#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ৭
নীরব নির্জন মাঠে বসে আছে শরীফ,রাতের অন্ধকারে হাতের সিগারেটটা জ্বলজ্বল করছে।শরীফের পাশেই বসে আছে শরীফের বন্ধু হৃদয়,দুজনেই চুপচাপ বসে আছে।কেউ কোন কথা বলছে না,হৃদয়ের মনে অনেক প্রশ্নরা উঁকি দিচ্ছে কিন্তু সাহস করে সেটা জিজ্ঞেস করতে পারছে না।বেশ অনেকক্ষণ পর হৃদয় নিরবতা ভেঙ্গে বলে উঠল,,,
“তখন ছেলেটাকে ওভাবে মারলি কেন?”
“——-”
হৃদয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও বলে উঠে,,,
“তুই ঠিক কী করতে চাইছিস বল ত,এভাবে ত না নিজে শান্তিতে আছিস না কাউকে শান্তি দিচ্ছিস!সত্যিটা সামনে কেন আনছিস না তুই?এভাবে আর কতদিন চলবে?দেখ দোস্ত এসব খেলা বাদ দিয়ে সবটা সবাইকে জানা আর জীবনটা সাজা নতুন করে।তোর এই উদ্ভট কাজ-কর্ম আর ভালো লাগছে না।একদম টিনেজারদের মত ছেলে মানুষী করছিস।”
শরীফ বাঁকা হাঁসল,তারপর বলে উঠল,,,
“এখনও সময় হয় নি,সময় হলে সব করব।”
হৃদয় চুপ করে গেলো,ও জানে শরীফকে হাজার বললেও অর কথা শুনবে না।তাই সবটা আল্লার হাতে ছেড়ে দিয়ে মন ভরে দোয়া করল,যাতে সবটা ঠিক হয়ে যায়।
___________________★★★__________________
রুমে বসে একা একাই হাসছি কিছুক্ষন আগের কথা মনে করে,,,
কিছুক্ষণ আগে👇
বাড়িতে ঢোকার পর বাবা বলে উঠে,,,
“তোমার ফ্রেন্ড যে অসুস্থ সেটা একটা ফোন করে জানালে কী হত?আমরা কত চিন্তায় ছিলাম সেটা কী তুমি জানে?”
আমি বাবার কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লাম,আমার ফ্রেন্ড অসুস্থ বলে আমার আসতে দেরি হয়েছে,এই কথা কে বলল বাবাকে?আমি যখন এসব ভাবছি তখন আবার বাবা বলে উঠল,,,
“তোমার ফ্রেন্ড এখন কেমন আছে?”
“জজি ববাবা ভভালো আছে।”
“যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও,রাশিদা অর জন্য চা পাঠিয়ে দাও রুমে,খুব টায়ার্ড লাগছে ওকে।”
বাবার কথা শুনে মা আর আমি দুজনেই অবাক,বাবা এতদিন আমার সাথে ঠিক করে কথা বললেও আগের মত কেয়ারটা করত না।কিন্তু আজ এত কেয়ার করছে বলে মা আর আমি দুজনেই অবাক,বাবা আমাদের এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,,,
“এতে অবাক হওয়ার কী আছে?ভুল কিছু কী বলেছি আমি?”
