অপরাজিতা পর্ব -১২

#অপরাজিতা
#১২তম_পর্ব
#স্নিগ্ধতা_প্রিয়তা

আনান রুমে এসে রাগটাকে একটু কন্ট্রোল করার চেষ্টা করল। ও বুঝতে পারছে না যে ওর মা হঠাৎ বাসা কেন নিতে বলছে। রাজিতা আবার কিছু বলেনিতো! রাজিতার কথা ভাবতে না ভাবতেই রাজিতা রুমে এসে উপস্তিত।
আনান বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বালিশ ঠিক করতে করতে রাজিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
–“তুমি কি মাকে কিছু বলেছো?”
রাজিতা আনানকে পাশ কাটিয়ে বিছানার উপরে উঠে বসতে বসতে বলল,
–“কোন ব্যাপারে? ”
–“কোন ব্যাপারে এখনো বুঝতে পারছো না?”
–“বাসার ব্যাপারে? ”
–“হুম।”
–“আপনার কি মনে হয় আমি কিছু বলেছি?”
আনান রাজিতার পাশে বসে বলল,
–“না। আমি জানি তুমি কিছু বলোনি। কিন্তু মায়ের মাথায় বাসা নেওয়ার কথা কে ঢুকাতে পারে সেটাইতো বুঝছি না।”
–“আচ্ছা ওসব বাদ দিন। মা যখন বলছে, নিবেন। বাসা নিলেই যে ওখানে গিয়ে থাকতে হবে তাতো নয়।”
–“তুমি বলছো তাহলে?”
–“হুম। মা রাগ করবেন না হলে৷ একটা সিম্পল বিষয় নিয়ে এভাবে রাগারাগি করাটা ঠিক নয়। আপনিই বলেছেন।”
–“আচ্ছা।”

আনান রাজিতার কোলের উপরে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল, রাজিতা বাধা দিতে গিয়েও দিলো না। দুইহাত দিয়ে আনানের মাথাটা টিপে দিতে লাগলো।আনান রাজিতাকে বলল,
–“মাথা টিপে দিতে হবেনা। একটু বউয়ের কোলে মাথা রাখার ইচ্ছে হলো, তাই রাখলাম। তুমি ঘুমাবে না?”
–“সারাদিন অনেক ঘুমিয়েছি৷ সহজে কি আর ঘুম আসবে নাকি! আপনি বরং ঘুমান। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, দেখবেন তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসবে।”
–“তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লে তোমার স্পর্শগুলো অনুভব করব কি করে! তোমার মুখ থেকে যে কথাটা শুনব বলে অপেক্ষায় আছি, তা তুমি এভাবে বলে দিবে বুঝতেই পারিনি। আরেকবার বলতে পারবে?”
রাজিতা লজ্জায় আনানের মাথা থেকে হাত সরিয়ে নিচ্ছিলো আনান তা টেনে ওর হাতের মুঠোয় বন্দী করল। রাজিতা বলল,
–“কি?”
–“থ্রি ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড!”
রাজিতা আনানের শক্ত মুঠো থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টা করে বলল,
–“আপনি কি আমাকে সত্যিই ভালবাসেন?”
–“নিজের বউকে ভালবাসার প্রমাণ দিতে মরতেও রাজি!”
–“এমন কথা আপনার মুখে শোভা পায়না!”
–“কেন? আমি কি একটু রোমান্টিক হতে পারি না বউয়ের সাথে!”
রাজিতা লজ্জায় এইটুকুন হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে ও ভরহীন হয়ে শূন্যে ভাসছে। আনান যে এমন কথা বলতে পারে ওর ভাবতেই কেমন লাগছে। ওকে চুপ থাকতে দেখে আনান বলল,
–“তুমি চাইলে আমি তোমাকে সারাজীবন ও সময় দিতে পারি। ”
–“কিসের জন্য?”
–“আমাকে জানার জন্য।”
–“আমি জানিনা একজন মানুষকে জানতে ঠিক কতটা সময় লাগে৷ তবে আপনাকে জানার জন্য আমার কাছে এই কয়টা দিনই যথেষ্ট ছিল।”
–“তারমানে বলতে চাইছো, তুমি আমাকে জেনে গেছো? ”
–“হয়তোবা!”
–“এখন কি এই অধমকে বিশ্বাস করা যেতে পারে?”
–“হুম! আল্লাহ নিজে যেখানে আমাদের এই পবিত্র বন্ধনে বেধে দিয়েছেন, সেখানে আমি কে তা ছিন্ন করার!”
–“তাহলে একবার বলো ‘ভালবাসি’!”
আনানের মুখে ভালবাসি কথাটা শুনেই রাজিতা এবার নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। আনান এখনো ওর কোলে মাথা দিয়ে রেখেছে। আনান এবার উঠে রাজিতার কাঁধে হাত রেখে বলল,
–“বলবেনা?”
রাজিতা কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। সবার এত ভালবাসা উপেক্ষা করার শক্তি যে ওর নেই। যে খাঁচায় অলরেডি বন্দী হয়ে গেছে সে খাঁচা থেকে পালানোর থেকে মানিয়ে নেওয়াটাই ভালো। রাজিতা সাহস করে আনানের চোখে চোখ রেখে বলল,
–“ভালবাসি!”
আনানের কানদুটো যেন প্রশান্তিতে ডুবে গেলো। রাজিতার বলা কথাটা বারবার কানে বাঁজতে লাগলো। রাজিতাকে দেখার পর থেকে আনান এই দিনটার আশাতেই ছিলো। আজ ও ওর ভালবাসাকে পূর্ণতা দিবে। আল্লাহ ছাড়া কেউ হয়ত ওদেরকে আলাদা করতে পারবে না।
রাজিতাও যেন এতদিনে ওর বেঁচে থাকার আসল মানে খুঁজে পেলো৷ এই দিনটার জন্য, এই ভালবাসাগুলোর জন্যই হয়ত আল্লাহ ওকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ভালবাসা পাওয়ার চেয়ে নাকি ধরে রাখাটা কঠিন! আনান আর রাজিতা কি পারবে চিরদিন এভাবে ওদের ভালবাসাটাকে ধরে রাখতে! নাকি কোনো ঠুনকো ঝড় এসে ওদের জীবনটাকে তছনছ করে দিবে! সেটা কেউ জানেনা!

