পর্বঃ১৬
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(কার্টেসী ছাড়া গল্প কপি নিষেধ।)
…
ফোনের রিংটোনের শব্দে রাইদার ঘুম ভাঙে সকাল বেলা। চোখ মুখ কুঁচকে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখার চেষ্টা করে কে কল দিয়েছে। ফোনের স্কিনে আরাফ নামটা দেখে চোখের সব ঘুম উড়ে যায়। গতরাতেই আরাফকে নিজের নাম্বারটা দিয়েছিলো।
কলটা রিসিভ করার আগেই কেটে যায়।ফোন হাতে নিয়ে রাইদা শোয়া থেকে উঠে বসে।আবারো ফোন বাজতে থাকে এবার সাথে সাথেই কল রিসিভ করে সে।
‘ঘুমাচ্ছিলে নিশ্চয়ই? বিরক্ত করলাম।’,আরাফ অপরপাশ থেকে বলে উঠে।
‘একদম না আমি তো ঘুমাইনি।’,রাইদা হেঁসে জবাব দেয়।
‘হ্যা তোমার কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারছি একদম ঘুমাওনি।’,কথাটা বলে আরাফ হেঁসে দেয়।
‘আপনি এখন কোথায়?’
‘রেডি হয়ে নাশতা সারলাম। খাবারের টেবিলে সকালে তোমাকে মিস করছিলাম।আমার মনেই ছিলো না তুমি এ বাড়িতে নেই,খাবার নিয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর মনে পরে তুমি তো ফিরনি এ বাড়িতে গতরাতে।’
‘তাহলে এখনই বের হবেন?’
না তিরিশ মিনিট পর তবে সমস্যা হলো সায়ন গাড়ি করে ঐ পাশের যেই মেইন রোড আছে সেটা দিয়ে আমায় বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে দিবে।’
‘তাহলে এখন দেখা হচ্ছে না?’
‘সম্ভব না রাই। তোমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে যেই রাস্তাটা যেতে কাঁচা রাস্তা অতিক্রম করতে হয় যেখান দিয়ে গাড়ি নেওয়া সম্ভব না।সায়নকে অনেকবার বললাম কিন্তু ও আমাকে একা ছাড়তে চাচ্ছে না।বাস স্ট্যান্ডে দিয়ে আসবেই।’
‘আচ্ছা সমস্যা নেই আপনি সাবধানে যাবেন।আমি আজ রাতে টিকেট কাটবো কালই ফেরার জন্য। ‘
‘তাড়াহুড়ো না করে আরো কিছু দিন বেড়িয়ে যাও।আমার তো ছুটিটা ক্যান্সেল না হলে এমন হতো না।’
‘না ফিরতে হবে একটা বড় অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতে হবে সেটার জন্য সব প্রস্তুতি নিতে হবে। আচ্ছা সানজিদার সাথে কথা বলেছিলেন?’
‘হ্যা বলেছিলাম এরপর ও আর আমার সামনে তেমন আসেনি।আচ্ছা রাই রাখছি সায়ন ডাকছে।’
‘ঠিক আছে বাসে উঠে মেসেজ দিয়েন আর সাবধানে যাবেন।’
‘আচ্ছা।’
কল কেটে আরাফ পুকুর পাড় থেকে হেঁটে বসার ঘরের দিকে যায়। সেখানে মহিউদ্দিন থেকে শুরু করে বাড়ির অনেকেই ছিলো তবে শুধু ছিলো না সানজিদা। সকলের সাথে শেষ বারের মতো আলাপ সেরে নেয় আরাফ।
রান্নাঘর থেকে চেঁচামেচির শব্দ আসলে সেদিকে চলে যায় রাইদা।
‘কি হয়েছে এতো চেঁচামেচি করেনো করছো খালামনি?’,মাইমুনাকে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
‘এই যে নাবাবের বেটি তোরা কি একটু শান্তি দিবি না আমগো?’,রেগে মাইমুনা বলে।
‘হয়েছে টা কি সেটা বলো।’,রাইদা তাকিয়ে দেখে মারিয়া কাঁদছে।
‘তালুকদারের পুতরে তুই কি কইছস?’
