অপেক্ষার শেষ প্রহর পর্ব -০৪

#অপেক্ষার_শেষ_প্রহর
#পর্বঃ৪
#লেখনীতেঃহৃদিতা_ইসলাম_কথা

লেকের পাশের সিড়িটাতে বসে আছি আর আনমনেই ভেবে চলেছি। দমকা হাওয়ায় বারবার শরীর মন ছুয়ে দিচ্ছে আমার।অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে আমার। শরীর মন শিতল করে দিচ্ছে। আশেপাশে অনেক কাপল আছে কেউ বেবি নিয়ে কেউ কেউ বা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে কেউ ওয়াইফকে নিয়ে।সবাইকে দেখে নিজের মধ্যে কেমন একটা শুন্যতা অনুভব হচ্ছে। আজ যদি সে আমাকে আর আমার ভালোবাসাকে বুঝতো তাহলে আমাদের কাহিনিটা অন্য রকম হতো।শুভর মতো এত মিষ্টি একটা বাচ্চার মা হতাম আমি।কিন্তু আমার ভাগ্যে সেসব সুখ লেখা ছিল না তাই হয়তো আজ আমি একা।শুন্যতায় ঘেরা আমার জীবন।একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ভিতর থেকে। তার তো আমার শহরে প্রবেশ নিষিদ্ধ তবে কেনো সে চলে এলো এই নিষিদ্ধ শহরে। আর কেনই আমার মনকে এমন উথাল পাথাল করে দিচ্ছে। পারছি না আর নিজেকে আটকে রাখতে।নিজের অনুভূতি গুলোকে অপ্রকাশিত রাখতে চেয়েছিলাম বলেই তো সব ছেড়ে তার শহর ছেড়ে আমার এত দুর আসা তবে কেনো পারলাম না আমি ভাবতেই ভিষণ রকম কান্না পাচ্ছে আমার।অবাধ্য দুফোটা চোখের জল এবার গড়িয়ে পড়লো আমার হাতের উল্টো পিঠে।এই দিকটায় তেমন একটা মানুষ নেই।তাই এখানেই আমার আসা।

আজ বিকেলে মন ভালো করার জন্য বাইরে বেরিয়েছি।হাটতে হাটতে ফয়েজ লেকের কাছে এসেছি।অন্য দিকটায় মানুষের কোলাহল থাকলেও এদিকটায় তেমন কেউ নেই তাই এখানটায় বসেছি।হঠাৎ অদূরে চোখ পড়তেই দেখলাম একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ঝগড়া করছে।ওদের ঝগড়া দেখে মুহূর্তেই আমার মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা যেদিন প্রথম আমার স্রোতের সাথে দেখা হয়।চাচ্চুর বাড়িতে পৌছেতে দুপুর গড়িয়ে পড়লো।আমাকে দেখে কি ভিষন খুশি হলো কেয়া, আরিফ ভাই, কাকিমা।চাচ্চু অফিসে থাকায় আর তার সাথে দেখা হয় নি।রাতে ছাড়া তাকে পাওয়া যাবে না। তিনি নাকি দুদিন ধরে বেশ ব্যস্ত।দুপুরে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম।তারপর খাওয়া দাওয়া সেরে জম্পেশ ঘুম দিলাম।সেদিন আর কোথাও যাওয়া হলো না।ভাইয়া দুদিন পরই চলে যাবে আমাকে রেখে আমি পুরো ভ্যাকেশনটাই এখানে কাটাব।

