সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-১৩

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-১৩
মোর্শেদা হাবিব!
****************
-“থাক্,পরীক্ষা দিতে হবেনা!”
রাজের উরুর উপর থেকে নেমে ওর বিছানার একপাশে বসলো পৌষী।
রাজ পা গুটিয়ে সোজা হয়ে বসলো।পৌষীর হাতটা টেনে নিয়ে বললো-
-“জানিনা আমার সম্পর্কে তোমার ধারনা কি,তবে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই।তোমাকে দেখলে আমি চঞ্চল হয়ে উঠি একথা যেমন সত্য।তোমাকে পাবার জন্য আমি নিজেকে বেঁধেও রাখতে পারি এটাও তেমন সত্য।আমি বলবোনা যে আমি নিস্কলুস।তবে তোমাকে দেখার পর থেকে ভালো হবার ইচ্ছাটা প্রবল হয়েছে আমার মাঝে।আমি পরিশুদ্ধ হতে চাই পৌষ।আর একটা কথা জেনো,আমার ভালোবাসা পাখির পালকের মতো হালকা না,হিমালয়ের মতো ভারী।বাবার দেয়া শর্ত আমি কখনোই ভাঙ্গবোনা, নিজের ভুলেতো না’ই।এমনকি তোমার ভুলেও না।একটু ঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারো।
-“না,থাক্।আমি বিশ্বাস করলাম।আপনি পারবেন।আসলে আমি ভয় পাই, কে কোথা থেকে দেখে মামীর কানে কি তুলে দেবে।তখন ব্যপারটা বিশ্রী হয়ে যাবে!”
-“ঠিক একারনেই আরো বেশী সতর্ক থাকি।কারন আমার নিজেকে নিয়ে ভয় নেই।মা আমাকে হয়তো তেমন কিছুই বলবেনা কিন্তু এতে তোমার সম্মান জড়িত।”
-“এই বুঝি সতর্ক থাকার নমুনা? তখন বারন করলাম আর আপনি রাগ করে চলে এলেন!আমার খারাপ লাগেনা বুঝি!”
-“আরে দুর পাগল,রাগ করেছি কে বললো।নিজেকে সরিয়ে নিতেই ওরকম শক্ত হতে হয়েছে কারন তখন তোমাকে কলাপাতা শাড়ীতে যা লাগছিলো না…!শাড়ীটা এতো দ্রুত পাল্টে ফেললে কেন,পড়ে থাকতে আরো কিছুক্ষণ!”
-“না,আপনি ওভাবে চলে আসার পর মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তাছাড়া নিকিতা…..!থাক্,বাদ দিন,এবার আপনি ঘুমান, আমি যাই!”
-“এখনই যাবে কি!থাকোনা আরো খানিকক্ষণ।গল্প করতে ভালো লাগছে!”
-“আমার ভয় হয়…..!”
এমন সময় দরোজায় নক হতেই পৌষী চুপ হয়ে গেলো।ওর চেহারায় স্পষ্ট আতঙ্ক।রাজ মাথা ঝাঁকিয়ে ইশারা করলো ভয় না পেতে।তারপর চুপ করে বসে রইলো।দরজা খোলার কোনো লক্ষণ দেখা গেলোনা ওর মাঝে!পৌষী চিন্তিত মুখে বসে রইলো।কিছুক্ষণ পর আর কোনো শব্দ পাওয়া গেলোনা।
আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রাজ মুদু স্বরে বললো-“এখন যেওনা,বাইরে কেউনা কেউ থাকতে পারে।সম্ভবত আমার মা,উনিই রাত বিরেতে এটা ওটা নিয়ে আমাকে খাওয়াতে আসেন।মা’ই এসেছিলো!”
-“কি হবে এখন? আমি যাবো কিভাবে?”
