অপেক্ষার প্রহর পর্ব ১+২

#অপেক্ষার_প্রহর❤️
#Writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ১

সকাল থেকে বরযাত্রী যাবার আনন্দে বাড়ির ছেলেমেয়ে গুলো হৈ হৈ করে বাড়িটা একেবারে মাথায় তুলেছে,,,বিয়েটা তুলির বড় চাচার ছেলের,,,মেয়েরা সবাই বরযাত্রীতে যাবার আনন্দে সাজগোজ নিয়ে ব্যাস্ত,,,

তুলি বিয়েতে যাবেনা বলে জেদ ধরে বসে আছে,,,বাড়ির ছোট বড় সবাই তুলিকে বিয়েতে যেতে বলছে,,,কিন্তু তুলি কারো কথায় কর্নপাত করছেনা,,,তার একটাই জেদ সে বিয়েতে যাবেনা,,,এই তুলিটা না!বড্ড জেদি মেয়ে,,,

সবার সাথে জেদ খাটাতে পারে কিন্তু একজন কে দেখলে ভয়ে তার কথা হারিয়ে যায়,,,স্পষ্ট করে কোনো কথায় বলতে পারেনা,,,এমনি তাকে নিয়ে কল্পনায় কিছু বলতে গেলেও স্পষ্ট করে বলতে পারেনা,,,বাসার সবাই প্রায় রেডি হয়ে গেছে বিয়েতে যাবার জন্য,,,বাসায় শুধু তুলি একা থাকবে,,,

শাহনাজ বেগম তুলির রুমে এসে অনেকবার বললো তবুও তুলি যেতে নারাজ,,,শাহানাজ বেগম বাধ্য হয়ে বাসার চাবি তুলির হাতে দিয়ে বললো,,,

“”সুজন আসবে বাসায়!আসলে চাবিটা ওর হাতে দিস,খাবার খেতে চাইলে খেতে দিস,আমি চললাম””

সুজন আসছে শুনে তুলির মনের ভিতর উথাল পাথাল ঢেউ শুরু হয়ে গেলো,,,মায়ের যাবার পথে চেয়ে মাকে ডেকে বললো,,,

“”মা শোনো!””

শাহনাজ বেগম তুলির ডাকে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে তাকালেন,,,তুলি এগিয়ে এসে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই এখানে কেনো আসছে মা!””

শাহানাজ বেগম তুলির কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,

“”এ আবার কেমন কথা তুলি!একটা মাত্র মামাতো ভাই,তার বিয়েতে আসবেনা তা কি করে হয়!সিলেট থেকে সোজা এখানে আসছে,এসে হয়তো ফ্রেশ হয়েই কমিউনিটি সেন্টারে চলে যাবে””

সুজন বিয়েতে যাবে শুনে তুলি কোনো কিছু না ভেবে শাহানাজ বেগমকে বললো,,,

“”মা!বলছি শোনো না!আমি বিয়েতে যাবো,তোমরা একটু অপেক্ষা করো আমি রেডি হয়ে আসছি”‘

তুলির কথা শুনে শাহানাজ বেগম ভ্রু কুঁচকে ব্যাস্ত স্বরে বললো,,,

“”তা বললে কি করে হবে শুনি!সবাই রেডি হয়ে গাড়িতে চড়ে বসে আছে,তুই যেতে চাসনি বলে সবাই তোর উপর ভীষণ রেগে আছে,এখন আর তোর জন্য কেউ অপেক্ষা করতে পারবেনা”‘

শাহানাজ বেগমের কথা শুনে তুলির মুখটা ছোট হয়ে গেলো,,,মনটা খারাপ করে মনে মনে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আপনি আসবেন না বলে আমি যেতে চাইলাম না,কিন্তু!এখন আপনি ঠিকই বিয়েতে আসছেন,অথচ আমাল যাওয়াটা মাটি কলে দিলেন””

শাহানাজ বেগম তুলির মন খারাপ হয়ে গেছে বুঝতে পেরে স্মিত হেঁসে বললো,,,

“”একটা কাজ করা যায়!তুই রেডি হয়ে থাক,সুজন আসলে ওর সাথে চলে যাস কেমন””

তুলি মায়ের কথা শুনে খুশিতে শাহানাজ বেগমের গালে টুপ করে কিস করে দিয়ে বললো,,,

“”ঠিক আছে মা!আমি এক্ষুনি রেডি হচ্ছি!””