মাইমুনার মুখে তালুকদার নামটা শুনতেই অমিতের কথা মাথায় আসে রাইদার।
‘কি হয়েছে? অমিত বা ওর ভাই মেহেদী কিছু বলেছে?’,মারিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে রাইদা।
‘আইজকা ওড়না ধইরা টানছে কালকে তো ইজ্জন নিতে উডাইয়া লইয়া যাইবো।তোরে কে কইছিলো ছেড়ারে রাস্তায় অপমান করতে? গ্রামের মাইনসে কইতাছে তুই নাকি অমিতরে কি কইছস?’,মাইমুনা রাইদার বাহু ধরে জিজ্ঞেস করে।
‘তোরে অমিত কি বলেছে সব বল আমাকে।’,মারিয়াকে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
মাইমুনা কিছু বলতে নিলে রাইদা তা কানে নেয় না।
‘দোকান থেইকা জিনিস নিয়া আমি বাইত আইতাছিলাম তহন অমিত হের দলবল লইয়া পথ আটঁকায়।আমি আওয়া ধরলে আমার ওড়না ধইরা টান দেয় আর কইছে তোর বোনরে কইছ পারলে আমারে আটঁকাইতে।আইজকা ওড়না টান দিছি কালকে তোরে টান দিয়া নিয়া যামু তোর বইন কি করে দেখুম।’
মারিয়ার কথা শেষ হতেই রাইদা ঘরে গিয়ে জামা পাল্টে গায়ে একটা বড় সুতির ওড়না জড়িয়ে নেয়।মারিয়ার হাত ধরে বাড়ি থেকে বের হয়।
‘মাইয়ারে লইয়া কই যাস এই ছাড় মাইয়াডারে।’,মাইমুনা এসে পথ আঁটকে বলে।
‘অমিতের কথাগুলোর জবাব দিতে যাই আর তুমি আমার সামনে থেকে সরো খালামনি না হলে খুব খারাপ হবে।’,মাইমুনাকে উপেক্ষা করে রাইদা মারিয়াকে নিয়ে হাঁটা দেয় সাথে রান্না ঘর থেকে মোটা একটা লাঠি নিয়ে নেয়।
মোড়ের মুদি দোকানের সামনে যেতেই দেখে অমিত,মেহেদী সাথে দু’জন ছেলে বাইকের উপর বসে বিড়ি টানছে আর মেয়েদের বাজে কথা বলছে। মারিয়ার হাতে ফোন দিয়ে রাইদা বলে ভিডিও করতে এরপর হেঁটে সোজা অমিতদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
অমিতরা কিছু বুঝার আগেই রাইদা নিজের গায়ের ওড়না অমিতের হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাতের লাঠিটা দিয়ে বাইকের হেড লাইট ভেঙে দেয়।মেহেদী আটঁকাতে আসলে লাঠি দিয়ে মেহেদীর হাতে পায়ে বাড়ি দেয়। মানুষ একে একে ভীড় করে ফেলে পুরো জায়গাটা। সবাই গিয়ে একে অন্যকে খবর দিচ্ছে।খবর পেয়ে সাবিনা,আলেয়া বেগম, মাইমুনাও ছুটে আসে।বাকি ছেলে দু’টো কিছু বলতে নিলে এতো মানুষ দেখে অমিত তাদের আঁটকে দেয়।
বাইক দুটোকে পিটিয়ে অবস্থা খারাপ করে দেয় রাইদা। কাজ শেষ করে অমিতের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে।
‘মিস্টার তালুকদার আপনি কি ভেবেছেন ওড়না কেঁড়ে নিলে মেয়েরা দুর্বল? আমার সাথে সরাসরি ময়দানে নেমে মোকাবেলা করুন এভাবে আমার ছোট বোনকে বিরক্ত করে কাপুরুষের পরিচয় দিয়েন না অবশ্য যারা মেয়েদের রাস্তা ঘাটে উত্তপ্ত করে নিজেকে মহান পুরুষ ভাবে তারা এক নাম্বার কা*পুরুষ। আর হ্যা এই যে ওড়নাটা আপনি গায়ে দিয়ে বউয়ের আঁচলের তলায় লুকিয়ে থাকুন। কা*পুরুষ কোথাকার।’,কথাগুলো বলে রাইদা মারিয়ার হাত ধরে সেখান থেকে চলে যায়।
