অজানা তুমি পর্ব ২+৩|রোমান্টিক প্রেমের গল্প

#অজানা__তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -২

আমি হতভম্ব হয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি কালো রংয়ের একটি গাড়ির সামনের ড্রাইভিং সিটের উইন্ডো থেকে একজন অতি সুদর্শন পুরুষ ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।কাকে ডাকলো?আমাকে?মাথার মধ্যে ভনভনিয়ে ঘুরছে।আমি ওনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে মনে মনে বললাম হয়তো আমাকে বলে নি তাই হালকা একটু সন্দেহ নিয়ে নিজের জুতা দেখতে লাগলাম।

– হেই ব্লু ড্রেসওয়ালি আমি আপনাকেই বলছি!একটু পিছনে দিক থেকে হালকা ঠেলে দিন না!স্টার্ট নিচ্ছে না।

আমি এবার প্রচন্ড বিষ্ময় নিয়ে ওনার গাড়ির দিকে তাকালাম তারপর ওনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।মানে টা কি?আমাকে গাড়ি ঠেলতে বলছে?রাস্তায় কি আর লোক নেই?কোন মেন্টাল হসপিতাল থেকে উড়ে এসেছে খোদা জানে!আমি ক্ষীপ্ত চোখে একটা মুখ ভেংচি দিয়ে ব্যাগ মাথা থেকে নামিয়ে পিঠে নিয়ে হাটার উদ্দ্যেশে পা চালাতে নিলেই

– What the hell!! আপনি কি কানে শুনতে পান না?আমি এতোবার ডাকছি?কেউ একটু সাহায্য চাইলেই দাম বেড়ে যায় বুঝি?

আমি লোকটার সামনে দাড়িয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলতে লাগলাম

– হ্যা দাম বেড়ে যায়া।মেয়েদের দেখলেই যতো সাহায্য চাইতে মন চায় তাই না?আপনাদের মতো লোকদের না আমার জানা আছে।এছাড়া রাস্তায় কি আর লোক নেই?যে ঘুরে ফিরে আমাকেই বললেন?হুহ!!

উনি রক্তীম চেহারা নিয়ে গাড়ি খুলে বেরিয়ে এলেন।আমি কিছুটা ঘাবড়ে চশমা ঠিক করে গলা ঝেড়ে হালকা সরে দাঁড়ালাম।উনি হালকা রুদ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে এগোতে এগোতে বলতে লাগলেন

– আপনি কি বাকা পথে আমার চরিত্রে হাত তুলছেন?আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।জানেন আমি কে?

– আপনার যদি সেটা মনে হয় তাহলে সেটাই।আর আমি আপনার নাম জানতেও চাই নি।আচ্ছা আপনি কোন আক্কেলে আমাকে গাড়ি ঠেলতে বলছেন?

– আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই।দেখুন আপনি আমার রাগ উঠিয়ে একদম ভালো করছেন না।এর জন্য আপনাকে পস্তাতে হবে।

– হুহ কি করবেন আপনি হ্যা?কি করবেন?

– দেখবেন কি করবো

বলে উনি আমার চশমাটাকে মাটিতে ঠাস করে ফেলে দিলেন।আমি হা করে ওনার কাজকর্ম দেখছি।কি হয়ে গেল এটা?আমার চশমা!না!!!চশমাটার গ্লাস ভেঙে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।দেখেই চোখে বঙ্গোপসাগরের সব পানি জমা হচ্ছে। আমি এক বস্তা রাগ আর কান্না নিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড়িয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলাম।

– এখন আপনি দেখুন কি হয়!!