মা ফিক করে হেঁসে বলে উঠল,,,
“না ভুল কিছু বলো নি,তুমি কী ভুল কিছু বলতে পারো?আমার মনে হচ্ছে আজ চাঁদটা উল্টোদিকে উঠেছে।”
মা কথাটা বলেই হেঁসে উঠল,মার সাথে আমিও তাল মেলালাম কিন্তু পরক্ষণেই বাবার চোখ রাঙানো দেখে দুজনেই চুপ করে গেলাম।তখন মা বলে উঠে,,,
“তুই রুমে যা আমি চা নিয়ে আসছি।”
কথাটা বলে মা এক মুহূর্তও দাড়ায় নি একপ্রকার দৌড়েই রান্নাঘরে চলে যায়।আমি ঠোঁট টিপে হাসতে হাসতে রুমে চলে এলাম,এখন এটা নিয়েই হাসছি আমি।কিন্তু হঠাৎ করে মনে হল বাবা কীভাবে জানল আমার ফ্রেন্ড অসুস্থ তার জন্য দেরি হয়েছে আসতে।মা আসলে জিজ্ঞেস করব নে,হয়ত মা কিছু জানে।এটা ভেবেই ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেলাম।ফিরে এসে দেখি মা চা আর ফ্রেন্স ফ্রাই নিয়ে এসেছে।আমি মুখ মুছতে মুছতে মাকে বলে উঠলাম,,,
“মা বাবা কীভাবে জানল আমার ফ্রেন্ড অসুস্থ ছিল?”
“তোর এক বান্ধবী নাকি বলেছে উনাকে,আজ উনার কাজ করতে করতে দেরি হয়ে গেছিল তারপর কলেজে গিয়ে দেখে তুই নেই।তখন আশেপাশে খোঁজাখুঁজি করছিল তখন তোর কোন বান্ধবী নাকি বলল।”
এখন আবার নতুন চিন্তা উদয় হলো যে কোন বান্ধবী বলছে বাবাকে।পান্না,তাবাসসুম ত আমার সাথে ছিল ওদের ত বলার মত কোন রাস্তা দেখছি না।তবে কী তামান্না বলেছে কথাটা বাবাকে?দেৎ এত চিন্তা করতে ভালো লাগে না,কাল ভার্সিটি গিয়েই জিজ্ঞেস করব কেউ কিছু বলছে কী না।
তারপর মন থেকে সমস্ত প্রশ্ন ঝেড়ে ফেলে চা খাওয়ায় মনযোগ দিলাম,কিন্তু পরক্ষনেই সব চা মুখ থেকে ফেলে দিলাম।মার দিকে তাকিয়ে দেখি মা আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে,আমি নিজেকে সামলে মাকে বলে উঠলাম,,,
“এটা কী চা নাকি কফি?”
“কফি হতে যাব কেন?চা চোখে দেখিস না তুই,চা কোনটা কফি কোনটা সেটার তফাৎটা কী বুঝিস না,হাম্বি একটা।” (রেগে)
“তুমি খেয়ে দেখো ত এটা কী?”
বলেই কাপটা মার দিকে এগিয়ে দিলাম মা এক চুমুক খেয়ে বলে উঠল,,,
“নির্ঘাত এটা আরাফাতের কাজ,যখন চা বসিয়েছি তখন তোর বাবা বলল কফি করতে ত চা,কফি দুটোই করলাম তারপর সেখানে উপস্থিত তোর গুনধর ছোট ভাই আরাফাত।আমি একটু বাইরে এসেছিলাম তখন হয়ত এই কান্ডটা করেছে।”
আমি মাকে কিছু না বলে রাগে ধাপ ধুপ পা ফেলে ছুটলাম আরাফাতকে খুঁজতে।শয়তান পোলা জানে আমি কফি খাই না,কেমন শয়তানিটা করল শয়তানটা।আজ খালি হাতে পাই তোর হচ্ছে।আমি সারা বাড়ি খুজেও আরাফাতকে পেলাম না,রান্নাঘরে গিয়ে দেখি উনি হু হা করছে,হয়ত জ্বাল লাগছে।তাই পানি গ্লাসে ডালছে খাবে বলে।আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি আসে,আমি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে অর দিকে এগিয়ে যাই।
আরাফাত মুখে পানির গ্লাস ধরলে আমি অর সামনে গিয়ে জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকি,বেচারা মুখে পানি দিতে গিয়েও দিল না হেঁসে ফেলল।আমি তখন হাসি বন্ধ করে ফেলেছি,আমি হাসি বন্ধ করাতে আবার পানি মুখে দিতে নিলেই আবারও হেঁসে উঠি আমি।এবারও আরাফাত হেঁসে উঠে,আমি আবার হাসি থামিয়ে রাগি লুকে অর দিকে তাকাই,আরাফাত ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে আবার পানি খেতে যায়,আমি আবারও হেঁসে উঠি।এবার আরাফাত রেগে বলে উঠে,,,
