হয়তো তোরই জন্য পর্ব ১৪+১৫

#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_১৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“আমাকে মাফ করে দে জায়ান। শেষ বারের মতো মাফ করে দে।”

—-“তুই ভাবলি কি করে, তোকে এতো সহজে মাফ করে দেবো? সাত বছরের হিসেব চুকিয়ে এরপর তোকে ছাড়ব।”

কথা গুলো বলেই জায়ান শাফিনকে টানতে টানতে এক্টা চেয়ারে বসিয়ে দিলো। মুহূর্তেই জায়ান শাফিনকে দঁড়ি দিয়ে চেয়ারের সাথে বেঁধে দিলো। ছোট্ট এক্টা টুল টেনে এনে জায়ান শাফিনের মুখোমুখি বসে কড়া কন্ঠে বলল,,,,,,,,,

—-“তোর এই জঘন্য প্ল্যানের মাস্টার মাইন্ড কে? ফটাফট নাম বল! আমার হাতে বেশি সময় নেই!”

শাফিন শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“আমি একাই এই প্ল্যানের মাস্টার মাইন্ড। আমার আগে পিছে কেউ নেই।”

শাফিনের অস্থির চোখ আর কাঁপা কাঁপা কন্ঠ শুনে জায়ান ঠিক বুঝে গেছে শাফিন কাউকে লুকানোর চেষ্টা করছে। সে তার আসল বসের নাম বলতে ভীষণ ভয় পাচ্ছে। হয়তো কোনো দুর্বলতা আছে। নিচে পড়ে থাকা এক্টা কাঠের গুঁড়ি নিয়ে জায়ান শাফিনের হাত পায়ে এলোপাথারী আঘাত করছে আর চিৎকার দিয়ে বলছে,,,,,,,

—-“তাড়াতাড়ি বল তোর সেল্টার দাতার নাম। না হয় এই কাঠের গুড়ি দিয়ে তোকে মারতে মারতে মেরেই ফেলব।”

শাফিন মুখ চেঁপে সব মার সহ্য করে নিচ্ছে। এরপর ও পেট থেকে কোনো কথা বের করছে না। জায়ান শাফিনকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলেছে। হাত, পা কেটে ক্ষত জায়গা গুলো থেকে টপটপ রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। জায়ান ঠিক বুঝতে পারছে শাফিন এতো সহজে মুখ খুলবে না। তাই সে মাথায় এক্টা দুর্দান্ত শয়তানী বুদ্ধি এঁটে বাঁকা হাসি দিয়ে শাফিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“তোকে তো এক্টা বিগ নিউজ দিতে ভুলেই গেছি। তোর ওয়াইফ আপাতত আমার হেফাজতে আছে। এখন তোর উপর ডিপেন্ড করছে তোর ওয়াইফের বাঁচা, মরণ।”

তমা কিছুটা অবাক হয়ে জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ানের কথার আগা মাথা সে খুঁজে পাচ্ছে না। শাফিন চোখে মুখে অসংখ্য ভয় নিয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“প্লিপ্লিপ্লিজ আআআমার ওয়াইফকে কিছু করিস না জায়ান। শ্যামলী এমনিতেই খুব সিক। প্লিজ ছেড়ে দে ওকে।”

হাতে থাকা কাঠের গুঁড়িটা ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে জায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে শাফিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

—-“ছেড়ে দিবো তোর শ্যামলীকে। তবে এক্টা শর্তে।”

—-“আআআমি তোর শর্তে রাজি আছি। আমি বলছি আমার সাথে কে জড়িত!”

জায়ান ডেবিল স্মাইল দিয়ে বলল,,,,,,

—-“ফটাফট বলে ফেল। না হয় আমার এক্টা কলই তোর ওয়াইফের ঐ পাড়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।”

শাফিন চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,,,

—-“তাতাতাহাফ ভাইয়া আমার সাথে জড়িত।”

কথাটা শোনার সাথে সাথেই জায়ানের হাত থেকে লাঠিটা গড়িয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। তমা চোখ দুটো বড় বড় করে মুখে হাত দিয়ে শাফিনের দিকে তাকিয়ে আছে। তমা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না তাহাফ এসবের সাথে জড়িত আছে। চোখে এক গাঁধা জল নিয়ে তমা শাফিনের কাছে তেড়ে গিয়ে শাফিনের জ্যাকেটের কলার ধরে বলল,,,,,,,

—-“তুই মিথ্যে বলছিস। আমার তাহাফ ভাইয়া কখনো এমন কাজ করতে পারে না। তাহাফ ভাইয়া আমাকে ছোট বোনের মতো স্নেহ করে। তুই নিজেকে বাঁচানোর জন্য এসব বলছিস। আমি খুব ভালো করে বুঝতে পারছি।”

তমা এবার শাফিনের শার্টের কলারটা ছেড়ে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“জায়ান ভাইয়া প্লিজ….. তুমি একদম এই জানোয়ারটার কথা বিশ্বাস করো না। সে ইচ্ছে করে আমার তাহাফ ভাইয়াকে ফাসাচ্ছে। আমার তাহাফ ভাইয়া কখনো আমার ক্ষতি করার কথা মাথায়ই আনতে পারে না। আমি খুব ভালো করে আমার তাহাফ ভাইয়াকে চিনি। এই শাফিন ইচ্ছে করে আমার তাহাফ ভাইয়ার উপর দোষ চাঁপিয়ে দিচ্ছে।”

জায়ান রক্তচক্ষু নিয়ে শাফিনের শার্টের কলার চেঁপে ধরে বলল,,,,,,,

—-“বোকা বানাচ্ছিস আমাদের? তুই কি ভেবছিস? তুই যা বলবি আমরা তাই বিশ্বাস করে নিবো?”

