মেধ্য ওর বড় জা আর ননদ ঢুকল মেহবুবকে নিয়ে। বেটা রুমে ঢুকেই ওয়াশরুমে চলে গেল আর ওর জা আর ননদ ওর সাথে গল্প করা শুরু করল। -কি ভাবি কেমন লাগছে? দেখ আমি কিন্তু তোমার থেকে ছোট তো তুমি করেই বলব। – তোমার যা ইচ্ছে ডাকতে পার কোন সমস্যা নেই। -ভাবি আমার ভাই কিন্ত বিশিষ্ট ভাবিস্ট সে কিন্তু ভাব ধরবে তুমি তার ভাবের কোন পাত্তা দিবা না। সাবিহা মনে মনে ভাবল যাহ বাবা ও মেহবুব সম্পর্কে যা ভাবছিল তাই ই যাই হোক একটু পর তার প্রমাণ পাওয়া যাবে যে সে কতটুকু ভাব নেয়। -ওই বেটা মেহবুব আমাকে ওনেক জালাতন করছে ছোটবেলা থেকে। এর শোধ কিন্তু আমি তোমার উপর থেকে নিব। বড় ভাবি হাসতে হাসতে বলল – আচ্ছা তুই থাম এবার। বেচারিকে একটু রিলাক্স হতে দে। আচ্ছা সাবিহা আমরা গেলাম তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আর হ্যা সকালে কিন্তু সব গল্প বলতে হবে। একথা শুনে সাবিহা হাসবে না কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। তারা চলে যাবার পর একা একা খাটে বসে আছে। ডাক্তারি লাইফে অনেক ক্রিটিকাল সমস্যা ফেস করছে কিন্তু এমন দিশেহারা হয় নি কিন্তু আজ কেমন জানি ফিলিংস হচ্ছে। আরও একা, মা বাবাকে ছেড়ে আসার কষ্ট তো আছেই। মনে হল যেন দুনিয়া হঠাৎ পালটে গেছে, সব থমকে গেছে। গত কয়েক দিনের কর্ম ব্যস্ততা পুরো শরীরে ভর করছে, একটু শুতে পারলে বাচেঁ কিন্তু ওই লোক এসে দেখে ও ঘুম তাহলে কেমন লাগবে এই ভাবতে ছিল ওমনি সে ওয়াশরুম হতে ফিরে এল। ওর মুখে ঘোমটা দেয়া তাই লোকটাকে পুরোপুরি দেখাও যাচ্ছিল না।পরে কিছু একটা আলমারি থেকে খুলে নিয়ে বারান্দায় গেল। [6/5, 3:14 PM] Promity: প্রায় আধা ঘণ্টা পর একসময় এসে বসল বিছানায়, একটু কেশে নিয়ে মাতালে স্বরে বলল অনেক রাত হল তুমি সোফায় গিয়ে শোও অথবা কোন সমস্যা না থাকলে বিছানায় ও শুতে পার। . সাবিহা কথাটা শুনে যত না অবাক তার থেকে বেশি হল তার গায়ের গন্ধ পেয়ে। মদের গন্ন্ধ!!!! সাবিহা বলল – আপনি ড্রিংকস করেছেন???? অমনি মেহবুব রেগে গিয়ে বলল – খবরদার বিয়ে করেছি বলে আমার উপর কখনই অধিকার প্রয়োগ করবা না। সোফায় গিয়ে শুতে বলেছি গিয়ে শোও। . কথাটা শুনার পর ওর মনে হল ওর দুনিয়াটা পুরো অন্ধকার হয়ে গেছে। ভয়ে না লজ্জায় কাঁপতে কাঁপতে ও সোফায় কোন মতে গিয়ে শোয়। শুধু ভাবছে -এ কি হল???? আল্লাহ কেন ওর সাথে এমন করল ও তো কাউকে ঠকায় নি তাহলে!!!! সে দিনের রাত ওর কেমন কাটল তা ওই আর ঐ সোফার বালিশটাই জানল।ওর জীবনের সব থেকে অভিশপ্ত রাত।

