অনুতাপ পর্ব -১০

#অনুতাপ
#দশম_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)

২১ বছর বয়সের একজন মেয়ে হয়ে আমি ৩৫ বছর বয়সের একজন ছেলেকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি জানিনা সামনে আমার জন্য কি আছে? আমিতো এটাও জানিনা যাকে ভালোবাসি সে ও আমাকে গ্রহণ করবে কি না? তবে এটা জানি ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি। আচ্ছা ভালোবাসা কি বলে কয়ে আসে? আপনি বলতে পারবেন আপনি ভাবনা চিন্তা করে একজনের প্রেমে পরেছেন? আপনি বলতে পারবেন না এটা। যা কোনো একটা বিশেষ গুণ থাকে মানুষের, সেই গুণগত কারণে আমরা প্রথমে তাকে নিয়ে ভাবি, ভাবতেই থাকি একটু একটু করে তার ভিতরে আরো ভালো গুণ আমাদের চোখে পরে, তার কথা বলা, তার হাসি, তার তাকানো, সর্বরি সব কিছু আস্তে আস্তে আমাদেরকে পুরোপুরি দুর্বল করে তোলে সেই বিশেষ মানুষটার প্রতি। আমি এখন এই কথা গুলো বলছি আর তার চেহারাটা তোমার চোখে ভেসে আসছে। এটা কি জানো? এটাই প্রেম, এটাই ভালোবাসা। আর এই প্রেম- ভালোবাসার জালে আমি বন্দিনী হয়ে গেছি। আর কেনোই বা হবো না? যে মানুষটা নিজের ভালো মন্দ দেখার আগে অন্যজনের সুখ দেখে, যে মানুষটা প্রতিটা মানুষের কষ্ট গুলো দূর করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, কোনো বিনিময়ের আশা না করে। যার পার্সোনালিটি যে কাউকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে, তার চুপ করে অন্যের কথা শোনার অভ্যাস, কঠিন বুদ্ধিমত্তার অধিকারি, যে কোনো জায়গায় যা প্রয়োজন তা বলার আগেই বুঝে ফেলা, কেয়ার করার একটা স্বভাব, মুখে না বলেও কাজের মাধ্যমে বোঝানো সে যে আপনাকে মূল্যায়ন করে, আপনার মতামতকে প্রাধান্য দেয়। এসব করতে সবাই পারে না, এমন একজন সাদা মনের মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার লোভ আমার মনে কাজ করে, যে মানুষটা সবার হয়ে সবাইকে সাহায্য করে তাকে আমি একটু বেশি করে নিজের করে পেতে চাই। এতে কি আমি স্বার্থপর? হয়তো হতে পারি স্বার্থপর তবে আমি চাই সে একান্তই আমার হয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেক। তার বুকে মাথা রেখে আমি আমার বাকি জীবনটা পার করতে চাই, এই মানুষটার পাশে বসলেই একটা ভরসা পাই, সে যতক্ষণ পাশে আছে আমার কোনো কষ্ট হবেনা, জীবনে কোনো বাধা আসবে না। সব কিছুই যেনো সুন্দর লাগে, সুখ-শান্তি বলতে যা বোঝায় তা আমি এই মানুষটার পাশে বসলেই পাই, তাই খুব করে ইচ্ছা করে তার বুকে মাথাটা রেখে বলি আমিও ভালোবাসি আপনাকে। অনেক করে ভালোবাসি, আপনার মনের সবটুকু ভালোবাসা পেতে চাই, আপনাএ ভালো থাকার কারণ হতে চাই। সারাদিনের ধকল মেটানোর পরে যাকে দেখলে আপনার চোখ দুটো প্রশান্তি পাবে, আপনার সেই প্রশান্তি হতে চাই। আমি ইরাদময় হতে চাই। জানিনা ভালোবাসার বহ্নি প্রকাশ কিভাবে করতে হয় বা কিভাবে করে? তবে আমি জানি আপনাকে মন উজাড় করেই ভালোবেসে ফেলেছি। এই মনে আর অন্য কোনো পুরুষের জায়গা হবে না।
আপনাকে সামনাসামনি যখন প্রথম দেখেছিলাম আমি অচেতন হয়ে গিয়েছিলাম, কারণ এতো এক্সাইটেড হয়ে গিয়েছিলাম মনে হচ্ছিলো স্বপ্ন দেখছিলাম। আপনার সাথে প্রথম যখন রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম, সেদিন এতোগুলো সময় একান্ত আপনার সাথে কাটাতে পেরে নিজে যেমন অন্য ওক দুনিয়ায় চলে গিয়েছিলাম। আপনি যখন আমার প্রশংসা করেছিলেন, আমার নাম প্রথম আপনার মুখে এনেছিলেন আমার পুরো শরীরে একপ্রকার শিহরণ বয়ে গিয়েছিলো। আমি আপনাকে দেখলে ইচ্ছে করে দেখতেই থাকি, সারাক্ষণ দেখে, ওই মুক্ত ঝরা হাসি। কোনো কিছু ভুল করতে দেখলে ওই সুন্দর চোখ জোড়া দিয়ে ইশারা দিয়ে মানা করা, আমার দুষ্টুমি গুলোতে হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করা
” এগুলো পারো কিভাবে রুহি বলো তো?” সবকিছু আমি সারাক্ষণ মিস করি, আমার ইচ্ছে করে সবসময় আপনার সাথে থাকতে।

