অনুরক্তি অন্তরিক্ষ পর্ব -০২

#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২ পর্ব]
তাসনিম তামান্না

-‘ শ শা শান ভা ইয়া প্লিজ আ মাকে ছেড়ে দিয়েন না প্লিজ এখা… ন থেকে প পড়লে ম ম’রে যাবো প্লিজ ছাড়বেন না প্লিজ’

-‘ যা মরে যা তোকে বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ? তুই ম-র-লে-ই আমি এই বিয়ের হাত থেকে বাঁচবো ‘

জারা থমকে গেলো। শানের শক্ত করে ধরে রাখা হাতটা ছেড়ে দিলো। শান জারার হাত টান দিয়ে ছাদের নিরাপদ জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলল

-‘ আমাকে তোর খুব বিয়ে করার শখ না? আমি এই দেশে যে কইদিন আছি তোর জীবনটা আমি নড়ক বানিয়ে দিবো জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ ‘

শান চলে গেলো। জারার চোখ ছাপিয়ে জল এলো। এতো কষ্ট কেনো তার জীবনে?

সূর্য অস্তমান রক্তিম অন্তরিকক্ষে পাখিদের নীড়ে ফেরার তাড়া বাতাসে রংবেরঙের ফুলের ঘ্রাণ। সেই বাতাস ছুয়ে যাচ্ছে জারার দেহ মন। ধীরে ধীরে সূর্য ডুবে গেলো নীলাভ অম্বরিতে পূর্ণ চন্দ্রীমা জারার মনে চট করে প্রশ্ন উদায় হলো আজ পূর্ণিমা? তখনি শান কোথা থেকে এসে জারাকে ছাদে বাইরের দিকে ঝুঁকে দাঁড় করালো। জারা প্রথমে ভয় পেয়ে বাঁচার আকুতি করলেও শানের কথায় জারার কোথায় যেন লাগলো। বাঁচার ইচ্ছে যেনো মরে গেলো। নিজের ওপরে বিতৃষ্ণা আসলো। মনে পড়লো কাউকে আকরে ধরে বাঁচার মতো কেউ নেই যারা ছিল তারা পারি দিয়েছে দূরে না ফেরার দেশে। জারা রেলিং ধরে নিচে তাকালো লাফ দেওয়ার সাহস হলো না। রেলিং ঘেঁষে বসে পড়লো হাঁটুতে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো। নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো

-‘ তোর ভাগ্য এতো খারাপ কেনো জারা? তোকে কেউ কেনো ভালোবাসে না? তুই দেখতে খারাপ জারা সেজন্য তোকে কেউ ভালোবাসে না। জোর করে আর যায় হোক ভালোবাসা পাওয়া যায় না। ভালোবাসা মন থেকে আসে। কিন্তু ভাইয়া? কি যেনো বলল ভাইয়া আ আমি ম…রে গেলে ভালো। তাহলে আমি-ই সব নষ্টের মূল? না এতো অপমানের পর ভাইয়াকে বিয়ে করা মানে নিজেকে ছোট করা না আমি কিছুতেই এ বিয়ে করবো না ‘

চোখ মুখ মুছে উঠে দাঁড়ালো জারা। পা আগোতে গেলে কেমন ভার ভার লাগলো। চোখ ছাপিয়ে জল আসতে লাগলো। ধীরগতিতে নিচে এসে বলল দেখলো হুজুরের পাশে বড় মামা, ছোট মামা, আর খালু বসে আছে চোখ বুলিয়ে মনিকে খোঁজার চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যথ হলো পেলো না কোথাও পাশের রুমে চলে গেলো যেখানে কিনা সবাই আছে। কাজিনগুলো জারাকে সাজাতে লাগলো জারার কোনো বাঁধা মানলো না। জারার বুকের দুরুদুরু বেড়েই চলেছে। কি হবে? কি হবে করে? চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলো আমি এ বিয়ে করবো না কিন্তু মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও বের হলো না। বিয়ে জন্য বসার রুমে ডাকা হলো। জারা আর শানকে পাশাপাশি বসানো হলো। জারা চোখ তুলে দেখলো শান লাল চোখে স্থির হয়ে বসে আছে। কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না জারা। জারা নিজের ওপরেই বিরক্ত হলো এতো ভিতু কেনো সে?

ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হয়ে গেলো। কথা হলো শান বিদেশ থেকে এলো বড় করে অনুষ্ঠানে করা হবে। শান আর জারা এখনও পাশাপাশি বসে আছে। বড়রা যদি না থাকতো তাহলে এতক্ষণ শান এখান থেকে চলে যেত। জারা চেয়েও বিয়েটা আটকাতে পারেনি। জারা যখন নিজের কল্পনা জল্পনা করতে ব্যস্ত তখনই শান কানের কাছে ফিসফিসয়ে বলে উঠলো

-‘ মিসেস জারা আর ইউ রেডি? আপনার জীবন ধীরে ধীরে বিষক্রিয়াময় করে তুলবো। জীবনে বেঁচে থাকতে আর ইচ্ছে হবে না দেখিস বিয়ে করার সাধ একে বারে মিটিয়ে দিবো তোর ‘

জারা নিশ্চুপ হয়ে শুনলো শানের প্রতিটা কথায় বুক কেঁপে উঠলো। বুঝলো আগে তো কঠিন জীবন ছিলই এখন দ্বিগুন কঠিব তার জীবন। সে-তো বিয়ে করতে চাই নি। আর সে-তো কখনো বলিই নি শানকে বিয়ে করবে। তাহলে তাকে কেনো সব কষ্ট সহ্য করতে হবে। জারা মনে মনে দোয়া করলো ‘আল্লাহ আমার ধৈর্য শক্তি বাড়িয়ে দাও। তুমি আমার স্বামীকে ভালো রেখো। এ পরিবারের সকলকে ভালো রেখো।

আজ শান আর জারার বাসররাত হওয়ার স্বত্বেও। শানের মা শান্তি বলল

-‘ ওরা এখনো ছোট যেহেতু সেহেতু একসাথে থাকার প্রশ্ন উঠছে না। আগের মতোই যে যার মতো যার যার রুমে থাকবে ‘

শান্তির কথায় আর কেউ দ্বিমত করলেন না সবাই মেনে নিলেন।

জারা রাতে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে ঘুম আসছে না। চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এপাশ ওপাশ করেও শত চেষ্টা করেও জারার ঘুম হলো না উঠে ডাইরি খুলে। মনের অজস্র কথা ক্ষুদ্র ভাষায় লেখার প্রচেষ্টা চালানো। চোখ দিয়ে দূর্লভ অবাধ্য জল গুলো টুপটাপ ডাইরির পাতায় পড়ে সাদা পৃষ্ঠা ভিজে নরম হয়ে উঠলো। জারা বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলো না। বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে কান্না করতে লাগলো। কট করে দরজার লক খুলে গেলো জারার কান্না থেমে গেলো অতি সাবধানে চোখে জল মুছে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। দরজা লক করারও শব্দ শুনতে পেলো জারা। জারা মনে করলো মনি এসেছে। কিন্তু আচমকা হাত টান দিয়ে উঠে বসালো জারাকে। জারা চমকে তাকালো মানুষটির দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে। জারা ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো মনে মনে দোয়া করতে লাগলো

-‘ আমাকে অশান্তিতে রেখে নিজে শান্তিতে ঘুমাচ্ছ খুব শান্তি না তোর। তোর শান্তি ছুটাবো ‘

জারা শানের এমব বিহেভিয়ার দেখে হতবিহ্বল হয়ে গেলো জারা কিছু বলার আগে শান জারাকে ধাক্কা দিয়ে শুয়িয়ে দিল। কিছু বুঝার আগের অধর মিলিয়ে দিলো। জারা অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেছে। জারা ঠোঁটে ব্যথা পেতেই শানকে জোরে ধাক্কা দিলো কিন্তু কাজ হলো না কিছুক্ষণ পর শান নিজেই ছেড়ে দিয়ে বলল

-‘ আজ না আমাদের বাসর রাত চল বাসর করি আস… ‘

আর কিছু বলার আগে জারা ডুকরে কেঁদে উঠলো। শান বলল

-‘ এইটুকু তেই এতো চোখের পানি নষ্ট করলে তার হবে না। চোখের পানি জমিয়ে রেখে দাও আভি তো পিকচার বাকি হে এবার সারারাত কাঁদো এবার আমার শান্তির ঘুম ‘

শান সিস বাজাতে বাঝাতে চলে গেলো। জারা অশ্রু সিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলো শানের যাওয়ার পানে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here