#অনুতাপ
#একবিংশ_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)
রুহির দেওয়া একটা পাঞ্জাবি পড়ে নিলো ইরাদ। আকাশি পাঞ্জাবি পড়ে হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করে নিয়েছে । চুল গুলো বরাবরের মতোই দাড়িয়ে আছে হালকা একটু জেল দিয়ে চুলটা সেট করে ইরাদ বেড় হলো। চাপ দাড়ি ফর্সা চেহারা তার মধ্যে আকাশী কালারে একদম সুপুরুষ দেখাচ্ছে ইরাদকে। যখন ইরাদ যাচ্ছে পুলের দিকে। কেনো যেনো পুল সাইডটার যতটা কাছে যাচ্ছে ততটাই ইরাদের মনে হচ্ছে রুহি আশেপাশে আছে। মনে হচ্ছে রুহির কাছে এসে পড়েছে ও। রুহির ঘ্রাণ আছে চারিদিকে এমন মনে হচ্ছে। যখন ভেতরে ঢুকলো ইরাদ তখন এমনভাবে চমকে যাবে ও ভাবতেও পারে নি। পুরোটা পুল সাইড সুন্দরভাবে ডেকোরেশন করা সাদা ফুল দিয়ে, এতো সুন্দর ঘ্রাণ আসছে চারিদিকে। সবকিছুই ঝিকঝিক করছে, কিছুদূর আসতেই ইরাদ তাকিয়ে দেখলো এতো বড় একটা প্রজেক্টর লাগানো আর পাশেই একটা টেবিল এরেঞ্জ করা খুব সুন্দর ভাবে মোমবাতি দিয়ে সাজানো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের একটা আয়োজন করা হয়েছে। ইরাদ সবকিছু দেখেই একদম হতভম্ব হয়ে যায়। ও কি ভুল জায়গায় চলে এলো কি না তাও ভাবছিলো। তবে আশেপাশে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না এইজন্য ইরাদ যখন ব্যাক করে যেতে নিবে তখনই প্রজেক্টরে ভিডিও প্লে শুরু হয়। আর ব্যাকগ্রাউন্ডে সাউন্ড শুরু হয়ে। খুব সুন্দর করে ইরাদের কিছু ক্যান্ডিড ছবি ভেসে আসতে শুরু করে। সবগুলোই রুহি চুপ করে এক এক সময় তুলেছে। বেশির ভাগ ছবি গুলো রাতারগুলে তোলা। এসব দেখে ইরাদ খুব বেশি অবাক হয়ে যায়। এরপর রুহি আর ইরাদের ছবি গুলো এক এক করে আসে, ইরাদ দেখে রুহিকে অবাক হয়। ঠোঁটের কোণে একটা হাসির রেখা ফুটে ওঠে। কি সুন্দর লাগছে ওদের একসাথে তোলা ছবি গুলোম যেনো একে অপরের পরিপূরক। দুটো মানুষ খুব সুন্দরভাবেই নিজেদের মধ্যে একটা সম্পর্ক গোড়ে তুলে। যা ওদের রূপেও একত্রে মানিয়েছে আর গুণেও। কিছুক্ষণ পরে ইরাদ শুনতে পায় রুহির আওয়াজ
“ডক্টর ইরাদ। এই নামটা আমার জীবনে অন্যতম একজন বিশেষ মানুষের নাম। যখন থেকে ক্যারিয়ার গোছাতে হবে শুনতে পেয়েছি, যখন থেকে নিজেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই আপনার সাহস আপনার করক ভিডিও গুলো দেখে নিজেকে অনুপ্রেরণা দিয়েছি। আজকে আপনি আছেন বলেই রুহি এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে। রুহির জীবনে একটা লক্ষ্য হয়েছে। আজকের দিনে এই রুহির পিছনে আপনার অনেক অবদান। আপনার কথা আপনার চাহনি, আপনার সব কিছুই আমি দেখতাম আর মুগ্ধ হতাম সবসময়।
রুহির কথা গুলো শুনে ইরাদের খুব ভালো লাগছিলো। মেয়েটা সবসময় বলতো ওর একজন আইডল আছে যার জন্য আজ এই জায়গায় ও। কিন্তু ইরাদ যে নিজে রুহির এই আইডলটা ইরাদ নিজে তা জানতো না। ও দাঁড়িয়ে দেখছে আর রুহিকে ফিল করছে। মেয়েটা কোথায়? দুটো’ চোখ ওকে খুজলেও ইরাদ জানে ও এই প্রেজেন্টেশনটা ইরাদের জন্য বানিয়েছে, এইটা ইরাদের মনোযোগ দিয়ে দেখতে হবে।
