সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-১২

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-১২
মোর্শেদা হাবিব!
***************
ঘটনার আকস্মিকতায় রাজ বেশ হকচকিয়ে গেলো !
আজ এতদিন পর নিকিতার সাথে এভাবে এই পরিবেশে দেখা হয়ে যাবে সে ভাবেনি !আর নিকিতা ওকে এভাবে সবার সামনে বিশেষ করে পৌষীর সামনে ডেকে উঠবে রাজ ধারনাও করতে পারেনি।
রাজ একটু দুরে থাকতেই হাত তুলে নিকিতাকে থামতে বললো!
ঘর দেখিয়ে বললো-”
ঐ যে,ঐদিকে….সব মেয়েরা!” বলে নিকিতার বিস্মিত দৃষ্টি উপেক্ষা করে রাজ পৌষীর দিকে ছুটলো।
পৌষী একটু আগেও এখানে ছিলো কিন্তু এখন সেখানে নেই।রাজ পৌষীর খোঁজে এদিকে সেদিক তাকাতে লাগলো।
মেয়েটা গেলো কোথায়।রাজের চোখ ওকে আতিপাতি করে খুঁজতে লাগলো।
নিকিতার পরিচয়টা একটু দেয়া দরকার।নিকিতা হলো রাজের ছোট খালার মেয়ে,গত কয়েক বছর ধরেই ওরা আমেরিকায় থাকে!
এবার উইন্টারে ওরা দেশে এসেছে তাই মীরার বিয়েতে আসতে পেরেছে!কারন ইরার বিয়ের সময় ওরা কেউই আসতে পারেনি কারন তখন ওরা কেউ দেশে ছিলোনা।
নিকিতারা যখন দেশে ছিলো তখন রাজের সাথে ওর খুব বন্ধুত্ব ছিলো।রাজ তখন সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে।
নিকিতা ও তাই।দুজন প্রায় সমবয়সী!নিকিতার জন্মদিনে ওর বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে জীবনে প্রথমবার বিয়ার খেয়েছিলো রাজ।
তখন রাজ নিজেও কোনো ধর্মীয় বিধিনিষেধ সম্পর্কে জানতো না।এমনকি রানীও ওকে কখনো এসব সম্পর্কে বাধা দেননি।তখন নিকিতা অবাধে এ বাড়ীতে আসতো, থাকতো, রাজের রুমে আসাযাওয়া করতো।রাতভর আড্ডা দিতো।একদিন নিকিতার আগ্রহেই রাজ তার জীবনের প্রথম চুম্বনের অভিজ্ঞতার স্বীকার হয়েছিলো। তারপরে আর রাজ কখনো নিকিতাকে সে সুযোগ দেয়নি।ভেতর থেকেই উৎসাহ পায়নি।পেলে হয়তো আরো বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতো।তবে রাজের বাবা বরাবরই এসব বিষয়ে অনেকটা স্ট্রিক্ট ছিলেন।তাঁর কড়াকড়ির কারনেই রাজ আজ এতটা ঠিক আছে নতুবা কবেই আধুনিকতার হীনতায় বিলীন হয়ে যেতো।
কিন্তু পৌষী তো এসব কথা জানে না।সে নিকিতার আচরনে রাজকে ভুল বুঝবে।
কিন্তু রাজ তো নিজেকে শুধরে নিতে চায়।ওর দীর্ঘদিনের চিন্তাচেতনার মূলে আঘাত করেছে পৌষীর দ্বীনদারিতা,পরহ
েজগারীতা।
একটা সময় রাজকে শেখানো হয়েছিলো, স্বেচ্ছাচারিতাই স্বাধীনতা।যেসব মেয়েরা পর্দা করে ঘরে থাকে তারা বন্দী অবরোধবাসিনী।
অনেক পরে রাজ বুঝতে পেরেছে যে এই দেখা আর বোঝার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে।এই মাত্র কয়েকদিন আগেও পৌষীর কোলে মাথা রেখে এসব নিয়ে বিস্তর আলাপ হয়েছে।
এ ব্যপারে পৌষীর বক্তব্য ছিলো পরিস্কার।ওর মতে আজকের আধুনিকাদেরকে শত শত পুরুষরা নিজেদের ভোগের পন্য বানিয়ে রেখেছে! সাজিয়ে গুজিয়ে অফিস,দোকান পাট, মলগুলোতে বসিয়ে নিজেদের ব্যবসা বাড়াচ্ছে আর মুখে বলছে তুমি স্বাধীন তাই কাপড় খুলে বাড়ীতে রেখে বাইরে বেরোও…তাহলে এ দুনিয়া তোমার!