-“প্রয়োজন পড়লে এখানেই থাকবে।একদম সকালে যাবে!”মুচকি হেসে কথাগুলো বলে চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী এক চোখ বন্ধ করে তাকালো রাজ।
পৌষী কিল দেখালো।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন


তারপর আবার ভাবনায় পড়লো।সত্যিইতো,ম
ামী যদি এখনো ড্রইংরুমে থাকেন তো।সর্বনাশ হয়ে যাবে।পৌষী মাকে বলে আসতে পারেনি।মা তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো।পৌষী গেটটা টেনে ডোরলক দিয়ে চলে এসেছে।হঠাৎ কথাটা মনে পড়ায় পৌষী রাজের শার্ট খামচে ধরলো!
-“এই যাহ্….!এবার কি হবে?'”
-“আবার কি হলো?”রাজ তাকালো পৌষীর দিকে।
-“ঘরে ঢুকবো কিভাবে? ডোরলক তো করে এসেছি কিন্তু লকের চাবি আনিনি।ভুলে ঘরে রেখে এসেছি।এতো রাতে আম্মুকে ডাকলেও আম্মু শুনবেনা।সে গভীর ঘুমে।এখন উপায়?”
রাজ মাছি তাড়ানোর মতো করে হাত নেড়ে হাসলো!-“দুর,এটা ভাবনার কোনো বিষয়বস্তু হলো।ছুরি চামচ বা চোখা কিছু দিয়ে ইজিলি লক বাটন সরানো যায়।চলো আমি তোমাকে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।এককাজ করো।তুমি এখানেই বসো।আমি আগে বাইরেটা দেখে আসি,কি অবস্থা!”
পৌষীকে ঘরে রেখে রাজ নিঃশব্দে বারান্দায় বেরিয়ে এলো।পায়চারী করার ভঙ্গিতে হেঁটে ডাইনিং স্পেস পর্যন্ত এসে ফল কাটার ছুরিটা নিয়ে নিজের রুমে ফেরত গেলো।
দরজার নব মুচড়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে পৌষীকে হাতের ইশারায় ডাকলো।
দুজনে হেটে রুম পর্যন্ত এলো।
রাজ নবের বাটন বরাবর ছুরি ঢুকিয়ে চাড়া দিতেই লকটা খুলে গেলো।পৌষী ওর পাশ ঘেঁষেই দাঁড়িয়েছিলো।
দরোজা খুলে যাওয়ায় পৌষী লম্বা করে দম ফেলে রাজের উদ্দেশ্যে হাত নাড়লো।রাজ তর্জনী উঁচিয়ে ডাকলো।
ফিসফিসিয়ে বললো-“এদিকে এসো!”
পৌষী এগিয়ে আসলে রাজ বললো-
-“বাটন যে খুলে দিলাম এর পারিশ্রমিক? ”
পৌষী লাজুক হেসে রাজকে চলে যাবার জন্য মৃদু ঠেলা দিলো।তারপর রাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই পৌষী টকাস করে ওর গালে দ্রুত একটা চুমু খেয়েই গেটটা লাগিয়ে দিলো।
রাজ গালে হাত দিয়ে ঘুরে বন্ধ দরোজার দিতে তাকিয়ে রইলো।তারপর আপনমনে হেসে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।

গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের ঝামেলায় ছেলের খাওয়া দাওয়ার দিকে নজরই দিতে পারেন নি রানী।পৌষীকে যে জিজ্ঞেস করবেন রাজ খেয়েছে কিনা সেটাও করতে পারেন নি কারন পৌষী আজ বড় তাড়াতাড়িই দরোজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছে।তাই সরাসরি ছেলের রুমেই গেলেন রানী।হাতে নিলেন ছেলের পছন্দের কাঁচাগোল্লা।