কথা গুলো রুহি নিজের ডায়েরিতে লিখলো, খুব ইচ্ছে করে এই কথা গুলো ইরাদকে বলতে, কিন্তু বলার জন্য এখনো সঠিক সময় আসে নি। এসব কথা ইরাদ শুনলে হয়তো রুহিকে ভুল বুঝতে পারে, আর রুহি চায় না অন্তত ওদের মাঝে যতটুকু ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা নষ্ট হয়ে যাক। রাত ১০ঃ৩০ বাজে ইরাদ নিশ্চয়ই এখন বাড়ি ফিরেছে রুহি ভাবছে ফোন করবে কি না? সে তো সময় মতো খাওয়াদাওয়া ও করে না, মাঝে মাঝে কাজে এতোই ডুবে থাকে যে তাকে খাবার কথা মনে না করালে খায় ও না। এই কতোদিনে রুহি সব গুলো বিষয়ই লক্ষ্য করেছে ইরাদের। কোনো কারণ খুজে বের করতে করতেই রুহির মাথায় একটা বিশেষ কারণ মনে এলো
” হ্যাঁ একটা কল দেওয়াই যায়, পরশুদিনই তো কলেজ থেকে পিকনিক হবে। সবাই তো মোটামুটি যাচ্ছে, উনি যাবেন কি না জিজ্ঞেস তো করতেই পারি।”
রুহি ইরাদকে মেসেঞ্জারে কল দিলো একবার, এরপর মোবাইল নাম্বারে দিলো কিন্তু পিক করলো না। রুহি ভাবলো সামনে নাও থাকতে পারে আর একবার দেই। রুহির সাজুগুজুর প্রতি অতিমাত্রায় নেশা যেহেতু সামনে পিকনিক তাহলে হাতে তো মেহেদী পরাই যায়। রুহি সুন্দর করে মেহেদীর টিউবটা হাতে নিলো মোবাইলটা পড়ার টেবিলে দাড় করিয়ে রেখে দিলো কানে হেডফোন গুঁজে, এবং খুব মনোযোগ দিয়ে মেহেদী পরতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো। ইরাদকে সে যে অডিও কল না দিয়ে ভিডিও কল দিয়ে দিয়েছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।
রিং এবার ২বার হতেই কল পিক হলো ওপাশ থেকে, খুব সুন্দর একটা ছোট ছেলে বাচ্চা কলটা রিসিভ করলো। তার বয়স ৩-৪ বছর হবে। সুন্দর ফর্সা চেহারা, হালকা কার্লি চুল, বড় বড় চোখ। অসম্ভব সুন্দর বাচ্চা। রুহির দেখেই ভালো লাগলো, তার সাথে রুহি গল্প জুড়ে দিলো। আধো আধো কথা বলছে বাচ্চাটা আর খিলখিল করে হাসছে
ইরাদ মাত্র গোসল করে এসেছে, বাচ্চাটা হচ্ছে ওর চাচাতো বোনের মেয়ে। ওরা আজকে ইরাদের বাসায় ঘুরতে এসেছে এই বোনের বাসা খুব কাছে হওয়ায় ওরা ইরাদের বাসায় এলে রাত ১০-১১টার দিকেই যায়। ওরা সবাই চেষ্টা করে ইরাদকে মাঝে মধ্যে সময় দেওয়ার। ইরাদ প্রথমে ভেবেছে এভাবেই ফোন নিয়ে টনি খেলছে, ইরাদ খালি গায়েই ফোনটা ঘুরিয়ে নিজের দিকে নিতেই দেখে রুহি কল দিয়েছে।
ইরাদকে এই অবস্থায় দেখে রুহি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলে ও কল্পনাও করতে পারে নি এভাবে ইরাদকে দেখে
ইরাদের চোখ একদম বড় হয়ে যায় সাথে সাথে
“সরি সরি” বলতে শুরু করে।
রুহি- আম আআ আচ্ছা ঠিক আছে, আমি এখন রাখছি।
বলেই ঝট করে রুহি ফোনটা কেটে দেয়।
একদম হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিলো রুহির, ইরাদকে এভাবে দেখে। কি মায়াবী লাগছিলো ওকে, চুল গুলো কপালে এসেছিলো কিছুটা ফর্সা চেহারায় বিন্দু বিন্দু পানি জমে ছিলো, সুঠাম দেহ। যে কোনো মেয়েরই এরকম একজন স্বামী পেতে ইচ্ছা করবে। রুহি লজ্জায় পরে গেলো তবে মুচকি মুচকি হাসছে,
আর ভাবছে
– ইশশ ইরাদ কি লজ্জাটাই পেলো।