—-“আমি সত্যি বলছি জায়ান। প্রায় চার বছর আগে তাহাফ ভাইয়া আমার সাথে যোগাযোগ করে। এরপর থেকে আমরা দুজনেই পার্টনারশিপে মেয়ে পাচার চক্রের সাথে জড়িত হই। তমাকে ভয় দেখানোর প্ল্যানটা তাহাফ ভাইয়া ই আমাকে দিয়েছে। টানা তিন বছর তাহাফ ভাইয়া তমাকে ভয়ে দেখিয়েছিলো। এরপর থেকে আমি কনটিনিউ করি। কারন, তাহাফ ভাইয়া তমাকে খুবব ভালোবাসে। সম্পর্কে তাহাফ ভাইয়া আর তমা কাজিন বলে তাহাফ ভাইয়ার ফ্যামিলি এই সম্পর্কটা মেনে নেয় নি। তাহাফ ভাইয়া যা ও অনেক কষ্টে উনার ফ্যামিলিকে রাজি করিয়েছিলো এর আগেই তুই তমাকে রেজিস্ট্রি ম্যারিজ করে নিলি। এরপর থেকেই তাহাফ ভাইয়ার মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিলো। তমাকে না পাওয়ার ক্রোধে তাহাফ ভাইয়া তোকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর তমাকে তিলে তিলে মারার পরিকল্পনা করে। তাই তাহাফ ভাইয়া পাকাপোক্ত এক্টা প্ল্যান করে তমাকে ভয় দেখানো শুরু করে। তাহাফ ভাইয়ার সাথে আমি ও ছিলাম। কারন, আমার মধ্যে ও প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিলো। আমরা দুজন মিলেই এই প্ল্যানে শামিল ছিলাম। আমি যা বলছি সব সত্যি বলছি জায়ান। প্লিজ আমার কথা বিশ্বাস কর। আমার শ্যামলীকে ছেড়ে দে।”

তমা ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল। চোখ দিয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে তমার। সে দু দুটো ব্যাপারে দারুন শকড। প্রথমত, তাহাফকে নিয়ে। দ্বিতীয়ত, জায়ানের সাথে ওর রেজিস্ট্রি ম্যারিজ নিয়ে। জীবনের সবচেয়ে নির্মম সত্য গুলো সে শাফিনের মুখ থেকে শুনল। তমা অশ্রুসিক্ত চোখে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান মাথা নিচু করে রেখেছে। জায়ান বেশ বুঝতে পেরেছে তমা জায়ানের প্রতি খুব ক্ষুব্ধ। সাত বছরের লুকিয়ে রাখা সত্যটা তমা আজ জেনে গেছে। জায়ান অপরাধীর মতো মাথাটা তুলে তমার দিকে তাকিয়ে যেই না কিছু বলতে যাবে এর আগেই সুইটি ওর পুলিশ বাহিনী নিয়ে হাজির হয়ে গেলো। জায়ান টুল থেকে উঠে সুইটির মুখোমুখি দাঁড়ালো। সুইটি মৃদ্যু হেসে জায়ানের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,,,

—-“গুড জব জায়ান। তুই চিন্তা ও করতে পারবি না তুই অজান্তে আমাদের কতো বড় হেল্প করলি। আমি সারাজীবন তোর কাছে ঋণি থাকব।”

জায়ান মলিন হেসে সুইটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,

—-“বড় কার্লপিট এখনো মুক্ত হয়ে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। ওরা তো জাস্ট চ্যালা ফ্যালা। যাই হোক এদের সবগুলোকে এ্যারেস্ট করে নিয়ে যা। মেয়ে গুলোকে ওরা গ্যারেজের পাশের রুমটাতে বন্দী করে রেখেছে। প্লিজ ওদেরকে আগে ছাড়িয়ে আন।”

সুইটি আর দেরি না করে গ্যারেজের পাশের রুমটা খুলে সব গুলো মেয়েকে উদ্ধার করল। সাথে সাথে সুইটি মেয়ে গুলোর ঠিকানা অনুযায়ী ওদের সেইফলি বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সব গুলো মেয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে মৃদ্যু হেসে চলে গেলো। বিনিময়ে জায়ান ও মুচকি হাসল। এদের মধ্যে জেনিয়া ও আছে। রনক জেনিয়াকে দেখা মাএই জেনিয়ার কাছে ছুটে গেলো। জেনিয়া হেচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে রনক কে জড়িয়ে ধরল। তমা এখনো মাটিতেই বসে আছে। জায়ান তমার দিকে একবার তাকিয়ে সুইটির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,

—-“আসল কার্লপ্রিটকে আমি দুই দিনের মাঝেই তোর হাতে তুলে দিবো। ঐ কার্লপ্রিটের ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণ জোগাড় করতে হবে আমার। হাতে নাতে ধরতে হবে তাকে। আশা করছি তুই বুঝতে পারছিস আমি কি বলতে চাইছি?”

সুইটি মুচকি হেসে বলল,,,,,,,

—-“বুঝতে পেরেছি। তোর যা ভালো মনে হয় তুই তাই কর। আমার কোনো অভিযোগ নেই। কজ আমি তোকে যথেষ্ট বিশ্বাস করি।”

জায়ান কিছুটা আশ্বস্ত হয়ে চেয়ারে কাত হয়ে পড়ে থাকা শাফিনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“তোর বস এখন কোথায় আছে?”

