#হলুদ_খাম
লেখিকাঃ #তানজীমা_ইসলাম_রিয়া
__________________[৭]__________________
ঘড়িতে রাত আটটা বাজে, তনুর মা আর মামিরা নিচতলায় রান্নাঘরে ব্যস্ত। রুশা কানে এয়ারফোন গুজে বেডের একপাশে শুয়ে আছে। বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছে সে। স্নেহা একটু পরপর মেয়ের কান্না পেয়ে উঠে খাওয়াচ্ছে। খাওয়ানো শেষ হলে আবারও ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে সে।
বেডে হেলান দিয়ে জানালার ধারে বসে আছে তনু, ফোনে যে একটু গান শুনবে তারও উপায় নেই। তার ফোন অফ হয়ে গেছে। হাসু মিয়া এসে যে হারিকেনটা জ্বালিয়ে দিয়ে গেছিলো, সেটারও আলো নিভু নিভু ভাব!
তনু এক দৃষ্টিতে খোলা জানালা দিয়ে বিশাল আকাশপানে তাকিয়ে আছে। আকাশে আজ রূপোলী চাঁদ উঠেছে! সেই আলোর বন্যায় প্লাবিত হয়ে গেছে পুরো গ্রাম!!
একটানা এভাবে বসে থাকতে থাকতে তনু একসময় খুব বিরক্ত হয়ে উঠল। বেড থেকে নেমে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সে। লম্বা বারান্দা দিয়ে হাটতে হাটতে ভাবল, নিচে রান্নাঘরে যাবে। সেখানে নিশ্চয়ই গল্পের আসর বসেছে।
ধীর পায়ে হেটে সিড়ির দিকে এগিয়ে আসতেই দক্ষিণ দিকের ঘরটার দিকে তাকালো সে। এটা তার নানা নানুর ঘর।
তনুর নানা মারা যাওয়ার পর গ্রামে এলে সায়ন থাকতো নানুর সাথে। নানু থাকতো ওপরে বিছানায়, আর সায়ন নিচে মাদুর পেতে ঘুমাতো। সারারাত ধরে গল্প করতে করতে একসময় ঘুম নেমে আসতো তাদের দুচোখের পাতায়।
নানু মারা যাওয়ার পরও সায়ন যতবারই এ বাড়িতে আসে, এই দক্ষিণ দিকের ঘরটাতে সে একাই ঘুমায়। তার আদেশে হাসু মিয়া বাড়ির অন্য ঘরগুলো পরিষ্কার না করলেও এই ঘরটা সবসময় পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখে।
কি ভেবে ঘরটার দিকে এগিয়ে গেলো তনু, ঘরটার দরজা দক্ষিণ দিকের বড় বারান্দায়। চাঁদের আলোয় সামনের সবকিছুই বেশ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে।
দরজার সামনে এসে দেখল দরজাটা হাট করে খোলা, ঘরের ভেতরে কোনো আলো জ্বলছে না। বাইরে থেকে আসা চাঁদের আলোয় ঘরের ভেতরটা মৃদু আলোকিত হয়ে উঠেছে। তনু ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবেনা বুঝতে পারছেনা। নিজ মনেই বিড়বিড়িয়ে বলল,
” সায়ন ভাইয়া কি ঘরেই আছে!?
” থাকলে ঘরে কোনো আলো জ্বলছে না যে!!?
” দরজাটাও তো হাট করে খোলা! মনে হয় ঘরে নেই!!
সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ধীর পায়ে ঘরের চৌকাঠে এসে দাড়ালো তনু। উঁকি মেরে ভেতরে কেউ আছে কি না দেখার চেষ্টা করছে সে। স্পষ্ট দেখতে না পেলেও মনে হচ্ছে ঘরে কেউ নেই!
