সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-১০

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-১০
মোর্শেদা হাবিব!
**************
পৌষী একবার তাকিয়েই চোখ নামিয়ে ফেললো।
দুষ্টু হাসিতে ভরে আছে রাজের মুখটা।দুহাত বুকের সাথে বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে সে।এবার পৌষীকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে রাজই এগিয়ে এলো!
বললো-“এতো লজ্জা পাবার মতো কি কিছু বলেছি আমি?”
পৌষী চুপ।পায়ের আঙ্গুল দিয়ে মাটি খুঁটছে সে।
রাজ লম্বা করে নিঃশ্বাস ফেলে বললো-
-“বুঝেছি,তুমি তাকাবেনা।আচ্ছা,থাক্ তাকানো লাগবেনা।চলো যাই..!”
পৌষী এবার কিছুটা ভীরুতা মেশানো লাজুক চাহনী দিয়ে বললো-
-“দেরী হলে মামা যদি কিছু ভেবে বসে?”
-“কি ভাববে?আমি তোমাকে আটকে রেখেছি?”
পৌষী জবাব দিলোনা।আবার মুখ নামিয়ে নিলো।
রাজ হাসলো-“সে অধিকার কিন্তু একটু আগেই পেয়ে গেছি!”
পৌষী এবার রাজের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো!রাজ চোখ সরাতে ভুলে গেলো।
রাহেলার ডাকে দুজনেরই সম্বিত ফিরলো।
পৌষী দ্রুত মুখ নামিয়ে “আসুন” বলে চলে গেলে রাজ ওর পিছু নিলো!
ডাইনিং হলে এসে পৌষী দেখলো বড়মামার খাওয়া প্রায় শেষের দিকে।
রাতে তিনি খুব সামান্যই খান তাছাড়া তিনি অতিরিক্ত রিচ ফুড খেতে পারেননা!
রাজ একটা চেয়ার টেনে বসলো!
আমজাদ ছেলের দিকে তাকিয়ে স্বর নামিয়ে বললেন-“তোর মা যদি এর মধ্যে ফোন টোন করে কিছু বলার দরকার নেই।ওকে যা বলার,যেভাবে বলার আমিই বলবো।নইলে বলা যায়না সে সাহেদা বা তোর বৌ কে ফোন করে কি না কি বলে বসে!”
“তোর বৌ” শব্দটা রাজের জন্য নতুন এবং মধুমাখা একটা শব্দ।বুকটা ওর আনন্দে নেচে উঠলো।
অবশেষে পৌষী ওর বৌ।ভাবতেই বুকটা আনন্দে থিরথির করে কাঁপছে।রাজ আড়চোখে পৌষীকে দেখলো।সে বেনারসী পড়েই সে রান্নাঘর সামলাচ্ছে।
রাজের মনে হলো বেচারীকে এই ভারী শাড়ীটা বদলাতে বলা দরকার।তবে দেখতে বেশ লাগছে।বিশেষ করে পেছন থেকে ওর খোঁপাটা অতুলনীয়।ওর চুল যে এতবড় আগে জানতোনা রাজ!খোপাটা কে বেঁধে দিয়েছে এতো সুন্দর করে।নীরা নিশ্চয়ই! আবার একটা চন্দ্রমল্লিকা গুঁজে দিয়েছে একপাশে।রাজের বুকের ভেতর সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দ।কিছু খুচড়ো চুল পৌষীর মুখের উপর এসে পড়েছে।সে ওগুলো বারবার হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে আর ওভেন থেকে খাবার বের করছে আর টেবিলে এনে এনে রাখছে।
আমজাদ চৌধুরীর গলা খাকারীতে রাজের চমক ভাঙ্গলো।আমজাদ চৌধুরী বেসিনে কুলি করে ফিরে এলেন।রাজ চোখ সরিয়ে নিলো পৌষীর দিক থেকে।বাবা যে এখানে আছে সে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো!
পৌষী এসে রাজের দিকে একটা প্লেট এগিয়ে দিলো!
