অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -১৩

গল্প: #অপ্রত্যাশিত_ভালোবাসা
লেখক: #কাব্য_মেহেরাব

পর্ব:১৩

রাতে ঘুমিয়ে আছি হাসপাতালের কেবিনে। হঠাৎ করে দেখি কাব্য এসে দাঁড়িয়েছে আমার পাশে। হুড়মুড় করে উঠে বসলাম।কত দিন পর এই মুখ টা দেখলাম। কাব্য আমার পাশে বসে আমার হাত ধরে তার হাতে মধ্যে নিয়ে অজস্র চুমু খাচ্ছে। আমি তাকিয়ে শুধু দেখছি। কাব্যর এই পাগলামি দেখে আমার দুই হাত দিয়ে কাব্য কে ধরে আমি কান্না করে যাচ্ছি।কান্না করতে করতে হেঁচকি ওঠে গেছে আমার।

মেঘা: এ… এতদিনন প..র আমার কথা.. মনে পরল তোমার?

কাব্য: ( আমার দিকে তাকালো)মুখে সেই পাগল করা হাসি।

মেঘা: তুমি হাসছো….? আমাকে কষ্ট পেতে দেখে তোমার হা..সি পাচ্ছে তাই না?

কাব্য:……..(মাথা নেড়ে না বলল)

মেঘা: আমার খু..ব কষ্ট হচ্ছে কাব্য! প্লীজ তুমি আমাকে ছেড়ে.. কোথাও যেও না।।।। তা না হলে তোমার কাছে আমাকে নিয়ে যাও। (কাব্যর হাত ধরে বললাম,কান্না করতে করতে বললাম)

কাব্য: শান্ত হও মেঘা! আমি আছি তো তোমার পাশে! তুমি না আমাকে কথা দিয়েছিলে, তোমার চোখের পানি ফেলবে না? তাহলে…..?

মেঘা: তুমিও তো কথা দিয়েছিলে সারাজীবন আমার পাশে থাকবে ‌। হারিয়ে গেলে কেন তাহলে? জানো আমি কত খুঁজেছি তোমাকে? সেদিন রাতে ওরা আমাকে…….

কাব্য: হুসসসসস……(আমার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দিল) আমি জানি সব।

মেঘা: তুমি সব জানো…? অবাক হয়ে জানতে চাইলাম) তাহলে……..

কাব্য:হিমমম! সব জানি আমি…..

মেঘা: তার জন্য ই কি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছো…?

কাব্য: পাগল তুমি…?

মেঘা: তাহলে…?

কাব্য:

তোমাকে আমি আমার হৃদয় রেখেছি
একবার তুমি সেখানে তাকিয়ে দেখো-
দেখবে অনাদিকা….ল থেকে,
শুধু তুমিই পড়ে আছো,
আমি সেই `তুমিকে ,
বুকে ধরে হাসতে হাসতে নির্বিঘ্নে বয়ে বেড়াচ্ছি
আমার প্রেমের মতো…
তুমি যেন আমার প্রেমের মতো গাঢ়
আর বেদনার মতো প্রগাঢ়:
হৃদয়ের মতো নিঃসীম প্রদাহ!
একবার তুমি আমার মন কে বিশ্বাস করো-
পাঠ করো এ হৃদয়ের প্রতিটা অক্ষর,
শুনতে পাবে শুধু
তোমার নাম-
সেখানে তুমি পড়ে আছো:
একবার অন্তত তুমি চোখ বন্ধ করে
আমার হৃদয়ে তাকাও-
সেখানে শুধু তুমি আর
তুমিই বসে আছো,
একবার তুমি আমার ওই চোখের দিকে তাকাও-
চোখ রেখে একবার তুমি মুখ ফুঁটে রেগে বলো,
যাও ভালোবাসি না …
আমি জানি,
বলতে যেয়ে তোমার ঠোঁট ভীষণ কেঁপে উঠবে!
তুমি মুখ লুকোবে লজ্জায়:
কারণ তোমার চোখ ততোক্ষণে,
আমার চোখের ভেতর ঢুকে গেছে!
একবার শুধু স্পর্শ করো আমায়
তোমার কোমল করতলে-
দেখবে তুমি শিউরে উঠবে!
শরীরজুড়ে ভীষণ কাঁপন উঠবে তোমার:
মুহূর্তেই আমার থেকে দূরে ছিটকে পড়বে তুমি…
কিন্তু ততোক্ষণে আমার বুক,
তোমায় বুকে টেনে নেবে প্রবল উৎসাহে-
বলোতো, কোথায় যাবে তুমি?
এই যে দেখছো হাঁড়, মাংস, চামড়া
আর গভীরে দেখছো হৃৎপিণ্ড:
সবকিছু বলেছে আমায়, দিয়েছে সাক্ষ্য-
ওদের ভেতরও নাকি তুমি মিশে আছো!
আমার পাঁজরের রক্ত ঝরতে ঝরতে বলেছে,
সেখানেও নাকি তুমি খেলা করো,
খেলতে খেলতে আমায় তুমুল পাগল করে তোলো-
আরক্ত রক্তে তোমার এ উত্তেজনা
আমায় কি রকম মাতাল করে তোলে!
একবার শুধু তুমি `আমি হয়ে যাও-
আমরা দুজন অভিন্ন হয়ে যাব
চোখ থেকে চোখে, ঠোঁট থেকে ঠোঁটে,
মুখ থেকে মুখে, হৃদয় থেকে হৃদয়ে,
শরীর থেকে শরীরে, ভেতর থেকে ভেতরে-
বৃন্ত থেকে দুজনে না হয়
ফুটব সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত
একটি লাল গোলাপের মতো
আমাদের হৃদয় থেকে পৃথিবীর সমস্ত
হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়বে অমৃত তৃষা…
একবার শুধু আমার হৃদয়ে হাত দাও-
সেখানে তোমার অস্তিত্ব শুয়ে আছো,
সেখানে তুমি পড়ে আছো:
আমি অনাদিকাল থেকে সেখানে
বিদীর্ণ দাহে প্রেমের মতো পুঁষেছি তোমাকে!
সেই আশায় বুক পেতে বসে আছি,
সারাটা জীবন থাকবো।
এই অবিরাম ভালোবাসার জন্য যে
তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে!
পারবে না অপেক্ষা করতে?

