সে_আমারঃ (আপডেট) পর্বঃ-১৪

সে_আমারঃ (আপডেট)
পর্বঃ-১৪
মোর্শেদা হাবিব!
***************
বিয়ের পর থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে।
রাজ বাইরে থেকে ফেরার পরপরই পৌষীর ফোন আসে “খেতে আসুন” বলে।
উত্তরে রাজ কখনও ‘আসছি’ বলে, কখনও দশ মিনিট, পাঁচ মিনিট বলে সময় চেয়ে নেয়।
আজই প্রথম ঘটলো যে রাজ আসার পরও পৌষীর কোনো ফোন এলোনা।
রাজ হাত মুখ ধুয়ে মোবাইলটা হাতে নিতেই রাহেলা দরজা নক করলো।
-“বাইজান,খাওন ঠান্ডা অইয়া যাইতাছে।খাইতে আহেন!”
-“আসছি যা…!”রাজ ভ্রু কুঁচকে মোবাইলের দিকে তাকালো।পৌষী ফোন দিলো না কেন? ব্যস্ত নাকি? হতে পারে।
রাহেলাকে জিজ্ঞেস করার জন্য মুখ তুলে দেখলো রাহেলা চলে গেছে।
রাজ সোজা ডাইনিংয়ে চলে এলো।টেবিলে সব খাবার ঢাকা দেয়া আছে।
রাজ আশেপাশে তাকিয়ে মনে মনে পৌষীকে খুঁজলো।তারপর চেয়ার টেনে বসে পড়লো।
প্লেট টেনে নিয়ে একহাতে কপালটা টিপে ধরলো। মাথাটা একটু ধরেছে।
পৌষী থাকলে ওকে চা বানিয়ে দিতে বলতো।অবশ্য আজ মীরার গায়ে হলুদের কারনে ব্যস্ত থাকতে পারে।হয়তো মায়ের রুমে আছে।
রাজ খাওয়া শেষ করে বেসিনে হাত ধুয়ে রাহেলাকে চা বানিয়ে দিতে বলে নিজের রুমে চলে গেলো!
রাহেলা নিঃশব্দে চা বানাতে লেগে গেলো।ওর কাছে একটু অবাকই লাগছে।রাজ ভাইজান আজ ভাবীর কথা জিজ্ঞেস করছেনা কেন?না জিজ্ঞেস করলে তো রাহেলা নিজ থেকে আর কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেনা।ভাবী কি রাগ করে কোথাও গেলো নাকি কোনো কাজে গেলো তা এখনো রাহেলা বুঝতে পারছেনা।তবে ওর মতো মানুষের কাছে ভাবীর ক্ষমা চাইবার ব্যপারটা ওর কাছে স্বাভাবিক লাগেনি।হঠাৎ ওর কাছে ক্ষমা চাইবার কি হলো।ভাবী আসলে কোথায় গেলো!এমন ভাবে ক্ষমা চাইলো যেন আর দেখা হবেনা।
চা নিয়ে রাজের রুমে টোকা দিয়ে ঢুকে দেখলো রাজ ভাইজান বিছানার ওপর ফাইল ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে।তাকে কাজে ব্যস্ত দেখে রাহেলা কাপ রেখে চুপচাপ চলে এলো।
সন্ধ্যার পরপরই বাড়ী সরগরম হয়ে উঠলো।সবাই পার্লার থেকে ফিরে বরের বাড়ী যাবার জন্য হুলুস্থুল শুরু করে দিলো।
রাত আটটা পর্যন্ত গাড়ী এসে গেলে সবাই হৈ হৈ করতে করতে বরের বাড়ী চলে গেলো।রানী ছেলেকে কেবল একবার জিজ্ঞেস করলেন সে যাবে কি না।রাজ মাথা নেড়ে জানালো সে যাবেনা।আগামী কাল বাবা দেশে ফিরছে, তাকে কিছু ইমপর্টেন্ট পেপারস বুঝিয়ে দিতে হবে।রাজ এখন সেগুলো নিয়েই ব্যস্ত।
ঈশার নামাজ পড়ে রাজ অফিসের কাজ নিয়ে বসলো।কাজের ফাঁকেই একবার অভ্যেসবশতঃ ম্যাসেজ পাঠালো পৌষীর ফোনে-
“এ তৃষিত নয়ন কেবলি খুঁজে গো তোমায়।
ও আমার প্রান বধুয়া,গেলে তুমি কোথায়!”
