##অন্তরালে_ভালবাসা
১৯
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা
সিহাব, অহিন,রাফিন বসে আছে অহিনদের বাড়ি।অহিন সিহাবকে ডেকেছে আরিশা, রাফিনের বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে। সিহাব যেহেতু অহিন,রাফিনের বন্ধু তাই এই বিয়েতে সব কিছু তাকে জানানো উচিত। রাসিন সিহাবকে বলে, আরিশা অহিনের ডিভোর্স করার জন্য তোকে ডেকেছি।কথাটা শুনে অহিনের হার্টবিট বেড়ে যায়।ঘামাতে শুরু করে,তবে কি অফিশিয়ালি আরিশা থেকে দূরে চলে যাবে অহিন।আর কি চোখের দেখাও দেখতে অয়ারবে না সে!
——সিহাব বলে,অহিন যেহেতু তোদের বিয়ে হয়েছে মাত্র ৬মাস, সেহেতু তোদের এখন লিগ্যালি ডিভোর্স হবে না।কারণ হাইকোর্টে তোদের ডিভোর্স নিবে না।বিয়ের ৬মাস পর ডিভোর্স কার্যকর হবে।তবে তোরা এখন আপিল করে রাখতে পারিস।যাতে ৬মাস শেষ হওয়ার পর পরই তোদের ডিভোর্স হয়ে যায়।একটি ডিভোর্সের আপিলের পর ৯০দিন একটা কাপলকে সময় দেয়া হয়,এর মাঝে যদি তারা মত পাল্টায় তাহলে তারা সেটা ক্যান্সেল করতে পারে।কিন্তু যদি এই ৯০দিনের মাঝে তারা কোন প্রকার উত্তর না দেয় তাহলে আপনা আপনি ডিভোর্স কার্যকর হয়ে যায়।এখন তুই চাইলেও আরিশাকে ডিভোর্স দিতে পারিস না।তাই তোদের অবশ্যই এই ৫মাস অপেক্ষা করতে হবে।যেহেতু ৬মাসের এক মাস কেটে গেছে।আর ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত রাফিন আরিশাকে বিয়ে করতে পারে না।তাই তোরা এখন বাধ্য আগামী ৫মাস অপেক্ষা করার জন্য।
——সিহাবের কথা খুব মনোযোগ শুনে অহিন,রাফিন।সিহাবের কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে।তাই এই ৫মাস অপেক্ষা করা ছাড়া তাদের হাতে কোন অপশন নেই।
——অহিন রাফিনের দিকে তাকিয়ে তার উত্তর জানতে চায়?
—–অহিন আমি সিহাবের কথার সাথে একমত পোষণ করছি।আমাদের বিয়ের ডেট ৫মাস শেষ হওয়ার দ্বিতীয়দিন হবে।এটাই ফিক্সড করে নেয়।এর মাঝে আমার কিছু কাজ আছে তা শেষ করতে হবে।রাফিন তার মত জানায়।
——অহিন বলে,রাফিন তোর কোন সমস্যা হবে নাতো অপেক্ষা করতে?
—-রাফিন অহিনের পিঠে চাপড় দিয়ে বলে, আরে না দোস্ত এতো গুলো দিন যেহেতু অপেক্ষা করতে পেরেছি।এই কয়টা মাস নিশ্চয়ই অপেক্ষা করতে পারবো।
—-অহিন বলে,আরিশা এখন কোথায় থাকবে রাফিন?আরিশার বাবা তো তাকে বাসায় নিয়ে যাবে না।তাহলে আরিশা কি তোদের বাসায় থাকবে?
—–তোর বউ আমার বাসায় থাকলে মানুষ কি বলবে?
অহিন রাফিনের কথায় ঘাবড়ে যায়।অহিনের মুখের অবস্থা দেখে রাফিন হেসে বলে জাস্ট কিডিং দোস্ত কিছু মনে করিস না।অহিন একটু শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
রাফিন আবার বলে,যে কয়টা মাস তোদের ডিভোর্স না হচ্ছে আরিশা এখানে থাকবে।যদি তার বাবার বাসায় যাওয়ার অনুমতি থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই যেতো। এখন যেহেতু কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই এখানেই থাকতে হবে আরিশাকে।
——সিহাব বলে এটাই ঠিক হবে,আরিশা এখানেই থাকুক। তাহলে কেউ কিছু বলার সাহস পাবে না।সবাই এই কথায় একমত হয়।সিহাব বলে,রাফিন আরিশা এখানে থাকলে তোর কোনো সমস্যা নেই তো? আই মিন যাই হোক অহিন আরিশা কিন্তু এখনো লিগ্যালি হাজবেন্ড ওয়াইফ!
