#অন্তরালে_ভালবাসা
১০
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা
অহিন আরিশাকে নিয়ে রুমে আসে।একজন লোক এসে খাবার দিয়ে যায়।লঞ্চের ভেতর ডাইনিং স্পেস আছে চাইলে সেখানে গিয়েও খাওয়া যায় কিন্তু আরিশার ইচ্ছে নেই বলে অহিন রুমেই খাবার দিয়ে যেতে বলে।
দুজনে খেয়ে নিলে।অহিন বলে আজ আর ঘুমাবো না, এতো সুন্দর রাতটাকে মন দিয়ে উপভোগ করতে চাই।
রুম থেকে বের হয়ে অহিন আরিশা আবার লঞ্চের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। আরিশা বলে একটা গান ধরতো।কতদিন তোর আর রাফিনের গান শুনিনা।
কত সুন্দর গান গাইতি তোরা আমিও সুর মেলাতাম তোদের সাথে।ঝগড়া, আড্ডা, খুনসুটিতে ভরা ছিলো আমাদের বন্ধুদের সম্পর্ক। সব কেমন যেন হারিয়ে গেলো।
আরিশা এসব বলতে বলতে আবেগী হয়ে ওঠে রাফিনের প্রথম তাকে নিয়ে গান গাওয়ার দিন মনে পড়ে যায়।কত সুন্দর স্মৃতি ছিলো তাদের!আজ সবই অতীত!
অহিন আরিশার আনমনা হয়ে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারে, গান ধরে সে,,,
অহিনের দৃষ্টি তখন গভীর সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের দিকে।
সুউচ্চ ঢেউগুলো বিশাল জলরাশির গায়ে আছড়ে পড়ে জানান দেয় সাগরের চিরযৌবনের কথা। মেঘ আর সমুদ্রের গর্জন সেখানে মিলে-মিশে একাকার হয়।আর ঠিক তখনই অহিনের মনে হয় তার মনেও তো এই একইরকম গর্জন চলছে।যা কেউ দেখছে না।
যখন.. নীরবে দূরে, দাঁড়াও এসে
যেখানে পথ বেঁকেছে।
তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা
কে জানে কি আবেশে দিশাহারা
তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা
কে জানে কি আবেশে দিশাহারা
আমিও ছুটে যাই সে গভীরে
আমিও ধেয়ে যাই কি নিবিড়ে
তুমি কি মরীচিকা না ধ্রুবতারা।
তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা
কে জানে কি আবেশে দিশাহারা।
আরিশা গলা মিলায় অহিনের সাথে,
আরিশার চোখের কার্নিশ বেয়ে কয়েক ফোজল গড়িয়ে পড়ে। রাফিনের স্মৃতি ভেসে উঠছে তার দৃশ্যপটে।জীবনের জোয়ারে কখন কাকে কোথায় নিয়ে যায় তা কেউ জানেনা। আরিশার খুব কষ্ট হচ্ছে খুব!
অহিন আবার গেয়ে ওঠে,,
যখন রোদেরই কনা ধানেরই শিষে
বিছিয়ে দেয় রোদ্দুর,
তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা
কে জানে কি আবেশে দিশাহারা
তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা
কে জানে কি আবেশে দিশাহারা
আমিও ছুটে যাই সে দিগন্তে
আমিও ধেয়ে যাই কি আনন্দে
তুমি কি ভুলে যাওয়া কবিতারা।
তোমায় ছুঁতে চাওয়ার মুহূর্তরা
কে জানে কি আবেশে দিশাহারা
আরিশার মন খারাপ হয়ে যায়।একটু আগের পরিবেশের সাথে যে ভালো লাগা তৈরি হয়েছিলো তা মুহুর্তেই মিলিয়ে যায়।যা আবেগী করে তুলেছিল এখন তা চলে গেলো। জীবনের এই মুহুর্তে এসে আরিশার মনে হয় রাফিন কি তার থেকে ইচ্ছে করে দূরে চলে গেছে?
নানারকম ভাবনা নিয়ে আরিশার চেয়ারে হেলান দেয়া অবস্থায় ঘুম চলে আসে।
অহিনের আজকাল মনের কষ্টগুলোকে পাত্তা দিতে ইচ্ছে করে না।থাক না তারা তাদের মত!জ্বালিয়ে দিক,পুড়িয়ে দিক!
আরিশাকে কোলে করে রুমে নিয়ে আসে অহিন।আরিশাকে নি নিষ্পাপ লাগছে।স্নিগ্ধ লাগছে। মায়াবতী লাগছে।সব মেয়েদের ঘুমালে কি এতোটা মায়াবী লাগে!
কি জানি!হয়তো হ্যাঁ! হয়তো না!
আরিশাকে শুইয়ে দিয়ে নিজের বের হয়ে চলে আসে বাইরে।যতক্ষণ আরিশার কাছে থাকবে ততক্ষণ মনের যন্ত্রনা মাথাচারা দিয়ে উঠবে।
বাইরে এসে সমুদ্রের ভেসে যাওয়া লঞ্চগুলোর দিকে তাকায়।আরিশা নামক যন্ত্রনা থেকে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করে।
কতরকম ভাবনায় কেটে যায় সময়। ভোর হয়ে এসেছে।লঞ্চও গন্তব্যে পৌঁছে যায়।অহিন আরিশাকে ডেকে লঞ্চ থেকে সব নিয়ে নেমে আসে।
আরিশা বলে এখন আমরা কোথায় আছি?
