অপরাজিতা পর্ব -০৪

#অপরাজিতা
#৪র্থ_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

রাজিতাকে দেখেই ওর চাচা ওর চাচিকে বলল,

–“আরে বাসায় নতুন জামাই এসেছে, আর তুমি এখানে কি করছো? যাও ওদের খেতে দাও কিছু।”

রাজিতার চাচি মুখটা কালো করে রাজিতার দিকে তাকালো যেন, এক্ষুনি ওকে চিবিয়ে খাবে। রাজিতা ওর চাচির এমন রূপের কারণ বুঝে গেছে। কিন্তু আনানের সামনে সেটা প্রকাশ করতে চাইলো না।

–“কেমন আছো, ছোট আম্মু?”

বলেই ওর চাচিকে জড়িয়ে ধরল। ওর চাচি ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

–“তুই আর তোর চাচ্চু যেমন রেখেছিস!”

ওর চাচির এমন কথায় রাজিতা কি উত্তর দিবে ভেবে পায়না। যে হাসিমুখ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে ও ওর চাচির সাথে দেখা করতে গিয়েছিল তার ছিটেফোঁটাও আর নেই।

আনান রাজিতার মনের অবস্থা বুঝতে পারলো। ও প্রথমেই ওর চাচি শাশুড়ীকে সালাম দিলো,

–“আসসালামু আলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন?”

–“তুমি যে কাজটা করলে বাবা! এটা কি মোটেও ঠিক!”

–“আপনার কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না?”

–“আমার মেয়েটাকে এভাবে কেন ঠকালে?”

–“ঠকালাম কোথায়?”

–“আমার মেয়েটাকে কেন বিয়ে করলে না? কেন এমন নাটক করে আমাদের ভড়কে দিলে? ”

–“কেন? আপনাদের ঘরের মেয়েকেইতো বিয়ে করেছি। খুশি হননি?”

উনি আনানের কথার কোনো উত্তর দিলেন না। রাজিতার চাচা উনার দিকে চোখ গরম করে তাঁকিয়ে আছেন।

–“তোমরা ফ্রেস হয়েছো? চলো কিছু নাস্তা করে নাও। রাজিতা ওকে নিয়ে আয়।”

রাজিতার চাচি কথাটা বলেই ওখান থেকে চলে যেতে লাগলেন। আনান উনাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

–“আসলে আন্টি আমরা নাস্তা করেই এসেছি। রাজিতা আপনাদের দেখতে চাচ্ছিলো তাই নিয়ে আসছিলাম৷ আমরা এখনি চলে যাবো। তাইনা রাজিতা?”

বলেই রাজিতার দিকে তাকায় আনান। রাজিতা বুঝতে পারল যে, এখানে থাকলে ওর চাচি আর চাচাতো বোনদের কথা শুনতে হবে, যা হজম করার ক্ষমতা হয়ত ওর এখন নেই। তাই আনানের সাথে সায় দিয়ে বলল,

–“হ্যাঁ ছোট আম্মু। তোমাদের দেখার জন্য এসেছিলাম। এখন আসি।”

ওর চাচা বলে উঠলেন,

–“মাত্র আসলি, আর এখনি চলে যাবি?”

–“এখন কি আর আমরা কেউ আছি ওর! এত ভালো স্বামী পেয়েছে, শশুরবাড়ি পেয়েছে, ওরাইতো এখন ওর সব৷ যা, যাবিই যখন আসছিলি কেন?”

রাজিতার খুব কান্না পাচ্ছে। অনেক কষ্টে তা আটকে রেখেছে। আনান ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,

–“আসলে আপনারা কিছু মনে করবেন না৷মা বারবার বলে দিয়েছে যেন তাড়াতাড়ি ফিরি। কে নাকি আসবে রাজিতাকে দেখতে। তাই আর থাকতে পারছি না। আরেকদিন এসে থাকবে ও।”

ওর চাচাও আনানের কথায় আঁচ করতে পেরেছিলেন যে, ও রাজিতাকে এখান থেকে কেন নিয়ে যেতে চাইছে। নিশ্চয়ই ওর চাচির বলা কথাগুলো সব শুনেছে৷ কিন্তু ওর চাচিতো উনাকে দোষারোপ করছে৷ উনি কিভাবে বোঝাবেন যে, রাজিতার সাথে বিয়ের আগে পর্যন্তও জানতেন না যে আনান পুরোপুরি সুস্থ। আর সবচেয়ে বড় কথা যে, রাজিতার এত ভালো একটা বিয়ে হয়েছে জন্য উনারতো খুশি হওয়ার কথা। তা নয়….

