অপেক্ষার প্রহর পর্ব ৫

#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ৫

“”তোতলা রানী!আর তো মাত্র কয়েক মাস,তারপরই আমাদের #অপেক্ষার_প্রহর শেষ হবে,তখন আমাদের দু’জনের মাঝে আর কোনো দূরত্ব থাকবেনা””

কথাগুলো মনে মনে ভেবে সুজন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো,,,সোফায় শুয়ে একধ্যানে তুলির দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে চোখে রাজ্যের ঘুম এসে ভর করলো,,,ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই ইভার ঘুম ভেঙে গেলো,,,পড়াশোনার জন্য সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা ইভার নিত্যদিনের অভ্যাস,,,

আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না,,,আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলে চেয়ে বেড থেকে নেমে রুমের লাইট অন করলো,,,হাম ছাড়তে ছাড়তে ওয়াশরুমে ঢুকতে গিয়ে সোফায় কেউ একজন শুয়ে আছে দেখে কপাল কুঁচকে তাকালো,,,

সুজন ব্ল্যাংকেটে নিজেকে পুরো ঢেকে আছে যার কারনে ইভা বুঝতে পারলোনা কে শুয়ে আছে,,,মেয়েরা কেউ একজন হলে তো ওদের সাথে ঘুমাতো এটা ইভা ঠিক বুঝতে পারছে,,,কিন্তু তুলির রুমে বাইরের কেউ তো ঘুমোতে আসবেনা,,,

তাহলে ছেলেটা কে হতে পারে,,,ইভা কিছু না ভেবে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে তুলিকে মৃদুস্বরে ডাকতে লাগলো,,,ইভার ডাকে তুলির ঘুম ভাঙতেই তুলি আড়মোড়া ভেঙে বেডে বসে ঘুম জড়ানো স্বরে বললো,,,

“”কি হয়েছে ইভা!ডাকছিস কেনো আমায়””

কথাটি বলে ভালো করে চোখ মেলে চেয়ে নিজেকে বেডে দেখলো,,,ইভার দিকে একপলক চেয়ে কপাল কুঁচকে সোফার দিকে চেয়ে মনে মনে বললো,,,

“”আমি তো লাতে ফ্লোলে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ছিলাম,বেডে আসলাম কি কলে!তালমানে!সুজন ভাই আমাকে কোলে কলে বেডে শুইয়ে দিয়েছে””

কথাগুলো ভাবতেই তুলির মুখে হাসি ফুটে উঠলো,,,ইভা যে এতোক্ষণ তুলির সাথে কথা বলে যাচ্ছে সেদিকে তুলির খেয়ালই নেই,,,তুলি সুজনের ভাবনায় বিভোর হয়ে আছে,,,তুলি কিছু ভাবছে দেখে ইভা তুলির গায়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে কপাল কুঁচকে বললো,,,

“”তুলি!কি হয়েছে রে তোর!সারাক্ষণ শুধু ভ্যাবলাকান্তের মতো ভাবতেই থাকিস,আমি তোর সাথে কথা বলছি তো!””

তুলি ইভার কথায় কিছু না বলে স্মিত হাসলো,,,ইভা তুলির দিকে চেয়ে বিরক্তি নিয়ে কপালে সুক্ষ ভাঁজ ফেলে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”বলছি!সোফায় কে শুয়ে আছে রে!””

তুলি ইভার কথায় স্মিত হেঁসে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সোফায় সুজন ভাই ঘুমিয়ে আছে,লাতে বাসাল কোথাও ঘুমানোল জায়গা হয়নি তাই আমাল লুমে ঘুমিয়ে আছে””

ইভা তুলির তোতলা কথা শুনে খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললো,,,

“”তুলি!তোর সব কিছু পরিবর্তন হলো কিন্তু তোর র কে ল বলা পরিবর্তন হলো না””

তুলি ইভার কথায় স্মিত হাসলো,,,ইভা সোফার দিকে চেয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,,,

“”কিন্তু মা যে বললো ভাইয়া নাকি চলে গেছে,আমার ভাইয়াও না!মাকে সবসময় টেনশনে রাখে,ভাইয়া আজকে মায়ের হাতে বকুনি খাবে হিহিহি””

ইভা কথাটা বলে খিলখিল করে হেঁসে দিলো,,,ততক্ষণে চারদিকে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে,,,তুলির কোচিং থাকায় তুলি দ্রুত ফ্রেশ হতে গিয়ে মনে মনে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আমাল প্রতি আপনাল ভালোবাসা আছে কি নাই তা আজ আমি পলিক্ষা কলে দেখতে চাই,আমাল মন মিথ্যা বলে কিনা,সেটা আমি আজ পলখ কলে দেখবোই””

তুলি মনে মনে দুষ্টু বুদ্ধি এঁটে ফ্রেশ হয়ে জিন্স টপস পড়ে নিলো,,,ইভা রুমে থেকে বেরিয়ে রোকসানা বেগমকে টেনে ধরে তুলির রুমে নিয়ে আসলো,,,

রোকসানা বেগম ভ্রু কুঁচকে ইভার দিকে চেয়ে রইলো,,,ইভা রোকসানা বেগমের দিকে চেয়ে শাহাদাৎ আঙুল উঁচিয়ে ইশারায় সুজনকে দেখিয়ে খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললো,,,

“”মা!তোমার গুনোধর ছেলে সোফায় ঘুমিয়ে আছে দেখো,ভাইয়া সিলেট যায়নি,বাসায় থাকার জায়গা হয়নি তাই ওখানে শুয়ে আছে দেখো””

রোকসানা বেগম সোফায় সুজনকে শুয়ে থাকতে দেখে ইভাকে থামিয়ে দিয়ে ধমকের স্বরে বললো,,,

“”আমার ছেলেটার কত কষ্ট হয়েছে তুমি জানো!শান্তি করে একটু নড়াচড়া করে ঘুমাতেও পারিনি ছেলেটা,আর তুমি দাঁত কেলিয়ে হাসছো!””