সকালে উঠে আনান দেখল যে রাজিতা নেই। ও উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করতে গেলো। দেখলো রাজিতা ওর মায়ের সাথে বসে গল্প করছে৷ রাজিতা আজ এত সকাল সকাল উঠেছে দেখে আনানের ভালো লাগলো। হাসিমুখে ওর মায়ের সাথে গল্প করছে দেখে ওর আরো ভালো লাগলো।

ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হতে যাবে তখন আনানের মা আনানকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“আজ আসার সময় রাজিতাকে নিয়ে একটু ওর চাচার ওখান থেকে ঘুরে আসিস। মাঝেমধ্যে ওখানে গেলে একটু মনটাও ভালো লাগবে।”
–“আচ্ছা। ”
বলেই আনান আর রাজিতা বের হয়ে গেলো।

রাজিতার বন্ধুরা আনানকে অনেক সম্মান দিয়ে চলছে। আনানকে দেখলেই সবাই কাচুমাচু হয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা আনানের কাছে কেমন যেন বেমানান লাগছে৷ আনান ভাবলো যে, ওদের প্রোগ্রামে রাজিতার ফ্রেন্ডদেরকেও ইনভাইট করবে৷ ওখানে একটু ফ্রিলি কথা বললে হয়ত এই অস্বস্তিটা কাটবে।

সেদিন ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময় আনান আর রাজিতা ওর চাচার বাসায় গেলো। আনান নিশাদের ব্যাপারে উনাদের জানালে উনারা রাজি হয়ে গেলো। সামনের সপ্তাহেই নিশাদ চাইলে নিলাকে দেখতে যেতে পারে।

ভালই চলছে আনান আর রাজিতার খুনসুটিময় ভালবাসা!

