অজানা তুমি পর্ব ২১+২২

#অজানা_তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -২১

কি শুনলাম এটা?বিয়ে?অভিভূত হয়ে আয়রানের দিকে তাকালাম।কান ঝা ঝা করে উঠলো।এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।আয়রান আমার হাত ধরে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।আমি গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছি।আয়রান আমার হাত ধরে টেনে বললো

-“”কি হলো শুনতে পাচ্ছো না?চলো বিয়ে করবো।আর আজকেই এবং এখনই।চলো গাড়িতে উঠো।””

আরে মানে টা কি?বিয়ে টা কি ছেলে খেলা নাকি?যে বললেই হয়ে যাবে?ওনারও তো মা-বাবা আছেন এভাবে হুটহাট বিয়ে তে ওনারা আমাকে মেনে নেবেন?এছাড়াও অনাথ আমি।মা-বাবা ছাড়া মেয়েকে কেউ মেনে নেবেও না স্বাভাবিক।হ্যা আমিও চাই ওনাকে।এই কয়েকদিনে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু এভাবে বিয়ে!না!এটা হয় না।আমি ওনার হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে দিয়ে বললাম

-“”বিয়ে মানে কি বোঝেন?এটা কোনো ছেলেখেলা না!যে বললেই হয়ে যাবে।এছাড়া আমি এতিম।কেউ নেই আমার।আমার মতো মেয়েকে আপনার মা-বাবা মেনে নেবে না।আর এমনিও এই বিয়ে আমি করতে পারবো না।

বলে মলিন চোখে ওনার দিকে তাকালাম।শরীর প্রচন্ড দূর্বল লাগছে।সাথে অনেক ঘুমও এসেছে।আয়রান আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে।আমার হাত দুইটা নিজের কাধের উপর রেখে বললো

-“”কেনো বিয়ে করতে পারবে না?ভালোবাসো না আমাকে?””

শুনে বুক কেপে উঠলো।কিভাবে ডাইরেক্ট প্রশ্ন করলো?একটুও মুখে বাধলো না?উনি কি জানেন?যে আমি ওনাকে ভালোবাসি?তাতে কি?উনি তো বাসেন না।তাহলে এতো বিয়ের জন্য পাগল কেনো হয়েছে?বুঝলাম না।আমি মাথা নিচু করে হাত কচলাতে লাগলাম।আয়রান আবারও আমার হাত দুইটা নিজের গালের উপর রেখে বললো

-“”তোমার হাত দুটো এতো ঠান্ডা কেন?যাই হোক আমার খুব ভালো লাগছে।””

বলে আমার দুটোকে শক্ত করে ধরে নিজের গালে ঘষতে লাগলেন।এদিকে আমি লজ্জায় বারবার হাত নামাতে চাইছি।এতে উনি উল্টা না ছেড়ে আমার হাত দুইটা নিজের গলায় চেপে ধরলেন।এতে যেনো পাথর হয়ে গেলাম।বুকে ড্রাম বাজতে শুরু করলো।হঠাৎই উনি আমার হাত গলা থেকে নামিয়ে শক্ত করে ধরে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকিয়ে দিলেন।

-“”অনেক কথা হয়েছে।এখন চলো!””

বলে নিজেও ঢুকে গেলেন।তারপর স্টারটা দিলেন।আমি এখনো হা করে তাকিয়ে আছি।উনি সেটা দেখে একটা চোখ টিপ দিলেন।আমি বিরক্তিসূচক মাথা ঘুরিয়ে বাইরে তাকালাম।কোথায় যাবো এখন?আর তো কিছুই নেই আমার।কোথায় থাকবো?কি খাবো?এইসব চিন্তা করতে করতে কবে ডিপ্রেশনে চলে যাবো নিজেও বুঝবো না।আয়রানের গাড়ি সোজা কাজি অফিসের সামনে থামালো।আয়রান বের হয়ে আমাকেও জোর করে বের করলো।আমি কাজি অফিসের দিকে তাকিয়ে দেখি ওইটা বন্ধ।কারণ এতো সকালে স্বাভাবিকভাবেই সব বন্ধ থাকে।আয়রান কাকে যেনো ফোন করে জোর গলায় কিছু বলতে লাগলো।তারপর ফোন কেটে আমার দিকে এগিয়ে এলো।আমি কাচুমাচু হয়ে দাড়িঁয়ে আছি।প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছে।আয়রান থাবা দিয়ে আমার হাতটা আবার নিজের হাতের মুঠোয় নিলো।তারপর আমার গাল ধরে নিজের সাথে চেখের সাথে আমার চোখ মেলালো।ঘোর লাগা দৃষ্টিতে বললেন

