সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-১১

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-১১
মোর্শেদা হাবিব!
**************
প্রায় সাড়ে ছয় ঘন্টা পর অপারেশন সম্পন্ন হলো!
পৌষী কেবিনেই একটা জায়নামাজ বিছিয়ে সিজদায় পড়ে ছিলো।থেকে থেকে কান্নার দমকে ওর শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো।রাজ কেবিনে ঢুকে ওকে এই অবস্থায় দেখতে পেয়ে ওর মাথায় আলতো হাত রাখলে পৌষী ধীরে ধীরে উঠে বসলো।
ওর নাকের ডগা আর চোখগুলো লাল হয়ে আছে।
রাজ মৃদু স্বরে বলল-
-“অপারেশন শেষ হয়েছে!ডাক্তারের সাথে আমার কথা হয়েছে!উনি জানিয়েছেন অপারেশন ভালো হয়েছে!ফুপিকে আগামী বাহাত্তর ঘন্টা অবজারভেশনে রাখা হবে!পৌষী নিরবে সব শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
চোখ মুছে বললো-
-“এখন দেখা করা যাবে?”
-“না…সম্ভবত আরো পরে তবে ভেতরে যেতে দেবেনা,গ্লাসের বাইরে থেকে দেখতে হবে!”
রাজ পৌষীর পাশে হাঁটুগেড়ে বসেছিলো!পৌষী ওর কাঁধে মাথা ঠেকালো!
তার পরের দুটো দিন কাটলো উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে।তৃতীয় দিন সাহেদাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হলো!
পৌষী আর রাজ অতন্দ্র প্রহরীর মতো সাহেদাকে পাহাড়া দিতে লাগলো।
অপারেশনের কারনে রাজ গত কয়েকদিন অফিসে যায়নি।
এর মাঝে আমজাদ চৌধুরীও এসে নিয়মিত বোনকে দেখে গেছেন!
পনের দিন পরে সাহেদাকে বাসায় আনা হলো কিন্তু প্রচুর নিয়ম আর রেস্ট্রিকশন বেঁধে দিয়েছে ডাক্তার।এরি মধ্যে বাসায় ফিরে ওরা শুনল আগামী কাল মামী দেশে ফিরবেন!
পৌষীর মনের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা।
মায়ের এক চিন্তা কমেছে এখন আবার নতুন আরেক চিন্তা, মামী সব শুনলে কি বলবে!
এদিকে বিকেলে রাজ ফোন দিয়ে জানালো তার ফিরতে আজ অনেক রাত হবে কারন কোম্পানীতে কি একটা গন্ডগোল দেখা দিয়েছে যার জন্য বাবাকে রাতেই ইটালী যেতে হবে।কারন পরিস্থিতি তিনি ছাড়া আর কেউ সামাল দিতে পারবেন না।
তাই আমজাদ চৌধুরীকে তড়িঘড়ি করে রাতের ফ্লাইটেই রওনা দিতে হবে !
সব শুনে পৌষীর দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেলো।মামা না থাকলে মামীকে এসব বলবে কে আর পরিস্থিতি সামলাবে কে?
ব্যস্ততার কারনে মামার সাথে পৌষীর কথা বলা সম্ভব হলো না।আমজাদ চৌধুরী কেবল যাবার সময় রাজকে বলে গেলেন।তোর মা তো কাল আসছে।সে আসুক।তোরা তোদের মতো থাকবি।আগে যেমন ছিলি।তোর মা ‘কে আগ বাড়িয়ে কিছু বলার দরকার নাই।আমি ওদিকটা গুছিয়ে শিগগিরই ফিরতে চেষ্ট করবো!।
মামা চলে যাবার পর রাতে খাবার টেবিলে কথাটা রাজের সাথে শেয়ার করলো পৌষী।রাজ বলল-
-“বাবা ফিরে আসুন,তখনই মা’কে জানানো হবে!বাবাই জানাবে !তাছাড়া ফুপি অসুস্থ, এ সময় বাড়ীতে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা না হওয়াই ভালো!”
পৌষী নিরবে দীর্ঘশ্বাস ফেলল!
রাজ ওর হাত নিজের মুঠোয় ধরে বলল-“এতো ভেবোনা তো,যাক না কটা দিন।অন্য সময় হলে আমি নিজেই বলতাম এবং জেদ দেখিয়ে ঠিকই নিজের কাজ আদায় করে নিতাম।কিন্তু যেদিন থেকে আল্লাহর হুকুমগুলো মেনে চলার চেষ্টা করছি,ইসলামের বিধিবিধানের ওপর আমল করার চেষ্টা করেছি সেদিন থেকে মায়ের সঙ্গে কারনে বা অকারনে রাগ জেদ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছি।কারন মায়ের পায়ের নিচেই সন্তানের বেহেস্ত।তাই আমার পক্ষে এখন আর মা’কে কষ্ট দিয়ে কিছু বলা সম্ভব না!
-“না…ঠিকআছে।বলা উচিতও না।নিশ্চয়ই আল্লাহ এর মধ্যেই আমাদের কল্যান রেখেছেন!”পৌষীও সায় দিলো!