এটা ওনার দীর্ঘদিনের অভ্যাস,রাত বিরেতে ছেলের জন্য তার পছন্দের কোনো খাবার নিয়ে তার ঘরে গিয়ে নিজের সামনে বসিয়ে খাওয়ানো।কিন্তু আজ রাজও ঘুমিয়ে পড়েছে।ওর দরোজায় কয়েকটা টোকা দিয়ে অবশেষে বাধ্য হয়ে ফিরে এলেন তিনি।মিষ্টির বাটিটা ফ্রিজে রেখে রান্নাঘরে একবার ঢুঁ মারলেন সেখানে সব ঠিক আছে কিনা দেখতে।যদিও তিনি জানেন যে পৌষী সব গুছিয়েই রেখেছে তবু রান্নাঘর ঘুরে সিঁড়ি বয়ে উপরে উঠতে গিয়েই ‘খুট’ শব্দ পেয়ে থমকে গেলেন।এটা তার শোনার ভুল হতে পারে।কিন্তু নিশুতী রাতে সামান্য শব্দও বিকট হয়ে দুরদুরান্ত পর্যন্ত পৌঁছে যায়।রানীর সন্দেহ হলো রাজ গেট খুলেছে হয়তো।তিনি দোতলা থেকে ফের নামতে গিয়ে সিঁড়ি থেকেই দেখলেন রাজ ছুরি জাতীয় কিছু হাতে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে ফিরে যাচ্ছে।তিনি বেশ অবাক হলেন।রাজ এতোরাতে ছুরি দিয়ে কি করবে!!তাছাড়া ও যদি জেগেই ছিলো তাহলে দরোজা খুললো না কেন।যাক্,সরাসরিই জিজ্ঞেস করবেন তিনি।সেই ইচ্ছেতেই দুই সিঁড়ি নামতে গিয়েও থমকে গেলেন।
নিজ চোখে যা দেখলেন তা দেখার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না রানী।
পৌষী আর রাজ পাশাপাশি হেঁটে ওদের দরোজার দিকেই আসছে!তারমানে কি? পৌষী তাহলে এতক্ষণ ঘরে ছিলোনা?
রানী আরো দুই কদম পিছিয়ে সিঁড়ির অন্ধকার কোণে সরে দাঁড়ালেন।এখান থেকে ওদের দুজনকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
রাজ ওর হাতের লম্বা কিছু নিয়ে নবের ভেতর কিছু করছে আর পৌষী ওর পাশে দাঁড়িয়ে চুপচাপ সেটা দেখছে।
এ কিভাবে সম্ভব?
নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা। তিনি ঠিক দেখতে পাচ্ছেন তো?পৌষী রাজের সাথে?একা? এই রাতের অন্ধকারে?তারমানে পৌষী এতক্ষণ ঘরে ছিলোনা? সে এতো রাত অবধি রাজের ঘরে কি করছিলো?রানীর মনে অন্যরকম একটা চিন্তা খেলে গেলো।
শেষ ধাক্কাটা খেলেন যখন পৌষী নিজে থেকে রাজের গালে হঠাৎ চুমু খেলো তখন রানীর মুখটা পুরোপুরি হা হয়ে গেলো।
পৌষীর এতো অধঃপতন?
রানীর নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছেনা।
যে মেয়ে রাজকে খাবার বেড়ে দিয়ে সেই এলাকা ছেড়ে পালাতো সে কিনা?
নাহ্,অসম্ভব।
পৌষী অনেক বড় ফাঁদ পেতেছে তাহলে। এর একটা হেস্তনেস্ত করা দরকার।কিন্তু এখন কিছু করতে গেলে রাজ সেটা টের পেয়ে যাবে।শেষমেষ সে তুলকালাম কান্ড করে ফেলবে।এই ছেলের রাগ ওর বাপের চেয়ে কোনো অংশে কম না।যা করার করতে হবে রাজের অগোচরে।
রানী ক্ষোভ চেপে নিজের ঘরে চলে গেলেন।কিন্তু পৌষীর চালাকি আর স্পর্ধা দেখে অসহ্য রাগে বাকিটা রাত দুচোখের পাতা এক করতে পারলেন না তিনি।মেয়েটাকে তিনি কি ভেবেছিলেন,আর সে কি বের হলো! ওকে মন থেকেই মায়া করতে শুরু করে দিয়েছিলেন।ওর জন্য ভালো কিছু করার তাগাদা নিজের ভেতর থেকেই অনুভব করছিলেন কিন্তু মেয়েটা যে এতোবড় ছলনাময়ী কে জানতো!কোন্ ফাঁকে সে তার একমাত্র সন্তানকে ধরে টান দিয়েছে তিনি টেরও পেলেন না?