রাফিন বলে,আরিশা এই এক মাস এখানেই ছিলো, তাতে যেহেতু আমার সমস্যা হয়নি।আজও হবে না।সেটা নিয়ে তোরা কেউ চিন্তা করিস না। আমি আমার বন্ধুদের বিশ্বাস করি।তারা কখনও আমাকে ঠকাবে না।
রাফিনের কথা শুনের অহিনের মনের অনেক বড় ভার নেমে গেলো। কারণ আরিশার সাথে তার এক মাসের সম্পর্ক নিয়ে রাফিন কোন খারাপ ধারণা করেছে কি না,এটা নিয়ে অহিন বরাবরই একটু চিন্তায় ছিলো। আজ মনে হলো রাফিনের বিশ্বাসের মান সে রাখতে পেরেছে।
সিহাব চলে যায়,রাফিন,অহিন,আরিশা একসাথে বসে বারান্দায়, রাফিন বলে আরিশা তোর আর অহিনের ডিভোর্সটা ৫মাসের জন্য পেছাতে হয়েছে,এটা মানতেই হবে।আরশার মন এই কথাটা শুনে প্রজাপতি উড়ে।ডিভোর্সের কথা শুনে কেনো যেনো আরিশার বুক কেঁপে উঠেছিলো,মনে, দেহে এক অস্বাভাবিক যন্ত্রনা খোচা দিচ্ছিলো, এই একটি কথা শোনার পর আরিশার মনে হলো তার মনে প্রানে এক ভালো লাগার উত্তেজনা অনুভব করলো। কেনো এর উত্তর অস্পষ্ট আরিশার কাছে।আরিশার মুখের আভা পাল্টে গেছে মুহূর্তে এটা তার দুই বন্ধুর চোখ এড়ালো না।
রাফিনবলে, অনেক দিন তিন বন্ধুর একসাথে আড্ডা দেয়া হয় না।চল আমরা এটা গেটটুগেদারের ব্যাবস্থা করি, আমাদের ভার্সিটির ফ্রেন্ডদের আসতে বলবো। অনেক দিন একসাথে গান গাই না।তাই জমিয়ে গান, আড্ডা দুটো হয়ে যাবে কি বলিস তোরা?
আরিশা,অহিন একমত হয়।দুজনের মনে একই ভাবনার সৃষ্টি হয় যে বন্ধুদের সাথে একসাথে থাকলে মন কিছুটা হলেও ভালো হবে।
———————————————————————————-
রাফিন অহিনদের বাসার ছাদে বসে বসে রাতেরবেলা সিগারেট টানছে অহিন রাফিনের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে বলে,দোস্ত একা চলে এলি যে আমাকেও তো ডাকতে পারতি?
———রাফিন ফিচেল হেসে আকাশের দিকে তাকিয়ে নাকে মুখে ধোঁয়া উড়িয়ে বলে,আমরা তো সবসময় ইন্ড অফ দ্যা ডে সবাই একা,যার যার কষ্ট তার তার।কেউ কারো কষ্ট কখনও অন্যকে দিতে পারিনা।হয়তো কাউকে শেয়ার করে নিজেকে হালকা করি।কিন্তু সেই কষ্টটা কি আদৌ কখনও কমে যায়?আমার তা মনে হয়না।আর সবচেয়ে বড় কথা আমাদের একাই যেতে হবে।
———অহিনের কাছে রাফিনের কথাগুলো কেমন যেনো অদ্ভুত শোনালো,রাফিন এভাবে কেনো কথা বলছে?এই একমাসে কি সব কিছুর এতোটাই বদলে গেছে যে রাফিনের কথাগুলো ও কেমন যেনো শোনাচ্ছে?এসব ভেবে অহিন,’বলে রাফিন হঠাৎ এভাবে কথা বলছিস যে?
——— রাফিন অহিনের কাধে চাপড় মেরে বলে এতো ঘাবড়ে যাচ্ছিস কেনো অহিন,এমনি বললাম আমি।
——দুজনেই কিছুক্ষণ চুপ থাকে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবে,তাদের ভাবনাটা হয়তো কোথাও না কোথাও এক জায়গায় এসে থামে।
———রাফিন বলে,’তোর কাছে ভালবাসা মানে কি অহিন?হোয়াট ইজ লাভ?
———লাভ ইজ নট আ টেম্পরারি ফিলিং অর ইমোশন,
ইমোশনস এন্ড ফিলিংস চেঞ্জ,সামথিং ডেইলি, বাট ট্রু আনকন্ডিশনাল লাভ ইজ এবার লাস্টিং!
——ওকে গট ইট,আর কিছু?
——অহিন রাফিনের হাত থেকে সিগারেট নিয়ে নিজের নাকে মুখে ধোঁয়া উড়িয়ে বলে,”
“ভালবাসা সেটা না, যা সম্পর্কের শেষ হয়ে গেলে ভালবাসা ও শেষ হয়ে যায়,ভালবাসা সেটা যা সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর মনের গভীরে থেকে যায়”।
দুটো মানুষ যখন একে অপরকে ভালবেসে সম্পর্কে আবদ্ধ হয়,কিছুদিন যেতেই যদি সে সম্পর্কে ফাটল ধরে, আর তার যের ধরেই শেষ হয়া যায় ভালবাসা ও,তাহলে বুঝতে হবে এটা কখনও ভালবাসা ছিলো না।এটা জাস্ট একটা সম্পর্ক ছিলো!কিন্তু যদি সম্পর্কটা শেষ হয়ে যাবার পরও ভালবাসা থাকে তাহলে বুঝবি সেটাই ভালবসা।
আসলে আমি ভালবাসা বলতে যা বুঝি,তা হবে একদম স্বার্থহীন, সুন্দর, সুস্থ একটা সম্পর্ক!যেখানে দিন শেষে কি পেলাম কি পেলাম না তার হিসেব করতে হবে না।দিনশেষে মনে হবে আমি কি তাকে সবটা দিতে পেরেছি!
ভালবাসা সেটাই, যা কোনভাবেই শারীরিক কোন আকর্ষন বোধ করে না,ভালবাসা সেটাই তুই তার পাশে বসে আছিস সে তোর সাথে কোনভাবেই শারীরিক এটাছমেন্ট নয়,তারপর ও তুই নিজেকে সুখী মনে করছিস!
ভালবাসা মানে ত্যাগ, কম্প্রোমাইজ!
পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ নিজে নিয়ে তাকে ভালো রাখার নামই ভালবাসা।
——বন্ধুত্ব কি ভালবাসা অহিন?
——অবশ্যই না,আবার হ্যাঁ ও!
——— যেমন?
——সবসময় বন্ধুত্ব মানেই ভালবাসা নয়,আবার ভালবাসায় বন্ধুত্বের ভুমিকা অপরিসীম। যেমন আমরা সবাকে বন্ধু ভাবতে পারি,কিন্তু সবাইকে প্রিয়, বা প্রেয়সী ভাবতে পারি না।কারণ ভালবাসায় নিশ্চয়ই বন্ধুত্ব প্রয়োজন, কিন্তু বন্ধুত্বে সেই ভালবাসাটার দরকার হয় না।
রাফিন সিগারেটের শেষ ধোঁয়াটা উড়িয়ে দিয়ে বলে, যাচ্ছি দোস্ত কাল দেখা হচ্ছে।অহিন বলে,আরে কই যাস থেকে যা আজকে? রাফিন একটু আবার পিছিয়ে এসে অহিনকে জড়িয়ে ধরে বলে থ্যাংকস দোস্ত, এতো সুন্দর করে ভালবাসার ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য।আমি আসছি।বলেই রাফিন হনহন করে বেড়িয়ে যায়।অহিন পিছু ডাকে তাও শুনেনা রাফিন।
অহিন ভাবনায় পড়ে যায়,হঠাৎ রাফিনের ব্যাবহার কেমন যেনো অস্বাভাবিক লাগছে,কিছু একটা হয়েছে রাফিনের,তবে সেটা কি অহিন বুঝতে পারছে না।
অহিনের মনে তখন অন্য চিন্তা আসে,আরিশা আরও ৫মাস এখানে থাকবে,তাকে আরও অনেকগুলো দিন চোখের সামনে দেখতে পাবে এটাই অহিনের জন্য সুখের।ডিভোর্সের কথা যখন সিহাব বলছিলো অহিনের মনে হচ্ছিলো তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।কিন্তু যখন সবটা বললো সিহাব মনে একটু বল পেলো।এটা অন্যায় চিন্তা অহিন জানে তাও তার মন মানে না।ভালবাসলে বোধহয় এমনি হয়!আরিশাকে ছুতে না পারুক,অন্তত দেখতে তো পারবে।
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা
অহিনদের বাড়ির পেছন দিকে একটা ফুলের বাগান আছে,সেখানে খুব সুন্দর করে ফেয়ারি লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে চারপাশটা। গাছের ডালে ডালে নানা রঙের আলো দিয়ে সাজানো,দেখে মনে হচ্ছে এ কোন আলোর গাছ আলোয় আলোয় সাজানো। সবার বসার জন্য গোল টেবিল দিয়ে চারপাশে চেয়ার দেয়া হয়েছে,সবকিছু মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।এদিকটায় সুইমিং পুল আছে,চাঁদের আলোয় নীল স্বচ্ছ পানিগুলো এমন এক রুপ ধারণ করেছে যে চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।লাল,নীল, হলুদ, সবুজ রঙের আলোয় এক রোমাঞ্চকর মুহুর্ত তৈরি করেছে।তাদের সব বন্ধুরা চলে এসেছে,সবাই এসে অহিন,রাফিন,সিহাবের সাথে কথা বলছে,শুধু আরিশা আসেনি এখনো। তাদের সবার কমন ফ্রেন্ড এখানে যারা এসেছে সবাই।
রিমি আরিশার বেস্ট ফ্রেন্ড এসেই আরিশাকে খুজা শুরু করে দিয়েছে।অহিনকে বলে,’ আরিশা কই অহিন?
—আছে রেডি হচ্ছে, এখনই চলে আসবে।এই কথা শেষ না হতেই অহিন সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় আরিশা আসছে,নীল রঙের পুরো শাড়ি, পাড় মেজেন্টা রঙের, পুরো শাড়িতে ছিটা ছিটা কাজ,মেজেন্টা রঙের শাবানা কোয়েটার হাতার ব্লাউজ পরা,কানে সিলভার কালারের ইয়ার রিং, চুলে হাত খোপা করে সাদা রঙের গাজরা দেয়া,সব মিলিয়ে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে আরিশাকে,অহিন মুগ্ধ দৃষ্টিতে আরিশাকে দেখছে,সত্যি বলতে তাকিয়ে থাকার মত!
আরিশা অহিনের সামনে এসে দাড়িয়ে থেকে দেখে অহিনের কোন সাড়া শব্দ নেই, তাই হাতে তুড়ি বাজিয়ে বলে, “এই অহিন এভাবে কেবলার মত চেয়ে আছিস ক্যান?
