#হবে-কি-আমার(২)
#writer-Ruhi-mondal
#পর্ব_22
ভোরের আলো মৃদু মৃদু ছড়িয়েছে প্রকৃতির চারিপাশে,পাখিরা তাদের বাসায় উসসুখ হয়ে বসে আছে আলো ফুটলেই তারা মুক্ত বাতাসে উড়াবে বলে, তাদের কিচিরমিচির শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় অনু’র। আজ তার আগেই ঘুম ভাঙ্গল, প্রতিদিন অরিন্দম তাকে ঘুম থেকে টেনে তোলে। তাকে আঁকলে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে টুথব্রাশ হাতে ধরায়, সযত্নে মুখ মুছিয়ে দেয়। অনু তখন ও ঘুমে ঢুলে পরে। অরিন্দম তাকে নিয়ে ব্যালকনিতে বসে। অনু ঘুমঘুম হাতে চায়ের কাপ হাতে নেয়, অরিন্দম তা দেখে হালকা হাসে একহাতে অনুকে নিজের সাথে মেশায় অনু উষ্ণতার আলিঙ্গনে লেপ্টে থাকে ক্ষীণ সময় অতঃপর দুজন একত্রে চায়ের কাপে চুমুক দেয়।
কিন্তু আজ অনু নিজে থেকেই উঠেছে তাও অনেক ভোরে। আজ ঘুম ভাঙ্গার কারণ সে নড়তে পারছে না বলে, অনু পিটপিট চোখ খুলে তাকালো দু হাতে চোখ কচলে নিল, পেটের কাছে তাকাতেই চমকে গেল সে। বিষ্ময়ে সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় কারন অরিন্দম তার পেট জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে,অনু বিষ্মিত হলো অরিন্দম কেন এমন ভাবে শুয়ে আছে? আর কখন থেকেই বা, তা জানার ইচ্ছা হলো। কিছুক্ষণ তার মুখপানে তাকিয়ে থাকে অনু। ক্ষনে বক্ষগুহরে ভালো লাগার প্রশান্তি স্রোত বয়ে যায়, অরিন্দম কেমন ঠোঁট উল্টে ঘুমিয়ে আছে ছোট বাচ্চাদের মতো। অনু হয়তো এই প্রথম তাকে এমনভাবে ঘুমাতে দেখল, নিস্পলক তাকিয়ে থেকে বাম হাতটা অরিন্দমের উস্কখুস্ক চুলে রাখল, ঠোঁটের কোণে চলে এল কিছু একটা পাওয়ার প্রাপ্তির সুক্ষ্ম হাসি,ক্ষনেই সে ডান হাত বাড়িয়ে অরিন্দমের বাম গালে রাখল, মিনমিনে কন্ঠে রোজগারের অভ্যাসের মতো বলল,
__” আপনি খুব ভালো,বরবাবু!”
কথাটা বলে অনু মুচকি হাসলো হঠাৎ অরিন্দমের ঠোঁটজোড়া হালকা প্রসারিত হয়ে সুক্ষ হাসির রেখা খেলে গেল। অনু তা দেখল না। কিছু সময় অতিক্রম হতে অনু ঠোঁট উল্টে আবার বলল,
__” কিন্তু আপনি খুব পঁচা। আমাকে এখনও পর্যন্ত মুখফুটে বললেন না ভালোবাসেন। কিন্তু আপনি কার্যকলাপে বুঝিয়ে দেন, আপনি আমাকে কতটা চান। আর আমি আপনার জীবনে কতটা গুরুত্ব রাখি, আপনার সাথে নিজেকে আমি মিশিয়ে ফেলতে স্বার্থক হয়েছি, আমি পেরেছি আপনাকে নিজের করতে, আপনার ওপর শুধুমাত্র আমার অধিকার,আপনি শুধুই আমার।”
কথা পূর্ন হওয়ার পুর্বে অরিন্দম নড়েচড়ে উঠল,তাই দেখে অনু চুপ করে গেল। ক্ষীণ প্রহর অরিন্দমের মুখমন্ডলে তাকিয়ে থাকল সে, ডান হাত দিয়ে অরিন্দমের কপাল ছুঁয়ে দিল, দু’চোখে আঙ্গুল ছোঁয়াল, অরিন্দম কেঁপে উঠলো। অনু থামলো না তার নাক টেনে দিল, কোমল রক্তিম অধরে আঙ্গুল স্পর্শ হতেই অরিন্দম নেত্র মেললো। অনু তখনও তাকিয়ে আছে, অরিন্দম আঁখি খুলতেই অনুর হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখল আর তার দেখেই ক্ষনে ভালোলাগা অনুভূতিতে বুক ধুকপুক করে উঠলো কিন্তু এমন ভাবে শুয়ে ছিল বলে কিছুটা বিচলিত হলো সে। কাল রাতে মনের কথা বলতে বলতে সে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি কিন্তু এখন বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেল। অরিন্দম উঠে বসলো, কেমন যেন নিজের কাজে সে লজ্জা পেল। নিভিয়ে যাওয়া কন্ঠে বলল,
__’আসলে কিভাবে ঘুমিয়ে.. কথা শেষ হওয়ার আগেই অনু উঠে বসে। এগিয়ে এসে অরিন্দমের কোলে মাথা রাখলো, অরিন্দম হতভম্ব হলো এখন এমন শুলো কেন মেয়েটা? তার ভাবনা শেষ হওয়ার আগে অনু বলল,
__”আপনি তো বেশ ছুপা রুস্তাম। আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে ভালোই তো আমার পেট টাকে বালিশ করে নিয়ে ছিলেন।”