–“চাচ্চু, আমরা আজ তাহলে আসি। চাচি আসি৷ নিলা আপু আর রিমি কোথায়?”

রাজিতার চাচি আর কিছু বলছেন না। উনি নিজেও রাজিতাকে কিছুটা হলেও ভালবাসতেন। কিন্তু আজ আনানকে দেখার পর কেন জানি উনি রাজিতাকে ওর পাশে সহ্য করতে পারছেন না। যেখানে উনার মেয়ের থাকার কথা ছিলো, সেখানে রাজিতা!

–“আছে ওরা কোথাও! তোরা থাকবিইনা যখন তাহলে কিছু একটা নাস্তা করে যা। তোর ছোট আম্মু এত কষ্ট করে রান্না করেছে।”

রাজিতা ‘হ্যাঁ’ বলতে যাবে, তখন আনান ওকে কিছু বলতে না দিয়ে বলল,

–“সরি আন্টি, মাত্রই খেয়ে এসেছি। কথা দিচ্ছি, আরেকদিন এসে আপনার সব রান্না টেস্ট করে যাবো। আজ আমার একটা কাজ আছে। রাজিতাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমি আবার একটু বাইরে যাবো।”

বলেই ওর চাচা-চাচিকে বিদায় জানিয়ে রাজিতাকে নিয়ে বাইরে চলে আসে। ওর চাচি মূর্তির মতো ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। ওর চাচা ওদের এগিয়ে দিতে বাইরে আসলো। নিলা আর রিমিকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।

রাজিতার খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে, ওর চাচি ওদের জন্য এত আয়োজন করে রান্না করেছে আর ওরা সেটা না খেয়েই চলে আসলো!

রাজিতা বারবার পিছন ফিরে দেখছে। একদিনের ঝড়ে ওর সবকিছু এভাবে শেষ হয়ে যাবে কে জানত৷ যারা ওকে ভালবাসত তারাই ওকে ভুল বুঝছে, যাদের ও পরিবার ভাবতো তারাই ওকে শত্রু ভাবছে! কেন! ও কি আসলেই এ পরিবারের কেউ ছিলো না! সবটাই মিথ্যে মায়ার জাল!

গাড়িতে উঠতে যাবে তখন আনানের একটা কল আসলো। আনান কলটা রিসিভ করে কথা বলতে লাগলো। তখন রাজিতার নিজের ফোনের কথা মনে পড়লো। কাল থেকে ওর ফোনটা ওর কাছে নেই। এইজন্যইতো ওর কেমন খালি-খালি লাগছিলো।আনানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

–“আমার একটা জিনিস নিয়ে এক্ষুনি আসছি।”

–“এখন আরকিছু আনতে হবেনা। আংকেলকে বলে তোমার যা যা প্রয়োজন পাঠিয়ে দিতে বলব। এখন চলো৷ আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

–“তাহলে আপনি চলে যান। আমি পরে চাচ্চুর সাথে চলে যাবো।”

আনান ধমকের সুরে বললো,

–“তুমি এখনো এখানে থাকার বায়না ধরছো? সবার এক্সপ্রেশন দেখে বুঝতে পারছো না, ‘ইউ আর নট ওয়েলকামড হেয়ার এনিমোর’! আমাকে দেখার পর থেকে কেউ আর তোমাকে পছন্দ করছে না। তুমি কি একেবারেই কঁচি খুকি নাকি যে, কিছুই বুঝো না?”