এটা নিশ্চয়ই তার কানাডা যাবার পর হয়েছে।তখন ফাঁকা বাড়ীতে রাজকে একা
পেয়ে রাজকে নিজের রূপের জালে ফাঁসিয়েছে।
মানুষ কত নিচে নামতে পারে চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয়না। তিনি আগে থেকেই জানেন এসব ঘোমটাওয়ালীদের ঘোমটার নিচে এরা খেমটা নাচে। আজকে তার প্রমাণ হাতেনাতে পেলেন।ওর বড়মামাকে তামাশাটা দেখাতে পারলে মনটা শান্তি পেতো! কিন্তু না….সে দেশে ফেরার আগেই এই কালসাপ দুটোকে বাড়ীছাড়া করতে হবে।দুধকলা দিয়ে কালসাপ পুষেছিলেন তিনি।সেই কালসাপ আজ তাকেই ছোবল মারতে দাঁড়িয়েছে।

আজকে ছেলের বাড়ী যাবে ওরা গায়ে হলুদ করাতে তাই সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সবাই!
পৌষী গায়ে হলুদের অনুস্ঠানগুলো বরাবরই এভোয়েড করে আসছে।তাই সে আগেই জানিয়ে রেখেছে যে সে মা’কে একা রেখে যাবেনা।তাই কেউ আর ওকে যাবার জন্য তাগাদা দেয়নি।বিশেষ করে নীরা।সে ভালো করেই জানে পৌষী এই ফাংশানে যাবেনা।তাই সে তার মতো পার্লারে চলে গেলো!
রানী দুপুর পর্যন্ত ওপর থেকেই নামেননি।রাত জাগার ফলে তার ঘুমও দেরী তে ছুটেছে।ঘুম ভাঙ্গার পর তিনি নাস্তা খাবার জন্যে ডাইনিং এ না গিয়ে সরাসরি পৌষীদের ঘরের দিকে গেলেন।তিনি ভালো করেই জানে এসময় রাজ বাড়ী থাকেনা।
তাছাড়া ওর বাবা দেশের বাইরে থাকায় অফিসের পুরো চাপটা ওর ওপরই পড়েছে।
সে একটু আগেই গাড়ী নিয়ে বেরিয়েছে।সে খবর পেয়েই তিনি এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে আর দেরী না করে সোজা
পৌষীদের রুমে চলে আসলেন।
পৌষী শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলো!রানী গেট নক করলে সে উঠে দরোজা খুলে দিলো! রানী ঘরে ঢুকেই দরজা লাগিয়ে দিলেন।
পৌষী একটু অবাকই হলো কারন মামীর তো এখন পার্লারে যাবার কথা।উনি এখনো যাননি?তাছাড়া এখানেই বা এলেন কেন,আর দরজাই বা লাগালেন কেন?
সাহেদা শুয়ে ছিলেন,রানীকে দেখে আস্তে ধীরে উঠে বসলেন!
-“,তুমি যাওনি ভাবী?”
রানী হিসহিসিয়ে বললেন-“আমি না থাকলে বুঝি তোমাদের মা মেয়ের খুব সুবিধে হয়, তাইনা?”
-“এসব তুমি কি বলছো ভাবী?”সাহেদা অবাক হলো!
