অদ্ভুত_মুগ্ধতা ৫ম পর্ব

অদ্ভুত_মুগ্ধতা
৫ম পর্ব
মিশু মনি
.
মিশু চুপচাপ বসে টিভি দেখছে।টিভিতে অপূর্ব ও মেহজাবিন অভিনীত একটা নাটক হচ্ছে।বেশ ভালো ই লাগছে দেখতে।ও খুব মনোযোগ সহকারে দেখতে লাগলো।
এমন সময় একটা ছেলে এসে পাশে বসল।মিশু সেদিকে খেয়ালও করলো না।ছেলেটা একটু বাদেই বলল,নাটক দেখছেন?
মিশু ভ্রু কুচকে তাকালো ছেলেটির দিকে।তারপর আবারো নাটক দেখায় মনোযোগ দিলো।
ছেলেটা বলল,এই যে হ্যালো।
মিশু ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বলল,কি?
– নাটক দেখছেন?
– দেখতেই তো পাচ্ছেন কি দেখছি।
– হ্যা।সে জন্যই তো জিজ্ঞেস করলাম। কি নাটক দেখছেন?
মিশু বিরক্ত হয়ে তাকাল ছেলেটির দিকে- কি দেখছি দেখতেই পাচ্ছেন।
– নাটক বুঝি আপনার খুব পছন্দ?
– হ্যা,
– কার নাটক?
– অনেকের ই।
– নাম গুলা শুনি।বলুন না।
মিশু এবার ট্যারা চোখে তাকাল।আচ্ছা গায়ে পড়া লোক তো।কিভাবে যেচে কথা বলতে এসেছে! একে থামিয়ে দিতে হবে।
ভাবামাত্রই বলল,মিজানুর রহমান আরিয়ান,মাবরুর রশিদ বান্নাহ,শিহাব শাহীন,অয়ন চৌধুরী।
ছেলেটা মনে হয় নাম গুলো প্রথম বার শুনল।হেসে বলল,এরা আবার কোন নায়ক? এদের অভিনীত নাটকের নাম বলুন তো? আমি দেখেছি কিনা মনে নেই।
মিশু জবাব দিলো, এনারা নায়ক নন।এনারা পরিচালক।অভিনয় করেন না,নাটক ডিরেকশন দেন।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



মিশুর জবাব শুনে ছেলেটি একটু থ হয়ে গেলো। মেয়েটা তো দারুণ স্মার্ট! এর সাথে লাগতে যাওয়া যাবেনা।
ভেবেই ছেলেটি হেসে অন্যদিকে তাকাল।মিশু টিভি দেখতে দেখতে মুখ টিপে হাসতে লাগলো।আচ্ছা জব্দ হয়েছে বাছাধন!
এমন সময় মৈত্রী বেড়িয়ে এসে বলল,অনেক্ষণ ওয়েট করালাম না?
– উহু ব্যাপার না।কাজ শেষ?
– হ্যা।তুমি গাড়িতে গিয়ে উঠো, আমি আসছি।
মিশু আচ্ছা বলে পাশের ছেলেটির দিকে তাকাল।সে রীতিমত হা করে তাকিয়ে আছে।ডাক্তার নিজেই এই মেয়েটাকে আধিখ্যেতা করছে! আর সে কিনা এর সাথে ভাব জমাতে এসেছিল।মুখ কাচুমাচু করে তাকিয়ে আছে।
মিশু হেসে একটু ভাব নিয়ে ছেলেটাকে বলল,আপনার ফোন নাম্বার টা একটু দেয়া যাবে?
ছেলেটার মুখটা আরো হা হয়ে গেলো। তোতলাতে তোতলাতে বলল,মা মা মা মানে!
– আমাকে মা বলবেন না প্লিজ।আন্টি বলবেন।
বলেই চোখ টিপ মেরে হেসে উঠে বেড়িয়ে আসলো।মৈত্রী একবার ছেলেটির দিকে তাকাচ্ছে,একবার মিশুর দিকে! ঘটনাটা কি?
গাড়িতে উঠেই মৈত্রী মিশুকে জিজ্ঞেস করলো,ছেলেটাকে পটাচ্ছিলে?
– নাহ।ওই আমাকে পটাতে এসেছিল।ঝোপ বুঝে কোপ মেরেছি।বেচারা ভয়েই মা ডেকে ফেললো। হা হা হা।
– মানে!
*নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”*

এরপর মিশু পুরো ঘটনা টা খুলে বলল মৈত্রীকে।সবটা শুনে মৈত্রী নিজেও হাসতে লাগলো। ভারী জব্দ হয়েছে ছেলেটা!