তনুর ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে আচমকা একজোড়া বলিষ্ঠ হাত হ্যাচকা টান মেরে ঘরের ভেতরে ঢুকিয়ে নিল তনুকে। তনু চিৎকার দিতে যাবে তার আগেই দরজা লক হওয়ার শব্দে চিৎকারটা তনুর মুখেই আঁটকে গেল।
সেই বলিষ্ঠ হাতজোড়ার মালিক তার কোমর শক্ত করে চেপে ধরে আছে। তার গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে তনুর ঘাড়ে গলায়! সেই পরিচিত মাতাল করা সুঘ্রাণ নাকে এসে লাগতেই তনুর শরীর কেপে উঠল!!!
একটা শুকনো ঢোক গিলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে দেখার জন্য চোখ মেললো সে। জানালা দিয়ে আসা চাঁদের রূপোলী আলোয় তাকে দেখে তনুর মনে হচ্ছে যেন রূপকথার সেই সুদর্শন রাজপুত্র তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! মুহুর্তেই তনু নিজেকে সংযত করে বলল,
” সায়ন ভাইয়া! ছাড়ুন আমাকে!
তনুর কন্ঠঃ পেয়ে সায়নের হুস ফিরল, প্রায় সাথেসাথেই তনুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে বলল,
” তখন উঁকি মেরে কি দেখছিলি হুম!?
” ক’কই উঁকি মেরেছি! আমি তো বারান্দায় হাটাহাটি করছিলাম।
” তো এতো বড় বাড়ির মধ্যে হাটার জন্য তুই এই ঘরের বারান্দাটাই পেলি!!?
” আশ্চর্য! বারান্দাটা কি শুধু এই ঘরের সামনে নাকি!? এমাথা ওমাথা পর্যন্ত লম্বা বারান্দা! হাটতে হাটতে এসে গেছি, তাতে কি এমন অপরাধ করে ফেলেছি যে পুলিশের মতো জেরা করছেন!?
শেষের কথাটা তনু বেশ জোর গলায় বলল, সায়ন তাতে পাত্তা না দিয়ে বলল,
” কথায় আছে ” চোরের মন পুলিশ পুলিশ! তোর এখন সেই অবস্থা বুঝলি!?
তনুর এবার রাগ হচ্ছে, মানুষটা তাকে এতো কষ্ট দেয় কেনো!? সে তো জানে, তনু তাকে দেখার জন্যই এ ঘরে উঁকি মারছিলো। সব জেনেও কেনো এমন করে সে!! তনু থমথমে গলায় বলল,
” হুম। উঁকি মেরেছি আমি। দেখতে চেয়েছি আপনাকে। এখন সেই অপরাধে কি আমাকে পুলিশে দেবেন!?
নিজের হাতজোড়া সায়নের সামনে ধরে বলল, ” নিন, গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠিয়ে দিন। তাতে যদি আপনার শান্তি হয়!
তনুর চোখে স্পষ্ট রাগ দেখতে পাচ্ছে সায়ন, কিন্ত তার রাগের পেছনে যে একরাশ অভিমান জমে আছে সেটাও তার অজানা নয়। সায়ন বাকা হেসে তনুর হাতজোড়া নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,
” সময় হলে তোকে ঠিকই গ্রেফতার করে আনবো। তারপর কোথায় নিয়ে যাবো সেটা আমার ব্যাপার!
তনুর রাগ সরে গিয়ে চোখেমুখে বিস্ময় দেখা দিল, সায়নের দিকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে। কিন্ত সায়ন কোনো উত্তর না দিয়েই ঘরের দরজা খুলে গটগট করে বেরিয়ে গেল।
সাথেসাথেই তনুর চোখজোড়া নোনা জলে ভরে উঠল, সে ঠিক বুঝতে পারছেনা সায়ন কি বলে গেলো। সে কি তনুকে ভালবেসে নিজের করে নিতে চাইছে!? নাকি আবারও ভালবাসায় জড়িয়ে মাঝপথেই তনুর হাত ছেড়ে দেবে!?