রাজ বলল-“তোমার প্লেট কোথায়?নিয়ে এসো একসাথে বসবো!”
একথা শুনে পৌষী লজ্জা পেলো কিছুটা।ছেলেরা কত দ্রুত লজ্জাকে ঝেড়ে ফেলতে পারে!মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেই ওদের বিয়ে হয়েছে অথচ বাবার সামনে রাজ এমনভাবে কথা বলছে যেন দশ বছর ধরে পৌষীর সাথে ঘর সংসার করছে!
আমজাদ চৌধুরী সাথে সাথে বললেন-“হ্যাঁ,হ্
যাঁ….দুজন একসাথে খেয়ে নে তোরা !আর খাওয়া হলে দুজনেই আমার রুমে আয় !কথা আছে! ”

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



বলে আমজাদ চৌধুরী উঠে সোজা নিজের রুমে চলে গেলেন।পৌষী এঁটো প্লেটগুলো গোছাতে লাগলো।ওর হাত পা গুলো অসাঢ় লাগছে ওর কাছে।সুইফটলি কাজ করতে পারছেনা।এর দুটো কারন,একটা হলো ওর পরনে ভারী শাড়ী আর তারচে বড় কারনটা হচ্ছে রাজ অপলক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে!
পৌষী প্লেটগুলো নিয়ে দ্রুত রান্নাঘরে চল গেলো !তারপর বেরিয়ে এসে বললো-
“আপনাকে নাহয় দিয়ে আগে দিয়ে দেই?”
রাজ তাকালো-“কেন? তুমি কখন খাবে?”
-“খিদে নেই একটুও।কিভাবে খাবো?”
-“আমারও খিদে নেই!”বলে প্লেট ঠেলে দিলো রাজ।পৌষী দ্রুত বাধা দিয়ে বললো-
-“আরে….আপনি খাবেন না কেন?
-“আপনি খাবেন না যে তাই…!”বলে রাজ গম্ভীর মুখে উঠে দাঁড়ালে পৌষী দ্রুত ওর পাঞ্জাবীর কোনা টেনে ধরলো।
রাজ প্রথমে পৌষীর টেনে ধরা হাতের দিকে পরে পৌষীর দিকে তাকালো!
পৌষী চোখের ইশারায় চেয়ার দেখিয়ে বললো -“বসুন,আমি বসছি!”
রাজ বসে বলরো-“আপনি আপনি টা কতদিন চলবে?”
পৌষী প্লেটে খাবার দিয়ে বললো-“এতো তাড়াতাড়ি আমার মুখ দিয়ে তুমি আসবেনা!সময় লাগবে একটু!”
-“সময় লাগবে ঠিকআছে কিন্তু ট্রাই তো করো!”
-“ইয়ে…বলছিলাম কি…রাহেলা, সাবু মিয়া ওদেরকে দিয়ে দেই,বেচারারা না খেয়ে বসে আছে!”
রাজ মাথা নাড়লো-“ওদেরকে দিয়ে এসো আগে !তুমি আর আমি নাহয় একটু পরেই খাই!”
-“জ্বী”!বলে পৌষী ফের রান্নাঘরে ঢুকে গেলো!
রাজ এবার উঠে পৌষীদের ঘরের দিকে গেলো।পৌষী বুঝলো রাজ সাহেদার কাছে গেলো!ও সেদিকে চেয়ে মৃদু হাসলো!
মিনিট পনের পরেই কাজ গুছিয়ে পৌষী রাজকে ডাকার উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকলো!ঘরে ঢুকে থমকে গেলো পৌষী।ওর মা রাজের গালে হাত রেখে কিছু বলছিলেন আর রাজ মাথা নিচু করে তা শুনছিলো!
পৌষীকে দেখে সাহেদা বললেন-“যা তোরা এবার খেয়ে নে!”
রাজ সাহেদার কপালে চুমু খেয়ে বলল-“গেলাম ফুপি!”