রুহির কথা চলছে
জানেন ইরাদ? যখন থেকে আমি আপনাকে বাস্তবে দেখতে পেলাম তখন থেকেই একটা টান কাজ করতে শুরু করে।
আপনাকে দেখলে আমি চোখ ফেরাতে পারিনা। আপনি কতো সুদর্শন পুরুষ। আপনার হাসি আমার চোখে শান্তি এনে দেয়। আপনি এতোটা পরোপকারী লোক, আপনার মন যতটা সুন্দর আপনি দেখতেও সুন্দর। আমাদের এই দুনিয়ায় এমন ভালো একজন মানুষ আছে বলেই আজকে সবকিছু এতো বেশি সুন্দর।সবসময় আপনি আমার মনের একটা বিশাল জায়গা জুড়ে ছিলেন। কিন্তু কখন যে নির্দিষ্ট জায়গাটা থেকে পুরো মনটাই নিজের দখলে নিয়ে নিয়েছিলেন তা আমি বুঝতেও পারিনি। আপনি আমার ভালো লাগার মানুষ থেকে কখন যে ভালোবাসার মানুষ হয়ে গিয়েছেন তা আমি নিজেও বুঝতে পারিনি। যখন বুঝেছি তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। আর নিজেকে ফেরানো সম্ভব হয় নি। আপনার মতো একজন মানুষকে সবাই চাইবে নিজের আশেপাশে রাখতে। তবে আমি আপনাকে নিজের করে চাই, আমি চাই এই মানুষটা আমার হোক। আপনি আমার সাথে থাকলে আমি যে শান্তি অনুভব করি সে শান্তি আর কোথাও পাওয়া যাবে না। আপনি আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা আর শেষ ভালোবাসা। ভালোবাসা বুঝতে শিখেছি আপনাকে দেখেই। আমি যতটা আপনাকে ফিল করি ততটা গুছিয়ে হয়তো কথা বলতে পারিনা, বা ভাসায় প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না আমার কিন্তু হ্যাঁ ভালোবাসি। অনেক বেশি ভালোবাসি আপনাকে।
আই লাভ ইউ ডক্টর ইরাদ। আপনি কি আমার হবেন?
রুহির শেষ কথা গুলো শুনে ইরাদের বিষ্ময়ের শেষ ছিলো না যেনো। ইরাদ যেনো রুহির কথা সপ্তম আসমানে চলে গেলো। যাকে ও ভালোবাসে সে মেয়েটাও ওকে খুব করে ভালোবাসে। ইরাদের জীবনে এমন কিছু হবে ও কোনোদিন ও কল্পনা করতে পারে নি। মেয়েটার মুখটা এতটা মায়াবী যে সারাদিন এই মায়াবতীকে ইরাদের দেখতে ইচ্ছা করে। রুহির কথায় যেনো ইরাদের মনে এক প্রকার শান্তি এলো। কে না চায় নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে আপন করে নিতে? কে না চায় ভালোবাসার মানুষটার মনে গভীরভাবে বসবাস করতে? আর সবার ভাগ্যে তো থাকেও না নিজের করে কেউ। ইরাদ তো ভালো জানে, রুহি কে অনেক ভালোবাসে ও কিন্তু কোনোদিন তো ইরাদ নিজে থেকে বলতো না। রুহি ইরাদের অনেক কাছে চলে এসেছে। মনে হচ্ছে রুহিকে জড়িয়ে ধরে ইরাদ বলবে আমিও তোমায় অনেক বেশি ভালোবাসি রুহি। অনেক বেশি। তুমি আমার জীবনে আসার পর থেকে কিভাবে যেনো এতটা কাছে এসেছো, আমিও বুঝতে পারিনি।
সব গুলো লাইট একদিকে ফোকাস দিয়েছে রুহি আস্তে আস্তে করে ইরাদের পেছনে এসে দাড়িয়েছে।