বলে ব্যাগ থেকে পানির বোতলটা বের করে অর্ধেক পানি খেয়ে নিয়ে আর অর্ধেক পানি ওনার মাথায় ঢেলে দিলাম।

– হিহিহিহি বুদ্ধু বানায়া বাড়া মাজা আয়া।টা টা বাই।

বলে ব্যাগ নিয়ে দৌড় লাগালাম লাগালাম।গিয়েই রিকশায় এক লাফে উঠে রিকশাওয়ালাকে জলদি জলদি রিকশা চালাতে বললাম।পিছনে তাকিয়ে দেখি উনি কাক ভেজা হয়ে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে হঠাৎ একটা মুচকি হাসি দিলেন।আমি চোখ ঘুরিয়ে বুকে হাত দিয়ে হাপাতে লাগলাম।শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।এরকম মুচকি হাসি কেন দিল?যদি আমার ক্ষতি করে দেয়?আরে ওই বান্দরের সাথে আগে দেখা হবে তারপর তো!হাসিতে গদগদিয়ে সামনে নজর দিলাম।কিন্তু আমার চমশমাটা!যাক আরেকটা কেনা যাবে।এখন NGo তে যেতে হবে।

NGO
রিকশা থেকে নামলাম।তারপর আমার NGOএর ভিতরে ঢুকলাম।আম্মুর জমানো যে টাকাগুলো ছিলো সেগুলো আম্মু আমার নামে করে দিয়েছিলো সেই টাকা দিয়েই এই NGO টা বানিয়েছি।ভিতরে ঢুকে যে দরজাটা খুলবো ওমনি সব বাচ্চারা আমার দিকে খুশিতে হুমরি খেয়ে পড়লো।আমারও খুশিতে চোখে পানি চলে এলো।আমার তো কেউ বলতে এই বাচ্চাগুলোই আছে।তখনই খালা এলো মানে উনি এখানে সবার খেয়াল রাখে আর রান্না করে।

খালা—কি রে মনে পড়লো তাহলে আমাদের?

— খালা কি বলছো?তোমাদের মনে থাকবে না?তোমাদের ছাড়া আর আমার কে আছে বলো?

খালা— হ্যা হ্যা বুঝেছি।এখন তোমার বাচ্চাদের রাগ অভিমান ভাঙাও।

—হ্যা হ্যা জানি তো তাই তো আমি তাদের জন্য অনেক সারপ্রাইজ নিয়ে এসেছি!এগুলো কি তারা নিবে?

আমি ব্যাগ থেকে অনেকগুলো চকলেট,রং পেন্সিল আর ড্রয়িং খাতা বের করে সবাইকে লোভ দেখাতে লাগলাম।তাদের মধ্যে সব থেকে গুলুমুলু বাচ্চাটা নাম হলো ডাবলু সে বললো
– আমি জানি তুমি আমাদের এগুলো দেখিয়ে আমাদের রাগ ভাঙাতে চাইছো কিন্তু আমরা একদম গলবো না।হুহ অনেক রাগ কলেছি।

আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে ডাবলুর গাল টেনে বললাম
– তাহলে কিভাবে আমার ডাবলু সোনার রাগ ভাঙবে?

ডাবলু সবার দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে আমার দিকে পুনরায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বললো
– বিকালে আমাদেল সবাইকে নিয়ে ঘুরতে নিতে হবে তাহলে আমলা তোমাল সাথে কথা বলবো।

আমি কিছুক্ষণ সবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সবাই আমার দিকে আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে।আমিও কিছুক্ষণ চিন্তা করে দেখলাম বিকালেন টিউশনিটা রাত্রে করিয়ে নেবো।এ হয়তো একটু দেরি হয়ে যাবে কিন্তু আমার কাছে এই বাচ্চাগুলোর আনন্দ খুশি আগে।

আমি ডাবলুর গালে চুমু দিয়ে বললাম
– আচ্ছা নিয়ে যাবো খুশি?

সবাই “হ্যা” বলে চিল্লিয়ে খুশিতে লাফাতে লাগলো।আমি তাদের খুশি দেখছি।খালাকে বললাম
– খালা ওরা খেয়েছে?