—মোটেও আমি তোকে দেখছি না।অহিন তোতলাতে তোতলাতে বলে।
—-রিমি বলে,সে তোর তোতলানো দেখেই বুঝা যাচ্ছে।কিরে অহিন নিজের বউকে কেউ এভাবে পাবলিক প্লেসে দেখে?এভাবে দেখলে লোকে তোরে বউ পাগলা বলবে!আর ভাববে এ লোক এখানে যেভাবে দেখছে,আল্লাহ জানে বেডরুমে কিভাবে দেখে!বলেই দুষ্টু হাসি দেয় রিমি।আরিশা চোখ পাকিয়ে তাকায় রিমির দিকে,অহিন বেচেরা পুরো বোকা বনে গেছে,কিভাবে রিমি তার ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে গেলো! চারপাশে তাকিয়ে অহিন সিওর হতে চায় কেউ শুনছে কি না,তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।রিমি কলেজ লাইফ থেকেই এমন ঠোঁট কাটা মেয়ে,যা বলার সামনে বলে দিবে।আর বন্ধু হলে তো কথাই নেই।
সবাই একসাথে বসেছে,রিমি বলে আজকে ট্রুথ অর ডেয়ার খেলবো আমরা।তার আগে গান গাইবো সবাই মিলে।
রিমি বলে, প্রথম গান অহিন গাইবি তারপর আমরা।
অহিন বলে,’ঠিক আছে আমি গাইবো তবে আমার সাথে রাফিন আর আরুকে জয়েন হতে হবে।সেভাবেই অহিন গান শুরু করে।রাফিন গিটার বাজাচ্ছে।
অহিন গায়,,
আমার আগুনের ছাই জমে জমে,
কত পাহাড় হয়ে যায়।
আমার ফাগুনেরা দিন গোনে গোনে,
আর উধাও হয়ে যায়।
রাফিন চোখ বন্ধ করে সুর তুলে,,
যত পথের বাধা,
সবইতো কালো সাদা,
কবে ঠিকানা পেয়ে হবে রঙ্গীন।
অহিন আরিশার দিকে তাকিয়ে গাইছে,,
চেনা নামেরই ডাকে
আমি কি পাবো তাকে?
কবে রে আসবে সে রোদেলা দিন?
তোরই তো কাছে চাই পুরোনো কথা টাই,
শুনতে আবার করেও।
এমনও যদি হয়, মনেরা নদী হয়,
ভাসাবো অনেক দূরে।
রাফিন এখনো একইভাবে চোখ বন্ধ করে থাকে,মনে হচ্ছে রাফিন কোন কিছু নিয়ে খুব চিন্তিত। এমন একটা ভাব ধরে আছে,তাকে কেমন যেনো বিধস্ত দেখাচ্ছে!
ফেরাবো তোকে আর,
চেনাবো তোকেই,
পৃথিবী নতুন করে।
মেলাবো তোকে আজ,
আমার রঙেতেই,
বসাবো নতুন সুরে।
অহিন,রাফিন,দুজনে একসাথে গেয়ে ওঠে,
যত পথের বাঁধা,
সবইতো কালো সাদা,
কবে ঠিকানা পেয়ে হবে রঙ্গীন।
চেনা নামেরই ডাকে
আমি কি পাবো তাকে,
কবে রে আসবে সে রোদেলা দিন।
সবার হাত তালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ।আরিশা তাকিয়ে আছে দুই বন্ধুর দিকে।কেনো যেনো অচেনা লাগছে দুজনকে,কেমন একটা বিষন্নতাহ চেয়ে আছে দুজনের চেহেরায়।কি হয়েছে তাদের?আগে তো সব আমাকে জানাতো এখন কেনো জানায় না?এসব ভাবতে থাকে আরিশা।
রিমি বলে, দুজনে দেখছি ছ্যাঁকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেছিস,বিরহের গান গাওয়া শুরু করে দিছিস।
বন্ধুদের নিয়েও তো গাইতে পারিস, চল কফি হাউজ গাই সবাই মিলে,রিমির সাথে সবাই একমত হয়।
রাফিনের আঙুলের স্পর্শে বাজছে গিটার,সব বন্ধুরা মিলে গেয়ে ওঠেছে গান,
………………….
কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই
আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল
সোনালী বিকেলগুলো সেই
আজ আর নেই ।
নিখিলেশ প্যারিসে, মঈদুল ঢাকাতে
নেই তারা আজ কোন খবরে
গ্র্যাণ্ডের গীটারিস্ট গোয়ানীস ডিসুজা
ঘুমিয়ে আছে যে আজ কবরে
কাকে যেন ভালোবেসে আঘাত পেয়ে যে শেষে
পাগলা গারদে আছে রমা রায়
অমলটা ধুঁকছে দুরন্ত ক্যানসারে
জীবন করে নি তাকে ক্ষমা হায় ।
সুজাতাই আজ শুধু সবচেয়ে সুখে আছে
শুনেছি তো লাখ্ পতি স্বামী তার
হীরে আর জহরতে আগাগোড়া মোড়া সে
গাড়ীবাড়ী সবকিছু দামী তার
আর্ট কলেজের ছেলে নিখিলেশ সান্যাল
বিজ্ঞাপনের ছবি আঁকতো
আর চোখ ভরা কথা নিয়ে
নির্বাক শ্রোতা হয়ে
ডিসুজাটা বসে শুধু থাকতো ।
একটা টেবিলে সেই তিন চার ঘন্টা
চারমিনারটা ঠোঁটে জ্বলতো
কখনো বিষ্ণু দে কখনো যামিনী রায়
এই নিয়ে তর্কটা চলতো
রোদ ঝড় বৃষ্টিতে যেখানেই যে থাকুক
কাজ সেরে ঠিক এসে জুটতাম
চারটেতে শুরু হয়ে জমিয়ে আড্ডা মেরে
সাড়ে সাতটায় ঠিক উঠতাম ।
বন্ধুরা সবাই হাতে তুড়ি বাজিয়ে গাইছে,
সবার চেহেরায় কেমন আনন্দের চাপ।মনে হচ্ছে এতোদিন পর একসাথে এই গানটি গাইতে পেরে সবাই আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।অসম্ভব সুন্দর ভাবে, সুন্দর সুরে এই চিরসবুজ গানটি গায়।
সেই সাত জন নেই আজ
টেবিলটা তবু আছে
সাতটা পেয়ালা অজোও খালি নেই
একই সে বাগানে আজ
এসেছে নতুন কুঁড়ি
শুধু সেই সেদিনের মালী নেই
কত স্বপনের রোদ ওঠে এই কফি হাউসে
কত স্বপ্ন মেঘে ঢেকে যায়
কত জন এল গেলো
কতজনই আসবে
কফি হাউসটা শুধু থেকে যায় ।
কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই
আজ আর নেই
কোথায় হারিয়ে গেল
সোনালী বিকেলগুলো সেই
আজ আর নেই ।
গান শেষ করে কারো কারো চোখে পানি এসে গেছে,আসলেই এই গানটি এমন একটি গান যা এতো দিন পর বন্ধুদের কাছে পাওয়ার আবেগটাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সবাই খাওয়া দাওয়া করে নেয়,রিমি আরিশাকে নিয়ে একপাশে যায় কথা বলতে,অন্যদিকে অহিন রাফিনরা সব বন্ধু আড্ডা দিচ্ছে।
—-রিমি বলে, ‘আরিশা তুই ভালো আছিস তো? তোকে কেমন যেনো দেখাচ্ছে আগের মত হাসিখুশি নেই কেনো তুই?