যারা সেখানে উপস্থিত ছিলো সকলে রাইদাকে বাহবা দিতে থাকে এমন সাহসিকতার জন্য। অমিত হাতের ওড়নাটা মুড়িয়ে ছুঁড়ে দেয়।লজ্জায় অপমানে সেখান থেকে চলে যায়।বাতাসের বেগে খবরটা চারিদিকে ছড়িয়ে যায়। হাওলাদার বাড়িতে খবরটা পৌঁছাতে বেশি সময় লাগে না।
বাড়ি ফিরে রাইদা কারো সাথে কথা না বলে গোসল সেরে রেডি হয় বিয়েতে যাওয়ার জন্য। জুম্মার পরই বিয়ের দাওয়াত খেতে যাবে। সাবিনা রাইদাকে নীল শাড়িটা পরিয়ে দেয়। মারিয়া আজকে শাড়ী পরেনি। লাগেজ থেকে উপহার পাওয়া চুড়ি গুলো বের করে নীল আর সাদা রঙের চুড়ি মিলিয়ে দু’হাতে ভরে পরে নেয় রাইদা। সেজেগুজে মারিয়াকে সাথে নিয়ে চলে যায় বিয়ে বাড়িতে। বিয়ে বাড়িতে যামিনী, শ্রেয়া,সানজিদা আর রুবেলের সাথে দেখা হয়ে যায়। সকলে এক টেবিলেই খাওয়া সেরে নেয়।
ফোন বের করে রাইদা দেখে আরাফ গাড়িতে উঠে মেসেজ দিয়েছিলো এরপর আর কোনো মেসেজ দেয় নি। আরাফের ভাবনা ফেলে বিয়ে বাড়িতে যামিনী,শ্রেয়া, সানজিদা আর রুবেলের সাথেই আড্ডা দিয়েই কাঁটায়। আশে পাশে সায়নকে দেখতে না পেয়ে বুঝে নেয় সে আসেনি।
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই কনে বিদায় দেওয়া হয়। কনে বিদায়ের পর যামিনীরাও চেয়ারম্যান বাড়িতে চলে যেতে চাইছিলো কিন্তু রাইদা আর মারিয়া জোর করে তাদের নিজেদের বাড়ি নিয়ে আসে।
মেহমান দেখা আলেয়া বেগম, তার পুত্র বধু আর সাবিনা ব্যস্ত হয়ে যায় তাদের আপ্যায়ন করতে।
বসার ঘরে বসে রাইদা,মারিয়া,যামিনী, শ্রেয়া,সানজিদা আর রুবেল আড্ডা দিচ্ছে। সাবিনা টেবিলে এনে নাশতা রেখে বসে যায় আড্ডায়।
রাইদা ফোন হাতে নিয়ে দেখে পায়েল তাকে অনেকগুলো মেসেজ দিয়েছে।
‘তোমরা আড্ডা দাও আমি একটু জরুরি কলে কথা বলে আসি।’,সকলের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে রাইদা ঘর থেকে বের হয়ে উঠানে যায় কথা বলতে।
পায়েলের হোয়াটসঅ্যাপে কল দেয় রাইদা।
‘রাই এদিকের অবস্থা ভালো না।’,কল রিসিভ করে পায়েল বলে উঠে।
‘কার কি হলো আবার?’,উঠানের এক পাশে দাঁড়িয়ে রাইদা কথা বলতে থাকে।
‘আমাদের লুকায়িত লাভ বার্ড জোড়া যা শুরু করছে।’
‘কি করলো এরা আবার?’
‘রুহির বাসায় পাত্র দেখছে সেটা অর্ককে বলেছিলাম ও তো পাত্তাই দিলো না উল্টো আমাকে ঝারি দিলো।’
‘এই কাহিনী কবের?’
‘কাহিনী তো কয়েকদিনের।রুহি আমাকে নিষেধ করেছে পাত্র দেখার বিষয়টা তোকে বলতে তাই চুপ ছিলাম। আমি ভাবলাম অর্ককে আলাদা ভাবে বলে দেখি ও কি করে কিন্তু সে তো সব জেনেও চুপ করে বসে আছে।অর্ক এমন কেন বলতো, মেয়েটাকে এতো ভালোবাসা সেটা কেনো প্রকাশ করে না?’
‘অর্কের ধারণা রুহির তরফ থেকে শুধু বন্ধুত্ব তাই সে এসব বলে বন্ধুর সাথে সম্পর্কটা নষ্ট করতে চায় না।’
‘ওয়াও নাইস! এদিকে রুহির ও একই অবস্থা। অর্ককে ভালোবাসে কিন্তু বন্ধু বলে সে বলতে চায় না।’
‘এদের অবস্থা ধুঁকে ম*র*বে তাও কেউ কাউকে বলবে না।’
‘এই রাই আমরা বলে দিলে হয় না?’