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


এটা বলে বলে ঐসব চাটার দলেরা মেয়েদেরকে দেখার তাদেরকে উপোভোগ করার সুযোগ করে নিয়েছে।আর কিছু বোকা মেয়েও সেটাকেই বেদ বাক্যের মতো মেনে নিয়ে নিজেদের নারীত্বকে বিলীন করে দিচ্ছে।
আজ তারা স্বামীর কাজ করাকে দাসত্ব মনে করে অথচ সামান্য বেতনের বিনিময়ে বসের দাসত্ব করা,পথ চলতে লোভী পুরুষের চোখের খোরাক হওয়া কিংবা বাসে ট্রেনে কামুক পুরুষের হাতের আর কনুইয়ের খোঁচা খাওয়াকে জীবনের স্বাভাবিক অংশ বলে মেনে নিয়েছে!
তারা এয়ার হোস্টেস হয়ে সেজেগুজে শতশত পুরুষের জন্যে ট্রে বয়ে বেড়ানোকে সম্মানের মনে করে কিন্তু সেজেগুজে স্বামীর দৃষ্টিনন্দিনী হয়ে তার ভাত বেড়ে দিয়ে পাশে বসে থাকাটাকে অমর্যাদার মনে করে!
পৌষী ক্ষোভের সাথে সেদিন বলেছিলো-
“কে কাকে বোঝাবে এসব কথা?
মেয়ে গুলোতো এটা ও বোঝেনা যে,শত শত পুরুষের লোভের খোরাক হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে স্বামীর দাসত্ব মেনে তার অধীনে রানীর মতো জীবনযাপন করে মরে যাওয়া অনেক ভালো!”
রাজ ওর কথাশুনে খুব খুশি হয়ে বলেছিলো, তাহলে আমি যা চাইবো,যেভাবে চাইবো।সব ঠিক ঠিক মতো পাবো,তাই তো?”
পৌষী তখন ওর মাথা কোল থেকে বালিশে নামিয়ে দিয়ে বলেছে,এখন না।আগে সংসার শুরু করি তখন।বলেই সে দৌড়ে পালিয়েছে।

পৌষি কে কোথাও খুঁজে না পেয়ে নিরাশ হয়ে মায়ের রুমে এলো রাজ!
এসেই চমকে গেলো।পৌষী এখানে বসে রানীর শাড়ীর কুচি ঠিক করে দিচ্ছে।
ওকে দেখে পৌষী মুখ নামিয়ে নিলো।
রাজকে দেখে রানী বিরক্ত হয়ে বললেন-“কি রে তুই শেভ করিসনি এখনো? কি জঙ্গল বানিয়ে রেখেছিস মুখটাকে?
রাজ দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলল-“জঙ্গল বলছো কেন?দাঁড়ী আর ফেলবো না! রেখে দেবো ভাবছি!”
-“হায় আল্লাহ!এই ভূত আবার মাথায় কবে চাপলো? রাখবি রাখ,কিন্তু এখনকার ছেলেরা যেমন ছেটেকেটে স্টাইলিস করে রাখে সেরকম করে আয়!”
-“নো,একদম না।এটা আমার ফেবারিট হিরোর স্টাইল…. দাঁড়ীতে হাত না লাগানো!”
-“এটা আবার কোন হিরো?”
-“দ্যা ওয়ান এন্ড ওনলি রাসুল সাঃ!হি ইজ মাই হিরো! তিনি দাঁড়ীতে হাত লাগাতে নিষেধ করেছেন!”রাজ হাসলো!
রাণী বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন-“কি জানি বাবা,তোর আজব কথাবার্তা আমি বুঝিনা!”
রানী বেরিয়ে যাবার পর পৌষী তার পিছু নিয়ে বেরোতে গেলে রাজ দ্রুত দরোজা বা হাত বাড়িয়ে ওর পথ আগলে দাঁড়ালো!
-“কি হলো!পালাচ্ছো যে?”
-“সরুন কেউ এসে পড়বে!”
-“আসুক! তুমি আমাকে ভুল বুঝে চলে যাবে আর আমি তোমার ভুল ভাঙ্গাবো না?”
-“মেয়েটা কে?আপনার সাথে এভাবে কথা বললো কেন?”
রাজ কিছুটা ইতস্তত করে বলল-“ও আমার কাজিন।দেশের বাইরে থাকে!একসময় বন্ধুর মতো মিশতাম।সেই সুবাদেই….!”