—আরিশা রিমির কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে,এতোদিন কথাগুলো বলার কাউকে পাচ্ছে না,আজকে পেয়ে গেলো।তাই কান্নাটাকে আটকে রাখতে পারছে না।
আরিশা কাঁদো কাঁদো গলায় বলে,’আমি জানি না রিমি আমার কি হয়েছে।অহিনের সাথে আমার বিয়ে হওয়ার পরও আমি রাফিনকে একদিনের জন্যও ভুলতে পারিনি।কেমন যেনো অস্থির লাগতো আমার।কিন্তু কুয়াকাটা থেকে আসার পর রাফিনকে আমি খুজে ফেলাম,কাছে ফেলাম অথচ আগে তার জন্য যে ফিলিংসটা ছিলো তা এখন কেনো যেনো অনুভব করি না।রাফিন যতবার আমার কাছাকাছি এসেছে আমার মনে হয়েছে আমি কোন অন্যায় করছি,আমি এখন অন্যকারো স্ত্রী! রাফিনের কাছে আসাটা আমি সহজভাবে নিতে পারছি না।অন্যদিকে যে অহিনকে আমি বরাবর অবহেলা করেছি,বন্ধু বই আর কিছু ভাবিনি, আজকাল তার জন্য খারাপ লাগে আমার, সেদিন যখন রাফিন, আমার আর অহিনের ডিভোর্সের কথা বলছিলো, আমার মনে হচ্ছিলো আমি কিছু একটা হারাতে চলেছি,যেখানে আমার খুশী হওয়ার কথা ছিলো সেখানে আমার খারাপ লাগছে? “হাউ ইট ইজ পসিবল রিমি”?
আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা রিমি,আমি কি চাই তাও যেনো আমার কাছে স্পষ্ট নয়।আমি জানিনা আমার সাথে এসব কি হচ্ছে? আরিশা কথাগুলো বলে,কান্নায় ভেঙে পড়ে।
—-রিমি বলে,অহিন তোর কাছাকাছি এসেছে কখনও?
—-আরিশা ডানে বাঁয়ে মাথা নাড়ায়।
—-অহিন তোর কাছে থাকলে তোর কি এমন কিছু ফিল হয়,যা আগে হতো না?আই মিন হার্টবিট বেড়ে যাওয়া কিংবা মনে সুক্ষ্ণ একটা অনুভূতি হওয়া?
—–আরিশা কিছুক্ষন ভেবে বলে,হুম হয় হয়তো! কিন্তু আমি ক্লিয়ার বুঝতে পারিনা।
—–রিমি মুচকি হেসে বলে,’ইউ আর ফল ইন লাভ উইথ অহিন!
—আরিশার কান্না মুখটায় কেমন এক ফালি আতংকের দেখা মেলে।বিস্ময়ে অনেকক্ষণ কথা বলতে পারেনা আরিশা।তারপর কাঠ কাঠ গলায় বলে,হাউ ইট ইজ পসিবল রিমি?
অসম্ভব এটা হতেই পারেনা।আমি রাফিনকে ভালবাসি তাহলে অহিনকে কি করে,,,,না না এটা হতেই পারে না।
—-রিমি আরিশার কাধে হাত রেখে বলে,কোনকিছুই আমাদের হাতে নেই আরিশা,কখন কার জীবনে কি ঘটে যায় তার কোন ঠিক নেই।তুই কখন কিভাবে অহিনকে ভালবেসে ফেলেছিস তা তুই নিজেই জানিস না।আসলে আমরা যখন কোন বন্ধুর প্রেমে পড়ি তা বুঝা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়,কারণ আমরা সেটা বন্ধুত্ব না ভালবাসা তা বুঝে উঠতেই অনেকটা সময় লেগে যায়।তাই তুইও বুঝতে পারছিস না। তুই অহিনকে ভালবেসে ফেলেছিস।
—-রিমি আমি রাফিনকে ভালবাসি,তাহলে দ্বিতীয় কাউকে কিভাবে ভালবাসতে পারি?দ্বিতীয়বার কি কাউকে ভালবাসা যায়?
—–তুই যদি রাফিনকেই ভালবাসিস তাহলে রাফিনকে মেনে নিতে এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে তোর? কেনো অহিন থেকে আলাদা হওয়ার ভয় কাজ করছে তোর মনে?কেনো রাফিনকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারছিস না তুই?
