অপেক্ষার শেষ প্রহর পর্ব -০৬+৭

#অপেক্ষার_শেষ_প্রহর
#পর্বঃ ৬ ও ৭
#লেখনীতেঃহৃদিতা_ইসলাম_কথা

#পর্বঃ৬

চেন্জ করছি আর ভাবছি কি অসভ্য ছেলেরে বাবা ভাবা যায়।দেখতে তো সাধুপুরুষ আর কথাবার্তা সব অসভ্যের গড পাদার টাইপ।হারামিটার যদি বারোটা না বাজাইছি আমার সাথে পাঙ্গা এই কথার সাথে। রাগে ফেস ফোস করছি আর নিজে নিজেই বিরবির করে রেডি হয়ে বেরিয়ে এলাম।ততক্ষণে কেয়া ও বেরিয়ে এসেছে। আমরা দুজনে মিলে বাইরে এসে ভাইয়াকে ডাক লাগাতেই তার পাশের ছেলেটা বাইকে বসেই মাথা পেছনে ঘুরালে।তাকে দেখে গায়ে আগুন লাগার মত জ্বলে উঠলাম আমি।ভাইয়া ওইখানে ডাকতেই সামনে এগিয়ে গেলাম।ভাইয়ার একটা বাইক আছে।এখানে দুটো বাইক দেখে ভ্রু কুচকে ফেললাম আমি।তারপর আরিফ ভাইয়াকে বললাম,

— ভাইয়া এই লোক এখানে কি করছে?

— আমারও প্রশ্ন এই পেত্নি এখানে কি করছে?

— আমি পেত্নি? আপনার সাহস তো কম না আমার বাড়িতে এসে আমার ভাইয়ার সামনে পেত্নি বলছেন। আর তখন আপনি কি করেছিলেন। আমার চাচ্চুর বাড়িতে আপনার কি? কারো বাড়িতে বিনা অনুমতিতে ডুকে পরেন ম্যানারস শিখেন নাই। তারউপর আবার ওয়া…..

আর বলার সুযোগ পেলাম না।আমি কথা শেষ করার আগেই উনি জোরে ধমকে বললেন,

— এই মেয়ে আপনি ম্যানারস শিখেন নাই বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়? রেসপ্যক্ট মি।আ’ম ইউর সিনিয়র।
বলেই উনার ভাব নেয়া শুরু। চুলে হাত চালিয়ে আয়নায় নিজেকেদেখছে।

সিনিয়র না ছাই। তোর মত এমন সিনিয়রকে আমি নাকে দরি দিয়ে ঘুরাই হুহ।রাগে ফুসতে ফুসতে বললাম,

— ইউ..আপনাকে তো আমি।
দাঁত কিরমির করে বলতেই কেয়া বললো,

— কি করছিস বল তো এতক্ষন তো আমাকে খুব কথা শোনাচ্ছিলি লেট হয়ে যাবে আমার জন্য আর এখন এভাবে এখানে…

ওকে কথা বলতে না দিয়ে নিজেই বলে উঠলাম,

— এই তুই চুপ করবি।এর সাথে আগে বোঝাপড়া করতে দে আমায়।উনার সাহস কিভাবে হয় এভাবে…

আবারও জোরে ধমক।আমাকে কথা শেষ করতে না দিয়েি দিলেন জোরে একটা ধমক।এবার তো মাথায় আগুন জ্বলছে আমার।এভাবে তো ক্লাসেও কখনো স্যারদের কাছে ধমক খাই নি আমি।আর সহ্য করতে পারছি না ইচ্ছে করছে একে এসিডের কুয়োতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ফ্রাই করে ফেলি।পরক্ষনেই আবার নিজ মনেই ভাবলাম এটা একটু বেশিই জুলুম হয়ে যাবে না থাক গরম তেলে ভেজে ফ্রাই করে দিব।তখন বুঝবে মজা।মহা বজ্জাত একটা লোক। এই নিয়ে কতবার আমাকে ধমকালো।কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই যাচ্ছিলাম ওমনি আবারো চেচিয়ে বলে উঠলো,

–বলব আমি সবাইকে বলব তুমি কি করেছো?
উনি বাঁকা হেসে আমার দিকে ভ্রু নাচিয়ে উত্তরের আশা করছেন।আমি কপাল কুচকে ভাবছি এমন কি বলতে চান উনি।প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমি।মহাশয় এবার মুখ খুললেন,