________________________________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে নিচতলায় বড়ঘরে, দুই পাশে দুটো মাদুর পেতে সবাই খেতে বসেছে। স্নেহার জন্য খাবার ওপরে নিয়ে গেছে সেলিনা। রাবেয়া প্লেটে খাবার তুলে সবার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে। তনিমার পাশে বসেছে তনু আর অপর পাশে সায়নের পাশে বসে আছে রুশা। খেতে খেতে রুশা বলল,
” সায়ন ভাইয়া! কাল কিন্ত আমাদেরকে নদীর পাড়ে বেড়াতে নিয়ে যাবে!
” আচ্ছা।
” কিন্ত সকালে যাবো নাকি বিকালে!? আমাকে রেডি হতে হবে তো!!
” সকালে অনেক কাজ আছে, বিকালে যাবো।
” আচ্ছা ঠিকাছে।
রুশা খুশিমনে খেতে লাগল, এদিকে তনুর গলা দিয়ে খাবার নামছে না। ভাতের লোকমা গুলোকে একেকটা পাথর মনে হচ্ছে তার কাছে। ভেবেছিলো সায়নের সামনে একদম স্বাভাবিক আচরণ করবে সে। যাতে সায়ন যেন বোঝে যে তনু তাকে ভুলেই গেছে। কিন্ত হল তার উল্টো! সায়নের সামনে আসতেই নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছিলো। তনু নিজ মনেই বিড়বিড়িয়ে বলল,
” নাহ, আমি এসব পারবো না। এর চেয়ে সায়নের থেকে দূরে ছিলাম সেটাই আমার জন্য ভালো ছিলো!
” কিন্ত এভাবে আর কতদিন পালিয়ে বেড়াবি তনু!? সায়ন নিশ্চয়ই তোর অসহায় মুখখানা দেখে মনেমনে হাসছে!!
” তাহলে কি করবো আমি!? কিভাবে বোঝাবো যে আমি এতটা দূর্বল নই!! অল্পতেই ভেঙে পড়ার মতো মেয়ে নই আমি!!!
” তোকে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তনু! সায়ন সামনে থাকলেও যেভাবেই হোক নিজেকে সামলাতে হবে।
রুশার ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ল তনুর। মুখ তুলে তাকাতেই রুশা বলল,
” আচ্ছা তনু, তুই কালকে কি পরবি!? মানে দুজনেই একই টাইপ ড্রেস পরতাম।
” আমি যাবো না!
বলেই খেতে লাগল তনু, তনিমা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, ” যাবি না কেনো!?
” এমনিই, ভাল্লাগছে না।
” বাসায় বসে থাকলে তো আরও ভাল্লাগবে না। তারচেয়ে বেড়াতে গেলে দেখবি ভাল্লাগবে।
তনু সাথে যাবেনা শুনে রুশা বেশ খুশি হয়েছে, কেউ না থাকলে সায়নের সাথে একান্তে সময় কাটাতে পারবে সে। কিন্ত মুখে সেটা প্রকাশ করলো না। রুশা মনেমনে ঠিক করল যত দ্রুত সম্ভব সায়নকে নিজের মনের কথা জানিয়ে দেবে।
তনু খেতে খেতে আড়চোখে সায়নের দিকে তাকিয়ে দেখল, সায়নের মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই! সে আপনমনে দিব্যি খাচ্ছে!! মাঝেমধ্যে রুশার সাথে বেশ হেসে হেসে কথা বলছে!! কিন্ত একটু আগেও তো রুশার কথায় টুকটাক উত্তর দেওয়া ছাড়া কিছুই বলছিলো না সায়ন!!!
