অজানা তুমি পর্ব ৪+৫

#অজানা__তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -৪

দৌড়াতে দৌড়াতে হাপিয়ে গেলাম তবুও দৌড়ে যাচ্ছি।প্রচন্ড আতংক আর ভয় খুব ভয়ানক ভাবে গ্রাসিত করেছে আমাকে।এদিকে বৃষ্টিতে ভিজে একদম একাকার অবস্থা আমার।রাস্তা বৃষ্টির ফলে হালকা পিছলা হয়ে গেছে। তাই বারবার উল্টে পরতে পরতে বেচে গেছি।পিছনে তাকিয়ে আমার হ্রদ স্পন্দন থেমে যাওয়ার উপক্রম।কারণ পিছনে ওই জানোয়ারগুলোও আসছে।আমি দৌড়াতে একটা ছোট ফার্মেসির পিছনের দিকটায় থামলাম।আশেপাশে তাকিয়ে একটা গাড়ি পার্কিং করা দেখতে পেলাম।আমি এক মুহুূর্ত না দাড়িয়ে দৌড়ে গাড়িটার পিছনের দরজা খুলে ঢুকে গেলাম।ভাগ্যিস লক করা ছিলো না।কাচুমাচু হয়ে হাত পা গুটিয়ে লম্বা লম্বা শ্বাস ছাড়তে লাগলাম।ভিজে খুবই খারাপ অবস্থা।মাস্কের কারণে এতোক্ষনে পুরো দম আটকে মরেই যেতাম।তাই মাস্ক খুলে শান্তির নিশ্বাস নিতে লাগলাম।হালকা ঘাড় উঁচু করে দেখি লোকগুলো ফার্মেসির সামনে এসে আমাকে তন্য তন্য করে খুঁজছে।

– Hey, who’s there?

কারো গম্ভীর কন্ঠ শুনে চমকে গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশের উইন্ডোর দিকে নজর দিলাম।কেউকে দেখা যাচ্ছে।কিন্তু সিটের কারণে মুখ দেখতে পাচ্ছি না।ওহ মাই গড!আমার এতোক্ষনে মনে হলো আমি কারও গাড়িতে উঠে বসে আছি।আমার এখন ভয় হতে লাগলো যদি এই গাড়ির মালিক আমাকে বের করে দেয় তাহলে তো আজকে আমি শেষ!ভাবতে ভাবতেই আবার কেউ গম্ভীর কন্ঠে হালকা চিৎকার করে বলে উঠলো

– হেই কে ওখানে?

বলে গাড়ির পিছনের মানে আমি যেখানে বসে আছি সেদিকে দরজা খোলার জন্য এগিয়ে আসতে লাগলো।আমি এবার ভয় পেয়ে কোনোকিছু চিন্তা না করেই গাড়ির দরজাটা খুলে ওই ব্যাক্তিটিকে দুই হাত দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে গরগর করে বলতে লাগলাম

– প্লীজ একটু চুপ করুন।আমি জাস্ট একটু সময়ের জন্য বসবো।তারপর আবার বের হয়ে যাবো।তাই দয়া করে চিৎকার করবেন না।

বলে আমি আবার ওই লোকগুলোর দিকে তাকালাম।ওরা এই গাড়ির দিকেই তাকিয়ে আছে।

– এই মেয়ে তুমি?

কারো রুদ্ধ শুনে নিজের দুই হাতের দিকে তাকালাম।লোকটাকে দেখে আমার পিলে চমকে উঠলো।এইটা তো উনি যে আমাকে গাড়ি ঠেলতে বলেছিলো।আমি হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গেছি।

– হেই কোথায় হারিয়ে গেলে?তুমি এখানে কি করছো?উপস সরি ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড তোমাকে তুমি করেই বলছি কারণ তোমাকে আমার থেকে ছোট মনে হচ্ছে।এতো রাতে একা একটা মেয়ে হয়ে এই রাস্তায় ঘুরঘুর করছো?বুদ্ধি শুদ্ধি নেই নাকি??