“দেখ আপু একদম এরকম করবি না,পানি খেতে দে আমাকে।নয়ত এই পানি দিয়ে তকে গোসল করাব।”
আমি অর কথাকে কোন পাত্তা না দিয়ে ডাইনিং টেবিল থেকে একটা আপেল নিয়ে বসে চিবুতে থাকি,আরাফাত সেটা দেখে আবারও পানি খেতে নিবে।তখন আমি আবারও হেঁসে ফেলি,এবার আরাফাত খুব বেশি রেগে যায় আর বলে,,,
“আপপপু তুই কী শুরু করলি,যা এখান থেকে।পানি খেতে দে,তোর হাসির জ্বালায় পানি খেতে পারতাছি না।এদিকে জ্বালে জিহ্বা জ্বলে যাচ্ছে।”
“আমি কী তকে আটকে রাখছি পানি না খেতে,খেতে মন চাইলে খা না।”
“সামনে এভাবে কেউ হাসলে কী পানি খাওয়া যায় নাকি,এখন পানি খেতে নিলে আমারও হাসি পেয়ে যাবে।তখন বিষম খাব,যেটা আমি একদম চাই না।তুই এখান থেকে যা ত।”
“আমার চা পাল্টে কফি দেয়ার সময় খেয়াল ছিল না সেসব,এখন শাস্তি ভোগ কর।”
“বইন আমার তোর দুইটা পায়ে ধরি আর এমন হইত না।আমি আর এমন দুষ্টুমি করব না কথা দিতাছি,এবার আমাকে একটু পানি খেতে দে।”
আমি এবার চেয়ার থেকে উঠে ডাইনিং টেবিল থেকে এক মগ পানি নিয়ে অর উপরে ঢেলে দৌড়ে সিরির দিকে যাচ্ছি তখন আরাফাত হুংকার ছেড়ে বলে উঠল,,
“মমমমমমমা🔈🔈”
আমি একবার ফিরে তাকিয়ে বলে উঠি,,,
“শুনলাম আজ নাকি গোসল করিস নি তাই গোসল করিয়ে তোর উপকার করলাম।তাই রাগ না দেখিয়ে একটা ধন্যবাদ দে।”
“দাড়া তোকে ধন্যবাদ দিতাছি।”
বলেই আরাফাত আমাকে তাড়া করতে লাগল,আমিও দৌড়ে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেই।আর হাসতে থাকি,আজ অনেক দিন পর এভাবে হাসলাম।হাসলে সত্যিই খুব ভালো লাগে☺️।অনেক মানসিক রোগের ঔষধ এই হাসিটা।
______________________________________
সকালে,,,
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে আলামিন তার পাশেই সাদিয়া বসে মার্কার দিয়ে আলামিনের হাতের ব্যান্ডেজে অর নাম লিখছে,আলামিন এসবে খুবই বিরক্ত।সাদিয়া সকালে জানতে পারে আলামিন হসপিটালে,তখন সাথেসাথেই হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হয় আর আসার পর আলামিনের থেকে সবটা শোনার পর কিছুক্ষণ হাসলো।
“তুই আমার শত্রু আজ থেকে, আমি মাইর খাইলাম আর তুই একটু কান্নাকাটি করবি তা না এমন ভাব ধরছিস যেন কিছুই হয় নাই।তুই আমার আশেপাশে আসবি না,যা এখান থেকে।”(আলামিন)
“তোর মত বন্ধু যাতে শত্রুরও হয় রে,তোর মত বেস্টু পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার।তরে ত এত সহজে ছাড়ছি না রে।”
“হ তোর হাতে মাইর খাই প্রতিদিন,যা ভাগ এখান থেকে।”
“হসপিটাল কী তোর শ্বশুরের যে তুই বললি আর চলে যাব।”
“হ আমার শ্বশুরের তোরে যেতে বলছি যা এখান থেকে।”
“দোস্ত হসপিটালের মালিকের না একখান মাইয়া আছে,মাইয়া না যেন পুরাই ড্রাম।তোর উপরে যদি পড়ে না রে ভাই তোর প্রতিদিনি হসপিটালে ভর্তি হতে হবে।”
কথাটা বলেই আমি হু হা করে হেঁসে উঠি,আর আলামিন রাগে ফুসছে।একে ত কাল অকারনে শরীফ আলামিনকে মারল,তার উপর এই মেয়ে মজা করতাছে।আলামিনের ইচ্ছে করছে এই মাইয়াটার সাথে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধুত্তে ব্রেকআপ করতে।
“মিস্টার আলামিন কেমন আছেন আপনি?”