শাহানাজ বেগম মেয়ের কান্ড দেখে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে স্মিত হেঁসে বললো,,,

“”পাগলী একটা””

সবাই তুলিকে রেখে কমিউনিটি সেন্টারে চলে গেলো,,,তুলি ওয়ারড্রব থেকে সব কাপড় নামিয়ে একটা একটা করে পড়ে মিররের সামনে গিয়ে দেখতে লাগলো কোন ড্রেসটা পড়লে ভালো মানাবে,,,শেষমেশ একটা লাল লেহেঙ্গা পরে মিররের সামনে বসে মনের মতো সাজলো,,,আয়নায় নিজেকে দেখে তুলি স্মিত হেঁসে বললো,,,

“”তুলি!আজ তোকে যা লাগছেনা!সুজন তোল থেকে চোখই সলাতে পালবেনা,আজই তোকে প্রপোজ কলে দেবে””

তুলি নিজের সাথে নিজে কথা বলতে বলতে সুজন তুলির রুমে ঢুকতে গিয়ে বেডের উপর পোশাক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেখে দরজায় দাঁড়িয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি!এটা কি তোর বেড রুম!নাকি কাপড়ের গোডাউন!আমার তো মনে হয় না এটা তোর বেড রুম!এতো পিচেশ কেনোরে তুই!””

সুজন টিশার্টের দুটো বোতাম খুলে কথা বলতে বলতে রুমে ঢুকলো,,,সুজনের কর্কশ কন্ঠ শুনে তুলি ঘাড় ঘুরিয়ে সুজনের দিকে চেয়ে ভয়ে মুখ কাচুমাচু করে বললো,,,

“”সু সু সুজন ভাই আপনি!কখন এলেন””

সুজন ব্যাগটা সোফায় রেখে তুলিকে দেখে ভ্রু কুঁচকে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তোকে বলতে যাবো কেনো!তুলি!মুখে কিসব আটা ময়দা মেখে সেজেছিস!বিয়েটা কি তোর!দেখেতো মনে হচ্ছে বিয়েটা তোরই””

সুজনের এমন কর্কশ কথাবার্তা শুনে তুলির মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো,,,দুহাত মুচরা মুচরি করতে করতে মাথা নিচু করে মনে মনে বললো,,,

“”আপনি সবসময় আমাল সাথে এমন কেনো কলেন সুজন ভাই!আমাল খুব কষ্ট হয় আপনাল কথা শুনে””

সুজন তুলিকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে রাগী লুক নিয়ে বললো,,,

“”আমার সামনে কি এমন সং সেজে দাঁড়িয়ে থাকবি!আমি কি তোর সং সাজা দেখতে এসেছি!ফ্রেশ হবো রুমের চাবি দে আমায়””

সুজনের এমন কথায় তুলির চোখের কোনে হালকা জল জমে গেলো,,,হাত বাড়িয়ে মিররের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে সুজনের দিকে বাড়িয়ে দিলো,,,সুজন চাবিটা ঝাড়ি দিয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে গিয়ে পিছন ফিরে এসে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,

“”ছোট মামি আমায় বললো,সবাই তোকে যেতে বলার পরও তুই নাকি বিয়েতে যেতে চাসনি!কেনোরে!তুই কি দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছিস!তোর যা মন চাইবে তুই তাই ই করবি ভেবেছিস!””