—-“ঢাঢাঢাকা। এক্টু আগেই বের হয়েছে। ফিরতে ফিরতে কাল সকাল হবে। যাওয়ার আগে বলে গেছে টানা এক সপ্তাহ যেনো উনার সাথে কোনো রকম যোগাযোগ করার চেষ্টা না করি।”

জায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে বলল,,,,,

—“তোর বস আমাদের সুবিধেই করে দিলো বল! এবার জমবে মজা। শোন….তুই যে মুখ খুলেছিস এই ব্যাপারে তাহাফ যেনো কিছু না জানে। এখানে ঘটা কোনো কথাই যেনো তাহাফের কান অব্দি না পৌঁছায়। গট ইট?”

শাফিন মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। জায়ান বাঁকা হেসে বলল,,,,,,

—-“তোর ওয়াইফ বাড়িতে সুস্থ অবস্থায় আছে। তোর পেট থেকে কথা বের করার জন্য মিথ্যে বলতে হয়েছে।”

শাফিন মলিন হেসে জায়ানের দিকে তাকালো। জায়ান শাফিনের থেকে চোখ সরিয়ে সুইটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“সব গুলোকে বেঁধে ধরে নিয়ে যা। লকাপে পুড়ে সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে এরপর ওদের ছাড়বি।”

সুইটি আর দেরি না করে শাফিন থেকে শুরু করে মাটিতে পড়ে থাকা সব কার্লপ্রিটকে তুলে নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো। গাড়ি ফুল স্পিডে বাড়িয়ে সুইটি ছুটে চলল পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে।

জেনিয়া রনকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে জায়ানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মৃদ্যু হেসে বলল,,,,,,

—-“থ্যাংকস জায়ান। আমাকে এভাবে বাঁচানোর জন্য। আমি ভাবতে পারি নি তুমি আমার জন্য এতোটা করবে। নিজেকে খুব লাকী মনে হচ্ছে। আই লাভ ইউ লট জায়ান।”

তমা নিচে বসেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জেনিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে জেনিয়াকে গুলি করে দিতে। তমার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে জায়ান মলিন হেসে তমাকে বসা থেকে দাঁড় করিয়ে জেনিয়ার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বলল,,,,,,

—-“সি ইজ তমা। মাই ওয়াইফ। আই লাভ হিম লট।”

কথাগুলো শোনার সাথে সাথেই জেনিয়ার চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ল। রনক জেনিয়ার কাঁধে হাত রেখে মলিন হেসে বলল,,,,,,,

—-“যা হওয়ার হয়ে গেছে জেনিয়া। ভালোবাসার বিনিময়ে যে ভালোবাসা পেতে হবে এমন কোনো বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। ভালোবাসার আরেক নাম যাতনা। যে যাতনা সহ্য করতে পারবে সেই আসল প্রেমিক। চল আমরা বাড়ি যাই। দেখিস তুই জায়ানের মতো ঠিক কাউকে পেয়ে যাবি!”

জেনিয়া ওর কাঁধ থেকে রনকের হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে দৌঁড়ে গ্যারেজ থেকে বের হয়ে রনকের গাড়িতে বসে পড়ল। রনক ও আর দেরি না করে জায়ানের থেকে বিদায় নিয়ে দৌঁড়ে সোজা গাড়িতে উঠে জেনিয়াকে জড়িয়ে ধরে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো।

তমা কিছুটা রাগ করে জায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে বাংলো থেকে বের হয়ে সোজা মেইন গেইটের বাইরে দাঁড়ালো। জায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে মিনমিন করে বলল,,,,,

—-“আমার বউটা খুব রাগ করেছে। রাগ তো করার ই কথা আমরা যে জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যিটা ওর থেকে লুকিয়েছি! চিন্তা করিস না তমু। আমি ঠিক তোর রাগ ভাঙ্গিয়ে ছাড়ব। তোর মনে আমার জন্য প্রেমের ঘন্টা বাজবেই। একদিন তুই ও আমার দিকে প্রেম নজরে তাকাবি। যে নজর আমি চাইলে ও উপেক্ষা করতে পারব না। তবে এর আগে তাহাফের এক্টা ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবারের সবার সামনে তাহাফের মুখোশটা টেনে হেছড়ে খুলে দিতে হবে। আমি জানি তমু এখন তাহাফ ভাইয়াকে নিয়ে খুব ডিপ্রেশানে আছে। তমুকে এখন সত্যিটা চেপে যেতে বলব। এই মুহূর্তে যেনো সে এই ব্যাপারটা কারো কাছে ফাঁস না করে। কয়েকটা দিন তাহাফের সাথে এক্টু খেলে নেই। পরে না হয় এক্টা ব্যবস্থা করা যাবে।”

জায়ান কথাগুলো বলেই ওর মাথা থেকে উড়নাটা খুলে ব্যাথায় নাক, মুখ কুচকে দৌঁড়ে গ্যারেজ থেকে বের হয়ে তমার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে পড়ল। তমা কঠিন দৃষ্টিতে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান এক্টা ভাব নিয়ে অন্য দিকে মুখটা ফিরিয়ে তমার মুখের সামনে উড়নাটা ধরে বলল,,,,,,,

—-“উড়নাটা তাড়াতাড়ি গলায় জড়িয়ে নে। কখন কি থেকে কি করে বসি বলা যায় না। তোর বুকের কালো তিলটা আমাকে খুব টানছে।”

তমা কপাল কুচকে তাড়াতাড়ি জায়ানের হাত থেকে উড়নাটা ছিনিয়ে নিয়ে গলায় জড়িয়ে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

—-“বেশরম ছেলে। লাজ লজ্জা বলতে কিছুই নেই। মুখে যা আসে তাই বলে ফেলে। জাস্ট শেইসলেস!”