রাণী চাপা স্বরে ধমক দিয়ে বলল-“চুপ করো…মনে করেছো, তোমরা যা খুশি তা’ই করবে আর আমি টেরও পাবোনা,তাই না?(বলে পৌষীর দিকে তাকালেন)তোকে জিজ্ঞেস করছি!রাজের সাথে তোর কিসের সম্পর্ক?খুব তো পর্দা পসীদা দেখাস।একটা অবিবাহিত ছেলের সাথে রাত বিরেতে
একা একা কি করতে গিয়েছিলি? ছিহ্…তোকে তো পেটের মেয়ের মতই জানতাম।আজ আমার ঘরে থেকে আমারটা খেয়ে পড়ে আমারই বুকে শেল বিঁধালি?”
সাহেদা বলতে চাইলেন কিছু।
রানী বাধা দিয়ে বললেন-“থাক্,তোমাদের কোনো সাফাই গাইতে হবেনা!গতকাল রাতে তোমার মেয়ের দুমুখো রূপ আমি নিজের চোখে দেখেছি।
পৌষী মুখ নিচু করে কাঁদতে লাগলো !সেদিকে চেয়ে রানী ব্যঙ্গ করে বলে উঠলেন-“কতো ঢংইনা তোরা দেখাতে জানিস।তোর ওসব ধর্মীয় কচকচানি আমার জানা আছে।তোদের মুখে এক মনে আরেক।ভাব দেখাবি কিচ্ছু চাইনা অথচ লোভ তোদের ষোলোআনা!”
-“ভাবি,আপনি আমার কথাটাতো শুনবেন!”
-“কোনো কথা শোনার বা বলার বাকী নেই!আমি নিজ চোখে তোমার মেয়েকে রাজের সাথে গতরাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি!শুধু তাই না,সে রাজের সাথে রাজের ঘরে দরোজা বন্ধ করে কি করছিলো একবার নিজের গুণধর মেয়েকে জিজ্ঞেস করো !অস্বীকার করতে পারবে সে, জিজ্ঞেস করো ?আমার তো মন চাইছে তোমাদের দুজনকেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেই।সবাইকে তোমাদের আসল রুপটা জানিয়ে দেই। কিন্তু আমার মেয়ের বিয়ে থাকায় তোমরা মা মেয়ে বেঁচে গেলে।
পৌষী দুহাতে মুখ ঢেকে নিরবে কেঁদে চলেছে!
রানী ফুঁসে উঠলেন-“কাল আমার মেয়ের বিয়ে নইলে তোদের মা মেয়েকে আজই বাড়ীছাড়া করতাম।বিয়েটা হতে দে তারপর তোরা তোদের ঠিকানা খুঁজে এখান থেকে চলে যাবি!প্রয়োজনে তোদের খরচপত্র যা লাগে সদকা মনে করে পাঠিয়ে দেবো…কিন্তু এ বাড়ীতে আর না।দুটো দিন সময় দিলাম।মীরার বিয়ের পর পরই তোরা চলে যাবি,কোথায় যাবি সেটা তোদের ব্যপার!আর যদি পারিস,তো আমার ছেলে বাড়ী ফেরার আগে আজই চলে যা।”
সাহেদা বিস্ময়ে বোবা বনে গেছেন যেন।তবু মরিয়া হয়ে বলতে চাইলেন-“ভাবি,আমার মেয়ে কোনো অন্যায় করেনি,ওদের সম্পর্ক….!”
-“এজন্যেই লোকে বলে অভাবে স্বভাব নষ্ট!(সাহেদার কথা যেন শুনতেই পাননি তিনি)তোদের আশ্রয় দিয়েছি বলে বাড়ীর মালিককে ধরেই টান দিয়েছিস?অনেক বিশ্বাস করতাম তোকে পৌষী! তুই যে এমন ছলনাময়ী বেরোবি তা কস্মিনকালেও ভাবিনি!”
বলে রানী দরজার দিকে এগিয়ে গেলেন!তারপর আবার কি মনে হতে ফিরে এসে পুনরায় বললেন-“আর বাড়ী ছাড়ার আগ পর্যন্ত যদি আমার ছেলের আশেপাশে তোকে দেখেছি তো আমার চে খারাপ আর কেউ হবেনা!আসুক তোর মামা,তাকে দেখাবো তার ভাগনির আসল রুপটা!
