অনিমন্ত্রিত প্রেমনদী পর্ব -০৬+৭

#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#পর্ব_০৬
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

জানালার পর্দা দুহাতে মেলে দিতেই কয়েক টুকরো নরম আলো হুড়মুড়িয়ে রঙিন কার্পেট দখল করে নিলো। ভাঙা ভাঙা রোদ পড়লো তরীর উজ্জ্বল চেহারায়। চোখজোড়া আবেশে নিভে গেল। আজ বৃষ্টির কোন চিহ্ন নেই। ঝলমল করা রোদ উঠেছে আকাশে।
দুহাত উঁচু করে অবাধ্য চুলগুলো হাতখোঁপায় আটকে নিয়ে পিছু ফিরে একনজর তাকিয়ে দেখলো তরী। ছোট্ট অরু ঘুমিয়ে আছে উপুড় হয়ে। মুখের অর্ধভাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। কুচকুচে কালো পাপড়ি স্থির হয়ে আছে।
গোলাপি রঙের নরম ঠোঁটজোড়া ঈষৎ ফুলিয়ে রেখে ঘুমাচ্ছে। সারারাত তরীর উপর হাত-পা তুলেই সে ঘুমাবে। অরুকে দেখলেই তরীর বড্ড মায়া মায়া লাগে। জড়িয়ে আদর করতে ইচ্ছে হয়। এমন একটা পরীর মতো বোন আল্লাহ তাকে দিয়েছে ভেবে মনে মনে শুকরিয়া জ্ঞাপন করে। এগিয়ে এলো তরী। অরুর কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে আদর করে ডাকলো।
-“অরু! টিয়াপাখি উঠবে না?”

নড়েচড়ে পাশ ফিরে শুলো অরু। তার এখন ওঠার কোন ইচ্ছে নেই। আরেকটু আরাম করে ঘুমাবে বলে তরীর বালিশ আঁকড়ে ধরলো।
তরী মিটিমিটি হেসে পায়ের তালুতে সুড়সুড়ি দিতেই লাফ দিয়ে উঠলো অরু। তার ভীষণ সুড়সুড়ি। গাল ফুলিয়ে টুকটুক করে তাকিয়ে থাকলো। ঘাড়ের দু-পাশে দুটো লম্বা বিনুনি উঁকি দিচ্ছে। হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙলো।
ক্ষীণ সময় পর ঘুমের রেশ হালকা কে*টে যেতেই চোখ বুজে হাসলো অরু। অতঃপর তরীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগলো। সংকুচিত হলো তরী। হাসতে হাসতে খাটের এককোণে গিয়ে পড়লো। অরুর খিলখিল হাসিতে মেতে উঠলো পুরো বাড়ি। দু-বোনের সকাল হলো আনন্দে। অরুকে ব্রাশ করিয়ে খাবার টেবিলে নিয়ে গেল তরী। সে বাবা মায়ের সাথে আগেই নাস্তা সেরে নিয়েছে। অরু নজর বুলিয়ে দেখলো কোথাও মিঠু নেই। সে এখনো ঘুমাচ্ছে? তার ঘুম ভেঙে গিয়েছে ভাইয়া কোন সাহসে এতক্ষণ ঘুমাবে?
তরীকে টা*ন*তে টা*ন*তে নিয়ে গেল মিঠুর ঘরে।

খাটের একপাশে ছোটো ছোটো পা দুটো গুটিয়ে বসলো। চেঁচিয়েও কোন লাভ হলোনা। উঠলো না মিঠু। তাকে সুড়সুড়ি দিয়েও লাভ নেই। দুষ্ট অরু মিঠুর কানের কাছে মুখ নিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো,
-“ইয়াক তোমার মুখ দিয়ে লালা পড়ছে, ভাইয়া। আমার বমি আসছে। মুখ থেকে কতটা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।”

মিঠুর ঘুম হালকা হয়ে এসেছে। অবচেতন মনে ঠোঁটের পাশে হাত ঘুরিয়ে ঠোঁট মুছে নিলো। অল্পস্বল্প চোখ মেলে হাত সামনে এনে দেখলো সত্যি কি তার মুখ থেকে লালা গড়াচ্ছে?
তা দেখে তরী মুখ চেপে হাসলেও অরু খিলখিল করে হেসে উঠলো। পেটে হাত চেপে বলল,
-“বোকা বানিয়েছি তোমায়।”

মিঠু রে*গে গেল। ঝট করে উঠে বসে দুহাতে অরুর গলা চে*পে ধরলো।
-“অরুর বাচ্চা, আজ তোকে মে*রে পঁচা ডোবায় ফে*লে আসবো।”

হাসি থামছেই না অরুর। মিঠু আলতো হাতে ধরেছে বিধায় একটুও ব্যথা পাচ্ছেনা সে। উল্টো বলল,
-“বোকা মিঠু! বোকা মিঠু! আমি অরু, অরুর কি বাচ্চা আছে?”