-“”আজকের পর থেকে তুমি শুধু আমার হয়ে যাবে।কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না আই সোয়ের।হুম!””

বলে আমার সাথে নাকে নাক ঘোষে সরে দাঁড়ালেন।উনি আজকে এরকম কেনো করছেন?বুঝতে পারছি না।এমনিতে তো এতোটাও কাছে আসে না।আজকে অদ্ভুত ব্যবহার করছেন।একটু পরই একজন বুড়ো টাকওয়ালা সাদা পান্জাবি পরিহিত মধ্য বয়স্ক পুরুষ রিকশা থেকে তড়িঘড়ি করে নামলো।তারপর আয়রানের উদ্যেশে বললো-“চলুন!চলুন!”

তখনই আয়রান আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে দাঁত কিড়িমিড়িয়ে শ্বাসনের কন্ঠে বললো

-“”হেই লিসেন!ভিতরে ঢুকে কোনো জোরাজোরি করবে না।আমি যেটা বলবো সেটা অক্ষরে অক্ষরে শুনে চলবে।কোনো রকম বাড়াবাড়ি,ছটফটানি,চিল্লাপল্লা করলে তোমার খবর উনিশ করে দিবো বলে দিলাম।লের্টস গো!””

বলে আমাকে ধরে ভিতরে নিয়ে গেলেন।সামনে লোকটা একটা পেপারে কি জেনো করছে।লোকটা হঠাৎ বলে উঠলো

-“”আপনাদের বিয়ে তো হবে।কিন্তু সাক্ষী থাকবে কে?””

-“”সাক্ষী লাগবে কেনো?আমরাই তো সাক্ষী। আপনিও কাজির সাথে সাথে একজন সাক্ষী থাকবেন।””

-“”না মি.আয়রান আজহার এটা হয় না।এই রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন লাগবে সাক্ষীদের।মিনিমাম ২ কি ৪ চারজন সাক্ষী হিসেবে থাকতেই হবে।””

আয়রান ফোস করে একটা নিশ্বাস ফেললো।তারপর আরেকটু দূরে গিয়ে কাকে যেনো কল করলো।সেই ফাঁকে কাজিকে জিগ্যেস করলাম
-“”এটা কিসের পেপার?””

-“”সে কি আপনি জানেন না?””

আমি কিছু বলার আগেই আয়রান কোথা থেকে এসে আমার মুখ চেপে ধরলো।কাজির দিকে তাকিয়ে কিড়মিড়িয়ে একটা হাসি দিলো।তারপর আমি দিকে চোখ রাঙিয়ে আবারও আমার ডান হাত শক্ত করে চেপে ধরে পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।উনি আজকে এতো আমার হাত ধরছেন কেনো?কথায় কথায় হাত চেপে ধরছেন।আমি মাথা নামিয়ে নিলাম।বুঝে গেছি আজকে এখানে বিয়ে করেই ছাড়বেন।একদিকে ব্যাপারটা ভালোও লাগছে অন্যদিকে খারাপও লাগছে।হঠাৎ করব হৈইহৈই করতে করতে ৩টা ছেলে এলো তারপর ২টা মেয়ে ঢুকলো।আয়রান বিরক্তি নিয়ে ওদের দিকে তাকালো।তখনই একটা ছেলে ঠাস করে আয়রানের পিঠে চাপড় দিয়ে বললো

-“”কিরে দোস্ত আমাদের রেখেই বিয়ে করতে যাচ্ছিলি?ভালোই হলো সাক্ষী লাগবে।নইলে জীবনেও বলতি না।ফকিরের ভাই।অল ক্রেডিট গোজ টু কাজি দাদু!””