জায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে তমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,,,,,,,

—-“তুই আমার বউ। বউয়ের সাথে কোনো লাজ লজ্জা রাখতে নেই। বউয়ের সাথে মন খুলে কথা বলতে হয়। তোর সেটা বুঝা উচিত।”

মুহূর্তেই তমা চোয়াল শক্ত করে জায়ানের শার্টের কলার চেঁপে ধরে বলল,,,,,,

—-“আমি তোমাকে জামাই হিসেবে মানি না। ঐ রেজিস্ট্রি ম্যারেজ আমি মানি না। আমার মতের বিরুদ্ধে আমাকে বিয়ে করা হয়েছে। তুমি বরং রেজিস্ট্রি পেপারটা দিয়ে রোজ সকালে শরবত গুলে খেয়ো। কারণ, এর তো কোনো ভিওিই নেই। আর শোনো….. আমি এখন একা একা বাড়ি যাবো। খবরদার তুমি আমার পিছু পিছু আসবে না। না হয় খুব খারাপ হয়ে যাবে।”

কথা গুলো বলেই তমা জায়ানের শার্টের কলার ছেড়ে ঢঙ্গী ভাব নিয়ে হনহনিয়ে সামনে হাঁটা শুরু করল। জায়ান হু হা করে হেসে তমাকে পিছন থেকে উদ্দেশ্য করে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,,

—-“ম্যাডাম আপনি ভুল রাস্তায় যাচ্ছেন। আপনাদের বাড়ির রাস্তা বিপরীত দিকে। প্লিজ পিছু ঘুরে ঠিক রাস্তায় হাঁটুন।”

তমা হুট করে হাঁটা থামিয়ে জিভ কেটে বলল,,,,,,,

—-“ধ্যাত আমি ও না এক্টা বলদ। জন্মের পর থেকে কুমিল্লায় আছি, অথচ এখানকার রাস্তা ঘাট ও ভালো করে চিনলাম না। আমার বলদ গিরির জন্য শয়তান জায়ানটা এখন আমার খিল্লি উড়াবে। ধ্যাওেরিকা ভাল্লাগে না।”

কথা গুলো বলেই তমা পিছু ঘুরে জায়ানের দিকে তাকিয়ে মুখটা বাঁকা করে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হেলে দুলে সামনে হাঁটা ধরল।

জায়ান তমার ছায়ার পিছু পিছু হাঁটছে আর বাঁকা হেসে বলছে,,,,,,,

—-“বেশি ভাব নিস না তমু। দেখা যাবে এমন হেলে দুলে হাঁটতে হাঁটতে ঠাস করে মাটিতে চিৎ হয়ে পড়বি। অথবা সামনে কাউকে সাদা কাপড় পড়ে ঘুরে বেড়াতে দেখবি। বলা যায় না তখন হয়তো তুই আমার ঘাড়ে চেপে বসবি।”

জায়ানের কথা শুনে তমা শুকনো ঢোক গিলে হাঁটার গতি খানিক কমিয়ে ভয়ে কাঁপছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—–“মাগো মা জায়ান ভাইয়া কি ভূত, প্রেতের ইঙ্গিত দিলো! সাদা কাপড় পড়ে তো ভূত রাই ঘুড়ে বেড়ায়। আল্লাহ্ গো আমাকে বাঁচাও। রাত বিরাতে জংলী ভূতের মুখ দর্শন করতে চাই না। আপাতত ভাবটা সাইডে রেখে শয়তান জায়ানটার হাত ধরি। এতেই আমার মঙ্গল!”

তমার মৌনতা দেখে জায়ান বেশ বুঝতে পেরেছে তমা খুব ভয় পেয়েছে। তমার ভয় কাটানোর জন্য জায়ান চুলটা সেট করতে করতে মৃদ্যু আওয়াজ দিয়ে গান ধরল,,,,,,

—-“চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে?”
#হয়তো_তোরই_জন্য
#পার্ট_১৫
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“চুমকি চলেছে একা পথে, সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে?”

জায়ান আর গাইতে পারল না এর আগেই তমা তেড়ে এসে জায়ানের মুখ চেঁপে ধরে বলল,,,,,,,

—-“ষাঁড়ের মতো চিল্লাচ্ছ কেনো? তোমার চিল্লাচিল্লির তাড়নায় তো ভূত প্রেতরা হুমড়ি খেয়ে সামনে পড়বে। মুখটা বন্ধ করে চুপচাপ সামনে হাঁটো। আমার হাত ধরে।”

জায়ান তমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তমা কিছুটা থতমত খেয়ে জায়ানের মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে নিয়ে সামনে হাঁটা ধরল। জায়ান বাঁকা হেসে তমার পিছুপিছু হাঁটছে আর মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলছে,,,,,

—–“হাত ধরার অনুমতি দিয়ে আবার ফিরিয়ে ও নিলি? আমি কি জোর করে হাতটা ছিনিয়ে নিবো?”