ইভা রোকসানা বেগমের ধমক খেয়ে চুপ হয়ে গেলো,,,তুলি জিন্স আর টপস পড়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো,,,রোকসানা বেগম সুজনকে জোরে জোরে ডাকছে দেখে শাহানাজ বেগম এগিয়ে আসলেন তুলির রুমে,,,

সুজনকে সোফায় শুয়ে থাকতে দেখে শাহানাজ বেগম কিছুটা অবাক হলেন,,,রোকসানা বেগমের চিৎকার শুনে ব্ল্যাংকেট সরিয়ে এতো লোকের ভীর দেখে সুজন তড়িঘড়ি করে উঠে সোফায় পা ঝুলিয়ে বসলো,,,বাম হাতে চোখ কচলিয়ে হাম ছেড়ে ঘুম জড়ানো স্বরে বললো,,,

“”কি হয়েছে মা!সকাল সকাল এতো চিৎকার করছো কেনো!””

রোকসানা বেগম সুজনের কথা শুনে কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”চিৎকার কোথায় করলাম!তুমি বেডে শুয়ে ঘুম দাও,চোখ দেখে তো মনে হচ্ছে রাতে ভালো ঘুম হয়নি তোমার””

শাহানাজ বেগম সুজনকে দেখে কপালে সুক্ষ ভাঁজ ফেলে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সুজন তুমি বাসায় আছো আর আমরা কেউ জানি না!এখন আর ঘুমোতে হবেনা,তুমি ওঠো!ফ্রেশ হয়ে নাস্তা সেরে তারপর ঘুম দিও””

সুজন কিছু বলতে যেতেই তুলি কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”মা!হাতে একদম সময় নেই,খাবাল লেডি কলো,আমাল কোচিং এ যেতে লেট হয়ে যাবে””

তুলির তোতলা কথায় রোকসানা বেগম আর ইভা ঘাড় ঘুরিয়ে তুলির দিকে তাকালো,,,শাহানাজ বেগম তুলির পোশাক দেখে কপাল কুঁচকে তাকালো,,,সুজন তুলিকে জিন্স টপস পড়ে রেডি হতে দেখে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি!তুই কি কোচিং এ যাচ্ছিস!দেখে তো মনে হচ্ছে কোচিং নয় মডেলিং করতে যাচ্ছিস””

তুলি সুজনের কথা শুনে রাগী লুক নিয়ে সুজনের দিকে চেয়ে মায়ের উদ্দেশ্য কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”মা!আমাল পোশাক নিয়ে কেউ যেনো কোনো কথা বলতে না আসে,আমি কিন্তু কোচিং এ যাওয়া বন্ধ কলে দিবো বলে দিলাম””

তুলি যে জেদি মেয়ে বেশি কিছু বললে যা বলে তাই করে বসবে,,,সুজন আর বেশি কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,শাহানাজ বেগম তুলির কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে হতাশ হয়ে ছোট্ট করে বললো,,,

“”আবার ল!তোকে নিয়ে আর পারলাম না!””

শাহানাজ বেগম দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রোকসানা বেগমের হাত ধরে তুলির রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন,,,তুলি সুজনের রিয়াকশন বুঝার জন্য ইচ্ছে করেই জিন্স আর টপস পড়েছিলো,,,সুজন তুলির পোশাক দেখে রেগে গেছে এটা বুঝতে পেরে তুলি মিটিমিটি হাসলো,,,

সবাই চলে যেতেই ইভা বেডে বসে ফোন ঘাটতে লাগলো,,,তুলি ব্যাগে বইয়ের সাথে বোরখা আর হেজাব রেখে দিলো,,,ইচ্ছে করেই শীতের পোশাক গায়ে না দিয়ে ব্যাগটা নিয়ে ডাইনিং এ এসে চেয়ার টেনে বসলো,,,বাসার সব মেয়েরা এসে নাস্তার টেবিলে বসে পড়লো,,,

শীত বেশি লাগায় সুজন ফ্রেশ হয়ে টিশার্ট এর উপর ব্লেজারটা পড়ে নিলো,,,তুলি চুপচাপ খাবার খাচ্ছে আর শীতে কাঁপছে,,,শাহানাজ বেগম তুলিকে শীতের পোশাক পড়তে বললে তুলি শাহানাজ বেগমের কথার কোনো পাত্তা না দিয়ে খাবার খেতে লাগলো,,,

শাহানাজ বেগম আর কিছু না বলে সবাইকে খাবার বেড়ে দিতে লাগলেন,,,সুজন ডাইনিং এ এসে তুলির মুখোমুখি চেয়ার টেনে বসলো,,,তুলিকে দেখে মনে মনে রাগ হলো কিন্তু প্রকাশ করলোনা,,,শাহানাজ বেগম সুজনকে খাবার বেড়ে দিলে সুজন খাবার খেতে খেতে তুলিকে ঠান্ডায় কাঁপতে দেখে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি!শীতের পোশাক না পড়ে এতো কাঁপছিস কেনো!তুই যে ভাবে কাঁপছিস!তোর কাঁপা কাঁপিতে দেখা যাবে পুরো বিশ্বে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়ে গেছে,জলদি শীতের পোশাক পড়ে আয়””

চলবে,,,

(কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না,,,গঠনমূলক মন্তব্য করবেন,,,লাইক কমেন্ট করে পাশে থাকবেন,,,হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here