শুনে কাজি খুকখুক হাসতে লাগলো।হয়তো এই বয়সে “দাদু” শুনে।তখন একটা মেয়ে একটি সপিং ব্যাগ আয়রানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো

-“”নে ধর।খবু সুন্দর একটা দামি শাড়ি কিনে এনেছি।আর ভাবি যা সুন্দর সেইরকম মানাবে ভাবিকে।একদম আয়রানের হিরোইন।””

আয়রান কটমট করে সবার দিকে তাকালো।তারপর ব্যাগ থেকে একটা সুন্দর লাল শাড়ি বের করে আমার মাথায় কোনোভাবে পেঁচিয়ে দিলো।এমনভাবে পেঁচিয়ে দিলো যে চোখটাও ঢেকে গেছে।আয়রান ফটাফট বলে উঠলে

-“”হয়েছে?সবঠিক আছে?এখন তাড়াতাগি বিয়ে পড়ান।””

পিছন থেকে সবাই আয়রানের এতো তাড়াহুড়ো দেখে হাসতে লাগলো।অবশেষে বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।যদিও সাইন করার সময় একটু কাঁপছিলাম।তাও আমার বাম হাত ধরে শ্বাসিয়ে সাইন করিয়ে নিয়েছে।তারপর একে একে সবাই বিদেয় হলো।আয়রান কোমলভাবে আমার হাত ধরে গাড়িতে ঢুকতে ইশারা করলো।আমি ঢুকে বসলাম।আয়রানও আমার পাশে বসে পড়লো।সামনে ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে।এই ড্রাইভার কোথা থেকে আসলো।এতোক্ষন তো ছিলো না।আমি চুপচাপ বসে আছি।মনের ভিতর অস্থিরতা কাজ করছে।ভাবতেই অবাক লাগছে।এখন আমি ওনার স্ত্রী?আর উনি আমার স্বামী?ভাবতেই আড়চোখে আয়রানের দিকে তাকালাম।আয়রানো আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।তাই চোখাচোখি হয়ে গেলো।আয়রান আমার হাত ধরে শান্ত হতে বললো।
#অজানা_তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -২২

গাড়িটি থামলো বড় দুইতলা একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে।চারপাশে আধার নেমে আসছে ধীরেধীরে।বাড়িটার চারদিকে সুন্দর সুন্দর গাছপালায় ভর্তি।বাড়িটার এক সাইডে বিশাল বড় একটি সুইমিং পুল।কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো এখানে কোনো লাইট নেই।প্রায় রাত সাতটা কি আটটা বাজে।দেখে কিছুটা অবাক হলাম।আয়রানের দিকে তাকালাম।সে একমনে আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।আজকে এই হাত নিয়ে তার এতো কি হলো বুঝতে পারছি না।গাড়িটা থামলো।তখনই আয়রানের ধ্যান ভাঙলো।মনে হচ্ছিলো এতোক্ষন ঝিমুচ্ছিলো।মুচকি হেসে আমার দিকে তাকালো।চোখে মুখে তীব্র খুশির ছাপ।আয়রান দরজা খুলে আমার সাইডের দরজা খুলে আমাকে ফট করে কোলে তুলে নিলো।এমন হওয়ায় কিছুটা চমকে গেলাম।পড়ে যাওয়ার ভয়ে ওনার শার্টের কলার চেপে ধরলাম।উনি আমাকে নিয়ে সোজা বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলেন।আয়রান আমাকে কলিংবেল বাজাতে ইশারা করলো।

-“কি বললেন?আমি?না।না পারবো না।আপনার বাড়ি আপনি বাজান।”

-“ভুলে গেছো?এখন কিন্তু এটা তোমারও বাড়ি।””

