অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -১৪

#অপ্রত্যাশিত_ভালোবাসা
#কাব্য_মেহেরাব
পর্ব:১৪

প্রবীশ বাবু:(আমার চোখে চোখ রেখে বলল) তোমার সমস্যা টা কি?( দাঁতে দাঁত চেপে বললো)

মেঘা:………( তার চোখে চোখ রাখলাম)

প্রবীশ বাবু: আমাকে কথা বলার সুযোগ টা পর্যন্ত দিচ্ছো না, কেন?( ধমকের সুরে)

মেঘা:……..( তার কথা শুনে আমার চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকালাম। সে নাকি আমার সাথে কথা বলার সুযোগ খুঁজছে, যেখানে আমি তার টাকায় কেনা একটা পন্যস্বরুপ ছাড়া আর কিছু ই না।)

প্রবীশ বাবু: চুপ করে আছো কেন ডেমিড? কথা বলো আমার সাথে..( জোরে চিল্লিয়ে।)

মেঘা: কি কথা শুনতে চান আপনি? আর কি বলার আছে আমার?

প্রবীশ বাবু: আমি কি শুনতে চাই, বুঝতে পারছো না?( ভ্রু কুঁচকে বললেন)

মেঘা:( এতটা জোরে আমার হাত চেপে ধরেছে যে, ব্যাথায় আমার চোখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল, চোখ মেলে তার দুই চোখে র দিকে তাকিয়ে বললাম) না আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না। কি শুনতে চান আপনি আমার কাছ থেকে? সব কিছু তো কেড়ে নিয়েছেন। শুধু আমার জান টা বাকি আছে, সেটা ও চাইলে নিতে পারেন।

প্রবীশ বাবু: কি বলতে চাও তুমি?( রাগে তার চোখ পুরা লাল হয়ে গেছে।)

মেঘা: আহ্!আমার হাত টা ছাড়ুন..!ব্যথা করছে( তার থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম)

প্রবীশ বাবু: ( আরো জোরে আমার হাত চেপে ধরলো। আমার আরো কাছে এসে চোখে চোখ রেখে বলল।) একটু ভালো থাকতে চাই আমি। তাই তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করতে চাইছি। কিন্তু সেটা তোমার মনে হয় সহ্য হচ্ছে না। তাই না?

মেঘা: ( তার এই কথায়,কোথা থেকে যেন পৃথিবীর সমস্ত শক্তি আমার উপর ভর করলো। নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে তার হাত ঝাড়া মেরে নিজেকে সরিয়ে নিলাম দুই পা পিছিয়ে!) হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন। আপনার এই ভালো ব্যাবহারটা আমি জাস্ট সহ্য করতে পারছিনা। আপনার এই ভালো ব্যবহার বারবার আমার কাছ থেকে কিছু না কিছু কেড়ে নিয়েছে। বিশ্বাস করুন !আমার ভেতর আর এক বিন্দু শক্তি অবশিষ্ট নেই এসব সহ্য করার জন্য। হয় আমাকে মেরে ফেলুন, না হয় আমাকে আমার পুরনো ঠিকানায় দিয়ে আসুন।

প্রবীশ বাবু: মেঘাআআআআ……( আমাকে চড় দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ে হাত উঁচু করে ঘর কাঁপানো চিৎকার দিয়ে উঠলো)

মেঘা: ……..(তার হাত উঁচু করা দেখে, চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। যখন কোন কিছুর আভাস পেলাম না আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালাম।) না…… মেঘা নয়।( আমিও জোর দিয়ে বললাম) যে নাম আমার জীবনকে নরকে তৈরি করে, যে নাম আমার জীবন থেকে সব কিছু কেড়ে নেয়, সেখানে আমি ডালিয়া হয়ে থাকতে বেশি সাচ্ছন্দ বোধ করবো। মেঘা নাম টা খুব ভালোবেসে আমার ভালোবাসার মানুষটি আমাকে ডাকতো। আপনার মুখে এই নাম টা সহ্য হচ্ছে না আমার।

প্রবীশ বাবু: (শান্ত হয়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করছেন হয়তো। তার লাল লাল চোখ বন্ধ করে আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললেন।) আমাকে নাকি ,আমার ভালো ব্যবহার সহ্য হচ্ছে না তোমার।আই ডোন্ট কেয়ার ! বাট প্রথম দিন ই আমি বলেছিলাম, তুমি হয়তো ভুলে গেছো ।আমি আবার ও মনে করিয়ে দিচ্ছি। গোটা আমাকে তোমার সহ্য করতে হবে।