পৌষী সেদিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস চাপলো!রাজের কিছু কিছু আন্তরিক ব্যবহার পৌষীর অন্তরকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে।বিশেষ করে মায়ের সাথে তার আচরণগুলো যথেষ্ট আন্তরিক।হাসপাতালেও পৌষী লক্ষ্য করেছে রাজের তৎপরতা।যেন সাহেদা তার মা,এতটা যত্ন নিয়েই সে তার ফুপিকে সেবা করেছে!
টেবিলে রাজের সাথে এই প্রথম একত্রে খেতে বসা! পৌষী তুলে দিতে নিলে রাজ ওর হাত ধরে ফেলল!পৌষী নিজের হাত গুটিয়ে নিলো!
রাজ নিজেই প্লেটে খাবার সার্ভ করলো! তারপর পৌষী খাবারে হাত দিতেই বলল-“এক মিনিট! আমি খাইয়ে দেই?” পৌষী কিছু বললোনা।
রাজ একটা ছোট লোকমা ওর মুখে তুলে দিলো!
তারপর বলল-“এবার আমার পালা! ”
পৌষী এবার হেসে ফেললো।পরক্ষণেই হাসি চেপে নিজের প্লেট থেকে খাবার তুলে রাজের মুখে দিলে রাজ বাম হাতে ওর হাতটা ধরে খাবারটা নিজের মুখে নিলো।তবে নেবার সময় ইচ্ছে করে পৌষীর আঙ্গুলগুলো ঠোঁট দিয়ে একটু চেপে ধরে রাখলো!
পৌষী কিছুটা কেঁপে উঠে মুখ নামিয়ে ফেলল!
-“লজ্জায় টমেটো হয়ে গেলে দেখি!আমার কিন্তু তোমার হাতেই খেতে ভালো লাগছে।
পৌষী বুঝলো।রাজ ওর হাতে খাবার জন্যই প্রথমে নিজে খাইয়ে দেবার কথা বলেছে।অগত্যা বাধ্য হয়ে পৌষী আরেক লোকমা তুলে দিতে গেলে রাজ ওর হাত ধরে ফেললো-“স্বার্থপরের মতো হয়ে যাচ্ছে।তুমি আমাকে খাইয়ে দিলে নিজে খাবে কখন।তারচে তুমি খাও।”
পৌষী স্বস্তি পেয়ে মুচকি হাসলো।
টুকটাক গল্প গুজব করতে করতে ওদের খাবার পর্ব শেষ হলো।
রাজ বললো-“চলো আমি তোমার সাথে হাত লাগাই,কাজ দ্রুত শেষ হবে!”
-“লাগবেনা,কাজ তেমন কিছুই নেই, খাবার গুলো ফ্রিজে রাখতে হবে!এটা রাহেলাই পারবে!চলুন,মামার ঘরে যাই!উনি আমাদের জন্য জেগে বসে আছেন!”
-“ওহ্..ইয়েস…চলো!”বলে দুজন একসাথে আমজাদ চৌধুরীর রুমে এলো!
আমজাদ চৌধুরী রিমলেস চশমা চোখে দিয়ে অফিসের কাগজপত্রগুলো দেখছিলেন! ওদের প্রবেশ করতে দেখে তিনি সেগুলো রেখে উঠে এলেন।ওদের সোফা দেখিয়ে ইশারায় বসতে বললেন!