মেঘা: (আমি শান্ত হয়ে শুধু চেয়ে আছি কাব্যর চোখের দিকে!) এতটা ভালোবাসো আমাকে…?

কাব্য:…….(আবার সেই পাগল করা হাসি)

মেঘা: তাহলে নিয়ে চলো আমাকে তোমার কাছে….!

কাব্য:……. তোমার জন্য পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুখ অপেক্ষা করছে। কি করে তোমাকে নিয়ে যায় বল ?

মেঘা: এই পৃথিবীতে আমার সুখ বলতে শুধু তুমি। আমি অন্য কোন সুখ চাইনা। আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যেতে হবে। চলো আমরা চলে যাই…..?

কাব্য:( আমার হাতটা আস্তে আস্তে ছেড়ে দিল। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। )সব সময় তোমার পাশে পাবে আমাকে। অন্য কারোর প্রয়োজন এখন তুমি।

মেঘা: প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো! আমাকে নিয়ে চলো। আমি তোমার সাথে যেতে চাই! কাব্য….কাব্য…..

বারবার কাব্য কাব্য বলে আমি ডাকছি..আস্তে আস্তে কাব্যর অবয়টা কেমন কুয়াশার মতো মিলে গেল তবুও আমি ডাকছি।কাব্য…….

প্রবীশ বাবু: ডালিয়া ! ডালিয়া? আমার দিকে তাকাও..? কি হয়েছে তোমার? বলো ! বলো আমাকে..?

কাব্য মনে করে প্রবীশ বাবুকে জড়িয়ে ধরে পাগলের প্রোলপ বকছি। আমাকে ছেড়ে যেও না কাব্য। আমাকে ছেড়ে যেও না। ওনি আমাকে মেরে ফেলবে। ও আমাকে বাঁচতে দিবে না। আমি তোমার কাছে যেতে চাই প্লিজ আমাকে নিয়ে চলো তোমার সাথে…….. আমার ছোট বাচ্চাটা কেউ ছাড়ে নি। এবার আমাকে মেরে ফেলবে…

প্রবীশ বাবু:……. (আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে শান্ত করতে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি তো আমি ই। প্রবীশ বাবু ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছেন, আমি তার কথাই বলছি।) প্রবীশ বাবু চিল্লিয়ে যাচ্ছেন নার্স নার্স বলে।

ডাক্তার সহ একজন নার্স আমার কেবিনে এসে আমাকে ঘুমের ইনজেকশন দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি নিস্তেজ হয়ে গেলাম।

এই ভাবেই কেটে গেল আরও একটি দিন।প্রবীশ বাবু পরেরদিন আমাকে নিয়ে বাসায় ফিরলেন। সাথে করে একটি নার্সকে আনলেন আমার দেখাশোনার জন্য।

আমার এত বড় সর্বনাশ করে তার এই আদিক্ষেতা আমার একদমই সহ্য হচ্ছিল না। তবুও মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আমি যে তার টাকায় কেনা গোলাম । হসপিটালের ওই ঘটনার পর প্রবীশ বাবুর মনে একটা প্রশ্ন বাসা বেঁধেছিলো।কে এই কাব্য?