তমা আগ পাছ না ভেবে দৌঁড়ে এসে জায়ানের হাত ধরে দ্রুত গতিতে সামনের দিকে হেঁটে চলল। জায়ান বার বার তমার দিকে তাকাচ্ছে আর মনে মনে হাসিতে ফেটে যাচ্ছে। তমা মুখটা কাচুমাচু করে রেখেছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে বড্ড ভয়ে পাচ্ছে। জায়ান হুট করে তমাকে কোলে তুলে নিলো। তমা চোখ বড় বড় করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান এক গাল হেসে তমার নাকের সাথে নাক ঘঁষে বলল,,,,,,,

—-“ভালোবাসি আমার রাগী বউটাকে। তুই যতোই রাগ করিস না কেনো তুই “শুধুই আমার।” সারাজীবন এভাবেই তোর পাশে থাকব। ভালোবেসে তোকে বুকে আগলে রাখব। জীবনের শেষ নিশ্বাসটা তোর বুকে মাথা রেখেই ছাড়ব। মৃত্যু ছাড়া আর কোনো দ্বিতীয় শক্তি আমার থেকে তোকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না।”

তমা মুগ্ধ নয়নে জায়ানের কথা গুলো শুনছে। এই কথা গুলো সে আকাশের মুখ থেকে শুনতে চাইত। বাট আপসোস, আকাশ কখনো ভালোবাসার এমন মিষ্টি স্বীকারোক্তি দেয় নি! এসব ভাবতে ভাবতেই তমার মাথায় এক্টা প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগল। তমা নিজের সাথে না পেরে খানিক কৌতুহল নিয়ে জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“আচ্ছা….তুমি কি করে জানলে শাফিনের বউ আছে?”

জায়ান শয়তানী হাসি দিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আমরা যখন শাফিনদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, তখন ওদের দুতলার ব্যালকনিতে এক্টা সালোয়ার স্যুট ঝুলছিলো। হয়তো বারান্দার গ্রীলে রোদে শুকাতে দিয়েছিলো। আমার জানা মতে, শাফিনের কোন ভাই বোন নেই। সে একাই। ওর আম্মু নিশ্চয়ই এই বয়সে এসে সালোয়ার স্যুট পড়বে না। তাই আমি গেইস করে বলেছিলাম ওর বউকে আটকে রেখেছি!”

তমা সাথে সাথে জায়ানকে এক্টা মুচকি দিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বলল,,,,,,

—-“মানতে হবে শয়তানটার বুদ্ধি আছে। জায়গায় জায়গায় কেমন বুদ্ধির কেড়ামতি দেখিয়ে যাচ্ছে।”

এসবের মাঝেই হুট করেই তমার জায়ানের মাথার ক্ষতটার কথা মনে পড়ল। তমা তাড়াতাড়ি করে জায়ানের মাথাটা নিচু করে কাটা জায়গাটা খুব মনযোগ দিয়ে দেখতে লাগল। জায়ান হাঁটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তমা কিছুটা পেরেশান হয়ে জায়ানকে ঝাঁকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“এই….তোমার মাথায় কি ব্যাথা করছে না?”

জায়ান আবার হাঁটা কনটিনিউ করে মলিন হেসে বলল,,,,,,,

—-“ব্যাথা তো করছেই। তবে সামান্য। অতো বেশি না!”

—-“একদম মিথ্যে বলবে না। আমি জানি তোমার খুবব ব্যাথা লাগছে। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে হাঁটো। মেইন রোডে উঠেই আমরা ক্যাব বুক করে আশেপাশের কোনো হসপিটালে যাবো।”

জায়ান বাঁকা হেসে বলল,,,,,,

—-“এক্টা শর্তে আমি তোর কথা রাখব। বল তুই রাজি?”

তমা আগ পাছ না ভেবেই বলে ফেলল,,,,,

—-“হুম রাজি। বলো কি শর্ত?”

—-“আজ রাতটা আমি তোর সাথে থাকতে চাই। কথা দিচ্ছি উল্টো পাল্টা কিছু করব না। তুই আমাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারিস।”

তমা মুখটা কালো করে বলল,,,,,,,,

—-“দুনিয়ায় আর কোনো শর্ত পেলে না? বেছে বেছে এই শর্তটাই দিতে হলো?”

—-“বারে বউয়ের কাছে তো এমন শর্ত ই রাখব। কারণ, বউয়ের সাথে আমার জায়েজ সম্পর্ক!”

তমা রাগ দেখিয়ে বলল,,,,,,

—-“বউ মাই ফুট!”

জায়ান বাঁকা হেসে বলল,,,,,

—-“বউ মাই লাভ♥”

তমা আর কথা না বাড়িয়ে মুখটা অন্য পাশে ফিরিয়ে নিলো। জায়ান মৃদ্যু হেসে সামনের দিকে অগ্রসর হলো। কিছু দূর হাঁটার পর ওরা মেইন রাস্তায় পৌঁছে গেলো। সাথে সাথে পে পো করে এক্টা খালি ক্যাব হর্ণ বাজিয়ে ধেয়ে আসছে সামনের দিকে। জায়ান হাত নাড়িয়ে ক্যাবটাকে থামতে বলল। ক্যাবটা হুট করো থেমে গেলো। জায়ান তমাকে নিয়ে ক্যাবটাতে উঠে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“ভাই আশেপাশে কি কোনো হসপিটাল আছে?”

—-“হুম ভাই। এক্টু সামনেই এক্টা হসপিটাল আছে।”

—-“তাহলে ঐ হসপিটালটার সামনেই গাড়িটা পার্ক করবেন ওকে?”