চশমাটা খুলে একপাশে রাখলেন।তারপর একটু ভেবে বললেন-
-“তোমাদের দুজনকেই বলছি! দ্যাখো আজ শরীয়ত সম্মতভাবে তোমাদের দুজনের বিয়ে হয়েছে!আজ আমি রাজের শুধু বাবা হলেও পৌষীর মামা এবং অভিভাবক বা ওয়ালী দুটোই!সেই হিসেবে আমি রাজকেই বলবো!যেহেতু তোমাদের বিয়েটা এখনো সামাজিকভাবে প্রচার পায়নি কারন ছেলের পক্ষ থেকে একটা ওয়ালিমা করার যে সুন্নতটা রয়েছে যা ইসলামের একটি বিধানও বটে যে, ছেলে ওয়ালিমার মাধ্যমে সমাজকে জানাবে যে আমি এই মেয়েটিকে বিয়ে করেছি।মেয়েপক্ষের কোনো অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই! এক্ষেত্রে ইসলাম কন্যাদায় গ্রস্ত পিতার উপর কোনো বার্ডেন রাখেনি!আমাদের সমাজে মেয়েপক্ষ যে বরযাত্রার একটা বিরাট ধকল সহ্য করে এটা সম্পূর্ণ ইসলাম পরিপন্থী!মেয়ের বাবার উপর জুলুম!যাক্…যা বলছিলাম,যেহেতু ওয়ালিমা হয়নি!তোর মা’ও এখন পর্যন্ত তোদের বিষয়টা জানেনা সেহেতু অনুষ্ঠানটা না হওয়া পর্যন্ত তোরা একটু ধৈর্য্য ধরবি…এটা আমার অনুরোধ।আমি বলছিনা যে দেখা সাক্ষাৎ কথা বলা সব বন্ধ!নাহ্…সবই করবি কিন্তু বুঝেশুনে।তোর মা ফিরলে আমি তাকে ভালোভাবে বোঝাবো এবং তার দোয়াও তোদের প্রয়োজন কারন সে হলো “মা”! তাই আমি বিশেষ করে রাজকে বলে দিচ্ছি যে,পৌষী তোর কাছে একটা আমানত! এর অমর্যাদা করিসনা!যদিও পৌষীর মা এবং আমি পৌষীকে তোর হাতে তুলে দিয়েছি তবু পারিবারিক বিশৃংখলা এড়াতে তোদের কে কিছুদিন একটু ধৈর্য্যের সাথে চলতে হবে।তোরা দুজনই শিক্ষিত, বুদ্ধিমান…..আমি কি বলতে চাচ্ছি তা বুঝতে হয়তো অসুবিধা হবার কথা নয়!কি……ঠিক আছে?”
কথাগুলো শুনে পৌষী যেন লজ্জায় এতটুকু হয়ে গেছে।
রাজ মাথা নেড়ে বলল-“জ্বী,ঠিকআছ
ে বাবা !”
-“আচ্ছা তোরা এবার যেতে পারিস!”
পৌষী আমজাদের কাছে এসে দাঁড়ালো!তিনি তাকিয়ে বললেন-“কি রে মা, কিছু বলবি?”
-“মামা…..মামী তো কিছুই জানেন না!কাজটা কি ঠিক হলো…আমার খুব ভয় লাগছে!”
-“আরে দুর পাগলী! শোন্…আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না।আর তোর পিতার অবর্তমানে আমি তোর অভিভাবক!তোর বিয়েটা তোর মা এবং আমার সম্মতিতেই হয়েছে।যদিও এখানে তোর মামী কোনো ফ্যাক্ট না তবু রাজে মা হিসেবে তাকে এই অনারটুকু করতেই হবে।নইলে তোদের এখন সংসার শুরু করতে কোনোই বাধা ছিলোনা !বুঝতে পারছিস রে মা?”
পৌষী মাথা নাড়লো!-“জ্বী…!”
আমজাদ আবার বললেন-
-“মনে রাখিস,আজ থেকে রাজ তোর স্বামী আর তুই তার স্ত্রী।আমি পারিবারিক বিবাদ এড়াতে তোদের কাছে এই সময়টুকু চেয়ে নিলাম।জানিস বোধহয়…রাজ তোর মোহরানাও পরিশোধ করে দিয়েছে সে হিসেবে তোরা পরস্পর পরস্পরের জন্য সম্পূর্ণ হালাল বা বৈধ।এখন যা বাকি তা কেবল লৌকিকতাটুকু !আর হ্যাঁ..রাজ!তোর ফুপির অপারেশন হয়ে গেলে তুই কিন্তু অফিসে বসবি!
-“জ্বী,ইনশাআল্লাহ!