চলবে,,,,

“সাবিহার বিয়ে”

পর্ব -২
রি -পোস্ট :-

সাবিহা একসময় হাত দিয়ে দেখল ওর চোখের পানিতে সোফার কুশন ভিজে গেছে, ওপাশ ভয়ে ভয়ে ফিরে দেখল মেহবুব খাটে উলটো হয়ে ঘুমিয়ে আছে পুরো বিছানা জুড়ে। লোকটার উপর ওর রাগ ক্রমশ বাড়ছে তারথেকে রাগ হচ্ছে ওর স্যারের উপর। সে জেনেশুনে কিভাবে ওকে ওর হাতে তুলে দিল। এখন ওর কি হবে, মা বাবাকে কি বলবে? তাদের কত স্বপ্ন ওকে নিয়ে, ওর নিজের কত স্বপ্ন ওর ছোট একটা সংসার হবে, বাচ্চাকাচ্চা হবে, সারাদিন কাজ সেরে রাতে স্বামীর বুকে মাথা এলিয়ে ঘুমাবে, হসপিটালের গল্প বলবে, কোন রূগী কি বলছে তা বলবে, তার উপর ডাক্তারি করবে আরও কত কি,ওর সব ভালবাসা, ওর দেহ মন সব রেখে ছিল ওর স্বামীর জন্য কিন্তু আজ একটা রাতের মধ্যে কি থেকে কি হল!!!! এসব ভাবতে ভাবতে ও কখন ঘুমিয়ে পরছিল নিজেই জানে না। . সকালে ঘুম ভাঙল একটা গম্ভীর আওয়াজে, চোখ খুলে দেখল মেহবুব তাকিয়ে আছে আর ওকে ডাকছে। ও ধরফর করে উঠে বসতেই আহ্ করে উঠল, সোফায় ঘুমানোর জন্য পুরো শরীর ব্যাথা হয়ে আছে। মেহবুব দেখেও না দেখার ভান করে আরেকদিকে ফিরে বলল -নাস্তার টেবিলে যাও, সবাই অপেক্ষা করছে। এই হুকুম শুনে রাগে ওর পুরো শরীরে আগুন লেগে গেল কিছু বলতে যাবে তখনি ওর জা এল। . -সাবিহা এখনও উঠো নি?? একি তুমি সোফায়? তখন ভাবি আর কিছু বলল না মনে হয় কিছু একটা আঁচ করেছে, বলল -ফ্রেশ হয়ে খেতে আস, তারপর তোমার হাতে আজ রান্না করাব দেখব আমার ডা.দেবরানী কি কি রান্না করে খাওয়ায়। . ওদিকে মেহবুবের মন খুবই খারাপ। কি হতে কি হচ্ছে আসলে ও তো এমনটা চায় নি। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতেছিল। চাচার আবদারেই এই মেয়েটাকে বিয়ে করেছে নইলে ও কখনই চায় নি রিতার পর ওর লাইফে কেউ আসুক, ও ওর ভালবাসা নিয়েই একা একা থাকতে চেয়েছিল থাকনা রিতা আজ অন্য জায়গায় সুখি, একটা অভিমান নিয়েই ও বাচঁতে চাইছিল। দীর্ঘ ৪/৫টা বছর ও এমন ভাবে আছে। ও তো লাইফটা কবেই শেষ করত যদি না ওর মা বাবা বেঁচে না থাকত। দিনের পর দিন ও ভিতরে আর বাহিরে কঠিন থেকে কঠিন হইছে এখন আর কোন মেয়ে জাতিয় অনূভুতি ওকে স্পর্শ করে না হয়ত এটা সহজে পারছে ওর প্রফেশন এর জন্যই, যেখানে সব কিছু সিরিয়াস। আর ও চাইতই রিতাকে ভুলতে দিন রাত ব্যস্ত থাকতে আর যে জবে আছে এতে চাইলেই যে কেউ দিন রাত কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে পারে তো তেমন কষ্ট হত না কিন্তু রাতটা ছিল অসহ্য