আমরা এখন বরিশাল আছি।অহিন জবাব দেয়।
এখান থেকে কিভাবে যাবো কুয়াকাটা? আরিশা জিজ্ঞেস করে।
অহিন বলে,আমরা এখন মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাবো।
কথা শেষ না হতেই তারা একটা মাইক্রোবাস পেয়ে যায়।অহিন আরিশাকে নিয়ে সেটায় উঠে পড়ে।
ভোরের আবছা আলোয় চারপাশে রাস্তা গাছপালা দেখতে এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।কোন স্বর্গীয় ভালো লাগা কাজ করছে মনে।ভোরের আলোয় হালকা শিরশিরে শীতল বাতাস বইছে।সেই বাতাস যেকোন মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে যাওয়ার মতো। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যে নিজের মনের কষ্ট মুহুর্তেই চলে যায় অহিন আরিশার।আসলে প্রকৃতি এমন এক বিষয় যা মানুষের মন প্রানকে সতেজ করে তোলে।সজীব করে তোলে!
ইতিমধ্যেই তারা এসে পৌঁছে যায় পটুয়াখালী অথাৎ কুয়াকাটায়।
অহিন ঢাকা থেকে অনলাইনে শিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলা নামের এই রিসোর্টে রুম বুক করে আসে।
বলা হয়ে থাকে এই রিসোর্ট কুয়াকাটায় অন্যতম বিলাস বহুল রিসোর্টগুলোর মধ্যে একটি।
গাছপালায় ঘেরা,সুইমিংপুল সহ নানারকম আভিজাত্যের চাপ নজরকাড়ার মত একটি রিসোর্ট এটি।
পর্যটন এ নগরকে কেন্দ্র করে একের পর এক বিলাসবহুল আবাসিক হোটেল গড়ে উঠতে শুরু করেছে।
আরিশা অহিনের সাথে ভেতরে ঢুকছে আর অবাক হচ্ছে এতো সুন্দর চারপাশটা আরিশা মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে এ কন স্বপ্ন পুরী! আরিশা বলে, এতোটা জায়গা জুড়ে এই একটি রিসোর্ট অহিন?এখানে তো অনেকখানি জায়গা মনে হচ্ছে।
অহিন বলে,হুম এখানে দশ একর জায়গার ওপর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সবুজের সমারোহে ঘেরা ‘সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাস’।
অহিন আরিশাকে নিয়ে রিসোর্টে ঢুকে এমন সময় একজন লোক এসে অহিনের হাত থেকে সুটকেস নিয়ে যায়।অহিন হেসে হেসে তার সাথে অনেক্ষণ কথা বলে।লোকটি আরিশাকে দেখে বলে, এই তোমার বউ?
অহিন একটু দ্বিধায় পড়ে যায়।কি বলবে।পরে বলে জি আমার বউ!
আরিশা একটু অবাক হয়ে তাকায় অহিনের দিকে। অহিন তাকে বউ বলছে!কত ঢং জানিস তুই অহিন!এটা ভেবেই মুখ ভেংচি কাটে আরিশা।
ভদ্রলোককে বিদায় দিয়ে অহিন আরিশাকে নিয়ে পুরো রিসোর্ট আর রিসোর্টের রুম গুলো দেখানোর জন্য প্রস্থান করে।
আরিশা মুগ্ধ হয়ে পুরো রিসোর্ট দেখছে প্রতিটি রুমে আধুনিকতারচাপ রয়েছে।
মেইন ভবনটি দেখে এসে তারা ভ্যালি গুলো দেখতে ভবন থেকে বের হয়।এখানে মেইন ভবন ছাড়াও অনেক গুলো ভ্যালি রয়েছে যা এই পুরো রিসোর্টের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুনে।
কিছু লোকজন সেখানে বসে খাচ্ছে,একজন ওয়েটার এসে অহিনকে জিজ্ঞেস করে কি খাবেন স্যার?
এখানে কন্টিনেন্টাল, থাই, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান ও পিওর বাংলা খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। অহিন বলে থ্যাংকস!আসলে আমরা একটু পর খাবো এখনো ফ্রেশ হইনি।ওয়াটার হাতের ইশারা করে আবার বলে,স্যার কফিসপ ও ক্যান্টিন রয়েছে ওইদিকে। সেখানে কফি, আইসক্রিমসহ স্ন্যাকসের নানা আয়োজন রয়েছে।আপনি চাইলে নিতে পারেন।
অহিন আরিশা সেখানে বসে কফি খায়।কফি খেয়ে কিছুটা চাঙা লাগে আরিশার কাছে।এতোক্ষন যে আলসে ভাব ছিলো তা চলে যায়।
অহিন আরিশা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়।অহিনের মন খারাপ সিহাব কল দিয়ে কি যেনো বলেছে।সেই সময় থেকে অহিন মুখ ভার করে বসে আছে।রাফিনের অনুপস্থিতিতে আরিশাকে নিয়ে এভাবে বাইরে আসা এটা রাফিন কতটুকু ভালো ভাবে নিবে কে জানে।অহিনের চিন্তা ক্রমেই বাড়তে থাকে।মনের ভেতর একটা চাপা যন্ত্রনা খোঁচাতে থাকে।ভালবাসা নিয়ে এক বিশাল দ্বন্দ যুদ্ধে আছে সে।যার এদিকে গেলেও সে কাটবে, অন্যদিকে গেলেও!
নানা চিন্তায় অহিন কাটালো এক অসহ্য রকম রাত।যেখানে রাতটি হতে পারতো একটু অন্যরকম! কিন্তু মানুষ যা চায় তা কি সবসময় পায়?সে প্রশ্ন রয়েই যায়!
চলবে,,
বিঃদ্রঃ গল্পের তথ্য গুলো রিসার্চ করে পাওয়া।
গুগল করে পেয়েছি।