অনপেখিত শেষ পর্ব

#অনপেখিত
#পর্ব_৩১
লিখা: Sidratul Muntaz

“আচ্ছা প্রিয়ন্তী কে?”
মেহেক হাত ভাজ করে খুব আগ্রহ নিয়ে প্রশ্নটা করল। ফারদিন কিছু সময়ের জন্য থেমে গেল। তার এক হাতে ছিল ছুড়ি অন্যহাতে মাংসের টুকরা। আজকে লাঞ্চে সবার জন্য স্টেক বানাবে ফারদিন। মেহেক কখনও স্টেক রান্না দেখেনি। কখনও খায়ওনি এই জিনিস। তবে নাম শুনেছে অনেকবার। তাই আগ্রহ নিয়ে রান্না দেখতে এসেছিল। তখনি হঠাৎ এমন প্রশ্ন করল। ফারদিন না বুঝার ভান করে ভ্রু কুচকে বলল,” কে প্রিয়ন্তী?”
“এটা আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি। একই কথা আবার আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?”
ফারদিন কিছু একটা চিন্তা করে বলল,” ও আচ্ছা প্রিয়ন্তী? উপরে সাত তলায় থাকে। একটা মেয়ে।”
” আজ এসেছিল।”
” কখন এসেছিল?”
” যখন আপনি আর মা বাজারে গিয়েছিলেন তখন এসেছিল। আপনার সাথে দেখা করতে। আমি বললাম আপনি বাড়িতে নেই। তখন জিজ্ঞেস করল আমি কে?”
” তাই? তারপর তুমি কি বলেছো?”
” যা সত্যি তাই বলেছি। আমি আপনার বউ হই এটাই বলেছি!”
” তারপর?”
” তারপর আমরা অনেকক্ষণ বসে গল্প করেছি।”
” গল্প করেছো?”
” হুম। শুনে ভয় পেলেন নাকি?”
” না। ভয়ের কি আছে?”
” সেটাই তো ভয়ের কি আছে? আমি যখন প্রিয়ন্তীকে আমার পরিচয় জানালাম তখন মেয়েটা খুব এক্সাইটেড হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল। গাল-টাল টিপে বলল, তুমি তো দেখি একদম পিচ্চি মেয়ে। আমি ভেবেছিলাম আমার চেয়ে বয়সে বড় হবে। এখন দেখি তুমি আমার চেয়েও ছোট! তারপর আরও কত কথা যে বলল!”
” কি কি বলল?”
” আপনাকে কেন বলবো? এগুলো আমাদের মধ্যকার সিকরেটস।”
” ওরে বাবা, সিকরেটস? ভালোই।”
” শুনলাম প্রিয়ন্তীর সাথে নাকি আপনার একসময় খুব ভালো সম্পর্ক ছিল?”
” হুম। ছিল তো।”
” কতটা ভালো? ”
” এইভাবে জিজ্ঞেস করছো কেন?”
” না, আমি জানতে চাই। ঠিক কতটা ভালো সম্পর্ক হলে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা একে অন্যের সাথে রাত জেগে ফোনে কথা বলতে পারে।”
ফারদিন কেশে ফেলল। মেহেক বলল,” পানি খাবেন নাকি?”
” না, লাগবে না।”
” আমার সাথে কিন্তু কখনও আপনি রাত জেগে ফোনে কথা বলেননি।”
” ঠিকাছে। এখন থেকে তাহলে তুমি আমি এক বিছানায় শুয়ে সারারাত ফোনে কথা বলবো। খুশি?”
” আমার সাথে ফাজলামি করবেন না।”
ফারদিন হাসছিল। মেহেক তীক্ষ্ণ গলায় বলল,” এরকম আর কয়টা প্রিয়ন্তী, সুজির সাথে আমার দেখা হবে শুনি?”