‘না একদম না। অর্ককে তো চিনিস ওর অনেক ইগো আমরা বললে দেখা যাবে রুহির উপর আরো রেগে যাবে।রুহির নিজেরই বলতে হবে।আমরা কিছুই করতে পারবো না এখানে তবে ভাবছি এবার ঢাকায় ফিরে রুহির সাথে কথা বলে দেখবো।’
‘আমাদের সামনে দু’জনে কষ্ট পাচ্ছে আর আমরা কিছুই করতে পারছি না।’
‘চিন্তা করিস না রুহি আর অর্ককে যেভাবে পারি মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবো।আচ্ছা রাখছি পরে কল দিবো।’
কল কেটে ফোনের দিকে তাকিয়ে ফাহিমের মেসেজ পড়তে পড়তে ঘরের দিকে যাচ্ছিলো রাইদা তখনই কারো বুকে ধাক্কা খায়।মাথা তুলে দেখো সাদা পাঞ্জাবী পরে সায়ন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।এই রাতের বেলা চাঁদের আলোতে সায়নকে দেখতে অসুবিধা হলো না রাইদার। সায়ন একধ্যানে রাইদার পা থেকে মাথা দেখছে।
‘নীল শাড়ীতে একদম নীল পরী লাগছে তোমাকে রি।’,জড়ানো স্বরে বলে সায়ন।
‘আপনি আবার কোথা থেকে আসলেন এই সময়?’,রাইদা সায়নের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে।
‘ঘুমিয়ে ছিলাম যামিনীর কল পেয়ে ঘুম ভাঙে।ও বললো এখানে আছে ওরা তাই চলে এলাম হবু নানা শ্বশুরবাড়ীতে দাওয়াত খেতে।’,সায়ন আগের ন্যায় জড়ানো স্বরে বলে।
‘সরুন ঘরে যাবো।’
রাইদা যেতে নিলেই সায়ন পথ আঁটকায়। রাইদা ডানে গেলে সায়ন ডানে যায়, রাইদা বামে গেলে সায়নও বামে যায়।
‘দূর আপনার যন্ত্রণায় মনে হচ্ছে বনবাসে চলে যাই।চাচ্ছেন টা কি? ঘরে যেতে দিচ্ছেন না কেনো?’,বিরক্ত হয়ে রাইদা জিজ্ঞেস করে।
‘তোমাকে দেখতে চাইছি রি। দিনে তো তোমার এই রুপ মিস করেছি এখন আর মিস করতে চাইছি না।ঘরে গেলে তো আমার সামনে আসবে না এটা আমি ভালো করেই জানি।’,গালে হাত দিয়ে রাইদার দিকে তাকিয়ে বলে সায়ন।
রাইদা বিরক্ত হয়ে উল্টো ঘুরে মেইন গেটের দিকে হাঁটা দেয়। সায়নও পিছন পিছন যেতে থাকে। অর্ধেক রাস্তায় এলে রাইদা থেমে যায়, পিছনে ঘুরে সায়নকে কিছু বলতে নিলে আবারো ধাক্কা খায় সায়নের সাথে।টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলে সায়ন দু হাত দিয়ে রাইদাকে আঁকড়ে ধরে। একটু পর রাইদাকে ছেড়ে দিলে রাইদা সেখান থেকে চলে যেতে পা বাড়ালে তার ডান হাত সায়ন চেপে ধরে।
চাঁদের আলোতে সায়ন রাইদাকে দেখছে। রাইদা সরার চেষ্টা করলেও সায়ন তাকে ছাড়ে না। হাত দিয়ে সায়নের বুকে ধাক্কা দিচ্ছে রাইদা,তার হাতে থাকা রেশমি চুড়িগুলোও ঝনঝন শব্দ করে রাইদার সাথে প্রতিবাদ জানাচ্ছে
‘কি করছেন ছাড়ুন কেউ দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’,আশেপাশে তাকিয়ে রাইদা বলে।
‘রি তোমার কি শাড়ী পছন্দ? পছন্দ না হলেও বিয়ের পর আমার জন্য রোজ শাড়ী পরবা।আমি ঘুম থেকে উঠে বউকে শাড়ী পরা দেখতে চাই।শাড়ীতে তোমাকে এই মূহুর্তে বউ বউ লাগছে। মন চাচ্ছে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলি। কি বলো রি শুভ কাজটা করে ফেলবো?’,রাইদার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে সায়ন।
‘বিয়ে তো হাতের মোয়া আপনি বললেন আর হয়ে গেলো তাছাড়া আপনাকে আমি বিয়ে করবো আপনি ভাবলেন কীভাবে?’,সায়নের হাতে খামচি দিয়ে বলে রাইদা।
‘এভাবে ভেবেছি।’,কথাটা বলে রাইদার ডান হাত টেনে নিজের আরো কাছে রাইদাকে টেনে নেয় সায়ন।
‘শাড়ীটা তোমার পছন্দ হয়েছে? বিয়েতেও তোমাকে লাল বেনারসির বদলে নীল বেনারসি পড়াবো।’
‘এই শাড়ী আপনি দিয়েছেন?’,অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
‘আর কে দিবে? অন্য কেউ আছে নাকি?’,গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করে সায়ন।
‘ছাড়ুন তো অনেক অসভ্যতা করেছেন। বিরক্ত লাগছে সরুন।’,সায়নকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে রাইদা।
‘তোমার হাতের রেশমি চুড়িগুলো অনেক বিরক্ত করছে।বারবার শব্দ করে আমার ধ্যান ভেঙে দিচ্ছে।আমি তো চুড়ি দেইনি তাহলে তুমি ম্যাচিং করে কিনেছো?’