সুজনের এমন অপমান জনক কথাবার্তা শুনে তুলির চোখের জল আর বাঁধ মানলোনা,,,চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো,,,সুজন ব্যাগ খুলে একটা প্যাকেট তুলির হাতে দিয়ে বললো,,,

“”আজকাল তো অনলাইনে ভালোই অর্ডার করা শিখে গেছিস,অলাইনে পড়াশোনার নাম করে তুই এসব করিস!পড়ার বেলায় তো ছাইমাথা পড়িস,সাজ করার বেলায় খুব ফার্স্ট””

সুজন রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,,,

“”তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে নিচে আয়!আমার এতে সময় নেই তোর জন্য অপেক্ষা করার””

তুলি সুজনের যাবার পথে চেয়ে দু’হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে দ্রুত প্যাকেট খুলে ওর পছন্দের ড্রেসটা পেয়ে খুশিতে সব মন খারাপ উড়ে গেলো,,,দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে তুলির হাসিমাখা মুখটা দেখে সুজন স্মিত হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”তোতলা রানী!লাল ড্রেসে তোমায় অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো,কিন্তু আমি চাই!আমি ছাড়া তোমার সৌন্দর্যটা যেনো কেউ না দেখে,তাই তো এইটুকু বাহানা””

তুলির হাসিমুখটা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে চলে গেলো,,,তুলি ফ্রেশ হয়ে পোশাকটা পড়ে চুলগুলো হাঁটু অবদ্ধি ছেড়ে দিলো,,,সুজনের ভয়ে ভালো করে সাজার ইচ্ছেটা মরে গেলো তুলির,,,হালকা সাজ দিতে দিতে মনে মনে বললো,,,

“”এই ড্রেসটা আসতে নাকি আলও দুদিন সময় লাগবে,তাহলে এটা সুজন ভাই কোথা থেকে পেলো,ধ্যাত!আমাল এতো ভেবে কাজ নেই,আমাল পছন্দের ড্রেসটা বিয়েতে পড়তে পেলেছি এটাই অনেক””

তুলি ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে চোখে হালকা কাজল দিয়ে বেরিয়ে গেলো,,,সুজন গেটের সামনে বাইকের কাছে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছে,,,তুলিকে আসতে দেখে আড়চোখে চেয়ে মনে মনে বললো,,,

“”আমার তোতলা রানীকে তো নীল ড্রেসে খুব সুন্দর লাগছে,একদম নীল পরী,তোতলা রানী!তুমি তো আমায় যাস্ট পাগল করে ছাড়বে””

তুলি সুজনকে নীল রঙের পাঞ্জাবি পরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনের ভিতর সুজনকে নিয়ে হাজারো স্বপ্ন রংতুলি দিয়ে এঁকে নিলো,,,দুজনের একসাথে ম্যাচিং ড্রেস হয়ে গেছে বুঝতে পেরে ঝাড়ি খাবার ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে গুটিগুটি পায়ে এসে সুজনের পাশে দাঁড়ালো,,,সুজন ফোনটা পকেটে রেখে তুলির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,

“”তুলি!তুই আমার সাথে ম্যাচিং করে ড্রেস পড়লি কেনো!নায়িকা হবার স্বপ্ন মাথা থেকে ঝরে ফেলে দে কেমন,তোকে একদম পেত্নীর মতো লাগছে””

তুলি মাথানিচু করে সুজনের সব কথা হজম করছে দেখে সুজন মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে বললো,,,

“”তুলি!আলেয়া ভার্টকে দেখেছিস কখনো!কি ফিগার,কি চেহেরা,আই লাভ আলেয়া ভার্ট””

তুলি সুজনের কথা শুনে মাথা উঁচু করে সুজনের দিকে চেয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে মনে মনে বললো,,,

“”নিকুচি কলেছি আপনাল আলেয়া ভার্টকে,সুজন ভাই!আপনি এতো লুচু কেনো!আপনি খুব খালাপ,একেবালে নষ্ট খালাপ,তবুও আমি আপনাকেই ভালোবাসবো””
#অপেক্ষার_প্রহর❤️
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ২

“”নিকুচি কলেছি আপনাল আলেয়া ভার্টকে,সুজন ভাই!আপনি এতো লুচু কেনো!আপনি খুব খালাপ,একেবালে নষ্ট খালাপ,তবুও আমি আপনাকেই ভালোবাসবো””