রাজিতা আনানের লজিক বুঝতে পারলো। ওতো বোকার মতো এটা ভেবে খুশি হয়েছিলো যে, আনানকে দেখে ওরা ভীষণ সারপ্রাইজড হবে আর খুশিও হবে। কিন্তু এমনটা হবে তা ও বুঝতেই পারেনি।

–“আচ্ছা, ঠিক আছে।আমি তাহলে শুধু ফোনটা নিয়ে আসি।”

বলেই আবার বাসার ভেতরে চলে গেলো রাজিতা।

রাজিতা আবার বাসায় ঢুকে দেখলো যে, সবাই বাইরেই আছে।ও ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি এনে সবার দিকে তাকালো এইভেবে যে, হয়ত ওরা ওর সাথে কথা বলবে, ওকে থাকতে বলবে। কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। সবাই যেন রাজিতার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।ওর চাচ্চু যেন কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।

রাজিতা ফোন নিয়ে সোজা গাড়িতে চলে গেলো৷ এইবার আর চোখের জলটাকে আটকে রাখতে পারলো না। কান্নাগুলো বৃষ্টির মতো ঝড়তে লাগলো। চোখের জলগুলো মোছার প্রয়োজনও মনে করলো না।

আনানকে দেখে ওর কান্না আরো বেড়ে গেলো। ও আনানকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলো,

–“আপনি কেন এমনটা করলেন?নিলা আপুকে বিয়ে করলে কি এমন হতো? কেন আমার জীবনের ভালবাসার মানুষগুলোকে এভাবে কেড়ে নিলেন?”

গাড়ি চলতে শুরু করেছে। আনান বুঝতে পারলো যে রাজিতা অনেক কষ্ট পেয়েছে। আনান রাজিতাকে বলল,

–“তুমি যাকে পরিবার ভাবছো তারা কি আদৌ তোমাকে পরিবার ভাবে? তুমি যাদের আপন মানুষ ভেবে কষ্ট পাচ্ছো তারা কি আদৌ তোমাকে আপন ভাবে?”

–“আপনি কি বলতে চাইছেন? আমার চাচ্চু আমাকে ভালবাসেনা? আমার ছোট আম্মু আমাকে ভালবাসে না? সব দোষ আপনার। আপনার জন্য সবাই আজ আমাকে ভুল বুঝছে। সবাই ভাবছে যে, আমি জেনেশুনে নিলা আপুর বরকে কেড়ে নিয়েছি। সবাই এটা কি করে ভাবতে পারলো!”

রাজিতার কান্নাগুলো যেন চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। আনান ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে,

–“আমি মানছি সব দোষ আমার। তুমি আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে? আচ্ছা কয়েকটি বাদ দাও, জাস্ট দুটো প্রশ্নের জবাব দিবে।”

–“বলুন। আপনার যত প্রশ্ন আছে বলে ফেলুন। আমার জন্যতো এবাড়ির দরজা বন্ধ হতে চলেছে, শুধুমাত্র আপনার খেয়ালীপনার জন্য!”

–“তুমি কি এই বিয়েটাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছো না? এখন আমি তোমার স্বামী! তুমি বারবার এসব বলে কি প্রমাণ করতে চাইছো? ”

–“আচ্ছা আপনি আপনার প্রশ্ন করুন।”

আনান রাগটাকে একটু কন্ট্রোল করে বলল,

–“প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে,’ তোমার চাচা-চাচি যেখানে নিজের মেয়েদের বিয়ে দিলেন না সেখানে তোমাকে কেন জোর করে বিয়ে দিলেন?’ আর দ্বিতীয় প্রশ্ন,’আজ যখন উনারা সবাই আমার সম্পর্কে সত্যিটা জানতে পারলেন তখনতো সবার অনেক বেশি খুশি হওয়ার কথা ছিলো, উনারা খুশি না হয়ে কেন তোমাকে আর তোমার চাচাকে ভুল বুঝছে?'”

প্রশ্ন দুইটা শুনেই রাজিতার কালকের কথাগুলো মনে পড়ে গেলো। ওর অন্য দুইবোনের মতো ও নিজেওতো চাচ্ছিলো না আনানকে বিয়ে করতে। শুধুমাত্র ওর চাচ্চু আর ছোট আম্মুর অনুরোধে ও বিয়ে করেছিলো। আর তারপর থেকে চোখের জলগুলো যেন বাধ মানছে না।

আনানের প্রশ্ন দুইটা রাজিতার মনে অনেক বড় একটা দাগ কেটে গেলো। আসলে আনান কেন এমন করলো? কেন এমন কথা বলে ওর চাচ্চুদের প্রতি বিদ্বেষ তৈরি করছে? আনান আসলে কে? রাজিতা কিছুটা ভয় পেতে থাকে। কারণ আজকে যেটা হলো তারপর রাজিতার চাচি কখনও ওকে সহজভাবে মেনে নেবে না৷ ওর চাচিকে ও ভালভাবেই চিনে।

রাজিতাকে চুপ করে থাকতে দেখে আনান বলল,

–“কি হলো? এখন চুপ হয়ে গেলে কেন?”

