অজানা অনুভূতি পর্ব -০৪+৫

#অজানা_অনুভূতি
#পর্ব- ০৪
#লেখিকা – আদ্রিতা খান অদ্রি
হঠাৎ খুব দ্রুত একটি ট্রাক সামিরার দিকে আসতে লাগলো আর ঠিক তখনই স্বাধীন এসে সামিরার হাত ধরে রাস্তার অপরদিকে টান দিলো। আর একটু দেরি হয়ে গেলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যেতে পারতো। আকস্মিক এমন ঘটনায় সামিরা ও অনেক ভয় পেয়ে গেলো।রাস্তায় দেখে চলতে পারেন না? কথাটা বলে স্বাধীন খেয়াল করলো এইটা সামিরা।

মিস সামিরা আপনি কি ঠিক আছেন?

বেশি ভয় পাওয়ার ফরে সামিরা কিছু বলতে ও পারছিলো না। স্বাধীন সামিরাকে একটি বেঞ্জে বসালো একটি পানির বোতল কিনে আনলো। পানি খেয়ে নিন কিছুটা ভালো লাগবে।

সামিরা সাথে সাথে পানি খেয়ে নিলো, ধন্যবাদ স্বাধীন।

আপনি এই দুপুরে এখানে কেনো?

ইউনিভার্সিটিতে একটু কাজ ছিলো। বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর তখনই…

ও আচ্ছা চলুন আমি পৌঁছে দিচ্ছি।

না আমি যেতে পারবো।

আরে মিস সামিরা ভয় পাবেন না৷ আপনি আমার সাথে গেলে আপনার ফ্যামেলি বা সাজ্জাদ কেউ রাগ করবে না৷ এখন আসুন আমার সাথে।

ওকে…

তারপর সামিরা স্বাধীনের সাথে বাসায় চলে আসলো।

অন্যদিকে ~

দেখ আলো প্রথমদিনই স্যার এসে আমাকে রুম থেকে বের করে দিলো।

আবির বলে উঠলো ক্লাসে এতো কথা বললে এমন হবেই।

তানহা বললো ক্লাসেই আমাদের দেখা হয় ক্লাসে কথা না বললে কখন কথা বলবো আমরা?

আমরা ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম। এমন সময় রাইসার গ্রুপ আসলো।

নওশিন বললো আদ্রিতা তোমার সাথে আমার কিছু কথা রয়েছে।

হ্যাঁ বলো কি বলবে?

আজকে যখন স্যার তোমাকে রুম থেকে বের করে দিলো। তুমি একজনের সাথে বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলে। উনি কে হয় তোমার? তোমার সাহস কিভাবে হয় উনার সাথে কথা বলার?

নওশিনের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম সাজ্জাদ আমার সাথে কথা বলেছে দেখে ও কেনো এতো রেগে যাচ্ছে। উনি আমার বাবার বন্ধুর ছেলে। আমার সাথে কথা বলা স্বাভাবিক। তুমি এরকম করছো কেন?

দেখো আদ্রিতা, সাজ্জাদের থেকে দূরে থাকবে। শুনলাম কলেজের অনুষ্ঠানে নাকি সাজ্জাদ প্রধান অতিথি। দেশের নামকরা বিজনেসম্যান। বড়লোক দেখে কি নিজের জালে ফাঁসাতে চাচ্ছো?

নওশিনননননন চুপ আর একটি কথা ও না। অনেকক্ষন থেকে তোমার এইসব বাজে কথা শুনতেছি।

উনি আমার বাবার বন্ধুর ছেলে। ছোট থেকে আমাদের পরিবারকে চিনে। আমার সাথে কথা বললে তোমার এতো গায়ে লাগছে কেনো?

আলো বলে উঠলো, নওশিন নিজের লিমিটের মধ্যে থেকো, কিছু বলি না বলে মনে করো না যে আমরা বলতে পারি না। সবাইকে নিজের মতো মনে করবে না। আর কিছু বলার আগে আরিয়ান স্যার বললো স্টপপপপ।

স্যার বললো, কি শুরু করেছো তোমরা? দেখো সব স্টুডেন্টরা তোমাদের দেখছে। বাকি স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে বললো নিজেদের কাজে যাও। বাকিরা চলে গেলো। এখন শুধু আমরা, রাইসার গ্রুপ আর স্যার আছে।

স্যার, রাইসাদের উদ্দেশ্য বললেন, আমি উপর থেকে দেখছি তোমরা নিজেরা এসে, আদ্রিতাদের সাথে ঝগড়া শুরু করলে সমস্যা কি তোমাদের?