—-“ওকে বস। ডোন্ট ওরি।”

ড্রাইভার নিজের মতো করে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। জায়ানের মাথাটা সাংঘাতিক ঝিমঝিম করছে। ব্যাথা এতক্ষনে জো দিয়েছে। জায়ানের নাক মুখের অবস্থা দেখে তমা বেশ বুঝতে পারছে জায়ান মাথায় ব্যাথা পাচ্ছে। তমা কিছুটা চিন্তিত হয়ে জায়ানকে ওর বুকের মাঝে চেঁপে ধরে জায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। জায়ান চোখ বন্ধ করে ব্যাথায় নাক, মুখ কুচকে রেখেছে।

এক্টু পর ক্যাব এসে থেমে গেলো হসপিটালের সামনে। তমা প্রথমে গাড়ি থেকে নেমে আস্তে করে জায়ানকে গাড়ি থেকে নামালো। গাড়ি থেকে নেমেই তমা ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“ভাইয়া প্লিজ আপনি এখানে এক্টু অপেক্ষা করুন। আমরা এক্টু হসপিটাল থেকে আসছি। আপনার ক্যাব করেই আমরা বাড়ি ফিরব।”

—-“ওকে ম্যাম নো প্রবলেম। আপনারা আসুন। আমি অপেক্ষা করছি!”

তমা মুচকি হেসে জায়ানকে নিয়ে সাবধানে রাস্তা পাড় হয়ে সোজা হসপিটালে ঢুকে গেলো। হসপিটালে ঢুকেই তমা সামনে থাকা রিসিপশানে গিয়ে এক্টা রিসিট নিয়ে একজন বিজ্ঞ ডক্টরের চেম্বারে ঢুকে পড়ল। ডক্টর জায়ানের ক্ষত জায়গাটা দেখে তমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“ম্যাম আপনি এক্টু বাইরে যান। সেলাই করতে হবে। আপনি হয়তো এসব চোখের সামনে দেখতে পারবেন না।”

তমা ফটাফট বসা থেকে উঠে চেম্বারের বাইরে চলে গেলো। প্রায় পনেরো মিনিট পর ডক্টর তমাকে ডেকে বলল চেম্বারে ঢুকতে। তমা হনহনিয়ে চেম্বারে ঢুকে পড়ল। জায়ানের মাথাটা ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়েছে। ডক্টর এক্টা প্রেসক্রিপশান তমার হাতে ধরিয়ে বলল,,,,,,

—-“নিয়মিত ঔষধ খাওয়াবেন। মাথার চোট টা অনেক গভীর। তাই ভালো করে কেয়ার নিতে হবে। আপাতত মাথাটা পানিতে ভিজাবেন না। না হয় ক্ষত শুকাবে না উল্টো ইনফেকশান হবে। মাথার পেছনে চারটে সেলাই করা হয়েছে। আশা করি বুঝতেই পারছেন ক্ষতটা কতো গভীর?”

তমা কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলল,,,,,

—-“ওকে ডক্টর। আই উয়িল টেইক গুড কেয়ার অফ হিম।”

ডক্টর বিনিময়ে মুচকি হাসল। তমা আর দেরি না করে প্রেসক্রিপশান টা হাতে নিয়ে জায়ানকে ওর হাতের বন্ধনীতে আবদ্ধ করে চেম্বার থেকে বেড়িয়ে সোজা ফার্মেসিতে চলে গেলো। ঐখান থেকে প্রেসক্রিপশান অনুযায়ী মেডিসিন কিনে তমা জায়ানের ওয়ালেট থেকে টাকা নিয়ে বিল চুকিয়ে সোজা জায়ানকে নিয়ে ক্যাবে উঠে গেলো। জায়ান মৃদ্যু হেসে তমার দিকে তাকিয়ে আছে। তমার কেয়ারনেস দেখে জায়ান মনে মনে খুব খুশি। জায়ান বুঝতে পারছে তমা আস্তে আস্তে জায়ানে সাথে গেঁথে যাচ্ছে। তমা হয়তো চাইলে ও এই গিট্টু খুলতে পারবে না।

ক্যাবে বসেই তমা ড্রাইভারকে বলে দিলো গাড়ি ছাড়তে। তমার নির্দেশ অনুযায়ী ড্রাইভার গাড়ি ছেড়ে দিলো। জায়ান তমার বুকে মাথা রেখে তমাকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। তমা জায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে জায়ানের কানে ফিসফিস করে বলল,,,,,,,

—-“শুনেছ তো ডক্টর কি বলেছে? বাড়িতে গিয়ে খুব ভালোভাবে নিজের যত্ন নিবে। ঠিকমতো নিয়ম করে ঔষধ খাবে। খাওয়া দাওয়া ও ঠিক ভাবে করতে হবে।”

—-“বউ থাকতে আমি এসব করতে যাবো কেনো? তুই আমার খেয়াল রাখবি!

—-“পারব না আমি এসব করতে। কজ আমি তোমাকে বর হিসেবে মানি না।”

—“তুই মানবি না তোর ঘাড় মানবে। জোর করে মানিয়ে ছাড়ব।”

—-“বয়ে গেছে আমার!”