লিখে সেন্ড করে মুখ টিপে হাসলো রাজ।এই মেসেজ পড়লে পৌষী ঠিকই ছুটে আসবে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাজ আবার কাজে মন দিলো।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



রানীদের ফিরতে ফিরতে রাত বারোটা বেজে গেলো ! তিনি ফিরেই ছেলের ঘরের দিকে গেলেন।ওর ঘরে লাইট জ্বলছে!তারমানে রাজ জেগেই আছে !
নক্ করলে রাজ ভেতর থেকে জবাব দিলে তিনি নব মুচড়ে ভেতরে ঢুকে জানতে চাইলেন
-“কি রে আব্বু,তুই গেলিনা কেন!”
রাজ হাই তুলে বলল-“ভালো লাগছিলোনা…তাই যাইনি!তাছাড়া কাল বাপ্পী আসছে,কাজ বুঝিয়ে দিতে হবে।”
-“অহ্…তা খেয়েছিস কিছু ?”
-“উঁহুঁ…..!”রাজ বালিশে থুতনী রেখে বলল!
রানী বললেন-“কিছুই খাসনি? কেন পৌষী দেয়নি?” কিছুটা ব্যঙ্গমাখা স্বরে বললেন রানী।রাজ সেটা ধরতে পারলোনা।
মাথা তুলে বললো-“কেন,পৌষী না তোমাদের সাথে গেলো?ও কিভাবে দেবে?”
রানী ইচ্ছে করেই সেকথার জবাব না দিয়ে বললেন-
-“তুই যাসনি বলে মীরার শ্বাশুড়ী তোর খাবার প্যাকেট করে দিয়েছে!সাবু কে বলি,সেগুলো গরম করে দিক!”
বলে রানী সাবুকে নির্দেশ দিয়ে গটগট করে নিজের রুমে চলে গেলেন!
পৌষীদের রুমের দিকে ফিরে তাকানোর প্রয়োজনও বোধ করলেন না!
রাজ শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো,পৌষী আজ কোন পোষাকটা পড়েছে, নাকি বোরকা পড়ে গেছে।
একবার দেখতে পেলে হতো।
ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে এলো রাজের।
সে রাতে ও খাবার না খেয়েই শুয়ে পড়লো।

প্রতিদিনের মতো সকালে ব্যায়াম সেরে রাজ ডাইনিং হলে আসলো! তখনি রাজের মোবাইলটা বেজে উঠলো!আমজাদ চৌধুরীর পি এ ফোন করেছেন!রাজ ফোন রিসিভ করলো!
পি এ জানালো -“স্যার এয়ার পোর্টে পৌঁছে গেছেন।তাকে আনতে গাড়ী পাঠানো হয়েছে।তিনি ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে বাড়ী পৌঁছে যাবেন।রাজ কথা শেষ করে হতাশ ভঙ্গিতে পৌষীদের রুমের দিকে তাকালো।
পৌষীর হলোটা কি? কাল সারাটা দিন নাহয় একরকম ব্যস্ততা গেছে। আজ এখন পর্যন্ত দেখা তো করলোনা অন্তত ফোনে পর্যন্ত নক করলোনা।সে অসুস্থ না তো?
এবার রাজের মন অস্থির হতে শুরু করেছে।
রাজ ফোন রেখে মায়ের রুমে বাবার ফেরার খবরটা দিতে গেলো !
