অনুভুতিরা শীর্ষে পর্ব ১

#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_১
.
তিনজন লোককে ধরে পেটানো হচ্ছে। অপরাধ তারা সাদাদ ভাইয়ের কথা অমান্য করেছে। ভার্সিটিতে সাদাদ ভাই যা নিয়মকানুন করে দিয়েছে তার বাইরে যাওয়া মানেই মারা পড়া। আর এই তিনজনকে অনেক বার ওয়ার্নিং দেওয়ার পরও আবার অমান্য করায় এদের ধরে বেধে এনে পেটাচ্ছে সাদাদ ভাইয়ের লোকেরা। এর মধ্যেই প্রবেশ সাদাদ ভাইয়ের।

বিখ্যাত ছাত্রনেতা সাদাদ রহমান সাদ, তার বাবা একজন ব্যবসায়ী সাথে তিনিও একজন বিখ্যাত নেতা। উনি সৎ মানুষের সাথে একদম সরল ও সৎ কিন্তু অসৎ মানুষের সাথে একদম কঠোর এবং রূঢ়! মানুষ হিসেবে চমৎকার একজন। কিন্তু ক্ষমতার জন্য কত কিই না করতে হয়। যারা বোঝে তাদের জন্য চমৎকার ব্যক্তিত্ব হলেও যারা তাকে এখনো চিনে নি তাদের জন্য সে বড়ই নিষ্ঠুরতম। এটাতে অবশ্যই প্রশাসনের দোষ। প্রশাসন মানুষের সামনে যেমন উপস্থাপন করবে তেমনই মানুষ মনে করে। ঠিক তেমনই একজন হলো সাদাদ রহমান সাদ। ২৭ বছর বয়সী যুবক,পেশায় রাজনীতিবিদ আর বাবার ব্যবসার কাজেও সে যথেষ্ট সহায়তা করে।

সাদাদ এসেই বলল,
— সাব্বির! বুঝিয়েছিলি ভালো করে?
সাব্বির হতাশ গলায় বলল,
-ভাই এ নিয়ে শতাধিক বার হবে। কিন্তু ওরা কিছুতেই ছাড়তে রাজি হচ্ছে না!
সাদাদ এসে মাঝেরজনের থুতনিতে চাপ দিয়ে বলল,
–শেষবার জিজ্ঞাসা করছি প্রফেসর আলীফকে ছাড়বি কি না? একবার যদি আমি খুঁজে পাই তো তোদের দুনিয়া থেকে আমি উঠিয়ে দেবো। এবার ভেবে বল!

বেধে রাখা তিনজনই বেশ ভয় পেলো। কেননা সাদাদ যা বলে তাইই করে। এক কথার মানুষ সে। আর এতোক্ষনে মার খেতে খেতে একেকজনের অবস্থাও করুন। তাই একজন বেশ করুনভাবে বলল,
-সাদাদ ভাই! আমরা আপনার শত্রুপক্ষের হয়ে কাজ করি। আপনাকে সম্মান করি বিধায় আপনি সম্বোধন করলাম। আপনাকে প্রফেসর এর তথ্য দিকে আমরা বাঁচতে পারবো না।
সাদাদ লোকগুলোকে নির্ভয় দেখিয়ে বলল,
–সাদাদের কাছে যতদিন আছিস। তোদের কেউ টোকাও দিতে পারবে না। তাই বলে দে। এমন নয় যে আমি খুঁজে পাবো না। যদি নিজে খুঁজে পাই তবে তোরা আর বেঁচে কি করবি? কোন কারন তো দরকার তোদের বাঁচিয়ে রাখার!

অনুনয়ের সাথে লোকগুলো বলে উঠলো,
-ভাই প্লিজ মারবেন না। আপনি আজমল গ্রাউনমলে চলে যান। সেখানেই পাবেন প্রফেসরকে! আর তারা প্রফেসরকে এখনো জীবিতই রেখেছে। কেননা প্রফেসর এখনো ফর্মুলা বলে নি।
সাদাদ সাথে সাথে বলে উঠলো,
–গুড নিউজ! আমি বের হচ্ছি। সাব্বির, তমাল তোরা এখানটা সামাল দে। আর এদের বিশেষ কক্ষে রেখে আয়।

সাব্বির অবাক হয়ে বলল,
-ভাই?
সাদাদ উত্তরে বলল,
–ফোনে পাঠিয়েছি। দেখে নিস। মাদা**** এর দল! একটাও যেন কষ্ট কম না পায়!

