অনিন্দিতা পর্ব -০৬

#অনিন্দিতা
#৬ষ্ঠ_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

অনিকে বোরখা পরা দেখে তাজ হাঁ করে তাকিয়ে আছে। ওকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে না যে, এটা অনি।

–“তুমি কি আসলেই অনি? নাকি অনিকে কোথাও লুকিয়ে রেখেছো? কে তুমি মেয়ে? আমার বউটা কোথায়!”

তাজের কথা শুনে অনি কিছুটা লজ্জা পায়৷ তাজ একটু বেশিই বলে ফেলেছে। অনি মুখের নিকাবটা সরিয়ে তাজকে বলে,

–“এবার তোমার বউকে পেয়েছো? এইবার বলো আমাকে কেমন লাগছে? সত্যিই কি বুড়ীদের মতো লাগছে?”

তাজ অনির দিকে এগিয়ে এসে ওকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলে,

–“বোরখা পড়েও যে, আমার বউকে এত সুন্দর লাগে তাতো জানতাম না! ”

তাজের কথায় খুশি হয়ে অনি নিকাবটা লাগিয়ে তাজের মায়ের ঘরে যায়৷ তারপর ওর খালা শাশুড়ীকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“খালামনি দেখুনতো আমাকে আপনাদের মতই লাগছে না? এখনতো আমাকে এ বাড়ির বউ বলে মনে হচ্ছে নাকি?”

অনিকে দেখে তাজের মা আর খালা অবাক হয়ে যায়৷ তাজের মা ভীষণ খুশি হয় অনিকে দেখে৷ অনি যে এত তাড়াতাড়ি উনার মনের আশা পূরণ করবে তা কল্পনাও করতে পারে নি৷ বিশেষ করে উনার বোনের মুখটা দেখার মতো ছিলো। তিনি কিছু না বলে মাথা নিচু করে বিড়বিড় করে কি যেন বলতে থাকে।

–“অনিন্দিতা নামটা এবার স্বার্থক! সত্যিই তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে বোরখাতে!…. তা আপা এবারতো দেখলে আমার বউমা কেমন?”

তাজের মায়ের কথায় উনার বোন বলল,

–“হয়েছে! হয়েছে! এতো আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না! একদিনে কি আর মানুষ চেনা যায়! কয়দিন যেতে দাও আসল রূপ বের হয়ে যাবে!”

–“কিন্তু আমিতো আমার আসল রূপটা সবার থেকে লুকিয়ে নিতে চাচ্ছি খালামনি! তাহলে আপনারা দেখবেন কি করে! এখন থেকে আমি এভাবেই চলব!ভালো হবে না!”

অনির মুখে এমন কথা শুনে তাজের মা ভীষণ খুশি হয়। তারপর অনির সাথে তাল মিলিয়ে বলে,

–“ইনশাআল্লাহ! কোনো কাজ করবে বললে শেষে ইনশাআল্লাহ বলবে মা। তাহলে আল্লাহ সেইকাজ করার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। ”

–“আচ্ছা মা এবার আসি। খালামনি আসি।”

বলেই অনি রুম থেকে বের হয়ে গেলো৷ তারপর তাজের সাথে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। তাজ শুধু ভাবছে যে, অনি এত সহজে এত পরিবর্তন কি করে হয়ে গেলো! মেয়েরা কি আসলেই বিয়ের পর পরিবর্তন হয়ে যায়? তাও আবার একদিনেই? অনিকে দেখে ওর এখন তাই মনে হচ্ছে!

তাজ আর অনি দুপুর পর্যন্ত শপিং করলো৷ অনি তাজের অবস্থা ভালো করেই জানে। তাই কোনো দামী জিনিসেই হাত দেয়নি৷ আর ওর বাসায় যা আছে সেগুলো আর নিলো না। শপিং শেষে তাজ বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলো,

–“এইটুকুই? শেষ? আরকিছু লাগবে না? সবাই না বলে বউয়েরা নাকি শপিং করতে আসলে পুরো মার্কেট কিনে নিতে চায়! আর আমার বউ দেখছি আমার পকেট ফাঁকাই করতে পারলো না!”

–“আরে আরকিছু লাগবে না। চলোতো! তোমার যে বেতন পাও তাতে আমার, তোমার আর মায়ের আরামসে চলে যাবে! চিন্তা করতে হবে না!”

–“নতুন বউ বলে লজ্জা পাচ্ছো নাতো? আরে আরকিছু লাগলে বলো! ”

–“আরে আমাদের সম্পর্কটা নতুন! কিন্তু পরিচিতিটাতো পুরাতন! তোমার কাছে আবার আমার লজ্জা!”