——————————-

আজ খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেল আমার। তাই ঝটপট উঠে ফ্রেশ হয়ে ছুট লাগালাম বারান্দায়। সকালের স্নিগ্ধতায় ভরপুর ফ্রেশ হাওয়া গায়ে লাগতেই গা কাপিয়ে তুলছে।ভোরের নাম না জানা পাখির মিষ্টি সুরে গান আমার খুব ভালো লেগে যায়। এমনিতে আমি ভোরে উঠি না।কিন্তু সেদিনের সকালটা এতটাই মুগ্ধতায় ভরপুর ছিল যে এমন সুন্দর সকাল দেখার জন্য আমি রোজ উঠার পন করি।বারান্দায় কিছু সময় কাটানোর পর চলে যাই ছাদে।চাচ্চু একটা একতলা বিশিষ্ট ছোট বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। যেটা সম্পুর্নই তাদের দখলে।বাড়ির মালিক এখানে থাকে না তাই সবটাই ভাড়া দিয়েছে।বাড়িটাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে কাকিমা।চাচ্চুর বাড়ির পাশে আরেকটা লাগোয়া বাড়ি।এই ছাদ দুটো একেবারে একত্রেই ওপাশের ছাদটা তো আরো বেশি সুন্দর লাগছিলো হরেক রকমের ফুলের ভিড়ে যেনো মনে হচ্ছিলো আমি কোন নার্সারিতে আছি।পুরো বাগানটাই প্ল্যান্ট দিয়ে ভরা।যাও অল্প-বিস্তর জায়গা সেটাও শুধু হাটা চলার জন্যই।আমি এবার নিজেকে দমিয়ে রাখতে না পেরে টপকে চলে যাই অপর ছাদে।এত সুন্দর মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আমার মনকে আবেগাপ্লুত করছে।আমার গাছপালা ভালো লাগেলও আমি তেমন যত্নশীল নই।মায়ের ভাষ্যমতে যে মেয়ে নিজের যত্ন নেয় না সে গাছের কি নেবে।আমাদের বাড়িতে গাছ আছে হরেক রকমের ফুল গাছ, ফল গাছ আরও নানা ধরনের প্ল্যান্ট আছে।আমার বারান্দায় ও কিছু আছে। তাই নিজের ভালোলাগা দমিয়ে রাখতে না পেরে আমি ফুলগুলোতে হাত ছোঁয়ায়। অনেক ধরনের বিদেশি ফুলও আছে।সে গুলো বেশ দৃষ্টিনন্দন লাগছে। আচমকাই কেউ পিছন থেকে আমার হাত মুচরে ধরে রাখে পেছনে। আমি খানিকটা ব্যাথা পেলেও তা প্রকাশ করতে পারলাম না কারন ব্যাথাটা রাগের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে। এবার একটা গভীর পুুরুষালি কন্ঠ কানে ভেসে আসে আমার।সে বলে,

–বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান এবার ঘুঘু তোমার বহিবো পরান।(সরি প্রবাদের কিছু শব্দ ঠিক মনে পড়ছে না।ভুল হলে ক্ষমা প্রার্থী।)ফুল চুন্নি আজ তোমার খবর আছে।পড়েছো ধরা এবার পালাবা কোথায়?রোজ রোজ আমার গাছের ফুল চুরি করা আজ দেখাবো তোমায় এই স্রোত কি জিনিস।আমার গাছের ফুল চুরির কি ভয়ানক শাস্তি হয় তা দেখাবো।

হুট করেই আমার রাগ সপ্তম আকাশে চলে যায়।রীতিমতো রাগে শরীর রিরি করছে আমার। ইচ্ছে করছে বজ্জাতটাকে একটা উস্টা মেরে ফেলে দেই।করলামও তাই, মোচরা মুচরি করে হাত ছুটাতে না পারায় পা দিয়ে দিলাম একটা পারা।আমার হঠাৎ আক্রমণ হয়তো সে মেনে নিতে পারে নি।পায়ে বেশ জোরে পারা দেওয়াতে তিনি আমার হাত ছেড়ে দেন। আমি এবার ঘুড়ে দাড়াই তার সামনে। আমার সামনে ছয় ফুট পাঁচ /সাত ইন্ঞ্চি লম্বা এক যুবক দাড়িয়ে।উজ্জ্বল শ্যামবর্ন গায়ের রং,চুলগুলো ঘন কালো,চোখজোড়া হালকা বাদামি,গোলাপি চিকন ঠোঁট, বেশ বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী একজন গম্ভীরমুখের মানুষ দাড়িয়ে। পড়নে তার গ্রে কালারের ট্রাউজার, ব্ল্যাক কালারের টিশার্ট,চুলগুলো এলোমেলো। এই রুপে আমি ছোট খাটো একটা ক্রাশ নামক বাশ খাইলাম।সচরাচর মেয়েরা এমন টাইপ ছেলেদের দেখলে ক্রাশ খাবেই।আমার ক্ষেত্রেও তাব তবে সেটা নিমিষেই দুর হয়ে গেল।তাই রাগী স্বরে চিল্লিয়ে বলে উঠি,