বারান্দার শেষ প্রান্তে পৌষীদের রুমটা।নীরার রুমের সামনে দিয়ে যাবার সময় ভেতর থেকে ওর বান্ধবীদের চটুল হাসির শব্দ শোনা গেলো!সম্ভবত নীরার বান্ধবীরা আজ রাতে এখানেই থাকবে!
বারান্দা পেরোবার আগেই রাজ পৌষীকে থামালো-“এক মিনিট পৌষী!”
পৌষী থেমে গেলো!
রাজ বলল-“সব কথা তো শুনলে এবার তোমার কোনো বক্তব্য থাকলে বলো!”
পৌষী মৃদু স্বরে বলল-“আমি কি বলবো!ভাবতে খুব অবাক লাগছে যে এসব আমাকে কেন্দ্র করে ঘটছে!”
-“হমম….আসলে আমাদের জীবন মাঝে মাঝে নাটকের চেয়ে বেশী নাটকীয় হয়ে যায়!বাবা র কথা মতো আমরা দুজন দুপ্রান্তে থাকবো।কিন্তু আমার মন পড়ে থাকবে তোমার কাছে!”
পৌষী একবার মুখ তুলে তাকিয়েই মুখ নামিয়ে ফেলল!
রাজ বলল-
-“এতোদিন তোমাকে যে কথাটা বলার সাহস করিনি,আজ সে কথাটা তোমাকে বলি…যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি সেদিন থেকেই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।বিশ্বাস করো, তোমাকে ভালোবাসার পর থেকে দ্বিতীয় কোন মেয়ের দিকে তাকাইনি, কারো কথা একমুহূর্তের জন্যে ভাবিনি!
পৌষী রাজের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো!রাজ হাসলো-“বিশ্বাস হচ্ছেনা।সত্যি পৌষী।আমি তোমাকে অসম্ভব ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু আমি হয়তো তোমার মতো মেয়ের উপযুক্ত নই। আমি নিজেকে ধীরে ধীরে বদলে ফেলতে চাই
কিন্তু ততদিন কি তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করবে কিনা এসব ভেবে খুব ভয়ের মধ্যে ছিলাম।শেষ পর্যন্ত ঐ আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলাম।তখনো ভাবিনি আমার দুআ এভাবে কবুল হয়ে যাবে!এবার আমি আমার আল্লাহকে খুশি করতে চাই! তুমি আমাকে বদলাতে সাহায্য করবে…. প্লিজ?”
পৌষী সামান্য হাসলো-“এভাবে বলছেন কেন?”
রাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“তোমার সাথে বলার মতো অজস্র কথা বুকের ভেতর জমে আছে! ইচ্ছে করছে কথা বলেই রাত কাটিয়ে দেই…..যাবে আমার ঘরে?শুধু দুজনে কথা বলবো!প্রমিজ,বাবার বেধে দেয়া শর্ত ভাঙ্গবোনা।”
পৌষী লজ্জায় টুকটুকে লাল হয়ে বললো-
-“ম্..মা যে ঘরে একা?”
-“হমম…তাও ঠিক।আচ্ছা….তাহলে চলো তোমাকে ঘরে দিয়ে তারপর আমি আমার রুমে যাই!”
পৌষী দীর্ঘশ্বাস চেপে পা বাড়ালো।রাজ ডাকলো-” শোনো!”
পৌষী ফিরে তাকালো! রাজ নিরবে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো!যেন চোখ দিয়ে নিজের অব্যক্ত কথাগুলো বলতে চাচ্ছে রাজ।
পৌষী জিজ্ঞেস করলো -“কি?”
-“কাছে এসো!”রাজ গম্ভীর স্বরে যেন আদেশ করলো!পৌষী ভীরু পায়ে কাছে এলো!
রাজ দুহাতে ওর মুখ তুলে ধরলো!রাজ পৌষীর চেয়ে প্রায় ছয় ইঞ্চি লম্বা! যার ফলে পৌষীর কপালে চুমু খেতে ওকে কিছুটা ঝুঁকতে হলো!পৌষী দুচোখ বন্ধ করে ফেললো!
রাজ নিঃশ্বাসের শব্দে বললো-“আই লাভ ইউ মাই লাইফ…!”