আমি লোকটার কথা শুনে চমকে তার মাথা ছেড়ে দিলাম।লোকটা সোজা হয়ে দাঁড়ালো আর নিজের কোট ঠিক করতে লাগলো।তারপর আবার আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।আমতা আমতা করছি।হঠাৎ লোকগুলো একদম গাড়ির সামনে এসে বলতে লাগলো

– এই তো মাইয়াডারে পাইয়া গেছি।বস এদিকে আহেন।এই দেহেন গাড়ির ভিতরে পোলায় রইছে।

বলে আমার দিকে বিশ্রী চাহনি দিয়ে তাকালো।আমি ভয় পেয়ে গেলাম।হাত পা থরথর করে পুনরায় কাঁপতে লাগলো।এদিকে ওই ব্রিটিশটা পকেটে হাত গুঁজে সবার কান্ড কলাপ বোঝার চেষ্টা করছে। তাদের বস মানে সাদাচোখী ব্রিটিশটাকে দেখে কেমন ভয় পেয়ে গেলো।আমি ওনার দিকে তাকিয়ে দেখি ওনি স্বাভাবিক দৃষ্টিতেই ওই জানোয়ারগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।ব্যাপার কি?

বস – এই চল চল।আমাগো জলদি যাইতে ওইবো।

লোকগুলো বলতে লাগলো তাইলে মাইয়াডা?বস ওদের কলার ধরে কোনোমতে দৌড়ে পালালো।আমি অবাক হয়ে এখনো তাকিয়ে রইলাম।ওনাকে দেখে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে?ভয় পেল নাকি?অন্যকিছু?

ওনি পকেট থেকে এক হাত উঠিয়ে
আমার দিকে হালকা ঝুকে বললো

– ম্যাডাম!

আমি থতমত খেয়ে দ্রুত নেমে গেলাম।তারপর কিছুটা চাপা গলায় বলতে লাগলাম

– আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।এখন আমাকে যেতে হবে।

– hey wait wait!! তুমি যাবে মানে?কোথায় যাবে এই রাতে একা একা?আর তুমি তো পুরো ভিজে গেছো?তোমার কি মনে হয় এখন আমি তোমাকে এভাবে একা ছেড়ে দেবো?এতোটা ইরেসপন্সিবল মনে হয় আমাকে?

আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম।ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড অসস্তি হতে লাগলো।পরনে শর্ট কামিজটা ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে বার বার ওরণা দিয়ে গা ঢাকা দিচ্ছি।এদিকে অনেকক্ষণ ভিজে থাকায় প্রচন্ড হার কাপানো শীত আমাকে গ্রাস করলো।আমি মাথা নিচু করে বললাম

– দেখুন আমাকে একটা রিকশা খুজে দিন।তাতেই অনেক সাহায্য হবে।

লোকটা কিছুটা অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললো

– হুমম দেবো অবশ্যই সাহায্য করবো।সবাই তো আর তোমার মতো হয় না।

আমি বিষ্ময় নিয়ে তাকালাম।বুঝলাম লোকটা আমাকে অপমান করছে।ওইদিনের জন্য।কারণ আমি ওনার এই ইন্টারন্যাশনাল গাড়ি ঠেলে দেই নি দেখে।মুহুূর্তেই রাগ মাথায় চাড়া দিয়ে উঠতে লাগলো।তবে এখন রাগারাগি করলে নিজেরই বিপদ।তাই চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম আর এক হাত খামচাতে লাগলাম।

– যাও গাড়িতে উঠো।আমি ১ সেকেন্ডর মধ্যে আসছি।

আমি দাঁড়িয়ে পা নাচিয়ে যাচ্ছি দেখে আবার বললো

– কি হলো?যাও উঠো!আমি একটা কথা বারবার বলতে পছন্দ করি না।আশা করি তোমাকে বোঝাতে পেরেছি!গো ফাস্ট।

বলে চলে গেলো আবার কোথায়।তখনই কানে তালা লাগানো শব্দে বাজ পড়লো। আমি কেপে উঠে জলদি পিছনের সিটে উঠে বসলাম।এদিকে প্রচন্ড ঠাণ্ডা লাগছে।বসেছি তো ঠিকই কিন্তু গাড়ির সিট তো ভিজে যাচ্ছে।তখনই উনি এলেন।আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো।তারপর গিয়ার ঘোরাতে নিয়ে আবার থেমে আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো।আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বাইরে তাকালাম।