—-“আগে বাড়িতে পৌঁছে নেই। এরপর বুঝাবো কার কতোটা বয়ে গেছে।”

তমা ভেংচি কেটে অন্য পাশে ফিরে গেলো। জায়ান চোখ বন্ধ করে আরো গভীরভাবে তমার বুকে নিজের ঠাঁই করে নিলো।

প্রায় ঘন্টা খানিক পর ক্যাব এসে পৌঁছে গেলো তমার বাড়ির সামনে। তমা ক্যাব থেকে নেমে জায়ানকে খুব সাবধানে ক্যাব থেকে নামিয়ে ড্রাইভারের ভাড়া পরিশোধ করে দিলো। দুতলার বারান্দা থেকে জায়ান আর তমাকে দেখা মাএই তমাল হম্বিতম্বি হয়ে নিচে নেমে এলো। জায়ানকে ঐ অবস্থায় দেখে তমাল দৌঁড়ে গিয়ে জায়ানকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,

—-“আর ইউ ওকে জায়ান? তোর মাথায় ব্যান্ডেজ কেনো?”

—-“হালকা চোট লেগেছে তেমন কিছু না।”

—-“কোথায় গিয়েছিলি তোরা? টাইম দেখেছিস? রাত বারোটা ওভার হয়ে গেছে। ফিরতে এতো রাত হলো কেনো? তাছাড়া মাথায় চোট লাগল কি করে?”

তমা মুখটা হা করে যেই না তমালকে পুরো ঘটনা বলতে যাবে এর আগেই জায়ান তমার হাতে চিমটি কেটে তমাকে থামিয়ে দিলো। তমা নাক, মুখ কুঁচকে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান তমার দৃষ্টি উপেক্ষা করে তমালকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“আরে রাস্তা পাড় হতে গিয়ে ছোট্ট এক্টা এক্সিডেন্ট হয়। তাই মাথায় হালকা চোট পেয়েছি। আমরা আশে পাশেই ছিলাম। শাফিনকে খুঁজতে গিয়েছিলাম বাট কোথাও খুঁজে পেলাম না।”

তমা বুঝতে পেরেছে জায়ান এখন সত্যিটা বলতে চাইছে না। তাই ব্যাপারটা টোটালি ইগনোর করছে। তমা আর কথা না বাড়িয়ে সদর দরজার দিকে পা বাড়াল। তমাল ও জায়ানের হাত ধরে আস্তে ধীরে হেঁটে বাড়ির ড্রইং রুমে ঢুকে গেলো। ড্রইং রুমে ঢুকার সাথে সাথেই তমার আম্মু আর আব্বু প্রশ্নে প্রশ্নে তমা আর জায়ানকে জর্জরিত করে ফেলছে। প্রশ্নের উপর প্রশ্ন ছুড়ছে। জায়ান আর তমা বেশ বিরক্তি নিয়ে মাথাটা নিঁচু করে রেখেছে। তমাল ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরে ওর আম্মু আর আব্বুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“কি শুরু করলে তোমরা বলো তো? আগে তো ওদের খাইয়ে দাইয়ে রেস্ট নিতে দিবে। এরপর না হয় প্রশ্ন করবে। তা না করে তোমরা উল্টে প্রশ্নের ঝুড়ি নিয়ে বসেছ।”

তমার আম্মু জিভ কেটে জায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,,,,,,,

—-“যাও জামাই রাজা ফ্রেশ হয়ে নাও।এরপর খেয়ে দেয়ে আমরা আলাপে বসব কেমন?”

কথাটা বলেই তমার আম্মু থতমত খেয়ে তমার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,,,,,,,

—-“না মানে জামাই রাজা না। জায়ান বাবা।”

তমা তেজী চোখে মিসেস আন্জ্ঞুমানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“হয়েছে হয়েছে আর নাটক করতে হবে। অনেক বছর তো খুব জমিয়ে নাটক করলে। এবার এক্টু অবসর নাও। ”

জায়ান তমার আম্মুর দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝালো তমা সবটা জেনে গেছে।

তমা আম্মু হু হা করে হেসে জায়ানের গাল টেনে বলল,,,,,,,

—-“ভালোই হয়েছে তমু সবটা জেনে গেছে। এবারর তাহলে মেয়ে জামাইকে খুব ভালো করে জামাই আদর করা যাবে। যাও জামাই ফ্রেশ হয়ে এসো। তোমার জন্য খাবার বাড়ছি।”

জায়ান মাথা নাঁড়িয়ে সায় জানিয়ে সোজা সিঁড়ি বেয়ে তমার রুমে ঢুকে পড়ল। তমা ও রাগে ফুসতে ফুসতে জায়ানের পিছু পিছু ছুটল। তমা রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে তাকাতেই তমা চোখ দুটো বড় বড় করে হাত দিয়ে পুরো মুখটা ঢেকে ফেলল। লজ্জায় ওর মাথা কাটা যাচ্ছে। সামনেই জায়ান শার্ট খুলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ধবধবে ফর্সা শরীরটা জায়ানের উন্মুক্ত হয়ে আছে। জায়ান বাঁকা হাসি দিয়ে তমার কাছে এগিয়ে এসে বলল,,,,,,,

—-“জামাইকে দেখে লজ্জা পেতে নেই বাবু। তোমার তো গর্ব করা উচিত তোমার জামাই এতো ফিট আর ড্যাশিং।”

তমা কথা বাড়াতে চায় না বলে জায়ানকে ক্রস করে যেই না ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল অমনি জায়ান তমাকে হেচকা টান দিয়ে ওর বুকের সাথে মিশিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,,,,,,,,