সাদাদ আর অপেক্ষা না করে সাথে সাথে বেরিয়ে গেলো।

.
আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এক কাপ কড়া করে রং চা নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাপে চুমুক দিচ্ছি আর সকালের বাতাস উপভোগ করছি। এর মধ্যেই আম্মুর ডাক!
-সুবাহ জলদি নাস্তা করতে আসো। ভার্সিটিতে আজকে প্রেক্টিক্যাল ক্লাস আছে, ভুলে যেও না। আমি তোমার রুবিনা আন্টিকে ফোন দিয়েছিলাম।
আমি ছোট একটা শ্বাস ফেলে বললাম,
–আসছি আম্মু!

রেডি হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসতেই বাবা এসে পাশের চেয়ারে বসলেন।
–গুড মর্নিং বাবা!

বাবা মুচকি হেসে বললেন,
– গুড মর্নিং বাচ্চা।

এর মধ্যেই আমার বড় আপু এসে আমাকে আর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
– গুড মর্নিং বড় বাচ্চা।
আপুও হেসে বাবাকে গুড মর্নিং বলল। মা এসে তাড়া দিয়ে বলল,
– রুবাইয়া! তাড়াতাড়ি খেতে বসো।

খাওয়ার মাঝেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। বাবা মা বুঝতে পেরে আপুকে কি যেন ইশারা করলো, তার পাঁচ মিনিট পরই বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। বাসার ছোট বিধায় আমাকেই যেতে হলো দরজা খুলতে। আর দরজা খুলেই আমি অবাক! দুইটা চোখ আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। সাথে সাথে জোরে চিৎকার করে বললাম,
–ভাইয়া!
মুচকি হেসে ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
-আমার সুবাহ মনির মন খারাপ আর আমি আসবো না!
আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম,
–আসবে বলোনি কেন?
ভাইয়া কিছু বলার আগেই ভিতর থেকে আম্মু বলে উঠলো,
-সুবাহ! রুবায়েতকে আগে ফ্রেশ হতে দাও তারপর তোমার প্রশ্ন করো। আসো ভিতরে।

.
আমি সুবাহ তানজিম! বাসার সবচেয়ে ছোট সদস্য। অনার্স থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। বড় আপু রুবাইয়া তানজিম, ভাইয়া রুবায়েত হাসান। বাবা প্রফেসর মোঃ রুহুল হাসান। মা বিজনেসওম্যান সামিনা রহমান।
এবার মূল গল্প যাওয়া যাক। ভাইয়াও রেডি হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়েছে।
–আমার খাওয়া শেষ। আম্মু আমি ব্যাগ নিয়ে আসি দাঁড়াও।

আমাকে হাত ধরে থামিয়ে ভাইয়া বলল,
-পিচ্চি আজ আমি তোকে দিয়ে আসবো।
আম্মুও অনুযোগ সুরে বলল,
-হ্যাঁ সুবাহ আজ ভাইয়ার সাথে চলে যাও। আমার মিটিং আছে। তারপর পরাপর দুইটা কনফারেন্স আছে। আজ আমি খুবই ব্যস্ত।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
–তাহলে আমি একাই চলে যাচ্ছি। ভাইয়া মাত্র বাসায় আসলো। এখন কোথাও যাওয়া লাগবে না। ভাইয়া আমি একাই চলে যেতে পারবো৷ আমি বড় হয়ে গেছি না?
বলেই ঠোঁট উল্টালাম। যা দেখে সবাই হেসে দিলো। রুবাপু হাসতে হাসতে বলল,
-দেখো বাচ্চাটা বলে কি? আচ্ছা চল আমি তোকে নিয়ে যাই!
আমি সাথে সাথে মানা করে বললাম,
–একদম না! বিয়ের কনে! বিয়ের আগপর্যন্ত বাসা থেকে বের হওয়া লাগবে না। আমি রিকশা করে চলে যাবো। টেনশন কেন করছো?