আর এদিকে ইরাদ ফোন রেখে ভাবছে, কি একটা কাজ হলো? কি একটা লজ্জাজনক বিষয় ঘটে গেলো।
– টমি? বাবা আমাকে লজ্জা পাওয়ায় দিলি এভাবে?
– কেনো মামা? আন্তি ভালো
– তাই না?
বলেই টমিকে কোলে তুলে অনেক গুলো চুমু দিলো ইরাদ।
আজকাল রুহির সাথে সময় কাটিয়ে ইরাদের সবকিছুই ভালো লাগে। মেয়েটা অল্পবয়সী, তবে খুব চৌকস। আর খুব বেশি কেয়ারিং ধরনের মাঝে মাঝে ইরাদের মনেই হয় না রুহি ওর স্টুডেন্ট, মনে হয় রুহি ওর বন্ধু। অনেক বছর ধরে চেনা কেউ। মেয়েটা কেমন যেনো মাতিয়ে রাখতে পারে সবকিছু। ও যেখানে থাকে সবাই চারপাশে হাসিখুশি থাকে, ও দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি ওর ব্যাবহার। নিশ্চিত কোনো ভালো পরিবারের শিক্ষায় ও বড় হয়েছে। নাহলে এতো অল্পবয়সী মেয়ে এতো ভালো হয় না, হঠাৎ করেই মেঘার কথা মনে পরে গেলো ও তো এই বয়সেই ইরাদের জীবনে এসেছিলো কিন্তু বুঝতে চেষ্টা করে নি ইরাদকে। ইরাদকে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আবারো ভাবছে আল্লাহ রুহির সামনে যাতে এমন কাউকেই ওর জীবন সাথী করে যে ওকে বুঝবে, ওকে অনেক ভালো রাখবে। এই রকম মনের মানুষ গুলো সবাইকে ভালোবাসায় এতো ব্যাস্ত থাকে যে নিজেকে সময় দিতে বা ভালোবাসতেই ভুলে যায়। তাই তো তাদের জীবনে এমন কাউকে দরকার যে তাকে অনেক ভালোবাসা দিয়ে রাখতে পারবে, ওর টেককেয়ার করতে পারবে। জীবনে মেঘা এসেছিলো হয়তো তাই ইরাদের সাংসারিক জীবনটা আবাদ হয়নি, তবে রুহি যার ঘরে যাবে সে মানুষটা যদি বুঝে এই মেয়েটাকে একটু হলেও তাহলে সে ঘর আবাদ হবে এইটুকু ইরাদ বুঝতে পারে।

