অনুতাপ পর্ব -২০

#অনুতাপ
#বিংশ_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)

সারাটা জীবন যেই লোকটাকে দূর থেকেই ভালোবেসে গিয়েছি। সেই লোকটাকে আজ নিজের ভালোবাসার কথা বলে দিতে যাচ্ছি। এই কথাটা ভেবেই শিউরে উঠছি বারবার। আনমনে হেসে উঠি বারবার তার কথা ভেবে, মানুষটাকে খুব বেশিই ভালোবাসি। তাই তো তাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য আজ পুরো ৪দিন ধরে তার এতো কাছে থেকেও তাকে জানাই নি। শুধু খোঁজ নিতাম সে কি করছে কখন যাবে? আমি বুঝতে পারছিলাম উনি চাইছিলেন যাওয়ার আগে আমার সাথে দেখা করতে, হয়তো বন্ধু ভেবে নাহয় প্রেয়সী ভেবে তবে তার মনের কথা জানার আগ পর্যন্ত আমি কিছুই বলতে পারছিনা। ঘড়িতে প্রায় ৮টা বেজে গেছে আমি ইশার নামাজ পড়ে নিলাম। এখন রেডি হবো, আজকের এই সময়টাতে তাকে সারপ্রাইজ করার জন্য কতশত আয়োজন করেছি, তবে যতটা সময় ঘনিয়ে আসছে ততটাই আমার অস্থিরতা বেড়ে চলছে।

ইরাদের আজকে দুপুর ৩টার মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে গেছে। তাকে আমি কল দিয়ে জেনে নিয়েছিলাম। আজকেও তার দুপুরে খাওয়ার কথা মনে ছিলো না, এইজন্যই তাকে আমি ফোন করে মনে করাই খেতে হবে। লোকটা মানুষের যে পরিমাণ যত্ন করে তার তিল পরিমাণ নিজের জন্য করেনা। তার রিসোর্টের পাশের রেস্টুরেন্টটা বুক করেছি আজকে। তার হাতে গুনে ২-৩ মিনিট লাগবে সেখানে যেতে, তাই তাকে দিনে জানাই নি। এখন ফোন করাটাই ঠিক হবে,
এমন সময় রুহিকে বিছানায় সুতির একটা সালোয়ার কামিজ পড়ে বসে থাকতে দেখে মেঘা এসে দেখে, কিছুটা তাড়া দিয়ে মেঘা বলে
– রুহু বাবু? কি ব্যাপার? তুই এখনো রেডি না কেনো?
-আপু ভয় লাগছে অনেক
রুহি বসা অবস্থায় মেঘার পেট জড়িয়ে ধরে কথাটা বলে।
-হুশশ আমার সাহসী বোন ভয় পাওয়ার কিছু নেই
– আপু উনি আমাকে পছন্দ না করলে?
– তোকে পছন্দ করবে না মানে?
– উনার যদি আমাকে ভালো না লাগে?
– সারা বাংলাদেশ খুঁজে তোর মতো সুন্দরী, গুণী, স্মার্ট আর ভদ্র মেয়ে কয়টা পাওয়া যাবে? রিজেক্ট করার কোনো কারণই তো দেখছি না আমি।
– আপু উনি অনেক অন্য রকম। তাই তাকে হারানোর ভয়টা করছে
– কিছু হবে না চিন্তা করিস না বাবু, দেখবি সেও তোকে ভালোবাসার কথা বলে দিবে।
এখন এগুলো বাদ দিয়ে তুই রেডি হয়ে নে জলদি। ড্রাইভার চলে এসেছে। আমি বাবা মা কে বলেছি তুই আজকে জুইয়ের বাড়ি থাকবি ( রুহির বান্ধুবী)
– ওকে আপু আই লাভ ইউ
– লাভ ইউ টু। তোর জন্য খুব সুন্দর একটা লাল গাউন এনেছি আমি দেখাচ্ছি চল
এই বলেই রুহিকে হাত ধরে নিয়ে মেঘা ওর ঘরে যায়। এবং আলমারিটা খুলে লাল গাউনটা বেড় করে রুহির হাতে দেয়।
– নে দেখ তো এটা কেমন হয়েছে?
রুহি গাউনটা হাতে নিয়ে বলে,
– খুব সুন্দর আপু।
তবে রুহির চোখ নিচের দিকে রাখা একটা শাড়ির দিকে পড়ে। শাড়িটি দেখেই যেনো রুহির চোখে ধরে যায়, সে গাউনটা হাতে রেখেই অন্য হাতে শাড়িটা বের করে নেয়।
– আপু শাড়িটা অনেক সুন্দর,আমি আজকে এটা পড়ে যাই প্লিজ?
মেঘা শাড়িটা দেখে চমকে উঠে,
এই শাড়িটি তো সেই শাড়ি যেটা ইরাদের বাসা থেকে শেষ দিন মেঘা পড়ে বেরিয়ে এসেছিলো। ইরাদের প্রথম আর্নিং দিয়ে এই শাড়িটি ও মেঘাকে কিনে দিয়েছিলো। মেঘার কেমন যেনো অনুভব হলো৷ রুহি খুব শখ করে কথাটা বলেছে। যে সে এটা পড়তে চাচ্ছে,আমার পাস্ট সম্পর্কে রুহি কিছুই জানে না, ও তো ইরাদকেও চিনে না তাই তো এই শাড়িটি পড়ার বায়না করলো।
আমি একবার ভাবছি ওকে দিবো না এটা পড়তে পরক্ষণেই মাথায় এলো, ইরাদের সাথে আমার বিচ্ছেদ তো ইরাদের কোনো কারণে হয় নি।।আমাদের বিচ্ছেদ হয়েছে সিচুয়েশনের জন্য, আর সে তো আমায় অসম্ভব ভালোবাসতো। তার প্রেমে কোনো ত্রুটি ছিলো না। আমি চাই আমার বোনের প্রিয় মানুষটা তাকে ওইরকম ভালোবাসাই যেনো দেয়। আর ইরাদের স্মৃতি রেখে আমার লাভ নেই, শাড়িটি কেনো রেখে দিয়েছিলাম জানিনা। আজকে থেকে এই স্মৃতিটাও আর রাখলাম না।
– হ্যাঁ এটা পড়ে যা।
-আচ্ছা আপু কাল দিয়ে দিবো
-না
রুহি না শুনে আমার দিকে তাকায়, আমি মুখে একটা হাসির রেখা ফুটিয়ে বললাম,
– তুই রেখে দে এটা আমার আর লাগবেনা
– আপু অনেক সুন্দর শাড়িটা, থ্যাংক ইউ।
– ওয়েলকাম। এখন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।