মিঠুও হেসে ফেললো। অরুকে ঝাপটে ধরে বলল,
-“বলেছিলিনা আমার মুখে দুর্গন্ধ, লালা গড়াচ্ছে? এখন এই দুর্গন্ধ মুখেই তোর গালে চুমু দেবো।”

মিঠু দেরি না করে পরপর দুটো চুমু দিয়েও ফেললো। অরুর চোখে বেয়ে জল গড়াতে দেরি হলোনা। ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদে ফেললো। বর্ষার মতো জলে টইটম্বুর চোখ। তার পরীর মতো গাল দুটো নির্ঘাত নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কেঁদে বুক ভাসালো সে। মিঠু তাকে ছেড়ে দিতেই খাট থেকে নেমে গেল। গাল ঘষতে ঘষতে দরজা পর্যন্ত গিয়ে থামলো। মিঠু করুণ গলায় বলল,

-“চালাক অরু আমায় বোকা বানালো!”

কান্না চোখেই খিলখিল করে হেসে ফেললো অরু৷ শান্ত ঘরটি ঝুমঝুম করে উঠলো তার হাসির শব্দে। আচমকা অরুকে এভাবে হাসতে দেখে তরী, মিঠু দুজনেই হেসে ফেললো। অরু ভীষণ দুষ্ট। নাটক করতে বেশ পারদর্শী।
মুহূর্তেই মিঠুকে বি*প*দে ফে*লে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তার একমাত্র অ*স্ত্র চোখের পানি। বাবার সামনে দু-ফোঁটা জরিয়েছে তো মিঠুর কপালে দুঃখ নামে।

★★★

শুক্রবার সপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় কমবেশি সবাই বাড়িতে উপস্থিত। পুরো সপ্তাহের সবগুলো জামাকাপড় জমে আছে। মাকে রান্নাঘরে দেখে তরী খুঁজে খুঁজে সবার জামাকাপড় নিলো কাঁচতে। সবচেয়ে বেশি ময়লা কাপড় পাওয়া গেল মিঠুর ঘরে। নোং*রা*ভা*বে থাকতে সে এক্সপার্ট।
জামাকাপড় শুকাতে দিয়ে একবার রামিকে দেখে আসবে। আকস্মিক জ্বরের কবলে পড়ে ছেলেটা একেবারে শান্ত হয়ে গিয়েছে। সারাদিনই চোখমুখ মলিন থাকে। দুর্বল শরীর নিয়ে বেশিক্ষণ হাঁটাচলা করতে পারেনা। একটু পরপরই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। এখন আর তাদের ঘরেও আসেনা। আগে তার আড্ডা ছিল মিঠুর ঘরে, এখন মিঠুর আড্ডা রামির ঘরে।

জামাকাপড়ের বালতি নিয়ে ছাদে উঠলো তরী। ঘেমে-নেয়ে একাকার শরীর। কপালের পাশ ঘেঁষে একফোঁটা নোনাপানি গড়িয়ে পড়ে গলার হাড় স্পর্শ করলো। কোমরে শক্ত করে ওড়না বাঁধা। লম্বা দঁড়ির এক পাশ থেকে জামাকাপড় মেলে দেওয়া শুরু করলো।

মাহমুদ মাত্রই ছাদে এলো। তার হাতেও এক বালতি কাপড়। মায়ের কাছ থেকে ধোয়া জামাকাপড়ের বালতি নিয়ে ছাদে এলো। ছুটির দিনে যতটুকু পারে মাকে সাহায্য করার চেষ্টা করে। তার বড় ভাই তো রান্নাও করতে জানে। ছুটির দিনে মাকে রান্নায় সাহায্য করতো। ছাদের সবগুলো দঁড়ি তরী একাই জামাকাপড় দিয়ে দখল করে নিলো।
মাহমুদ নির্ঝঞ্ঝাট, নিপাট ভদ্রলোক। ভদ্রলোকেদের আবার ঝ*গ*ড়া করার বিষেশ দো*ষ থাকেনা। গলা ঝেড়ে পেলব কন্ঠে শুধালো,
-“একপাশে আমাকে জায়গা দেওয়া যাবে?”

