অন্যরকম প্রেমানূভুতি পর্ব ৪

#অন্যরকম_প্রেমানুভূতি
#অস্মিতা_রোদৌসি
#part______4
কে বলেছে আমি এখনো আপনাকে ভালোবাসি???
আমি আপনাকে আর ভালোবাসিনা।আমি আপনাকে ঘৃণা করি শুধুই ঘৃণা। বেঈমান কোথাকার।

এটুকু বলে নিজের হাত থেকে রিদ ভাইয়ার হাতটা ঝটকিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে ছাদ থেকে দ্রুত নেমে গেলাম।

চোখে জমে গেছে কষ্টের নোনাজল।অদ্ভুত যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে এই হৃদয় আমার।রিদ ভাইয়াকে দেখলে রাগে দুঃখে নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করেছে।আজকের এই পরিণতির জন্য আমিই দায়ি। আমি যদি রিদ ভাইয়াকে এতটা ভালোনা বাসতাম, না বিশ্বাস করতাম তাহলে এমন হতোই না।

৬ মিনিট আগের কথা….

কিছুক্ষণ আগে ছাদে গিয়েছিলাম শুকনো কাপড় গুলো তুলতে। ছাদে উঠতেই রিদ ভাইয়া আমার হাত টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আর বলে_____

মেঘু সত্যি কি তুই এই বিয়েতে খুশি???

___ অবশ্যই।আমি খুব খুশি।মনের মতো একজনকে পেয়েছি।হ্যান্ডসাম,স্টাইলিস,একজন বড় ইন্জিনিয়ার,
বলতে গেলে সব__ সব দিক দিয়ে পারফেক্ট একজন মানুষ তিনি।তাহলে এমন একজনকে নিজের স্বামী হিসেবে পেয়ে আমি কেন খুশি হবোনা??!!! আজব!!!
ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম আমি।

___ মেঘু তুই আমাকে ভালোবাসিস তাহলে অন্যকাউকে???রেগে বললো রিদ ভাইয়া।

(— তারপরেরটুকু তো আপনার জানেন ওই….)

রুমে বসে এসব ভাবছি তখনি দরজায় কেউ কড়া নাড়লো।চোক মুছে দরজাটা খুললাম।দরজার বাইরে নীলা দাড়িয়ে আছে।

ও দুপাটি দাঁত বের হেসে রুমে ডুকলো।

___কিরে তুই এই সময় এইখানে???অবাক হয়ে বললাম আমি।

___ কেন আমি আসতে পারিনা বুঝি??এখন এটা আমার ভাবির বাড়ি তো আমি যখন তখন আসতেই পারি।হুমমম!

____ হয়েছে হয়েছে আর ন্যাকা সাজতে হবে না।এবার বল কেনো এসেছিস?

____আজ এখানে থাকবো।ভাইয়াও এসেছে।আর বাবা আজ কোম্পানির কাজে মালোশিয়া গিয়েছে। তোর আব্বু মানে আঙ্কেল আমাদের আজ ইনভাইট করেছে।
বললো নীলা।

তখনি রুমে ডুকলো মিঠি, টিয়া।সবাই এসেই আমাকে দেখে মিঠি মিটি হাসতে লাগলো।বাট এর কারণটা আমি বুঝলাম না।

___কিরে তোরা আমাকে দেখে হাসতেছিস কেন??
ভ্রু কুঁচকে বললাম আমি।

____আমাদের হ্যান্ডসাম দুলভাইয়ের চোখ দুটো মেঘলা আপুকে খুঁজছে।এত সুন্দর সুন্দর শালি থাকা সত্বেও।
বললো টিয়া।

____সেটা তো অবশ্যই।আমার ভাই অন্যদের মতো লুচু না।সে শুধু তার হবু বউকে দেখবে।আর কাউকেই নয়।
বললো নীলা।

____ হ্যাঁ হ্যাঁ সেটা ঠিক বলেছো।দেখতে হবে না দুলাভাইটা কার মিঠি টিশার্টের কলার ঝুকিয়ে বললো।

তোরা থাক তোদের দুলাভাইকে নিয়ে আমি গেলাম।বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম।দুলাভাই দুলাভাই করে আমার কানটা ঝালাফালা করে দিলো আল্লাহ।
বিড়বিড় করে এসব বলতে বলতে সিড়ি দিয়ে নামতে গেলে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়তে নিলেই কেউ আমাকে ধরে ফেললো।ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ হয়ে গেলো।পিট পিট করে চোখ খুলে দেখলাম মিস্টার অভ্র আমার কোমড় জড়িয়ে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে।তার এমন করে তাকানোতে আমার অস্বস্থি লাগছিলো।