আর ভাবতে পারছেনা তনু, কোনোরকমে খেয়ে উঠে সোজা ওপরে চলে গেলো। স্নেহার সাথে তার মা ঘুমোচ্ছে, পাশের ঘরে ঘুমাবে তনিমা আর রাবেয়া। তনুকে রুশার সাথে সায়নের পাশের ঘরে শুতে দেওয়া হয়েছে। সে ঘরে যেতে গেলে সায়নের ঘর পেরিয়ে যেতে হয়।
এই ব্যাপারটাই তনুকে বেশ বিরক্ত করছে, সে তার মাকে বলেছিলো,
” রুশা ছোট মামির সাথে ঘুমাক। আমি তোমার সাথে ঘুমাবো।
তনিমা কিছু বলার আগেই রাবেয়া হেসে বলল,” আরে বাসায় তো সবসময় মায়ের সাথেই থাকিস। এখানে নাহয় বোনের সাথে কদিন ঘুমা। দুই বোন মিলে একটু গল্পসল্প কর।
প্রতিত্তোরে তনু আর কিছু বলল না, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
_________________________________
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
তনু ঘরে ঢুকে দেখল রুশা মন খারাপ করে বসে আছে, গান শুনতে শুনতে তার ফোনেরও চার্জ শেষ হয়ে গেছে। বেচারির অসহায় মুখখানা দেখে একটু খারাপ লাগছে তনুর। অবশ্য একদিক দিয়ে ভালই হয়েছে, ফোন অন থাকলে রুশা ফোন নিয়েই ব্যস্ত হয়ে থাকতো। এখন দুজনেরই ফোন অফ! রুশা গাল ফুলিয়ে বলল,
” এখন বসে বসে কি করবো বল তো!? মাত্র রাত দশটা বাজে! খুব বোরিং লাগছে!!
” যখন মানুষের হাতে ফোন ছিলোনা তখন তারা কি করতো বল তো!?
” তখন তো সবাই মিলে গল্প করেই সময় পার করে দিতো।
” আমরাও আজ তাই করবো, সারারাত গল্প করবো। যতক্ষণ না ঘুম আসে।
তনুর প্রস্তাবটা রুশার কাছে তেমন ভালো লাগলো না, কিন্ত এখন গল্প করা ছাড়াও কিছু করার নেই। অগত্যা তনুর সাথে গল্পের ঝুলি নিয়ে বসল সে।
কিছুক্ষণ না যেতেই দুজনেই গল্পে মেতে উঠল, তনু তো নিজেকে দেখে রীতিমতো অবাক হচ্ছে। তার মনে এতো এতো কথা জমে ছিলো!
রুশারও একই অবস্থা, গল্পে গল্পে এই আড়াই বছরে কি কি ঘটেছে সব অনর্গল বলে চলেছে সে। মাঝেমধ্যেই দুজনে হো হো করে হেসে উঠছে, আবার কেউ জেগে যাবে সেই ভয়ে গলার স্বর নামিয়ে ফিসফিস করছে!!
একপর্যায়ে রুশার চোখের পাতায় ঘুম নেমে এলো, কিন্ত তনুর চোখে ঘুম নেই। অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। গত আড়াই বছরে একটা রাতও সে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি। ঘুমের জন্য মেডিসিন খেতে হয় তাকে।
মেডিসিনের কথা মনে পড়তেই তনুর খেয়াল হল সে তো ব্যাগ থেকে ঘুমের বড়ি নিয়ে আসেনি। তার ব্যাগ রাখা আছে মায়ের ঘরে, আর মেডিসিন না খেলে তো রাতে ঘুমই আসবেনা তার!
হারিকেনের আলোয় ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত সাড়ে বারোটা বাজে! বেড থেকে নেমে হারিকেন নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সে। সামনে তাকাতেই দেখল, একটু দূরে বারান্দার রেলিঙের ধারে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সায়ন ভাইয়া!
তনু চোখমুখ শক্ত করে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যেতে লাগল, সায়নের পাশ কাটিয়ে যেতেই কানে এলো,
” রাত বিরেতে এমন পেত্নীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিস কেন!? মানুষকে ভয় দেখিয়ে মারার ধান্দা!!