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



আজই রানীরা এসে পৌঁছেছেন।ইরা আর তার স্বামী এয়ারপোর্ট থেকেই তাদের উত্তরা মডেল টাউনের বাড়ীতে চলে গেছে!
রানী ফিরে সাহেদার অপারেশনের কথা শুনে এক ঝলকে এসে তাকে দেখে নিজের রুমে চলে গেলেন!
গোসল সেরে হালকা নাস্তা করে সেই যে ঘুম দিলেন উঠলেন একেবারে বেলা পার করে।
পৌষী সব রান্না বান্না আগেই করে রেখেছিলো!
খাবার টেবিলে রানী বেশ আগ্রহের সাথে সেদেশের গল্প করছিলেন।তাঁকে কিছু একটা ব্যাপারে খুব এক্সাইটেড মনে হলো!
উনি সংক্ষেপে জানালেন যে মীরার জন্য খুব ভালো একটা প্রস্তাব পেয়েছেন তিনি।ছেলে ইরার স্বামীরই বন্ধু!
মীরার পরিবার রাজী হলে ওরা কথা আগে বাড়াতে ইচ্ছুক।রাণী তো মহাখুশী মনমতো সমন্ধ পেয়ে যাওয়াতে!
পৌষী চুপচাপ তার আগ্রহভরা গল্পগুলো শুনছিলো!
রানী বলছিলেন-
-“বুঝলি পৌষী,মীরার বিয়েটা হয়ে গেলে তোর জন্য একটা ভালো দ্বীনদার ছেলে দেখে তোর বিয়েটাও দিয়ে দেবো!
পৌষীর বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো এ কথায়।নীরা পাশেই খাচ্ছিলো।ও খাওয়া বন্ধ করে পৌষীর দিকে তাকালো।
পৌষীও নীরার দিকে একবার তাকালো!রানী বলে চলছেন-
-“ছেলে অবশ্য আমার হাতে আছে কিন্তু দ্বীনদার না।তুই তো আবার দ্বীনদার ছাড়া বিয়ে করবি না!”
নীরা প্রসঙ্গ বদলাতে বলল-“ইরা আপু যে তোমাকে জোর করে নিয়ে গেলো,সমস্যাটা কি ছিলো তা তো বললেনা!”
রানীর চেহারা খানিকটা ম্লান হলো-
-“কি জানি বাপু,মেয়েটা এতো ভালো ঘর পেয়েছে,এতো ভালো বর পেয়েছে, একটু মানিয়ে চলবে কি,তা না…সে বরের সাথে পার্টিতে যাবে না!ওর জামাই আবার খুব সৌখিন বুঝলি পৌষী,ও চায় আমার বউ সব জায়গায় যাবে,সবার সাথে মিশবে কিন্তু আমার মেয়েটা হয়েছে আরেক খ্যাত।তোর মতো ঘরকুনো হতে চায়!”
-“কিন্তু মামী,ইরা আপাতো এমন ছিলোনা,কেন হঠাৎ এমন করছে আপনি কি কারনটা জানতে চেয়েছিলেন?”
পৌষী বাধ্য হয়েই বললো কারন ওর কাছে বিষয়টা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না!”
-“না…জিজ্ঞেস তো করেছি ও পরিস্কার করে কিছু বলে না।দেখি মিরার বিয়েতে তো কয়েকদিন এসে থাকবে তখন জিজ্ঞেস করবো।তুই ও জিজ্ঞেস করতে পারিস।যদি তোকে বলে…!”