নওশিন বললো সরি স্যার।

স্যার বললেন, ক্লাস শেষ না? বাসায় যাও।

ওরা সবাই চলে গেলো। স্যার আমাদের উদ্দেশ্যে বললেন। আমি জানি না তোমাদের মধ্যে কি হযেছে। কিন্তু ওরা যেহেতু তোমাদের সাথে ঝামেলা শুরু করেছে তাই আমি তোমাদের কিছু বললাম না। তোমরা এখন যেতে পারো। আমরা ওকে স্যার বলে সবাই কলেজ থেকে বেরিয়ে আসলাম

আরিয়ান ওদের সব কথা শুনতে পায় নি। উপর থেকে দেখছিলো তাদের পরে ঝগড়া দেখে নিচে নেমে এসেছে। আনমনে বলে উঠলো মেয়েটা প্রতিবাদী আছে। কথাটি বলে কিছুটা হাসলো। তারপর অফিস রুমে চলে গেলো।

আমরা কলেজ থেকে বের হয়ে আসলাম। আবির আর তানহা বললো অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে আমরা বাসায় গেলাম। কথাটি বলে ওরা ২ জন চলে গেলো। ওদের বাসা এক এলাকায় হওয়ায়। একসাথে আসা যাওয়া করে। অন্যদিকে আমি আর আলো একসাথে বাসায় ফিরি।

আদ্রিতা সবাই ত বাসায় চলে গেলো। চল আমরা ও বাসায় যায়।

না আমরা ফুসকা খাবো চল। একথা বলে আলোকে নিয়ে ফুসকার দোকানে গেলাম। মামা খুব ঝাল দিয়ে এক প্লেট ফুসকা দিন ত। আর এক প্লেটে ঝাল দিয়েন না।

উনি আচ্ছা বলে ২ প্লেট ফুসকা বানিয়ে আমাদের দিলো।

আমি আর আলো খেতে শুরু করলাম। আমার একটু বেশি ঝাল লাগছে আজকে। এই আলো একটু পানি দে ত অনেক ঝাল লাগছে। চোখ দিয়ে ও পানি পড়ছে।

আমার কাছে ত পানি নেই।

এমন সময় আমার মুখের সামনে কেউ পানির বোতল ধরলো। কে দিয়েছে খেয়াল না করে তাড়াতাড়ি পানিটুকু খেয়ে নিলাম। কিছুটা শান্তি পেলাম তাও এখনো চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। পাশে তাকিয়ে আমার পাশে যাকে দাঁড়ানো দেখলাম, দেখে অবাক হলাম কারণ আমার পাশে…..

#চলবে #অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ ০৫
#লেখিকা – আদ্রিতা খান অদ্রি

পাশে তাকিয়ে আমার পাশে যাকে দাঁড়ানো দেখলাম, দেখে অবাক হলাম কারণ আমার পাশে সাজ্জাদ দাড়িয়ে আছে।

সাজ্জাদ বললেন, ঝাল সহ্য করতে পারো না তাহলে এতো ঝাল খেতে কে বলেছে? কি প্রমাণ করতে চাও তুমি সব পারো? সব সময় এতো বোকা বোকা আচরণ কেন করো? কথাগুলো বলে আমার হাতে একটি টিস্যু দিয়ে বললেন চোখের জলটা মুছে নেও।

তার হাত থেকে টিস্যুটা নিলাম, নিয়ে চোখের জলটা মুছে নিলাম।

সাজ্জাদ বললেন কলেজ ছুটি হয়েছে অনেকক্ষণ আগে এখনো বাসায় না যেয়ে বাইরে ঘুরাঘুরি কেনো করছো?

ফুসকা খেতে ইচ্ছে করেছিলো তাই এসেছিলাম। একদিকে সাজ্জাদের শাসন গুলো ভালো লাগছে। অন্য দিকে তাকে দির সাথে কিভাবে মেনে নিবো এইটা চিন্তা করছি।

আর এদিকে আলো সাজ্জাদকে দেখে অবাক হচ্ছে। দুবছর আগে শেষ দেখেছিলো আদ্রিতার সাথে। এখন হঠাৎ সাজ্জাদ কোথা থেকে আসলো? আর আদ্রিতার সাথে এতো নরমাল ভাবে কথা বলেছে কেনো? আর আদ্রিতাই বা সাজ্জাদকে দেখে কিছু বলছে না।

সাজ্জাদ আলোকে খেয়াল করে বললো, তুমি আলো না আদ্রিতার বেস্ট ফ্রেন্ড?