–“তাই নাকি! আমার বউটাতো তাহলে একটা বেহায়া মেয়ে! লজ্জা নেই! হায়রে কপাল!”

–“কিহ! আমি বেহায়া! এতবড় অপমান! ”

–“আচ্ছা বাবা, সরি!”

এগুলো বলতে-বলতে ওরা রাস্তায় চলে আসে। দুজনেই খুব হাসাহাসি করছে। তাজ রিকশা ডাকছিলো এমন সময় ওর এক কলিগের বউয়ের সাথে দেখা৷ প্রায়-ই অফিসে যাওয়া-আসা করে জন্য তাজ উনাকে ভালো করেই চিনে। তাজকে দেখেই উনি ওদের দিকে এগিয়ে এসে বলল,

–“আরে তাজ ভাই না? আপনি অফিসে যান নি আজ? এখানে কি করছেন? আর আপনার সাথে এটা কে?”

এতগুলো প্রশ্ন শুনে তাজ থতমত খেয়ে যায়। তারপর আমতা-আমতা করে বলল,

–“এতগুলো প্রশ্ন করলেন! কোনটার উত্তর আগে দিবো?”

তখন পাশ থেকে অনি বলে উঠলো,

–“এখানে যখন দেখতে পাচ্ছেন তারমানে অবশ্যই অফিসে যায়নি! কারণ একটা মানুষ এক সময়ে এক জায়গাতেই থাকতে পারে। আর আমরা শপিং ব্যাগ হাতে শপিংমলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তারমানে অবশ্যই শপিং করতে এসেছি। তবে আপনার শেষের প্রশ্নটা করা ঠিক আছে! আমি তাজের ওয়াইফ। অনিন্দিতা… আপনি আনাকে সংক্ষেপে অনি বলে ডাকতে পারেন।”

ওর কথাগুলো শুনে তাজ আর ওই মেয়ে দুজনেই অবাক হয়ে গেছে৷ আসলে অনি ভেবেছিলো যে, উনি হয়তো তাজের কলিগ হবে! ওর কথা শুনে মেয়েটা মাথা নিচু করে তাজকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“আপনি বিয়ে করে নিয়েছেন? আই থিঙ্ক, আপনার ওয়াইফ এমন ব্যাকডেটেড জন্যই মনে হয় আপনি কারো সাথে পরিচয় করান নি? তাইনা?”

উনার কথা শুনে অনি রাগে ফেটে পড়ছিলো৷ ও আরোকিছু বলতে যাবে তার আগেই পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তাজ অনির হাত চেপে ধরে কিছু বলতে নিষেধ করলো। তারপর ওই মেয়েটাকে লক্ষ্য করে বলল,

–“সরি ভাবি। আমি কালকেই বিয়ে করেছি। আসলে হুট করে বিয়েটা হয়ে গেছেতো! আপনাদের সাথে একদিন পরিচয় করিয়ে দিবো৷ আজ আসি। আমি ওদের বাসাতেই যাচ্ছি!”

বলেই অনিকে টেনে নিয়ে রিকশায় উঠে পড়লো৷ অনি তখনো রাগে ফুসছে! তাজ ওকে শান্ত করে বলল,

–“রেগে গেলে হবে? তুমিইতো ইচ্ছে করে এভাবে আসলে! আমরা কেউ তোমাকে জোর করেছিলাম? একটা কথা সব সময় মাথায় রাখবে, কে কি বলল সেটা বড় ব্যাপার নয়! তোমার মন কি চায় সেটাই বড় ব্যাপার! তুমি যদি খালার কথায় বোরখা পড়ে থাকো তাহলে আর পড়তে হবে না! মন থেকে যেদিন চাইবে সেদিন-ই পড়ো!”

তাজের কথাগুলো শুনে অনি চুপ হয়ে যায়৷ আর ভাবতে থাকে যে, আসলেই কি ও নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজগুলো করছে? কিন্তু ওরতো বোরখা পড়ে ভালই লাগছে! এসব ও আর ভাবতে পারে না!

বাসায় ঢুকতেই অহি আর ইমা দৌড়ে আসলো। অনিকে দেখে প্রথমে চিনতেই পারেনি৷ তাজকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–“আরে ভাইয়া, আপু কোথায়? আর আপনার সাথে এই মহিলা কে?”

অনি মুখের নিকাব খুলে হেসে ফেলে তারপর অহি আর ইমাকে চমকে দিয়ে জোরে করে বলে উঠে,

–“সারপ্রাইজ! ”

তারপর অহিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে ফেলে অনি৷ ইমা তাজের হাত থেকে শপিং ব্যাগগুলো নিতে-নিতে বলল,

–“তা ভাইয়া কি আমাদের সবার জন্য শপিং করে এনেছেন নাকি! এতকিছু!”