” দেখো, প্রিয়ন্তীর সাথে সুজির তুলনা করা একদম বেমানান। প্রিয়ন্তী আমাকে পছন্দ করতো। কিন্তু আমি কখনও রেসপন্স করিনি।”
” তাহলে রাত জেগে কথা বলতেন কেন?”
” ও ফোন দিতো। বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করতো। আমি শুধু উত্তর দিতাম।”
” আর এভাবেই বুঝি রাত পার হয়ে যেতো?”
” মেহেক, আমাকে সন্দেহ করো না। আমি তোমাকে মিথ্যে বলবো না।”
” আমার আপনার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না। আপনার চোখেমুখে আমি মিথ্যার উপস্থিতি টের পাচ্ছি।”
এই কথা বলে মেহেক রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বেডরুমে যাওয়ার সময় সে তিশার কণ্ঠ শুনতে পেল। নিজের ঘরে বসে তিশা ফাহিমের সাথে ফোনে ঝগড়া করছে। এই দু’জনের কাজই হচ্ছে শুধু ঝগড়া করা। যেমন আজ সকালের ঘটনা।মেহেকের ঘুম ভাঙার আগেই ফারদিন ও ফয়জুন্নিসা সুপার শপে চলে গিয়েছিলেন। মেহেক সকালে উঠে লিয়ার মা’র থেকে জানতে পারলো যে ফারদিন বাসায় নেই। তিশা মেহেককে ব্রেকফাস্ট করতে দিয়ে ফাহিমের সাথে বেরিয়ে পড়ল। ফাহিম অফিসে যাওয়ার পথে তিশাকে পার্লারে নামিয়ে দিয়ে যাবে। তিশার সাজগোজের প্রতি খুব ঝোঁক। নিজের যত্ন নিতে সে ভালোবাসে। তাই সপ্তাহে একদিন তাকে পার্লারে যেতেই হয়। ফাহিম আর তিশাকে একসাথে দেখতে মেহেকের অনেক ভালো লাগে। তারা দু’জন খুব হাসি-খুশি। আর সমবয়সী হওয়ায় প্রায় সময়ই দু’জন খুব ঝগড়া করে। তাদের ঝগড়া, খুঁনশুটি দেখতেও মেহেকের ভালো লাগে। আজকে ব্রেকফাস্ট করার সময় তিশা ফাহিমকে বলছিল,” তুমি অফিসে কখন যাবে?”
” প্রতিদিন যখন যাই, সাড়ে নয়টায়।”
” তাহলে আমাকে একটু পার্লারে ড্রপ করে দিও।”
ফাহিম দীর্ঘসশ্বাস ছেড়ে বলল,
” পার্লার! ঘন ঘন এতো পার্লারে গিয়ে লাভ কি? চেহারার তো কোনো পরিবর্তন হয় না। দুইবছর ধরে সেই একই চেহারা দেখে আসছি। শুধু শুধু টাকা নষ্ট।”
” হোয়াট ডু ইউ মিন? আমার চেহারা দেখতে তোমার ভালো লাগে না?”
তিশার দৃষ্টি কটমট। মেহেক ফিক করে হেসে ফেলল। ফাহিম বলল,” আমি তো সেটা বলিনি। মানে জানতে চাইছি পার্লারে রেগুলার গিয়েও যদি কোনো পরিবর্তন না হয় তাহলে গিয়ে লাভটা কি?”
” মানুষ চেহারা পরিবর্তন করতে পার্লারে যায় না। নিজের যত্ন নেওয়া মানেই চেহারা পরিবর্তন করে ফেলা না। সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করা।”
” ও তাই বলো। আমি অবশ্য উন্নতি দেখলাম না।”
” দেখবেও না৷ কারণ আমার দিকে তো তোমার তাকাতে ভালো লাগে না। আমার পেছনে খরচ করলে তোমার টাকা শেষ হয়ে যাবে। আমি যেটাই করি সেটাই তোমার কাছে অপচয়..”
