রাতে ঘুমানো অবস্তুায় বুকের উপরে কারো খারাপ স্পর্শে আমি হালকা নড়ে উঠলাম।হঠাৎ পেটে আর ঠোঁটে কারো কামড়ে লাফ দিয়ে উঠে বসে হাপাতে লাগলাম।চারদিকে তাকিয়ে দেখি আমার রুমের থাই গ্লাস খোলা।বাইরে প্রচন্ড বাতাস বইছে,বিদ্যুৎ ও চমকাচ্ছে।মনে হচ্ছে বন্যা হবে।বাতাসে পর্দা উড়ছে।আমি কয়েকবার শ্বাস নিয়ে পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাস হাতে নিলাম।তারপর ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি শেষ করলাম।খুব খারাপ লাগছে।প্রতি মধ্য রাতে কারো খারাপ স্পর্শে আমার ঘুম ভাঙে তারপর আর ঘুমাতে পারি না।কেনো হচ্ছে এরকম আমার সাথে??প্রতি রাতে কে আসে?আর কিভাবে আসে?আমি তো সবকিছু বন্ধ করে ঘুমাই।এরকম প্রতিদিনই হয় তাই আর বেশি মাথা ঘামালাম না।আর না ঘুমিয়ে রান্নাঘর থেকে এক মগ কফি নিয়ে বারান্দায় চলে গেলাম।বাইরে দমকা হার কাপানো শীতলবাতাসে আমার সারা শরীরের পশম দাড়িয়ে গেলো।হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে বিকট শব্দে বাজ পরলো।আমি কফির মগে চুমুক দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখি ঝোপঝাড়ের মধ্যে কারো অবয়ব দেখা যাচ্ছে।আরও একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখি হুডি পরা কোনো লম্বাটে ব্যাক্তি দৌড়ে চলে যাচ্ছে।রাস্তার বাম পাশের আঁকাবাকা রাস্তা ধরে দৌড়ে চলে যাচ্ছে ঝোপঝাড়ের মধ্যে।তখনই হঠাৎ আবার ওইখানে বিকট শব্দে বাজ পড়লো তারপর আর দেখা গেলো না অবয়বটিকে।আমি হালকা চমকে গেলাম।সামনের আঁকাবাকা রাস্তার ওইপাশে একটি কালো পুকুর আছে মানে পুকুরের পানি অতিরিক্ত দূষণে কালো রূপ ধারণ করেছে।পুকুরের বিপরীত দিকে একটি পুরনো বাড়ি আছে তিন তলা।প্রচন্ড পুরনো তাই বিল্ডিং এর রং উঠে হালকা তামাটে বর্ণ হয়ে গেছে।পুরো বাড়িতে শেওলা আর আগাছাতে সম্পূর্ণ একটা ভুতুড়ে বাড়ি আবিষ্কার হয়েছে।
আমি একটু চোখ,কান খোলা রেখে বারান্দার রেলিং ধরে ডান দিকে এগিয়ে ছাদবিহীন ওই বিল্ডিংয়ের একদম উপরে মানে তিনতলায় একটি রুমের দিকে তীক্ষ্ণ নজর দিলাম।কারণ প্রতিদিন রাত ২টার পর ওইখানে মোমবাতি জ্বলে আর কিছু মানুষের ছায়া দেখা যায়।তাদের ছায়া দেখে যে দৃশ্য তৈরি হয় সেটা দেখে মনে হয় তারা কোনো মানুষকে খুন করছে।তাই আমি প্রতিদিন রাত দুইটার পর ওইখানে তাকিয়ে অনুমান করার চেষ্টা করি যে ওইখানে কি হচ্ছে?তারপর যখন লাইট অফ হয়ে যায় তখন রুমে এসে বই পড়ি।আজকেও তাই।প্রতিদিনের মতো আজকেও ওইখানে আলো জ্বলেছে আর কোনো মানুষ হয়তো খুনও হয়েছে।অন্ধকার হয়ে যাওয়ার পর আমি রুমে এসে আমার বুক শেল্ফ থেকে জাফর ইকবালের লেখা ফিনিক্স বইটি নিয়ে পড়তে বসলাম।বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে আর প্রচন্ড বাতাস বইছে।যদিও এখন গ্রীষ্ম কাল নয় কিন্তু এই বন্যা দেখ মনে হবে কালবৈশাখী হচ্ছে।আর প্রচন্ড লোডশেডিং হয়।তাও আবার রাত দুইটার পরই।আজকেও তাই হঠাৎ করে কারেন্ট চলে গেলো।