তাজ মাথাটা নিচু করে কিছু বলবে তার আগেই অনি বলে উঠলো,

–“আমাদেরতো খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই তোমাদের শপিং করে দেবো! আমার হাজব্যান্ড শুধু আমার শপিং করিয়ে দেবে! তোদের জন্য দেখ রসমালাই এনেছে! আর আইস্ক্রিমও আছে৷ তোরাও খা, আর সবাইকেও দে। ”

ওদের চেঁচামেচি শুনে সবাই রুম থেকে বের হয়ে আসে। পিহু আর ইমতিয়াজকে দেখেই অনির বুকের ভেতরটা ধক করে উঠে। ওদের দুজনকে হাসিখুশি দেখে অনির আরো কষ্ট হয়৷ অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরণ করে নেয়৷ তাজ ওকে এমন কষ্ট পেতে দেখে টেনে রুমে নিয়ে যেতে থাকে।

–“আরে তোরা মেয়েটাকে রুমেতো যেতে দে! ক্লান্ত হয়ে এসেছে।তোরা মৌমাছির মতো ঘিরে ধরেছিস!”

কথাগুলো ইমার মা ইমা আর অহিকে উদ্দেশ্য করে বলল। অনির বাবাও ওখানে চলে এসছিলো৷ তিনিও ইমার মায়ের কথায় সম্মতি দিয়ে তাজ আর অনিকে রুমে যেতে বলল।

অনি বোরখা খুলে ফ্রেস হয়ে নিলো৷ তারপর দুপুরের খাবার খাচ্ছিলো তখনি তাজের মায়ের ফোন পেয়ে অনি খাওয়া বাদ দিয়ে উঠে গেলো।

–“আসসালামু আলাইকুম মা৷ কেমন আছেন?”

–“ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি ভালই আছি। তুমি কেমন আছো মা? পৌঁছেছো?”

–“হ্যাঁ মা, পৌঁছেছি৷ আপনাকে ফোন করতেই ভুলে গেছি! সরি!”

–“আচ্ছা ঠিক আছে মা, সমস্যা নেই। খাওয়া-দাওয়া করেছো? নামাজ পড়েছো? ”

নামাজের কথা শুনেই অনির মুখটা ফুটো বেলুনের মতো চুপসে গেলো। ও আমতা-আমতা করে বলল,

–“খাচ্ছি। নামাজ পড়িনি এখনো! ”

–“আচ্ছা খেয়ে-দেয়ে নামাজ পড়ে নাও। আর আজকেই চলে আসবে নাকি?”

–“আজকে থেকে আসি?”

–“তোমার ইচ্ছে। দেখো তাজ কি বলে! ও আবার বাসার বাইরে কোথাও কখনো থাকেনি!”

–“আমিওতো কখনো বাইরে….”

এটুকু বলেই থেমে যায় অনি। তাজের মা ওর মনের অবস্থাটা বুঝতে পেরে বলল,

–“আচ্ছা মা, আজ থেকে আসো৷ তাজ কিছু বললে আমাকে ফোন করো! আর নামাজ পড়ো কিন্তু!”

অনি “আচ্ছা” বলে কল কেটে দেয়। তারপর খাওয়া শেষ হলে তাজ বিশ্রাম নিচ্ছিলো। অনি নামাজের কথা ভুলেই গেলো। ও ইমার রুমে গিয়ে অহি আর ইমার সাথে গল্প করতে বসলো।

–“আপু আজ কি হয়েছে জানিস?”

অহির কথা শুনে অনি বলল,

–“তা বলেই ফেলেন জ্ঞানবতী! আজ সকাল থেকেইতো কম ড্রামা দেখে আসছি না! এখন আবার নতুন কি বলবেন! বলে ফেলুন!”

ইমা হেসে বলল,

–“সকালের থেকেও এটা বেশি মজার! তুমি শুনলে হাসতে-হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যাবে!”

এমন কথা শুনে অনি ওদের দুজনকে ধমকের সুরে বলল,

–“তোরা কিছু করিস নিতো?”

অনির কথা শুনে দুজনেই কিছুটা চুপ হয়ে গেলো। তারপর একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। অনি তখন কিছুটা রাগী স্বরে বলল,

–“নিশ্চয়ই দুটোতে মিলে আবার কোনো কুকীর্তি করেছিস?”

অহি মুখটা গোমড়া করে বলল,

–“এতক্ষণ পর তোমাকে কাছে পেলাম! তাও এমন বকা না দিলেই নয়! একটু ভালোবেসেওতো কথা বলতে পারো নাকি!”

–“ওকে ড্রামাকুইন! এবার বলে ফেল তোদের মজার কথাটা!”

চলবে..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here