আর বাকি রইলো দ্বিতীয় কাউকে ভালবাসা!কেনো মানুষ দ্বিতীয় কাউকে ভালবাসতে পারবে না।জীবনে প্রথম দ্বিতীয় বলে কোন ভালবাসা নেই,যাকে তুই ভালবাসিস সেই তোর প্রকৃত ভালবাসা।তাছাড়া বৈধতার একটা ব্যাপার আছে,যখন কোন সম্পর্কে বৈধতা চলে আসে তখন আল্লাহর আরশ থেকে সেখানে ভালবাসার সৃষ্টি হয়ে যায়।স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ঠিক এমনই এক সম্পর্ক। যেদিন থেকে তিন কবুল বলে একটা সম্পর্কে কেউ জড়ায় সেদিন থেকে আল্লাহর আরশ থেকে রহমত আসতে থাকে।সেই রহমতের কারণে স্বামী স্ত্রী একে অপরের প্রতি মহব্বত অনুভব করে,মায়া কাজ করে,সে রহমতের মায়া এড়াবে কার সাধ্য বল?তুইও মানুষ রোবট না,তাই তুইও এই নিয়মের বাইরে না।স্বামী স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্কে জড়ানোর পর তোর মনে একটু একটু করে অহিন জায়গা করে নিয়েছে।তাই এখন আর চাইলেও তোর অবচেতন মন কোন না কোনভাবে অহিনের কাছে থেকে যেতে চাচ্ছে।
রাফিনের প্রতি যে ভালবাসাটা ছিলো তোর তা কমে গেছে, তাই তুই রাফিনের প্রতি আগের মত টান অনুভব করতে পারছিস না।
রাফিন তোর বন্ধু তাই তুই এই বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতেও পারছিস না।আমি আমি কি বলছি তুই বুঝতে পারছিস আরিশা?নাকি এখনও তোর মনে কোন সংশয় আছে?
—–আরিশা ততক্ষণে একদম কঠিন হয়ে দাড়িয়ে আছে,রিমির কথাগুলো সব মেনে নিতে না পারলে ও, এড়িয়ে যেতেও পারছে না।তাই আরিশা বলে,আমার কিছু সময় দরকার রিমি।আপাতত তুই এসব কাউকে বলিস না।আমি নিজের থেকে সব ক্লিয়ার হয়ে তারপর সবাইকে জানাবো। সেই পর্যন্ত তুই আমার পাশে থাকিস।
—-রিমি আরিশার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে আরিশার দিকে তাকিয়ে অভয় দেয়,কাউকে জানাবে না বলে কথা দেয়।
রাফিন, অহিন দাড়িয়ে আছে ছাদের এক পাশে,বন্ধুরা সবাই বাসায় চলে গেছে,আরিশা রুমে ঢুকে দরজা দিয়ে দিয়েছে।অহিন,রাফিন,দুজন সিগারেটে ধোঁয়া উড়াচ্ছে নাকে মুখে।
—রাফিন বলে, আচ্ছা অহিন তুই কি আমাকে তোর সব কথা বলিস?
—অহিন নরম হেসে বলে,অবশ্যই না,কারণ কেউ যদি কাউকে বলে যে আমি তোকে আমার সব কথা বলি,তবে নিসন্দেহে সে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যে কথা বলেছে,কারণ কেউ কখনও কাউকে তার মনের সব কথা বলে না।কিছু তো এমন থাকে যা শুধু নিজের একার, যা কাউকে বলা যায় না।নিজের মনের গোপন বাক্সে যা তালাবদ্ধ থাকে।
—-রাফিন বলে, থ্যাংকস দোস্ত তোর এই একটা গুন আমার খুব ভালো লাগে,তুই কাউকে খুশী করার জন্য কিছু বলিস না।তুই সবসময় সোজা কথা বলিস!তবে আজ যদি আমি একটা প্রশ্ন করি তুই কি সেই প্রশ্নের উত্তর দিবি?
—-অবশ্যই দিবো, কি জানতে চাস বল তুই?
—-অহিন দেখ আমাকে তুই সবটা ক্লিয়ার করে বলবি।আমি সত্যি কিছু মনে করবো না।আর কষ্টও পাবো না।
—-অহিনের মুখ কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে,চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট, তবুও তা যথাসম্ভব লুকানোর চেষ্টা করে বলে,হুম বল না,কি জানতে চাস তুই?অবশ্যই সত্যিটাই বলবো।
—রাফিন আরেক ধপা ধোঁয়া ছাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,”তুই আরিশাকে ভালবাসিস”?
এই একটা বাক্যে অহিনের মনে বারবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে।মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছে করে এই বাক্যেটি তার কানের কাছে এসে বলছে।মনে হচ্ছে কেউ গরম শিসা ঢেলে দিয়েছে তার কানে।মনে প্রানে,মস্তিষ্কে তখন একটাই ভয়,রাফিন কি তবে সব জেনে গেছে?তবে কি এবার তার মনের অন্তরালের ভালবাসার প্রকাশ পেতে চলেছে?
তবে কি আপ্রাণ চেষ্টা করে যে বন্ধুত্ব ধরে রাখার চেষ্টা সে করেছে তাতে ভাঙনের সময় এসে গেছে?
আর আরিশা সবটা শুনলে কি ভাববে এটা ভাবতেই অহিনের পুরো শরীর কাঁটা দিয়ে উঠে!
তবে কি ইতি টানতে চলেছে বন্ধুত্বের আর ভালবাসার?
