“অদ্ভুত_মুগ্ধতা ” পর্ব ১২

“অদ্ভুত_মুগ্ধতা ”
পর্ব ১২
মিশু মনি
.
মর্ম ও মিশু বাসায় ফিরল রাত সাড়ে এগার টায়।দুজনেই খুব হাসিখুশি।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব নিজে দরজা খুলে দিলেন। দুজনের হাসিমুখ দেখে ওনার ও ভালো লাগলো।মিশুকে খুবই উচ্ছ্বসিত দেখাচ্ছে।আর মর্ম’র মুখে জয়ীর মত হাসি।খুব আনন্দে থাকলে মর্মকে এমন দেখায়।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ওদেরকে এত রাতে বাইরে থেকে ফিরতে দেখে বেশ অবাক হলেন।দুই দিনেই কাহিনী এতদূর গড়িয়েছে! এদিকে মৈত্রীর সাথেও তখন মিশুকে খুব ঝগড়া করতে দেখা গেলো। তাহলে কি সাফায়েত উল্লাহ সাহেবের ধারণাই সত্যি হতে চলেছে!
উনি অবাক হয়ে চেয়ে আছেন মর্ম ও মিশুর দিকে।মিশু একটু ও সংকোচ না করে হেসে বলল,ভালো আছেন আংকেল?
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন কিন্তু প্রকাশ করলেন না।হেসে জবাব দিলেন, তোমাদের মত ভালো নই।
মিশু হেসে বলল,আন্টির আর আপনার প্রেমের বিয়ে তাইনা আংকেল?
– হ্যা।
কথাটা বলেই সাফায়েত উল্লাহ সাহেব মুচকি হাসলেন।মেয়েটা বেশ দুষ্টু! জায়গামত আসল কথা ঢেলে দিলো।উনি হাসতে হাসতে বললেন,যাও রুমে যাও।
মিশু চলে যেতেই মর্ম মুখটা কাচুমাচু করে বলল,আব্বু আমরা একটু চা খেতে গিয়েছিলাম।
– দুই ঘন্টা লাগলো চা খেতে?
মর্ম লজ্জা পেয়ে বলল,ঘুরে আসলাম একটু।হাতিরঝিলের ওদিকে গিয়েছিলাম।
– ঠিক আছে।রুমে যা।তোদের শর্টফিল্ম রিলিজ পাচ্ছে কবে?
– কালই।
মর্ম নিজের রুমে চলে আসলো।বাবা খুবই সহজ ছেলেমেয়ে দের সাথে।তবুও মর্ম’র লজ্জা করতে লাগলো। কিন্তু কেন লজ্জা লাগছে তা ও বুঝতে পারলো না।ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।খুব মনোযোগ দিয়ে গ্যালারী দেখতে লাগলো।মিশু আজ অনেক সেলফি তুলেছে ওর ফোনে।অনেক দূর থেকে ঘুরে আসা হলো।ঘুরতে গিয়ে আজ দারুণ মজা হয়েছে।মিশু গান শুনিয়েছে,মজার মজার গল্প শুনিয়েছে আর ওর দার্শনিক টাইপের কথাবার্তা তো ছিলোই।মেয়েটার কথা শুনলে ওকে বড্ড রহস্যময়ী মনে হয়।মর্ম সেলফি গুলো দেখতে দেখতে আপন মনেই হাসলো।

মিশু বিছানায় শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছে।মর্ম এত বড় একজন ডিরেক্টর অথচ ওকে কত গুরুত্ব দেয়! তানিন আপুও খুব আদর করে মিশুকে।সাফায়েত উল্লাহ সাহেব কতটা ভালোবাসেন তার তো তুলনাই হয়না।আর মৈত্রী? মৈত্রীর কথা মনে পড়তেই ওর মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আজ ও মৈত্রীর সাথে ভীষণ রাগ করেছে।তবুও মৈত্রী ওর রাগ ভাঙাতে আসলো না! কি নিষ্ঠুর একটা মানুষ!