আজ নিলাকে দেখতে আসবে নিশাদের বাসা থেকে। নিশাদের বাবা একজন কলেজের শিক্ষক ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। নিশাদের বড় একবোন ছিলো বিয়ে হয়ে একটা মেয়ে হয়েছে। আর ওর ছোটবোন এইবার কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে।

রাজিতা আর আনান ও ওর চাচার বাসায় যাবে। নিশাদ বারবার করে ফোন করে ওদের যেতে বলেছে। বিকেল হতে চলল এখনো রাজিতা রেডি হয়নি দেখে আনান ওকে তাড়াতাড়ি করতে বলার জন্য রুমে ঢুকল। কিন্তু রুমে ঢুকেতো আনান পুরাই অবাক! ও যেন এক নতুন রাজিতাকে দেখছে৷ কালো রঙের শাড়িতে রাজিতার মুখটা চাঁদের মতো জ্বলজ্বল করছে। আনান এই প্রথম রাজিতাকে শাড়ী পড়ে দেখছে,তাও আবার কালো শাড়ী!
শিমলা ভাবি শাড়ীটা পড়িয়ে দিয়েছে৷ তাছাড়া রাজিতার সাধ্য নেই যে, শাড়ী পড়বে৷ ওর শাশুড়ী বলছিলো শাড়ী পড়ে যাওয়ার কথা। হাজারহোক নতুন বউ। নিশাদের বাবা-মা আসবে৷
আনান রাজিতার উপর থেকে যেন চোখ সরাতেই পারছে না।

রাজিতা ঠোঁটের লিপস্টিকটা ঠিক করছিলো, ঠিক করে পেছনে তাকাতেই দেখলো আনান ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রাজিতা ওর সামনে থেকে দরজার দিকে যেতে যেতে বলল,
–“চলুন। আপনি না বলছিলেন যে, দেরি হয়ে যাচ্ছে৷ এখন আবার দাঁড়িয়ে পড়লেন কেন?”
আনান ওর দিক থেকে চোখ না সরিয়েই বলল,
–“অপূর্ব! ”
–“কি?”
–“তোমার মাথা। এতসুন্দর মুডটাই নষ্ট করে দিলে। ”
–“আমি আবার কি করলাম? আপনিইতো বললেন যে…”
–“দেখতেই পাচ্ছো যে, আমি আমার দশটা না! পাঁচটা না! একটামাত্র বউকে মুগ্ধ নয়নে দেখছি! সেখানে তোমার নাকটা না গলালে হতো না!”
রাজিতা আনানের কাছে এগিয়ে এসে ওর চোখে চোখ রেখে বলল,
–“তাই নাকি! আচ্ছা, এই নিন দেখুন! বউকে দেখার সময় বুঝি আপনার সময় থমকে যায়! নাকি ৬০০ সেকেন্ডে মিনিট হয় তখন!”
–“তুমি পাশে থাকলে সময় যেন সত্যিই থমকে যায়।”
আনান কথাটা বলে রাজিতার আরো কাছে এগিয়ে যেতে থাকে। এমন সময় ওর মায়ের গলা শুনতে পায়,
–“আনান! রাজিতা! তোদের হয়নি এখনো? এই না বললি দেরি হয়ে যাচ্ছে! তোদের ব্যাপার-স্যাপার কিছু বুঝি না বাপু৷ ”

ওর মায়ের তাড়া দেখে দুজনেই তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলো। ওদিক থেকে নিশাদরাও রওয়ানা দিয়েছে।

গাড়িতে উঠেই আনান রাজিতার কানে ফিসফিস করে বলতে লাগলো,
–“আজ হঠাৎ শাড়ী কেন?”
রাজিতাও আনানের মতো ফিসফিসিয়ে বলল,
–“মা বলেছিলো। কেন?”
–“না! ওখানে কত লোকজন থাকবে, যদি আমার মিষ্টি বউটার নজর লেগে যায়!”
রাজিতা হাসতে হাসতে বলল,
–“আপনি আবার এসবে বিশ্বাস করা শুরু করলেন কবে থেকে!”
–“কোনসব?”
–“এই যে, নজর লাগা!”
–“আরে বুদ্ধু! আমিতো কথার কথা বললাম! তুমি এত সুন্দর করে শাড়ী পড়তে পারো আগে বলোনি কেন?”
–“আগে বললে কি করতেন?”
–“তোমার এই মোহনীয় রূপটা অনেক আগেই দেখতাম!”
–“আপনাকে কে বললো যে, এই শাড়ী আমি নিজে পড়েছি!”
–“তাহলে?”
–“শিমলা ভাবি পড়িয়ে দিয়েছে। ”
–“তাহলেতো শিমলা ভাবিকে মাঝেমধ্যেই ঘুষ দিতে হবে।”
–“কেন?”
–“তোমার এই অপরূপ রূপ দেখার জন্য একটু-আধটু ঘুষ দেওয়া যেতেই পারে।”