এদিকে সাহিল সুস্থ হয়ে গেছে, সাহিল ভাবছে পুরো পরিবার নিয়ে ঢাকায় শিফট হয়ে যাবে। সাহিল এখনো জানে না যেই ডাক্তার তার অপারেশন করেছে সেই তার স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামী। মেঘা ঢাকায় ফিরতে চায় না, কিন্তু কেনো চায় না তা সাহিল জানেনা। সে চাইছে রুহির সহায়তা নিয়ে সে মেঘা আর বাচ্চাকে ও মা বাবাকে নিয়ে একবারে ঢাকা আসবে কারণ এদিকে একটা বড় প্রজেক্ট আছে যা করতে হবে তার জন্য অন্তত এক বছর সময় লেগে যাবে, আর এতোদিন এখানে থাকতে পারলে একবারে থাকতে কি সমস্যা? কিন্তু মেঘার কথা হলো এসে গিয়ে প্রজেক্টটা কম্পলিট করলেই তো হয়। এসব বিষয় নিয়ে মেঘার ঘরে কিছুটা অশান্তি চলছে অনেকদিন ধরে। মেঘা নিজের সিদ্ধান্ত কোনোদিন পালটায় না, ও বরাবরই যা ভাবে তাই করে এইজন্যই সাহিলের আরো রাগ আর বিরক্তি কাজ করছে। সাহিল বিয়ের পর প্রথম দিকে এই বিষয় গুলো এঞ্জয় করতো কিন্তু এখন আর ভালো লাগে না, মেঘার এই স্বভাব হিমার মধ্যেই চলে এসেছে। সাহিলের এই জিনিসটা পছন্দ না, প্রতিটা বিষয়েরই দুইটা দিক থাকে। মাঝে মাঝে অন্যজন কি বোঝাতে চাইছে তা বুঝত্র চেষ্টা করা উচিত। প্রতিটা বিষয়েই মেঘা তার কথায় অটল থাকে কিন্তু এবার মেঘা চাইলেও কাউকে বলতে পারছে না সে কেনো ঢাকা যেতে চাচ্ছে না, ফেলে আসা অতীতের ছায়া ও আর চাচ্ছে না এই জীবনে কোনো প্রভাব ফেলুক। কিছু ছাপ আছে কোনোদিন মুছে যায় না তবে সে জায়গায় না গেলে হয়তো সেখানে চোখ পরে না।

.

পরদিন ইরাদের ক্লাস চলছে, ক্লাস শেষে সবাই ইরাদকে জিজ্ঞেস করলো
-স্যার পিকনিকে যাবেন?
– নাহ আমি পিকনিকে যাবো না
– প্লিজ স্যার চলেন, অনেক মজা হবে
– চলেন স্যার।
সবাই মিলে ইরাদকে রিকুয়েষ্ট করছিলো।
ছুটির পরে রুহিও ইরাদকে রিকুয়েষ্ট করতে গেলো সাথে দিবা, নিলয়, প্রমিত, চম্পা সবাই।
ইরাদকে টিচার্স রুমেও সবাই ধরলো যে তার আসতেই হবে।
ইরাদ কি করবে বুঝতে পারলো না,
– আচ্ছা আমি চেষ্টা করবো আসার জন্য যদি সম্ভব হয়।
রুহি বাসায় ফিরে এলো সারাদিন মনটা খুব খারাপ রইলো, ইরাদ আসবে কি আসবে না? যদি না আসে? তাহলে এই পিকনিকে ওর ও তো যেয়ে কোনো লাভ নেই। ইরাদকে ছাড়া ওখানে গিয়ে কি হবে রুহির?
রুহি ভেবে নিয়েছে ও সকালে যাবে ঠিকি বাস ছাড়া পর্যন্ত ওয়েট করবে যদি ইরাদ আসে তাহলে যাবে নাহলে যাবে না।

(চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here