শুনে ভিতরে কেমন যেনো লাগলো।শেষমেষ আয়রান আমার হাত ধরে কলিংবেলে চাপ দিলো।তখনই একটা মেয়ে দরজা খুললো।আমি দেখে অবাক হয়ে গেলাম।কি মায়াবি মুখ!চুলগুলো নিচ থেকে লাল কালার করা।চোখগুলো আয়রানের মতো ধূসর রংয়ের।চেহারায় গোলাপি আভা।মেয়েটি এক হাতে লিপস্টিক নিয়ে দাড়িঁয়ে আছে।হয়তো সাজুগুজু করছিলো।।আয়রান মেয়েটিকে দেখে একটা মেকি হাসি দিলো।মেয়েটি হাত দুইটা বুকে গুঁজে ভ্রু কুঁচকে আয়রানের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে দাড়িঁয়ে রইলো।আর আমাকে পর্যবেক্ষন করতে লাগলো।এতে কিছুটা অস্বস্তি লাগলেও প্রকাশ করলাম না।আয়রান ভিতরে এক পা দিয়ে বললো

-“হেই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?ভিতরে ঢুকতে দিবি না?দেখ তামাশা করবি না।আমার প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে।সর!””

মেয়েটি হঠাৎ চিতাবাঘের মতো লাফ দিয়ে আয়রানের চুল থাবা দিয়ে ধরলো।আমি ভয়ে এক দুই পা পিছিয়ে গেলাম।হঠাৎ আক্রমনে ঘাবড়ে গেছি।বিষ্ময় নিয়ে এদের কান্ড বোঝার চেষ্টা করছি।মেয়েটি কে?মেয়েটা আয়রানের চুল মুচড়ে ধরে বললো

-“শয়তান,ইতর তুই আমাকে না বলে বিয়ে করলি?হ্যা?তোর সাহস দেখে অবাকের পর অবাক হচ্ছি।হুম হুম!কতো ইচ্ছা ছিলো ভাইয়ের বিয়েতে কতো মজা করবো!কতো সাজবো।আর তুই কি করলি?হুম হুম!আমার ইচ্ছাটা পুরো ফ্লপ করে দিলি।শয়তান,বেয়াদব।আজকে তুই ঘড়ে ঢুকবি না।দাদি যদি শোনে না?তোর অবস্তা উনিশ টু বিশ করে দেবে।শুধু ভাবি ঢুকবে।আহারে ভাবিটাকে নিশ্চই চাপ দিয়েছিস?চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।হুম হুম!মাত্র শুনলাম তোমাদের বিয়ের কথা।তাই এটু সাজতে বসেছিলাম তাও এসে হাজির হয়ে গেছে একটু সাজার সময় দিলি না।হুম হুম!আমিও পালিয়ে বিয়ে করবো।হুহ তোকে বলবোও না।কই ভাবি?তুমি এভাবে পিছনে দাড়িঁয়ে আছো কেন?আসো এদিকে আসো।কি মিষ্টি দেখতে গো তুমি!”

বলে আয়রানের চুল ধরে ধাক্কা দিয়ে আমার হাত ধরে ভিতরে আনলো।আমি অবাক হয়ে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।আয়রানের সাথে এরকম করলো কেন?কি হয় ওর?আর ওনার মা-বাবা কোথায়?হয়তো আমাকে দেখলে তুলকালাম করে দেবে।আয়রান চুলে হাত বুলিয়ে বিড়বিড় করতে লাগলো।মেয়েটা আমাকে ভিতরে নিয়ে সোফায় বসালো।আয়রান ভিতরে ঢুকতে নিলেই আবার কেউ একজন আয়রানের কান চেপে ধরলো।তাকিয়ে দেখি সুন্দর একজন বৃদ্ধ মহিলা।পরনে সুতির শাড়ি।ফর্সা টকটকে গায়ের রং,গালদুটো লাল লাল,মাথায় সাদা ধবধবে চুল।ওনার যে বয়স হয়েছে সেটা ওনার চেহারা দেখে কেউ বলবে না।মনে হয় ত্রিশ,একত্রিশ বছরের নারী।আমি বসে বসে ইনজয় করছি।সবাই আয়রানকে ভালোভাবে ধুয়ে দিচ্ছে।আয়রান কান ধরে পাশে তাকিয়ে দেখে তার দাদি রক্তচন্ডি হয়ে দাড়িঁয়ে আছে।হয়তো নাতির এই অকামে কিছুটা বিরক্ত হয়েছেন।কিন্তু এটাও চেয়েছিলেন যে তার নাতি একটা নাতবউ আনবে।তাই বলে এভাবে?কেউকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে?এই বুড়ি দাদিটাকেও একবার বলে নি?আয়রান চোখ মুখ কুঁচকে বললো

-“হেই দাদু ছাড়ো।ব্যাথা পাচ্ছি।মহা ভুল হয়ে গেছে আমার।এইবারের মতো ক্ষমা করে দাও।পরেরবার আর এরকম হবে না!”