— বলবো যে তুমি রোজ আমার গাছের ফুল চুরি কর।এইযে কিছুদিন দরে আমার ফুলগুরোকে কিডন্যাপ করে বয়ফ্রেন্ডকে পাচার করছো একথা জানে তোসার ভাই।

আমি অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে এসব কি বলে এই ব্যাটা। আমি আবার কখন ফুল চুরি করলাম।সেদিন ও এই অপবাদ দিয়েছিলো আমি কিচ্ছু বলিনি।আজ তো এর একটা হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বো।চেচিয়ে বলে উঠলাম,

— দেখুন ভদ্রভাবে কথা বলুন।আপনি এর আগেও আমাকে চোর অপবাদ দিয়েছেন আর এখনও দিচ্ছেন আমি বলেছিনা যে আমি কোন ফুল চুরি করিনি।আর দ্বিতীয়বার এমন বাজে কথা বললে মাথা ফাটিয়ে দেব আপনার তখন বুঝবেন এই কথা কি জিনিস।

রাগে থর থর করে কাপতে কাপতে বলে ফেললাম।কিন্তু একটা কথা ভাবছি কে এই ফুল চোর একে ধরে তো শায়েস্তা করবো।এর জন্য আমায় চোর বললো এই অসভ্য বজ্জাত হনুমানটা।

ভাইয়া এবার রাগ দেখিয়ে বললো,

— তোরা থামবি গাইস।কথা বাইকে উঠে পড়।কেয়া তুই স্রোতের বাইকে উঠে বস।যেইনা বাবকে উঠতে যাবো।োমনি খারুছটা বলে উঠলো,

— কেয়া আমার বাইকে কিন্তু বাইকের গিয়ার প্রবলেম তুই তো আবার জোরে বাইক চালালে ভয় পাস।

কেয়া হন্তদন্ত হয়ে বললো,

— না না আমি তাহলে তোমার বাইকে যাবো না স্রোত ভাই।তুমি বরং কথাকে নিয়ে যাও।ওর আবার জোরে বাইক না চালালে নাকি বাইকে বসছে মনে হয়। ওর মনে হয় ঠেলাগাড়িতে বসছে।

তক্ষনি আমাকে কিছুই বলতে না দিয়ে উঠলেন,

— না না আমি আমার বাইকে কোনো পেত্নীকে উঠাতে পারবো না।এই পেত্নী কখন আমার ঘাড় মটকে দেবে টের ও পাবো না।দেখছো না কেমন করে দেখছে মনে হচ্ছে এক্ষুনি খেয়ে নিবে আমাকে।আমার জীবনে এখনো কত কিছু করা বাকি।এত তাড়াতাড়ি আমি কোন পেত্নীর স্যান্কস হতে চাই না।এখনো বউ বাচ্চা-কাচ্চা কিছুই দেখা হলো না।এত জলদি উপরে যাওয়ার শখ আমার নেই।

আমি অগ্নি দৃষ্টি দেখে উনি যত্তসব আবল তাবল বানি শুরু করলেন।বুঝি না মাসুষ এত অদ্ভুত রকমের কথা কই পায়।বাঁচাল একটা। নাম আমার কথা যেখানে আমি কথা বলছি না সেখানো উনি যেনো কথার ঝুলি খুলে বসেছে।উফফ্ অসহ্য। একটা মানুষ এত বকবক কি করে করতে পারে।

————————————–

বাইক চলছে আপন গতিতে। আর আমি উনার বাইকের পেছনে।খানিকটা দুরত্ব বজায় রেখে বসেছি।বাইকের পিছনে ধরে বসেছি।এর মত অসভ্য গায়ে পড়া মানুষকে টাচ করা তো অসম্ভব ব্যাপার। ইচ্ছে না থাকলেও ভাইয়া আর কেয়ার জোরাজুরিতে উঠতে হয়েছে।বলেছিলাম ভাইয়ার বাইকে দুজন এডজাস্ট করে বসবো।তবুও এই হনুমানটার বাইকে বসবো না।কিন্তু হাই ওয়ে দিয়ে যেতে হবে বলে ভাইয়া জোর করে বসিয়ে দিল। একটু বেশি ভাব নেয় এই ছেলে। আর অসভ্যতা তা তো বলার বাইরে। কথার কি ছিড়ি।ইচ্ছে তো করে একে তেলাপোকার সুপ খাইয়ে দেয় আর না হয় কচু গাছে ঝুলিয়ে দেই।বদ লোক একটা।এর মধ্যে কতবার যে ব্রেক করেছে হিসেব নেই।লুচু গায়ে পড়া ছেলে একটা।আমিও কম যাই না ঘাড়ে হাত দিয়ে বসতে বলায়।একবারে নখ বসিয়ে দিয়েছি। জানি বেশ ব্যাথা পেয়েছে।কিন্তু আমার সাথে এভাবে চিপকে থাকার জন্য এটা তো মাত্র একটা ছোট্ট শাস্তি।