রানী সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠেছেন।ছেলেকে দেখে কিছু বললেন না।
রাজই জানালো বাবা এয়ার পোর্ট থেকে রওনা দিয়েছেন।ঘন্টাদুয়েকের মধ্যেই হয়ত বাড়ী ফিরবেন!
রানী কেবল “হুঁ…”বলে রাজের দিকে তাকালেন!
-“,নাস্তা করেছিস?’
-“না…এখনো করিনি!”
-“কেন…পৌষী দেয়নি?” রানীর স্বরে যেন কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক ভাব ছিলো!রাজ সেটা ধরতে পারলোনা!
সে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল-“নাহ্…!”
-“হমমম….”বলে মনে মনে তৃপ্তির ঢেকুর ছাড়লেন রানী!অষুধে কাজ হয়েছে তাহলে!
গতদিনের ডোজটা ঠিকমতোই পড়েছে।নিজের বিপদ বুঝে নিতে মা মেয়ের দেরী হয়নি।এ বাজারে কে কাকে পোষে,এটা মা মেয়ে ভালোই বুঝতে পেরেছে! তাই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করার কথা শুনে একদম সোজা হয়ে গেছে!!
রাজকে বললেন-“রাহেলাকে বল্…নাস্তা রেডী করতে!আমিও আসছি!”
রাজ নিচে নেমে অভ্যেসবশতঃ পৌষীদের ঘরের দিকে তাকালো!দরজা বন্ধ!
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো রাজ !
একটু পরে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এলো রাজ।নিরবে নাস্তা সারলো! রাজ মনে মনে বেশ অবাক হলো!এতো বেলা হয়ে গেলো অথচ এখনো পৌষীর দেখা নেই!প্রতিদিন তো সে এসময় রান্নাঘরেই নাস্তা তৈরী করে সার্ভ করার পাশাপাশি ফুপির জন্য নাস্তা ঘরে নিয়ে যায়!আজ ওর কি হলো!
এসময় ওর মা’ই ওর মনের কথাটা বললেন-“এ্যাই রাহেলা….পৌষীকে রান্না বসাতে বল্! কি করছে এতক্ষণ ধরে ঘরে বসে?”
মায়ের কথা বলার ধরনটা খারাপ লাগলো রাজের কাছে!পৌষীতো এ বাড়ীর কাজের বুয়া না যে ওকে এভাবে ট্রিট করতে হবে! তবু চুপ করে ধীরে ধীরে চায়ে চুমুক দিলো!
যাক্,অন্তত এই সুযোগে পৌষীকে একনজর দেখতে তো পাবে!
রাহেলা যেন এটার অপেক্ষাতেই ছিলো।দ্রুত পৌষীদের ঘরের দরজায় ধাক্কা দিলো।কোনো সাড়া না পেয়ে রাহেলা উদ্বিগ্ন মুখে ফিরে এসে উত্তেজিত স্বরে বলল-“পুষী আফা গো কোনো সাড়া নাই!হেগো ঘরে কুনো মানুষই নাই!কেউ তো গেট খুলেনা।”
-“মানে?”রাজ চায়ে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গিয়ে বলল!
রাণী ভ্রু কুঁচকে বলল-“বাথরুমে থাকতে পারে, যাবে কোথায়?”
রাহেলা এবার না বলে পারলোনা।কান্নাম
েশানো কন্ঠে বললো-
“না,মামী ঐ গরে কেউ নাই!কাইলকা যে হেরা গেছে অহনও তো আহে নাই!”
-“কাল গেছে মানে?” রাজ প্রশ্নটা করেই সশব্দে চেয়ার ঠেলে উঠে ঝড়ের বেগে পৌষীদের রুমে গেলো!