—-“আই লাভ ইউ তমু। প্লিজ আমাকে ভালোবেসে আপন করে নে। আমি আর পারছি না তোকে ছাড়া থাকতে। আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। একবার আমাকে চান্স দিয়ে দেখ না প্লিজ। কথা দিচ্ছি তোকে ভালোবেসে সবসময় বুকে আগলে রাখব।”

তমা জায়ানের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ধস্তাধস্তি করছে। তবে জায়ানের শক্তির সাথে সে পেরে উঠছে না। জায়ান তমাকে ওয়াশরুমের দরজার সাথে চেঁপে ধরে হুট করে তমার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো। তমা চোখ বড় বড় করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান খুব সফটলি তমার ঠোঁটে পর পর কয়েকটা চুমো খেয়ে তমাকে ছেড়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। তমা রাগে গিজগিজ করছে আর মিনমিন করে বলছে,,,,,,,

—-“বেটা লুচ্চা। বর বলে কি যখন তখন ওসব করবে নাকি। উফফফ…. বিরক্তিকর। কালই আমি ঢাকা ফিরে যাবো। এই লাফাঙ্গারের সাথে থাকা সম্ভব না।”

কথা গুলো বলেই তমা কাবার্ড থেকে এক্টা নীল সালোয়ার স্যুট বের করে ওর আম্মুর রুমের ওয়াশরুমে চলে গেলো। শাওয়ার নিতে হবে তাকে। গাঁ কেমন উস খুস করছে।

প্রায় আধ ঘন্টা পর,,,,,

তমা শাওয়ার সেরে চুল মুছতে মুছতে রুমে ঢুকেই বেকুব হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। কজ জায়ান গায়ে শুধু এক্টা টাওয়াল জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তমা জায়ানকে এই অবস্থায় দেখে যেই না আহ্হ্ করে চিৎকার দিতে যাবে এর আগেই জায়ান দৌঁড়ে এসে তমার মুখ চেপে ধরে বলল,,,,,

—-“এই চুপ কর। জীবনে তো উহ্ আহ্ ছাড়া কিছুই শিখলি না। শাওয়ার নিতে গিয়ে প্যান্ট আর শার্ট দুটোই ভিজিয়ে ফেলেছি। এই বাড়িতে আমার কোনো এক্সটা শার্ট, প্যান্ট নেই। তাই নিরুপায় হয়ে এইভাবে সং সেজে দাঁড়িয়ে আছি। তুই এক্টু কষ্ট করে তমালকে এই রুমে আসতে বলবি?”

তমা ওর মুখ থেকে জায়ানের হাতটা সরিয়ে রাগী চোখে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“তুমি শাওয়ার নিলে কেনো? ডক্টর বারণ করেছিলো না কয়েকদিন মাথা না ভিজাতে?”

—-“ডোন্ট ওরি বউ। আমি মাথায় পানি দেই নি। শুধু শরীরে পানি ঢেলেছি। মাথা শুকনোই আছে। তুই পারলে চেইক করে দেখ।”

তমা জায়ানের কথা পুরোপুরি বিশ্বাস না করে জায়ানের মাথায় হাত দিয়ে দেখল আসলেই জায়ানের চুল গুলো শুকনো। জায়ান যা বলেছে সত্যি বলেছে। তমা গলাটা ঝাঁকিয়ে জায়ানের চোখে চোখ রেখে বলল,,,,,,

—-“তুমি দাঁড়াও। আমি এক্ষনি তমাল ভাইয়াকে ডেকে দিচ্ছি।”

কথাটা বলেই তমা রুম থেকে হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে তমালের রুমে গিয়ে তমালকে ডেকে বলল,,,,,,,

—-“এই ভাইয়া….. জায়ান ভাইয়া তোকে ডাকছে। মেবি তোর শার্ট, প্যান্ট লাগবে। শাওয়ার নিয়েছে তো তাই।”

তমাল কাবার্ড থেকে শার্ট, প্যান্ট নিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে সোজা তমার রুমে ঢুকে গেলো। জায়ান দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। তমালকে দেখা মাএই তমালের হাত থেকে প্যান্ট, শার্ট ছিনিয়ে জায়ান ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। তমাল হু হা করে হেসে রুম থেকে বের হয়ে সোজা ড্রইং রুমে চলে গেলো।

তমা অনেকক্ষন ধরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জায়ানের জন্য অপেক্ষা করছে। ক্ষিদে নেই এর পরে ও মিসেস আন্জ্ঞুমানের রিকুয়েস্টে জোর করে পেট পূজো করতে হবে।

জায়ান ওয়াশরুম থেকে বের হতেই তমা দরজা খুলে রুমে ঢুকে জায়ানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,,,

—-“খাবে চলো। আম্মু, আব্বু আমাদের জন্য ওয়েট করছে।”

জায়ান কপাল কুচকে বলল,,,,,,

—“লাইক সিরিয়াসলি তমু? আমরা এক্টু আগেই রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে এসেছি। পেট একদম ভর্তি!”

—-“আচ্ছা ডিনার না করলে নাই অন্তত এক গ্লাস দুধ খেতে হবে। অনেক রক্ত ঝড়েছে তোমার শরীর থেকে। তার উপর মেডিসিন ও নিতে হবে। সো কথা না বাড়িয়ে নিচে চলো।”

জায়ান তমার কাঁধে দুহাত ঝুলিয়ে তমার নাকে নাক ঘঁষে বলল,,,,,,,

—-“বাঃহ্ পাক্কা গিন্নি হয়ে গেছিস তো! কি সুন্দর বরের খেয়াল রাখছিস!”

#চলবে,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here