চমকে পেছনে তাকালো তরী। নির্জন ছাদে খানিকটা ভ*য় পেয়ে মাহমুদকে দেখেই প্রলম্বিত শ্বাস ছাড়লো। মানুষটা তাকে যখন-তখন চমকে দেয়। কখন পেছনে এসে দাঁড়ালো সে বুঝতেই পারলোনা। একটুতো শব্দ করে আসা উচিত। এতটা নিঃশব্দে চলাফেরা উচিত নয়। একদম উচিত নয়। মাহমুদের প্রশ্ন ঠিকঠাক বুঝতে না পেরে উল্টো প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো তরী।
মাহমুদ হাতে থাকা বালতি উঁচু করে দেখালো। তরী তড়িঘড়ি করে একটা দঁড়ি খালি করে দিলো।
মাহমুদ একটা একটা করে জামাকাপড় ঝেড়ে মেলে দিতে লাগলো।

-“তরী না?”
খালি বালতি হাতে ফিরতে গিয়েও থেমে গেল তরী। শব্দের উৎস ভেসে এলো পাশের ছাদ থেকে। তরী সরাসরি পাশের ছাদে তাকালো।
-“এমন ভ্যাবড়ার মতো তাকিয়ে আছো কেন? আমাকে চিনতে পারোনি? না-কি এখনো আগের মতো কথা বলতে জড়তা কাজ করে!”

তরী লোকটিকে চেনে। চিনবেনা কেন? দু-তিন বছরে কি কারো চেহারা ভুলে যাওয়া যায়? উনি পাশের বিল্ডিং এর জুনাইদ ভাইয়া। ভালো ছেলে ছিলেন। বা*জে ছেলেপেলের সাথে মিশে খা*রা*প হয়ে যাচ্ছিলেন বিধায় বাবা-মা বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন হয়তো ছুটিতে বাড়ি এসেছেন। ভ্যাবড়া বলায় অপমানিত বোধ করলো তরী। তাকে কোন দিক থেকে ভ্যাবড়া মনে হয়? আড় চোখে তাকিয়ে দেখলো মাহমুদ তার দিকে তাকিয়ে নেই। আপন মনে কাপড় মেলে দিচ্ছে। মুখে দেখা যাচ্ছে না। তরী ধরে নিলো তার অপমানে লোকটি মুখ লুকিয়ে হাসছে। গলা ধরে এলো তার। অপমান নিতে না পেরে রে*গে গেল তরী। কঠিন গলায় বলল,
-“একদম আমাকে ভ্যাবড়া বলবেন না জুনাইদ ভাইয়া। বি*শ্রী লাগে শুনতে, ছিঃ!”

জুনাইদ হো হো করে হেসে উঠলো। ব্যঙ্গ করে বলল,
-“কী আশ্চর্য তরী তুমি কাঁদছো না! ছোটবেলায় তো ছিঁচকাঁদুনে ছিলে। একটু কিছু বলতেই ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদে ফেলতে।”

এবার প্রচন্ড বিরক্ত দেখালো তরীকে। জুনাইদের কথার জবাব দিলোনা। মানুষের ছোটোবেলা আর বড়োবেলা কি এক নাকি? জুনাইদ তরীর পেছনে দাঁড়ানো মাহমুদকে ইঙ্গিত করে বলল,
-“তোমার পেছনে উনি কে, তরী?”

তরী একপলক তাকালো নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা মাহমুদের দিকে। অতঃপর কন্ঠস্বর খাটো করে জবাব দিলো,
-“ভাড়াটিয়া।”

জুনাইদ হাত উঁচিয়ে হাই, হ্যালো করলো। মাহমুদ ও জবাব দিলো। জুনাইদ নেমে যেতেই মাহমুদ মিটিমিটি হেসে বলল,
-“আপনি ছিঁচকাঁদুনে ছিলেন, তরী? কিভাবে কাঁদতেন? একটু দেখাবেন?”

তরীর রা*গের চাপে জড়তা একটু একটু করে চাপা পড়লো। যথেষ্ট শান্ত থাকার চেষ্টা করলো। রাগ চেপে বলল,
-“আমি মোটেও ছিঁছকাঁদুনে ছিলাম না! আপনি না বুঝেই বলছেন।”

মাহমুদ বুকে হাত গুঁজে সটান হয়ে দাঁড়ালো। রগঢ় করে বলল,
-“তো বুঝিয়ে দিন না, তরী।”

তরী অবাক হয়ে জানতে চাইলো,
-“কী বুঝিয়ে দেবো?”