-“ওর কথার ধরন আমার ভালো লাগেনি…!”পৌষী দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
রাজ ওর হাত ধরে বলল-“পৌষী,আমার অতীত জীবনটা অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিলো!
সবটা আমি তোমায় বলতে পারবোনা।মহান আল্লাহ আমাকে তোমার মাধ্যমে আলোর পথ দেখিয়েছেন।আজ বিগত দিনের ভুলগুলো যদি কখনো আমার সামনে এসে দাঁড়ায়, তুমি কি আমাকে সেই অন্ধকারে ঠেলে দেবে?”
পৌষী মুখ নামিয়ে রাখলো!রাজ ওর মুখখানি দুহাতে তুলে ধরে বলল-
-“প্লিজ…আমাকে কখনো ছেড়ে যেয়োনা!স্রেফ মরে যাবো,বিশ্বাস করো!তোমাকে ছাড়া আমার এ জীবন মরুভূমি!”
পৌষী রাজের দুহাত সরিয়ে দিতে চাইলো!
-“আচ্ছা…ছাড়ুন,কেউ এসে পড়বে!”
-“ছাড়বো, তার আগে কথা দাও…আমার উপর….রাগ করবেনা!কখনো যদি তেমন কোনো পরিস্থিতি তৈরী হয়…..আমাকে কৈফিয়ত দেবার সুযোগটুকু দিও!”
পৌষী রাজের হাত ছাড়াতে চাইলো!
-“আচ্ছা,ছাড়ুন না…!”
-“ছাড়বো…তার আগে হাসো একটু..!”
পৌষী মুখ নিচু করে সামান্য হাসলো!
রাজের কাছে ওকে অপুর্ব লাগলো।রাজ ওর মুখ উচু করে ধরে কপালে চুমু দিতে গেলে পৌষী দ্রুত সরে গিয়ে বললো-
“এখন না প্লিজ,আপনার পায়ে পড়ি…মামী যে কোনো মুহূর্তে এসে পড়বে।বাড়ী ভর্তি লোক।কেউ দেখে ফেললে….!”
-“কেউ দেখবেনা।”বলে সে একহাতে দরজা বন্ধ করে পৌষীকে কাছে টানলো!
-“আমার মেকআপ নষ্ট হবে কিন্তু…!আর হিজাব খসে গেলে আমাকে আবার নিচে যেতে হবে রাজ ছাড়ুন।”
-“মাত্র একবার জান!”
-“আধাবারও না!”
-“আচ্ছা,যাও লাগবেনা।”
বলে পৌষীকে ঠেলে সরিয়ে একটানে দরোজা খুলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
পৌষী অসহায় চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।

গায়ে হলুদ শেষ হতে হতে রাত বারোটা বেজে গেলো!নিকিতা আজ রাতে বিয়ে উপলক্ষে রয়ে গেলো এ বাড়ীতে।
রাতে মেকাপ মুছে জামা বদলে নিচে ডাইনিং হলে যাবার পথে পৌষীদের রুমটাতে উঁকি দিলো!তারপর পৌষীকে দেখে বলল -“আসতে পারি?”
-“জ্বী,আসুন!”
পৌষী নিজেও শাড়ী বদলে ঘরোয়া থ্রিপীস পড়েছে!নিকিতা ঘুমন্ত সাহেদাকে দেখে বললো-“উনি কি অসুস্থ?”
-“জ্বী,গত মাসে ওপেন হার্ট সার্জারী হয়েছে!”
-“ও..মাই গাড..!”
-“বসুন না…আপনি তো রাজের খালাতো বোন তাইনা?”
-“ইয়েপ…রাজ আর আমি খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।বাট নাউ রাজ হ্যাজ আ লট অফ চেঞ্জেস!ও আগের মতো নেই!আমার সাথে ঠিকমতো কথাও বললোনা…জানেন?”
পৌষী মৃদু হাসলো!
নিকিতা বলল-“আপনি তো সাংঘাতিক প্রিটি!আপনার মতো কিউট একটা মেয়েকে সামনে পেয়েও রাজ আপনাকে ইগনোর করছে কিভাবে বুঝলাম না!
ওর তো এতদিনে আপনার সাথে লিঙ্ক হয়ে যাওয়ার কথা!”
-“মানে?”কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে প্রশ্ন করলো পৌষী!
-“নাথিং সিরিয়াস!তবে রাজ আপনাকে দিনরাত দেখে ও নিজেকে কিভাবে ঠিক রাখতে পারছে সেটাই প্রশ্ন!”