সুজন তুলির এমন চাহনি দেখে কপাল কুঁচকে বললো,,,

“”এভাবে পেঁচার মতো মুখ করে আছিস কেনো!মনে হচ্ছে স্বামীর শোক পালন করছিস,কি বিশ্রী দেখতে লাগছে তোকে””

তুলি সুজনের কথা শুনে অসহায় দৃষ্টিতে সুজনের দিকে চেয়ে রইলো,,,সুজন তুলির পাশ থেকে গিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো,,,তুলি বাইকে উঠছেনা দেখে কয়েকবার হর্ন দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তোকে কি কাঁধে করে বাইকে উঠাতে হবে!আমাকে কি ভাবিস বলতো!তোর কেয়ার টেকার মনে হয় আমায়!বাইকে ওঠ নয়তো আমি চললাম””

তুলি সুজনের ঝাড়ি খেয়ে বাইকে উঠে দূরত্ব মেপে বসলো,,,তুলি দূরে বসে আছে বুঝতে পেরে সুজন রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”এভাবে দূরে বসে আছিস কেনো!আমি বাইক জোরে চালাবো আর তুই পিছন থেকে পরে গিয়ে আমাকে সবার থেকে বোকা শুনাবি ভেবেছিস!এমন চিন্তা থাকলে মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দে,চুপচাপ আমাকে ধরে বস””

তুলি ইতঃস্তত বোধ করলো তবুও সাহস করে আলতো করে সুজনের কাঁধে হাত রেখে কাছে সরে আসলো,,,সুজন রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”আমার গায়ে কি চর্মরোগ হয়েছে নাকি!এমন ভাব করছিস যেনো আমাকে স্পর্শ করলে তোর হাত পঁচে গলে যাবে,শক্ত করে ধরে বস””

তুলি সুজনের কন্ঠ স্বরে ভয় পেলেও স্মিত হেঁসে দু’হাতে সুজনকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আপনি এমন কেনো!সবসময় আমার সাথে লেগে লেগে কথা বলেন,একটু ভালোবেসে কথা বললে কি এমন ক্ষতি হয় শুনি!””

তুলির প্রথম স্পর্শ পেয়ে সুজন আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো,,,চোখ মেলে চেয়ে স্মিত হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”তোতলা রানী!কবে তোমায় আমি এতো কাছে পাবো,তুমি কি বুঝতে পারোনা আমার রাগের পিছনে থাকা ভালোবাসা,লাভ ইউ তোতলা রানী,তুমি কবে ভালোবাসবে আমায়!””

তুলি সুজনকে এতো কাছে পেয়ে নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে পারলোনা,,,সুজনের অজান্তেই সুজনের পিঠে টুপ করে আলতো কিস করে দিয়ে স্মিত হাসলো,,,

দুজনের হাসিমুখ দুজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইলো,,,তুলি সুজনকে জড়িয়ে ধরে পিঠে মাথা রাখলো,,,সুজন বাইক চালাতে চালাতে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে তুলিকে বললো,,,

“”কি হলো বলতো তুলি!তোকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে বলেছি,আমার পিঠে চড়ে গাঁধার মতো ঘুমোতে বলিনি,যেখানে সেখানেই তোর ঘুম পায় কেনো রে!””

তুলি সুজনের কথা শুনে লজ্জায় মাথা উঁচিয়ে মনে মনে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আপনি এমন খালাপ কেনো,আপনি শুধু আমায় আঘাত কলে কথা বলেন,আপনি খুব খালাপ””

কমিউনিটি সেন্টারের কাছে আসলে তুলি বাইক থেকে নেমে ভিতরে প্রবেশ করলো,,,সুজন তুলির পিছুপিছু যেতে লাগলো,,,তুলি আর সুজনকে একসাথে দেখতে পেয়ে তুলির কাজিন গুলো সব ওদের কাছে এসে ভীর জমিয়ে খুশিতে সবাই একসাথে বলে উঠলো,,,

“”ওয়াও!তোমাদেরকে কি দারুণ দেখতে লাগছে””

সুজনের বড় মামার মেয়ে রিয়া মুখে হাসি ফুটিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,

“”সুজন ভাই!ব্যাপারটা কি বলোতো!তোমরা দুজনে একসাথে ম্যাচিং ড্রেসে আসলে যে,বিষয়টা কেমন ভাবাচ্ছে আমায়,সুজন ভাই!তুমি তুলির প্রেমে টেমে পড়লে নাকি!””