ওহ তাহলে ইনি আয়রানের দাদি।দাদি আয়রানের কান আরো শক্ত করে মুচড়ে ধরে বললো

-“পরেরবার আর এরকম হবে না মানে?তুই আবার বিয়ে করবি?”

-“কিহ?না না!আবার বিয়ে করবো কেন?মানে বললাম যদি দরকার হয়ে তাহলে তোমাদের জানিয়েই করবো!”

বলে হেসে আমার দিকে আড়চোখে তাকালো।আমি মুখ ভেংচি দিয়ে ড্রইংরুমটায় চোখ বুলাতে লাগলাম।করুক বিয়ে!আমার এতে কিছুই যায় আসে না।আর সবার মতো অনতত এই নিয়ে জেলাস নই।কারণ আমি জানি উনি এটা করবেন না।আয়রানের দাদি কান ছেড়ে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলতে লাগলো

-“তুই কিভাবে পারলি এটা করতে?আমাদের একটাবার বলতি?আমরা কি তোর আপন নই?তোর যে একজনকে পছন্দ এবং তুই তাকে বিয়ে করতে চাস!সেটা আমাদের বললে তো আমরা না করতাম না।উল্টো তোদের ধুমধাম করে বিয়ে দিতাম।শুধু একটু খোজ খবর নিতাম এই।কিন্তু তুই কি করলি?

-“আরে দাদু এতোকিছু ভাবার সময় ছিলো না।তাড়াহুড়ো করে হয়ে গেছে।বললাম তো মাফ করে দাও।”

-“আচ্ছা যা মাফ করে দিলাম।”

আমি জানতাম এই নিয়ে কিছু না কিছু ঝামেলা হবেই।মাথা নিচু করে বসে রইলাম।আয়রানের দাদি এসে আমার পাশে আয়েশ করে বসলো।তারপর ধীরেধীরে আমার থুঁতনি ধরে মাথা উঁচু করলো।আমি চোখ উঠিয়ে দেখি উনি আমার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছেন।আমার হাতদুটো আলতো করে ধরে একটা ডায়মন্ডের সুন্দর ব্রেসলেট আর একটি রিং পরিয়ে দিলো।তারপর হাত আলতো করে চেপে ধরে বললো

-“শোনো গো নাতবউ।আমার নাতিটা এরকমই।কোনোকাজ সহজভাবে করে না।ঠিক তোমাকেও এইভাবে হুট করে বিয়ে করে ফেলেছে।কিছু মনে নিয়ো না গো দাদুমনি।নিশ্চই তোমাকে অনেক বিয়ের জন্য জোর করেছে?দাড়াও ওকে সিটিয়ে লাল করে দেবো।এমন একটা মিষ্টি দাদুমনিকে শুধু কষ্ট দেয় তাই না?আচ্ছা বাদ দাও।তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এসো তোমার জন্য খাবার রেডি করি।নিশ্চই খাও নি কিছু তাই না?এই নূরানি ওকে রুমে নিয়ে যা তো রে।”

বলে গালে হাত বুলিয়ে মুচকি হাসি দিলেন।তারপর আয়রানের দিকে তাকিয়ে ওর চেহারা দেখে রাগ করেও হেসে দিলেন।বললেন
-“যা যা।দাদুমনিকে ভিতরে নিয়ে যা।আর ঢং করতে হবে না।ফ্রেস হয়ে নিচে আয় আমরা সবাই মিলে একমাথে নাস্তা করবো।”

নুরানি নামের মেয়েটা আমায় জড়িয়ে ধরে হাত ধরে সিড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো আর বিভিন্ন কথা বলতে লাগলো।নামটা চেনা চেনা লাগছে।হ্যা!আয়রান বলেছিলো ওর নূরানি নামের একটা বোন আছে।নামটাও নাকি আমার সাথে মেলে।নুরানি আমাকে নিয়ে একটা রুমের সামনে এলো।আর বললো-“ভাবি রেডি?”