.

রুহি রেডি হওয়ার আগেই রুহি ইরাদকে একটা কল দিলো,
ইরাদ বসে বসে চা খাচ্ছিলো
রুহির কল দেখে সে সাথে সাথে ফোনটা ধরে,
– আসসালামু আলাইকুম
– ওয়ালাইকুম আসসালাম, কি করছেন? চা খাই। তুমি?
তার প্রশ্ন উপেক্ষা করে আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম,
– বের হবেন রাতে তাইনা?
– হুম। ৪টায়
-এখন রেসর্টেই আছেন তাই না?
– হ্যাঁ।
– আচ্ছা থাকেন তবে। কোথাও যাবেন না কিন্তু
– আমি তো ভোরে রওনা হবো। এখন এখানেই আছি।
– আচ্ছা একটু পর কল দিচ্ছি
রুহি ফোনটা রেখে দিলো ইরাদকে কিছু বলতে না দিয়েই। রুহি প্রায়ই এমন অদ্ভুত আচরণ করে ইরাদ তা জানে তাই তো ইরাদ হেসে দিলো।
মেয়েটা কখন কি যে বলে তার ঠিক ঠিকানা নেই। ইরাদ হাসতে হাসতে মনটা খারাপ হয়ে গেলো, এই মেয়েটার এই দুষ্টুমি গুলো আর তো দেখা হবে না ইরাদের। খুব মিস করবে সে রুহিকে। আর রুহির সাথে দেখাও হবে কি না সে জানে না তবে মেয়েটা এতোটা আপন হয়ে গেছে, যা বলার বাইরে। ইরাদের এই না বলা ভালোবাসা সে বুঝেও বুঝতে চায় না। আর কোনো কষ্টের দিকে সে পা বাড়াতে চায় না। তাই তো বুঝেও রুহিকে সে বুঝাবে না, জানাবেও না। রুহির তো আবেগের বয়স এই বাচ্চা মেয়েটা তাকে বুঝে তবুও তার জীবনটা কেনোই বা ইরাদ এসে ভিন্ন জগতের করবে? তাই মেয়েটাকে নিজের মতো থাকতে দেওয়াটাই ভালো। ইরাদের কেনো যেনো মনে হচ্ছে রুহি তার কাছে আছে,যাওয়ার আগে রুহিকে দেখার জন্য খুব ব্যাকুলতা কাজ করছে ইরাদের মনে। মেয়েটার জন্য যে অস্থিরতা কাজ করে এটা ঠিক না কোনোভাবেই তবুও ইরাদ নিজেকে বোঝাতে পারে না।