ওরা দুজন গল্প করতে করতে গন্তব্যে পৌঁছে যায়।
নিশাদরা ওদের আগেই এসে পড়েছে। রাজিতারা বাসায় ঢুকতেই নিশাদ সেদিনের মতই হাঁ করে তাকিয়ে আছে রাজিতার দিকে। রাজিতা বুঝতে পারল যে, সুবহার মতো দেখতে বলেই নিশাদ ওর দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছে। তাই আর কিছু না বলে নিলার রুমে চলে গেলো।

নিলাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে৷ খয়েরী রঙের একটা ড্রেস পড়েছে, যা ওকে অনেক সুন্দর মানিয়েছে। রাজিতা নিলাকে দেখে বলতে লাগলো,
–“বিশ্বাস করো আপু, আজ তোমাকে দেখে নিশাদ ভাইয়ার যদি পছন্দ না হয়, তাহলে পৃথিবীর কোনো মেয়েকেই তার পছন্দ হবে না!”
নিলা লজ্জা পেলো।রাজিতা আবার বলল ,
–“আমি কিন্তু একটুও বানিয়ে বলছি না! সত্যিই বলছি। তাই না রিমি?”
বলেই রিমির দিকে তাকালো রাজিতা। রিমিও রাজিতার সাথে তাল মিলিয়ে বলল,
–“রাজি একদম ঠিক বলেছে। দেখা যাবে শুধু নিশাদ ভাইয়াই না, অন্যকোন ভাইয়াও পাগল হয়ে যেতে পারে!”
কথাটা যে আনানকে উদ্দেশ্য করে বলল তা বুঝতে পেরে রাজিতা বলল,
–“খুব কথা শিখেছিস। তাই না! দাড়া নিলা আপুর পালা শেষ হলেই চাচ্চুকে বলব তোর একটা ব্যবস্থা করার জন্য।”
রিমি হাসতে হাসতে বলল,
–“আমিতো এক-পায়ে রাজি, ডেকে আনো কাজি!”
বলেই রাজিতাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওখান থেকে চলে গেলো রিমি।

নিলা আজ একটু চুপচাপ আছে। সেদিন নিশাদকে দেখে ওরও পছন্দ হয়েছিলো কিছুটা। তাই ও ব্যাপারটা নিয়ে খুব এক্সাইটেড! নিশাদের বাবা-মা ওকে পছন্দ করবে কিনা!
কিছুক্ষণ পর নিলার মা এসে ওকে নিশাদের পরিবারের সামনে নিয়ে গেলো।

নিলা কথাবার্তায় একটু বেখাপ্পা হলেও মেয়ে হিসেবে ততটাও খারাপ নয়! এটা রাজিতার কথা। আনান কনফিউজড ছিলো যে, নিশাদের জন্য নিলা পারফেক্ট হবে কিনা! কিন্তু রাজিতা ওকে আস্বস্ত করেছে৷ রাজিতা বলেছে,নিলা অতটাও খারাপ নয় যতটা আনান ভাবে! যত যাইহোক না কেন, রাজিতাকে উনারাই পেলে-পুষে এত বড় করেছেন। তাদের প্রতি অকৃতজ্ঞতো আর হওয়া যাবে না। উনারা না থাকলে হয়ত রাজিতার আশ্রয় কোথায় হতো তা ও নিজেও জানেনা। কেননা ওর নাকি একটা মামা আছে, রাজিতার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর কোনদিন খোঁজও নেয়নি এই ভয়ে যে, যদি ভাগ্নির ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হয়! আর সেখানে এরা এতবছর ধরে ওর দেখাশোনা যেভাবেই হোক করেছেতো। একটা মেয়েকে ভার্সিটি পর্যন্ত আনতে কত কাঠকয়লা পোড়াতে হয় তা সেই বাবা-মাই জানে! রাজিতার মুখে এসব শুনেই আনান রাজি হয়ে গেছে। আল্লাহ যদি নিশাদ আর নিলার জুড়ি লিখে রাখেতো হবে৷ আর না রাখলে না হবে। চেষ্টা করতেতো ক্ষতি নেই!