– হেই সিট বেল্ট বাধো।

শুনে আমি ওনার দিকে তাকিয়ে “হ্যা” সূচক মাথা নারলাম।যাক অন্তত মুভির মতো নিজে মাতোব্বরি করে বাধতে আসে নি।

চারিদিকে পিনপতন নিরবতা।থমথমে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে চারদিক।আকাশে কালো রংয়ের মেঘের ছোটাছুটি,মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকানো সঙ্গে হালকা গুম গুম শব্দ।আমি বাইরে জানালার কাছে মাথা দিয়ে বসে আছি।উনি চুপচাপ মনযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছেন আর সামনের গ্লাস দিয়ে মাঝে মাঝে পরখ করছেন আমাকে।হঠাৎ করে ঝিরঝিরে অল্প বৃষ্টি থেকে ঝর ঝর করে প্রবল বেগে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।কানে তালালাগা প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত পরতে শুরু হলো।আমি গ্লাসটা লাগিয়ে দিয়ে আবার তাকিয়ে রইলাম।সামনে বিশাল বড় সবুজ আর সতেজ মাঠ দেখা যাচ্ছে।চারপাশে গাছপালা বেয়ে তীব্র বৃষ্টির পানি পড়ছে।ঠাণ্ডাটা একটু কমেছে কারণ উনি উনার কোট আমাকে পড়তে দিয়েছেন।আমি চাই নি নিতে তবুও ওনার জোরাজুরিতে আর ঠাণ্ডাবোধে নিয়ে নিলাম।ওনার কোট থেকে একটা নেশালো আর মাতাল করা পারফিউম বার বার আমার নাকে আসছে।তাতে যেনো আমি কোনো ঘোরে চলে যাচ্ছি।

– হেই ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি?কোনো কথা বলছো না যে?এখনো ঠান্ডা লাগছে?

আমি আলতো করে “না” বললাম।

– হুম।আচ্ছা তোমার নামটাই তো জানা হলো না।নাম কি তোমার?জানতে পারি?

আমি কিছুটা অসস্তি বোধ নিয়ে বললাম

– নূরা আহমেদ।

উনি আচমকা আমার দিকে ঘুরে কিছুটা হুংকার দিয়ে বললেন

– কি?কি বললে তুমি?আরেকবার বলো?
#অজানা_তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব – ৫(বোনাস পার্ট)

রাত ২টা

আমি রুমের ফ্যান লাইট অফ করে জানালার কাছে ফাঁদ পেতে বসে আছি।যখনই ওই কালা বাদুরটা আসবে তখনই খপ করে এই পলিথিনে ঢুকিয়ে ফেলবো।প্রতিদিন এইখানে এসে দাড়িয়ে থাকা?ছুটাচ্ছি।আজকে এই বান্দরের মানে বাদুরের রহস্যের সমাধান করবোই,করবোই!জানালার পাশে চেয়ার নিয়ে বসলাম।

হঠাৎ মাথায় কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আচ্ছা ওই লোকটা আমার ঠিকানা কিভাবে জানলো?আমি তো গাড়িতে উঠে আমার বাসার ঠিকানাটা বলি নি তাহলে?আবার শর্টকাট ও চেনে?যা আমি এইখানে ২বছর থেকেও জানতে পারি নি!নাকি লোকটা আমাকে আগে চিনতো?এছাড়া লোকটার নামটাও জানা হলো না!!?অফ মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে।সবদিক থেকে এতো চাপ সহ্য করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।যাই হোক মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেলে যেটা করতে যাচ্ছি সেটায় ফোকাস করা জরুরি।আমি শকুনের মতো চোখের দৃষ্টি করে চিতাবাঘের ন্যায় ফাঁদ পেতে বসলাম।