মেঘা: ……… ( তাকে আমার সহ্য করতে হবে , ভাবতেই ঘৃণা ই মুখ ঘুরিয়ে নিলাম)

প্রবীশ বাবু: (স্মিত হেসে বললেন) আমি ৩-৪ দিনের জন্য চিটাগাং যাচ্ছি। তোমার প্রয়োজনীয় সব কিছু আমি নিজেই এনেছি দেখে নিও। এর পরেও যদি কোন কিছুর প্রয়োজন হয় রামু জেঠু কে বলবে। তিনি সব ব্যবস্তা করে দিবে।

মেঘা: চাই না আমার , আপনার কোন কিছু…!

প্রবীশ বাবু: সেটা সময় বলে দিবে। আর হ্যাঁ নিজের ভালো পাগল ও বোঝে। ঐ নরক থেকে এখানে অনেক বেটার লাইফ স্পেন্ড করবে, তাই আশা করি কোন বোকামি করবে না।

এই কথা টা বলে প্রবীশ বাবু ব্যালকোনি থেকে রুমে এসে দাঁড়ালেন। একটু থেমে আমাকে উদ্দেশ্য বললেন_

প্রবীশ বাবু: রাত অনেক হচ্ছে। মেডিসিন খেয়ে শুয়ে পরো। সকালে নাস্তার টেবিলে তোমাকে আমার সামনে থাকা চাই।( কথা টা বলেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।)

ব্যালকোনিতে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে হাঁটুর ভাঁজে মুখ গুজে বসে আমি কান্না করছি। লোকটা সব সময় আমাকে হুকুম করেন। আমার ইচ্ছা মর্জির কোন মূল্যই নেই তার কাছে। থাকবে বা কি করে ?আমি যে তার কিনা পুতুল।

হাটুর ভাঁজ থেকে মুখ তুলে তাকালাম সামনে। দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলাম।৩-৪ দিন তিনি বাসায় থাকবেন না। এই সুযোগে এই বাড়ি থেকে আমাকে বের হতে হবে। এই কুৎসিত হৃদয়ের মানুষটির সাথে কোনভাবেই একই বাড়িতে থাকা সম্ভব নয়। প্রবীশ বাবু চলে যাওয়ার পরপরই আমাকে এই বাড়ি থেকে বের হতে হবে।

রুমে এসে আমার আনা কয়েকটি কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিলাম।প্রবীশ বাবু র দেওয়া কোন কিছু আমার চাই না। সব কিছু গোছ গাছ করে জায়গা মত সবকিছু ঠিক করে রাখলাম। তার দেওয়া অলংকারগুলো সুন্দর করে বক্সের ভিতর গুছিয়ে রাখলাম। আমি চাই কষ্টের মাঝে সুখ কে আপন করতে। আর এই অলংকার এর মাঝে কোন সুখ নেই আছে বিষাক্ত অভিশাপ । আমি অভিশপ্ত হতে চাই না। আমি চাই #অপত্যাশিত_ভালোবাসা । আমি চাইনা, আমি চলে যাবার পর তিনি আমাকে চোর এর উপাধি দিক। অপেক্ষায় এখন শুধু সকালের।

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি ওযু করে নামাজ আদায় করে নিলাম। আজ এই বাড়িতে আমার শেষ দিন। আজ থেকে মুক্তি পাব আমি এই নরক থেকে, যেখানে আমি শুধুই কেনা গোলাম। কোথায় যাব জানা নেই ,তবে ওই অন্ধকার গলিতে আমি আর ফিরবো না। খুঁজে বের করবো আমার ভালোবাসার মানুষ কে। এইসব কিছু ভাবতে সকাল থেকেই মনটা বেশ প্রফুল্ল।

ভাবছি আজ সকালে নিজের হাতে নাস্তা তৈরি করব ওই কুৎসিত হৃদয়ের মানুষটির জন্য, যার মনটা পাথরের তৈরি। যদিও আজ দুই থেকে আড়াই বছর রান্নাঘরের মুখটা নিজের চোখে দেখিনি। তবুও চেষ্টা করতে ক্ষতি কি? এক সময় তো নিজের হাতে কত কিছুই না করতাম ভাই ভাবির জন্য, নিজের বাড়িতে।আজ না হয় আবারও চেষ্টা করব।