রুহি রেডি হলো, নিজের অজান্তেই নিজের ভালোবাসার মানুষের দেওয়া শাড়িটা পড়েছে। এই শাড়িটি যখন ইরাদ কিনে তখন সে খুব যত্ন নিয়ে এটা কিনেছিলো। জর্জেটের আকাশি রঙের শাড়িতে সাদা সুতা দিয়ে পাতলা করে কাজ করে দু পাড়েই এবং সাদা সুতা দিয়ে বুটি বুটি করা। রুহিকে দেখতে অপরূপা লাগছে। রুহি চোখে হালকা কাজল দিয়েছে, ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক দিয়েছে গালে হালকা ব্লাশঅন দেওয়া। কানে দুটো ঝুমকা পড়েছে, হাতে চুড়ি। সব মিলে একদম বউ বউ লাগছে ওকে।
হাতে ডায়েরিটা নিয়ে ও বের হয়ে যাচ্ছিলো।

রুহিকে বেড় হতে নিবে তখনই মেঘা এলো,
– আপু যাচ্ছি
– দাড়া।
এই বলে নিজ হাতে লিলি ফুল নিয়ে ৪-৫টা রুহির মাথায় গুজে দিলো এবং ক্লিপ দিয়ে সেট করলো,
রুহি এখন নিজেকে আয়নায় দেখে বললো,
– আপু ওয়াও এখন তো অনেক সুন্দর লাগছে
– হুম এই শাড়িটি আমি যখন প্রথম পড়ি এভাবেই সেজেছিলাম মনে আছে আমার। এবং লিলি ফুল পড়েছিলাম। সেদিন প্রতিটা মানুষ আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো তবে আজকে আমি বলতে বাধ্য আমার বোনকে আমার থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে মাশাল্লাহ।
– রুহি মুচকি হেসে মেঘাকে জড়িয়ে ধরলো।
– অল দা বেস্ট বাবু।
রুহিকে একটা কপালে চুমি দিয়ে দিলো মেঘা।

রুহি যাচ্ছে নিজের ভালোবাসার মানুষটার কাছে। কিছুক্ষণ পড়েই সেই প্রতক্ষিত মুহুর্ত চলে আসবে, রুহি এসে পৌঁছে গেছে। যেমনটা ও চেয়েছিলো ঠিক তেমনভাবেই সবটা সাজানো হয়েছে। পুরো পুল সাইডটা রুহি আজকে বুক করেছে। সাদা দিয়ে সবটা ডেকোরেশন করা হয়েছে। চারদিকে ঠান্ডা বাতাস বইছে। চারপাশে আলোতে সবটা জায়গা যেনো ঝিকঝিক করছে৷ এতো সুন্দর করেছে সবকিছু যেনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে,রুহি একটা টেবিল বানিয়েছে এই টেবিলটা একদম পার্ফেক্ট ডেট করার জন্য। রুহি হাতিয়ে দেখছে প্রতিটি ডেকোরেশন, প্রতিটি কাজ,সবকিছুই যেনো মন মতো হয়ে আছে। ব্যাস ইরাদ এলেই রুহির ব্যাকুল মনটা শান্ত হয়ে যাবে। কত গুলো দিন হয়ে এলো এই মানুষটাকে রুহি দেখছে না। আজ ইরাদকে ও মন ভরে দেখবে।

রুহির কিছু ছবি বের করে ইরাদ দেখছে তার ফোনে, এভাবে করতে করতে রাত ৯ঃ৩০ বেজে গেছে। ইরাদের রুমে রুম সার্ভিসের লোকেরা নক করলেন। ইরাদ দরজা খুলে দিলো,
– জ্বি?
– স্যার আপনার জন্য কিছু আয়োজন করা হয়েছে আমাদের ওপাশের বাংলোতে যে পুল সাইডটা আছে সেখানে।
লোকটা হাত দিয়ে ডান দিকে ইশারা দিয়ে ইরাদকে কথাটা বললো,
– কিসের আয়োজন?
– স্যার সবটা বলা বারণ আছে। আপনি কাইন্ডলি একটু সেখানে যাবেন।
– ঠিক আছে
ইরাদ এসে রুহির দেওয়া একটা পাঞ্জাবি পড়ে নিলো। আকাশি পাঞ্জাবি পড়ে হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করে নিয়েছে ইরাদ। চুল গুলো বরাবরের মতোই দাড়িয়ে আছে হালকা একটু জেল দিয়ে চুলটা সেট করে ইরাদ বেড় হলো। কেনো যেনো পুল সাইডটার যতটা কাছে যাচ্ছে ততটাই ইরাদের মনে হচ্ছে রুহি আশেপাশে আছে।
ভেতরে ঢুকে ইরাদ এমনভাবে চমকে যাবে ও ভাবতেও পারে নি।

(চলবে..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here