সায়নের এমন কথায় রাইদা আবারো অবাক হয়ে যায়। সে জানতো এসব আরাফ দিয়েছে এখন আবার সায়ন বলছে শাড়ীটা সে দিয়েছে তাহলে চুড়িগুলো কে দিলো?চুড়ি গুলো কি তাহলে আরাফ দিয়েছে?সব প্রশ্ন একত্রে এসে রাইদার মস্তিষ্কে ভীড় করে।
‘আমার প্রেমিক দিয়েছে চুড়িগুলো ছাড়ুন এবার।’
রাইদার কথার জবাবে সায়ন কিছু বলার আগেই তাদের দিকে অনেকগুলো টর্চের আলো পড়ে। চোখে আলো পড়ায় রাইদা চোখ বন্ধ করে ফেলে।সায়ন রাইদাকে ছেড়ে সামনে এসে দাঁড়ায় যাতে রাইদার চোখে আলো না পড়ে।
‘কি কইছিলাম না ক্যারা জানি আড়ালে খাড়াইয়া ফষ্টি নষ্টি করতাছে।’,একজন কম বয়সী ছেলে বলে উঠে।
‘এইডা তো চেয়ারম্যানের নাতী কিন্তু মাইয়াডা কেডা? এই পোলা সরো দেহি কার লগে ফষ্টি নষ্টি করো।’,একজন বয়স্ক লোক বলে।
‘দেখুন আপনারা যা ভাবছেন তা না।ওকে যেতে দিন আমি বলছি সব।’,সায়ন লোকগুলোর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে।
লোক চারজন কোনো কথাই শুনতে চায় না। হাঁকডাক শুরু করে। রাইদা যাতে না পালাতে পারে তাই এক লোক গিয়ে রাস্তা আঁটকে রেখেছে। ডাকাডাকির শব্দে আশেপাশের বাড়ির মানুষ বের হয়ে আসে। রাস্তায় গন্ডগোলের শব্দ পেয়ে রুবেল বের হয় ঘর থেকে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে যামিনী, শ্রেয়া আর সাবিনা উঁকি দেয়।
মহিলারা এসে রাইদাকে ঘিরে ধরে।সায়নকে টেনে ছেলেরা হাত ধরে রাখে। দু’জনকে আলাদা করে দেওয়া হয়।
‘সরুন আমাকে যেতে দিন।এখানে কোনো অপরাধ আমি করিনি যার কারণে আমাকে আঁটকে রাখবেন।’,মহিলা গুলোকে রাইদা জোর গলায় বলে।
‘এ্যা চোরের মায়ের বড় গলা।ছি ছি রাইত বিরাইতে ছেমড়ার লগে চিপায় খাড়াইয়া আছিলো।এইডি কইতেও আমার বমি আইতাছে।’,এক মহিলা বমির ভঙ্গি করে বলে।
‘মাইয়াডারে ভালা ভাবছিলাম কিন্তু মায়ের মতোন বড়লোকের পুত দেইখা গায়ে ঢইলা পরছে।’,আরেক মহিলা বলে।
‘আরে এই ছেমড়ি তো সকালে তালুকদারের পুতরে কত কিছু কইলো অথচ নিজেই আরেক ছেমড়ার লগে বিয়া ছাড়াই আকাম করে।’,প্রথম মহিলাটি বলে।
‘দেখুন আপনারা না জেনে আমাকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না।’,রাইদা শাসিয়ে বলে মহিলাদের।
‘বেডায় যখন গায়ে গতরে হাত দিলে মজা লাগে তহন বিয়াডা করস না কেন? নাকি বিয়া ছাড়াই মজা লাগে?’,অন্য এক মহিলা রাইদার শরীরে বিশ্রী ভাবে স্পর্শ করে বলে।
‘রাই কি হয়েছে?’,রুবেল অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
রাইদা টলোমলো অশ্রু চোখে রুবেলের দিকে তাকায়। দু’হাতে দিয়ে কান চেপে চোখ বন্ধ করল ফেলে সে।
‘আর কি হইবো চেয়ারম্যানের বইন পুতের লগে এইহানে মাহামাহি করতাছিলো পুডি মাচের মতন।’,আরেক মহিলা বলে উঠে।
সায়নের কথা মাথায় আসতেই রুবেল দৌড়ে সামনে গিয়ে দেখে এক দল লোক আর ছেলেরা মিলে সায়নকে আঁটকে রেখেছে। সায়ন কিছু বলে তাদের বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কেউ তার কথা শুনছ না। রুবেলকে দেখে সায়ন ডাক দেয় কিন্তু লোকগুলোকে ভেদ করে সায়নের সামনে যেতে পারে না।
‘ঘর থেকে যামিনী,সাবিনা খালাকে ডেকে রাইকে জলদি ঘরে নিয়ে যা। আর কোনো মহিলাকে ওর কাছে ঘেঁষতে দিবি না।’