খালা– না খায় নি এখনো রান্নাশেষ তুই যেহেতু এসেছিস তাহলে ওদের খাইয়ে দিয়ে যা।

আমি “হুম” বললাম।তারপর ওদেরকে খাওয়াতে বসলাম আর গল্প বলতে লাগলাম।তারপর বাসার উদ্যেশে রওনা হলাম।

বিকেলে সুন্দর আবহাওয়া বারান্দায় বসে উপভোগ করছি।চারিপাশে কি সুন্দর লাল লাল আভা।হালকা উষ্ণ বাতাস।সুর্য একটু হেলে পড়েছে।পাখিরা খাবারের উদ্যেশে বেরিয়ে গেছে।একটু পর রেডি হতে হবে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে যে বাচ্চাদের।হঠাৎ দেখলাম একজন বৃদ্ধা আমার বিল্ডিয়ের নিচে বসে আছে।কেমন অদ্ভুদ চেহারা।সাদা চুল,গায়ের রং অর্ধেক কালো আর অর্ধেক পুড়ে গেছে।দাঁতের কি বিভৎষ অবস্থা,হাতে পায়ের নখ ডাইনিদের মতো লম্বা লম্বা কালো ময়লা।পরনে ছেঁড়া একটা শাড়ি,হাতে একটা লাঠি।আমি কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে পর্যবেক্ষন করে ভিতরে গিয়ে রেডি হতে লাগলাম।একটা টপস আর জিন্স পরে উপরে স্কার্ফ গায়ে দিয়ে হালকা একটু সেজে পার্স নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে দেখি বৃদ্ধাটি কালো পুকুরের কাছে বসে বিপরীত দিকের ওই ভুতুড়ে বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে কিছু বলছেন আর এক হাতের তর্জনি আঙ্গুল দিয়ে গলার কাছে ঘোষছেন। হঠাৎ উনি আমার দিকে তাকালেন কেমন কেমন করে।আমি আমতা আমতা করতে করতে রিকশায় উঠে গেলাম।বুকের মধ্যে হ্রিদপিন্ড মনে হচ্ছে কেউ চেপে রেখেছে।ওই বৃদ্ধার চাহনি দেখে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছিলো।কোনোমতে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে ধীরেধীরে পিছে তাকাতেই আমার পিলে চমকে উঠলো বৃদ্ধাটি আমার রিকশার পিছে দৌড়াচ্ছে আর হাত দিয়ে কেমন কেমন করছে।আমি জলদি রিকশাওয়ালাকে তাড়াতাড়ি চালাতে বললাম।বুক এখনো ধুকপুক করছে মনে হচ্ছে এখনি ফেটে যাবে।কপাল বেয়ে এক বিন্দু ঘাম গড়িয়ে পড়লো আমি টিসু দিয়ে মুছে স্বাভাবিক হয়ে বসলাম।Ngo এ তে নেমে দেখি সবাই রেডি হয়ে বসে আছে।আমি খালাকেও রেডি হতে বললাম।

তারপর সবাই রওনা দিলাম পার্কের উদ্যেশে।সবাই খেলছে আমি আর খালা গল্প করছি।ভুলবশত আমি আমার চশমাটা রেখে এসেছি তাই একটু ঝাপসা দেখছি সবকিছু তবুও বুঝতে পারলাম খালা কেমন লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে পার্কের অন্যপাশে তাকিয়ে আছে ব্যাপার কি?

— খালা?তুমি এরকম লাজুক ভঙ্গিতে বসে আছো কেন?আর ওদিকে কি দেখছো?

খালা হাসতে হাসতে বললো
– রুহি তুই মাথাটাকে পিছনে ঘুরিয়ে ওই বেন্ঞের দিকে একটু নজর দে তো আর বল কি দেখতে পাচ্ছিস?