উনি নাকি…পরপুরুষের সামনে যাননা কিন্তু আমার ছেলের সাথে একঘরে গুটুরগুটুর করতে পারেন।ওটাতে গুনাহ হয়না! হায়রে তোদের যে কতরূপ!ভেবেছিলাম,দ্বীনদার ছেলে দেখে তোকে বিয়ে দেবো!এখন আমার প্রশ্ন তুই নিজে কতটা দ্বীনদার!”
বলে রানী ঝড়ের বেগে যেভাবে এসেছিলেন সেভাবেই বেরিয়ে গেলেন!
সাহেদা হতভম্ব হয়ে মেয়ের দিকে তাকালেন।পৌষী দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে।
সাহেদা ওর দিকে হাত বাড়ালেন-“আমার কাছে আয় মা!”
পৌষী মায়ের বুকে মুখ গুঁজে কেঁদে উঠলো।
সাহেদা ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন!তারপর কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন-“ব্যাগটা গুছিয়ে ফেল্ মা,আমরা আজ রাতেই চট্টগ্রাম রওনা দেবো!”
-“,তোমার এই শরীরে…কিভাবে মা?”
-“শরীর আমার ঠিক আছে…!এখন সম্মানটা তো ঠিক রাখতে হবে!এসব কথা শোনার পর তোর কি এবাড়ীতে থাকার ইচ্ছে আছে?”
সাহেদার চোখেমুখে অপমানের চিহ্ন ফুটে উঠেছে।এক ধরনের কষ্টমাখা জেদ কাজ করছে ভেতরে।মায়ের দিকে তাকিয়ে পৌষী মাথা নাড়লো!
ওর মনেও ঝড় চলছে।রাজকে সে কিছুই জানাবেনা এ ব্যপারে।কারন রাজ জানলে ওকে কিছুতেই যেতে দেবেনা।বড়মামাও বাড়ী নেই।এখানে আর একমুহূর্ত থাকতে ইচ্ছে করছে না।
মামী যে সমস্ত কথা বলেছেন সেগুলো কাঁটার মতো খোঁচাচ্ছে পৌষীর গায়ে।সত্যিইতো,সে তার ছেলেকে নিজের করে নিয়েছে তার অনুমতি ছাড়া।মা হিসেবে তার রাগ করা যায়েজ।এরপরে সে রাজ বা বড়মামার চাপে বিয়েটা মেনে নিলেও তার মনে সবসময় এটাই কাজ করবে যে পৌষী আর তা মা তার অনুপস্থিতির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে।অসুস্থতার বাহানায় ছেলের গলায় মালা ঝুলিয়েছে।
তাছাড়া মা এখন অনেকটা সুস্থ।তার কারনেই বিয়েটা প্রয়োজন ছিলো।এখন সে বিয়ে নিয়ে এতো মাথা না ঘামালেও চলবে।
রাজ ঠিকই ভালো মেয়ে পেয়ে যাবে।
আর পৌষীর জন্য রাজের স্মৃতিই যথেষ্ট।
তাই সে নিরবে সরে যাবে !
অনেক দিক রক্ষা পাবে তাতে!
আশ্রয়ের জীবন বড় লাঞ্ছনার জীবন!