রাত্রিবেলা খাবার টেবিলে বসে সবাই মিলে কথা হচ্ছিল।খুজিন্তা চুপচাপ খাচ্ছে।বাকিরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছে।ও বুঝতে পারলো এ বাড়িতে খাবার টেবিল টা আলোচনার অন্যতম জায়গা।একমার খাওয়ার সময় ই সকলে একসাথে হয় আর বিভিন্ন দরকারি অদরকারি আলাপ আলোচনা চলে।
মর্ম বলল,আব্বু একটা ভালো খবর আছে।
– হ্যা বল শুনি।
– একটা শর্টফিল্ম বানাচ্ছি।আজ কিছুটা শুট হয়েছে।আমাদের তানিন এক্টিং করেছে ওতে।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব অবাক হয়ে একবার মেয়ের দিকে তাকালেন। আগে কখনো ই তানিন ক্যামেরার সামনে যায় নি।আজ হঠাৎ!
তিনি বললেন,আগে তো বলিস নি।
– তানিন নিজেও আগে কিছু বলেনি।শুটিং এর সময় উঠে এসে বলল নায়িকা ভালো পারছে না।পার্ট টা আমি করে দিচ্ছি।
– বাহ! তানিন আজকাল নায়িকার ও ভুল ধরতে পারে! অনেক ভালো আর্টিস্ট হয়েছে বুঝি?
– তানিন সবসময় ই ভালো আর্টিস্ট ছিল আব্বু।
– হুম বেশ ভালো। তা এ উপলক্ষ্যে কি খাওয়াদাওয়া টাওয়াদাওয়া হবে নাকি?
তানিন বলল,আব্বু আমি খাওয়াদাওয়া দিতে পারি।কিন্তু টাওয়াদাওয়া দিতে পারবো না।
সকলে হেসে উঠল ওর কথায়।খুজিন্তা মাথা তুলে তানিনের দিকে তাকাচ্ছে বারবার।ওর নিজের ও বেশ ভালো লাগছে।নিজের ননদের এত প্রশংসা হচ্ছে,ভালো লাগাটাই স্বাভাবিক।এ পরিবারে সকলেরই কত কত গুন! কিন্তু তার যে কোনো গুনই নেই! সবাই তাকে ভালোবাসবে তো?
মৈত্রী তানিনের দিকে তাকিয়ে ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বলল,খাচ্ছোনা কেন ভাবি?
ভাসুরের মুখে ভাবি ডাক শুনে লজ্জায় লাল হয়ে উঠল খুজিন্তা।এই প্রথম কেউ তাকে ভাবি ডাকল।ও মুখ নিচু করেই খাবার নাড়াচাড়া করতে লাগলো।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব বললেন,খুজিন্তা মামনির মন খারাপ বুঝতে পারছি।
ওনার স্ত্রী কারণ জিজ্ঞেস করতেই বললেন, কারণ টা সবার সামনে বললে মামনি লজ্জা পাবে।গোপনে মর্ম আর তানিন কে বলতে হবে।
মাত্রা বলল,আব্বু আমি আর মৈত্রী ভাইয়া কি দোষ করেছি?
– তুই বিয়ে করে দোষ করেছিস। আর মৈত্রী বিয়ে না করে দোষ করেছে।বড় ছেলেটা আমার বড্ড আন রোমান্টিক।লম্বা হয়েছে ঢের,কিন্তু রোমান্টিসিজম ওর হাটু অব্দি এসেই আটকে গেছে।আর বাড়তে পারেনি।
সবাই আবারো হেসে উঠল। বাবা টা খুব দুষ্টু।শুধু দুষ্টু দুষ্টু কথা বলে আর হাসি পায়! খুজিন্তাও মুখ টিপে হাসল।এমন দুষ্টু বাবা ও কখনো দেখেনি! এরা সত্যিই বড় অদ্ভুত!
এরপর তানিনের ট্রিট দেয়ার ব্যাপারে কথা হলো।আগামীকাল রাতে সবাই মিলে বাইরে ডিনার করা হবে আর তার খরচ টা বহন করবে তানিন! মেয়েটা অনেক দিন হলো নিজে উপার্জন করতে শিখেছে,এখনো কাউকে কিছু খাওয়ায় নি।এসব বলে বাবা ওকে অনেক খোঁচাচ্ছিলেন।
খাওয়াদাওয়া শেষ করার পর মর্ম ও তানিন বাবার ঘরে আসল।বাবা কি যেন বলতে চেয়েছিলেন।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব ওদের দেখে হেসে বললেন, নতুন বর বউয়ের প্রতি তোদের কোনো রিসপন্সিবিলিটি নাই?
– কেন আব্বু? আমাদের আবার কি করতে হবে?
– তোরা দুই ভাই বোন এখন ফুল কিনে এনে ওদের বাসর ঘর সাজিয়ে দিবি।
– বাসর ঘর!
মর্ম ও তানিন একে অপরের দিকে তাকাল।সত্যিই তো এই কথাটা কারো মাথাতেই আসেনি।আজ ওদের বিয়ের প্রথম রাত অথচ ফুল দিয়ে সাজানো হবেনা! তা কখনো হতেই পারেনা।কাজি পরিবারের একটা নিজস্ব ব্যাপার স্যাপার থাকে।
ওনার স্ত্রী বললেন, ওদের তো আবার বিয়ে হবে।তখন বাসর ঘর সাজালেই চলবে।
– তুমি চুপ থাকো।দুইবার বিয়ে হলে দুইবার বাসর ও সাজানো হবে।মেয়েটা খুব অবাক হয়ে যাচ্ছে আমাদের দেখে।এখন আবার ফুল কিনে এনে ওদের সারপ্রাইজ দিলে মেয়েটা আরো আশ্চর্য হয়ে যাবে।
মর্ম বলল,আচ্ছা আব্বু।আমি এখুনি যাচ্ছি ফুল কিনতে।
সাফায়েত উল্লাহ সাহেব টাকা বের করে ছেলেকে দিলেন।টাকা নিয়ে দ্রুত ও বেড়িয়ে গেলো।