রাজিতার কান্নাগুলো এখন থেমে গেছে। চোখের জলগুলো ওভাবেই শুকিয়ে গেছে। শুকনো মুখে রাজিতা বলল,

–“আমিওতো আপনাকে বিয়ে করতে চাইনি। তাহলে আমার আর নিলা আপুর মধ্যে পার্থক্য কি?”

–“সেটা তোমার না জানলেই চলবে।”

–“কেন জানব না? আমি জানতে চাই।”

ততক্ষণে রাজিতারা বাসায় পৌঁছে গেছে৷ আনান রাজিতাকে বলল,

–“মাকে কিছু বলার দরকার নেই। বলবে যে, আমি আর থাকতে দিলাম না তোমাকে। সবার সাথে দেখা করিয়ে নিয়ে এসেছি। আমি একটু বাইরে যাচ্ছি। একদম কান্নাকাটি করবে না আর। আমি তাড়াতাড়িই ফিরে আসব।”

বলেই গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিতে লাগলো, রাজিতা চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,

–“আমার প্রশ্নের উত্তরগুলো কিন্তু এখনো পাইনি মিস্টার আনান রেদোয়ান! উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।”

রাজিতা ওর শাশুড়ীকে আনানের শিখিয়ে দেওয়া কথাগুলো বলল। ওর শাশুড়ী ওকে বলল,

–“আচ্ছা, ভালো হয়েছে৷ তুই রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে একটু রেস্ট নে৷ কাল থেকে যা ধকল যাচ্ছে তোর উপর দিয়ে।”

রাজিতা, ‘আচ্ছা ‘ বলে নিজের রুমে চলে গেলো।
ফোনটা চেক করতেই দেখলো যে, ওর বান্ধবীরা অনেকবার কল করেছে। ওদের সাথে কথা বলার কোনো মুড ওর নেই। কিন্তু একজনের কল উপেক্ষা করার কোনো সাহস ওর নেই। ওর চাচ্চুর ছেলে নিয়ন ভাইয়া।

রাজিতা দেখলো যে, ওর নিয়ন ভাইয়া কাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫০বারের মতো কল করেছে৷ ও কল ব্যাক করবে কিনা ভাবছে, তখন আবার নিয়ন কল করলো। কলটা রিসিভ করে কাঁপা-কাঁপা গলায়, ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে নিয়ন অস্থির কণ্ঠে বলতে লাগলো,

–“হ্যালো রাজি! কেমন আছিস তুই? কল ধরিসনি কেন আমার? আমি কত চিন্তা করছিলাম জানিস! কাল কি হয়েছে? আমাকে বল। বল ওরা সবাই আমাকে মিথ্যে বলছে! তোর বিয়ে হয়নি! সব মিথ্যা! বল রাজি, তুই শুধু একবার বল, আমি তোর মুখ থেকে সত্যিটা জানতে চাই।”

এতগুলো কথা একেবারে শুনে রাজিতা বুঝতে পারছে না যে, কি বলবে৷ ওই বাসায় সবাই ওকে আদর করতো শুধুমাত্র ওর চাচ্চু আর ওর নিয়ন ভাইয়ার জন্য। এটা ও ভালো করেই জানে। তারপরেও বেহায়া মনকে জোর করেই বোঝাতে চাইতো যে, সবাই ওকে ভালবাসে। একটু ভালবাসা পাওয়ার জন্য বোকার মতো চিন্তাভাবনা করতো।ওকে চুপ থাকতে দেখে নিয়ন ওপাশ থেকে আবার বলে উঠল,

–“নিশ্চয়ই মা কিছু বলেছে তোকে? নাকি নিলা? নাকি রিমি কিছু বলেছে? তুই আমাকে বল। আমিতো কিছুদিন পর-ই আসছি। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

রাজিতার কান্নাগুলো যেন গলার কাছে এসে আটকে ছিলো এতক্ষণ। তা এবার গলাচিড়ে বের হয়ে আসল।

–“নিয়ন ভাইয়া! ”

–“হ্যাঁ, বল আমাকে৷ কি হয়েছে বল। আমিতো শুনতেই চাচ্ছি।”

–“আর হয়ত কিছুই ঠিক হবে না। সব শেষ হয়ে গেছে। আমার সাথেই কেন এমনটা হলো?”