-“ওই যে, যা বোঝানোর কথা।”
মাহমুদ মিটিমিটি হাসছে। তরী বুঝতে পারলো লোকটি তার সাথে মজা করছে। চাপা পড়া লজ্জা আবারও সুড়সুড় করে তরীকে ঝাপটে ধরলো। চোখের দৃষ্টি এলোমেলো হলো। খানিকটা বিষন্ন দেখালো তাকে। ভাগ্যকে আবারও দো*ষা*রো*প করলো। তাকেই কেন এমন অস্বস্তিতে পড়তে হয় বারবার। ভাগ্য উল্টো তাকে বিদ্রুপ করে বলল, “আমাকে দো*ষা*রো*প কেন করছো? দো*ষ*টা তোমার। আসলে ওসব তোমার লজ্জাটজ্জা কিছুই নয়, তুমি এটেনশন সিকার।”
তরী হতাশ হলো। কেউ তাকে বুঝতে চায়না। লজ্জা পেয়ে কিভাবে অন্যের মনযোগ আকর্ষণ করা যায় ভেবে পেলোনা সে। প্রথমদিনই একটা বিব্রতকর কান্ড ঘটিয়ে সে কিভাবে স্বাভাবিক থাকবে? আশ্চর্য!
-“ধুর।”
বলেই দ্রুত পায়ে নেমে গেলো তরী। মাহমুদ নিঃশব্দে হাসছে। তার এখন একটু একটু ভালো লাগছে।

অরু ছোটো ছোটো পায়ে কদম ফেলে ছাদে উঠলো। ফুলগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। মাহমুদ এখনো নামেনি। অরুকে দেখে কাছে ডাকলো। অরু তাকে পাত্তা দিলোনা। মুখ ভেংচি কেটে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলো।
মাহমুদ ছাদের রেলিঙ এ ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
-“তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে অরু। শুনলে তুমি চমকে যেতে পারো!”

এবার বোধহয় মাহমুদ একটুখানি পাত্তা পেলো। উৎসুক হয়ে তাকালো অরু। মাহমুদ রগঢ় করে বলল,
-“তোমাকে বিয়ে দেবো ঠিক করেছি। একজন বুড়ো লোক তোমায় দেখে ভীষণ পছন্দ করেছে।”

অরু রে*গে গেল।
-“আমি বুড়ো লোককে কেন বিয়ে করবো? আমি বিয়ে করবো রাজপুত্রকে, ওইযে ঘোড়ার গাড়ি চড়ে আসে তেমন!”

মাহমুদ বলল,
-“এই বুড়ো লোকটিও রাজপুত্র। ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে তোমায় নিতে আসবে।”

অরু আরেকটু রাগলো। গাল ফুলিয়ে বলল,
-“আমি কোন বুড়োটুড়ো বিয়ে করবো না।”

-“কিন্তু আমি তো তোমায় জোর করেই বিয়ে দেবো। লোকটা কিন্তু পান খায়। লাল লাল দাঁত থাকবে তার।”

অরু কেঁদে ফেললো।
-“আমি বুড়ো বিয়ে করবোনা।”

মাহমুদ এগিয়ে গেল। অরুর চোখ মুছে দিয়ে বলল,
-“আচ্ছা বিয়ে দেবোনা বুড়ো লোকের সাথে। কিন্তু একটা শর্ত আছে। আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে।”

মাহমুদের সামান্য শর্তে অরু রাজি হয়ে গেলো। সবটা ঠিকঠাকই ছিলো। বেশ ভাব জমালো মাহমুদের সাথে। কিন্তু যাওয়ার সময় দরজার সিটকিনি আটকে দিলো। জোরালো গলায় বলল,
-“এবার তোমায় একা একা ভূতে খাবে। তখন আমায় আর বুড়ো লোকের সাথে বিয়ে দিতে পারবেনা।”

ছোট্ট অরুর দূরন্তপনায় স্তব্ধ হলো মাহমুদ। দরজায় অনবরত আ*ঘা*ত করার পরও কেউ এলোনা। অনিচ্ছাকৃত বসে বসে রৌদ্রস্নান করলো। একঘন্টা পর মিঠুকে নিচে দেখে ডেকে এনে দরজা খুললো।