–আপনার সাহস তো কম নয় আপনি আমার গায়ে হাত দেন।আর আপনি কি বললেন আমি চোর চুরি করেছি।এই মিয়া ফা্ট্টু কি চুরি করেছি আমি আপনার কোন সম্পদ।আপনি না বললেন আপনি কি জিনিস আমাকে দেখাবেন তার আগে এবার আপনাকে দেখাবো আমি কি জিনিস।

বলেই আশেপাশে কিছু একটা খুজছি।আর পেয়েও গেলাম।তারপর হুট করে সেটা তুলে ভিজিয়ে দিলাম আমার সামনে অবস্থানরত মানুষটিকে। পায়ে পারা দেওয়ার পর আমি ঘুরতেই সে অবাক হওয়ার ন্যায় তাকিয়ে ছিল।হয়তো ভাবছে আমি কে আর এখানে কি করে এলাম? আমিই কি উনার ফুল রোজ চুরি করি কিনা?এসব ভাবনায় মগ্ন তিনি তখনই আমি এই কান্ডটা ঘটাই।আমার এমন কাজে তিনি চমকে গেলেন।কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি রীতিমতো রাগে ফুসছি জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ছি আর নিচ্ছি।

হুট করে উনি দুকদম এগিয়ে এলেন আর আমার হাত চেপে ধরে একটা দেওয়ালে মিশিয়ে দিলেন আমায়। উনি একদম আমার কাছেই আছে।যার দরুন উনার নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি আমি।দুজনের নিশ্বাস বাড়ি খাচ্ছে। আমার এবার ভিষন অস্বস্তি হচ্ছে। এরকম সিচুয়েশনে কখনো পড়ি নাই আমি।বন্ধুদের সাথে যাই করতাম।কেউ আমাকে এমনভাবে কখনো টাচ করেনি।অস্বস্তি, অস্থিরতা, ভয় সব যেনো ঝেকে ধরেছে আমাকে।অবাক হচ্ছি আমি নিজেই এ কেমন অনুভূতি। যে মেয়ে কিনা কাউকেই পরোয়া করে না তার আজ এমন দশা।। মানা যায় না এটা একদমই মানা যায় না।ভাবনার মধ্যে ডুবে ছিলাম আমি।উনার রামধমকে মাথা তুলে তাকালাম উনার চোখ রক্তবর্ন ধারন করেছে।নাক দুটো ফুলে আছে।নাকটাও লাল হয়ে গেছে।দাঁতে দাঁত চেপে আমাকে বলছে,

–তোমার এত বড় সাহস তুমি আমার গায়ে পানি ছুড়ে মারলে। আজ তো তেমাকে আমি……

বলতে বলতেই আমার হাত চেপে ধরলেন আরো জোরে আমি এবার উনার কানের কাছে গিয়ে জোরে দিলাম এক চিৎকার । আমার চিৎকারে হতভম্ব হয়ে উনি আমাকে দুরে সরে দাড়ালেন। হুট করে এমন কিছু হবে উনার ভাবনার ভাইরে ছিল।এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে দৌড়ে চলে এলাম আমাদের ছাদের কাছে তারপর টুপ করে এক লাফে চলে এলাম আমাদের ছাদে।উনি হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে। বেশ জোরেই চিৎকার করেছি আমি হয়তো কানের পর্দাই ফেটে গেছে উনার।উনি ঠায় দাড়িয়ে ছিলেন ওখানেেই আসার সময় এক পলক দেখেও এসেছি উনাকে।