মিশুর আর শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করলো না।মৈত্রীর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।একটা কথা ভেবেই ওর রাগ হচ্ছে,ও কারো উপর রেগে থাকতে পারেনা কেন? কিন্তু কিছুতেই এখন মৈত্রীর কাছে যাওয়া যাবেনা।নয়ত ওর ভাব বেড়ে যাবে।তাহলে কি করা যায়?
ভাবতেই মিশুর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসলো।ও মৈত্রীর ফোনে কল দিলো।মৈত্রী কল রিসিভ করতেই কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
মৈত্রী উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,কাঁদছ কেন মিশু? কি হয়েছে?
– আবারো ওই প্রব্লেম টা হচ্ছে আমার।মাথার ভিতরে খুব যন্ত্রণা হচ্ছে।আমি মরে যাবো বুঝি।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



একথা শোনার পর আর এক মুহুর্তও থাকতে পারলো না মৈত্রী।দ্রুত ঘর থেকে বেড়িয়ে মিশুর রুমে চলে আসলো।মিশু যথাসম্ভব চেষ্টা করলো অসুস্থ ভঙ্গীতে শুয়ে থাকতে।মৈত্রী রুমে ঢুকেই দেখলো মিশু বিছানায় ছুয়ে ছটফট করছে।ওকে দেখেই মনে হচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে মেয়েটার।
মৈত্রী মিশুর শিয়রে বসে ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,কি হয়েছে মিশু?
মিশু করুণ ভাবে তাকিয়ে বলল,কিছু না।
– কেদোনা প্লিজ।তোমার কিচ্ছু হয়নি।আমি আছিতো পাশে,ভয় পেওনা।
– আপনি আমায় সরি বললেন না কেন?
– সরি,
– এভাবে না।কান ধরে সরি বলুন।
– আমার ত্রিশ বছরের জীবনে আমি কখনো কান ধরিনি।
– আজ সেই রেকর্ড ভাঙবেন।সরি বলুন আর কান ধরে বলুন।
মৈত্রী একটু ভেবে হাসিমুখে বলল,ধরছি।
বলেই দুহাতে নিজের দুকান ধরে বলল,সরি।
মৈত্রীকে কান ধরতে দেখে মিশুর খুব মজা লাগলো।ও হেসে বলল,ঠিকাছে মাফ করলাম।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আমাকে ঘুম পারিয়ে দিন।
এমন প্রস্তাবে মৈত্রী একটু হাসল।মেয়েটা একদম ইনোসেন্ট স্বভাবের।একটা ছেলেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে বলছে কত সহজ ও স্বাভাবিক ভাবে।এত বাচ্চা স্বভাবের হলে কি চলে?
মিশু মনে মনে হাসছে।ওর এত বেশি মজা লাগছে যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।ও আরেকটু আদর পাবার জন্য একটু ঢং করে বলল,খুব মাথা ধরেছে।
– একটু দাড়াও,আমি আসছি।
মৈত্রী দ্রুত ঘর থেকে বেড়িয়ে নিজের ঘরে গেলো। ড্রয়ার থেকে একটা ট্যাবলেট ও এক গ্লাস পানি হাতে বের হয়ে আসলো।এমন সময় সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বেসিনে হাত ধুতে বেড়িয়েছেন। মৈত্রীকে মিশুর ঘরে গ্লাস হাতে ঢুকতে দেখে ওনার বেশ কৌতুহল জাগলো।ঘটনাটা কি?
ঘটনাটা বোঝার জন্য উনি মিশুর রুমের দরজায় এসে দাঁড়ালেন। মৈত্রী খুব যত্ন করে মিশুকে ওষুধ খাইয়ে ওর শিয়রে বসলো। তারপর আস্তে আস্তে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,ঘুমানোর চেষ্টা করো।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেবকে ভ্রু কুচকে দ্রুত চিন্তা করতে লাগলেন।একজন ডাক্তার হিসেবে মৈত্রী তার দায়িত্ব পালন করছে।সে তার পেশেন্টকে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে।একজন ডাক্তারের কর্তব্য হিসেবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সাফায়েত উল্লাহ সাহেব মৈত্রীর চোখে যে দৃষ্টি দেখছেন সেটা একজন ডাক্তারের নয়,নিঃসন্দেহে একজন আপনজনের।মৈত্রী খুব মায়াবী চোখে চেয়ে আছে মিশুর দিকে।যেন মিশুর চেয়ে বেশি কষ্ট মৈত্রীর হচ্ছে।তারমানে সত্যিই মৈত্রীর মনে মিশুর জন্য কোনো মায়া জন্ম নিয়েছে!