রিয়ার কথা শুনে সবাই খিলখিল করে হেঁসে দিলো,,,তুলি জানে এখন ওকে অপমান জনক কথা হজম করতে হবে,,,তাই আগেই মাথা নিচু করে রইলো,,,সুজন সবাইকে থামিয়ে দিয়ে হালকা হেঁসে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”এই থামতো!আমি প্রেমে পড়বো!তাও আবার তুলির!তোদের মাথা কি গেছে নাকি!আমি ম্যাচিং করে ড্রেস পড়িনি,তুলিকে জিজ্ঞেস কর,আমার সাথে ম্যাচিং করে ড্রেস কেনো পড়লো””

সুজনের কথা শুনে সবাই তুলির দিকে তাকালো,,,তুলি মাথা উঁচু করে অসহায় দৃষ্টিতে ওদের দিকে চেয়ে কিছু বলতে যেতেই সুজন কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে বললো,,,

“”এই ছাড়তো!বানিয়ে বানিয়ে বলা আষাঢ়ে গল্প শুনার সময় নেই আমার!তোরা শোন আমি সবার সাথে দেখা করে আসি””

তুলি সুজনের যাবার পথে চেয়ে মুখ ভেঙচি কেটে মনে মনে বললো,,,

“”আপনাল কপালে আমি ছালা কেউ নেই,যতই আমাকে অবহেলা কলেন না কেনো!বউ আমি আপনালই হবো,আমি দেখবো!আপনি কি কলে আমাল থেকে দূলে দূলে থাকতে পালেন””

সবাই এতোক্ষণে বিয়ের আসরে ঘটে যাওয়া গল্পগুলো তুলির কাছে বলতে লাগলো,,,কিন্তু তুলি ভ্যাবলাকন্তের মতো ভেবেই যাচ্ছে,,,চোখের কোনো পলকই পড়ছেনা দেখে ইভা তুলির গায়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,

“”এই তুলি!কি এতো ভাবছিস বলতো!আমরা তখন থেকে কথা বলে যাচ্ছি তুই তো কিছুই শুনছিস না””

তুলি ইভার কথায় থতমত খেয়ে গেলো,,,শুকনো ঢোক গিলে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে জোর করে হাসার চেষ্টা করে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”কিছু না,চল আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিবো,তার আগে মায়ের সাথে আগে কথা বলে আসি,আর নতুন ভাবীকেও দেখে আসি””

সুজন সবার সাথে কথা বলা শেষ করে রিদানের পাশে এসে বসলো,,,রিদানের শালিকারা দূর থেকে সুজনকে দেখে ফিদা হয়ে রিদানের পাশে এসে ভীর জমালো,,,এটা সেটা কথা নিয়ে সুজনের সাথে মজা করতে লাগলো,,,

তুলি মায়ের সাথে কথা বলা শেষ করে সবাইকে নিয়ে নতুন বউয়ের কাছে যেতে গিয়ে দেখলো,,,সুজন রিদানের পাশে বসে মেয়েগুলোর সাথে হেঁসে কথা বলছে,,,তুলি সুজনের দিকে চেয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আপনি সবাল সাথে কত সুন্দল কলে হেঁসে কথা বলেন,আমাল সাথে শুধু লাক্ষসেল মতো কলে কথা বলেন কেনো!এমন ভাব কলেন!যেনো আমি আপনাল সামনে গেলেই আপনাল মুখেল সব হাসি উলে যায়””