অরিন্দম লজ্জাবোধ করলো। তবুও তা ধরা না দিয়ে বলল,
___”তুমিও যখন আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমাকে কাঁকড়ার মতো জড়িয়ে ধরো তখন?
অনু অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে বলল,
__”আমি শুধু আপনার ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগ নিয়ে জড়িয়ে ধরি না। সবরকম অবস্থায়তেই জড়িয়ে ধরি আপনাকে। আর আপনার উপর অধিকার শুধুই আমার! আপনি আমার প্রোপার্টি আমার যখন ইচ্ছা হবে জড়িয়ে ধরবো যখন ইচ্ছা হবে চুমু খাব। সুযোগ পেলেও, আর না পেলেও। কিন্তু আপনি বোরিং একটু রোমান্স জানেন না।
অরিন্দম অনুর মাথায় হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল,
__”রোমান্স ছাড়া মাথায় আর কিছু নেই,তাই না? পড়াশোনার কথা তো মনেই নেই!”
__’পড়াশোনা সে তো এখন অতীত! আমার বিয়ে হয়ে গেছে, আমি আর ওসব পড়াশোনা করবো না।’
__”তা বললে চলবে না! আমি তোমার সব পেপার্স নিয়ে এসেছি, আজ গিয়ে এডমিশন করিয়ে দিয়ে আসবো!”
অনু এক লাফে উঠে বসে বলল,
__”হোয়াট? এডমিশন করাবেন মানে? কেন করাবেন? আমি পড়াশোনা করব না। আমি তো এবার সুখে শান্তিতে সংসার করবো!”
অরিন্দম পাত্তা দিল না খাট থেকে নিচে নেমে দাঁড়াল। অনু হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে এগিয়ে এসে বলল,
__”আপনি শুনতে পাচ্ছেন আমি পড়াশোনা করবো না! আমি শুধু সংসার করবো। দুদিন পর বাচ্চাকাচ্চা হবে তার সাথে খেলা করবো! আমি ওই বই পড়ব না!
অরিন্দম লম্বা হাই তুলে বলল,
__”সব হবে সময় হলে! এখন টাইম তোমার পড়াশোনা করার! কিছু না এটলিস্ট গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করো। আমার বউ কলেজের গন্ডি পার করেনি ব্যাপারটা কেমন যেন লাগবে!”
অনু ঠোঁট ফুলিয়ে বলল
__”আমার পড়তে ভালো লাগে না। আমি পড়বো না!”
___
অনু রুমে পায়চারি করে চলেছে আর অরিন্দমের অপেক্ষা করছে। অরিন্দম ওয়াশরুম থেকে বার হলেই তাকে চেপেচুপে রাজি করাবে যেন অ্যাডমিশন না করায় তার, কিছুক্ষণ পরে ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে অনু ওয়াশরুমের দিকে তাকাতেই দেখলো অরিন্দম হালকা দরজা খুলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। তা দেখে অনু এগিয়ে গিয়ে বলল,
