অনুতাপ পর্ব -১৯

#অনুতাপ
#উনবিংশ_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)

১৩ বছরের বড় হোক আর ১২ বছরের ভালো যখন বেসেছিই তাকে অবশ্যই নিজের মনের কথা বলবো। আমার কোনো সমস্যা নেই আমাদের বয়সের পার্থক্য নিয়ে, কারণ মনের দিক থেকে যদি মিল থাকে তাহলেই সব। আর উনাকে আমি অনেক ভালো বুঝি আর উনিও আমাকে ভালো বুঝেন যা আমাদের সাথে সময় কাটানো প্রতিটা মানুষই বুঝতে পারে কিছুক্ষণ একসাথে সময় কাটালে। এই জিনিসটা সে নিজেও অস্বীকার করতে পারবেন না। আর কি কি কারণে সে আমাকে রিজেক্ট করতে পারে? উম্মম্ম, হ্যাঁ আমি একটু বাচ্চাদের মতো আচরণ করি, এইজন্য কি আমাকে সে রিজেক্ট করবেন? নাহ মনে হয়, কারণ আমার দুষ্টুমি গুলো ইরাদ খুব ইঞ্জয় করেন তাহলে এই নিয়ে তার রাগ হতে নাও পারে। আর তাছাড়া এই মানুষটা আমার এতোটা যত্ন করেছেন এই কয়দিনে। একটা মিনিট ও আমাকে একা ছাড়েনি। সারাটা সময় আমাকে নিয়েই ছিলেন উনি, ভালোবাসা না থাকলে কেউ কারো জন্য এতোটা করতে পারে?নাহ পারে না আসলেই, আমি তো নিজেও পারতাম না। আচ্ছা যদি ভালো ও না বাসেন তবে কি আমাকে পছন্দ করেন উনি? আচ্ছা উনি কি আমাকে একটা চান্স দিবেন? উনাকে ভালোবাসার?

এসব ভাবতে ভাবতেই রুহি নিজের বাড়ির গেইটের সামনে চলে এসেছে। ইরাদের চলে যাওয়ার আর মাত্র ৫ দিন বাকি। রুহি বাড়ি এসেছে আজকে, মেঘার সাথে আলোচনা করে তারপর ইরাদকে সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দিয়ে রুহি প্রপোজ করবে। তাই সে একটু সুন্দরভাবে প্রিপারেশন নিয়েই সবটা করবে।
রুহি বাসায় ঢুকে সবার সাথে কথা বললো। মেঘা ওর মা বাবা সবাই খুব খুশি। হিমাও চলে এসেছে খালামনি আসবে জেনে আর সাহিল ও কাল সকালে আসবে তার এক মাত্র শালিকার সাথে দেখা করার জন্য। আজকে মূলত রুহির কারণে সাহিল ফিরে এসেছে সবার মাঝে। যদি রুহি না থাকতো তাহলে সাহিল মারাই যেতো এইজন্য সাহিল আর ওর পুরো পরিবার রুহির প্রতি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। আর প্রথম থেকেই তারা রুহিকে অনেক আদর করতো। রাতে খাওয়া দাওয়ার পরে রুহি ইরাদকে ফোন করলো ১১ঃ৩০টার দিকে।
ইরাদ মাত্র ডিনার শেষ করে বসেছিলো রুহির কথা মনে পড়ছিলো খুব করে। রাতারগুলের সময় গুলো বারবার মনে হচ্ছিলো। রুহির সাথে কিছু দিন থেকেই যেনো ওর সাথে থাকার ওর আশেপাশে থাকার একটা অভ্যাস হয়ে যাচ্ছিলো ইরাদের। এইজন্যই তো সারাক্ষণ ওর সাথেই থাকতে ইচ্ছে করছে। এসব ভাবতেই ইরাদ খেয়াল করলো অনেক রাত হয়ে গেছে। কোনো কারণ ছাড়া এতো রাতে কল দেওয়াটা ঠিক হবে না। তাই রুহির একটা ছবি ফোনে বের করে দেখে ইরাদ কিছু পেশেন্ট এর ফাইল দেখতে মনোযোগ দিলো।
ঠিক তার ৫-৭ মিনিট পরেই রুহির ফোন পেয়ে ইরাদের মনটা ভালো হয়ে গেলো এক নিমিষেই,
ইরাদ ফোনটা রিসিভ করলো।
– হ্যালো
– কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ, তুমি?
– আলহামদুলিল্লাহ, আজকে সারাদিনে একটা কল ও দেন নি। আমি সকালে ফোন করেছিলাম
– হ্যাঁ আমি ফ্রী হতে হতে রাত হয়ে গিয়েছিলো তাই আর ফোন করিনি।
– হুম, ডিনার করেছেন?
– হ্যাঁ তুমি?
– আমিও
– ৫ দিন পর চলে যাবেন?
– হুম। ফিরবেন কবে?
– ঠিক জানিনা। কাজ থাকলে ফিরবো ৪ মাস পরেই।
– না গেলে হয় না?