সুজন রিদানের শালিকাদের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে আর আঁড়চোখে তুলির রিয়াকশন বুঝার চেষ্টা করছে,,,তুলি সবাইকে নিয়ে রিদানে পাশে এসে দাঁড়িয়ে রিদানের দিকে চেয়ে স্মিত হাসলো,,,রিদান তুলিকে দেখতে পেয়ে খুশিতে চোখ মুখ উজ্জ্বল করে স্মিত হাসলো,,,ইভা তুলির হাত ধরে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,

“”এই তুলি!চল আমরা নতুন ভাবীকে আগে দেখে আসি””

সবাই একসাথে নতুন বউকে দেখতে এসে নতুন বউয়ের সাথে কয়েকটি সেলফি তুললো,,,নতুন বউয়ের ভাই বোনদের সাথে পরিচিতো হয়ে সবাই মিলে একসাথে আড্ডা দিতে বসলো,,,সুজন দূর থেকে তুলিকে চোখে চোখে রাখছে,,,

তুলি ছেলেদের সাথে হেঁসে কথা বলছে দেখে রাগে সুজনের চোখ মুখ লাল হয়ে গেলো,,,ডানহাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো,,,রিদানের পাশ থেকে উঠে চলে গেলো বাসায়,,,সোজা ছাঁদে গিয়ে ডানহাত মুষ্টি বদ্ধ করে দেয়ালে পান্ঞ্চ করলো,,,ভালোই ভালোই বিয়েটা সম্পন্ন হলো,,,

তুলি আশেপাশে চেয়ে সুজনকে দেখতে না পেয়ে আঁড়চোখে সুজনকে খুঁজতে লাগলো,,,কিন্তু এতো লোকের ভীরে সুজনের আর দেখা মিললো না,,,কমিউনিটি সেন্টার থেকে সবাই বাসায় ফিরে এলো,,,তুলি বাসায় এসে মনে মনে সুজনকে খুঁজতে লাগলো,,,

কিন্তু সুজনকে দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা ভিতর থেকে লক করে দিলো,,,একরাশ মন খারাপ নিয়ে বেডে পা ঝুলিয়ে বসে বিরবির করে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আজও আপনি আমায় না বলে হালিয়ে গেলেন,আপনি এমন কেনো!শুধু আমায় না বলে হালিয়ে যান””

তুলি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে এলো,,,ইভা এসে দরজা নক করলে তুলি দরজা খুলে দিলো,,,ইভা ফ্রেশ হয়ে এসে হাম ছেড়ে বেডে শুয়ে পড়লো,,,তুলি ভিতর থেকে দরজা লক করে শুয়ে পড়লো,,,

সবাই নতুন বউকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো,,,সুজনের মা সুজনের ফোনে অনেক বার চেষ্টা করেও কল ঢুকাতে পারলোনা,,,যতবার কল দেয় ততোবারই সুজনের ফোন সুইটস অফ বলে,,,সুজন হয়তো চলে গেছে ভেবে উনিও শুয়ে পড়লেন,,,

সবাই ক্লান্ত থাকায় সব কাজ শেষে যার যার ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো,,,তুলি বিছানায় শুয়ে সুজনের চিন্তায় এপাশ ওপাশ করতে লাগলো,,,সুজন ছাঁদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আকাশের তারার দিকে চেয়ে মনে মনে হাজারটা অভিযোগ জানালো,,,

তুলির ঘুম আসছেনা দেখে দরজা খুলে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে ছাঁদে আসলো,,,ছাঁদের লাইট জ্বালাতেই সুজনকে স্পষ্ট দেখতে পেলো,,,লাইটের আলো দেখে সুজন ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে চেয়ে তুলিকে দেখে নিভে যাওয়া রাগটা যেনো আরও বেশি জ্বলে উঠলো,,,তুলি সুজনকে দেখে খুশিতে ব্যাস্ত স্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই আপনি!আপনি হালিয়ে যাননি!আমিতো ভেবেছিলাম আপনি আমায় না বলে হালিয়ে গেছেন””