তাই সবসময় সকালে আমি কলেজ থেকে আসার সময় এক প্যাকেট মোমবাতি আর বাসায় এসে চার্জারলাইট চার্জ দিয়ে রাখি।যাতে রাতে যখন কারেন্ট যাবে তখন চার্জারলাইট জ্বালিয়ে রাখার পর চার্জ শেষ হয়ে গেলে তখন মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখবো।আমি উঠে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে টেবিলের উপর গলে পড়া কিছু মোমের অংশ ফেলে সেটার উপর মোমবাতিটি দাড় করিয়ে আটকে দিলাম।তারপর বইটি পড়তে লাগলাম।আসলে বলতে গেলে জাফর ইকবালের লেখা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলোর খুব বড় ফ্যান আমি।প্রতিদিন রাতে ওনার লেখা বইগুলো পড়ি।আবার হুমায়ন আহমেদেরও মোটামোটি ছোটোখাটো ভক্ত আমি।তার লেখা বইগুলোও ভালো লাগে।হঠাৎ একটি বাদুর আমার জানালার গ্লাসের কাছে এসে দাড়িয়ে রইলো।আমার খেয়াল হতেই সেটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম।তারপর বাদুরটি নিজে নিজেই উড়ে চলে গেলো।একটা কথা যেদিন থেকে আমি এই দুইতলা বিল্ডিং এ উঠলাম তবে থেকে আমার সাথে এইসব অদ্ভুদ ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।যেমন: রাতে কারো খারাপ স্পর্শ তারপর ওই অবয়ব,আবার ওইখানের ওই পুরনো বিল্ডিয়ের ঘটে যাওয়া ঘটনা আবার প্রতিদিন আমার জানালার সামনে ওই কালো বাদুরের দেখা।সবমিলিয়ে আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
ভোরে আযানের ধ্বনিতে আমার ঘুম ভাঙলো।হালকা চোখ কচলে উঠে বসলাম।তখনই বইটা মাথা থেকে পড়লো।পাশে টেবিলে তাকিয়ে দেখি মোমবাতির ভিতরে যে দড়ির মতো কালো যে অংশটি আছে সেটা দেখা যাচ্ছে ছোট হয়ে।(আমি মোমবাতির ভিতরের কালো অংশটির নাম জানি না।তাই আপনারা নিজেরা একটু বুঝে নিবেন আর কমেন্ট বক্সে ওইটার কোনো নাম থাকলে নামটা বলে দিবেন।ধন্যবাদ)।আমি উঠে দাড়িয়ে পর্দাটা সরিয়ে জানালার কাচ খুলে একটা শ্বাস নিলাম।তারপর বারান্দায় চলে গেলাম।কালকে বন্যা হওয়ার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে।গাছের নিচে পাখির বানানো সুন্দর কারুকাজ করা বাসা পড়ে আছে।গাছপালার ডাল ভেঙে গাছের সাথে ঝুলে আছে।সামনের সুন্দর ওই আঁকাবাকা রাস্তাটি পাতায় ভরে গেছে।সূর্যি মামা এখনো জেগে উঠে নি।চারদিকে নীল নীল আভা।হালকা মিষ্টি বাতাস বইছে।পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ আসছে।সবকিছু কতোটা সতেজ লাগছে।শহরের থেকে একটু দূরে হওয়ায় এখানে একটু গ্রাম টাইপ।গাছপালা বেশি, বিল্ডিয়ের সংখ্যা কম।বাধ্য হয়ে আমাকে এখানে বাসা নিতে হয়েছে এমন একটা ভুতুড়ে পরিবেশে।কারণ আমি টিউশনি করে যা টাকা পাই তাই দিয়ে শহরের মধ্যে বাসা নিলে ভাড়া আমার বাজেটের থেকে বেশি হয়ে যায়।তাই এখানে নিলাম।আমি রুমে ঢুকে ওয়াসরুমে ফ্রেস হয়ে ওযু করে নামাজ আদায় করে নিলাম।