রুহি কথাটা আস্তে করে বললো,
তবে ইরাদ শুনে ফেলে
– নাহ, আসলে যাওয়া লাগবে। আমাদের কাজটাই এমন তুমিও তো জানো।
ইরাদ অন্য কেউ হলে এভাবে বুঝিয়ে বলতো না কিন্তু রুহি তো ওর জন্য স্পেশাল।
ইরাদ আরো বললো,
– আসলে তোমাদের সবার থেকে অফিসিয়ালি বিদায় নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু তা সম্ভব হয় নি। দেখাও হলো না।
ইরাদের মনটা খারাপ লাগছে কারণ রুহির সাথে তো ওর দেখা হলো না ফিরে যাওয়ার আগে। মেয়েটার সাথে দেখা হলে ওর শান্তি লাগতো ।

রুহি ইরাদকে বলতে চাচ্ছে না যে ও আছে এখানেই,, মাত্র কিছুক্ষণের দূরত্বে রুহি আর ইরাদ আছে।
– এই কয়দিনের মাঝে কবে ফ্রী আছেন?
– ৪দিনই কাজ আছে যেদিন চলে যাবো সেদিন ফ্রী আমার ফ্লাইট তো ভোরে। তো বলা যেতে পারে পঞ্চম দিন আমি ফ্রী থাকবো।
– আচ্ছা। সেদিন ঠিকঠাক মতো প্যাকিং করে নিয়েন।
– হ্যাঁ ঠিক আছে।