সকালে কিচেনে গিয়ে রান্নার জন্য ডুকলে রামু চাচা আমাকে কিছু তেই রান্নার জন্য এলাউ করছিলেন না। অনেক কষ্টে তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। তবে যখন দেখলেন আমার রান্না করা আইটেম গুলো প্রবীশ বাবুর খাবার তালিকায় নেই, তখন তিনি আমাকে অনেক ভাবে বুঝিয়ে ছিলেন যে, প্রবীশ বাবু এগুলো কিছু তেই খাবেন না। তিনি রাগ করবেন। তার উপর তিনি আজ চিটাগাং যাচ্ছেন। না খেয়ে ই তিনি নাকি চলে যাবেন। কিন্তু আমি তো আমি ই।আজ তাকে আমি এগুলো খায়িয়েই ছারবো। আমার জেদের কাছে হার মেনে রাম চাচা কিচেন থেকে বেরিয়ে পড়ল।

প্রবীশ সকালে ঘুম থেকে উঠেই মেঘার রুমে উঁকি দেয়। এটা রোজকার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেঘার ঘুমন্ত মুখটা দেখে বুকের ভেতর কেমন চিনচিন ব্যথা করে ওঠে প্রবীশের। কেন সেটাও অজানা তার। কিন্তু আজ রুমে মেঘা নেই।প্রবীশের গায়ের লোম কুপ যেন দাঁড়িয়ে গেছে। মস্তিষ্ক যেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিল। তাহলে মেঘা ব্যালকনিতে নেই তো? কথাটা ভাবতে ভাবতেই বেলকুনিতে চলে এলো। কিন্তু এখানে এসেও ফলাফল শুন্য মেঘা এখানে নেই। মনের মধ্যে কিছুটা ভয় বাসা বাঁধলো। কেন যেন মনে হলো খাঁচা থেকে তার জানটা ফুরুত করে বেরিয়ে গেল।দূরত্ব রুম থেকে বাইরে বেরিয়ে এসে নিচের দিকে তাকালো । চোখ বন্ধ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

মেঘা ডাইনিং এ খাবার সাজাচ্ছে। জানটা ফিরে পেলো প্রবীশ। মেঘাকে দেখে অনেকটা অবাক হয়ে গেল প্রবীশ। এই বাড়িতে আসার পর থেকে এই প্রথম মেঘাকে কাজ করতে দেখছে। মেঘা ডাইনিং এ খাবার গোছাচ্ছে তাও নিজের হাতে। কোমরে শাড়ি গুঁজে, কপালের ছোট চুলগুলো এলোমেলো ভাবে সামনে এসে বিরক্ত করছে। মেঘা হাত দিয়ে তা সরিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু অবাধ্য চুল গুলো বারবার সামনে এসে মেঘার বিরক্তি টা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। কপালের নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। মেঘার সৌন্দর্যটা যেন এতে আরও অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। হঠাৎ করে প্রবীশ মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। কি ভাবছে এইসব?

ভ্রু দুটি একত্রিত এনে প্রবীশ মেঘার কাজ দেখতে দেখতে আস্তে আস্তে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো। ডাইনিং এর সামনে এসে প্রবীশের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।

অমিত হাত মুছতে মুছতে ডাইনিং এর সামনে এসে দাড়ালো। খাবারের আইটেম দেখে অমিত প্রবীশের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালো। যতদূর জানে অমিত, প্রবীশ নিজের স্বাস্থ্যের বিষয় খুব সেনছেটিভ। অয়েলি খাবার একদমই পছন্দ করেন না। সকালের নাস্তা স্বরূপ জ্যাম পাউরুটি একটু জুস আর কয়েক টুকরো ফল ছাড়া কিছুই খায় না। সেখানে আজ তেলে চপচপ করা পরোটা, আলু ভাজি, ডিমের ওমলেট, আলুর দম ,নুডলস, চিকেন স্যুপ। আরো কয়েক রকমের আইটেম।

রামু জেঠু ডাইনিং এর পাশে দুই হাত একসাথে কচলিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। প্রবীশ কি বলবে সেটা শোনার অপেক্ষায়। চিন্তায় কপালের ঘাম ঝরছে তার। অমিত একটা কেবলামুখী ফেস নিয়ে প্রবীশের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এখনই যেন মুখ থেকে আগুনের লাভা বেরিয়ে আসবে আর সবাইকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে।

সবার মুখের এক্সপ্রেন্স দেখে প্রবীশ মেঘার দিকে তাকালো। সবার এই চাহনির মানে বুঝতে কোন বেগ পেতে হয়নি প্রবীশের। হাসি হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেঘা। মেঘা তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো_ আজ সকালের নাস্তা সব আমি নিজের হাতে বানিয়েছে।