★★★

আয়েশা আন্টি মায়ের সাথে গল্প করছেন। তরী চা নিয়ে এসে তাদের সাথে যোগ দিলো। প্রথমদিকে ভালোলাগলেও পরক্ষণে বোরিং লাগলো সাংসারিক আলাপ-আলোচনা। তরী ফোনে মুখ গুঁজে দিলো। ফেসবুক স্ক্রল করছিল। হুট করেই চোখের পলক পড়া থেমে গেল। একটা আইডি থেকে রিকোয়েস্ট এসেছে। সাধারণ কোন আইডি নয়। সনামধন্য কলেজ টিচার মাহমুদুল হাসানের আইডি থেকে। তরী কৌতুহলবশত আইডি ঘুরে ঘুরে দেখলো। ফেইক আইডি মনে হচ্ছে না। ভেবেচিন্তে রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলো। পরপরই মেসেন্জারের টুংটাং শব্দে আরো এক ধাপ চমকালো।
❝মা কি আপনাদের ঘরে আছেন?❞

#চলবে……#অনিমন্ত্রিত_প্রেমনদী
#পর্ব_০৭
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

দুরুদুরু বুক কাঁপছে তরীর, হাত কাঁপছে। এখনো তার চোখেমুখে বিষ্ময় খেলে যাচ্ছে। অল্প অল্প শরীর ঘামছে।
হুট করে করেই রিকোয়েস্ট এলো আর সে একসেপ্ট ও করে নিলো। মাহমুদের মেসেজের জবাব দেবে কি দেবেনা দ্বিধাদ্বন্দে কেটে গেল অনেকটা সময়। পরক্ষণে ঠিক করলো জবাব দেবে। হয়তো মাকে অনেকক্ষণ ধরেই খুঁজে যাচ্ছে লোকটি।
তরী ফোনের কি-বোর্ডে কাঁপা কাঁপা হাত চালালো।
❝জি, আন্টি আমাদের ঘরে।❞

ছোট্ট জবাব দিয়ে শ্বাস ছাড়লো তরী। টুংটাং করে আবার মেসেজ ভেসে এলো।
❝কষ্ট করে মাকে একটু পাঠিয়ে দিন।❞

আয়েশা আন্টিকে ডাকতে গিয়েও থেমে গেল তরী। কি বলে আন্টিকে পাঠাবে? উনার ছেলের কথা বললে যদি উল্টোপাল্টা মানে বের করেন, তীক্ষ্ণ চোখে তাকান? তবে তরী লজ্জায় ম*রে*ট*রে যেতে পারে। তার মনে তো এসব কিছুই নেই। সে আবারও মাহমুদের আইডি ঘেঁটে মেসেজ করলো,
❝আন্টিকে কি বলে পাঠাবো? যদি জিজ্ঞেস করেন আপনি উনাকে ডেকেছেন, তা আমি কিভাবে জেনেছি?
তখন কী বলবো?❞

নিরবে কে*টে গেল কিছু মুহুর্ত। অনেকটা সময় পর মাহমুদের আইডি স্ক্রিনে আবাটও ভেসে উঠলো। সাথে টুং করে ছোট্ট একটি আওয়াজ হলো,
❝দরজা খুলুন তরী।❞

পরপরই দরজায় বেল বাজলো। ভড়কে গেল তরী। তার মাঝে উঠে দরজা খুলে দেওয়ার কোন লক্ষণ নেই। সে একটা ঘোরের মাঝে পড়ে রইলো। মায়ের আলাপ-আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটায় বিরক্ত হলেন তিনি। তরীকে বললেন,
-“যা তো, দরজাটা খুলে দিয়ে আয়। তোর বাবা বা মিঠু হতে পারে!”

তরী মাকে বলতে চাইলো,
“আমার বাবা-ভাই কেউ নয় মা। দরজায় আমার জন্য একরাশ লজ্জা দাঁড়িয়ে আছে।”
বলতে না পেরে মায়ের তাড়ায় ধীর পায়ে দরজার দিকে এগোলো তরী। দরজা খুলে দাঁড়াতেই মুখের উপর লম্বা চওড়া একটা মানুষ ঝুঁকে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে গেল তরী। একবার পেছনে তাকিয়ে মা আর আন্টির দৃষ্টির অবস্থা বুঝে নিলো। সরাসরি মাহমুদের চোখে তাকাতে পারলোনা। তার এলোমেলো দৃষ্টি আশেপাশে গিয়ে ঠেকছে। মাহমুদ ভীষণ শীতল কন্ঠে শুধালো,
-“দরজা খুলতে এত দেরি হলো কেন, তরী? অপেক্ষায় ছিলাম তো।”

তরীর শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। শিরশির করে উঠলো প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। সে তো খুব একটা দেরি করেনি। দু-মিনিটের দেরিতে নিশ্চয়ই লোকটি অপেক্ষা করতে করতে শুকিয়ে যায়নি! ফ্যালফ্যাল করে তাকালো তরী। তার দৃষ্টিতে স্পষ্ট দ্বিধা। মাহমুদ আরেকটু ঝুঁকলো, ঘাড় নিচু করে ক্ষীণ দূরত্ব মিটিয়ে গাঢ় স্বরে বলল,
-“ লুকিয়ে দেখছেন কেন, তরী? ভেতরে ঢুকতে দেবেন না?”