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ধীরেধীরে হেটে নিজের রুমে আসলেন।ওনার বেশ মজা লাগছে।মিশু একটা বাচ্চা স্বভাবের মেয়ে।ও কখনো একসাথে দুভাই কে ফাদে ফেলার চেষ্টা করবে না।ও সহজভাবে ই ওদের সাথে মিশছে।কিন্তু ওরা দুভাই তো দুজন দুজনের মত ভাবছে।ওদের অজান্তেই যে মিশুর প্রতি একটু একটু করে ওদের দূর্বলতা বাড়ছে সেটা কি ওরা বুঝতে পারছে না? সাফায়েত উল্লাহ সাহেব এত অল্প সময়েই বুঝে ফেলেছেন অথচ ওরা বুঝতে পারছে না!
ভাবতে ভাবতে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে রইলেন উনি।পাশেই তিন্নি অঘোরে ঘুমাচ্ছে।এই মেয়েটাও এত বয়স হলেও এখনো কত সরল! সামান্য রসিকতা টুকুও সহ্য করতে পারেনা।এতই ইমোশনাল আর মনটা এখনো বাচ্চাদের মত।নারীরা এত রহস্যময়ী কেন! সব অবস্থাতেই ওদের ভালো লাগে।
মিশু কখন ঘুমিয়ে পড়েছে ও নিজেও জানেনা।ও ঘুমানোর পরেও মৈত্রী অনেক্ষণ ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিলো।মেয়েটা এইটুকু বয়সেই অনেক কিছু জানে।হিপনোটাইজ করাটাও বোঝে! মেয়েটাকে ভালো কিছু বই পড়তে দিতে হবে।বই পড়লে জ্ঞান আরও সমৃদ্ধ হবে।
ভাবতে ভাবতে উঠে দাঁড়াল মৈত্রী।যদিও মিশুর ঘুমন্ত মুখটা দেখতে খুব ভালো লাগছিল।তবুও আর বসে থাকা যায়না,অনেক রাত হয়ে গেছে।মিশুর গায়ে চাদর টেনে দিয়ে মৈত্রী বেড়িয়ে আসলো।ঠিক একই সময় খুজিন্তাও দরজা খুলে বের হলো।খুজিন্তা দের পাশের রুমেই মিশুর রুম দেয়া হয়েছে।খুজিন্তা মৈত্রীকে দেখে একটু ও অবাক হলোনা।যেন এই মুহুর্তে মৈত্রীর মিশুর ঘর থেকে বের হওয়ার ই কথা ছিলো।মৈত্রী খুজিন্তাকে দেখে কিছু বলল না।সোজা নিজের ঘরে চলে আসলো।
খুজিন্তা মুচকি হেসে রুমে ঢুকলো।মাত্রা ওর হাসিমুখ দেখে হাসির কারণ জানতে চাইলো। খুজিন্তা ব্যাপার টা লুকিয়ে গেলো। এখন মাত্রাকে বললে সেও মৈত্রী ও মিশুকে দেখে হাসবে।ওকে বলার সময় এখনো আসেনি।তাই খুজিন্তা হাসতে হাসতে বলল,তুমি আমাকে এত ভালোবাসো তাই হাসি পায়।
– ভালবাসলে হাসি পায়? দরজা থেকে ফিরে আসলে যে? বাথরুমে যাবেনা?