অনেক রাত অব্দি জেগে জেগে মিশু একটা ভালো নকশা তৈরি করে ফেললো। কোন লাইটের সাথে কোন পর্দা মানাবে ভালো, কোন কোন কালারের আলপনা আঁকবে,গায়ে হলুদের মঞ্চ টা কেমন হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।ওর উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।কাজি পরিবারের মানুষ গুলোকে খুব ভালো লেগেছে ওর।যদিও মর্ম ও তানিনের সাথে মিশুর দেখা হয়নি।তবুও বাকিদের খুব পছন্দ হয়েছে।ওদের সাথে এক সপ্তাহ কাটাতে পারলে দারুণ মজা হবে!
ভেবেই কাজী মৈত্রীকে কল দিলো। মৈত্রী রিসিভ করে বলল,ঘুমাও নি?
– নাহ।কাজ করছিলাম।
– আচ্ছা আপনার কোন কোন রঙ ভাল্লাগে?
– সাদা কালো।
– ধুর,সাদা কালোর আলপনা কেমন লাগবে?
– ভালো লাগবে না।
– আচ্ছা বলুন তো,টকটকে লাল,ধবধবে সাদা,কুচকুচে কালো,ক্যাটক্যাটে হলুদ।তাহলে নীলের সাথে কি হবে?
মৈত্রী একটু ভেবে বলল,গাঢ় নীল।
– হা হা হা।গাঢ় লাল,গাঢ় সবুজ ও হতে পারতো। কিন্তু লাল টকটকে,কালো কুচকুচে,সাদা ধবধবে।সেরকম কোনো উপমা নীলের নেই কেন?
– আমি জানিনা।
– হা হা হা।আচ্ছা বলুন তো,গাঢ় কালো,গাঢ় সাদা হলোনা কেন?
– কারণ কালো আর সাদা সবসময় গাঢ় ই হয়।পেরেছি?
– হ্যা এটা পেরেছেন।
মেয়েটা খুব মজা করে কথা বলে।শুনলে হাসি পায়।মৈত্রীর সাথে মিশু ও শব্দ করে হাসতে লাগলো। মৈত্রী হাসি থামিয়ে মুগ্ধ হয়ে শুনছে সেই হাসির শব্দ! কারো হাসির শব্দ ও এত সুন্দর হয়!
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here