বাড়ীতে হঠাৎ করেই উৎসবের ঢেউ জাগলো যেন।মীরার হবু বর নাকি আগামী মাসেই অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে,তাই সে বিয়ে করে বউ নিয়ে যেতে চায়।তার সব কাগজপত্র করা আছে।তাই রানী তোড়জোড় শুরু করেছেন।এমন পাত্র হাতছাড়া করা যাবেনা।
গতকালই মীরাকে পাত্রপক্ষ এসে দেখে গেছে!আগামী সপ্তাহেই ওরা বিয়ে করাতে চায় ওরা।
রানীর যেন মাথার ঘায়ে কুত্তা পাগল অবস্থা।
আমজাদ চৌধুরীকে ফোনে সব জানালে তিনি এ সপ্তাহেও ফিরতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন।তার ফিরতে আরো হপ্তাখানেক লাগতে পারে!
রানী নিজের মতো করে বিয়ের প্রস্তুতি নিতে লাগলেন।
সাহেদা আগের চেয়ে এখন অনেকটাই সুস্থ।ঘরের ভেতরেই আস্তে ধীরে হাটাহাটি করেন তিনি।রাজ এখন পুরোদমে অফিস সামলাচ্ছে।বেচারা ফিরতে ফিরতে আজকাল অনেক রাত হয়ে যায়।
পৌষী কান পেতে থাকে।ওর গাড়ীর হর্ণ শুনলেই সে খাবার দাবার গরম করতে লেগে যায়।
সব সুন্দর করে টেবিলে সাজিয়ে দিয়ে সে সরে যায়।যদিও রানী মেয়ের বিয়ের ঝামেলায় এদিকটায় তেমন মনোযোগ দিতে পারছেন না।বেশীরভাগই পৌষীকে খাবার দিতে বলেন।তবু পৌষী সতর্ক থাকে!ওদের কোনো আচরণে যেন রানীর মনে সন্দেহ না জাগে।
আজ রাজ গম্ভীর মুখে খেতে বসলো!
পৌষী দেখলো গালে গত কয়েকদিনের না কামানো দাঁড়ি!পৌষী পানি ঢেলে সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল-“দাঁড়িতে তো ভালোই দেখাচ্ছে,রেখে দিন না!নামাজ যখন ধরেছেন দাঁড়িটাও তো রাখলে পারেন!”
রাজ কটমটিয়ে ওর দিকে তাকালো!পৌষী মিষ্টি হেসে ওর মন গলানোর চেষ্টা করলো কিন্তু তাতে পাথর গললোনা!
মৃদু স্বরে বলল-“কি হলো আপনার,এতো রাগ কিসের জন্য?”
-“জানেন না আপনি তাই না?”রাজ খাবারে হাত না দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে।
পৌষী হাসি চাপলো।আসলেই মায়ের অপারেশন থেকে শুরু করে মামী আসার কারনে গত বেশ কয়েকটা দিন ও রাজ থেকে বেশ দুরে দুরেই থেকেছে!এমনকি যখন বাসায় রানী ছিলোনা তখনও রাজ ওকে মোবাইল ফোনে নিজজের রুমে ডেকেছিলো।পৌষী নানান অযুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে গেছে।আর তারপর থেকেই রাজ রাগ করে আছে।
পৌষী বললো-
-“আচ্ছা,এখন খেয়ে নিন!”
রাজ শার্টের হাতা গুটিয়ে এবার ভাতে হাত দিয়ে বলল-“মানুষকে এভাবে কষ্ট দেয়া ঠিক না! বুঝলে?
পৌষী নাক কুঁচকে ভেঙ্গচালো ওকে!
তৎক্ষনাৎ রাজ ভাত রেখে তেড়ে এলো-”
-“কি হলো ভেঙ্গালে কেন?”
পৌষী হকচকিয়ে গেলো।ভয় পেয়ে চারিদিকে তাকিয়ে রাজের বুকে মৃদু ধাক্কা দিলো-
-“ইয়া আল্লাহ! কি শুরু করেছেন,কেউ দেখে ফেলবে তো!”
-“দেখে ফেললেই ভালো!এই রোজকার যন্ত্রনা আর ভাল্লাগেনা।নিজের বৌয়ের সাথে চোরের মতো দেখা করতে ভালো লাগেনা।আজ কদিন তোমায় কিস করিনি! হিসেব আছে?”
-“ইস্….চুপ!”
-“রাখো তোমার চুপ আর চাপ!এদিকে এসো…!” বলে পৌষীকে টেনে রান্নাঘরের ভেতরে নিয়ে গেলো। ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরতেই রাহেলার গলার শব্দ পেয়ে পৌষী ছটফটিয়ে উঠে রাজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো!
রাজ ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফের টেবিলে এসে বসলো।

আজ মীরার গায়ে হলুদ দেয়া হবে।এরিমধ্যে বাড়ী সাজানো হয়েছে।বিকেল থেকেই অতিথিরা আসতে শুরু করেছে।পৌষী সাধারনত এসব অনুষ্ঠান এভয়েড করে চলে।এতে গায়ে হলুদের নামে নারী পুরুষে খোলামেলা মেলামেশা ছাড়া আর কিছুই হয়না।তবু রাজের অনুরোধে ওরই গিফট করা একটা কলাপাতা রঙের শাড়ী পড়লো সে।কলাপাতা রঙা শাল,একই রঙের হিজাব।কেবল ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক ছুঁইয়েছে!
রাজ দুর থেকেই ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
পৌষী মুখ নামিয়ে ফেললো।
এমন সময় একটা মেয়ে এসে চিৎকার দিয়ে উঠল-“হাই….রাজ…ও মাই সুইট হার্ট..!”
পৌষী চমকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটি দুহাত বাড়ীয়ে রাজকে জড়িয়ে ধরার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে আর রাজ ফ্যাকাসে দৃষ্টিতে একবার পৌষী দিকে আরেকবার ঐ মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে।
পৌষীর মুখ বেশ গম্ভীর হয়ে উঠলো।সে মুখ ঘুরিয়ে নিজের রুমে চলে এলো!
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here