সুজন প্যান্টের পকেটে দুহাত রেখে গুটিগুটি পায়ে তুলির কাছে এসে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”ও আচ্ছা!এখন আমাকে কোথাও যেতে হলে তোর পারমিশন নিতে হবে নাকি!তুই কে হ্যাঁ!যে তোর পারমিশন নিতে যাবো আমি””

সুজনকে দেখে তুলির মুখে যেটুকু হাসি ফুটেছিলো সুজনের এমন কঠিন কথা শুনে সব হাসি বিলিন হয়ে গেলো,,,তুলির হাসিমাখা মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেলো,,,সুজন পান্জাবির বাম হাতা ফোল্ড করতে করতে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”এতো রাতে ছাঁদে এসেছিস কেনো!মেয়েদের এতো রাতে একা একা ছাঁদে আসা ঠিক নয় জানিস না,ভূতে ধরে ঘাড়টা মটকে দিলে তখন বুঝবি জ্বালা””

তুলি ভূতের কথা শুনে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে সুজনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বললো,,,

“”আজকেল পল থেকে ছাঁদে লাতে আল একা আসবোনা,কিন্তু!আপনি এতো লাতে ছাঁদে কি কলছেন!

সুজন ঘাড় ঘুরিয়ে তুলির দিকে চেয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,,,

“”গার্লফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া হয়েছে,তাই শোক পালন করছি,তুই রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়””

সুজনের গার্লফ্রেন্ড আছে শুনে তুলির ছোট্ট হৃদয়ে রক্ত ক্ষরন হতে শুরু করলো,,,তুলি দূর আকাশের দিকে চেয়ে আহত হৃদয় নিয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আপনাল গার্লফ্রেন্ড আছে!আমাকে তো কখনো বলেন নি””

সুজন তুলির দিকে চেয়ে কপাল কুঁচকে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”লে!আসছে মহারানী,তোকে কেনো বলতে যাবো আমার গার্লফ্রেন্ডের কথা,এই শোন!আমার গার্লফ্রেন্ডকে দেখবি!একদম আলেয়া ভার্টের মতো দেখতে,আই লাভ আলেয়া ভার্ট””

তুলি সুজনের কথা শুনে নিজেকে শক্ত করে মনে মনে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আমাল #অপেক্ষার_প্রহর শুলু হবাল আগেই শেষ কলে দিলেন!আমি যে আপনাকে নিয়ে আমাল মনেল মধ্যে লঙিন স্বপ্ন এঁকে বসে আছি,আপনি আমাল সাথে এমনটা কি কলে কলতে পালেন সুজন ভাই!””

সুজন ছবি দেখানোর উদ্দেশ্য ফোনটা বের করে তুলির দিকে বাড়িয়ে ধরলো,,,তুলি ফোনটা হাতে নিতে গেলে সুজন ফোনটা নিজের পকেটে রেখে কপাল কুঁচকে বললো,,,

“”না থাক!তুই আমার গার্লফ্রেন্ডকে দেখে কুঁ নজর দিতে পারিস,তোকে নিয়ে বিশ্বাস নেই,তোর কুঁ নজরে যদি আমার ব্রেক আপ হয়ে যায়!থাক বাবা!তোকে আমার গার্লফ্রেন্ড দেখাবো না””

সুজনের কথা শুনে তুলি নিজেকে খুব অপমানিত বোধ করলো,,,তবুও সুজনের দিকে চেয়ে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে জোর করে হাসার চেষ্টা করে মনে মনে বললো,,,

“”নিকুঁচি কলেছি আপনাল গার্লফ্রেন্ডকে!আমাল বয়ে গেছে আপনাল গার্লফ্রেন্ডকে দেখতে,আমি না দেখেই কুঁ নজল দিলাম,আপনাল গার্লফ্রেন্ডেল সাথে আপনাল ব্রেক আপ হয়ে যাক,আপনাল বউ হবো শুধু আমি,অন্য কেউ নয়””

চলবে,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here