আমি একবার খালার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে তারপর ওদিকে বেন্ঞের উপরে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে আর একটা ছেলে খুব ঘনিষ্ট হয়ে কি যেনো করছে।একটু দূরে হওয়ার আর চশমা না থাকায় ভালো দেখতে পাচ্ছি না।ওও তার মানে খালা এইসব খুব মন দিয়ে দেখছে।আমি নাখ মুখ কুঁচকে খালার দিকে তাকিয়ে বললাম

– ও তার মানে এইসব দেখে খুব লজ্জা পাচ্ছো?আরে এই বাচ্চাদের পার্কেও এরা এইসব শুরু করে দিয়েছে।অসহ্য!!

খালা – আরে ধুর তুই এইসব বুঝবি না।সারাদিন লেখা পড়া আর টিউশনি নিয়ে থাকিস এইসব দেখে একটু শেখ।ভবিষ্যৎ এ কাজে লাগবে।দেখ কাপলটা কতো রোমান্টিক উফফ!!

আমি খালার কথা শুনে একটা মুখ ভেংচি দিয়ে বাচ্চাদের কাছে চলে গেলাম।আর ভাবতে লাগলাম,আচ্ছা ওই বৃদ্ধা মহিলা আমাকে দেখে এরকম করলো কেনো?
#অজানা__তুমি
#রুবাইতা_রুহি(ছদ্ননাম)
#পর্ব – ৩

ঘুরে ফিরে বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে থ্রী কোয়াটার ঢিলা পেন্ট আর গেন্জি পরে ছোট ফ্যানটাকে সামনে নিয়ে হা করে বাতাস খেতে লাগলাম।আজকে সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করতে করতেই সময় চলে গেলো।মাথা ঘুরিয়ে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ৭টা বাজে।হায় হায় টিউশনিতে যেতে হবে তাও দুইটা।কিন্তু এখন একটুও যেতে ইচ্ছা করছে না।ক্লান্তিতে হাত পা ছেড়ে আসছে।প্রচন্ড ঘুম আসছে।একটু বিশ্রাম দরকার।মাথা ঘুরিয়ে আসছে,চোখ ঘুমে বন্ধ হয়ে আসছে।না!ঘুমালে চলবে না।এক লাফে উঠে আবার রেডি হতে লাগলাম।বের হয়ে রাস্তায় এসে চারপাশে একবার দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম কোথাও ওই মহিলা আছে নাকি!নাহ নেই।একটা শান্তির নিশ্বাস ফেলে চারিদকে তাকিয়ে দেখি এখনই নিরজন হয়ে গেছে চারপাশ।থমথমে পরিবেশ,অন্ধকার হয়ে গেছে।রাস্তায় মাথার উপরে লেমপোস্ট এর হলুদ লাইট জ্বলছে।একদম নির্ঝর এলাকায় পরিণত হয়েছে।কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছে এখন রিকশা কোথায় পাবো?একটা দুইটা আসছে কিন্তু তাতে লোকজন ভর্তি।

অনেকক্ষণ অপেক্ষ করলাম।অবশেষে অপেক্ষার ইতি ঘটলো।একটা সিএজি পেলাম।ভিতরে অবশ্য একজন মহিলা,বাচ্চা আর একটা পুরুষ আছে।হয়তো স্বামী স্ত্রী। আমি থামতে ইশারা করলাম।সিএনজি থামলো তারপর ভিতরে বসে থাকা পুরুষটি সামনের ড্রাইভার এর পাশে গিয়ে বসলো।আমি ভিতরে গিয়ে বসলাম।সিএনজিটি গড়গড়িয়ে স্টার্ট দিলো।ধীরে ধীরে শহরের ভিতরে প্রবেশ করলাম।বাহ!আমি এতো রাতে কোনোদিন শহরের ভিতরে আসি নি।কারণ আমি রাতে বের হই না কোনোদিন।এখানে ভালোই মানুষের আনাগোনা আছে।দোকান পাট সবই খোলা।শুরু হলো রাতের ব্যাস্ত শহরের বিকট শব্দের গাড়ির হর্ন ,গাড়ির কালো ধোয়া,ধুলোময়লা যুক্ত রাস্তা।এখানে মাস্ক ছাড়া টেকা এক সেকেন্ড ও সম্ভব না।আমি আমার কাঙ্খিত স্থানে পৌছে নেমে গেলাম।খালা ঠিকই বলে টিউশনি করাতে করাতে আমার জীবনটাই ত্যানা ত্যানা হয়ে গেলো।