শুরু হয়ে যাচ্ছিল তর্ক-বিতর্ক। মেহেক ঝগড়া আটকানোর জিজ্ঞেস করল,” মা আর ফারদিন কখন আসবে?”
মেহেকের প্রশ্নেও কিন্তু তাদের তর্ক কমলো না। তিশা এক কথায় উত্তর দিল,” ঠিক নেই।” তারপর আবার ফাহিমের সাথে তর্ক শুরু। ফাহিম অবশ্য তিশাকে রাগানোর জন্য ইচ্ছে করেই এসব বলে। কিন্তু তিশা বুঝে না। কিংবা হয়তো বুঝে। বুঝেই ঝগড়া করে। মেহেক নিজের ঘরে গিয়ে বসতেই একটা হারমোনিয়াম দেখতে পেল। আজ সকালেও সে এইটা দেখেছে। হারমোনিয়ামটা একদম নতুন। এইটা কে এনেছে, কি জন্য এনেছে তা এখনও মেহেক জানে না। ফারদিনকে জিজ্ঞেস করতে নিয়েও ভুলে গেছিল। তার খুব ইচ্ছে করছে হারমোনিয়ামটা একটু বাজিয়ে দেখতে। মেহেক আবার খুব সুন্দর হারমোনিয়াম বাজাতে পারে। তার খুব মিষ্টি একটা গানের কণ্ঠও আছে। কিন্তু তার এই গোপন প্রতিভার কথা কেউ জানে না। ছোটচাচীর কাছে মেহেক হারমোনিয়াম বাজানো শিখেছিল৷ তার ছোটচাচী দরজা, জানালা বন্ধ করে লুকিয়ে গান গাইতেন। কারণ তাঁর গানের প্রতি খুব ঝোঁক ছিল এই কথা মেহেক ছাড়া অন্যকেউ জানতো না। একদিন মেহেকের আব্বা জেনে গেলেন। মেহেক ছোটচাচীর থেকে গান শিখেছে এইটা জানার পর তিনি মেহেককে থাপ্পড় দিলেন। বাবার কাছে ওই প্রথমবার তার মার খাওয়া। এরপর আর কখনও মেহেক গানের কথা উচ্চারণ করেনি। মেহেকের ছোটচাচা তার চাচীর হারমোনিয়ামটা ভেঙে ফেলেছিলেন। তাতে ছোটচাচী যতটুকু কষ্ট পেয়েছিল তার চেয়েও হাজার গুণ কষ্ট মেহেক পেয়েছিল।
লিয়ার মা রান্নাঘরে এসে ফারদিনকে বললেন ফয়জুন্নিসা তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। ফারদিন বলল সে রান্না শেষ করে যাবে। কিন্তু লিয়ার মা বললেন খুব জরুরী। এখনই যেতে বলা হয়েছে। ফারদিন বাধ্য হয়ে হাত ধুঁয়ে মায়ের রুমের দিকে রওনা হলো। ফয়জুন্নিসা বিছানায় বসে ফারদিনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর চোখমুখ অস্বাভাবিক শক্ত হয়ে আছে। ফারদিন দরজার কাছে এসে প্রশ্ন করল,” আম্মু ডেকেছো?”