ইরাদের কাধে রুহি হাত রাখায় ও পেছন ঘুড়ে রুহির দিকে তাকিয়েছে। মনে হচ্ছিলো আজকে ওদের সবটুকু দূরত্ব, ঘুচে যাচ্ছে। রুহি আর ইরাদের সবটা অন্ধকার যেনো আলোতে এসে পড়লো। কিন্তু যখনই ইরাদ রুহিকে দেখলো তাকিয়ে। এক নিমিষেই যেনো সবকিছু ওলোট পালোট হয়ে গেলো। রুহি আর ইরাদের মাঝে যেনো একটা অদৃশ্য দেয়াল এসে পড়ে। বাধা দেওয়ার জন্য যতটা, ইরাদের পুরোনো জীবনের স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য এই শাড়িটিই যথেষ্ট। এই শাড়ির সাথে ইরাদের অনেক স্মৃতি মিশে আছে। মেডিকেলের প্রথম দিক, মেঘা, মেঘার সাথে প্রেম, হুট করে বিয়ে, বিয়ের পড়ে মেঘার এভাবে ইরাদকে ছেড়ে যাওয়া, এতো গুলো বছরে নিজেকে এভাবে গড়ে তোলা। সব কিছু যেনো এক এক করে ইরাদের মনে পড়ে গেলো। মাথা যেন কাজ করা বন্ধ করে দিলো। অনেক কষ্টে ইরাদ নিজেকে সামলে নিয়েছে আবারো কি এভাবে প্রেমে পড়া ঠিক? কাউকে আপন করা ঠিক? নাহ আর তো নিজেকে সামলাতে পারবে না ইরাদ খারাপ কিছু হলে। জীবন সম্পর্কে ইরাদ জানে। আর এসব নেগেটিভিটি নেওয়ার মতো মনোবল ইরাদের নেই।
রুহির আজকের সাজ, আজকের সব কিছুই যেনো মেঘাকে দাড় করাচ্ছে ইরাদের সামনে। ইরাদ যেনো মেঘাকেই দেখছে। এতো মিল? কিভাবে? আজকের সাথে মনে হচ্ছে আরো ১২ বছর আগের মেঘা। ঠিক যে সময়টার মেঘার যেরকম করে সেজেছিলো আজকে রুহিকেও তেমনটাই লাগছে।
রুহি নিচু চোখে তাকিয়ে আছে, লজ্জায় ভয়ে যেনো তাকাতে পারছেনা ইরাদের দিকে। আর ইরাদ বুঝতে পারছে না ও কি বলবে? কেনো মেঘাকে দেখছে ও? কেনো এমন লাগছে? আজকের সময়টা কি রুহি আর ইরাদের ছিলো না? কেনো অতীত এভাবে এসে হানা দিলো? কেনো ইরাদের মনটাকে এভাবে এলোমেলো করে দিলো? ইরাদ তো অনেক ভালোবাসতো মেঘাকে। মেঘা তো ইরাদকে ভেঙে রেখে গেছে। এই মনটা জোড়া লাগাতে পারে নি ইরাদ এতো বছরেও। রুহির আগমন ইরাদের জীবনটা বদলে দিয়েছিলো তবে আজকে আবারো কেনো যেনো ইরাদকে টেনে পেছনে নিয়ে গেলো সময়টা। রুহি ইরাদের কিছু বলার অপেক্ষায় আছে।
ইরাদ- তুমি কে?
রুহি ইরাদের প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে,
– আমি রুহি
ইরাদ যেনো অন্য মনস্ক হয়ে গেছে। সবটা মিলে মনে হচ্ছে সামনে দাঁড়ানো মেয়েটা রুহি না মেঘা। কোনোভাবেই নিজের মাথা থেকে এসব কিছু ও বেড় করতে পারছে না।
প্রোজেক্টরে সুন্দর করে আই লাভ ইউ লিখা উঠে এবং ওপর থেকে রুহি আর ইরাদের ওপরে গোলাপের পাপড়ি ছিটকে পরতে থাকে। ইরাদ রুহির দিকে তাকিয়ে বলে
– সম্ভব না।
রুহি চমকে ওর দিকে তাকায়
– আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি ভালোবাসতে পারবো না, আমি তোমায় গ্রহণ করতে পারবো না।
রুহিত চোখ দিয়ে নিমিষেই আঝর ধারায় অশ্রু ঝরতে শুরু করে।
– আ আ আমি আ আ আপনাকে অননেকক ভালোবাসি।
কাপা কাপা কণ্ঠে কথা গুলো রুহি বললো ইরাদকে
ইরাদ বুঝতে পারছে পাশে থাকা মানুষটা কাদছে। খুব কাদছে। তবে ইরাদ যেনো পাথর হয়ে গেছে, কি যেনো অদেখা শিকল দিয়ে ইরাদের হাত বাধা পড়েছে যার কারনে আজকে রুহির চোখের পানি ও নিজের হাতে ও মুছে দিচ্ছে না।
– আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। প্লিজ এই কথটা বলে রুহি মাটিতে বসে পড়ে।