দৌড়াই দৌড়াতে নিচে এসে এক প্রকার হাঁপাচ্ছি আমি।কাকিমা দেখে বললেন,

–কি হয়েছে কথা এমন করে হাঁপাচ্ছো কেনো? ইজ এভরিথিং অল রাইট?

আমি মাথা দুলিয়ে আস্বস্ত করে রুমের দিকে পা বাড়িয়েছি।গিয়ে দেখি কেয়া পেত্নিটা এখনো ঘুমোচ্ছে। এটা দেখে আরো রাগ চড়ে গেল আমার।দিলাম এক গ্লাস ঠান্ডা পানি ঢেলে।ও লাফিয়ে উঠলো ঘুম থেকে। আমাকে দাঁত কেলাতে দেখে বললো,

–বইন তোর সমস্যা কি? আমার ঘুমের বারোটা ক্যান বাজালি?

–আরে মুটকি ঘুমিয়ে আর কত মুটকি হবি। তোর বর তোকে দেখে বিয়ের আসর ছেড়ে পালাবে বুঝলি।তোর মত হাতিটাকে সে ঘাড়ে তুলবে না বুঝলি।বলেই পেট চেটে হাসতে লাগলাম।কারন আমি কল্পনা করছি ওর লুঙি ধরে পালাচ্ছে আর ও সারাশি নিয়ে ওর বরের পিছন পিছন ছুটছে।আহা!সে কি মর্মান্তিক দৃশ্য।ও রেগে তেড়ে এসে বললো,

–কথা তুই আবার আমাকে হাতি আর মুটকি বললি।আজ তো তোকে এই হাতি পিষে ফেলবে দাড়া তুই।

বলেই ও আমায় ধাওয়া করতে লাগলো আর খিলখিল করে হাসছি আর ওর দিকে এটা ওটা ছুড়ে দিচ্ছি।
এভাবেই দুটো দিন কেটে গেল। ভাইয়া চলে গেছে কারন তার কিছুদিন পরই এক্সাম তাও অনার্স ফাইনাল ইয়ারের। পরদিন দুপুরে সবাই মিলে প্ল্যান করলাম আজ ঘুরতে বেরোবো।আরিফ ভাইয়া আমাদের নিয়ে যাবে বললো।
তাই বিকালে রেডি হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে যাবো গিয়ে দেখি ভিতর থেকে লক।বুঝলাম কেয়া আছে ভিতরে ওকে বললাম,

–কিরে তুই তো সেই আধঘন্টা আগে রুমে এলি রেডি হবি বলে এখনো রেডি হসনি।এত লেট লতিফ কেন তুই? অসহ্য তুই কি বাথরুমে ঘুমিয়ে গেলি নাকি?

–আর দশ মিনিট দে প্লিজ জানু।একটু লেট হয়ে গেল রে। আমি তাড়াতাড়ি আসছি।

রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার ওইদিক ভাইয়া রেডি হয়ে বেরিয়ে গেছে।ভাইয়ার রুম আর কেয়ার রুম পাশাপাশি হওয়ায় ভাবলাম সেখানে গিয়েই না হয় চেন্জ করে নেই।তাই কাপর চোপর নিয়ে চলে গেলাম ভাইয়ের ওয়াশরুমে।আজ আমি একটা গোল জামা আর চুরিদার পড়বো উইথ খোলা চুল নো সাজ সব ভেবে রেখেছি।সবে চেন্জ করেছি কিন্তু ফিতাটা বাধতেই পারছি না।ওমনি……

#চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here