” হুম। ভেতরে আয়।”
ফারদিন সামনে এসে দাঁড়াতেই তিনি হাতের ইশারায় বসতে বললেন। ফারদিন চেয়ার টেনে বসলো। ফয়জুন্নিসা হাসি মুখে বললেন,” ফারদিন, বাবা আমার! তোকে আমি অনেক ভালোবাসি। তোকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন ছিল। এখনও আছে। কারণ তুই আমার একমাত্র সন্তান। ফাহিমকেও আমি নিজের ছেলের মতো মানুষ করেছি। আমি তার চাচী হলেও সে কিন্তু আমাকে নিজের মা-ই মনে করে। ছোটবেলায় তুই ফাহিমকে অনেক ঈর্ষা করতি। সে আমার কাছে আসলেই তুই তাড়িয়ে দিতি। বলতি আমার মায়ের কাছে আমি ছাড়া কেউ থাকতে পারবে না। মনে আছে ফাহিমের যেদিন জ্বর ছিল সেদিন আমি ফাহিমের ঘরে থেকেছিলাম বলে তুই দুইদিন আমার সাথে কথা বলিসনি।”
ফারদিন হেসে ফেলল। এগুলো অনেক বছর আগের গল্প। তখন ফারদিনের বয়সই বা কত ছিল? অনেক ছেলেমানুষী করেছে। যা মনে পড়লে খুব লজ্জা লাগে।
ফয়জুন্নিসা ঠোঁটের হাসি প্রসারিত করলেন,” আমি একটা পরীক্ষা করতে চাই। তোর আর ফাহিমের মধ্যে কে আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে সেই পরীক্ষা।”
ফারদিন হাসার চেষ্টা করে বলল,” মানে? এইটা কেমন পরীক্ষা?”
” বলছি। আজ সকালে আমি ফাহিমের কাছে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। ফাহিম বলেছিল সে প্রশ্নটার উত্তর আমাকে ভেবে জানাবে। একটু আগে ফাহিম ফোন করে তার উত্তরটা দিয়েছে। এখন আমি তোকেও সেই একই প্রশ্ন করতে চাই। দেখা যাক, ফাহিমের সাথে তোর উত্তর মেলে কি-না।”
” ঠিকাছে। করো প্রশ্ন।”
” গ্র্যাজুয়েশনের পর তুই ঠিক করেছিলি পিএইচডি কমপ্লিট করে ইউনিভার্সিটির লেকচারার হিসেবে জয়েন করবি। কিন্তু বিয়ের পর তোর সিদ্ধান্ত বদলে গেল। তুই ঠিক করলি বাংলাদেশে একটা বিদেশী রেস্টুরেন্ট বানাবি। কারণ কুকিং তোর প্যাশন। আমি সবসময় তোকে সাপোর্ট করেছি। কিন্তু এবার আমি চাই, তুই আগে বিদেশে গিয়ে পিএইচডিটা কমপ্লিট কর।”
ফারদিনের চেহারা মুহুর্তেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতো থমথমে হয়ে উঠলো। ফয়জুন্নিসা বললেন,” প্রত্যেক মায়েরই একটা স্বপ্ন থাকে। নিজের সন্তানের প্রতি আশা-ভরসা থাকে। হ্যাঁ, রেস্টুরেন্ট তুই দিতেই পারিস। কিন্তু আমার স্বপ্ন আমার ছেলে ইউনিভার্সিটির লেকচারার হবে। এতো কষ্ট করে লেখাপড়া করেছিস কি সবজি কাটার জন্য? নিশ্চয়ই না! একটা ভালো পরিচয় তো তোকে তৈরী করতেই হবে।”
” কিন্তু আম্মু, আমি তো আগেই বলেছি..”
” আমার কথা শেষ হয়নি। আগে শেষ করি?”
” হুম।”
” তুই বিদেশে গিয়ে পিএইচডি কমপ্লিট করবি। তারপর যেকোনো একটা ইউনিভার্সিটিতে জয়েন করবি। জব পাওয়ার পর তুই চাইলে রেস্টুরেন্ট দে কিংবা যা ইচ্ছা কর আমি বাঁধা দিবো না। কিন্তু যতদিন তোর পিএইচডি কমপ্লিট না হচ্ছে ততদিন মেহেক বাংলাদেশে আমার সাথে থাকবে। তুই তাকে আমেরিকা নিয়ে যেতে পারবি না।”
” হোয়াট? এইটা কেমন কথা? না আম্মু, ইম্পসিবল!”
” কেন ইম্পসিবল? ফাহিমকেও আমি একই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সে কিন্তু তিশাকে আমার কাছে রেখে যেতে রাজি হয়েছে৷ তাহলে তুই কেন পারবি না? নিজের মায়ের উপরেও কি তোর ভরসা নেই?”
