অচেনা_শহর পর্ব ১+২

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[১]

শো শো শব্দ করে গাড়ি চলে যাচ্ছে।গাড়ির আলো নিজের উপর পরতেই চোখ বন্ধ করে নিচ্ছি।গাড়ির আলো কেন জানি সহ্য হচ্ছে না চোখ জ্বলে উঠছে? এটা কান্নার ফলেই হচ্ছে চোখ খুলে রাখতে পারছি না বন্ধ করে বসে আছি। শিরশির করে উঠছে আমার শরীর ঠান্ডা বাতাস বইছে। দিনের বেলা শত গরম থাকলেও রাত নামলেই মনে হয় এই শীত বেড়ে যায়। কেঁপে কেঁপে উঠছি আমি।
খিদে পেট চোঁ চোঁ করছে কিন্তু খাওয়ার উপায় নাই
শরীরটা এত ক্লান্ত লাগছে নড়তে ও পারছিনা।মনে হচ্ছে এখানে এই লোকগুলোর সাথেই ঘুমিয়ে পড়ি।
চোখ মেলে তাকালাম চোখ-ফুলে আছে ঘোলাটে হয়ে আছে। ওইভাবেই সামনে কিছুটা দূরে একটা বাচ্চাকে দেখতে পেলাম। একটা শুকনো রুটি চিবিয়ে খাচ্ছে। আর আমার দিকে কেমন উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিল।ছেলেটার গায়ে কোন পোশাক নাই শুধু একটা ময়লা ছেঁড়া প্যান্ট পড়ে আছে। ছেলেটাও কেঁপে কেঁপে উঠছে ওর ও শীত করছে বোঝা যাচ্ছে।
আশেপাশে সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঘরি ও নাই যে দেখবো কয়টা বাজে।
হঠাৎ আমার গলাটা শুকিয়ে এলো। তৃষ্ণায় গলা চৌচির হয়ে আছে। একটু পানির খুব প্রয়োজন পানি কোথায় পাবো? একে দুই চোখ ব্যথা করছে আবার পা ব্যথা এখন পানি উঠে যে কোথাও যাবো তাও আমার জন্য কষ্ট কর। কিন্তু পানির তৃষ্ণা নিয়ে কিভাবে থাকবো।ওই যে ছেলেটা রুটি খাচ্ছিল তার আশেপাশে পানি দেখছিনা।
আর থাকা যাচ্ছে না রোডের কিনারায় উঠে দাঁড়ালাম। ব্যাথা পা নিয়ে আস্তে আস্তে হাটতে লাগলাম।
সামনে দোকানপাটের অভাব নাই কিন্তু টাকা কোথায় পাব টাকা ছাড়া তো তারা আমাকে আনি দেবেনা। অসহায় মুখ করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। দোকান ছেড়ে একটা চায়ের দোকানে এসে থামলাম। চায়ের দোকানে তো এমনি কলসিতে জগে পানি রাখা হয় যদি থাকে তো একটু চেয়ে খাব। ওই গুলার তো আর টাকা লাগেনা।
একজন বয়স্ক লোক বসে আছে চায়ের দোকানে।আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম শুকনো মুখ করে। তিনি আমার দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে ভাবছে আমি চা খাব নাকি?
তিনি কিছু বলার আগে আমি বলে উঠলাম,,

“চাচা একটু পানি হবে। প্রচন্ড পানি পিপাসা পেয়েছে গলাটা শুকিয়ে আসছে একটু পানি হলে খুব উপকার হত।”

আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত একবার দেখে নিল তারপর কাসার গ্লাস বের করে। এক গ্লাস পানি দিল। আমি তার হাত থেকে খপ করে নিয়ে গপগপ করে পুরোটা এক ঢুকে ফেললাম। পুরো গ্লাস ফাঁকা করে একটা বড় নিঃশ্বাস নিলাম।

“ধন্যবাদ চাচা।”

তাকে গ্লাস ফিরিয়ে দিলাম তিনি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আমি আর তার ওইখানে দাঁড়ালাম না চলে এলাম।
সাথে করে বিপদ নিয়ে এলাম।আমি চায়ের দোকান থেকে এগিয়ে কয়েক কদম আসতেই মনে হলো কেউ আমার পিছু নিয়েছে। বুকে হাত দিয়ে ভয় ভয় পেছনে তাকিয়ে আতকে উঠলাম।
চায়ের দোকানে তিনটা ছেলে বসেছিল সেই তিনজন আমার পিছু নিয়েছে।

একেতে যাওয়ার জায়গা নাই তার উপর এই বিপদ।এখন কি করবো আমি হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম বড় বড় পা ফেলে হাটছি শাড়িতে বেজে যাচ্ছে।
তাও থামছিনা এদের থেকে বাঁচতে হবে‌। আদ্রর অপেক্ষা করতে হবে। নিজেকে আদ্রর জন্য রক্ষা করতেই হবে ।

“এই যে সুন্দরী দাড়াও।”

ওনাদের কথা থমকে গেলাম। ভয়ে আমার হৃদপিণ্ড কাঁপছে শরীরে শক্তি কমে আসছে। হাঁটতে পারছিনা। এমনিতেই পা ব্যথা তারপর এখন আবার মাথা যন্ত্রণা করছে।মন চাইছে এখানে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়ি এত যন্ত্রণা সহ্য হয় না।
সমস্ত বিপদ কি আমাকে শুধু ঘিরে ধরবে। একটু কি শান্তি পাবো না এতো বিপদের মাঝে আবার আরেক বিপদ।