রুহির কলিজা যেনো ফেটে যাচ্ছে। যাকে এতো বেশি ভালোবাসে রুহি সে ওকে আজকে এভাবে পর করে দিবে রুহি ভাবতেও পারেনি। যেই ভয়টা পেয়েছিলো তাই হলো।
ইরাদ বললো,
– এই বয়সটা আবেগের। আজকে আমাকে ভালো লাগছে আর দু’দিন বাদে লাগবে না। দুনিয়া কিছুই দেখো নি এখনো, যখন দেখবে তখন আর এসব ভালো লাগবে না।
ইরাদ শুধু এতোটুকু জানে ওর নেগেটিভলি সব গুলো আনসার দিতে হবে। রুহির কান্নাটা কলিজাটা ক্ষত করে দিচ্ছে ইরাদের। তবে আর আঘাত ও পেতে চায় না তাই তো দুর্বল হওয়া যাবে না। অতীতটা ভুলা যাবে না, সত্য বড়ই কঠিন।
– এটা আবেগ না। আমি সত্যি আপনার সাথে আমার বাকি জীবন টা কাটাতে চাই।
– এটা সম্ভব না। আমি আজকে গেলে দু’দিন লাগবে আমাকে ভুলে তোমার আগে বাড়তে। আমার প্রতি ভালো লাগার থেকেই তোমার মনে হচ্ছে ভালোবাসা কাজ করছে।
– কোনোদিন এমন হবেনা।
– এখন তুমি বাচ্চা তাই এসব বলছো। আস্তে আস্তে সবটা বুঝতে শিখবে তখন বলবে ভুল করেছি
তখন বিচ্ছেদ হবে। আর কেনই বা এসব হ্যাসেল করার দরকার। এর চেয়ে মেনে নাও এটাই ভালো।
আমার থেকে দূরে থাকলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
রুহি মাটিতে বসে ইরাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– আপনি আমার থেকে দূরে থাকতে চান তাই তো?
-হুম
ইরাদের কথায় রুহি এতোক্ষণ কষ্ট পেলেও এখন খুব রাগ লাগলো। রুহির ভালোবাসা ইরাদ মেনে নিচ্ছে না তা ঠিক আছে কিন্তু ওর ভালোবাসাটাকে কেনো এভাবে ভালো লাগা বলবে? যা দুদিন বাদে চলে যাবে। রুহির ভালোবাসা তো সত্যি। যেমন সত্যি সুর্য, চাঁদ,তারা। রুহি উঠে দাড়ালো ইরাদের দিকে তাকিয়ে ওকে মন ভরে দেখলো এই চেহারাটা দেখলে ওর দেখতেই ইচ্ছা করে। ভালোবাসা যেনো কমানো সম্ভব হচ্ছে।
রুহির দু-চোখ ভর্তি পানি টলমল করছে। কাপা কাপা গলায় ও বললো,
– আপনি যা চাচ্ছেন আজ থেকে তাই হবে।
এই বলেই আজ রুহি ইরাদকে প্রথম বারের মতো জড়িয়ে ধরলো। চারিদিকে নিস্তব্ধতা খুব শক্ত করে ইরাদকে ও জড়িয়ে ধরেছে। মনে হচ্ছে এই বাধনে আজীবন ইরাদকে নিজের করে রেখে নিবে আজ রুহি। ইরাদ যদি ওকে আগলে নিতো তাহলে তো আর কোনো কষ্ট থাকতো না। জীবনের কোনো চাওয়া আর অপূর্ণ থাকতো না।
রুহি অনেকক্ষণ ইরাদকে এভাবে ধরে রাখলো। ইরাদের ও চোখে পানি। ইচ্ছে করছে ওকে আগলে নিজের করে নিতে। কিন্তু এতো সম্ভব না। রুহি ইরাদকে ধরেই কেদে যাচ্ছে কারণ আজকে এভাবে ওকে কাছে টানাটা দূরে যাওয়ার জন্য। আজকে ইরাদকে ও নিজের স্মৃতি করে নিয়ে যাবে। যে স্মৃতি দিয়ে বাকিটা সময় জীবনের পাড় করে দিবে রুহি। ইরাদকে ছেড়ে রুহি এবার ইরাদের চেহারাটা কাছে টেনে নিলো। ইরাদ কিছুই বলছে না রুহির কাজ দেখছে ও। রুহি ইরাদকে কাছে টেনে নেওয়ার পরে ইরাদ নিজে থেকেই ওর কাছে এলো। রুহি ইরাদের গালে চুমু দিলো, ইরাদের চেহারা একটু হাত বুলিয়ে ধরলো ও। বুকের ভিতরটা একদম খালি খালি লাগছিলো রুহির। মনে হচ্ছিলো কি যেনো রুহির থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। রুহি আবার ইরাদকে ছেড়ে দিলো। ইরাদের দিকে কাদতে কাদতে রুহি বললো,