তনু কোনো উত্তর না দিয়ে রেগেমেগে চলে গেলো, মায়ের ঘরে ঢুকে ব্যাগ থেকে একটা ঘুমের বড়ি নিয়ে পানি খুজতে লাগল। কিন্ত এই ঘরে কোনো পানির বোতল নেই! মনে পড়ল ওদের ঘরেই তো পানির জগ আছে, দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো তনু।
বারান্দায় আসতেই দেখল সায়ন এখনও দাড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি আকাশে ঝুলে থাকা রূপোলী চাঁদটার দিকে আবদ্ধ। তনু সেদিকে না তাকিয়েই ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। সায়নের কাছাকাছি আসতেই শুনতে পেলো,
” রুশা কি ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি রে!?
তনু আর নিজেকে সামলাতে পারলো না, রুশার কথা জিজ্ঞেস করাতে কেনো জানি ভিষণ রাগ হচ্ছে তার। তনু দাতে দাত পিষে বলল,
” জানিনা, আপনার দরকার হলে গিয়ে দেখে আসুন। আপনার রুশা ঘুমিয়েছে কি না!!
” তুই কি অন্ধ নাকি!? তোর সাথে ঘুমাচ্ছে অথচ তুই জানিস না রুশা ঘুমাচ্ছে কি না!!
তনু কিছু বলার আগেই সায়ন আবার বলল, ” ওহ তুই তো কানা, যা তোর গোলগোল চশমাটা পরে দ্যাখ। রুশা ঘুমিয়েছে কি না!!
তনুর মেজাজ এবার আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মতো ঠিকরে পড়ল। সায়নের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
” হ্যাঁ আমি চশমা পরি, কিন্ত চশমা ছাড়াও আমি সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পাই। কিন্ত আপনি তো চশমা পরলেও কিচ্ছু দেখতে পাবেন না। কিচ্ছু বুঝতে পারবেন না।
বলেই চলে যেতে গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল, ” আর আপনার রুশামনি ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। যান তাকে কোলে তুলে নিজের ঘরে নিয়ে যান।
তনুর বলা শেষ হতে না হতেই এক হাত দিয়ে তনুর হাতের কবজি চেপে ধরল সায়ন। আরেক হাত দিয়ে তনুর গাল টিপে ধরে গলায় জোরে কামড় বসিয়ে দিল!
ব্যাথায় চিৎকার করে উঠল তনু। কিন্ত গাল টিপে ধরে রাখার কারণে সে শব্দ বেশি জোরালো হতে পারলো না। রাগে ক্ষোভে চোখ বুজে হারিকেনের আংটা চেপে ধরল সে। অন্য হাত থেকে ঘুমের বড়িটা মেঝেতে পড়ে গেলো। তনুর গলা ছেড়ে সায়ন তনুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
” নেক্সট টাইম এমন উল্টাপাল্টা কিছু বলার আগে এই ব্যাথাটা মনে রাখিস। নাহলে এর থেকেও ভয়ানক কিছু করে ফেলবো।
বলেই তনুকে ছেড়ে রেলিঙের ধারে হেলান দিয়ে দাড়ালো সায়ন। তনু আর একমুহূর্ত সেখানে না দাড়িয়ে হারিকেন হাতে ছুটে গিয়ে ঘরের দরজা লক করে দিল। আসার আগে সায়নের দিকে একবারও ফিরে তাকায়নি সে। তাকালে হয়তো দেখতে পেতো, তীব্র রাগে ক্ষোভে সায়নের কপালের শিরা গুলো ফুলে উঠেছে!!
তনু দরজা লক করে বিছানায় শুয়ে পড়ল, সে জানে আজ আর তার ঘুম আসবে না। ঘুমের বড়ি খেলেও আসবে না। আজ তার চোখে আবারও নোনাজল জমা হবে। তারপর অঝোরে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়বে বালিশে!
তনুর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সায়ন। নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছে তার, নিজের ভালবাসাকে চাইলেও নিজের করে নিতে পারছে না সে! অসহ্য যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত কাতরাচ্ছে !! কবে তার এই কষ্টের অবসান ঘটবে!!? নাকি সারাজীবনই এই কষ্ট বয়ে বেড়াতে হবে তাকে!!!?
____________________________________
|
|
|
|
|
[চলবে]