অসংখ্যবার নক করলো,নব মোচড়ালো।তারপপর
সেদিন রাতের মতো করে ছুরির সাহায্যে লক বাটন খুলে ঘরে ঢুকে রাজ বিস্ময়ের সাথে দেখলো বিছানার উপর পৌষী তার সমস্ত পোষাক,রাজের দেয়া সমস্ত গিফট,এমনকি বিয়ের শাড়ী গহনা সব কিছু ভাঁজ করে সাজিয়ে রেখে গেছে।
রাজ হতভম্ব হয়ে পুরো ঘর ঘুরে দেখলো।কেউ নেই! রাজের বুকের ভেতর যেন পাহাড়ী ধ্বস নামলো! হঠাৎ মনে পড়লো মোবাইলের কথা!যেটা বিয়ের পরদিনই রাজ পৌষীকে গিফট করেছিলো যেন দুজন যখন তখন কথা বলতে পারে!রাজ দ্রুত নিজের মোবাইল বের করে পৌষীর নাম্বারে ফোন দিলো!
রাজকে চমকে দিয়ে বেড সাইড টেবিলের উপর পড়ে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠলো!রাজ ফ্যাকাসে মুখে সেটার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো-“পৌষী মোবাইলটাও সাথে নেয়নি!তার মানে সে রাজের দেয়া সমস্ত উপহার প্রত্যাখ্যান করেছে!রাজের ভেতরে ভাংচুর শুরু হলো।অজানা কষ্টে মুচড়ে উঠলো অন্তরটা।মনে মনে ভীষণ ভেঙ্গে পড়লো রাজ!
দুহাত নিজের চুলে চালিয়ে দিয়ে রাজ ফিসফিসিয়ে বলল-“কেন এমন করলে পৌষী? কেনো জান?কোথায় গেলে তুমি?তুমি তো জানো তোমাকে ছাড়া যে আমি নিঃস্ব!”

রাজ ভেবে পাচ্ছেনা পৌষী কোথায় গেলো!আর কেনইবা গেলো!ওর মনে রাজের জন্য কি এতটুকু মায়াও লাগেনি?
কোথায় খুঁজবে তার পৌষীকে?
বাইরে এসে পৌষী চলে যাবার সংবাদটা রাণীকে বললে তিনিও মনে মনে চমকে উঠলেন কিন্তু মুখোভাবে তা প্রকাশ করলেন না!
রাজ স্বাভাবিকভাবেই রাহেলাকে নানা প্রশ্ন করলো!
কখন গেলো…কি বলে গেছে….ইত্যাদি নানান প্রশ্ন করলো যার কোনোটিরই সদুত্তর রাহেলা দিতে পারলোনা!
রাজ অক্ষম আক্রোশে তড়পাতে তড়পাতে নিজের রুমে চলে গিয়ে শব্দ করে গেট বন্ধ করলো।
রানী সব বুঝলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালেন না।ভালো হয়েছে আপদ বিদায় হয়েছে। তার ছেলের জীবনটা শেষ হয়ে যেতো।ভাগ্যিস তিনি দেখে ফেলেছিলেন নইলে আরো কতদিন যে এসব চলতো কে জানে!!
দুপুরের পরপরই আমজাদ চৌধুরী রানী ভিলাতে পৌঁছে গেলেন!তিনি ঘরে ঢোকার পর রানী স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথাবার্তা চালিয়ে গেলেন।
আমজাদ চৌধুরী আজ আর ওপরে গেলেন না।নিচে ড্রইং রুমেই বসলেন।
রানী রাহেলাকে ডেকে বললেন সাবু মিয়াকে নিয়ে যেন লাগেজগুলো উপরে নিয়ে যায়।
রানী মনে মনে কিছুটা প্রস্তুতি নিতে লাগলেন।কারন অসুস্থ বোন চলে যাবার খবরটা রাজের বাবা স্বাভাবিক ভাবে নিতে চাইবেনা।হয়তো পৌষীর দোষটাও সে দেখতে চাইবেনা।কিন্তু রানী মনে করেন রাজের কোনো দোষ নেই এতে।
শরীরের কাছে মুক্ত বাতাসের আনাগোনা হলে ইয়াং ছেলেরা একটু বেচাল হতেই পারে!এটার জন্য তিনি রাজকে দোষ দেবেন না!এটা ওর বয়সের প্রভাব!আসল দোষ তো সেসব মেয়েদের যারা লোভে পড়ে রাজের কাছে আসে।পৌষী দেখতে সুন্দর তাই রাজ ওকে মানা করতে পারেনি কিন্তু পৌষী নিজেতো জানে তার অবস্থা কি!ও কেন রাজের সাথে সম্পর্ক গড়লো?বড় ঘাটে নৌকা ভেড়াবার আগে ওর নিজের উচিত ছিলোগাঁটের জোর বুঝে নেয়া!