আশ্চর্য হলেও প্রবীশ মনে মনে ভাবলো যাক মেয়েটার তার কথা শুনেছে তো? চেয়ার টেনে তাতে প্রবীশ বসলো। খাবার গুলোর দিকে তাকিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল এইসব অয়েলি যুক্ত খাবার সে খাবে কি করে। প্রবীশের ভাবনার মাঝে অমিত একটি চেয়ার টেনে বসে পড়ল। মানুষ বাঁচার জন্য খায়, কিন্তু অমিত খাবার খাওয়ার জন্যই যেন বেঁচে আছে। খাবারগুলো অয়েলি হলেও বাঙালি খাবার বলে এগুলা কে। যা অমিতের খুব প্রিয়। মনে মনে হাজারটা ধন্যবাদ দিল মেঘা কে। এখানে আসার পর থেকে যা খাচ্ছে তাতে কোনো রকম সে বেঁচে আছে।

লোভনীয় খাবার দেখে অমিত নিজের প্লেটে এক এক করে সব কয়টি আইটেম তুলে নিল। এতদিন পর সে মন ভরে খাবে আজ। আশেপাশে না তাকিয়েই খাওয়া শুরু করে দিল। প্রবীশ এমন খাপছাড়া কাজ দেখে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করলো নিজের চোখ এবং ভ্রু দিয়ে। অমিতের এই কাজ দেখে মেঘা হেসে দিল।

প্রবীশ কোনটা খাবে কি খাবে না ভাবনার মাঝে মেঘা প্রবীশের প্লেটে দুটি পরোটা ডিমের ওমলেট এবং ভাজি তুলে দিল। প্রবীশ নাক ছিটকে খাবারের দিকে তাকালো। রামু জেঠু প্রবীশের দিকে এগিয়ে এসে বলল_

রামু জেঠু: বলছিলাম কি প্রবীশ বাবা….?

প্রবীশ বাবু রামু চাচার দিকে তাকাতেই তিনি চুপ হয়ে গেলেন। আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন_

প্রবীশ বাবু: মেঘা তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন ?বস একসাথে খেয়ে নি…!

এই কুৎসিত মানুষটার মুখে মেঘা নামটা আমার কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না। তবুও নিজের রাগ কে বর্জন করে একটি সোজন্য মূলক হাসি দিলাম। আজ থেকে আমি মুক্ত হবো এরপর থেকেই এই মানুষটার মুখ আর দেখতে হবে না। আমি তাই শুধু শুধু কথা না বাড়িয়ে আমি বসে পড়লাম।

অমিত বাবু পরোটা ছিরে ডিমের অমলেট মাখিয়ে সবে গালে দিয়েছেন, আমাদের এই ভাবে স্বাভাবিক কথাবার্তাতে তিনি হা করে একবার আমার দিকে তো একবার প্রবীশ বাবু র দিকে তাকালেন ,খাবার গালে ন পুড়ে না চিবিয়ে ই।

প্রথমে নাক ছিটকে পরোটা ছিঁড়ে গালে পুড়লেন প্রবীশ বাবু। আমি তাকিয়ে আছি তার খাওয়ার দিকে।কিছুক্ষণ পর তার মুখের ভঙ্গি দেখে বুঝতে পারলাম খাবারটা তার খুব বেশি পছন্দ হয়েছে। একে একে সব কয়টি খাবার তিনি টেস্ট করলেন। অমিত বাবু আশ্চর্য হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকলেন নিজের খাওয়া বাদ দিয়ে।

হাত মুছতে মুছতে প্রবীশ বাবু আমাকে বললেন_

প্রবীশ বাবু: যদিও আমি অয়েলি যুক্ত খাবার খাই না। তবে আজকের খাবারটা খুব সুস্বাদু ছিল। এমন বাঙালি ঘরোয়া টাইপের খাবার আমি লাস্ট কবে খেয়েছি আমার মনেও নাই।আদৌ খেয়েছি কি না সন্দেহ আছে। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ। বলে তিনি উপরে চলে গেলেন।

অমিত বাবু এখনো সেই ডিমের ওমলেট মাখিয়ে পড়োটা টা গালে রেখেছেন। খাবারটা যে চিবিয়ে খেতে হয় তিনি হয়তো তা ভুলে গেছেন,প্রবীশ বাবু র খাওয়া দেখে।

অমিত বাবু: বলছি কি? স্যারের শরীর খারাপ করেনি তো?