___এইযে ছাড়ুন আমায় আর কতো দেখবেন আমায় হুম??নিজের হবু বউকে এমন ভাবে দেখছেন যেন জিবনে কোনোদিন দেখননি।দুষ্ট হেঁসে বললাম আমি।

উনি আমার কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলেন।হালকা কাশি দিয়ে আমাকে দাঁড় করিয়ে কিছুটা দূরে সরে গেলেন তিনি। আমি এবার তার কাছে গিয়ে পায়ের পাতা উঁচু করে তার গলা জড়িয়ে ধরলেন।তিনি আমার এহেন কান্ডে হতভম্ব হয়ে গেলেন।বোঝার চেষ্টা করছেন আমাকে হয়তো।

___ কি ব্যাপার স্যার হুম?? আপনাকে কিন্তু আজ অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।চোখ মেরে তাকে বললাম।

___ আর ইউ ওকে?? চোখ বড় বড় আমার দিকে তাকিয়ে বললেন তিনি।

___ আমি তাকে অবাক করে তার ডান গালে টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বললাম আমি ___ হ্যাঁ ডিয়ার হবু হাজবেন্ড আমি ঠিকই আছি।বলে হাসতে হাসতে নিচে নেমে গেলাম।তিনি আমার দিকে এখনো অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে।

নিচে গিয়ে হাফাতে লাগলাম।

ওফফফফফ মেঘা তোকে সেরা অভিনেত্রীর এয়ার্ড দেয়া উচিত ছিলো।কি অভিনয়টা না তুই করলি!!! নিজেই নিজেকে বললাম।

ওনার অত কাছে গিয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।বুকটা ধকধক ধকধক করছিলো।ভয় হচ্ছিলো৷ যদি হনুমানটা কষিয়ে আমায় দুটো চড় বসিয়ে দিতো তখন???এখন না জানি এখন আমাকে কি ভাবছেন তিনি।

সে যাই হোক একজনকে তো জ্বলতে দেখেছে।এতে আমার এই ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ে মলম লাগানোর মতো কিছুটা শান্তি পেয়েছি।

কিছুক্ষণ আগের____ যখন আমাকে মিস্টার অভ্র আমাকে পড়ে যেতে নিলে ধরে ফেললেন।তখনি চোখ খুলেই আগে আমার চোখ পড়েছে রিদ ভাইয়ার উপর। তিনি ঠিক মিস্টার অভ্র ভাইয়ার পেছনে উপরে রেলিং এ হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন।আর রিদ ভাইয়াকে জ্বালাতে এই কান্ডটা করলাম।

এসব ভাবছি তখনি আমাকে ডাকলো আম্মু।

___মেঘা এদিকে আয়তো একটু মা।

___ কি হয়েছে মা।বলো??

___এগুলো ধর।এগুলো নিয়ে ছাদে যা।ওখানে ছোটরা সবাই আছে।কিছুক্ষন ওখানে আড্ডা দিবে নাকি মিঠিরা।

____ ওহ আচ্ছা।
দাও বলেই নাস্তার ট্রে টা হাতে নিয়ে উপরে গেলাম।উপরে কেউ নেই হয়তো সবাই ছাদে আছে।তাই ছাদে দিকে গেলাম।

ছাদে সবাই গোল বসে আছে রিদ ভাইয়াও আছে।
আমি গিয়ে নাস্তার ট্রে টা টি টেবিলে রাখলাম।

তখনি চোখ গেলো অভ্র ভাইয়ার উপর। তিনি ছাদের এক কোণে দাড়িয়ে ফোনে হয়তো কারো সাথে কথা বলছেন।