প্রায় ১০মিনিট পর,

চেয়ারে বসে ঝিমাচ্ছি এখনো আসছে না কেনো?হঠাৎ জানালার গ্লাসে টকটক শব্দে ধরফরিয়ে চেয়ার থেকে উঠে তাকিয়ে দেখি গ্লাসের একদম পাশে গ্রিলের সাথে বসে আমার বিছানার দিকে মাথা ঘুরিয়ে বাদুরটা বসে আছে।তবে আজকে একটু দেরি কেনো?আমি পলিথিনটাকে ভালোভাবে ফুলিয়ে ধীরেধীরে খপ করে ধরে ফেললাম বাদুরটাকে।আরে কোনো লড়ালড়ি ঝাপাঝাপি ছাড়াই এরকম চুপচাপ বসে আছে কেনো?আর এতো শক্ত?মনে হচ্ছে পেটের মধ্যে লোহা জাতীয় কিছু আছে?আমি পলিথিন থেকে বের করে হাতে নিতে গেলেই বাদুরটির একটি পাথনা নিচে ঠাস করে পড়লো।কোনো কিছু পড়ার শব্দে নিচে তাকিয়ে মারাত্মকভাবে ভয় পেয়ে গেলাম।একটা চিৎকার দিয়ে হাত থেকে বাদুরটাকে ছুড়ে চেয়ারের উপর উঠে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছি।এটা কি?বাদুরতো এরকম হয় না?আর পাথনা এভাবে পড়ে গেলো কিভাবে?তারপরও কোনো রক্ত বের হচ্ছে না?শ্বাস নিতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।মাথা ঘুরাচ্ছে,চোখ দুটো অবশ হয়ে যাচ্ছে।পুরো শরীরে কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে।না!না! অজ্ঞান হলে চলবে না।আমি পড়ে থাকা বাদুরটির দিকে ধীরেধীরে নজর দিয়ে দেখি ওটার ডানার কাছে গোল গোল লাইট জ্বলছে।

আর তাকিয়ে থাকতে পারলাম না।চোখ বন্ধ হওয়ার আগে এইটুকুই দেখলাম যে বাদুরটি নিজে নিজেই আবার উড়ে চলে যাচ্ছে।চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।পড়ে রইলো আমার নিস্তেজ দেহ।

সকালে তীব্র রোদের আলো চোখে পড়ায় ধীরে ধীরে চোখ খুললাম।কোথায় আমি?মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।ঘাড়ে চিনচিন ব্যাথা করছে।মাথা হালকা চেপে ধরে উঠে বসলাম।সামনে ফ্লোরে নজর পড়তেই কয়েকটা ছোট ছোট লোহা আর অতি ক্ষুদ্র লাল একটি লাইট দেখতে পেলাম।হঠাৎ কালকে রাতের কথা মনে পড়ে গেলো।বাদুরটা কোথায়?কোথাও তো নেই!তাহলে গেলো কোথায়!

বাম হাতের কাছে তুলতুলে কোনো জিনিস অনুভব হতেই তাকিয়ে দেখি বাদুরটির পড়ে যাওয়া পাখনাটি মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।আমি আবার প্রচন্ড ভয় পেয়ে ছিটকে দুই তিন পা পিছনে সরে গেলাম।ধীরেধীরে সামনে এগিয়ে ভয়টাকে মাথা থেকে সরিয়ে কাপাকাপি হাতে পাথনাটি হাতে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম।উপরে পাখির পালকের মতো কালো তুলতুলে থাকলেও ভিতরে প্লাস্টিক আর লোহা জাতীয় কিছু আছে।তার মানে ওটা খেলনা বাদুর ছিলো?কিন্তু খেলনা হলে তো কারো কনট্রোল ছাড়া উড়ে বেড়াবে না!তাহলে কি কেউ ইচ্ছে করে আমার জানালার কাছে প্রতিদিন এইটা নিয়ে আসে?কিন্তু কেনো?এরকম হাজার হাজার প্রশ্ন মস্তিষ্কে টগবগ করছে।পুরো একটা গোলকধাঁধা লাগছে সবকিছু। মনে হচ্ছে কোথাও ঘুরে ফিরে একটা জায়গায় সমস্তরকমের মিল আছে।কিন্তু সেটা কি?

আমি ধীরেধীরে উঠে পাখনাটিকে আমার ড্রয়ারে রেখে দিলাম।আজকে যেহেতু শুক্রবার তাই কলেজ বন্ধ।ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি সকাল ৯টা বেজে গেছে।আমি ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে চুল বাধতে নিয়ে ঘাড়ে কাছে লাল কারো কামড়ের দাগ চোখে পড়ল।ছোঁয়া লাগায় প্রচন্ড পরিমানে জ্বলছে।তার মানে কালকে রাতেও আবার কেউ এসে আমার সাথে………!ভাবতেই সারা শরীর গুলিয়ে উঠছে।

♣_______চলবে______♣

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here