সায়নের কথা মতোন রুবেল দৌড়ে গিয়ে যামিনীকে ডাক দেয়। সব শুনে যামিনীর সাথে শ্রেয়া,সাবিনা,মারিয়া আসে।
মহিলা গুলোকে সাবিনা ধমক দিয়ে সরিয়ে রাইদাকে বুকে আগলে ঘরে নিয়ে যায়।
মাস্টার বাড়ির উঠানে মানুষে ভরে গেছে। একটা চেয়ারে সায়নকে বসিয়ে চারিদিক থেকে ছেলেরা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। এসব বিষয়ে সায়নের একদম চিন্তা নেই ও ভাবছে রাইদার কথা। রাইদার কি অবস্থা সেই খবর এখনো নিতে পারছে না। নিজের করা ভুলে রাইদা শাস্তি পাক এটা সে কখনোই চায় না।
রুমের মধ্যে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে রাইদা।মুখ লুকিয়ে আছে সাবিনার বুকে।বাহিরে মহিলাদের বলা কথাগুলো রাইদাকে ভালো করেই আঘাত করেছে।কারো কথাই এখন তার মাথায় আসছে না শুধু ঘুরছে তখনকার মহিলাদের বলা সকল বিশ্রি কথাগুলো।
সানজিদা,যামিনী, শ্রেয়া আর রাইদার ছোট মামার বউ রাইদার পাশে বসে আছে দরজা আঁটকে।
আলেয়া বেগম আর মারিয়া বসার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে যাতে কেউ না ঢুকতে পারে। মারিয়ার মা বসার ঘরে বসে তামাশা দেখছে।
মিনিট বিশেক পর মহিউদ্দিন, এলাকার মাতব্বর জামিল তালুকদার এসে উঠানে বসে। অমিত, মেহেদী ও এসে জামিল তালুকদারের পিছনে দাঁড়ায়। জাহিদ এসে ছেলেদের সরিয়ে সায়নের পাশে দাঁড়ায়। রুবেল রাইদারের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার পিছনে আলেয়া বেগম ও মারিয়া দাঁড়ানো।
‘কি হইছে ঘটনা কেউ বিস্তারিত কন তো।’,জামিল তালুকদার পান চিবাতে চিবাতে জিজ্ঞেস করে।
‘আমি রাস্তা দিয়া যাইতাছিলাম তহন আড়ালে দেহি এই ভাই আর ঐ আপা আকাম করতাছে পরে রাস্তা দিয়া এনারা যাইতাছিলো ওনাগো ডাইকা আনি।’,এক ছেলে সামনে দাঁড়িয়ে বলে।
‘আমি আর কি কমু মহিউদ্দিন তোমার বইন পুত তুমি বুঝো আর মাইয়াডা ও নাকি ভালা না হুনলাম।আইজকা হুদাই আমার পোলার হোন্ডার লাইট হ্যান্ডেল ভাঙছে।মাইয়া মাইনষের এতো ত্যাজ ভালা না।’,পানির পিক পেলে জামিল তালুকদার বলে।
‘মামা আমার কথাটা শুনো।’,সায়ন বলে উঠে।
‘এখানে আমি কারো মামা না আমি চেয়ারম্যান যে আসছি এক অপরাধের বিচার করতে।’,মহিউদ্দিনের এমন কথায় সায়ন চুপ হয়ে যায়।
‘কত পোলার লগে আকাম করছে কে জানে।শহুরে মাইয়ারা একেক দিন একেক পোলার লগে বিছানায় যায়।’,মেহেদী বলে উঠে।
‘এই মাইয়া তো আবিয়াইত্তা রাখা ঠিক হইবো না।বিয়া দিয়া দেন তবে কেউ আর এই নস্ট মাইয়া বিয়া করবো না তয় আব্বা আপনে কইলে মায়ের লইগ্গা ওরে বিয়া কইরা কামের ছেমড়ি বানাইয়া বাইত নিতাম।’,অমিত গলা ঝেরে বলে।
অমিতের কথা শুনে সায়ন তেড়ে আসে তাকে জাহিদ সহ অন্য ছেলেরা আঁটকায়।
‘হ চেয়ারম্যান সাহেব ছেমড়িরে অমিতের লগে বিয়া দিয়া দেন ভালা হইবো।’,ভীড়ের মধ্যে কেউ একজন বলে।
সায়নের দিকে তাকিয়ে অমিত বিশ্রি একটা হাসি দেয়। রাগে সায়ন দাঁতে দাঁত চেপে নিজের চুলগুলো টেনে ধরে।
‘আমি কিছু বলতে চাই সবাই মন দিয়ে শুনবেন আর কেউ আমার কথার মধ্যে কোনো কথা বলবেন না।’,নিরবতা ভেঙে মহিউদ্দিন বলে।