পৌষী দ্রুত হাতে নিজের পুরোনো কাপড়চোপড়গুলো গুছিয়ে নিলো।রাজের গিফট করা সমস্ত কাপড় অর্নামেন্টস,এবং ওদের বিয়ের শাড়ী কাপড় এমনকি বিয়েতে পাওয়া উপহারগুলো….সমস্ত বিছানার উপর রেখে কেবল যা নিয়ে এবাড়ী এসেছিলো সেগুলোই একটা ব্যাগে গুছিয়ে নিলো!তারপর ওর একমাত্র ঘনিষ্ট বান্ধবী তৃণাকে ফোন দিলো।তৃণা ওর বিয়ের কথা সবই জানে।তাই ওকে বোঝাতে বেশী বেগ পেতে হলোনা।সবশুণে তৃণা ওকে অসুস্থ মা’কে নিয়ে এ মুহূর্তে লম্বা জার্নি না করার পরামর্শ দিলো। তারপর সে তার বড়বোনের একটা খালি ফ্ল্যাটের ঠিকানা দিয়ে পৌষীকে আপাতত সেখানে উঠতে বললো।ওর বড়বোন পুরো পরিবার নিয়ে আমেরিকা চলে গেছে।বাসাটা ভাড়া দিয়ে গেছে কেবল দেশে ফিরে নিজেদের ওঠার জন্য একটা ফ্ল্যাট রেখেছে।সেটায় তালা দেয়া থাকে।তৃণা জানালো তোরা সেখানে চলে আয় আমি চাবি নিয়ে আসছি।মাঝেমধ্যে ঝাড়পোছ করার জন্যই চাবিটা তৃণাদের কাছেই থাকে।পৌষী দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলো।অন্তত এক সপ্তাহের জন্য সে আগে মা’কে নিয়ে সেখানে উঠবে।তারপর মা’কে একদফা ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধপত্র কিনে নিয়ে সামনের সপ্তাহে চিটাগং ছোটচাচার বাড়ীতে গিয়ে উঠবে।তারপর সেখান থেকে কোন একটা বাসা ভাড়া করে সেখানে শিফট হয়ে যাবে।এটাই এখন একমাত্র উপায়।
পুরো বাড়ী নিস্তব্ধ হয়ে আছে !
সবাই এখন পার্লারে।কেবল মীরা হয়তো ওর ঘরে আছে।
পৌষী রাহেলাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো রাজের কথা!
রাহেলা জানালো রাজ বাইরে গেছে!
এই ই সুযোগ!
পৌষী মা’কে প্রস্তত হতে বলে দ্রুত দারোয়ানকে অনুরোধ জানালো একটা ট্যাক্সি ডেকে দিতে!
দারোয়ান জিজ্ঞেস করলো-“কোথায় ভাড়া করবো?”
-“মগবাজার !”
পৌষি হাত মোজা পা মোজা পড়ে আপাদমস্তক নিজেকে ঢেকে নিলো!দারোয়ান ফেরার আগেই পৌষী দেখলো রাজের গাড়ী বাড়ীতে ঢুকছে।
পৌষীর বুক ছ্যাঁৎ করে উঠলো।একটু পরেই ফোন করে খেতে দিতে বলবে।
কষ্টে বুকটা মুচড়ে উঠলো।শেষবারের মতো চটপটে হাতে রাজের খাবার গরম করে টেবিলে দিয়ে রাহেলাকে সব বলে দ্রুত নিজের রুমে ঢুকে পড়লো।
রাহেলা অবাক হয়ে ওর পেছন পেছন এলো-“আপনে বুরকা গায় দিয়া কই যান ভাবী?”
পৌষী রাহেলার দিকে ফিরে ওর মুখটা দুহাতে ধরে বললো-“কখনো তোর মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে আমাকে মাফ করে দিস বোন্।”
রাহেলা আর কিছু বলার সুযোগ পেলোনা।
পৌষী ততক্ষণে ওর ঢাউস ব্যাগ নিয়ে হাঁটা দিয়েছে।
গাড়ী বারান্দায় নামার আগে সতর্ক দৃষ্টিতে রাজের ঘরের দিকে তাকালো পৌষী।
রাজ নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছে।দরোজার লক খুলে ঘরে ঢুকে গেট আটকে দিতেই পৌষী হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো!দ্রুত মা’কে নিয়ে মেইন গেটের বাইরে চলে এলো!
ততক্ষণে দারোয়ান ট্যাক্সি ক্যাব নিয়ে হাজির।পৌষী মা’কে নিয়ে তাতে উঠে বসলো!
রাহেলা বোকার মতো সেদিকে চেয়ে রইলো!
পৌষীদের ট্যাক্সি মগবাজারের উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করলো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here