ফারদিন অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। সে এখন মাকে কিভাবে বুঝাবে মেহেক আর তিশার ব্যাপার এক না। মেহেককে একা রেখে ফারদিন আমেরিকা তো দূর ঢাকার বাহিরেও যেতে পারবে না। ফয়জুন্নিসা বললেন,” তুই রাজি না হলে বলে দে। আমি ধরে নিবো আমার একটাই ছেলে। সে হচ্ছে ফাহিম। কারণ তার কাছে বউয়ের থেকেও মায়ের আদেশ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ”
” আম্মু, তুমি এসব কি ধরণের কথা বলছো? এমন অদ্ভুত আদেশ তুমি কেন দিচ্ছো?”
” আমি ভালো মনে করেছি তাই এমন আদেশ দিয়েছি। তোর অদ্ভুত কেন মনে হচ্ছে? মানুষ কি বউ রেখে বিদেশ যায় না?”
” কিন্তু মেহেক তো ছোটমানুষ আম্মু। ও এইখানে একা কিভাবে থাকবে? আর ওকে ফেলে রেখেই বা আমি কিভাবে চলে যাবো?”
” ছোটমানুষ তো কি হয়েছে? তোর কি ওকে কোলে নিয়ে রাখতে হয়? তাছাড়া মাত্র পাঁচ-ছয়বছরের ব্যাপার। ছুটিতে তো তুই চাইলেই আসতে পারবি। এখানে মেহেককে দেখে রাখার জন্য আমি আছি, তিশা আছে, তোর দাদু আছে। আমাদের উপর কি তোর ভরসা নেই?”
ফারদিন জবাব দিল না। দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতায় তার মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেছে। ফয়জুন্নিসা বললেন,” ভেবে দ্যাখ কি করবি। আমাকে আজরাতের মধ্যেই জানাতে হবে। তবে আরেকটা কথা, যদি তোর উত্তর না হয় তাহলে আমি এ সপ্তাহেই আমেরিকা চলে যাবো। আর কখনও বাংলাদেশে ফিরবো না। আর তুই আমাকে কখনও ‘আম্মু’ বলে ডাকতে পারবি না। যে ছেলের কাছে মায়ের স্বপ্ন পূরণের চেয়ে বউয়ের সাথে থাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেই ছেলে আমার কোনো দরকার নেই।”
” আম্মু তুমি..”
” তুই যা এখান থেকে। গেট আউট।”
ফারদিন হতাশ হয়ে মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে এলো। তার হৃদয়ে শুরু হয়েছে ভয়ানক তোলপাড়। মেহেক ফারদিনকে দেখেই জিজ্ঞেস করল,” আচ্ছা, এই হারমোনিয়ামটা কার?”
ফারদিন বিষণ্ণ দৃষ্টিতে মেহেকের দিকে তাকালো। এই মেয়েটিকে ছেড়ে দূরদেশে গিয়ে সে কিভাবে থাকবে? মেহেক পুনরায় বলল,” বলুন না।”
ফারদিন হেসে বলল,” এইটা তোমার জন্য এনেছি।”
” আমার জন্য মানে?”