এই জোয়ার কাকে কোথায় নিয়ে যাবে?
#অন্তরালে_ভালবাসা
২১
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা
অহিন রাফিনের প্রশ্নে ভয় পেয়ে যায়,ভয়ে তার গলা শুকানোর অবস্থা। অহিনের মনে হচ্ছে পৃথিবী থমকে গেছে।চারপাশে শহুরে সব শব্দ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে, যা শুনতে পাচ্ছে তা শুধু রাফিনের একটি কথাই,”অহিন তুই আরিশাকে ভালবাসিস”?
এটাই বারবার অহিনের কানে প্রতিধ্বনি হচ্ছে।
—–হঠাৎ এই প্রশ্ন কেনো রাফিন?
—-জানতে ইচ্ছে হলো তাই।রাফিন কাঠ কাঠ গলায় বললো। রাফিনের চোয়াল শক্ত। মুখে গাম্ভীর্য্য ভাব।যা অহিনের মনের ভয়কে আরও দিগুণ করে দিচ্ছে।
—ডু ইউ লাভ আরিশা? প্লিজ আনসার মি অহিন?
——আই ডু নট হোয়াট ইজ লাভ!বাট ইয়াহ!আই ডু ইউশ ফ্রম দ্যা বটম অব মাই হার্ট দ্যাট আরিশা নেভার হেজ টিয়ারস ইন হার আইছ”
দ্যাট শি ওয়াজ কিপ স্মাইলিং, ইফ দ্যাটস হোয়াট ইউ কল লাভ।দেন লাভ ইট ইজ!”আই থিংক ইটস ফ্রেন্ডশিপ লাভ”
—–ওয়াহ অহিন ইজ ইট?ইটস অনলি ফ্রেন্ডশিপ লাভ?রাফিন কেমন রহস্যময় গলায় বলে।
—–ইয়াহ! রাফিন ইট ইজ।কঠিন গলায় বলে।
—ওকে ডান।আমি সবটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তোর ভালবাসা একটু বেশী বন্ধুত্বের চেয়ে।তুই আরিশার কান্না সহ্য করতে পারিস না।তার মুখে হাসি দেখলে তুই খুশী থাকিস।আই থিংস ইট ইজ রিয়েল লাভ!
—–হোয়াট ডু ইউ মিন রাফিন!আমার আর আরিশার বন্ধুত্ব কি তোর কাছে ফেইক মনে হচ্ছে?
—-ফেইক না অহিন,আমার মনে হচ্ছে তুই আরিশাকে ফ্রেন্ড থেকে একটু বেশী ভাবিস,আই মিন তুই আরিশাকে তোর বউ ভাবিস!আকাশের দিকে তাকিয়ে নাকে মুখে ধোঁয়া ছেড়ে রাফিন চোয়াল শক্ত করে কথাগুলো বলে।
—এই মুহুর্তে অহিনের ভেতরটা ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে।রাফিন কি করে সত্যিটা জানলো?কি করে এটা সম্ভব? এসব ভাবতে ভাবতেই অহিনের প্রান বেড়িয়ে যাচ্ছে। রাফিনের সামনে সোজা হয়ে থাকতে পারছে না।আবার দুর্বল হয়ে কথা বললে রাফিনের কথাগুলোকে স্বীকার করে নিয়েছে বলে মনে হবে।তাই যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রেখে অহিন বলে। তুই পাগল হয়ে গেছিস রাফিন?
কিসব আবোল তাবোল বকছিস?
—-আমি একদম সত্যি বলছি অহিন।তুই কি অস্বীকার করতে পারবি এই সত্যিটা?তুই মিথ্যে বলতে পারবি আমার সাথে?
—-অহিন চুপ করে থাকে।কিছুক্ষন তারপর লম্বা দম নিয়ে বলে।তোর সাথে এখন কথা বলাই বেকার রাফিন।তোর মাথা ঠিক নেই।আমার মনে হচ্ছে তুই নেশা করে আছিস?
তাই কি বলছিস তুই নিজেই জানিস না।
——-আমি একদম ঠিক আছি অহিন,দৃঢ় গলায় বলল। আর আমি যা বলছি সব সত্যি বলছি।তোর লুকানো ডায়েরি আমি পড়ে ফেলেছি অহিন।সরি তোর অনুমতি ছাড়া আমি তোর গোপন জিনিসে হাত দিয়েছি।কিন্তু বিশ্বাস কর এটা আমি ইচ্ছে করে করিনি।ব্যস হয়ে গেছে।
আমি তোর লাইব্রেরি রুমে গিয়েছিলাম কিছু বইয়ের জন্য।হঠাৎ ডায়েরিটা পড়ে যায় মাটিতে আর কয়েকটা পেজ খুলে যায়,যেখানে বড় বড় করে লেখা আছে,
“আই লাভ ইউ আরু””
এই কথাটা আমাকে তোর ডায়েরি পড়তে বাধ্য করে।
তোর সাথে আরিশার প্রতিটি ছোট খাটো বিষয় সব লেখা আছে সেখানে।অদ্ভুত ভাবে আমি সেদিন আবিষ্কার করলাম কই আমিতো কোনদিন এভাবে ভেবে ভেবে আরিশার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা লিখে রাখিনি।আমি ভেবেছি আরিশাকে আমি পেয়ে গেছি।তাই লিখে রাখতে হবে কেনো?
কিন্তু তোর লেখা প্রতিটি লাইনে আমি আরিশার প্রতি তোর ভালবাসা দেখেছি।
আর তুই আমার কাছে অস্বীকার করছিস, তুই আরিশাকে ভালবাসিস না!এটাই কি তাহলে বন্ধুত্ব অহিন?