-তবে আমার ভালোবাসা কোনোদিন কমবে না। আজকে আপনি যেই জীবনে আছে একজনের জন্য আমিও ঠিক এই জীবনটাই বেছে নিলাম।
রুহি কথাটা বলে আর এক মুহুর্ত ও দেরি করলো না। চলে এলো। ইরাদ সেখানে পাথরের মতো দাড়িয়ে রইলো।
#অনুতাপ
#দ্বাবিংশ #Yasira_Abisha (#Fatha)
দীর্ঘ সময় ধরে ইরাদ যে জীবন অতিবাহিত করে আসছে রুহিও আজ থেকে সেই পথেই পা বাড়িয়ে দিলো। জীবনে ভালোবাসা ভুল না তবে ভুল মানুষকে ভালোবাসা জীবনের চরম কিছু ভুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ একটা ভুল। যে ভুলের কোনো ক্ষমা হয় না। কারণ এই কষ্টটা আজীবন নিজেরই বহন করে চলতে হয়। রুহির কলিজাটা একদম ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কে যেনো বারবার ধাড়ালো কোনো অস্র দিয়ে রুহির কলিজাটা চিড়ে ফেলছে। বাসায় ঢোকার সময় রুহিকে কেউ দেখেনি কাজের মেয়ে ঝুমা ছাড়া। রুহির চোখ মুখ ফোলা একদম অসুস্থ দেখাচ্ছে ওকে। এই জিনিসটা ঝুমার চোখ এড়ায়নি একদমই, ও রুহির এই অবস্থা দেখে মেঘার কাছে গিয়ে রুহির এই অবস্থার কথা বললো,
মেঘার বুঝতে বাকি রইলো না আসলে কি হয়েছে সেখানে। যে ভয়টা ও পাচ্ছিলো তাই হলো। ছেলেটা বোধহয় আমার বোনটাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে। কিন্তু এতো বড় সাহস তার হলো কি করে? রুহির মতো একটা মেয়েকে সে রিজেক্ট করে কিভাবে? আর সে নিজে এমন কি যে তার এতোটাই সাহস হলো রুহিকে না করে দেওয়ার? কেনো যেনো খুব রাগ লাগছে মেঘার। বোনের জন্য কষ্ট ও যেমন হচ্ছে তার চেয়ে অপমান বোধটা বেশি কাজ করছে মেঘার। রুহির ঘরে গিয়ে দেখলো ও দরজা লাগিয়ে রেখেছে। মেঘা ভাবলো এখন ওকে কিছু জিজ্ঞেস না করাই ভালো হবে। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিলো, খাটের ওপরে শুয়ে সারা রাত রুহি কান্না করে, খুব করে কান্না করে। ইরাদের বলা কথা গুলো ওর কানে বারবার বেজে উঠছে। “আজকে বয়সের জন্য মনে হচ্ছে এটা ভালোবাসা তবে এটা মোহ ছাড়া আর কিছুই না। কিছুদিন গেলে এমনিতেই সব ভুলে যাবেন। কিছুদিন পর নতুন ভাবে সব শুরু করতে পারবেন” কত সহজভাবে ইরাদ এই কথা গুলো বললো, জীবনটা কি আসলে এতটাই সহজ? বারবার ভালোবাসা যায়? একটা মানুষকে এতোটা ভালোবাসার পর কি আবার অন্য কাউকে ভালোবাসা যাবে? আমার এই অগাধ ভালোবাসা মিথ্যা? এসব মোহ? তার থেকে দূরে গেলেই আমি তাকে ভূলে যেতে পারবো? সে ভালোই চিনেছে আমাকে এতোদিনে। শুধু প্রেম তার প্রতি ছিলোনা ছিলো ভালোবাসা, তবে এই মানুষটা এতো গুলো দিন রুহির পাশে থেকেও ওকে চিনতে পারে নি। হয়তো বা রুহিরই ভুল ছিলো যে ও বুঝাতে পারে নি। তবে আজ থেকে রুহি নিজেকে গুটিয়ে ফেলবে আর প্রেম ভালোবাসা নিয়ে সে ভাববে না, ইরাদ না হলে নাই জীবনে আর কাউকে তার প্রয়োজন নেই।
.