চলে গেছে তো কি হয়েছে,আপদ বিদেয় হয়েছে।রাজের বাবা হয়তো একটু চেঁচামেচি করবে তাতে ঘাবড়ালে চলবেনা।সে যখন জানবে পৌষীর ঘোমটার আড়ালে খেমটা নাচের কথা তখন নিজেই সব বুঝতে পারবে।তাছাড়া রানী তো আর ওদের তাড়িয়ে দেননি।দোষটা ধরিয়ে দিয়েছেন তাতেই মা মেয়ে রাতের আঁধারে পালিয়েছে।
রানী বসে বসে এসব নানান কথা ভাবছিলেন।
আমজাদ চৌধুরী চারপাশে তাকালেন,তার আসার খবর কি পৌষী পায়নি? ওকে দেখা যাচ্ছেনা…কি ব্যাপার!
আমজাদ রানীর দিকে তাকিয়ে বললেন-
-“তোমাদের এদিকের খবর টবর কি?বিয়ের সব ভালোভাবে করতে পেরেছো তো ?”
-“হ্যাঁ….সব ঠিক মতোই এগোচ্ছে!ফার্নিচার সব গতকালকেই পাঠিয়ে দিয়েছি।মীরাকে সাথে নিয়েই ওর সব ফার্নিচার পছন্দ করেছি!তোমার মেয়ের যা চয়েস তাই সাথে করেই নিয়ে গেলাম…আমি একটা কিনবো, দেখা যাবে ওর পছন্দ হলোনা!তারচে দরকার নেই বাবা,তোরটা তুই পছন্দ করে নে!” রানী হাসলেন!
-“ভালো করেছো…একগ্লাস পানি দিতে বলো তো! আচ্ছা….পৌষীটা কোথায়!এতক্ষণ ধরে এসেছি,একবারো বেরোলোনা?সাহেদা কেমন আছে?”
আমজাদ চৌধুরী কিছুটা অসহিষ্ণু হয়ে প্রশ্ন করলেন।
রানী মুখ গম্ভীর করে বললেন-“কি ব্যপার? আজ এতো পৌষী পৌষী করছ যে বড়?কখনো তো এমন করোনা?”
-“ওমা,জিজ্ঞেস করলাম,তো কি হলো? আচ্ছা,পানি দাও ….দুবার তো চাইলাম,নড়তে পারোনা তুমি, রাহেলা কই ?”
-“এ্যাই রাহেলা…..তোর বড়সাহেবকে পানি দে!'”
বলে রানী বসে থেকেই ডাক দিলেন!
তারপর আমজাদ চৌধুরীর কোটটা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন-“বাইরে থেকে এসেছো লং জার্নি করে।রুমে এসে ফ্রেশ হও রেষ্ট নাও তারপর কথা আছে তোমার সাথে!”
-“আমার রেষ্ট নিতে হবেনা,যা বলার বলো!এসব জার্নি আমার গা সওয়া আছে!বলো..কি বলবে…”!
বলে আমজাদ চৌধুরী সোফায় হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসলেন!
রানী থমথমে মুখে বললেন…
-“,তোমার বোন কাউকে কিছু না বলে তার মেয়েকে নিয়ে চলে গেছে এ বাড়ী ছেড়ে!”
আমজাদ চৌধুরী ধীরে ধীরে হেলান ছেড়ে সোজা হলেন-“কি বললে?”