পুরুষালি কারো গলার আওয়াজ পেয়ে আমি হাসি থামিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি শরীফ দাঁড়িয়ে আছে।হাতে কিছু ফুল,আর মুখে বাঁকা হাসি,শরীফকে দেখেই কালকের কথা মনে পড়ে গেলো যে কাল কী কী বলেছি এখন ত মনে হচ্ছে আমাকে এক ডিলে আল্লার পেয়ারা বান্দা করে দিব।
আর এইদিকে আলামিনও ভয়ে ঘামছে,এই বুঝি আলামিনকে আবার মারতে আসল,আর এবার সোজা উপরে যাওয়ার টিকেট কেটে নিল।
সাদিয়া আর আলামিনের এমন ভয় পাওয়া দেখে হাসল শরীফ,ওদের এমন ভয় পেতে দেখে শরীফের খুব হাসি পাচ্ছে।কিন্তু এখন হাসলে চলবে না,তাই শরীফ নিজের হাসিটা চেপে রেখে সাদিয়া আর আলামিনের দিকে যাচ্ছে।
#চলবে…
(গল্পটা বাস্তব আর কাল্পনিক দুটোর সংমিশ্রণে।গল্পটাতে অনেক রহস্য রয়েছে যা আমি ধীরে ধীরে ক্লিয়ার করে দিব।কিন্তু অনেক পাঠকগন খুব আগ্রহের সাথে জানতে চাইছে শরীফ বিয়ে করেছে কী না?শরীফ এক মাস ঘুমাতে পারে নি সাদিয়ার জন্য ত কেন এই এক মাস কোন খবর নেয় নি?শরীফ তার বিয়ের দিন সাদিয়ার সাথে কী করেছিল?
এমন নানা প্রশ্ন করছে অনেকে।তাই তাদেরকে বলছি,গল্পটা আমি আগে থেকেই ভেবে রেখেছি যে কীভাবে সাজাব,কখন কোন রহস্য ভেদ করতে হবে সেটাও ভেবে রেখেছি।আমি ধীরে ধীরে সবটা ক্লিয়ার করে দিব।আমি চাইলে এক পার্টেই সব রহস্য ভেদ করতে পারি কিন্তু তাতে গল্পটা খাপ ছাড়া হয়ে যাবে।তাই আপনাদের কাছে একটাই অনুরোধ ধৈর্য নিয়ে একটু পড়ুন।
আবার অনেকে বলছে ইমোশনালি লিখতে গল্পটা,,,দেখা যাবে সব পার্টে ইমোশনাল লিখলে গল্পটা একঘেয়ে লাগে আর পড়ার ইচ্ছেটাই হারিয়ে ফেলে অনেকে।তাই মাঝেমধ্যে একটু হাসি-ঠাট্টা,দুষ্টুমির মূহুর্ত এড করেছি।তাতে করে গল্পটা একঘেয়ে লাগবে না। আশাকরি সবাই সবার উওর পেয়েছেন।তারপরও যদি আর কোন প্রশ্ন থাকে ত করতে পারেন,আমি উওর দিব।
আর রাতে আরেক পার্ট দিব ইনশাআল্লাহ।)