—————————————————-

#পর্বঃ৭

একটা সুন্দর পরিবেশ এসে বাইক থামালো স্রোত। আমরাই আগে ছিলাম। ভাইয়া আর কেয়া আসছে পিছনে।জায়গাটা সত্যিই সুন্দর এক কথায় মুগ্ধ করার মত পরিবেশ।পড়ন্ত বিকেলে এই পরিবেশটা খুব মানিয়েছে।এদিকটায় তেমন মানুষজন নেই।নিস্তব্ধতা যেনো এর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।আমি প্রানভরে নিশ্বাস নিচ্ছি দুহাত প্রসারিত করে।হালকা দমকা হাওয়ায় খোলা চুল গুলো প্রাণ খুলে উড়ে চলেছে।কিছু কিছু চোখে মুখে এসে আচড়ে পড়ছে বালো লাগছে বেম আমার।চারপাশে অনেক গাছপালা।সচরাচর শহরাঞ্চলে এমন পরিবেশ চোখে পড়ে না। গ্রামের কাছের হওয়ায় এত সুন্দর। আমরা একটা নিরিবিলি রাস্তায় এসেছি।পাশে ধানক্ষেত আর কিছুটা দুরে নদী দেখা যাচ্ছে। ধানক্ষেতের দৃশ্যটা খুবই সুন্দর মন ভালো করার মত।যেন চারদিকে সবুজের সমারোহ।ঘীরে রেখেছে এই প্রকৃতিকে সবুজের আচ্ছাদনে।পাশে নদীর টলমর পানি যেনো এই পরিবেশ টাকে আরো মুগ্ধ আর স্নিগ্ধ করছে।কেয়ারা ততক্ষণে এসে পরেছে। আমি এখানকার পরিবেশকে উপভোগ করে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম এই স্নিগ্ধমাখা প্রকৃতির।তারপর ছুটে গেলাম নদীর তীরে। সেখানে দাড়িয়ে শীতল হাওয়াটা গায়ে মাখলাম। মন প্রান জুড়ে প্রশান্তি বয়ে গেল যেন।সেখানে অনেকক্ষণ কাটালাম আমরা।নদীর পারে৷ হেঁটেছি। নদীর ঠান্ডা কনকনে পানি ছিটিয়েছি।ভালো লাগছিলো খুব।খুব ভালো একটা সময় কাটিয়ে আমরা আবার বাইকে করে রওনা দিলাম।শহরের কাছাকাছি আসতেই আমি চেচিয়ে বললাম বাইক থামাতে।আমার হঠাৎ এভাবে চেচিয়ে উঠাতে স্রোত খানিকটা থতমত খেয়ে গেল।তারপর রাগী কন্ঠে বললো,

— এই মেয়ে আপনি চেচাচ্ছেন কেনো?

আমি উত্তর না দিয়ে চলে গেলাম সামনের ফুচকা বিক্রেতার কাছে।গিয়ে বললাম,

— মামা তাড়াতাড়ি দুপ্লেট ফুচকা খুব ঝাল করে।
ততক্ষণে স্রোত কেয়া আর আরিফ ভাইয়াও পৌঁছে গেছে।
উনি রেগে আমার হাত টেনে বললো,

— এই মেয়ে এত পাগল কেন তুমি? এভাবে দৌড়ে আসার কি ছিলো? আমাদের সাথেই আসতে পারতে।আজ যদি কোন এক্সডেন্ট হতো তো কি হতো বলো?