– ওহ হো,আমার বাথরুমে যাওয়ার কথা ছিলো? ভুলেই গিয়েছিলাম।
খুজিন্তা হেসে আবারো দরজা খুললো।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তানিন মিশুকে ডেকে তুলল।তারপর বাইরে হাটতে গেলো।তানিন দৌড়াচ্ছে আর মিশু ওর পিছুপিছু হাটছে।অনেক্ষন দৌড়ানোর পর তানিন এসে হাফাতে হাফাতে বলল,তুমিও দৌড়াও।
মিশু হেসে তানিনের সাথে দৌড়াতে লাগলো। ও সামান্য একটু দৌড় দিয়েই হাফিয়ে উঠল।কিন্তু তানিন এখনো দিব্যি দৌড়াচ্ছে! দৌড় শেষ করে এসে মিশুকে নিয়ে বাসার বারান্দায় চলে আসলো তানিন।তারপর বসে পড়ে বলল,আমার মত করো।
তানিন আসন করতে বসেছে।মিশু এই মেয়েটাকে যত দেখছে ততই অবাক হচ্ছে! ও নিজেও চেষ্টা করলো তানিনের মত করার কিন্তু পারলো না।তানিন কে বলতেই ও উঠে এসে মিশুকে শিখিয়ে দিলো।
মিশু বলল,এটা কি ব্যায়াম?
– এটা হচ্ছে এক ধরণের ইয়োগা।রেগুলার ইয়োগা করলে তোমার ফিটনেস সবদিক থেকেই পারফেক্ট থাকবে।
– স্লিম থাকবো?
– হ্যা।আরো অনেক উপকার আছে।নিজে কয়েক দিন করলেই বুঝতে পারবে।তোমাকে দেখলেই সবার থেকে আলাদা করা যাবে।ইয়োগা ই তোমাকে সবার থেকে আলাদা দেখাতে সাহায্য করবে।
– অনেক কষ্টের।
– হ্যা।
এরপর তানিন মিশুকে আরো কয়েক প্রকার ইয়োগা শিখিয়ে দিলো।মিশুর প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হচ্ছিল।তবুও খুব আনন্দের সাথে শিখল।তানিনকে ওর খুবই ভালো লাগে।আর তানিনের কাছ থেকে কিছু শিখতেও ভালো লাগে।অনেক্ষণ ব্যায়াম শেষ করে তানিন মিশুকে নিয়ে বাসায় ঢুকল।মিশু মনে মনে ভাবল,আমার বান্ধবীরা স্লিম হওয়ার জন্য কত কি করে! একটু মোটা হলেই খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয়।ওদেরকে ইয়োগা করা শিখিয়ে দিতে হবে।
এরপর সকালের নাস্তা শেষ করে প্রতিদিনকার মত যে যার কর্মস্থলে চলে গেলো।মৈত্রি বারবার মিশুকে শরীরের দিকে খেয়াল রাখতে বলল।মিশুর খুব হাসি পাচ্ছিল মৈত্রীর এমন আধিখ্যেতা দেখে! মর্ম ও সকালেই বেড়িয়ে গেছে।কিন্তু আজ খুজিন্তা বাসায় আছে।মিশু ওর সাথেই গল্প করতে করতে কাজ করতে লাগলো।
ডেকোরেটর থেকে সাজসজ্জার অনেক উপকরণ এসে গেছে।মিশু ও খুজিন্তা সেগুলো তালিকা করে খাতায় লিখে নিলো।কয়েকজন কর্মচারীও চলে এসেছে।মিশু তাদেরকে গেট টা কোথায় হবে,কিভাবে হবে সেসব দেখিয়ে দিলো। ছেলেগুলো মিশুর কথামত গেট তৈরী করতে লেগে গেলো।মিশু কোমরে হাত দিয়ে নির্দেশনা দিচ্ছে আর সকলে সে অনুযায়ী গেট সাজাচ্ছে।খুজিন্তা চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো ব্যাপার খানা।ওর খুব আনন্দ হচ্ছে।
মিশু খুজিন্তাকে নিয়ে বাসায় এসে কিছু রঙিন ওড়না একদিকে গুছিয়ে রাখতে বলল।তারপর নিজে বিভিন্ন জিনিস আলাদা আলাদাভাবে সাজিয়ে রাখলো যাতে সব জিনিস সহজেই পাওয়া যায়।বিকেল পর্যন্ত মিশু ও খুজিন্তার খুব ব্যস্ত সময় কাটলো।