রুহি যাওয়ার পর ইরাদ ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো ওখানেই। কেমন যেনো অসহ্য একটা বেদনা ওকে গ্রাস করে নিচ্ছে। কি রকম একটা যন্ত্রণা হচ্ছে ইরাদের তা আসলে বলে বুঝানো সম্ভব না৷ আরো একযুগ আগে যে কষ্ট ও সহ্য করে এসেছে আজ মনে হচ্ছে সেই একই কষ্ট কেউ ওকে আবার দিচ্ছে। মনের অবস্থা কাউকে বোঝানো যায় না, আজকে ইরাদ জানে রুহি ওকে ভালোবাসে। তবে এই ভালবাসা তো দীর্ঘ স্থায়ী হবে না, এ তো ক্ষনিকের ভালোবাসা আর তাছাড়া বয়সটা বড্ড বেমানান। এই রকম বড় সমস্যাটা তো এড়িয়ে যাওয়া যায় না, তাই রুহি আর ইরাদ এক হবে না এটা ইরাদ জানে।
ইরাদ চলে আসবে এমন সময় খেয়াল এলো রুহির ডায়েরিটা ওখানেই রয়ে গেছে টেবিলের ওপরে। চলে যাওয়ার আগে রুহি নাহয় সাথে যাবে না কিন্তু রুহির ডায়েরিটাকে নিজের করে নিতে দোষ কোথায়? হ্যাঁ রুহির অনুমতি ছাড়া ওর জিনিস নিজের করে নেওয়া ঠিক না তবে ইরাদ নিবে। ইরাদ এয়ারপোর্টে এসে পড়েছে, আর কিছুক্ষন পড়েই ও ফ্লাই করবে। খুব খারাপ লাগছে রুহিকে ছেড়ে যেতে, আর তো রুহির সাথে সম্পর্কই রইলো না ওর। ইরাদ চলে গেলো রুহিকে ছেড়ে।
রুহি কান্না করতে করতে ঘড়ির দিকে তাকায়, কলিজাটা এক কামড দিয়ে উঠে তখন এখনি তো ইরাদের ফ্লাই করার সময়।
তখনি এক দৌড়ে বারান্দায় চলে গেলো, কিছুক্ষণ পরে দূর আকাশে দেখা যাচ্ছে একটা প্লেন যাচ্ছে। আর রুহির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
ইরাদ ফিরে এলো ওর পুরোনো জীবনে তবে আজকে নিজেকেই অসহ্য লাগছে ওর। ও রুহিকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছে, মেয়েটার মনটা ভেঙে গেছে একদম। ইচ্ছে করছিলো খুব রুহিকে জড়িয়ে ধরে ওর সব দুঃখ কষ্ট গুলো মুছে দিতে। কিন্তু ইরাদ তা পারবে না। আজ সে অনেক অনেক দূরে চলে এসেছে রুহির থেকে। শুধু রুহির স্মৃতি গুলো নিয়ে আর এই ডায়েরিটা নিয়ে।
এভাবেই পুরো ৩বছর কেটে যায়। ইরাদের কোনোদিন সাহস হয়নি রুহির ডায়েরীটা খুলে পড়ার তবে সবসময় এই ডায়েরিটা সে নিজের সাথে রেখেছে।রুহির স্পর্শ অনুভব করার জন্য। আর আর এদিকে রুহি সম্পুর্ণই নিজেকে বদলে ফেলে এই বছর গুলোর মাঝে। এতো বড় পরিবর্তন ওর জীবনে আসবে তা কেউ ভাবতে পারে নি।
রুহি ইরাদের ভাবনায় এখনো থাকে, কষ্ট গুলো রুহিও এখন লুকাতে শিখে গেছে। নিজেকে শক্ত করে নিয়েছে ও। রোগীদের মধ্যে নিজের সুখ খুজে নিয়েছে মেয়েটা, এখন তো ও ডাক্তার হয়ে গেছে।
সবকিছুই ভালো চলছিলো রুহির।
মনের কষ্ট চাপা দিয়ে মুখে ম্লান একটা হাসি সে একে রেখেছিলো যতক্ষণ না ওকে বলা হয় বিয়ের কথা বলা হয় ততক্ষণ পর্যন্ত।
(চলবে..)
(চলবে…)