রাস্তায় দাড়িয়ে আছি আর একটু পর পর চারদিকে নজর দিচ্ছি।একটা খালি রিকশা দরকার।রাত ৭টায় বের হয়েছিলাম এখন ১০টা বাজে।এখনো বাসায় পোঁছাতে পারি নি।রিকশা পাবো তারপর ১ঘন্টা পর নিজের বাসায় পৌঁছাবে। আসলে আমারই ভুল হয়ে গেছে।এতো দূরে বাসা নেওয়ায় প্রচন্ড সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।একটা বিরক্তিকর শ্বাস ফেলে চোখ মুখ কুঁচকে রিকশা খুঁজতে লাগলাম।বেশি রাত হয়ে গেলে ব্যাপারটা খারাপ হয়ে যাবে কারণ এই নির্জন আধারেই বিভিন্ন মানুষ রূপি হিংস্র জানোয়ার ঘুরে বেরায়।তবে একটু আগের তুলনায় এখন এই ব্যাস্ত রাস্তাটা কিছুটা নিরব হয়ে গেছে।মাঝে কয়েকটা গাড়ি আর ট্রাক শো করে চলে যাচ্ছে।দোকান পাট,শপিং মল সব বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটা খোলা তবে সেগুলোও বন্ধ করার প্রস্ততি নিচ্ছে।আমি একটাও খালি রিকশা বা গাড়ি পাচ্ছি না।এতো রাতে আমি কোনো অপিরিচিত মানুষের সাথে গাড়িতে উঠতে চাইছি না।তাই খালি রিকশাই খুজছি।

হঠাৎ করে প্রচন্ড বেগে বাতাস শুরু হলো।রাস্তার ধুলোবালি সব উড়ছে।বিদ্যুৎ ও চমকাচ্ছে।মনে হচ্ছে কালকের মতো আবার বন্যা হবে।কেনো জানি আমার মনে হচ্ছে কিছু গন্ডগোল হতে চলেছে।হাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় এগারোটা বেজে এসেছে।কপালে ঘাম বেরোতে শুরু করলো।হালকা ভয় ভয় লাগছে।আরো এতো বাতাসে শরীরে অদ্ভুদ রকমের কাটা দিচ্ছে।চারিদিকে থমথমে অন্ধকার।দূরে দূরে হালকা লাইট দেখা যাচ্ছে।রাস্তার চলাচলরত কয়েকটা লোক আমার দিকে অদ্ভুদ নজরে দেখছে।আমি আর অপেক্ষা না করে পায়ে হেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।মাথায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে রাখলাম আর মুখে মাস্ক পরে নিলাম।যথা সম্ভব জোরে পা চালানোর চেষ্টা করছি।হঠাৎ করে একটা মোটরসাইকেল আমার সামনে থামলো।পিছনে দুইজন লোক আছে।আমি হালকা ঘাবড়ে গেলাম।ভিতরে ভিতরে ভয়ে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি।তবুও স্বাভাবিকতা বজায় রেখে দাড়িয়ে তাদের দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালাম।সামনের হেলমেট পড়া লোকটি হেলমেটের সামনের গ্লাস উপরে উঠালো।তারপর তার বিশ্রী চোখ দিয়ে আমাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।আমি লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম।লোকটার এক চোখের মনি সাদা আর অন্যটা কালো।কেমন অদ্ভুত।আমি তাদের পাশ কাটিয়ে জোরে জোরে হাটতে লাগলাম।