-“বললাম সাহেদা চলে গেছে!”
-“কবে..কখন…কেন?না বলে গেছে মানে? কি হয়েছিলো?
-“কি হয়েছে তার আমি কি জানি?আমাকে কিছু বলে গেছে নাকি তোমার বোন? স্রেফ চোরের মতো পালিয়ে গেছে!”
-“মুখ সামলে কথা বলো রানী! যা মনে আসে তা’ই বলবেনা! রাজ কোথায় রাজকে ডাকো!ওকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলাম ওদের দেখেশুনে রাখবে!এই বুঝি তার দায়িত্বের নমুনা?”
-“বোকার মতো কথা বলোনা রাজের বাবা!রাজ এখানে কি করবে?আর তুমিইবা কোন্ আক্কেলে একটা উঠতি বয়সের মেয়ের আর তার মায়ের দায়িত্ব নিজের যুবক ছেলের কাছে দিয়ে যাও?”
-“উঠতি বয়স না?(আমজাদ চৌধুরী রাগে ফুঁসে উঠলেন)আজ তোমা র মুখে নতুন বুলি ফুটছে দেখি?কোন্ কালে উঠতি যুবক আর যুবতি নিয়ে ভেবেছো? তোমার ভাইবোনের ছেলেমেয়েরা এসে যখন আমার ছেলেমেয়ের সাথে ফুর্তি করতো, আড্ডা মারতো,রাত কাটাতো তখন তোমার এসব নীতিকথা কোথায় ছিলো!আমার ছেলের এক সময়ের এই উড়নচন্ডী স্বভাবের জন্য একমাত্র তুমি দায়ী।যখন তখন ছেলেকে বোনের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছো,বাড়ীতে মেয়েবন্ধুদের এলাউ করেছো!আমি তো বিদেশ বিভুঁইয়ে পড়ে থাকতাম,তুমি মা হিসেবে কোন্ দায়িত্বটা ঠিকমতে পালন করেছো?আমি রাজকে পেছন থেকে না টানলে আজ রাজ নোংরামীর অতলে তলিয়ে যেতো!অথচ এটা মা হিসেবে তোমারই দায়িত্ব ছিলো!সারাদিন ওদের সাথে বাড়ীতে থাকো তুমি…..আমি না!”
রানী কিছুটা থতমত খেয়ে গেলেন,তারপর সামলে নিয়ে বললেন-“আমরা নাহয় খারাপ….যথেচ্ছাচার করে ছেলেমেয়ে মানুষ করেছি! তা তোমার বোন ঝি তো খুব পরহেজগার, পরপুরুষের সামনে যায়না সেই মেয়ে রাজের সাথে নিরিবিলিতে রাতের বেলা গোপনে দেখা সাক্ষাৎ করে কিভাবে?বলো..?আমি নিজে ওদেরকে লুকিয়ে দেখা করতে দেখেছি!”
তীব্র স্বরে কথাগুলো বলে রানী আমজাদ চৌধুরীর মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন!
কারন তার মনে হচ্ছিলো এটা শুনে আমজাদ নিশ্চয়ই চমকে উঠবেন আর তার মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।
কিন্তু তাকে নিরব দেখে বরং রানী নিজেরই অবাক হবার পালা!আমজাদ চৌধুরীর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে,এমনটা যে ঘটবে তিনি যেন আগে, থেকেই জানতেন!
আমজাদ ক্ষেপে গিয়ে বললেন-“শুধু কথা বলতে দেখেছো?আমি তো ভেবেছি রাজের ঘরে দরজা বন্ধাবস্থায় ওদের দুজনকে পেয়েছো !”
-“এসব কি বলছো তুমি?পৌষীর এমন আচরন কি তোমার কাছে স্বাভাবিক লাগছে?”
-“হ্যাঁ,লাগছে…কারন ওরা স্বামী স্ত্রী।আর পৌষী আমার ছেলের বৌ।
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here