___ মেঘ আপু বস বলে আমার হাত টেনে টিয়ার পাশে বসিয়ে দিলো মিঠি। টিয়ার আরেক পাশে বসলো মিঠি।

মুহিত ভাইয়ার পাশে নীলা তার আরেক পাশে রিদ ভাইয়া।আর তার পাশেই হয়তো অভ্র ভাইয়া বসবেন।

____ মেঘা আপু একটা গান গা।বললো মিঠি।

____ না না আমি গান পারিনা।

___ না তোকে গাইতেই হবে।প্লিজজজজজ

____ হ্যাঁ তোকে গাইতেই হবে।বললো নীলা।

____ হ্যাঁ নয়তো তোকে নাঁচতে হবে।কি বলিস সবাই
বলে উঠলো মিঠি।মিঠির কথা সাড়া দিলো রিদ ভাই ও অভ্র ভাইয়া বাদে সবাই।

___ এই না না আমি গান গাবো বাট নাঁচতে পারবোনা।
প্লিজজজ।তোরা তো জানিস আমি নাচতে পারি না।
মিনতি কন্ঠে বললাম আমি।

____ তাহলে গান গাওয়া স্টাড কর।তোর গান দিয়েই আড্ডা শুরু।বললো নীলা।

চোখ বুঝে গলায় সুর তুললাম______

দিলকা দারিয়া বে হি গায়া
ইস্ক ইবাদাত বানেহি গায়া
খুদকো মুঝে তু সাব দে
মেরি জারুরাত তু বান গায়া

বাতে দিলকি না নাজরোনে কি
সাচ কে রাহা তেরি কাসাম

তেরে বিন আব লেগে একভি দাম
তুঝে কিতনা চাহনে লাগে হাম (২)

[বাকিটুকু নিজ দায়িত্বে শুনে নেবেন। আর কোনো ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন]

গান শেষ হতেই সাবাই তালি দিতে লাগলো।আমার চোখ গিয়ে পড়লো অভ্র৷ ভাইয়ার উপর।তিনি অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন আমার দিকে ।আমি তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।

অভ্র অবাক হয়ে তার প্রেয়সিকে দেখছে।পুরো স্তব্ধ হয়ে গেছে সে।মেঘার গান শুনে।গানটা অভ্রর আগে থেকেই
খুব পছন্দের আর না চাইতেও আজ সে তার প্রিয় গানটা প্রিয় মানুষটার মুখে শুনলো। অনুভূতিটা পুরোপুরি ভাবে অন্যরকম।

____ জিজু এসে এখানে।বললো টিয়া।

ওনি এসে বসলো রিদ ভাইয়ার পাশে।

____ জিজু একটা গান গাওনা প্লিজজ??আপুকে ডেডিকেট করে।বললো মিঠি।

____ হ্যাঁ ভাইয়া প্লিজজজজ। বললো নীলা।

ওকে ওকে। আমার শালিকারা যেহেতু আবদার করেছে সেহেতু অবশ্যই।

____ মেঘলা আপু দেখ আমাদের জিজু কতটা ভালো।
হেসে বললো টিয়া।

আমি টিয়ার কথা শুনে মুখ বকালাম বাট কিছু বললাম না।

____ অভ্র গাইতে শুরু করলো____

তোর বর্ষা চোখে ঝড়তে দেবনা বৃষ্টি
তুই জাগবি সারা রাত আমি আসবো হঠাৎ (২)

তোর শুকনো ঠোঁটে ফোটাবো
প্রেমের হাসি…

তোকে প্রাণের চেয়ে বড় বেশি ভালোবাসি
তোকে প্রাণের চেয়ে বড় বেশি ভালোবাসি।

(বাকিটুকু নিজ দায়িত্বে শুনে নেবেন)

এদিকে সবাই মুগ্ধ হয়ে অভ্র ভাইয়ার গান শুনছে।
শুধু রিদ ভাইয়া বাদে।তিনি রাগী রাগী ভাব নিয়ে বসে আছে।চোখ গুলো তার লালচে আভায় ছেঁয়ে গেছে।

👉চলবে…..

[গল্পে কিছু যায়গায় নাইকার নাম মেঘা থেকে মেঘলা হয়ে যায় এটা আমার না আমার কিবোর্ডের দোষ…]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here