তুই যদি সেদিন অসুস্থ না হতি, হয়ত আরিশা তোকেই ভালবাসতো তোর হতো। কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় হলো। আরিশা আমাকে ভালবেসে ফেললো। যদিও ভালবাসা কি সেটা ঠিক তখন আরিশা খুব একটা বুঝতে পারতো না।আবেগে আমার দেয়া প্রপোজাল সে গ্রহণ করে নিলো।
আর এভাবেই শুরু হলো। আরিশা রাফিনের সম্পর্ক।
আর তাতে চাপা পড়ে গেলো অহিনের ভালবাসা।যদিও তা একতরফা ভালবাসা।তাই এর চেয়ে কি বা পাবি তুই?
তোর জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে অহিন।
তুই আমাকে তো বলতে পারতি অহিন।আমাকে তুই আসলে বন্ধু কখনওই ভাবতে পারিস না।যদি বন্ধু ভাবতি তুই সব আমাকে খুলে বলতি।
—–অহিনের দিকে উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকে রাফিন।অহিনের চেহেরায় কেমন একটা অসহায় ভাব চলে এসেছে।মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় মনের ড্রয়ারের গোপন বাক্সে তালাবদ্ধ সত্যিটা যেনো কেউ এসে তালা খুলে দিলো। আর সব এক এক করে বেড়িয়ে এলো।এই হীম শীতল বাতাসেও অহিন ঘামছে।তার মুখে জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।সেই ঘামের মাঝে কপালে চিন্তার রেখা গুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
অহিন বলে,তুই তো সব জেনে গেছিস আমাকে আর জিজ্ঞেস করে কি লাভ?তবে এটা বলতে পারি তুই নিশ্চিতে থাকতে পারিস আমি আরুকে এখন আর ভালোবাসি না।আমি শুধু তাকে বন্ধু ভাবি।
—–রাফিন অহিনের পিঠ ছাপড়ে বলে, শালা তুই আসলেই একটা হারামি।যাকে ভালবাসিস তাকে কাছে পেয়েছিস কিন্তু তাকে নিজের করে নিতে পারলি না।মহান হয়ে রইলি।তবে তুই যেহেতু এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারিসনি তাই তোকে আমি আর সুযোগ দেবো না।আমিই আরিশাকে বিয়ে করবো। তুই যেহেতু এতো গুলো দিনেও আরিশাকে আপন করতে পারিস নি।আর পারবি ও না।তাই তোর উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরিশাকে ভুলে যাওয়া। আর অন্যকাউকে আপন করে নেয়া।তোর জীবনে তুই সেটেল হয়ে যা আমি এটাই চাই অহিন।একজনকে তো ভালবেসে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়া যায় না।তাছাড়া আরিশা তোকে ভালবাসে না।।তাই আরিশাকে ভুলে যা।আরিশা তোকে ভালবাসলে তোকে আমি দিয়ে দিতাম আরিশাকে কিন্তু এখন তা সম্ভব না।।কারণ আরিশা তোকে।ভালবাসে না।
—অহিন এতোক্ষনে প্রান ফিরে পেলো।মনে হচ্ছে বুকের উপর যে পাথর চাপা দিয়ে রেখেছিলো তা নেমে গেলো। আজ থেকে অন্তত রাফিন থেকে লুকানোর কিছু থাকলো না।
রাফিন আবাস বলে উঠে আমি ৫মাসের জন্যও দেশের বাইরে যাচ্ছি অফিসের কাজে।এসেই আরিশালে ঘরে তুলে নিবো।সেই পর্যন্ত তুই আরিশার যত্ন রাখিস অহিন।
—-অহিন বলে,এখন কেনো বাইরে যেতে হবে তোকে।পরে যাস।
—-না অহিন।পরে গেলে হবে না।অফিস থেকে নির্দেশ দেয়া আছে। না গেলে চাকরি থাকবে না।
—-না থাকলে না থাকবে তুই আমাদের অফিসে জয়েন করিস।
—নারে অহিন তোর অনেক ঋন এখন আর তা বাড়াতে চাচ্চি না।আমি ভেবেছিলাম বিয়ের পর আরিশাকে নিয়ে যাবো।কিন্তু এখন তো তা সম্ভব নয়। তাই আমি বিয়ের পর আবার আরিশাকে ঘুরতে নিয়ে যাবো।
ফিরে এসেই ধুমধাম করে বিয়ে করবো।
অহিন অনেক বাধা দেয়ার পরও রাফিন মানে না।কারণ অফিসেরর কাজ তার কাছে খুবই গুরুত্বপুর্ন।তাই যেতেই হবে।অহিন সম্মতি জানালে রাফিন এসে অহিনকে জড়িয়ে ধরে বলে থ্যাংকস দোস্ত। তুই সব সময় ভালো থাক এটাই দোয়া করি।রাফিন অহিনকে অনেকক্ষণ বুকে জড়িয়ে রাখে।এমন অবস্থা ভাবছে ছেড়ে দিলে বুঝি হারয়ে যাবে।
অহিনও বন্ধুকে শক্ত করে ধরে। তারপর রাফিন হনহন করে বেড়িয়ে যায় অহিনের সামনে থেকে।অহিন বন্ধুর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে চোখের কার্নিশ বেয়ে।কেমন যেনো মনে হচ্ছে এই সুন্দর বন্ধুত্বটা সে হারাতে চলেছে।জীবন এতো কঠিন কেনো?
চলবে,,,
চলবে,,,,