তরী থতমত খেয়ে দ্রুত দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ালো। স্পষ্ট লজ্জার আভা তার গালে ফোটে উঠেছে। ভয়া*বহ লজ্জায় ক্রমাগত গাল দুটো একটু একটু করে ফুলছে। ভেঙে ভেঙে জবাব দিলো তরী,
-“আ..আসুন।”

মাহমুদ হাসলো, খুবই অল্প। তরী বুঝে ওঠার আগেই ভেতরে প্রবেশ করলো।
গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠে ডাকলো,
-“মা।”

আয়েশা সুলতানা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন। জিজ্ঞেস করলেন,
-“কখন ফিরেছিস?”

-“একঘন্টা আগেই।”

-“আসছি ভাবি।”
বলে উঠে পড়লেন আয়েশা সুলতানা। তরীর মা বললেন,
-“বসুন ভাবি।
বাবা বসো। চা খেয়ে তারপর যেও।”

মাহমুদ চমৎকারভাবে হাসলো। ভদ্রতা করেই বলল,
-“আমি চা খেয়েছি আন্টি। তাড়াহুড়োর দরকার নেই।”

-“আরে বসো তো বাবা।”

আয়েশা সুলতানাও বললেন,
-“আচ্ছা একটু পরে যাস। এখন একটু বস।”

বৈঠকাখানার সোফায় আরাম করেই বসলো মাহমুুদ।
অরু তাকে দেখে লুকিয়ে পড়লো সোফার পেছনে। মাহমুদ মিটিমিটি হেসে ফোন কানে তুললো। মিছেমিছি কারো সাথে কথা বলার ভঙ্গিতে বলল,
-“হ্যালো, বুড়োলোক। আপনি কবে আসবেন? অরু কিন্তু আমার সামনেই আছে। সোফার পেছনে ঘাপটি মে*রে লুকিয়ে আছে। ও আচ্ছা আপনি তাহলে পথেই আছেন? তাড়াতাড়ি চলে আসুন। আমরা অরুকে আপনার সাথে আজই বিদায় করে দেবো।”

অরু ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে ছিল। এবার আর রিস্ক নিলোনা। এক দৌঁড়ে রামির ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। সে বুড়োলোকের সাথে কিছুতেই যাবেনা।
মাহমুদ মুখ চেপে শরীর দুলিয়ে হাসলো। কোন শব্দ হলোনা। আয়েশা সুলতানা সবটা না জানলেও এই মুহূর্তের ঘটনায় তিনিও হাসিতে যোগ দিলেন।

তরী মায়ের সাথে রান্নাঘরে চলে গেল। চায়ের কথা বললেও হাতে হাতে কিছু নাস্তা নিয়ে তরীকে পাঠালেন মা। তিনি চা নিয়ে আসছেন।
তরী টি-টেবিলের উপর নাস্তা রেখে নরম স্বরে বলল,
-“নিন।”

মাহমুদ বিব্রত তরীকে খুব মনযোগ দিয়ে দেখলো। তরী যখন লজ্জা পায়, তখন তাকে ভীষণ স্নিগ্ধ দেখায়। মাহমুদ মুগ্ধ হয়। কতভাবে যে লজ্জা পাওয়া যায় তা মেয়েদের তরীর কাছ থেকে শেখা উচিত। কারণে-অকারণে, হুটহাট লজ্জা পাওয়া মেয়েটাকে কোন কারণ ছাড়াই মাহমুদের চোখে বিশেষ কেউ মনে হয়। সে নাস্তা নিলোনা। তরীর মা চা নিয়ে আসতেই এক কাপ চা হাতে নিলো। ছোট্ট ছোট্ট চুমুক বসিয়ে চোখ বুলিয়ে নিলো সামনে থাকা ঘরের প্রতিটি কোণে। সকল আসবাবপত্রের সাথে সাথে তরীও ছিলো তার দৃষ্টির শিকার। ওই ধারালো নজর থেকে রক্ষা পেলোনা তরী। কৌশলে কয়েকবার জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকেও দেখে নিলো মাহমুদ। চা শেষ হতেই কাল বিলম্ব না করে মা – ছেলে ফিরে এলেন ঘরে।