‘আমি আজ পর্যন্ত অন্যায় সাপোর্ট করি নাই আজকেও করবো না। সায়ন আর রাইদা একে অপরকে পছন্দ করে।সায়নের মা আমাকে কল দিয়ে আজকে বলছে রাইদার বাসায় যেনো বিয়ের কথা বলি।আমি সময় বুঝেই আসতাম মেয়ের হাত আমাদের ছেলের জন্য চাইতে তার আগেই আপনারা ভুল বুঝলেন। গ্রামের বিয়ের আগে ছেলেমেয়েরা দেখা করে না কিন্তু শহরে এইগুলা স্বাভাবিক বিষয়।যেই ছেলেটা ওদের দেখেছে সে হয়তো না বুঝেই আপনাদের ডেকেছে আপনারাও ভুল বুঝে ওদের আঁটকে রেখেছেন। তাদের বিয়ে এক প্রকার ঠিকই বলা যায়।’
মহিউদ্দিনের কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে যায়।
‘তাহলে এক্ষনি হুজুর ডাইক্কা বিয়া পড়াইয়া দেন দুই জনের।আমগো গ্রামে এইডি চলতো না।পরে বিয়া হইলেও হইবো তার থেইক্কা এহন বিয়া পড়াইয়া দেন।’,হুট করে এক লোক বলে উঠে।
লেকটার সাথে অনেকেই সহমত পোষণ করে।
মহিউদ্দিন মুখ তুলে একবার সায়নের দিকে তাকায় দেখে সায়ন মাথা নিচু করে বসে আছে।
‘ঠিক আছে ডাকেন আমাদের কোনো সমস্যা নেই তবে মেয়ের সাথে আমি একটু আলাদা কথা বলতে চাই।’,মহিউদ্দিন বলে।
তার কথার প্রেক্ষিতে কেউ কিছু বলে না। লোকজন ছুটে বিয়ের ব্যবস্থা করতে। অমিতের বোধহয় বিচারটা পছন্দ হয় নায় সে তার বাবা জামিলের সাথে পরামর্শ করতে থাকে। সকলের সম্মতি দেখে জামিল তালুকদার এ বিষয়ে আর কিছু বলে না সে অমিতকে চুপ থাকতে বলে।
রুমে ঢুকে মহিউদ্দিন রাইদার মাথায় হাত রাখেন। রাইদা মুখ তুলে তাকায় মহিউদ্দিনের দিকে। অতিরিক্ত কান্না করার কারণে চোখ মুখে অন্ধকার দেখছে রাইদা।
‘মা রে আমি না জেনে বাহিরে বলছি তুই সায়নরে পছন্দ করিস।এই মূহুর্তে আমি মিথ্যা না বললে জামিল তালুকদার আমাকে চাপ দিয়ে তোর সাথে ওনার ছেলের বিয়ের ব্যবস্থা করতো।আমি চেয়ারম্যান হলেও জামিল তালুকদারের শক্তির কাছে কিছুই না। আমাদের সায়ন তোকে ভালোবাসে অনেক এইটা আমি রিনার থেকে শুনছি।সায়ন তোকে অনেক ভালো রাখবে তুই আর আপত্তি করিস না বিয়েটা করে নে।’,কথাগুলো বলে মহিউদ্দিন ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
মহিউদ্দিনের কথা কিছুই মাথায় ঢুকে না রাইদার। মহিউদ্দিনের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝে সে কিছু বলছে কিন্তু কি বলছে তা রাইদার ব্রেন ক্যাচ করতে পারে না।
হুজুর এসে উঠানে বসে সায়ন আর রাইদার বিয়ে পড়ায়।সায়ন অপরাধীর ন্যায় বারবার ঘরের দিকে তাকায়। একদল মহিলা রাইদার সামনে গিয়ে বলে কবুল বলতে।এমনিতেই রাইদার এতক্ষণ টেনশনে শরীর খারাপ লাগছিলো তার উপর আবারো মহিলাদের দেখে মাথা ঘুরতে থাকে। সাবিনা রাইদার মাথায় হাত বুলিয়ে কবুল বলতে বলে,ঠোঁট দুটো নাড়িয়ে রাইদা কবুল শব্দটি উচ্চারণ করে অনেক কষ্টে। রাইদার চারিপাশে ঘুরতে থাকে একসময় চোখ দুটোতে অন্ধকার নেমে আসে। অতিরিক্ত চিন্তায় রাইদা জ্ঞান হারায় সাবিনার বুকে।
বিয়ে পড়ানো শেষ হলে রুবেল এসে সায়নকে জানায় রাইদা জ্ঞান হারিয়েছে। সায়ন সবাইকে উপেক্ষা করে ঘরে ছুটে। জাহিদ আর রুবেল যায় ডাক্তার ডাকতে।
যামিনী রাইদার মুখে পানির ছিটায় কিন্তু রাইদার কোনো সাড়াশব্দ পায় না। সায়ন এসে যামিনীকে সরিয়ে রাইদার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে। এতক্ষণ সায়নের মনে হচ্ছিলো রাইদাকে সে হারিয়ে ফেলবে বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা হচ্ছিলো তার।রাইদার মাথা বুকে চেপে ধরতেই সায়ন শান্ত হয়।