জ্বি, আমি আলো।

সাজ্জাদ বললেন, ও কেমন আছো?

আলো বললো, জ্বি, ভালো আর আপনি?

সাজ্জাদ বললো, হ্যাঁ ভালো আছি।

এমন সময় আরিয়ান স্যার আসলেন।

সাজ্জাদকে বললেন, কি ব্যাপার আজকে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ নাকি?

সাজ্জাদ বললেন, হ্যাঁ বাসায় যাচ্ছিলাম ওদের রাস্তায় দেখলাম তাই একটু কথা বলছি আর কি

স্যার বললেন, ও আচ্ছা। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আদ্রিতা আর আলো কি একসাথে বাসায় যাও?

আমি বললাম, জ্বি স্যার আমরা একসাথেই যায়।

স্যার বললেন, তোমাদের বাসার একটু পরেই আমার বাসা। কলেজ ছুটি অনেকক্ষণ হয়েছে আসো আমি তোমাদের পৌঁছে দেয়।

স্যারের কথা শুনে আমি আর আলো একটু অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেলাম। স্যারকে কি বললো বুঝতে পারছিলাম না। আমি সাজ্জাদের দিকে তাকালাম। দেখলাম সাজ্জাদ আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। মাথা নিচু করে ফেললাম।

সাজ্জাদ স্যারকে বললো, আরিয়ান আমি আদ্রিতার বাসায় যাবো একটু কাজ আছে। আমি বরং আদ্রিতা আর আলোকে বাসায় পৌঁছে দিবো।

কথাটি শুনে আরিয়ান স্যার আচ্ছা বলে চলে গেলো। আরিয়ান মনে মনে কিছুটা বিরক্ত হলো।

আর এইদিকে আদ্রিতা আর আলোকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা শুনে সাজ্জাদ ও বিরক্ত হলো আরিয়ানের উপর।

আমি সাজ্জাদকে কিছু বলার আগে আলোর ফোনো কল আসলো। আলো ফোনে কথা বলে আমাকে বললো। আদ্রিতা আম্মু একটু মার্কেটে এসেছে আমি ও যাবো। বাসায় পরে যাবো। তারপর সাজ্জাদকে বললো, ভাইয়া ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়েন৷একথা বলে আলো রিকশায় উঠে চলে গেলো।

এখন শুধু আমি আর সাজ্জাদ দাঁড়িয়ে আছি রাস্তায়। সাজ্জাদকে জিজ্ঞেস করলাম, আমার বাসায় আপনার কি কাজ আছে? স্যারকে বললেন আমার বাসায় যাবেন, বাসায় কেনো যাবেন?

সাজ্জাদ বললো, কেনো আমি তোমার সাথে গেলে কি খুব অসুবিধা? ঔই আরিয়ানের সাথে যেতে চাও নাকি?

আমি বললাম, উনি আমার স্যার।

স্যারের দায়িত্ব তোমাকে পড়ানো। বাসায় পৌঁছে দেওয়া না। আরিয়ান কেনো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে চেয়েছে?

সাজ্জাদের কথা শুনে বুঝতে পারছি না, আচ্ছা আরিয়ান স্যার আমাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা শুনে তিনি কি জেলাস ফিল করছে নাকি। আমি ভুলে জিজ্ঞেসই করে ফেললাম, আচ্ছা স্যারের সাথে বাসায় যাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে আপনি কি জেলাস?

সাজ্জাদ আমার কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না, আমতা আমতা করে বলছে কি বলছো তুমি আমি কেনো জেলাস ফিল করবো। আরিয়ান আজকে তোমাদের ক্লাসে জয়েন করেছে আর আজকেই তোমাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছে, ব্যাপারটা অদ্ভুত না? আরিয়ানের সাথে দূরত্ব বজায় রেখে চলবে।

ভেবে দেখলাম সাজ্জাদের কথাটা ঠিক৷

অন্যদিকে ~

একজন S.R কে কল করে বললো, বস মেয়েটার সাথে আবার একসাথে দেখেছি

S.R বললেন, কি? আবার আগের সেই মেয়েটি?

হ্যাঁ, বস ওই মেয়েটি।

S.R বললো, ওকে আমি ১ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে আসবো।

বস আপনি কি আবার মেয়েটিকে…..