উনার চোখে মুখে প্রচন্ড রাগ দেখতে পাচ্ছি আমি।রাগে প্রায় চোখদুটো লাল হয়ে গেছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না আমি করলাম কি? তাই শুধু উনার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম।কিছু বলার সুযোগ ও পেলাম না তার আগে ফুচকা মামা ডেকে বললো,

— এইযে আপনাগো ফুচকা।
আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না।ফুচকা দেখলে এমনি মাথা ঠিক থাকে না।বাড়িতে থেকে লুকিয়ে চুরিয়ে বেরোতে পারলেই জম্পেশ করে ফুচকা খাই আমি।কিন্তু এখানে আসার পর সবার সাথে আড্ডায় এতই মেতে ছিলাম যে সে সুযোগ হয় নি।তাই একটা কেয়া দিয়ে আরেকটা আমি নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।কেয়ার টাতে বেশি ঝাল দিয়েছে বলে ও সেটা ফেরত দিতে চাইলে স্রোত সেটাকে নিয়ে গপাগপ খেয়ে নিল।ওনার চোখ রীতিমতো রক্তবর্ন হয়ে গেছে।কেয়া আর আরিফ ভাইয়া অবাক চোখে তাকিয়ে। যেনো ভুত দেখছে। যার কারন বিশ্লেষণ করার সময় আমার নেই।আমি ফুসকা খাওয়াতে মনোযোগ দিলাম।কেয়া আর আরিফ ভাইয়াও দুই প্লেট ফুচকা কম ঝাল দিয়ে নিয়ে খেয়ে নিল। ফুচকা খাওয়ার পর আবার সেভাবেই বাড়ি ফিরে এলাম।এতক্ষণ বেশ হাসি খুশি প্রানবন্ত ভাব থাকলেও এখন ওনার মাঝে সেটা নেই।বাইক চালানোর সময় মুখটাকে বাংলার পাঁচের মত করে রেখেছিল। কিন্তু তাতে আমার কি কিছুই না।

———————————————

এভাবেই কেটে গেল বিশ দিন,,,,,

এর মধ্যে আমরা অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি।প্রায় দিন ভাইয়া সময় করে গুরতে নিয়ে যেত।সাথে তার প্রান প্রিয় বন্ধু তো ছিলোই।সেদিনের পর দুদিন বেশ খানিকটা রেগে ছিলেন উনি।প্রায় এবাড়িতে আসত কিন্তু আমার সাথে কথা ও বলতো না আর ঝগড়া ও করতো না।বিষয়টা বেশ ভাবিয়েছে আমায়।পরক্ষণেই ওসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছি।দুদিন পর যখন তার ফুল বাগানে সেই চোরকে ধরি তখন থেকে আবার কথা বলা শুরু হয় তবেই ঝগড়াই বেশি করতাম আমি।উনিও তাতে পা বাড়িয়ে দিতেন।এই ভাবে আবারও কথা বলা শুরু হয়।বলা যায় আমার জন্যই কেয়ার ঘুরাঘুরি হচ্ছে। কেননা শুনেছি ভাইয়া নাকি ওকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায় না।কিন্তু আমার জেদের কাছে ভাইয়া কিচ্ছু না। এমনিতেও ভাইয়া আমাকে খুব ভালোবাসে তাই কখনো কোনো কিছুর জেদ করলে মানা করেনি।ভালোই কাটছে আমাদের দিন।হাসি খুশি খুনসুটি আর একগাদা ঝগড়া নিয়ে। আমি কিছুই বুঝতাম না সবাই আমার আর স্রোতের ঝগড়া দেখে মিটিমিটি হাসতো।উনি আমার সব কাজে নাগ গলাতো।আমাকে কি জ্বালানো টাই জ্বালিয়েছে।আমিও ছেড়ে দেয়নি আচ্ছা করে ধোলাই।কিন্তু হঠাৎ উনার ব্যবহার হুট করেই পরিবর্তন হয়ে যেত।আশেপাশে কাউকে না পেলে উনার অসভ্য মার্কা কথার পেঁচে ফেলে আমাকে বোকা বানাতেন।আর আমি সেসব শুনে হতভম্ব হয়ে যেতাম।আস্ত একটা খাটাশ লোক।