তারপর ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সকাল ৭টা বাজে।কলেজ তো ৮:৩০এ।হঠাৎ করে আম্মু বাবার ছবিটা সামনে পড়লো।আমি ফ্রেম করে দেয়ালে টানিয়ে রেখেছি।সাথে আমিও আছি তাদের কোলে।দেখে কতো সুখি একটি পরিবার মনে হয়।আজকে আমার মা-বাবা থাকলে হয়তো আমার জীবনটা পাল্টে যেত।অন্যরকম হতো।বাবার রাজকন্যা থাকতাম।ওইদিন আমাদের গাড়ি এক্সিডেন্টটা না হলে আমার মা বাবা বেচে থাকতো।এক কথায় এতিম আমি।।চাপা একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলাম।আগে এই ছবিটার দিকে তাকালে বুক ভরে কান্না আসতো কিন্তু এখন আর আসে না।তারপর রান্নাঘরে কফি বানাতে গেলাম।
সকাল ৮টা,
আমি রেডি হচ্ছি।এদিকে আমার বান্ধবিগুলো ফোন দিয়ে আমার মাথা খারাপ করে ফেলছে।ফোন দিয়ে ওই একটা কথা “কিরে আজকে কলেজে আসবি না”, “তুই না আসলে আমিও যাবো না” হ্যান ত্যান ভাতের ফ্যান উফ।মাঝে একজনকে বলেছি আমি আসছি তবুও ফোন দিচ্ছে।আমি রেডি হয়ে একটা নীল রঙয়ের থ্রী পিস পড়ে নিলাম।চুলটাকে পনিটেইল করে বেধে আমার গোল ফ্রেমের চশমাটাকে পড়ে ব্যাগ নিয়ে দৌড় লাগালাম।সেই আঁকাবাকা রাস্তায় ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছি।একটা রিকশাও পাচ্ছি না।হঠাৎ একজন বুড়ো পান চিবোতে চিবোৃতে রিকশা চালিয়ে আসছে।আমি হাত দিয়ে ইশারায় থামতে বললাম।রিকশাওয়ালা থামলো।তারপর পানের থু থু ফেলে উঠতে ইশারা করলো।আমি উঠে বসলাম।তারপর কলেজের সামনে এসে সোজা ক্লাসে ঢুকে গেলাম।
ক্লাস থেকে বের হয়ে বান্দরণী মানে আমার বান্ধবিদের সাথে গল্প করতে করতে বের হচ্ছি।আজকে তাদের টপিক হলো মানে তীব্র,সৌরভ আর রিজুর টপিক হলো ক্রাশ আর আমরা মেয়েরা মানে রিহা,উষা আর আমি বসে বসে তাদের কথা শুনছি।কারণ আজকে আমাদের কলেজে একজন অবিবাহিত সুন্দর একজন ম্যাডাম এসেছে।
তীব্র – আচ্ছা এতো সুন্দর আর হট একটা অবিবাহিত মেয়েকে ম্যাডাম বলা যায়?
রিজু : হ্যা ঠিকই কি সুন্দর আহ!!
রিহা – এই গাধা গুলো কি বাজে কথা বলছিস?ম্যাডাম হয় আমাদের সো সম্মান দিয়ে কথা বল!!
সৌরভ – তুই গাধা চুপ থাক।নিজে তো ক্লাসে অনন্ত স্যার এর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকিস তখন তো মনে ড্রাম বাজে তাই না!আমাদের বেলায় তোমার যতো উপদেশ হুহ!!
আমি শুধু তাদের কথা শুনছি আর মিটমিটিয়ে হাসছি।একটু পর তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম।কলেজের গেট এর বাইরে দাড়িয়ে আছি।আজকে নিজের NGO তে যেতে হবে।বাচ্চাগুলোর মনে হয়তো অনেক অভিমান হয়েছে এতোদিন দেখা করতে পারি নি বলে!
মাথার উপরে সূর্যি মামা তার প্রচন্ড তাপ দিয়ে মনে হচ্ছে সবকিছু ধ্বংস করে দেবে এমন অবস্থা।কালকে রাতে যে বন্যা হয়েছে সেই নমুনার বিন্দু মাত্র ছিটেফোঁটা নেই।চারদিকে মানুষের এই গরমে ঘেমে নিয়ে একাকার।আমি ব্যাগ মাথায় নিয়ে কোন সময় অপেক্ষা করছি।আমার দুইপাশে দুইটা প্রাইভেট কার দাড় করানো।হঠাৎ আমার সামনের প্রাইভেট কারের ব্যাক রেড লাইটটা জ্বলে উঠলো।আমি সরে দাঁড়ালাম তারপর আবার রাস্তার দিকে রিকশা খোজার উদ্যেশে নজর দিলাম।
– ও হ্যালো ম্যাডাম আমার গাড়িটা পিছন দিয়ে একটু ঠেলে দেবেন??
♣______চলবে______♣
#অজানা__তুমি
#রুবাইতা_রুহি(ছদ্মনাম)
#পর্ব- ১
Word No. – 1200
(