‘সায়ন ছাড় মেয়েটা অসুস্থ।’,যামিনী ইতস্তত করে সায়নকে বলে।
সায়ন অগ্নি দৃষ্টিতে যামিনীর দিকে তাকায়। যামিনী আর কিছু বলে না।
‘তোরা সব বের হ এই রুম থেকে। টেনশনে রি জ্ঞান হারিয়েছে তেমন কিছু হয়নি আর ডাক্তার ডেকে আনতে গেছে ততক্ষণ আমি এখানেই বসে থাকবো।’
সায়নের কথার উপর কেউ কিছু বলার সাহস পায় না।সকলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।মারিয়া অসহায় দৃষ্টি ফেলে রাইদা আর সায়নের দিকে। রাইদার মতো শক্ত মেয়ের এই অবস্থা দেখে মারিয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে।
রাইদাকে বুকে জড়িয়ে বসে থাকে সায়ন।রাইদার নির্জীব হাতদুটো তুলে চুমু খেয়ে আরো শক্ত করে রাইদাকে জড়িয়ে ধরে। সায়ন অনুভূতি শূন্য হয়ে পাগলের মতো আচরণ করছে।সে বুঝতে পারছে না রাইদাকে সারাজীবনের জন্য কাছে পাওয়াতে আনন্দ করবে নাকি এই অবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী করে কষ্ট পাবে।
বসার ঘরে মহিউদ্দিন চিন্তিত হয়ে বসে আছে সেখানেই মাইমুনা,আলেয়া বেগম,যামিনী, শ্রেয়া,ছোট মামার বউ,মারিয়া, সানজিদা বসে আছে। উঠানে ভীড় কমেছে। জামিল তালুকদারও তার ছেলেদের নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।
পাক্কা চল্লিশ মিনিট পর ডাক্তার সাথে রুবেল আর জাহিদ আসে।ডাক্তার এসে রাইদাকে চেক করে একটা স্যালাইন লাগিয়ে দেয় আর কিছু ঔষধ লিখে দেয়।
মহিউদ্দিন ঘড়িতে দেখে রাত বারোটা বাজে। সে সায়ন আর জাহিদকে রেখে সানজিদা,শ্রেয়া,যামিনীকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয়।রুবেল তাদের এগিয়ে দিয়ে আসে।রুবেলের কাছে মনে হয় এই মূহুর্তে সায়নের তাকে প্রয়োজন।
সায়ন রাইদার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।রাইদা গভীর ঘুমে রয়েছে,সায়ন একটু পর পর রাইদা হাতে হাত বুলাচ্ছে আবার চুলগুলো ঠিক করে দিচ্ছে আবার রাইদার শুকনো চোখ মুখে হাত বুলাচ্ছে।
কিছু মনে হতেই ফোন বের করে কাউকে কল দেয় সায়ন।অপরপাশ থেকে জবাব আসতেই ফোন কেটে দেয় সে।রাইদার কপালে গভীর চুম্বন দিয়ে রুম থেকে বের হয়।
‘আমি বেরুচ্ছি রাতে ফিরবো না।খালামনি আপনি রাইদার পাশে থাকবেন আর আমি বের হলে দরজা জানালা সব আঁটকে রাখবেন।যেই আসুক খুলবেন না। রুবেলকে এখানে রেখে যাচ্ছি ও থাকুক আপনাদের প্রয়োজন হতে পারে।’,কথাগুলো বলে চোখমুখ শক্ত করে জাহিদকে সাথে নিয়ে ঘর থেকে বের হয় সায়ন।
সায়ন যেতেই সাবিনা ঘরের সব দরজা জানালা আঁটকে দেয়।
‘সায়নকে এতো রাগ করতে কখনো দেখিনি আজকে মনে হচ্ছে একটা ঝড় বয়ে যাবে।’,রুবেল চিন্তিত হয়ে বলে।
রুবেলের কথা শুনে সাবিনা আতংকিত হয়ে যায়। সাবিনা দৌড়ে গিয়ে ঘুমান্ত রাইদার পাশে বসে।তার এখন চিন্তা হচ্ছে সামনে কি হবে সেটা নিয়ে।
…
(চলবে..)
(৩০০০+ শব্দের পর্ব পড়া শেষ করে অবশ্যই পোস্টে লাইক, কমেন্ট করে যাবেন। নিন সকলের অপেক্ষা অবসান করে নায়ক কে তা বলে দিলাম আশা করি এবার আর নায়ককে নিয়ে অভিযোগ থাকবে না কারো।)