—————————————

আজ প্রায় মাস খানেক হবে,,,,,,,
আমার কেনো জানি আইসক্রিম খেতে খুব ইচ্ছে করছে তাও আবার এই রাত বারোটায় সবাই গভীর ঘুমে।আরও এক ঘন্টা আগেই সবাই যে যার রুমে চলে গেছে।ঘুমিয়ে ও গেছে।শুধু আমার চোখে ঘুম নেই।এখানে আসার টর রোজ আইসক্রিম খেয়ে একটা বাজে অভ্যাস করেছি।বাড়িতে মায়ের জন্য রোজ রোজ খাওয়া হয় না। কিন্তু এখানে তো বলার মত কেউই নেই।কাকিমা কিচু বলে না শুধু বলে অল্প করে খেতে নইলে ঠান্ডা লেগে যাবে। আজ আইসক্রিম আনতে ভুলে গেছে চাচ্চু ভাইয়া ও লেট করে বাসায় ফিরে ডিনার করে রুমে চলে গেছেন।আর আমি বেচারি আইসক্রিম না খাওয়ার শোক পালন করছি।এক ঘন্টা যাবৎ এপাশ ওপাশ করলেও ঘুমাতে পারছি না।নাহ এবার খেতেই হবে আইসক্রিম।নাহলে আজ আর ঘুম হবে না।একটা জিন্স আর টপস হাটুর নিচ অবধি পরে গলায় স্কার্ফ ঝুলিয়ে চললাম বাইরে বের হবার উদ্দেশ্য।

খালি নির্জন রাস্তায় একা আমি একটা মেয়ে নিশ্চিত মনে আনন্দ উল্লাসে হেটে চলেছি।এভাবে একা একা রাতে এমন নিস্তব্ধ শহরে ঘুরার খুব ইচ্ছে ছিল।কিন্তু পুরন হয়নি।তার কারন বাবা আমার সব আবদার রাখলেও এটার ক্ষেত্রে ভুলিয়ে ভালিয়ে দিত কথার ছলে।যাই হোক আজ আমি ভিষন খুশি।একটা স্বাধীন ডানাবিহীন পাখি মনে হচ্ছে নিজেকে।আমি খোলা আকাশের নিচে৷ এই পিচঢালা রাস্তায় একা হেটে চলেছি।হঠাৎ হঠাৎ দমকা হাওয়া এসে শরীর ছুয়ে যাচ্ছে। আর হাওয়ার প্রতিটি স্পর্শ আমি চোখ বুজে উপভোগ করছি।মনে এক শিহরন বয়ে যাচ্ছে। মন প্রান শীতল করে দিচ্ছে।সতেজতায় ভরে যাচ্ছি আমি।এই প্রানখোলা পরিবেশটাকে উপভোগ করছি আর দেখছি কোথাও আইসক্রিম শপ খোলা আছে কিনা। হঠাৎ একটা পেয়ে গেছি।সেখান থেকে আইসক্রিম কিনে আনমনে খেতে খেতে হেটে চলেছি ল্যাম্পপোস্টের আলোতে রাতের শহর দেখতে দেখতে।হঠাৎ করে সামনে কিছু অবয়ব দেখে থমকে গেলাম আমি।ভয়ে হাত পা থরথর করে কাপছে। হাত থেকে আইসক্রিমটা পড়ে গেছে অথচ সে খেয়াল নেই আমার।আমি বারবার শুকনো ঢোক গিলে চলেছি।ভয়ে কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে আমার।আমি ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে দৌড় লাগিয়ে কিছুদুর যেতেই আচমকা কারো বলিষ্ঠ দেহের সাথে বাড়ি খাই।ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা আমার।কারো বুকের সাথে ধাক্কা লাগাতে ভীতসন্ত্রস্ত চোখে চেয়ে সামনের মানুষটির উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ গায়ের রং,চোখ দুটো বাদামি রংয়ের,কুচকুচে কালো ভ্রু।আর চোখেমুখে গম্ভীরতার ছাপ।মানুষটিকে দেখে হুট করে তাকে শক্ত করে ঝাপটে জরিয়ে ধরলাম।তার শার্ট খামচে ধরেছে।যাতে ছেড়ে যেতে না পারে।হঠাৎ করেই চারপাশ ঝাপসা মনে হচ্ছিল। তারপরই আমি জ্ঞান হারালাম। ঢলে পড়লাম সামনের মানুষটির বুকে।বলিষ্ঠ হাতে তিনি আমাকে আকড়ে ধরেছে।গালে আস্তে আস্তে দুটো থাপ্পড়ের মত মেরে ভয়ার্ত স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

–কথা কি হয়েছে? এই তুমি কথা বলছো না কেন? কথা এই কথা? চোখ খুলো ভয় পেয়ো না আমি আছি।

আমার কোনো রেসপন্স না পেয়ে উনি উপায় না পেয়ে কোলে তুলে নিলেন।তারপর বাড়ির রাস্তায় হাঁটা লাগালেন।

#চলবে…..

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here