– ওও ম্যাডাম কোথায় জাইতাছেন?আমাদের একটু সাহায্য কইরা যান।

লোকগুলোর কথা শুনে আমার সারা হাত পা বরফের ন্যায় ঠাণ্ডা হয়ে গেলো।কাপাকাপি পায়ে হালকা দারিয়ে পড়লাম।তারপর আবার হাটা শুরু করলে লোকগুলো একদম বাইক নিয়ে আবার আমার থামনে থামালো।আমি কোনোমতে শক্ত চোখ করে তাদের দিকে তাকালাম।আমাকে এদের সামনে দূর্বল দেখালে চলবে না।পিছনের লোকগুলো সিগারেটের দূর্গন্ধের ধোয়া ছেড়ে পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে আমার দিকে তাকিয়ে একটা গা জ্বালানো হাসি দিলো।তারপর বলতে লাগলো

– আফা একটু সাহায্য হরেন।মোরা এই জায়গায় নতুন আইছি।সামনের একটা বাড়িতে যাইতে ওইবো।কিন্তু পথ চেন্তে পারতেয়াছি না।আমনে যদি একটু কইয়া দেতেন।

বলে পিছনের লোকটি বাইক থেকে নেমে গেলো।আমি ভয় পেয়ে পিছনে সরে গেলাম।তারপর বলতে লাগলাম

– দেখুন আমি পারবো না।আপনারা অন্যকেউকে জিগ্যেস করুন দয়া করে আর আমাকে যেতে দিন।

লোকগুলো একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত আবার স্ক্যান করে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ঘোষে নিলো।ছি!

– না আফা আপনে একটু চিনাই দেন।আহেন আপনার আমাগো লগে বাইকে উঠেন।হেরপর চিনাইয়া দিয়া ওই জায়গায় পৌছাইয়া আপনেরে আমরা ছাইড়া দিমু।আহেন আহেন!

বলে লোকটা আমার হাত ধরলো।আমি এক ঝাড়ি মেরে হাত সরিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকালাম।তারপর জোরে চিল্লিয়ে বললাম

– এই আপনাদের সাহস তো কম না আপনি আমার হাত ধরেছেন?আমি কতবার বললাম আমি পারবো না।অন্যকেউকে বলুন তবুও কথা শুনছেন না।বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না হ্যা!খারাপ হয়ে যাবে।

এবার বাইকের একদম সামনের এক চোখ সাদাওয়ালা লোকটা নেমে আমার দিকে তাকিয়ে বললো

– এই **গি বেশি চিল্লাবি না।চুপচাপ কইতাছি লো আমাগো লগে।বেশি টাহা দিমো নে।মজা পাবি।সকালের আগে ছাইড়া দিমো।

বলে সবকটা লোক বিশ্রী ভাবে হাসতে লাগলো।এদিকে এদের কথা শুনে আমার এখন প্রচন্ড ভয় করছে।এদিকে আকাশের অবস্তুা একদম ভালো না।ঘন কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেছে।হালকা হালকা পানির ফোটা আমার হাত বেয়ে গরিয়ে পড়তে লাগলো।হঠাৎ বিকট শব্দে বাজ পড়ে তীব্র বৃষ্টি শুরু হলো।আমি কাপাকাপি হাতে চারদিকে তাকাতে লাগলাম।হঠাৎ করে মাটিতে চোখ পড়লো একটা ইট।লোকগুলো আমার হাত ধরতে নিলে আমি ওই সাদাচোখী লোকটার মাথায় ইট দিয়ে সজোরে বারি দিলাম।আর লোক দুইটা এগোতে নিলেই আমি দৌড়াতে শুরু করলাম।দেশ,বিদেশ নিজের জন্মভূমি ভুলে যেখানে চোখ যায় সেদিকে দৌড়াতে লাগলাম।

♣______চলবে_______♣

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here