–“রাজি! তুই চিন্তা করিস না। আমি আসলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।”

–“আমার সত্যিই বিয়ে হয়ে গেছে।”

কথাটা শুনে ওপাশের মানুষটা চুপ হয়ে গেছে। রাজিতা আবার বলতে লাগলো,

–“আচ্ছা নিয়ন ভাইয়া, ছোট আম্মু কি কখনও আমাকে নিজের মেয়ে হিসেবে দেখেনি? নিলা আপু আর রিমি কখনো আমাকে নিজের বোনের মতো দেখেনি? নাকি আমিই শুধু বোকার মতো তাদের আপন ভেবে গিয়েছি?”

–“রাজি, প্লিজ চিন্তা করিস না। কিছুই হয়নি। আমার পরীক্ষাটা শেষ হলেই যত দ্রুত পারি চলে আসব৷ আমি কিছুতেই ওই ছেলেটাকে তোর জীবন নষ্ট করতে দিবো না। মায়ের কথা না হয় বাদ দিলাম, বাবা কি করে পারলো এমন একটা ছেলের সাথে তোকে বিয়ে দিতে। আর তোকে বিয়ে দেওয়ার কথা ওরা ভাবলো কি করে!”

–“ভাইয়া, আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন কিছুই হয়নি৷ আনান সম্পুর্ণ সুস্থ৷ আর এজন্যেইতো ছোট আম্মু আর নিলা আপু আমাকে ভুল বুঝছে।”

তারপর রাজিতা নিয়নকে সবটা খুলে বলল।
নিয়নকে সবটা বলার পর রাজিতার নিজেকে কিছুটা হাল্কা লাগলো। ছোটবেলা থেকেই ওর চাচি বা চাচাতো বোনেরা কিছু বললে ওর চাচা আর নিয়ন ভাইয়া ছিলো যারা ওর পাশে থাকত৷ ওকে হাসানোর চেষ্টা করতো। অথচ আজ ওর মন খারাপের সময় কেউ ওর পাশে নেই৷ ওকে হাসানোর মতো কেউ নেই!

রাজিতা কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল বুঝতে পারেনি৷ হঠাৎ মাথায় কারো হাতের ছোঁয়ায় ঘুম ভেঙে গেলো। তাকিয়ে দেখে যে ওর সামনে আনান দাঁড়িয়ে আছে।
আনানকে দেখেই রাজিতা তাড়াতাড়ি করে উঠে বসল।

–“কখন আসলেন?”

–“এইতো একটু আগেই৷ ”

–“আমাকে ডাকেননি কেন?”

–“দেখলাম ঘুমাচ্ছো, তাই আর ডাকলাম না। তা আমার উপর থেকে রাগ কমেছে নাকি এখনো আছে?”

রাজিতা ঠান্ডা স্বরে বলল,

–“আপনার উপরে রাগ করে কি লাভ! ”

–“হঠাৎ কথার এত পরিবর্তন? এখানে এসে বুদ্ধি-সুদ্ধি খুলেছে নাকি?”

–“যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছে।”

বলেই রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলো রাজিতা৷ আনান ওর হাত টেনে ধরে বলল,

–“কেউ নেই মানে? আমাদের কিছুই মনে হয়না? কি শুরু করেছো তুমি?”

–“শুরু আমি করেছি নাকি আপনি? আপনি কেন আমাকে বিয়ে করেছেন তার উত্তর আজ দিতেই হবে।”

–“সময় হলেই উত্তর পেয়ে যাবে। মা ডাকছে, ফ্রেস হয়ে আসো৷ আর সবার সামনে যেন না দেখি কোন সিনক্রিয়েট করতে।”

রাজিতা চুপচাপ আনানের কথাগুলো শুনতে লাগলো। আনান বুঝতে পারলো যে,রাজিতার মন অনেক খারাপ। ও ভাবলো যে করেই হোক রাজিতার মন ভালো করতে হবে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here