অবশ্যই, ওর জন্যই আমি দেশে ফিরে আসবো।

কিন্তু বস মেয়েটি ত আপনাকে প্রচুর ভয় পায়।

সমস্যা নেই একবার বিয়ে করে নেই তারপর ওকে ও আমার কাজের সাথে জড়িত করে নিবো। শোন মেয়েটির কোনো ধরনের ইনফরমেশন পেলে আমাকে জানাতে ভুলবি না।

ওকে বস।

তারপর S.R লাইন কেটে দিলো।

এদিকে ~

আলো ত চলে গেলো এখন আমার একাই যেতে হবে। মামাকে ফুসকার টাকাটা দিতে নিবো, এমন সময় সাজ্জাদ টাকাটা দিয়ে দিলো। দিয়ে আমাকে বললো আসো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি। মনে মনে ভাবতে লাগলাম, মানুষটা দুদিন পর দির স্বামী হবে এখন তার জন্য এইভাবে অনুভূতি রাখা ঠিক হচ্ছে না। আর সে কেন আমার সাথে এরকম আচরণ করছে। আগে অপমান করে এখন কেন কাছে টেনে নিচ্ছে।

রেগে গিয়ে তাকে বললাম, দু’দিন পর আপনার দির সাথে বিয়ে, এখন আমার সাথে এতো ভালো আচরণ করার মানে কি?

আদ্রিতা শান্ত হও, এইটা রাস্তা।

না কেনো চুপ থাকবো? আপনার দির সাথে বিয়ে এখন কেনো আপনি আমার সাথে ঘুরছেন৷ যখন আমি আপনার হতে চেয়েছিলাম তখন ত অপমান করে তাড়িয়ে দিলেন। এখন কেনো এসেছেন? আর কিছুদিন পর ত আপনি অন্যকারোর। তাহলে এখন কোনো এতো অধিকার বোধ দেখাচ্ছেন?

আদ্রিতা বাসায় চলো।

না আমি আপনার সাথে যাবো না। কথাগুলো বলে আমার বাসা যে রাস্তায় সে রাস্তায় না হেটে অন্য একটি রাস্তায় হাঁটতে থাকলাম।

আর এদিকে সাজ্জাদ ভাবছে সামিরার সাথে কিভাবে সাজ্জাদের বিয়ে ভেঙে দেওয়া সম্ভব হবে? নাকি সামিরার সাথে আদ্রিতার ব্যাপারে একবার কথা বলবে। কথাগুলো ভেবে সামনে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিতা অনেক দূরে চলে গেছে। সাজ্জাদ আদ্রিতা আদ্রিতা বলে ডাকতে ডাকতে তার পিছু নিলো।

চোখের জল মুছে চলেছি আর ভাবছি, দির সাথে কিভাবে সাজ্জাদকে সহ্য করবো?

অনেকটা সময় হাঁটার পর খেয়াল করলাম এইটা ত সেই জায়গা যেখানে প্রথম বার….

আর কিছু ভাবতে পারছি না, মনে হচ্ছে দমবন্ধ হয়ে আসছে।

এমন সময় সাজ্জাদ এসে আদ্রিতা বলে ডাক দিলো। সাজ্জাদ ও বুঝতে পারছে আদ্রিতার এই জায়গায় সমস্যা আছে।

আমি পড়ে যেতে নিলেই সাজ্জাদ এসে ধরে ফেললো

এই আদ্রিতা ঠিক আছো তুমি আদ্রিতা

ঠিক মতো কথা বলতে পারছি না। তাও সাজ্জাদকে বললাম ওইখানে….

সাজ্জাদ আদ্রিতাকে বললো আদ্রিতা ভালো করে খেয়াল করো কেউ নেই এখানে, ওগুলো সব অতীত। এই আদ্রিতা ভয় পেয়ো না দেখো আদ্রিতা

আর কিছু শুনার আগেই তার উপর ঢলে পড়লাম।

সাজ্জাদ বুঝতে পেরেছিলো এমন কিছুই হবে। আদ্রিতার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বললো, এতো দুর্বল কেনো তুমি? এতো ভয় পাও কেনো? এই ছোট একটা কারনে তোমাকে নিজের করে নিতে পারছি না। কথাগুলো বলে আদ্রিতাকে কোলে তুলে নিলো। আর সাজ্জাদের গাড়ির দিকে হাঁটতে থাকলো।

আর এদিকে সাজ্জাদের কোলে আদ্রিতা থাকা অবস্থায় কেউ একজন একটা ছবি তুলে নিলো।

#চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here