ফারদিন বারান্দার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। পকেট থেকে ফোন বের করে চোখের জল লুকানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,” আন্টির কাছে শুনলাম তুমি নাকি গান গাইতে খুব পছন্দ করো৷ তাই হারমোনিয়াম কিনে এনেছি। এখন থেকে গান শিখবে। তোমাকে একদিন বড়সড় সিংগার হতে হবে কি-না! যেন মানুষ আমাকে দেখলেই বলে, কণ্ঠশিল্পী মেহেক ইমরোজের হাসব্যান্ড।”
মেহেক কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেল। নিজের কানকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই এতো সুন্দর হারমোনিয়ামটা তার জন্য কিনে আনা হয়েছে? সে গান শিখতে পারবে? সিংগার হতে পারবে? তার মতো মেয়ের জন্য তো এটা আকাশ ছোঁয়া স্বপ্নের মতো ছিল। ফারদিন কি জানে সে মেহেককে আজ কত বড় উপহার দিয়েছে? মেহেকের শরীর জুড়ে আনন্দের শিহরণ বাহিত হচ্ছে। আর ফারদিন কি নির্বিকার!এতোবড় একটা কান্ড ঘটিয়েও তার মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। সে দিব্যি মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন কিছুই হয়নি! অথচ তার ওই অল্প কিছু কথায় মেহেকের পুরো পৃথিবী বদলে গেছে। রঙিন স্বপ্নেরা ডানা মেলে প্রজাপতির মতো মনের বাগানে উড়ে বেড়াচ্ছে। মেহেক ফারদিনের কাছে গিয়ে উৎফুল্ল গলায় বলল,” এই শুনুন।”
ফারদিন ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে মেহেকের দিকে তাকাতেই কিঞ্চিৎ অবাক হলো। মেহেকের দুই চোখে অশ্রু। ফারদিন কিছু বলার আগেই মেহেক দুইহাত তুলে বলল,” আমাকে উঠান।”
” মানে?”
” মানে উপরে তুলুন।”
ফারদিন মেহেকের কোমড় জড়িয়ে ধরে তাকে উপরে তুলতেই মেহেক টুপ করে ফারদিনের কপালে একটা চুমু দিয়ে ফেলল। তারপর অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলল,” আজকে আমার কত খুশি লাগছে সেটা আপনাকে কোনোদিন বুঝাতে পারবো না।”
ফারদিন তখনও হতচকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ একটু পর হেসে বলল,” কিন্তু একটা শর্ত আছে। তোমাকে স্কুলে ভর্তি হতে হবে। লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে হবে। নাহলে কিন্তু হারমোনিয়াম বেচে দিবো। ”
মেহেকও হেসে ফেলল।
” ঠিকাছে। আপনি যা বলবেন তাই হবে।”
ফারদিন তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,” আই লভ ইউ পিচ্চি।”
মেহেকের অপরিসীম আনন্দ লাগছে। তার মতো একটি মেয়ের ভেঙে গুড়িয়ে যাওয়া এলোমেলো পৃথিবীতে এমন একটি জীবন তো একদম অনপেখিত ছিল। সে তার অনপেখিত এই জীবন পেয়ে ধন্য! ফারদিন বুক ভরে মেহেকের চুলের ঘ্রাণ নিল। এই মিষ্টি সুভাষ, উষ্ণ শরীরের উত্তাপ,কোমল স্পর্শ, হৃদয়জুড়ানো হাসি, মধুর কণ্ঠস্বর, এককথায় মেহেকের সবকিছু খুব মিস করবে ফারদিন। আমেরিকা যাওয়ার পর আবার তাদের কবে দেখা হবে কে জানে? মেহেক বদলে যাবে না তো? ফারদিন একটি দীর্ঘশ্বাস গোপন করল। এই সুদীর্ঘ অপেক্ষার দহন খুব যন্ত্রণাদায়ক হবে বলেই মনে হচ্ছে।

(প্রতিদিন নিত্যনতুন গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের শহর চ্যানেল এবং সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই আপনি নোটিফিকেশন পান)

(প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত।)

( গল্পের একটা অংশ শেষ হলো। খুব শীঘ্রই অনপেখিত-২ নামের দ্বিতীয় অংশটি আসবে। আশা করি খুব সুন্দর একটা এন্ডিং দিতে পারবো। অনেক কাহিনি বাকি রয়ে গেছে। সব অনপেখিত-২ তে উপস্থাপনের চেষ্টা করবো। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। তাই এখন আর কোনো গল্প লিখবো না। সবাই ভালো থাকবেন। গল্প সম্পর্কে অনুভূতি প্রকাশ করবেন। আর আমার পরীক্ষার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ হাফেজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here