এগুতো এগুতো আমি একটা বাসা দেখলাম গেট খুলা।আমি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি সেদিকে। আমি আসতে আসতে একটু অন্ধকার এ চলে এসেছি ছেলে গুলো হয়তো এখন আর আমাকে দেখতে পাচ্ছে না এই সময় আমাকে লুকিয়ে পরতে হবে।
আর লুকানোর জন্য এর থেকে ভালো জায়গা পাবনা।
আমি দৌড়ে গেটের ভেতরে ঢুকে গেলাম।
দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে উঁকি মারছি। ছেলেগুলো বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিকে তাকাতাকি করছে।

‘ওফ মেয়েটা কোথায় গেল রে।”

“কি জানি আর তো দেখছি না।”

আমি মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছি। আমার শরীরে ঘেমে গেছে পেছনে থেকে কেউ বলে উঠলো,,,

“কে রে ওখানে?”

আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম স্তব্ধ হয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি একটা লোক মনে হচ্ছে দারোয়ান।
আমি ওই ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে দৌড় দিলাম বাসায় ভেতরে।
পেছন থেকে দারোয়ান বলে যাচ্ছে।

“এই মেয়ে কে তুমি এভাবে বাসার ভেতরে যাচ্ছ কেন?”

আমি গেটের সামনে চলে এসেছি এবার কোথায় যাব। ভেতরে ওই ছেলে গুলোর ও আওয়াজ পাচ্ছি এখন বাসায় বাইরে গেলেই বিপদ এখানে কিছু ক্ষন থাকতে হবে যাতে ওরা ভাবে এটা আমার বাসা।
আমি কলিংবেল বাজালাম।
দরজা খুলছে না উফফ এদিকে দারোয়ান রেগে ফায়ার হয়ে এদিক আসছে আর আমাকে যা নয় তাই বলে বকছে।

লোকটা চলেই এসেছে আমাকে দেখেই বললো,,,
“এই যে ফাজিল মেয়ে কে তুমি এই ভাবে বাসায় ঢুকলে কেন তোমার মতলব কি? চুরি করবে না কি কি দিন আসলো এখন এমন ভদ্র সেজে মেয়েরা চুরি করতে আসে। দেখে তো ভদ্র লাগছে তা এমন চুরির পেশায় আসলে কেন?”

দাদু প্লিজ আমাকে বাঁচান আমি চোর না।

“দাদু, এই মেয়ে আমাকে দাদু বলছো কেন তুমি আমার নাতনি কবে থেকে। আর বাঁচাবো কেন কি হয়েছে ও বুঝেছি চুরি করতে এসে ধরা পরেছো এখন যাতে পুলিশের কাছে না দেয়। তা তো হবে না।”

“আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন আমার কথাটা শুনেন প্লিজ দাদু।”

“না আমি তোমার কোন কথা শুনবো না। এখন‌ই স্যার, ম্যামকে ডাকবো তারাই তোমার ব্যবস্থা করবে।”

বলেই চিৎকার করতে যাবে। আমি ভয়ে ফট করে কেঁদে উঠলাম শব্দ করে উনি আমার কান্না শুনে থেমে গেল আর জিজ্ঞেস করলো,,,

“এই মেয়ে কাঁদছো কেন?”

“আপনি আমার কথা শুনেন প্লিজ।”

“আচ্ছা বলো।”

“আমি চোর না। ”

“তাহলে এখানে ওইভাবে আসলে কেন?”

“আমার কথা তো শুনেন‌।”

“আচ্ছা বলো।”

উনাকে সব খুলে বললাম। দাদু সব কথা শুনে চুপ করে গেল তারপর আমাকে নিয়ে গেটের কাছে এলো দেখতে আসলেই ছেলে গুলো এখন ও দাঁড়িয়ে আছে। এবার উনি আমার দিকে তাকালো আর আমাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করলো।
গেট অফ করে আমাকে জিজ্ঞেস করলো “আমি এতো রাতে বাসার বাইরে কেন এসেছি?”

“আমার তো বাসায় নাই বাইরে কোথা এলাম।”

আমার কথা শুনে চমকিত হয়ে তাকালো।
আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।

“কোথায় যাবে মা বিপদ তো পদে পদে বসে আছে।”

“জানিনা।”

আমাকে মুড়া এনে দিল দাদু আমি বসে পরলাম খুব খারাপ লাগছে। পাঁচ মিনিট যেতেই গাড়ির হণ এলো দাদু তারাতাড়ি দরজা খুলছে।আমি উঠে পাশে দাঁড়ালাম।

একটা মাইক্রো গাড়ি ভেতরে আসলো। আমি দাঁড়িয়ে গাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছি। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে পাশের দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো একজন অন্ধকারের মুখটা ভালো বোঝা যাচ্ছে না। আসলে সে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে অন্ধকার মুখি। দাদুকে ডাক দিল তারপর দাদুর হাতের চাবি দিয়ে আমার দেখে ফিরলো।
তার মুখটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তার মুখটা দেখে আমি থমকে গেলাম বাকরুদ্ধ হয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছি তা দেখে আমার সারা শরীর সিরসির করে উঠল।
এ আমি কার মুখোমুখি হলাম।
~~চলবে~~

(আসসালামু আলাইকুম সবাই কেমন আছেন? আপনাদের লেখিকা মিষ্টি আবার আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছে অচেনা শহর সিজন টু নিয়ে। আপনারা সবাই বলেছিলেন যেখানে শেষ হয়েছিল সেখান থেকেই যেন শুরু করি সেটাই করেছি এবার সবাই হ্যাপি তো। ভুল – ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।)
Tanjina Akter Misti

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here