এবার পৌষী আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা।রাজের হাত ছাড়িয়ে ওর বুকে ঝাপিয়ে পড়লো।ঘটনার আকস্মিকতায় রাজ প্রথমে চমকে গেলেও পরক্ষণেই পৌষীকে নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরল।
পরদিন সকালে নাস্তা তৈরী করে পৌষী নিজেই গেলো রাজকে ডাকতে!পৌষীর নিজেই কাছেই খুব অদ্ভুত লাগছে!কাল রাতের পর থেকে ও কত সহজেই রাজকে আপন ভাবতে পারছে।
আজ মায়ের পরে রাজের মতো আপন ওর কাছে আর কেউ নেই!
একটা পুরুষের গায়ে স্বামী শব্দের মোহর পড়ে গেলে তা আর সরানো মুশকিল।
পৌষী রাজকে অন্যরকম ভাবতেই পারছেনা।কেবলি মনে হচ্ছে রাজ ওর স্বামী!”
পৌষী রাজের দরোজায় টুকটুক করে দু তিনটে টোকা দিতেই রাজ দরজা খুললো!সে এখন খালি গায়ে কেবল একটা ট্রাউজার পরনে।
রাজকে দেখে চোখ সরিয়ে নিলো পৌষী-“নাস্তা খাবেন না?”
রাজ চারিদিক তাকিয়ে চট করে পৌষিকে টান দিয়ে নিজের ঘরের ভেতর টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো!
দশ পনের মিনিট পর পৌষী দ্রুত বেরিয়ে এলো রাজের রুম থেকে।রাজ তখনো ওর ওড়নার প্রান্ত ধরে রেখেছে।পৌষী ওড়না টান দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো-“এরপর থেকে রাহেলাকে পাঠাবো,দেখবেন!”
রাজ তখনো দরোজা ধরে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

দুপুর পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটালো রাজ ! বারোটার দিকে সাহেদাকে ভর্তি করাতে হবে।কাল অপারেশন।
যেহেতু কয়েকদিন হাসপাতালে থাকা লাগতে হতে পারে তাই পৌষী বেশী করে কয়েক পদের তরকারী রান্নাঘরে ফ্রিজে রেখে যাবে যেন নিরা বা মামার কোনো অসুবিধা না হয়।
এদিকে রাজ বলছে সে হাসপাতালেই থাকবে।কাজেই ওর জন্য বাড়তি রান্নার দরকার পড়বেনা!
বাকী কাজের জন্য সাবুমিয়া, রাহেলা তো আছেই।তবু পৌষী নীরাকে সব বুঝিয়ে বলে রাখলো!
রাতে সাহেদাকে কেবিনেই রাখা হলো!নার্স জানালো সকালে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে।দুপুর দুটোয় ও.টি!
রাতটা ওদের কেবিনেই কাটলো।
পৌষী বারবার কান্না করছিলো।রাজ ওকে বোঝালো-“তোমার এখন শক্ত থাকা উচিত।তোমার কান্না ফুপির মনোবল ভেঙ্গে দিতে পারে!”
এটা শুনে পৌষী শান্ত হবার চেষ্টা করলো!
রাজ সাহেদাকে চিয়ার আপ রাখার জন্য বিভিন্ন বিষয়ে হালকা গল্প বলতে লাগলো!পৌষীকে নিয়ে কবে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবে তার প্ল্যান বর্ণনা করলো।
সাহেদা মুচকি হেসে ওর কথাগুলো শুনছিলেন!পৌষী চুপচাপ ওদের কথাগুলো শুনছিলো।
পরদিন বেলা এগারোটার দিকে যখন সাহেদাকে ওটির দিকে নিয়ে যাওয়া হলো তখন পৌষী কেবিনে রাজকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো!
রাজ ওর মাথায় গাল ঠেকিয়ে বললো-
ইনশাআল্লাহ্,ফুপির কিছু হবেনা।এতো ভয় পেয়োনা সোনা।আমি আছি না!”
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here