★★★

গ্রীষ্মের দুপুরে খা খা করা রোদ্দুর। সূর্যের তাপে মগজ গলে পড়ার উপক্রম। তরতর করে ঘামছে শরীর। প্রচন্ড পানি পিপাসায় কাতর রোজাদার ব্যক্তিরা। আকাশ ফেটে এক ফসলা বৃষ্টির আশায় চাতক পাখির মতো চেয়ে আছে তারা। ওড়না দিয়ে মুখের ঘাম মুছে নিলো তরী। অন্যদিনের তুলনায় আজ একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ অস্থির অস্থির লাগছে। ক্লাসের ঝামেলায় বাড়ি থেকে বের হতে হয়েছে। স্টপেজ আসতেই বাস থেকে নেমে পড়লো। এতক্ষণ মোটামুটি ঠিক থাকলেও এবার শরীর মৃদু মৃদু কাঁপছে। দাঁড়িয়ে থাকতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

মাহমুদ কলেজ ডিউটি শেষ করে রিকশা নিলো। গাড়িতে চড়ার সময় আশপাশ পর্যবেক্ষণ করা তার অভ্যাস। চোখ পড়লো বাস স্টপেজ এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তরীর উপর। চোখমুখ শুকিয়ে আছে। অনেকটাই অসুস্থ দেখাচ্ছে তাকে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি বুঝি ঢলে পড়বে। মাহমুদ রিকশা নিয়ে থামলো স্টপেজ এর সামনে। নেমে গিয়ে ব্যস্ত পায়ে তরীর সান্নিধ্যে এলো। নরম স্বরে ডাকলো,
-“তরী।”

তরী ঝাপসা ঝাপসা চোখে তাকালো। মাথা ঘুরছে তার।
মাহমুদ এগিয়ে এসে এই প্রথমবার তরীর হাত আঁকড়ে ধরলো। অনুমতি বিহীন শক্ত হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো তরীর নরম হাত। তরী বাঁধা দিলোনা। দুর্বল শরীরে জড়তা আজ জায়গা পেলো না। অল্প সময়ের জন্য লুকিয়ে পড়লো ভুরি ভুরি লজ্জা। বাধ্য মেয়ের মতো মাহমুদের সাথে রিকশায় উঠলো সে। মাহমুদ চিন্তিত স্বরে বলল,
-“বেশি খা*রা*প লাগছে, তরী?”

তরী জবাব দিলোনা। চোখ বুজে রিকশার হুড আঁকড়ে বসে রইলো।
মাহমুদ রিকশা ছেড়ে হুট করেই নেমে পড়লো। পাশের দোকান থেকে এক বোতল ঠান্ডা পানি কিনে নিলো। দোকানি লোকটি বাঁকা চোখে তাকালেন। রমজান মাসে কিছু কিনতে দেখলেই মানুষ ভাবে লোকটি বুঝি রোজা রাখেনি! মাহমুদ অবশ্য দোকানি লোকটির দৃষ্টিকে পাত্তা দেয়নি। টাকা পরিশোধ করে রিকশায় উঠলো।

-“তরী।”

চোখ খুলে তাকালো তরী। মাহমুদ ঠান্ডা পানির বোতল এগিয়ে বলল,
-“ঠান্ডা পানি এনেছি আপনার জন্য।”
মাহমুদ নিজেও ঘেমে জবুথবু অবস্থা। শার্টের টপ বোতাম দুটো খুলে দিলো। চেহারা লাল হয়ে আছে তার।

তরী আতঙ্কিত স্বরে বলল,
-“আমি রোজা ভাঙবো না।”

গভীর শ্বাস ছাড়লো মাহমুদ।
-“আচ্ছা, মাথায় একটু পানি দিন। ভালো লাগবে।”
বোতলের মুখ খুলে তরীর হাতে ধরিয়ে দিলো মাহমুদ। তরী ওড়না সরিয়ে মাথার তালুতে সামান্য পানি দিলো। এখন একটু ঝরঝরে লাগছে। রোজার সময় অতিরিক্ত গরম পড়লেই তরীর এমন দুর্বল দুর্বল লাগে। এটা নতুন নয়। কিন্তু মাহমুদের জন্য নতুন।

-“বসতে কষ্ট হচ্ছে তরী? আমি হাত ধরে বসবো?”