পৌষী ইচ্ছে করেই কোনো প্রশ্ন করলোনা কারন মেয়েটা কোন ইন্টেনশনে এখানে এসেছে তা এখনো বোঝা যাচ্ছেনা।সে নিজে থেকেই এতকথা কেন বলছে,নাকি সে এভাবেই কথা বলে!
নিকিতার একটা কথায় পৌষী চমকে উঠলো-
-“রাজ সম্ভবত আপনাকে খুব ভালোবাসে,তাই না?”
-“ক্..কেন এমনটা মনে হলো?”
-“তখন রাজ যেভাবে আমাকে ফেলে আপনার দিকে দৌড় দিলো…অথচ আমার সাথে ওর প্রায় তের বছর পর দেখা।তাছাড়া একটা সময় ওর সাথে আমার হার্ড রিলেশানশীপ ছিল!আইমিন….বুঝতেই পারছেন!আমরা খুউব ক্লোজ ছিলাম একসময়।”
কথাটা শুনতে পৌষীর খারাপ লাগলেও সে কথাটা হজম করে নিলো। মেয়েটা ওকে এসব কেন শোনাচ্ছে কে জানে!
নিজের স্বামীর অবর্তমানে তার পুরোনো কীর্তি শুনে সেটা দিয়ে বর্তমানকে বিচার করার মেয়ে পৌষী নয়।
প্রশ্ন হলো রাজ এখন কেমন।সে নিজেকে কতটুকু সংশোধন করতে পেরেছে।
না পারলে পৌষীকে সাহায্য করবে।
তবু ওকে নোংরা অতীতে ফিরতে দেবেনা।
হঠাৎ রাজের কাছে যাবার জন্য মনটা ছটফটিয়ে উঠলো পৌষীর।
পৌষী মনে মনে মেয়েটার যাবার অপেক্ষা করতে লাগলো।নিকিতা কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে বেরিয়ে যাবার পরপরই পৌষী রাজের মোবাইলে ফোন দিলো।
মোবাইলটা বিয়ের রাতে রাজই ওকে গিফট করেছে।যেন রাত বিরেতে দুজনে গল্প করতে পারে।
রিং হচ্ছে ওপাশে।ধরবে কিনা কে জানে!
পৌষী ওকে রাগিয়ে দিয়েছে।
পৌষীই বা কি করবে!
যখন তখন আব্দার।কেউ ওদের দেখে ফেললে বা ওদের সম্পর্ক বুঝে ফেললে বড়মামাকে মুখ দেখাতে পারবেনা পৌষী।রাজ যেন সেকথা বুঝতেই চায়না।
ফোন রিসিভ হলো!
-“আসসালামুআলাইকুম।”
-“ওয়ালাইকুমুস্সালাম,আপনি কোথায়?”
-“আমার রুমে! কেন?”
-“ওহ্….আ..আমি আসছি!”

মিনিট দশেক পরে লোকচক্ষুর নজর এড়িয়ে রাজের রুমে এলো পৌষী।মুখ কালো করে বসে টিভি দেখছে সে।
পৌষী গিয়ে নিজের দুকান ধরে ওর সামনে হাঁটুগেড়ে বসলো।
রাজ হেসে ফেললো!
-“কান ধরেছো কেন?”নিজের হাত দিয়ে পৌষীর হাত গুলো সরিয়ে দিয়ে ওর হাতে চুমু খেলো সে।
-“এতো রেগে আছেন, কি করবো?”
-“রাগলাম কই?”
-“আচ্ছা,আপনি পরিস্থিতি বুঝতে চান না কেন?মামা তো আপনাকেই দায়িত্ব দিয়েছেন আমাকে আমানত ভেবে তার মর্যাদা রক্ষা করতে!”
-“আহ্…একবার চুমু খেলে বুঝি আমানত নষ্ট হয়?”
-“হতে কতক্ষণ।আপনার নিজের ওপর কোনো কন্ট্রোল থাকেনা।”
মুখ নিচু করে মৃদু স্বরে বললো পৌষী।
রাজ হেসে ফেলে পৌষীকে হাত ধরে টেনে নিজের কোলে বসালো।
-“আজ থেকে কন্ট্রোল দেখবে কাকে বলে!”
-“তাই? পরীক্ষা নেবো?”
-“একশোবার!”
পৌষী এবার দুষ্টু হাসি হেসে রাজের চোখগুলো বন্ধ করে দিলো!
চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here