তখনই পেছন থেকে মেঘা এলো ঘরে, এবং দরজায় নক দিলো
রুহি পিছন ফিরে মেঘার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে ইশারায় ওকে ঘরে আসতে বললো,
মেঘা মুখ টিপে হাসছে কারণ রুহির চেহারা লজ্জায় লাল হয়ে আছে। মেঘার বুঝতে বাকি নেই রুহি তার ভালোবাসার মানুষের সাথে কথা বলছে।
মেঘাকে দেখে রুহি তাড়াতাড়ি কথা শেষ করলো,
– আমার আপু এসেছে।
– তুমি বাসায় গিয়েছো?
– হুম, এখন রাখি পরে কথা হবে।
– আচ্ছা
ইরাদ ভেবেছিলো শেষ দিন ঢাকা গিয়ে রুহির সাথে দেখা করবে কিন্তু রুহি তো ওর বাসায় গিয়েছে। আর ইরাদ তো জানেও না রুহির বাড়ি কোথায় তাই তো এই বিষয় নিয়ে কিছু বলাও ঠিক হবেনা। মনটা খারাপ হলো তবে ইরাদ কিছুই বললো না।। বরং ইরাদের মনের এই ভালোবাসা যদি ও বাড়তে দেয় তাহলেই তো সমস্যা। কারণ রুহির বয়সটা আবেগের তবে ইরাদের তো না। আর রুহিকে ইরাদ এতোটা আপন ভাবলেও রুহির জন্য সে একজন ভালো বন্ধু ও তো হতে পারে। এখন এসব কিছুই ইরাদের ভাবা ঠিক না। তাই নিজেকে দমিয়ে রাখাটাই তার কাছে বুদ্ধিমানের কাজ মনে হচ্ছে।
রুহি ফোনটা কেটে পেছন ঘুরে তাকাতেই দেখে মেঘা হাসছে।
মেঘার হাসিতে রুহি লজ্জা পেয়ে বললো,
– আপু তুমি হাসছো কেনো এভাবে বলো তো?
– তাহলে কি করবো বল? তোর চেহারা দেখেছিস। ইশশ! একদম লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
– তুমিও না? হিমা কোথায়?
– ও ঘুম। এখন আমাকে বল। ছেলের নাম কি? কোথায় থাকে? সব কিছু বল
– উনি একাই থাকে মা বাবা নেই মারা গেছেন। আর নাম বলবো এখন। যখন সবড়া ফাইনাল হবে তখন বলবো।
– এখন বললে কি হবে?
– না আপু প্লিজ
– ঠিক আছে লজ্জা পেতে হবেনা। তোর ক্লাসে পড়ে?
– নাহ আমার থেকে সিনিয়র।
– ডক্টর হয়ে গেসে?
– হুম।
– আরে বাহ। বাট ফাইনানশিয়াল স্ট্যাটাস কেমন? পাপা মানবে এমন তো?
– উনি অনেক রিচ আপু। উনাকে রিজেক্ট করার মতো কোনোকিছুই নেই। শুধু মাত্র উনি আমার থেকে বয়সে ১২ বা ১৩ বছরের মতো সিনিয়র হবেন।
মেঘা এবার মুখটা মলিন করে বলল,
– এটাতো বড় সমস্যা। সামনে আন্ডারস্টান্ডিং এ ঝামেলা হবে রুহি। তুই এখনি দেখবি তোর আর তার কথা বার্তা, পছন্দ অপছন্দ সবই অমিল থাকবে। সব কিছুই দেখবি মিলবে না আর এরকল হলে কিন্তু সংসার হয় না।
– না আপু আমাদের এইদিক দিয়ে অনেক মিল। উনি কিছু না বললেও আমি বুঝি। আমি না বললেও সে আমার চোখের ভাসা বুঝে। উনি এমন একজন মানুষ যে আমার পরিবার নাহয়েও আমাকে এতোটা বুঝে।
-রুহি ভেবে বলছিস?
– হ্যাঁ আপু
মেঘা বোনকে নিয়ে চিন্তা করে তাই চিন্তা থেকেই কথা গুলো বলছে। এটা আবেগের বয়স এই বয়সেই সেও একটা ভুল করেছিলো আর এই কারণেই বোন কোনো ভুল পথে পা বাড়াক এটা মেঘা চাচ্ছে না।
– আপু উনি অনেক ভালো মানুষ আর এতোটা হ্যান্ডসাম দেখে তুমি বয়সই বুঝবেনা। যেমন তোমাক দেখলে এখনো ২৭/২৮ বছরের লাগে ঠিক উনাকেও এমনি লাগে।
রুহিফ কথায় মেঘা হেসে দিলো।
– কি যে বলিস
– আপু ঠিকি বলেছি।
– আচ্ছা আমাদের সাথে দেখা করাবি কবে?
– আগে তাকে বলি এরপর
– কবে বলবি?
– আইডিয়া দাও আমি ৩-৪ দিন পরেই তাকে প্রপোজ করতে চাই। এরপর সব ঠিক থাকলে। দেখা করাবো
– ওকে
রুহি আর মেঘা প্ল্যানিং করতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো ইরাদকে কিভাবে মনের কথা বলা যায় এই নিয়ে।
মেঘা নিজেও জানে না কার সাথে রুহি নিজেকে জড়াতে যাচ্ছে। এরপর তিনটা জীবনে আর দুটো পরিবারের মাঝে কি কি হতে যাচ্ছে, এই সম্পর্কে কারোর কোনো ধারণা নেই।

(আপনাদের মতামত দিন গল্পটা নিয়ে..)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here