কর্মচারী ছেলেগুলো খুবই কাজের।বিকেলের মধ্যেই বেশ সুন্দর একটা গেট আর প্রবেশের পুরো পথটাকে সাজিয়ে ফেলেছে! মিশুর নির্দেশনা মতই সাজানো হয়েছে।খুজিন্তা মিশুর রুচির প্রশংসা করতে লাগলো।মিশু ওকে চিমটি কেটে বলল,একদম এভাবে বলবেন না।
খুজিন্তাও মিশুকে পাল্টা চিমটি কেটে বলল,তাহলে আমাকে তুমি করে বলতে হবে।
– আচ্ছা বাবা ঠিকাছে।
দুজনের বেশ ভাব হয়ে গেলো কিছুক্ষণের মধ্যেই।যেন কতকালের বন্ধু! দুজন একসাথে ছুটাছুটি করে কাজ করতে লাগলো।
বাসার সবাইকে বিয়ে উপলক্ষ্যে কাজে ছুটি নিতে হবে কিছুদিন।তাই সকলে এখন সব কাজ সেরে নিচ্ছে।এজন্য বাসায় ফিরতে অনেক দেরি হয়ে গেলো।মৈত্রীর মা বিকেলেই ফিরেছেন।কিন্তু সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ও ছেলে মেয়েরা সবাই সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে বাসায় ফিরলো।বাসার সামনে এত সুন্দর গেট দেখে সকলেই মুগ্ধ হয়েছে! ওয়েডিং প্লানার তাহলে বেশ কাজের বলতে হবে!
সন্ধ্যায় সবাই একসাথে নাস্তা করে নিলো। নাস্তা খাওয়া শেষ হতেই মৈত্রী মিশুকে ডেকে বলল,তোমার ফোন কোথায়?
– ফোন তার নানাবাড়িতে বেড়াতে গেছে।
– ফাজলামো রাখো, কোথায় রেখেছো ফোন?
– ফোন তো রুমে রেখেছিলাম। কেন?
– একবার গিয়ে দেখো। তারপর এসে আমাকে বলো।
মিশু ছুটে নিজের রুমে গেলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখল মৈত্রী ৮৭ বার কল দিয়েছে! চোখ বড় বড় করে স্ক্রিণের দিকে চেয়ে রইলো মিশু।এতবার কেউ কাউকে কল দেয়! তাছাড়া উনি একজন ডাক্তার মানুষ! ওনার অত ব্যস্ততার মাঝেও এতবার কল দিয়েছেন আর আমি রিসিভ করতে পারিনি! মিশু নিজে নিজে বিড়বিড় করতে করতে মৈত্রীর কাছে আসলো। মৈত্রী বলল,কত চিন্তা হচ্ছিল আমার।আমি আজ চেম্বার থেকে একটা মিটিং এ গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে গেলাম একটা কাজে।তারপর একজন পেশেন্টকে দেখতে যেতে হয়েছে।কতটা ব্যস্ত ছিলাম ভাবতে পারো? বাসায় ফিরতেই পারিনি।তাই ফোন দিয়েছিলাম তোমার শরীরের অবস্থা জানার জন্য।কিন্তু তুমি নিরুদ্দেশ!
মিশু কান ধরে বলল,সরি।আসলে আমি ফোন রেখে বাসার সামনে কাজ করছিলাম।জিনিস গুলো স্টোর রুমে রাখতে হয়েছে,গেট সাজাতে হয়েছে।ফোন দেখার সময় পাইনি।
– খুবই ভালো।
– আমার খোজ নেয়ার চিন্তা কেন?
– তুমি আমার পেশেন্ট।
– একজন ডাক্তার কখনোই তার পেশেন্টকে ৮৭ বার কল দেয়না।পেশেন্ট মৃত্যুশয্যাশায়ী হলেও দেয়না।
– তুমি আমার কেউনা।তাই এত দুঃশ্চিন্তা।
কথাটা বলেই মৈত্রী চলে গেলো।কিছুক্ষণ পরেই শোনা গেলো গাড়ি ছেড়ে দেয়ার শব্দ।তারমানে মৈত্রী বাইরে গেলো। বেচারা খুবই অভিমান করেছে।মিশু আপন মনেই হাসলো।ব্যাপার টা কি?
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here