আমি চোখ ছোট করে অমিতবাবুর দিকে তাকালাম।

অমিত বাবু:(কিছু ভয় পাওয়ার ভঙ্গি করে) না ঠিক আছে হতেই পারে মাঝে মাঝে । বলে নিজে খাওয়া শুরু করলো।

প্রবীশ বাবু নিজের রুমে ড্রেস চেঞ্জ করছেন। আয়নার সামনে নিজে টাই টা ঠিক করে বাধছিলেন।এর মাঝেই আমি তার রুমের দরজায় নক করলাম। প্রবীশ বাবু কপাল কুঁচকে নিলেন। এই মুহূর্তে তার রুমে নক করার মতন কেউ নাই। যেহূতু সবাই জানে এই মুহূর্তে তিনি রেডি হচ্ছেন। আর এই মুহূর্তে তাকে বিরক্ত করা মানে আগুনে ঘি দেওয়া। তাহলে কে হতে পারে ভেবে জিজ্ঞাসা করলেন_

প্রবীশ বাবু: কে….?

মেঘা: আমি….!(অনেকটা সংকোচ নিয়ে বললাম)

প্রবীশ বাবু:…..(কয়েক সেকেন্ডের জন্য তিনি স্তব্ধ হয়ে গেলেন। বুঝতে পারল মেঘা ।তারপর বলল) ভেতরে আসো!

মেঘা: দরজা খুলে আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম। চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখলাম পুরো রুমটা খুব পরিপাটি করে সাজানো গোছানো। তারপর প্রবীশ বাবুর দিকে তাকালাম। কিভাবে কথাটা বলবো ভেবে পাচ্ছিনা অনেকটা ইতস্ত বোধ করছিলাম। তবুও তাকে বলতে হবে।

প্রবীশ বাবু: (তার রুমে এই প্রথম আমি প্রবেশ করলাম, অনেকটা আশ্চর্য হলেন তিনি। তবে আমার মুখের এমন ভঙ্গি দেখে তিনি বললেন) হঠাৎ আমার রুমে আগমন তোমার , কেন জানতে পারি?

মেঘা: আমার একটু প্রয়োজন ছিল তাই আসতে বাধ্য হলাম।

প্রবীশ বাবু:( টাই টা ঠিক করতে করতে বলল) বল এই প্রবীশ তোমার জন্য কি করতে পারে….

মেঘা:(মাথানিচু করে বললাম) আমার কিছু টাকার প্রয়োজন…..

প্রবীশ বাবু:(অনেকটা আশ্চর্য হয়ে গেলেন তিনি। আমার প্রয়োজনীয় সবকিছুই তিনি এনে দিয়েছেন তাহলে টাকা কি করবে ভেবে। তারপরও তিনি এক ভ্রু উচু করে বললেন) কত টাকা?

মেঘা:………..(মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম)

প্রবীশ বাবু: (নিজের মানিব্যাগ থেকে একটি কার্ড এগিয়ে দিয়ে আমাকে বললেন) ৯৭৮৬ যত টাকা লাগে তুলে নিও।

মেঘা:……..(আমি তার দিকে চোখ তুলে তাকালাম)

প্রবীশ বাবু: তোমার কত টাকা প্রয়োজন, হয় তো তুমি নিজেও জানো না ।তাই কার্ডটি তোমাকে দিলাম প্রয়োজনে ব্যবহার করো।

মেঘা: আমি মাথা নিচু করে তার রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। অজান্তেই তিনি অনেক বড় উপকার করেছেন আমার। ওই অন্ধকার গলিতে আমি আর ফিরতে চায় না তার জন্য আমাকে অনেক টাকার প্রয়োজন হতো। না চাইতেই তিনি অনেক বড় উপকার আমার করলেন।

সকাল দশটার পর প্রবীশ বাবু এবং অমিত বাবু বেরিয়ে পড়েছেন চিটাগাং এর উদ্দেশ্যে। আমি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করলাম। ব্যাগভর্তি আমার কাপড় গুলো নিয়ে উপর থেকে নিচে নামছিলাম। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে আস্তে আস্তে নিচে নেমে এসে দেখলাম রামু চাচা কিচেনে কাজ করছে। সুযোগ বুঝে আস্তে আস্তে পা টিপে টিপে মেইন দরজার দিকে এগোলাম। দরজাটা খুলতেই রামু চাচা পিছন থেকে বলে উঠলেন_

রামু চাচা: দাঁড়াও মামনি…..!

#চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here