__”আপনার কিছু লাগবে? বরবাবু!”
___”হ্যাঁ,টাওয়াল লাগবে, এনে দাও!”
অনু কাবার্ড থেকে টাওয়াল বার করে অরিন্দমের দিকে এগিয়ে যায়, অরিন্দম টাওয়াল টা নিতে যাবে অনু তার আগেই দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেল। অরিন্দম হতভম্ব অনুর কাজে,অনু ভিতরে তাড়িয়ে অরিন্দমের পা থেকে মাথা স্কেন করছে, অরিন্দম তা দেখে নিজের অবস্থা দেখল,সে শুধুমাত্র টাওয়াল পেঁচিয়ে আছে কোমরে। উন্মুক্ত শরীরে সাবানের ফেনা। অরিন্দম চোখ বড়বড় হয়ে গেল। অনু লজ্জা পাওয়ার বদলে সে নিজেই লজ্জা পেতে শুরু করলো। অনু তা দেখে মিটিমিটি হেসে অরিন্দমের উন্মুক্ত বক্ষে তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে ন্যাকামি স্বরে বলল,
___”বরবাবু আপনি তো বেশ হট..হুমম, কিন্তু ইমরান হাশমিরের থেকে কম, সে রোমান্স গুরু, বাট ইউর বডি ইটস লাইক.. অনুর কথা শেষ হওয়ার আগেই অরিন্দম তাকে দেওয়ারে চেপে ধরল কারন সে জানে মেয়েটা তাকে জেনেবুঝে আন ইজি ফিল করাতে চায়, কিন্তু সেও এত সহজে ছাড়বে না। অনু কিংকর্তব্যবিমূঢ় চমকে উঠে ফ্যালফ্যাল চোখে তাকাল অরিন্দমের দিকে। সে তো মজা করছিল কিন্তু অরিন্দম এমন করবে ভাবতে পারেনি। অরিন্দম তার ভিজে হাত অনুর গালে রাখল অনু শিউরে উঠল। অরিন্দম মুখের সামনে ঝুঁকে গিয়ে বলল,
__”কি বললে? আমি হট,বাট ইমরান হাশমির এর মতো না। তার মত রোমান্স কিং না,তাই না? আচ্ছা শুধু ইমরান সো হট কেন হবে?আর কেনই বা রোমান্সের গুরু সে একা হবে? তোমার বর ও রোমান্সে গুরু। আচ্ছা আজ তা প্রমাণ করে দিই,কি বলো বেবি?”
অনুর বুক ধুকপুক করে উঠল তার মুখমন্ডলে অরিন্দমের উষ্ণ নিঃশ্বাস বাড়ি খাচ্ছে! ক্রমেই অরিন্দমের কথায় অনুর লজ্জায় চর্বিযুক্ত গাল রক্তিম সূর্য ন্যায় রং ধারণ করলো তা ভারি হতে লাগলো। অরিন্দম তার নিকট আরও একটু যেতে অনু দুহাত অরিন্দমের প্রশস্ত বুকে রাখলো, চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল। অরিন্দম কিছুক্ষণ নিস্পলক তাকিয়ে থাকলো তার লজ্জা রাঙ্গা মুখপানে,ক্ষনে মনে কিছু চাওয়া পাওয়া ইচ্ছা জাগ্রত হলো, সে এগিয়ে গেল। অনুর শরীর কম্পমান হচ্ছে সাথে অনুভূতির গুলো হৃদয় যুক্ত হলেও অরিন্দম তা প্রাধান্য দিল না। হঠাৎ রাশ ভারি কন্ঠে একটা বিরক্তি কর কথা বলে ফেললো,সে বলল,
__”ওয়াশরুমে এসেছ যখন আমার পিঠে একটু সাবান দিয়ে দাও! আমার হাত পৌছাছে না!”
অনুর কথাটা শ্রবন করতেই চোখ খুলে বোকাবোকা চাউনিতে তাকাল অরিন্দমের দিকে। অরিন্দম তার ফেস দেখে ঠোঁট চেপে হাসছে। অনু’র চোখে মুখে বিরক্তি চাপ স্পষ্ট তা দেখে অরিন্দমের পেট ফেটে হাসি আসছে, তবুও অনুকে রাগাতে বলল,
___”এ’টুকু মাথায় সব সময় রোমান্স ছাড়া কিছু চলে না তাই না? এত রোমান্স পাও কোথা থেকে? সরে এসো, যা বললাম কর। আমার লেট হচ্ছে, কলেজ যাব এডমিশনের জন্য।”
অনুর মেজাজ বিগড়ে গেল,সে কোথায় ভাবলো হয়তো ফিল্মের মতো ওয়াশরুমে রোমান্স হবে কিন্তু তা হলো-না! ব্যাটা নিরামিষ একটা।
অরিন্দম সপ’টা অনুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওর দিকে পিঠ করে বলল,
__”নাও ফার্স্ট!”
অনুর মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো সে অরিন্দম কে ধাক্কা দিল। ফ্লোরে জামাকাপড় কাচার জন্য রাখা ছিল সেটায় পা স্লিপ খেয়ে তাদের ওপর পরে ব্যাথায় মৃদু চিৎকার করে উঠল অরিন্দম। অনু তার পাশে ফ্লোরে পায়ের পাতা ভর দিল অতঃপর সে দুহাঁটুতে ভর দিয়ে দু হাতে সপ নিল, দাঁতে দাঁত চেপে বড় নখ দিয়ে অরিন্দমের পিঠে সাবান সহ নখ দিয়ে গেঁথে দিল। নখ ফুটতেই অরিন্দম ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো।
#চলবে