কিসের জন্য আবার রেডি?বুঝতে না পেরে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।নুরানি আমাকে নিয়ে দরজা খুলে দিলো।তখনই চিৎকার করে সবাই “ওয়েলকাম” বললো।আমি ঘাবড়ে গিয়ে তাকিয়ে দেখি কাজি অফিসে আয়রানের যেই বন্ধু,বান্ধবিরা এসেছিলো তাদের কে।সবাই খুশি হয়ে আমাকে ওয়েলকাম করলো।আর ভিতরে ঢুকতে ইশারা করলো।রুমের ভিতরে প্রবেশ করে অবাক হয়ে গেলাম।কি সুন্দর রুমটা!সামনে বিছানাটাকে ফুল দিয়ে সিম্পলভাবে সাজানো।সারা রুমে গোলাপ ফুলের গন্ধে মো মো করছে।টেবিলের উপর ছোট ছোট গোলাপের পাপড়ি সহ মোমবাতি জ্বালানো।আর ওয়ালে আমার আর আয়রানের নাম লেখা।সাদা দেয়ালজুরে ছোট ছোট প্লাস্টিকের তারা মৃদু আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।নুরানি আমার কাধ জরিয়ে বললো

-“ভাবি ডোন্ট মাইন্ড।আমরা না এতোবেশি ভালো করে সাজাতে পারি নি।টাইম ছিলো না।এই এরা না বললে তো জানতেও পারতাম না।রাগ করো না প্লিজ।পরে যখন আবার তোমাদের ধুমধাম করে বিয়ে দেবে তখন অনেক অনেক সুন্দর করে তোমাদের বাসর ঘর সাজাবো প্রমিজ।ওকে?অল দ্যা বেষ্ট ভাবি।হিহিহিহি!”

সবাই আমাকে একা পেয়ে বিভিন্নভাবে লজ্জা দিয়ে চলে গেলো।একা রয়ে গেলাম আমি।আজকে আমাদের বাসর রাত?শরীরের সীড়া উড়শীড়া বেয়ে অদ্ভুত রকমের শীহরণ বয়ে গেলো।

___________________

নিজের রুমে পায়ের উপর পা তুলে আয়েশ করে আয়রানের ছবিতে তীর মারছে রিদ্রিশ।আর মুখ দিয়ে বিরবির করছে।তখনই কেউ দরজায় কড়া নারলো।

-“কাম ইন।”

একজন কালো সুট কোট পড়া কানে ব্লু টুথ গুঁজে ভিতরে ঢুকলো।

-“এনি আপডেট রিক?”(কারো রিককে মনে আছে)

রিক সোজা হয়ে দাড়িঁয়ে বলতে শুরু করলো

-“”ইয়েস স্যার।জানেন আয়রান স্যার রুহি ম্যাডামকে বিয়ে করে ফেলেছেন?”

-“হোয়াট?কবে কোন সময়?”

-“স্যার আজকেই।ভোর ৭টার সময়।”

-“ড্যাম ইট।ও আমার শিকাড় কেড়ে নিয়েছে।ওকে ছাড়বো না আমি।এতোদিনে তো মেরেই ফালতাম কিন্তু,হুহ মি.আয়রান আজহার এখন আমি আসল চাল চালবো।রেডি হয়ে যাও।”

বলে বাকা হাসলো রিদ্রিশ।রিক কিছুটা সাহস জুগিয়ে বললো
-“স্যার আমি না মাঝে মাঝে আপনাকে আর আয়রান স্যারকে গুলিয়ে ফেলি।”

-“গ্যাট আউট।”

-“স্যার!”

-“আই সেইড গ্যাট আউট।”

রিক মাথা নামিয়ে চলে গেলো।

____চলবে____
___চলবে___

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here