ক্লান্তির মাঝেও তরী একটুখানি হাসলো যেন! কেমন অকপটে আপজনের মতো ট্রিট করছে তাকে। এই প্রথম তার মনে হলো লোকটির স্বাভাবিক কথায়ও ছন্দ আছে। মানুষকে বা*জে*ভা*বে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা আছে। সে মানুষটি তরী নিজেই। তরী দু’দিকে মাথা দুলিয়ে ছোট্ট করে জবাব দিলো,
-“এখন অনেকটা ঠিক লাগছে।”

মাহমুদ স্বস্তির শ্বাস নিলো। দূর দূর সম্পর্ক হওয়ায় সবকিছুতেই অনুমতি নিতে হচ্ছে। পাছে তরী তাকে ম*ন্দ*লো*ক ভেবে বসে।

রিকশা থেকে নেমে তরীকে চারতলা পর্যন্ত এগিয়ে দিলো মাহমুদ। তরী দরজায় বেল দেওয়ার আগেই মাহমুদ বলল,
-“শরীরের যত্ন নেবেন, তরী।”

পরপরই সিঁড়ি বেয়ে তিনতলায় নেমে গেলো। তার কথা খানায়ও ভীষণ যত্ন গোপন করা। তরী ততক্ষণ তাকিয়ে রইলো, যতক্ষণ মাহমুদের চিহ্ন নিশ্চিহ্ন না হয়েছে।

★★★

তারাবি নামাজ শেষ করে মাহমুদ, রামি দুই-ভাই বাসায় ফিরলো তরীর বাবা আর ভাইয়ের সাথে। রামি, মিঠু দিজনেই দুষ্টুমি করতে করতেই বাড়ি ফিরেছে। মাহমুদ তরীর বাবার সাথেই খুটিনাটি আলাপ চালাতে চালাতেই ফিরলো। আয়েশা সুলতানা ছেলেদের দেখে বললেন,
-“বসে পড়, খাবার দিচ্ছি আমি।”

তিনজনে খেতে খেতে আয়েশা সুলতানা কথা তুললেন মাহমুদের উদ্দেশ্য।
-“চাকরি-বাকরি করছিস। সংসারে ঝুটঝামেলা নেই। এবার মেয়ে দেখি তোর জন্য?”
জবাবের আশায় তাকিয়ে রইলেন আয়েশা সুলতানা।
মাহমুদ খাওয়া থামালোনা। ধীরে সুস্থে মুখের খাবার গিলে নিলো। শান্ত স্বরেই মাকে জবাব দিলে,
-“এখন নয়, মা।”

-“এখন নয় তো কখন? তুই কি বিয়ে-সাদী করবি না?”

মাহমুদ নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দিলো,
-“করবো।”

আয়েশা সুলতানা উৎসুক হয়ে বললেন,
-“তাহলে মেয়ে দেখি? তোর মুন্নি খালা আছে না? তিনি বেশ যাচাই-বাছাই করে দুজনকে দেখেছেন তোর জন্য। সুন্দরী, শিক্ষিত। তুই বললেই আমরা দেখতে যাব।”

-“এখন বিয়ে করবো না, মা।”

রামি এতক্ষণ চুপচাপ খাবার গিললেও এবার বলল,
-“মা ভাইয়া তো বিয়ে করবেনা। তাহলে আমাকে বিয়ে করিয়ে দাও। আমার একটা মেয়েকে খুব পছন্দ। বাড়ির বউ হিসেবে এমন লজ্জাবতী, নম্র-ভদ্র মেয়ে পারফেক্ট।”

মাহমুদ কোন প্রতিক্রিয়া দেখালোনা। রামিটা যে ভারি দুষ্টু, তাকে চোখ রাঙিয়েও লাভ নেই।

আয়েশা সুলতানা জিজ্ঞেস করলেন,
-“তা কে এই নম্র- ভদ্র, লজ্জাবতী মেয়ে, হুম?”

রামি ফট করেই বলে দিলো,
-“তরী আপু। তার সাথে আমাকে বিয়ে দিয়ে দাও। আমাকে গাধা থেকে মানুষ করার দায়িত্ব সে নিয়ে নেবে।”

আয়েশা সুলতানা না হেসে পারলেন না। রামিও হেসে বলল,
-“তাড়াতাড়ি বিয়ে দিও কিন্তু।”

মাহমুদ সেই কখন থেকেই রামির উপর শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে।

#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here