নিলাকে দেখে নিশাদের বাবা-মা খুব পছন্দ করেছেন। উনারা চাচ্ছিলেন যে, তাড়াতাড়িই বিয়ের পার্টটা সেরে নিতে। কিন্তু নিলার বাবা বললেন,
–“আমাদের কোনো সমস্যা নেই, তবে আমার ছেলেটা এখন দেশের বাইরে আছে। সামনের মাসেই ফিরবে, তাই চাচ্ছিলাম যে, ও আসার পরেই পাকা কথা বলি, নাকি?”
একথা শুনে নিশাদের বাবা হাসতে হাসতে বললেন,
–“হ্যাঁ, সেটাইতো ভালো হবে৷ বোনের বিয়ে আর ভাই থাকবে না! এটাতো মেনে নেওয়া যায়না। আমি নিজে হলেওতো তাই করতাম।”
–“আর কিছু মনে করবেন না কিন্তু!”
–“আরে ভাই কি মনে করব! এখনতো আমরা এক পরিবার হতে চলেছি। আল্লাহ আমাদের মিলিয়ে দিয়েছেন!”
নিলার বাবা আর নিশাদের বাবার গল্প ভালই জমে উঠেছে। নিশাদ আর নিলাকে আলাদা কথা বলতে পাঠিয়েছে। ওরা ছাদে গেছে, ওখান থেকে ফিরলেই উনারা চলে যাবেন।

একটু পরেই রিমি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে রাজিতার হাত ধরে টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে গেলো। রিমির ব্যবহারে রাজিতা অবাক হয়ে বলল,
–“কিরে, বড়দের সামনে থেকে আমাকে ওভাবে গরুর মতো টানতে টানতে আনলি কেন?”
রিমি এতক্ষণ অনেক কষ্টে হাসি চাপিয়ে রেখেছিলো। এইবার জোরে হেসে উঠল।
রাজিতা বলল,
–“তুই কিছু বলবি? নাকি হাসি থামাবি?”
রিমি হাসি কিছুটা থামিয়ে বলল,
–“আমি কি সাধে হাসছি! নিলা আপু আর নিশাদ ভাইয়ার কথা শুনে হাসি আটকে রাখতে পারছিলাম না।”
–“কেন? কি হয়েছে? আর তুই লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের কথা শুনছিলি? ”
–“তো কি হয়েছে! তুই না শুনলে যা।”
বলেই আবার হাসতে লাগলো রিমি। রাজিতার নিজেরও শুনতে মন চাচ্ছিলো, কি এমন কথা হয়েছে নিলা আর নিশাদের মধ্যে যে, রিমি হাসিই থামাতে পারছে না।
–“বল, কি শুনলি?”
–“নিশাদ ভাইয়া প্রথমেই নিলা আপুকে কি জিজ্ঞেস করেছে জানিস?”
–“তুই না বললে কি করে জানবো! আমি কি জ্যোতিষী নাকি!”
–“তাহলে শোন! নিশাদ ভাইয়া নিলা আপুকে কাঁপা-কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করছিলো,’আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে?'”
–“ধুর! এতে এতো হাসির কি হলো! এটা কোনো হাসির কথা হলো!”
–“তারপর নিলা আপু লাজুক হেসে বলল,’আমার বাবা-মায়ের পছন্দ হলেই আমার পছন্দ!'”
–“এতে হাসির কি হলো আমিতো কিছুই বুঝলাম না। আমার সময় নষ্ট না করে সর এখান থেকে। শুধু-শুধু আমাকে টেনে আনলো!”
বলেই রাজিতা হনহন করে রুম থেকে বের হয়ে এলো।রিমি তখন বলতে লাগলো,
–“আরে আসল কথাটাইতো শুনলি না!”
–“তোর আসল কথা তুই-ই শোন।”
বলতে বলতে রিমির চোখের আড়াল হয়ে গেলো রাজিতা।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here