অবশেষে সবাইকে মানিয়ে কাধে ব্যাগটা নিয়ে বের হলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

রাস্তায় জ্যামে আটকে আছি প্রায় ঘন্টাখানেক। সাইড থেকে কোন মন্ত্রীর যেন এত্তো এত্তো গাড়ি যাচ্ছে৷ সাথে আছে শ খানেকের মতো বাইক। ক্রমশ হর্ণ বাজিয়েই চলেছে। কানের সব পোকা মনে হচ্ছে মরে গেছে। কোন রাজনৈতিক দল আমি পছন্দ করি না। যারা সাধারণ মানুষের কোন দাম দেয় না তাদের প্রতি আমার চরম ঘৃণা। সবসময় সবখানে এদের পাওয়ার দেখাতে হবে! সুন্দর করে ওড়না দিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে নিলাম। এদের কু নজর থেকে বাঁচার চেষ্টামাত্র! চোখ কুঁচকে রিকশায় চুপচাপ বসেছি। এর মধ্যেই একটা বাইক এসে একদম রিক্সার পাশে দাঁড়ালো। আমি ভয়ে আর ঘুরে দেখতে যাই নি কে ছিল। হঠাৎ খেয়াল করলাম আমি যেই রিক্সায় চড়া সেই রিক্সা টা সবগুলোকে পেরিয়ে আগে যাচ্ছে। আমি তো চরম অবাক। আমি বেশ চমকেই রিকশাওয়ালা মামাকে বললাম,
–মামা আপনি আগে যাচ্ছেন কেন? শুধু শুধু পুলিশ আপনাকে ধরে মারবে! আপনি আর আগে যাবেন না প্লিজ।

রিকশাওয়ালা মামা আমাকে নির্ভয় দেখিয়ে বলল,
-চিন্তা করিয়েন না মা। কিছু কইবো না আমগো!

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
–আপনি এদের চেনেন না মামা! এরা সব পারে! আমার ভয় লাগছে!

মামা আবার বলল,
-মা টেনশন করিয়েন না। আমগো পিছে যে হুন্ডা আছে ওইডা নেতার তাই আমগো আগে এমনেই যাইতে হইবো নয়তো সাইড দিতে পারুম না!

আমি তৎক্ষনাত পিছে ফিরে দেখি আসলেই আমাদের রিক্সার পিছনে বাইক! তাতে দুইজন বসা। হেলমেট এর জন্য চেহারা বুঝা যাচ্ছে না। বাতাসের জন্য ওড়নাটা আর ধরে রাখতে পারলাম না। মাথা থেকে পড়ে গেল। আমি চমকে সামনে ফিরে তাড়াতাড়ি ওড়নাটা ঠিক করলাম। না জানি আবার কার চোখে পড়ে যাই!
এর মধ্যেই পিছের বাইকটা শো করে একটান দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো হঠাৎ কোলের উপর একটা চিরকুট আবিষ্কার করলাম। হলুদ রঙের একটা কাগজে লেখা ” Be ready for my love torture and for be mine. I’ll be with you forever and ever. My all feelings for you my love. Love you❤️ ”

আমি অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছি। মাথাটা কেমন যেন হ্যাং করছে বারবার। কি হবে আমার সাথে? ভেবেই ঢোক গিললাম। আর লোকটাই বা কে ছিলো? ভাবতে ভাবতেই ভার্সিটির সামনে চলে আসলাম। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে আস্তে আস্তে ক্যাম্পাসের দিকে এগিয়ে গেলাম। নিচের দিকে তাকিয়েই হেটে যাচ্ছিলাম হঠাৎ সামনে কোন ব্যাক্তির আগমন দেখে চোখে নিচে রেখেই সরে গেলাম। সামনের ব্যাক্তি ও আমার দিকে সরে গেল। আমি ভ্রু কুঁচকে আবার অন্যদিকে সরে গেলাম
লোকটা আবারও আমার দিকে আসলো। এবার মুখ থেকে বিরক্তির শব্দ বের করে উপরে তাকাতেই দেখি আমার সামনে ভার্সিটির সবার প্রিয় সাদাদ ভাই। আমি ভয়ে শেষ। ওনাকে দেখে কি বলব তাই বুঝতে পারছি না। কোনমতে তুতলিয়ে সরি বলে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম। একবার পিছনে তাকিয়ে দেখেছি সাদাদ ভাই ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা রে! কি ভয়ংকর। আমি কোনমতে দৌড়ে সেখান থেকে ক্লাসে এসে হাঁপাতে লাগলাম। এই লোকটার আমার সাথে কি সমস্যা তাইই বুঝতে পারি না।
,
,
,
চলবে………..❤️

(এবার নতুন এক জুটিকে নিয়ে এসেছি গল্পে। আমি আশা করবো সাদি আর সুমুর মতো সাদাদ আর সুবাহকেও একইভাবে ভালোবাসা দিবেন আপনারা। অবশ্যই বলবেন কেমন লাগলো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here