ওর জন্য। অনেক বিয়েই ও ইচ্ছে করে ভাঙছে কিন্তু এটা আর পারে নি চাচার জন্য আর মাও দিন দিন দূর্বল হয়ে যাচ্ছে শুধুমাএ পরিবার এর দিকে তাকিয়ে রাজি হয়েছে। তারপরও আশা ছিল মেয়েটার পরিবার রাজি হবে না কারন ওর বয়স টা ৩৫পার হয়ে গিয়েছে, পরিবার চাইলেও এ যুগের মেয়েরা এত বয়সী স্বামী চায় না আরও সে একজন ডা., শিক্ষিত রিজেক্ট করাটা স্বাভাবিক ছিল কিন্তু না মেয়ে রাজি হয়েছে। আর ও জানে এর পিছনে ওর চাচারই হাত আছে। পরে ও চাইছিল মেয়েটার সাথে কথা বলতে কিন্তু ওর চাচা দেয় নি কারন চাচা জানত ও কথা বলতেই চায় বিয়ে ভাঙার জন্য। রাগ গিয়ে পড়ল সব মেয়েটার উপর। যখন ও কাবিন নামায় সই করছিল তখন মনে মনে বলছিল -মেয়ে রাজি তো হয়েছ সবার কথা মত, এবার এই মেজরের পুড়ে যাওয়া লাইফে ঝলসানোর জন্য রেডি হও, ওয়েলকাম টু দ্যা হেল।

চলবে,,,,

“# সাবিহার বিয়ে”
পর্ব -৩
সাবিহা
আর মেহবুবের বিয়ের প্রায়১মাস চলছে। ওর শাশুড়ির অসুস্থতার খবরে ওর বাবার বাড়ি হতে লোকজন আসল তাকে দেখতে। ও ওর মা বাবাকে দেখে কেঁদেছে খুব, তারা বার বার ওকে বুঝিয়েছে যে বিয়ের পরে এমন একটু কষ্ট হয় প্রথম প্রথম। ওকে সবার সাথে মানিয়ে নিতে বলল তারা। ও কিভাবে বুঝাবে আসলে সমস্যাটা কোথায়!! আসলে ও এখনই এই পরিস্থিতিতে কাউকে কিছুই বলতে চায় না। ও শুধু একটা কথাই জানে যে ও ওর মা বাবার অনেক আদরের ছোট মেয়ে। ওর কোন খারাপ অবস্থা তারা সহ্য করতে পারবে না। তারা মরে যাবে ওর টেনশনে আর ওর বড় বোন পাগল হয়ে যাবে।তখন ও কি নিয়ে বাচঁবে!!!? মেহবুবের মায়ের আসুস্থতার সময় ওর দুই বোন আর ওর ভাইয়ের আস্থিরতা নিজের চোখে দেখেছে। একটু হলেও বুঝতে পারছে মা বাবা হারানোর ভয়টা কি জিনিস, তাদের জন্য ও হাজারটা মেহবুবের কষ্ট সহ্য করতে রাজি। . সাবিহা সারাদিন হসপিটালে ব্যস্ত থাকে, ইচ্ছে করেই সারাদিন নিজেকে ব্যস্ত রাখে যাতে করে ওর মেজবুবের নিত্যকার খারাপ আচারন মনে না পরে।বাহিরেই খায়, রাতে বাসায় ফিরে তখন নিজের পড়া বা ওর ননদ জা বা শাশুড়ির সাথে গল্প করে কাটায়। তারা ওর আর মেহবুবের কথা শুনতে চায় কিন্তু ও কথা ঘুরিয়ে ফেলে। অনেক রাত করে মেহবুব বাড়ি ফিরত ও তার আগেই সোফায় শুয়ে পরত।কোন কোন দিন রাতে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরত, গন্ধে আর ভয়ে চুপসে ও বারান্দায় চলে যেত। ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ত। আবার সকাল আটটার মধ্যে বাসা দিয়ে বের হয়ে যেত। ইচ্ছা করত না ওর বাড়ির খাবার মুখে দিতে। . মাঝে চেষ্টা করছে মেহবুবের সাথে সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলতে কারন এভাবে আর কতদিন!!? কিন্তু ও এমন রাগী রাগী কথা বলত ওর ইচ্ছাই করত না লোকটার চেহারা দেখতে। মাঝে ভাবল সব ছেড়ে ছুড়ে ঢাকায় ওর বোনের বাসায় গিয়ে থাকবে,আর আসবে না। পরে মেহবুবকে ডির্ভোস দিয়ে খলনায় পোষ্টিং নিয়ে বাবার বাসায় চলে যাবে। ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে এতদিন সহ্য করছে কিন্তু তার ছেলে তো ওর ওর প্রতি কোন মায়া দেখায় নাই তাহলে কেন সহ্য করবে আর!!!বন্ধুবান্ধব, মা বাবা, বোন, আত্মীয় সব্জন সবার কাছে মিথ্যা সুখী ভাব ধরতে গিয়ে আজ ও ক্লান্ত। . এরই মাঝে রাতে ওর শাশুড়ি আর শ্বশুর ওকে তাদের রুমে ডাকল। -মা তোমাদের তো বিয়ের অনেক দিন হল এরই মধ্যে তোমার শাশুড়ি অসুস্থ হল, তোমার দিন রাত সেবার জোরেই তাকে ফিরে পেলাম, বাসায় আসার পর মানুষের আসা যাওয়া, তাদের সামলানোর সাথে সাথে তোমার হসপিটালের কাজ করা নিশ্চই তুমি ক্লান্ত। আমার বিভিন্ন কাজের মধ্যে মনেই ছিল না আমার ঘরে নতুন একটা বউ আসছে। -না বাবা, আমি ঠিক আছি। -না মা এটা আমার দায়িত্ব তোমার খেয়াল করা। তোমার শাশুড়ি আর আমি চাই তোমরা কয়দিন ঢাকার বাইরে গিয়ে ঘুরে আস। সাবিহার মনে হল ওর মাথায় আকাশ ভেংগে পরল, কি বলে এই লোক!! দুনিয়ার সবথেকে খারাপ লোকটার সাথে যাবে ও ঘুরতে তাও যেত যদি ওরা একে ওপরকে মানত। একবার মনে মনে ভাবল সব সমস্যার কথা বলবে কিনা পরে ভাবল থাক। -আচ্ছা মা, তুমি একটু মেহবুবকে ফোন দাও তো ওর ছুটির হিসেবটা মিলিয়েই আমি টিকিট কাটব। . এবার কি হবে ওর কাছে তো ঐ লোকের নাম্বারও নেই। ও বলল যে আমি রুমে গিয়ে ফোন দেই।বলেই দৌড়ে চলে আসল। ওর শাশুড়ি হেসে ফেলল সে ভাবল হয়ত ও তাদের সামনে কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে। ও রুমে এসে চুপচাপ বসে রইল, এখন কি হবে!!!ওর কাছে তো নাম্বারও নেই এসব ভাবতে ভাবতে ওর জায়ের রুমে গেল। ভাবিকে বলল-ভাবি তোমার দেবরের নাম্বারটা দেয়া যাবে?? আমি হারিয়ে ফেলেছি। ওর জা মুচকি হেসে বলল-সাবিহা আমি কিন্তু সব জানি বোন। মা বাবা দুপুরে আমার সামনেই তোমাদের ব্যাপারে আলোচনা করেছে তোমার ভাইয়ার সাথে। তোমাকে শুধু একটা কথাই বলব যে আমার দেবরটা কিন্তু খারাপ না, সময় ওকে খারাপ বানিয়েছে। তুমি প্লিজ একটু সময় নাও। সব ঠিক হয়ে যাবে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here