আমার খাবার গুলো উপরে দিয়ে যাওয়া হয় । বাড়িতে আনার তিনদিন পর নার্স টিকে আমি চলে যেতে বলি। এই তিন দিনে প্রবীশ বাবু অনেকবার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তার সাথে কথা বলার মতো কোনো ইচ্ছেই আমার ছিলনা। একপ্রকার অগ্রাহ্য করতাম তাকে।

রামু চাচা আমার জন্য অনেক করেছেন। নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছেন বললেই চলে। হসপিটাল থেকে আসার পর থেকেই অমিত বাবু এই বাড়িতে ই থাকেন।

একসাথে খাবার টেবিলে আমরা সবাই মিলে খেতে বসি। তবে প্রবীশ বাবু আসলে আমি সেখান থেকে উঠে চলে আসি। লোকটাকে আমার একদম সহ্য হয় না। আর আমার চলে যাওয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেও প্রবীশ বাবু,তাতে আমার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই।

প্রতিদিন সময় করে তিনি আমার রুমে কয়েক বার করে আসেন। হয়তো আমাকে দেখতে আসেন । কিছু বলতে চাই তিনি, খুব ভালো ই বুঝতে পারি আমি।। কিন্তু তার কণ্ঠস্বর আমার কাছে খুব বিরক্ত লাগে। গোটা মানুষটার কথা আর কি বলবো?

এখন তিনি আমার গায়ে হাত তোলেন না। নামাজ পড়ি বলে তিনি নিজের হাতে আমার জন্য একটা কোরআন শরীফ , কয়েকটি জায়েনামাজ,তজবিহি কিনে এনেছেন। আমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এখন তিনি নিজের পছন্দে কেনেন। তার থেকেও মজার কথা প্রবীশ বাবু এখন আমাকে মেঘা বলে ডাকেন। তবে তার এই মেঘা ডাকটি আমার কাছে খুবই বিচ্ছিরি লাগে। আমি চাইনা তার মত নিকৃষ্ট মানুষ আমাকে মেঘা বলে ডাকুক।

এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো দিন। নানান রকম ভাবে তিনি বোঝাতে চান, তিনি তার করা ভুলের জন্য অনুতপ্ত । অফিস টাইমে তিনি অফিসে গিয়ে আমার রুমের টেলিফোন এ কল করেন, আমার এই রুমে তিনি ছাড়া যে অন্যকে ফোন করবেন না, সেটা খুব ভাল করেই জানি আমি। ফোন রিসিভ করে প্রবীশ বাবু কথা বলে না ঠিকই , কিন্তু চুপ করে থাকেন কিছুক্ষন। ফোনের মাধ্যমে তার সাথে আমার নিঃশ্বাসের আদান-প্রদান হয়। আমিও কিছু বলি না। কি বলার আছে তাকে?

আমাকে কোন একটা সারপ্রাইজ দিবে বলে আমার জন্য অনেক কিছু কেনাকাটা করেছিলেন, তার এই ভাল ব্যাবহার টা আমি নিতে পারছিলাম না। খুব ভয় লাগে, যদি আবার কিছু করতে চাই তো। আমার মনের শক্তিটুকু হারিয়ে গেছে। তার আনা জিনিসপত্রগুলো আমি গ্রহণ করিনি। পাক্কা 2-3 দিন তিনি না খেয়ে ছিলেন। তার নাকি আবার সুগার ফইল করে। অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরে রামু চাচা এসে আমাকে বলেন । কিন্তু তাকে দেখতেও আমি যায়নি।অথচ তার রুম থেকে আমার রুমে মাঝে পথের ব্যাবধান শুধু মাত্র একটা দেয়াল।

প্রবীশ বাবু নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে খুবই সেনসিটিভ। তার এই ২-৩ দিন না খাওয়াই অমিত বাবু কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন। অমিত বাবু আমার কাছে এসে আমাকে রিকোয়েস্ট করেছিলেন আমাকে তার দেওয়া জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি তো আমি ই।

সেদিন রাতে তিনি আমার রুমে আসেন, তখন দশটা কি সাড়ে দশটা হবে। আমার সামনে কিছুটা এগিয়ে আসেন তিনি, চোখ দিয়ে কিছু বলতে চান। তবে তার কোনো কথা আমি শুনতে চাই না। তিনি আমার সামনে আসলে ,আমি সোজা ব্যালকনিতে চলে আসি। এই ইগনোর করাটা তার আর সহ্য হলো না।

তিনি সোজা আমার পিছু পিছু বেলকনিতে চলে আসেন। আমার হাতের কব্জি পিছন থেকে শক্ত করে ধরে নিজের দিকে টেনে নিল।

প্রবীশ বাবু: (আমার চোখে চোখ রেখে বললেন)তোমার সমস্যা টা কি?

মেঘা: আমি তার চোখে চোখ রাখলাম….

#চলবে ……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here